১১০ বছর আগে বগুড়ার বন্যপ্রাণী

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বুধ, ১৬/০৬/২০২১ - ৯:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বড় প্রাণীদের মধ্যে বাঘ একসময় এখানে অসংখ্য ছিল অথচ এখন একেবারেই নেই। এটা অবিশ্বাস্য যে ১৮৬৪ সালের ডিসেম্বরে শিকারিদের একটি দল ২৫৭টি বাঘ এবং চিতাবাঘের খুলি নিয়ে এসে পুরস্কার হিসেবে ৭০০ টাকা নিয়ে গিয়েছিল।

চিতাবাঘেরা এখনও পাঁচবিবি এবং শেরপুরে ভালোই দেখা যায় এবং সমগ্র জেলার সবখানেই মাঝে মাঝে দেখা যায়। বুনো শুয়োর যে একসময় পাঁচবিবিতে ক্ষতিকর প্রাণী হিসেবে বিবেচিত ছিল এখন অনেক বিরল। বুনো মহিষ এবং হরিণেরা সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে। খরগোশ, সজারু এবং বনবিড়াল মাঝে মাঝে দেখা যায়। প্রায় সব গ্রামেই শেয়াল এবং খেকশিয়ালের দেখা মেলে। বগুড়া তার বিষধর সাপের জন্য কুখ্যাত, গোখরা এবং ক্রেট সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অন্যান্য অনেক জেলায় ফলের বেশ ক্ষতি করা কাঠবিড়ালি এবং বানরেরা এই জেলায় তুলনামূলকভাবে অনুপস্থিত।

শিকার যোগ্য পাখিদের মধ্যে স্থানীয় নাটাবটের ( Buttoquail) এবং কালা-তিতিরদেরকে ( Black Patridge) নানা ঝোপঝাড় এবং পাঁচবিবির ঘাসের বনে দেখা যায়। স্থানীয় সরালি এবং বালিহাঁসদের বিল এবং ছড়িয়ে থাকা পুকুরে দেখা যায়। পরিযায়ী বটেরা এই জেলায় খুবই কম আসে অথচ খুবই কাছের মালদা জেলাতে তাদের অনেক বড় সংখ্যায় দেখা যায় । পরিচয় হাঁসেরা বিশেষ করে ভুতিহাঁস, খুন্তেহাঁস, ল্যাঞ্জাহাঁস এবং নানা ধরনের তিলিহাঁস এরা এখানে ছোট ছোট দলে বড় বিল এবং ব্রহ্মপুত্রের চরে আসে। রাজহাঁস এবং খয়রা-চখাচখি ব্রহ্মপুত্রের চরে অনেক দেখা যায় কিন্তু তাদের শিকার করা প্রায় অসম্ভব। কাদাখোঁচা পাখিদের কোন কোন মৌসুমে অনেক বেশি দেখা যায় সাধারণত তারা ধান ক্ষেতের মধ্যে থাকে যদিও জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে মৌসুমের শেষের দিকে তারা বিলের ঘাস এবং পদ্ম পাতার ভেতর থাকতে পছন্দ করে। সারা শীতকালে নানা ধরনের চটকদের (Bunting) দেখা যায়।

মাছ- বগুড়া অঞ্চলের মোট মাছের তিন চতুর্থাংশই আসে দাওকোবা, বাঙালি হলহলিয়া, ইছামতি এবং মানাস নদী থেকে। সারিয়াকান্দি অঞ্চল মাছের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত। দাকোপ এবং বাঙালি নদী থেকে নানা বিল এবং গভীর জলাশয় মাছ প্রবেশ করে যেখানে তাদের শীতকালে ধরা হয়।

গত ২০ বছরে এখানে মাছের দামে ব্যাপক হেরফের হয়েছে। একটা ভালো আকারের রুই এর দাম এখন পাঁচ টাকা বা ছয়, অথচ ১০ বছর আগেই দামের অর্ধেক ছিল।

বগুড়ার নদী এবং পুকুরগুলোতে ৩৭ ধরনের মাছের রেকর্ড আছে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিতগুলো হচ্ছে কই ,খলিশা, রুই মৃগেল, নলা, পুটি, সরপুঁটি ,পাবদা, শিং,মাগুর, চিতল, টেংরা, আইড়, ইলিশ, পাঙ্গাশ, চেলা।

কচ্ছপ, কাঁকড়া এবং চিংড়ি ও সবখানে দেখা যায়।

- জে এন গুপ্ত ( J N Gupta)

( ১৯১০ সালে প্রকাশিত পূর্ববঙ্গ এবং আসামের ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার থেকে)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

কমন ক্রেটকে বাংলায় কালাচ নামে ডাকা হয় (পাতি কালকেউটে)। ব্যাণ্ডেড ক্রেট মনে হয় শাঁখামুঠি।

তারেক অণু এর ছবি

খবর নিচ্ছি, বিষধর সাপ হলেই একাধিক নাম এলাকা ভিত্তিক। সে এক চিত্তির-

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

গুপ্ত বাবুর বর্ণনায় করতোয়া নদীর নাম নেই কেন বুঝলাম না, এটা তো বগুড়ার এক অর্থে ট্রেডমার্ক নদী। আর এক নদী হল ইছামতি, এটা যে কত জেলায় আছে তার ইয়ত্তা নেই।

তারেক অণু এর ছবি

ইছামতী এখন অবধি ৮টা পেলাম বাংলাদেশে। একটার সাথে আরেকটার কোন যোগাযোগ নেই। নদী ও ভূপ্রকৃতির অধ্যায়ে আছে করতোয়ার কথা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।