জর্জ শ্যলারের খোলা বার্তা – ১

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: রবি, ২১/০৬/২০২০ - ১:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বলা হয়ে থাকে যে নিসর্গীরা যখন অবসর জীবন শুরু করেন, তখন তারা নানা কিছুর ভূমিকা ও স্মৃতিকথা লেখা শুরু করেন। এই লেখার মাধ্যমে আমি এটুকুই বলতে পারি যে আমি স্মৃতির সন্ধানে নেই, আমার মূল উৎসাহ ভবিষ্যতেই। যদিও উত্তর আফগানিস্তানের পাহাড়ে বসে আমি এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলাম,যেখানে মার্কো পোলো-ভেড়ার গবেষণা ও সংরক্ষণ সচেতনতা নিয়ে কাজ করছিলাম। ১৯৫২ সালে থেকেই নানা দেশে বুনো প্রাণীদের দেখার আনন্দ নিয়ে এবং মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে তাদের চারণভূমির যে ক্ষতি হচ্ছে সেখান থেকে তাদের রক্ষা করার তাড়না অনুভব করে কাজ করে চলেছি। আমি এক স্বপ্নালোকে বাস করি, যেখানে আমি সবসময়ই আমার কল্পনাকে খাটাতে থাকি যে কিভাবে আমি জীববৈচিত্র রক্ষা করতে পারব যা সকলের উপকারে আসবে, যাদের মধ্যে স্থানীয় মানুষেরাও থাকছেন, যাদের ভবিষ্যৎ একটা সুস্থ পরিবেশের উপরে নির্ভরশীল। যেমন চীনা প্রবাদে আছে ‘আগামীর সমস্ত ফুল নিহিত আছে আজকের বীজে।‘

পারিপার্শ্বিক নানা অবস্থার কারণে আমি ‘ওয়াইল্ডলাইফ কনসারভেশন সোসাইটি”র সাথে প্রায় ৫০ বছর ধরে জড়িত, যারা ১৮৯৫ সাল থেকে বন্য প্রাণী রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এদের আদর্শের সাথে আমার আদর্শ মিলে যায়, যার ফলে ফিল্ড ওয়ার্ক এবং সংরক্ষণ আমার জীবনে পরিণত হয়, যা আমাকে জলায়, পাহাড়ে, বনে এক চিরপথিকে রূপান্তরিত করে। কবি ওয়াল্ট হুইট্ম্যান লিখেছিলেন, ‘সেই কবে কোথায় কিসের জন্য যাত্রা শুরু করেছিলাম? আর এত দিনে কেন তার সন্ধান মিলল না?’ নিসর্গ সংরক্ষণের শেষ গন্তব্য বলে কিছু নেই। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও বৈচিত্র রক্ষায় এক নৈতিক তাড়না থেকে, এবং নিসর্গে অগণিত অক্ষয় সব স্মৃতি রাখার তাগিদে, আমি এক গন্তব্যহীন পথ বেছে নিয়েছি, কিন্তু যেখানে আমি কিছু একটা ভূমিকা রাখতে পারব। তাই আশি বছর পার করেও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি কিছু একটা সংরক্ষণের, খুব সামান্য হলেও যার ভূমিকা আছে্‌ যা হয়ত ইরানে এশিয়ার শেষ চিতা বা মঙ্গোলিয়ার গ্যাজেল হরিণদের পরিযায়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

১৮৪০ সালে উত্তর আমেরিকা ভ্রমণের সময় জন ফ্রেমন্ট লিখেছিলেন, ‘ এ এক বুনো অজানা ভবন, এবং এই নিস্তব্ধ নীরবতা কৌতূহল জাগিয়ে গবেষণার নিরন্তর আহ্বান জানায়।‘ আমার ভিতরের আমি এই সমস্ত স্থানেই থাকি। সৌভাগ্যক্রমে এখনো বুনো অখণ্ড নিসর্গ টিকে আছে। তাঞ্জানিয়ার সেরেঙ্গেটির অবারিত প্রান্তর ও অরণ্য তাদের একটি, যেখানে আমার স্ত্রী ‘কে’ ও দুই শিশু পুত্র নিয়ে ৩ বছর ছিলাম, যা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়। আরেকটা এমন স্থান ও কাল ছিল তিব্বতের চ্যাং ট্যাং-এর বিশাল বিস্তৃত মালভূমি যেখানে ২০ বছর ধরে তিব্বতি অ্যান্টিলোপ, বুনো গাধা এবং ইয়াকদের নিয়ে কাটিয়েই যাচ্ছি।

আমার নেশা এবং পেশা এক দরদী পথিক ও কৌতূহলী গবেষক হিসেবে বিশ্বের নানা অঞ্চলের স্থানীয় বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, সরকারি লোকজনের সাথে সহযোগী হিসেবে যাবতীয় জ্ঞান আহরণের কাজে সাহায্য করেছে, প্রকৃতি সংরক্ষণের মূল বিষয়টিই এই তথ্যগুলোর উপরে প্রতিষ্ঠিত, যাদের ফলে দেশটির সামান্যতম নিসর্গ রক্ষার ক্ষেত্রে হলেও যেন আমরা জোরালো ভূমিকা রাখতে পারি, সেটার পক্ষে বলতে পারি। অনেক অনেক কাল আগেই আমি জেনেছি যে প্রকৃতি সংরক্ষণে জয়ী বলে কিছু নেই, বরং এখানে একজন অবশ্যই সেই প্রাণী এবং তাদের বাসস্থানগুলোর সাথে যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখবে, যারা আমাদের হৃদয় জয় করেছিল, এবং তাদের ধ্বংস ঠেকানো যেমন পাহাড়ী গরিলা বা আলাস্কার আর্কটিক জাতীয় উদ্যান। আমি প্রায়ই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হই যে কেন এই টান, যেখানে আমাদের চারপাশের জগত অনেক বেশী ক্ষতময় ও ভীত, কিন্তু সেখানে আমি হাল ছেড়ে দিই না, হতাশা আমাদের দগ্ধ করে বটে কিন্তু নিসর্গ সংরক্ষণ আমার জীবন, অবশ্যই আমাকে আশাবাদীই থাকতে হবে।

এই রচনা মূলত প্রাণীদের নিয়ে, সংরক্ষণের জটিল বিষয় নিয়ে নয়। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দ হচ্ছে কোন প্রাণীর দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি চুপচাপ দেখে যাওয়া ও লিপিবদ্ধ করা অথবা কেবল তাদের পদচিহ্ন দেখা, খাবার জায়গা ও যাতায়াতের অন্যান্য বিষয় খুঁটিয়ে দেখা। অন্য কোন প্রাণীর সন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে তার বর্ণনা ফুটিয়ে তুলে লিখতে ভালোবাসি। হ্যাঁ, একটা প্রাণীর চিন্তা ও চাহিদার মনোজগতে পৌঁছানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কিন্তু আমি তার জীবনের প্রাচুর্য নিয়ে লিখতে পারি, হয়তো খসখসে বৈজ্ঞানিক তথ্য কিছুটা অনুভূতি ও আবেগের কারণে ঢাকাও পড়ে যায়।

ডজন খানেক বইয়ের সারাংশ থেকে এখানে সারা বিশ্বের নানা অঞ্চল থেকে ১৯টি কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, মূলত সেই প্রাণীগুলো নিয়ে যাদের নিয়ে আমি গবেষণা করছিলাম বা যারা আমার কৌতূহলকে জাগিয়ে তুলেছে, এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের পুরো বাসভূমিও একই ভূমিকা পালন করেছে।
বইটির সূচিপত্র দেখায় যে বন্যপ্রাণী নিয়ে আমার আগ্রহ অপ্রিবরতিত থাকলেও আমার ক্যারিয়ারে কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আর আমি একটা বিশেষ প্রাণী নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা করি না। বরং সেই অবহেলিত অঞ্চলগুলো খুঁজি, যেখানে প্রকৃতি সংরক্ষণে হয়ত কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারব- যেমন সাম্প্রতিক ইরান, তাজিকিস্তান এবং আফগানিস্তানে। সেই সাথে আমার লক্ষ্য পুরো ইকো-সিস্টেম রক্ষা করার, যার মধ্যে স্থানীয় মানুষের সংস্কৃতিও অন্তর্গত যা এই এলাকার নিসর্গ রক্ষার সাথে জড়িত।

আমার কয়েকটা গবেষণা কিছু বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উপরে ভিত্তি করে চালানো, যেগুলো আমাকে তাড়িত করেছ, যাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ, বাকীরা নয়। যেমন সিংহের শিকার ধরা তাদের শিকার প্রাণীদের সংখ্যার উপরে আসলে কী ভূমিকা রাখে? ব্লু শিপরা কী আসলে ভেড়া নাকি ছাগল, তাদের আচরণ কী প্রমাণ করে? যদিও সত্য বলতে আমি সবসময়ই যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ও পরিকল্পনা এঁটে গবেষণা শুরু করি না। এই ধরনের চিন্তা-চেতনা মানুষের জন্য নতুন অথচ আবেগের অনুভূতি আমাদের প্রাচীন মস্তিষ্কের একটা অংশ। হিমালয়ে থাকার এক দুর্মর অনুভূতি আমাকে প্রথমে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল, তারপরেই না তুষার চিতা নিয়ে গবেষণা করা একটা লক্ষ্য পরিণত হলো। বাঘের শক্তিশালী অবয়ব বা পাণ্ডার চেহারা আমাদের মধ্যে এই অতলস্পর্শী আবেগের জন্ম দেয়, যা সেই প্রাণীদের সাথে আমাদের এক বন্ধনে জড়িয়ে ফেলে তাদের নিয়ে আরও জানতে উদ্বুদ্ধ করে, যা শুধুমাত্র কিছু নিষ্প্রাণ পরিসংখ্যানের তথ্য নয়। আমি দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। আমার অবশ্যই কোন প্রাণী বা এলাকার সাথে জড়িত হতে হবে বছরের পর বছরের জন্য, এবং প্রায়ই অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থায়। এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেই প্রাণীদের সাথে আমার দেখা হয় না বললেই চলে, যেমন লাওসে টাকিনের সাথে একবারই দেখা হলো, যা সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নেবার মতো এক সুখী মুহূর্ত!

আমি খুব সৌভাগ্যবান যে বন্যপ্রাণী গবেষণার স্বর্ণযুগের অংশ ছিলাম, পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে গত শতাব্দির শেষ অবধি যখন অনেক প্রাণীদের নিয়ে প্রথমবারের মত গবেষণা চলেছে, এমনকি হাতি বা জাগুয়ারের মতো পরিচিত প্রাণীদের নিয়েও। এবং সেই সাথে সেই সব অসাধারণ শিক্ষকদের পথিকৃৎ হিসেবে পেয়েছিলাম যারা গবেষক হবার পাশাপাশি বুনো প্রাণী এবং পরিবেশের স্পিরিচুয়াল দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে শিখিয়েছিলেন। আর আমার স্ত্রী ‘কে’,যে কঙ্গো থেকে শুরু করে চীন পর্যন্ত এত গুলো অভিযানে ফিল্ড ওয়ার্কে সহায়তা করেই যাচ্ছে, নানা এলাকায় কুঁড়েঘর এবং তাঁবুতে বাড়ী বানিয়ে আমার সাথে জীবনের সুখে ভাগাভাগি করে নিয়েছে বিশাল সব ত্যাগের মাধ্যমে।

এই কম্পিউটার এবং রিমোট সেন্সিং এর যুগে ধৈর্য ধরে প্রাণী লক্ষ্য করা একটা প্রাচীনপন্থী সুখ বলে মনে হতে পারে। এই পন্থার শুরুর দিকে একজন হিসেবে আমি ছিলাম এবং মাঝে মাঝে নিজেকে অতীতেই ফেলে আসা একজন বলে মনে হয় কারণ নিসর্গ-বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য এখন পরিবর্তিত হয়ে গেছে। বিশ্ব-বিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ের কোর্সগুলো এখন অবহেলিত, অথচ প্রকৃতি সংরক্ষণের মূল ভিত্তিই এই কোর্সগুলো। এগুলো সাধারণ তথ্য, সমস্যা চিহ্নিত করা ও বাস্তবতার নিরিখের সমাধান করতে শেখায়। এখন এমনকি সংরক্ষণের সংজ্ঞা পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে গেছে, প্রকৃতি এখন প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়, এখানে অর্থনীতির নিরিখেই সবকিছু দেখা হয়, এবং কেনা, বেচা ও বদলানোর হিসেব চলতে থাকে। সুন্দরের স্তব করা, বিস্মিত হওয়া, অন্য প্রাণী ও এলাকার সংরক্ষণের দায়িত্ব নেওয়া এখন আর অফিসিয়াল এজেন্ডায় স্থান পায় না। কিন্তু আমি মনে করতে চাই যে সংরক্ষণের আবেদন আমাদের হৃদয়েই পৌঁছাতে হবে, শুধুমাত্র মনে নয়। প্রাণীদের নানা ছবি তাদের সংকটাপন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা আমাদের মধ্যে এক উৎসাহী দরদের জন্ম দেয়, যা মনে রকিয়ে দেয় যে প্রাণীদেরও টিকে থাকার অধিকার আছে। নীতি বিবর্জিত প্রকৃতি সংরক্ষণ কোন সময়ই টিকে থাকতে পারে না।

আমার শুরুর দিকের প্রায় অযত্নে লালিত শিক্ষা দিন দিন প্রাণী ও তাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে, যত ধরনের পদক্ষেপ এবং কথা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সুন্দর পূজারী, নীতি, ধর্মীয় ইত্যাদি প্রয়োজন তার সবগুলোই আমরা করার চেষ্টা করি। যার ফলে ফিল্ডওয়ার্কে তৃপ্তি পাবার মত সময় আর এখন থাকে না। তাই এক হিসেবে হয়ত এই বইটি এক ধরনের স্মৃতিযাত্রা, যা আমার অতীতের নানা কাজের মাস ও বছরের ধারাবাহিক সাক্ষী।

এখানে যে সমস্ত প্রাণী ও তাদের বাসস্থানের কথা বলা হয়েছে, তারা আপাতত নিরাপদ, কিন্তু তাদের পক্ষে আমাদের লড়াই চলতেই থাকবে। এই লেখা গুলো পৃথিবী ব্যপী বিস্ময়ের এক রেকর্ড এবং স্মৃতি ভাগাভাগি করে নেওয়া। আমি আশা করছি পাঠকেরা লেখার মাধ্যমে সেই প্রাণী ও তাদের আবাসকে সংরক্ষণের জন্য শুধুমাত্র তারা অসীম সুন্দর এই কারণ ছাড়াও অনেক অনেক কারণ খুঁজে পাবেন।

উপরের লেখাটি জর্জ শ্যলারের বিখ্যাত বই A NATURALIST AND OTHER BEASTS' এর ভূমিকার অনুবাদ।

কী করছেন জর্জ শ্যলার? বা এখনো কী করছেন তিনি?

জর্জ শ্যলার হচ্ছেন ভবিষ্যতের শুদ্ধতম চিন্তা করা মানুষদের একজন। আলাস্কার বলগা হরিণ ও অন্যান্য প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন ১৯৫৬ সালে, ১৯৫৯ সালে তিনিই প্রথম বুনো গোরিলাদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেন আফ্রিকার কঙ্গোতে, ১৯৬৩ সালে ভারতে বাঘ নিয়ে কাজ করেন, ১৯৬৬তে আফ্রিকার সেরেঙ্গেটিতে সিংহদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেন, ১৯৬৯ সালে তুষার চিতা নিয়ে কাজ শুরু করেন হিমালয়ের নানা দেশে, ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের জাগুয়ার নিয়ে ১৯৮০ সালে পাণ্ডা নিয়ে চীনে, ১৯৮৫তে তিব্বতে অ্যান্টিলোপদের নিয়ে, ১৯৯৪ সালে লাওসের সাওলা নিয়ে। যে গবেষণা এখনো করেই যাচ্ছেন। এই সকল কাজই তিনি শুরু করেছেন প্রথম মানুষ হিসেবে, পেয়েছেন যুগান্তকারি সব তথ্য।

কিন্ত জর্জ শ্যলার কেবল একজন সেরা বিজ্ঞানী নন, শুধু সেরা বিজ্ঞানী হওয়া যথেষ্ট নয় পৃথিবীর জন্য, উনি একজন মনেপ্রাণে সংরক্ষণবিদ। আজ অবধি তাঁর হস্তক্ষেপে ২ লক্ষ বর্গ মাইলের উপরে জায়গা ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে সংরক্ষিত ( বাংলাদেশের কয়েক গুণ বড়), এবং এই কাজ করার জন্য অসাধারণ সব গবেষণা বাদ দিয়ে মাথামোটা একগুঁয়ে রাজনীতিবিদদের সাথে এক টেবিলে বসে তাদের দেশেরই এই অঞ্চলের , প্রাণীদের গুরুত্ব বুঝিয়ে অবশেষে প্রতিষ্ঠা করে ছেড়েছেন এই সব নিসর্গ ভূস্বর্গ।

Schaller's work in conservation has resulted in the protection of large stretches of area in the Amazon, Brazil, the Hindu Kush in Pakistan, and forests in Southeast Asia. Due in part to Schaller's work, over 20 parks or preserves worldwide have been established, including Alaska's Arctic National Wildlife Refuge (ANWR), the Shey-Phoksundo National Park in Nepal, and the Changtang Nature Reserve, one of the world's most significant wildlife refuges. At over 200,000 miles (320,000 km),[21] the Chang Tang Nature Reserve is triple the size of America's largest wildlife refuge, and was called "One of the most ambitious attempts to arrest the shrinkage of natural ecosystems,

পৃথিবীর সেরা ফিল্ড বায়োলজিস্ট বলা হয় উনাকে কিন্তু যেটা আমজনতা জানে না সেটা হচ্ছে জর্জ শ্যলার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম লেখকদের একজন। উনার সকল লেখায় তাঁর প্রাণী গবেষণা ও নিসর্গে অভিযান নিয়ে লেখা। জর্জ শ্যলারের সকল বই এক বিশাল ক্যানভাস লেখা কবিতা, মুগ্ধতা ছড়িয়ে থাকে প্রতি লাইনে, বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। আর এই সমস্ত চমৎকার অসাধারণ বইয়ের মাধ্যমে তিনি ছড়িয়ে ছেন প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা ও জ্ঞান।
উনার কারাকোরাম নিয়ে লেখা Stones of silence আমার পড়া হিমালয় নিয়ে লেখা শ্রেষ্ঠতম বই। গত কদিন ধরেই মুগ্ধতায় বিভোর হয়ে পড়ছি Tibet Wild , এমন বইও আর লেখা হয় নি তিব্বত নিয়ে।

আমার বন্ধুরা অনেকেই বলেন অন্য কিছু মানুষের জীবনের অর্জন দেখলে হতাশ হতাশ লাগে, ভাবি যে কী করলাম জীবনে। কিন্তু আমার লাগে না, ৮৫ বছরের জর্জ শ্যলারের ছবি দেখি, তাঁর বই পড়ি, স্বপ্ন দেখি তাঁর আদর্শ নিয়ে পৃথিবীর জন্য কিছু ছিটেফোঁটা কাজ করার, উদ্দীপ্ত হই, ভালোবাসায় ডুবে থাকি।

জর্জ শ্যলার সবসময়ই বলেছিলেন Conservation is a emotional work, it must start in your heart, সেই মন্ত্র মেনে মানুষের মনে মনে রোপণ করার চেষ্টা করি নিসর্গ রক্ষার মন্ত্র। আবার এক খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো জর্জ শ্যলার বলেছেন অনেক দশক আগেই যে You can never win in conservation, it is a never ending process , কিন্তু হাল ছাড়বেন না তিনি, চেষ্টা করে যাবেন শেষ দিন পর্যন্ত।

ছবি: 
07/07/2011 - 11:39অপরাহ্ন
07/07/2011 - 11:39অপরাহ্ন

মন্তব্য

কর্ণজয় এর ছবি

একজন, নিজের কথা বলতে গিয়ে সেদিন বলছিলেন
সবাই বলে মানুষ হও। কিন্তু আমার মনে হয়
মানুষ না আমাকে প্রাণী হতে হবে।
মানবজীবনকে বাউল দর্শনে বলে
দেবতারও আরাধ্য।
কেমন মানুষ সে?
বাউল দর্শনে যে মানুষ তত্ব, তা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে
দেবতারও আরাধ্য যে মানুষ তার স্বরূপ সন্ধান করে বেড়াতে হয়।
মানুষটার কথা শুনে মনে হলো
এই বোধ হয় সেই মানুষ।
আপনি যাকে বলছিলেন, শুদ্ধতম চিন্তা
একটা উচ্চতর আদর্শ
যে মানুষ নিজের অহমকিার খোলসকে ছুঁড়ে ফেলে
প্রকৃতির সন্তান হিসেবে নিজেকে চিনতে পেরেছে।
আপনার লেখা পড়তে গিয়ে
আমি নিজেকে প্রকৃতির সন্তান হিসেবে
দেখার চেষ্টা করি।
পারি অনেক সময়, অনেক সময় পারি না।
তবে এতটুকু বুঝি, টের পাই
বিষয়টা এরকমই।

তারেক অণু এর ছবি

সুন্দর উপলব্ধি

সোহেল ইমাম এর ছবি

উনার লেখা দ্যা ইয়ার অব গরিলা পড়েছিলাম। জীর্ণ পেপারব্যাক বইটা এখনও আছে আমার।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

তারেক অণু এর ছবি

বাহ, অসাধারণ বই

ওডিন এর ছবি

স্টোনস অফ সাইলেন্স পড়ছি এখন (আপনার কল্যাণেই)! অসাধারণ!

তারেক অণু এর ছবি

পড়ে রিভিউ দেন সচলে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।