জাগরেব সবুজবাজারের দিদিমা

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৮/০৮/২০১৩ - ১:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

1043916_10152952290485497_1359247471_n

বারিকা, আমাদের আজকের গল্পের প্রধান চরিত্র, বয়সের ভারে থুরথুরে কিন্তু মনের বলে বলীয়ান এক ক্রোয়াট দিদিমা তিনি। থাকেন জাগরেব শহরে থেকে ৬ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে, নিজের খামারেই কাজ করেন তিনি উদয়াস্ত। উৎপাদিত শাকসবজি পরিবারের জন্য রেখে উদ্বৃত্তটুকুর সাথে মুরগীর ডিম, গরুর দুধ , শরতের মাশরুম ইত্যাদি ঝুড়িতে ভরে সেই ভারী ঝুড়ি মাথায় নিয়ে হেঁটে হেঁটে যান জাগরেবের সবুজ বাজারে। বিকিকিনি শেষে ফিরতেও হয় হেঁটে হেঁটেই। সেটা মনে হয় ১৬০০ সাল, নাকি ১৪০০? কিচ্ছু যায় আসে না আদতেই, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে এসেছে পরিশ্রমী ক্রোয়েশিয়ান মহিলাদের এই ধারা।

কালক্রমে জাগরেব পরিণত হয়েছে মহানগরীতে, ঠেলাগাড়ী, ঘোড়ার গাড়ীর জায়গা দখল করে নিয়েছে মোটর গাড়ীর ঘড়ঘড়ে আওয়াজ, মেঠোপথের বদলে পীচ ঢালা সড়ক আর ক্রোয়েশিয়ার সবখানে, কিন্তু জাগরেবের সবুজ বাজার আজও জমজমাট।

546802_10153014793680497_1434523055_n

1006149_10152971878945497_436332328_n

মুল শহর কেন্দ্রে যে বিশাল চত্বর অবস্থিত তার এক কোনেই থরে থরে সাজানো বহু বর্ণা ফুলের সম্ভার স্বাগতম জানাল আমাদের এই বিখ্যাত গ্রীন মার্কেটে ( খবরদার বুদ্ধিবেশ্যা মাহমুদুরের কথা তুলবেন না এইখানে, এই গ্রীন সেই গ্রীন নহে) , দুর্জনেরা বলে এই ফুলের মূল ক্রেতা অফিস ফেরতা স্বামীরা যারা কিনা ফুটবল নিয়ে পানশালায় ২ ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে এখন বৌ এর মন গলাতে ফুলের তোড়া নিয়ে যাচ্ছে!

1013448_10152960506635497_508166083_n

179794_10152954789090497_37189293_n

সবই যে বাগানে ফোঁটা কাঁটা মুক্ত গোলাপ তা নয়, সাজিয়ে রাখা একাধিক তোড়াতে বুনো ফুলের সুবাসের সাথে সাথে লকলকে সতেজ সবুজ ঘাসের বিলোল উপস্থিতি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল উম্মুক্ত প্রান্তরের বলকানের খামার বাড়ীতে। আজ এই বাজার ৩ ভাগে বিভক্ত, একদিকে শুধুই ফুল নিয়ে বসেন দিদিমারা, খুব একটা দামাদামি চলে না, কারণ সবাই-ই সাহায্য করে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে।

1098504_10153090415800497_677975070_n

11488_10152955396350497_664771497_n

কঠোর পরিশ্রমী কৃষিজীবী কাম ব্যবসায়ী ক্রোয়েশিয়ান মহিলাদের সম্বোধন করা কুমিকা বলে, আর এই কুমিকাদের মাঝে ক্রোয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলে খুবই পরিচিত একটি নাম বারিকা। বারিকাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সবুজ বাজারের উপরের অংশে সিঁড়ির সামনে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে,

972300_10153090415730497_862278938_n

IMG_5393

যাকে সুপ্রভাত বলে ডানে ঘুরতেই দেখবেন তাজা সবজি আর ফলের সমাহার। উজ্জল রঙের তরমুজ, কলা, স্ট্রবেরি থেকে শুরু করে নানা ধরনের বেরি মজুদ সেখানে, মৌসুম বিশেষে ব্যাঙের ছাতাও মেলে এন্তার। আর আগের মতই দুধের সাথে সাথে বিক্রি হয় স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত চীজ।

1017504_10152987662830497_1580668555_n

942338_10152971878585497_1520416493_n

মুলত এই অংশটিই সবচেয়ে জমজমাট, ক্রেতা হিসেবে দেশী-বিদেশী সবাই হাজির। অনেকে টসটসে রসালো ফলে কামড় বসিয়ে মজা পাবার পর সেখানেই ফলের অস্তিত্ব নাশ করে আবার কিনছে বেশী পরিমাণে। ফল-সবজির বাজারে এককালে দামাদামির মজার প্রতিযোগিতা থাকলেও এখন এক দামের যুগ, তবে অবশ্যই আলতো দামাদামি চলতে পারে দোকান বন্ধের আগে।

999644_10152971878730497_405402378_n

সকালে শুরু হবার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা খোলা থাকে এই সবুজ বাজার, যদিও ফুলের অংশটি অনেক সময়ই দুপুরে গড়িয়ে বিকেলেও সুবাস বিতরণ করে। সেই সাথে একটি ছোট্ট অংশে আছে কাপড়, হাতে বোনা টেবিলক্লথ, জানালার পর্দার জগত আর সেই সাথে কিছু ট্যুরিস্ট আইটেম। সবুজ বাজারের এই অংশ আবার ঠিক খোলা আকাশের নিচে নয়, শক্ত পোক্ত ছাদ আছে মাথা উপরে, সেখান আবার জ্যাম জেলিও বিক্রি হয়।

হাতে বেশ তাড়া, জাগরেবের সবচেয়ে উঁচু স্থানে যেয়ে শহরটাকে অন্যরূপে অবলোকনের সময় হয়ে আসছে, তাই সাত তাড়াতাড়ি এক বারিকার কাছ থেকে কিছু রাপসবেরি কিনে কুশল বিনিময় করে রওনা হতে হল শহরের অন্য মাথায়।

1044383_10152954789235497_2115629401_n


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হৈ হৈ ... ৩০১ নাম্বার ইটা রাইখ্যা গেলাম...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি

চিন্তিত এই গোনাগুণী কেনু!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শয়তানী হাসি কিছু কথা থাক না গুপন খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
রীমা মারীয়া  এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
নজমুল আলবাব এর ছবি

মনে হলো, আমি ঘুরছি সবুজ সেই বাজারে...

তারেক অণু এর ছবি

শাহবাগে?

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধুরু মিয়া। শাহবাগ সবুজ হইলে আমার বাড়ি আমাজান ফরেস্ট। শাহবাগতো গাড়ির গার্বেজ ছাড়া আর কিছুই না।

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

একজন পরিশ্রমী মহিলার স্ট্যাচু - কুর্নিশ করি এই ভাবনা, এই কাজকে।
খুব ভাল লাগল, অণু-দাদা, চলো, চলতে থাকো, আমরাও চলি সাথে সাথে, এইভাবেই হাসি
- একলহমা

তারেক অণু এর ছবি

একজন পরিশ্রমী মহিলার স্ট্যাচু - কুর্নিশ করি এই ভাবনা, এই কাজকে। উত্তম জাঝা!

স্যাম এর ছবি

আর মাত্র ১৯৯ তারপরেই পার্টিশার্টি দেঁতো হাসি
জনপদ আর তার মানুষগুলো নিয়ে আপনার লেখাগুলো আমার বিশেষ প্রিয় - এরকম।

তারেক অণু এর ছবি

পার্টিশার্টি কুতায় !

ওডিন এর ছবি

পার্টি এবং খাওয়াদাওয়া। আইসা পড়ো বেইবে...

তারেক অণু এর ছবি
আয়নামতি এর ছবি

খুব ভালো লাগলো দিদিমাদের কর্মময় জীবন কাহিনি পড়ে চলুক
এদিককার ফার্মাস মার্কেটের মত খানিকটা। অবশ্য এখানে ফুলের সমাহার থাকে না।
খুব ভোর ভোর শুরু হয়ে দশটার মধ্যেই চটিবাটি গুটিয়ে চলে যায় সবাই।

তারেক অণু এর ছবি

সব বিক্রি হয়ে যায় এত্ত তাড়াতাড়ি?

রুবাই এর ছবি

চলুক হাততালি

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়ে, আমার জন্য পাঁচশো গ্রাম টসটসে ষ্ট্রবেরি কিন্যা আইনেন তো।

আব্দুল্লাহ এ এম

তারেক অণু এর ছবি

ইয়ে, মানে কিনে খেয়ে হজম করে ফেললুম যে খাইছে

মর্ম এর ছবি

খুব একটা দামাদামি চলে না

দামাদামি'র চে বাজে জিনিস আর নাই! রেগে টং

ওমা, লেখাতো শেষ হয়নি! ইয়ে, মানে... তাপ্পর? পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

তারেক অণু এর ছবি

হু, কিন্তু অনেকেই সেইটা এঞ্জয় করে !

guest_writer এর ছবি

খুব ভাল লাগল ! শ্রমের এমন সামাজিক স্বীকৃতির ঐতিহ্য আমাদের এখানে আমরাও কি তৈরি করতে পারি না? বারিকা। বড় সুন্দর ও অর্থবাহী এই নাম। আমার মেয়ে থাকলে তার এই নাম রাখতাম।
সুমিতা সরকার

তারেক অণু এর ছবি
প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা, খুব বর্ণিল একটি বাজার !

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই

ওডিন এর ছবি

কোন জায়গাতে গেলে সেইখানের লোকার বাজার না দেখলে কিছুই দেখা হয় না, কথাটা আসলেই ঠিক।

তিনশো লেখা তো হয়ে গেলো, আর কষ্টমষ্ট করে দুইশটা লেখা লিখে ফেলেন। স্যাম ভাই যা কইলো, পার্টি হবে পার্টি! কোলাকুলি

তারেক অণু এর ছবি

লোকাল?

অতিথি লেখক এর ছবি

বলকানের এই দিদিমারা অনেক রক্তপাত দেখেছে জীবনে, এদের নিয়ে লেখাটা পড়তে ভাল লাগলো, তারা কিছুটা শান্তিতে আছে দেখে আনন্দিত হলাম ........দিদিমার স্টাচুটা চমত্কার!

.....জিপসি

তারেক অণু এর ছবি
নিবিড় এর ছবি
তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।