পঞ্চসতীর যে পূজা হয় সেই সতীগো পয়লা তালিকায় সীতার নাম নাই; অথচ সতীত্বের পরীক্ষায় পাশ করা একমাত্র নারী হইলেন সীতা। ক্যামনে কী?
‘অহল্যা দ্রৌপদী কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা
পঞ্চকন্যা স্মরে নিত্যং মহাপাতক নাশনম্’
অবশেষে সব ছাইড়া দ্রৌপদী আর পঞ্চপাণ্ডব রওয়ানা দিছে বনবাসে। কুরুযুদ্ধের ছত্রিশ বছর পরে...
কুন্তীরা বনে যাবার বছর খানেক পর পাণ্ডবেরা বনে গিয়া দেইখা আসছিল তাদের। ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী কুন্তী ভীষণ দুর্বল আর বিদুর বদ্ধ উন্মাদ; ন্যাংটা হইয়া বনে বনে ঘোরে...
কাউরে কিছু না জানায়ে কুন্তী সিদ্ধান্ত নেয় ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারীর লগে বনবাসে যাবার। ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারীর বানপ্রস্থে যাওয়ার কথা সকলেই জানত। যুদ্ধের পনেরো বছর পরে ভীমের জ্বালায় ধৃতরাষ্ট্র বাধ্য হইছেন বানপ্রস্থ বাইছা নিতে...
অভিষেকের আসরে হায় হায় করে যুধিষ্ঠির- মানুষ হারতে হারতে জিতে আর আমি হতভাগা জিততে জিততে হারি। কী পাইলাম আমি যুদ্ধ কইরা?
যুদ্ধ শেষ হইয়া গেছে। বাকিসব খুচরা আবেগ আর হিসাব নিকাশও শেষ। ভাই আর পোলাদের দুঃখ সামলাইয়া উইঠা দ্রৌপদী এক দফা দাবি জানাইছিল পাণ্ডবগো কাছে- অশ্বত্থামারে হত্যা কইরা তার মাথার মুকুটের মণি আইনা দিতে হবে তারে। অন্যথায় সে আত্মঘাতী হইয়া পোলা আর ভাইদের সাথে যাবে...
কৃষ্ণের পাঞ্চজন্য শঙ্খের লগে অর্জুনের দেবদত্ত শঙ্খ আর তার উত্তরে ভীষ্মের শঙ্খের নাদে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু হইয়া যায়। মাঠের পশ্চিমে কুরু আর পূর্বে খাড়ায়া আছে পাণ্ডব-পাঞ্চাল। দুই রঙের পোশাকে দুই পক্ষ দাঁড়াইছে যাতে পরিষ্কার চিনা যায় পাট্টি আর বিরোধীদল। হাতির সামনে হাতি; ঘোড়ার সামনে ঘোড়া; পায়দল খাড়া পায়দলের সম্মুখে; গদারু গদা বাগাইয়া আছে গদারুর দিকে; তিরন্দাজ-তিরন্দাজ মুখোমুখি আর বর্শাতি-ভল্লব খাড়া
কুন্তীবুড়িটা বহুত হতভাগি হলেও ভাবতে পারে নাই যে নিজের সবচে বড়ো দুর্ভাগ্যটা নিজেরই গর্ভে জন্ম দিছে সে...
কুরুসভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয় নাই। যুধিষ্ঠিরের লগে আলোচনা কইরা সিদ্ধান্ত জানাইব কইয়া সিদ্ধান্তের লাইগা কৃষ্ণ এখন বইসা আছে কুন্তীর সামনে। কারণ কর্ণের বিপক্ষে পাণ্ডবদের সে যুদ্ধে জড়াবে কি না সেই সিদ্ধান্ত দিতে পারে একমাত্র কুন্তী....
তেরোটা বচ্ছর পর ভাতিজার কাছে ভাইঙা পড়ে কুন্তী- কৃষ্ণরে; পুতুল খেলার বয়সে নিজের বাপ মোরে দান কইরা দিছিল ভিনগ্রামে। বড়ো হইয়া বিবাহ করলাম এক সম্রাটরে কিন্তু রাজনীতির খপ্পরে পইড়া জঙ্গলে সংসার করলাম ষোলোটা বছর। বিধবা হইবার পর ভাসুরের চক্রান্তে আদাড়ে-বাদাড়ে ঘুইরা নাবালক পাঁচটা পোলারে বড়ো কইরা বানাইলাম রাজা। তারপর নাতি নাতনি লইয়া খেলার বয়সে পোলাদের অপকর্মে আরো তেরোটা বচ্ছর আমার বাচতে হইল দেবরের ভাতে...।
ভীমেরে সামলাইতে পারে দ্রৌপদী কিন্তু সে এখন ভীমের কোয়ালিশন হইয়া যুধিষ্ঠিরের অপজিশন। ভীমরে কিছুটা সামলাইতে পারত অর্জুন কিন্তু অস্ত্র জোগাড়ের নামে সে পলাইছে বনবাস ছেড়ে। এই অবস্থায় দৌড়ের উপর না রাখলে ভীমেরে সামলানো কঠিন। তাই একদিন ভবঘুরে মুনি লোমশরে পাইয়া তার নেতৃত্বে যুধিষ্ঠির তীর্থ ভ্রমণের একটা পরিকল্পনা বানাইয়া ফালায়। কিন্তু তীর্থযাত্রায় দরকারি মালপত্র বহন করব কেডায়?...
তার পোলা যদি তার পোলার মায়ায় আটকাইয়া যায় তবে সবকিছু ভেসে যাবে তার। তাই ভীমেরে সংসারছাড়া কইরা কুন্তী পলায়। কই যাইব কোথায় যাইব কিছু ভাবে নাই; বিদুরের লগেও যোগাযোগ বন্ধ বহুদিন... কিন্তু কোনো একজন মানুষের পরামর্শ এখন দরকার তার। আর এই জঙ্গলে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ছাড়া কোনো বান্ধব নাই কুন্তীর...
বন বদলাইয়া কুন্তী গিয়া হাজির হয় শ্বশুর দ্বৈপায়নরে ডেরায়- পিতা। বড়োবেশি বেচইন আছি সবকিছু নিয়া...