দুর্যোধন পলাইছে। শল্য মরার পরপরই ভাগল দিছে দুর্যোধন...
কর্ণ মরার রাত্তিরে কৃপাচার্য আইসা দুর্যোধনরে কইছিলেন যুদ্ধ বাদ দিয়া দিতে। কিন্তু দুর্যোধনের কথা হইল- যুদ্ধ বাদ দিয়া আমার লাইগা যারা মরছে তাগো প্রতি অসম্মান দেখাইতে পারি না আমি। আমি শান্তিবাদী বুড়া হইয়া মরতে চাই না গুরু কৃপাচার্য। হয় আমি রাজা হইয়া মরব না হয় যুদ্ধ কইরা মরব সৈনিকের মতো...
তেরোটা বচ্ছর পর ভাতিজার কাছে ভাইঙা পড়ে কুন্তী- কৃষ্ণরে; পুতুল খেলার বয়সে নিজের বাপ মোরে দান কইরা দিছিল ভিনগ্রামে। বড়ো হইয়া বিবাহ করলাম এক সম্রাটরে কিন্তু রাজনীতির খপ্পরে পইড়া জঙ্গলে সংসার করলাম ষোলোটা বছর। বিধবা হইবার পর ভাসুরের চক্রান্তে আদাড়ে-বাদাড়ে ঘুইরা নাবালক পাঁচটা পোলারে বড়ো কইরা বানাইলাম রাজা। তারপর নাতি নাতনি লইয়া খেলার বয়সে পোলাদের অপকর্মে আরো তেরোটা বচ্ছর আমার বাচতে হইল দেবরের ভাতে...।
উত্তরার লাগে ছোটো ভাই অভিমন্যুর বিবাহে দ্রৌপদীর পাঁচ পোলা প্রতিবিন্ধ্য- সুতসোম- শ্রুতকর্মা- শতানীক আর শ্রুতসেনও আইসা হাজির হইছে বিরাটের দেশে। কিন্তু শৈশব থেকে তেরো বচ্ছর দূরে বড়ো হইয়া জোয়ান পোলারা যেমন না পারে মায়েরে মায়ের মতো ভাবতে তেমনি দ্রৌপদীও পারে না ফিরাইয়া আনতে তেরো বচ্ছর আগে হারাইয়া ফেলা মাতৃত্বের রূপ। তাই অভিমন্যুর বিবাহেও দ্রৌপদী নেহাত পাণ্ডববধূরূপে রূপের ঝলকানি দেওয়া সাজগোজ করে...
ভাগ্যের ভাটিযাত্রায় সম্রাজ্ঞী দ্রৌপদী এখন স্বৈরিন্ধী ছদ্মনামে মৎস্যদেশের রাণী সুদেষ্ণার দাসী। বহু হিসাব নিকাশ কইরাই তেরো নম্বর বচ্ছরে অজ্ঞাতবাস করতে পাণ্ডবরা বাইছা নিছে মৎস্যদেশের রাজা বিরাটের প্রসাদ। পাশাখেলার শর্ত হিসাবে দুর্যোধন যদি এখন পাণ্ডবদের খুইজা বাইর করতে পারে তয় আরো বারো বচ্ছরের বনবাস আর এক বচ্ছর অজ্ঞাতবাস এবং সেই অজ্ঞাতবাসেরও শর্ত একই সেইম...
নারদের বুদ্ধিতে একেক ভাইয়ের ঘরে দ্রৌপদীর বার্ষিক পালা ঠিক হইবার পর অর্জুন যাইচা অপরাধ করে পাঁচ বচ্ছরের নির্বাসন-শাস্তি নিয়া পথে পথে তিনটা বিবাহ কইরা শেষে ফিরছিল দেশে। আর বনবাসের শুরুতেই আবার সে অস্ত্র সংগ্রহের নামে আরো পাঁচ বচ্ছরের লাইগা চইলা যায় দ্রৌপদী থাইকা দূরে। তাই এইবার অর্জুন ফিরা আসলে সমস্ত পালাটালা ভাইঙ্গা যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীরে বরাদ্দ দেয় অর্জুনের ঘরে। কিন্তু এই অর্জুন তো আর সেই অর্জুন নাই।