মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১৩

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বুধ, ২৮/০১/২০১৫ - ৪:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাউরে কিছু না জানায়ে কুন্তী সিদ্ধান্ত নেয় ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারীর লগে বনবাসে যাবার। ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারীর বানপ্রস্থে যাওয়ার কথা সকলেই জানত। যুদ্ধের পনেরো বছর পরে ভীমের জ্বালায় ধৃতরাষ্ট্র বাধ্য হইছেন বানপ্রস্থ বাইছা নিতে...

সম্রাট যুধিষ্ঠির তারে মাথায় কইরা রাখছিল যুদ্ধের পর; যেমনটা নিশ্চিত কইরা গেছিলেন দ্বৈপায়ন। রাজকার্যে তার কোনো পরামর্শ কিংবা সিদ্ধান্তও ফিরাইত না সম্রাট। বাকি পাণ্ডবরাও ধৃতরাষ্ট্ররে কুরুপিতা না ভাইবা বাপের বড়োভাই বইলাই মানত। কিন্তু ব্যতিক্রম সেই ভীম; যার সম্পর্কে ধৃতরাষ্ট্র কইতেন- প্রতিশোধ ভোলে না কুন্তীর ট্যারা-চোখ পোলা...
ভীম যাইচা গিয়া ধৃতরাষ্ট্ররে শুনাইয়া শুনাইয়া বর্ণনা করত তার কোন পোলারে কেমনে মারছে সে...

একটা পিতা। অন্ধ বৃদ্ধ অসহায়। রাজ্যবিলাসিতায় বড়ো বেশি লোভ ছিল তবু পনেরো বছরের বেশি তিনি হন্তারকের মুখে সহ্য করতে পারলেন না নিজ পোলাদের বীভৎস মৃত্যুর বর্ণনা শ্রবণ। তিনি গিয়া যুধিষ্ঠিররে কন- বয়স হইছে বাপ। এইবার বানপ্রস্থে গিয়া ভজন সাধন কইরা মরবার অনুমতি দাও...

যুধিষ্ঠির রাজি হয় নাই। কিন্তু দ্বৈপায়ন আইসা নিশ্চিত করেন তার আন্ধাপোলার মুক্তির পথ- তারে বনে যাইতে দেও যুধিষ্ঠির...
বনে যাইবার সিদ্ধান্ত নিয়া তিনি চাইলেন তার পুত্র; তার সকল মৃত শুভাকাক্সক্ষীর নামে শেষবারের মতো কিছু দান খয়রাত করেন। কিছু পয়সা চাইলেন তিনি সম্রাটের কাছে। যুধিষ্ঠির বিনা প্রশ্নে রাজি। অর্জুনও রাজি কিন্তু অর্থমন্ত্রী ভীম রাজি না- ধৃতরাষ্ট্রের কুলাঙ্গার পোলাগো লাইগা একটা পয়সাও দেওয়া যাবে না...
যুধিষ্ঠির তারে তেলায়; অর্জুন নকুল সহদেব তারে মিনতি করে কিন্তু ভীম নড়ে না- ধৃতরাষ্ট্রের পোলরা নরকে পচুক। ভীষ্ম দ্রোণের নামে আমরাই দান করব আর চাইলে নিজস্ব তহবিল থাইকা কুন্তী দান করতে পারেন পাপিষ্ঠ কর্ণের নামে...

যুধিষ্ঠির আর অর্জুনের ব্যক্তিগত ভাতার টাকায় ধৃতরাষ্ট্র দান খয়রাত করেন তার পোলাদের নামে। কিন্তু কর্ণ প্রসঙ্গে ভীমের কথাটা কুন্তীর কানে যায়। কুন্তী সিদ্ধান্ত নিয়া নেয়- যে পোলারে জন্ম দিয়া বুকের এক ফোটা দুধও দেই নাই অথচ তার কাছ থাইকাই মায়ের পরিচয় দিয়া চাইয়া আনছি তোগো জীবন। যারে জন্ম দিছি আমি আবার তোগো লাইগাই নিশ্চিত করছি যার মরণ। ...হা ভীম। আমি চাইলে তোগোর পুরা রাজ্যটাই হইতে পারত কর্ণের। সেই মরা কর্ণের আত্মার শান্তির লাইগা দ্ইুটা পয়সা দিতে তোগো অত লাগে? অতই ক্ষিদা তোগো পেটে? খা। তবে। তোগো সম্পদ তাইলে তোরাই খা...

কর্ণের মৃত্যুতে কাঁদে নাই কুন্তী। কিন্তু আইজ কর্ণের লাইগা তার চোখ ভাইঙা আসে জল- আমার মরা পোলার লাইগা যে বাড়িতে দুইটা পয়সা হয় না; সেই বাড়ির অন্ন যেন আর কোনোদিনও না উঠে না কুন্তীর মুখে...

ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারীর লগে বনবাসে রওয়ানা দেয় কর্ণমাতা কুন্তী। তার পথে আইসা খাড়ায় প্রজারা। তার পায়ে হুমড়ি খাইয়া পড়ে সম্রাট যুধিষ্ঠির। পথ আগলে দাঁড়ায় ভীম। কান্তে কান্তে মাটিতে লুটায় নকুল সহদেব দ্রৌপদী...

হাঁটতে হাঁটতে কুন্তী যুধিষ্ঠিররে কয়- সবাইরে দেইখা রাখিস। ভীমেরে পথ থাইকা সরাইয়া কয়- তোগো যাতে কারো কাছে হাত পাততে না হয় তার লাইগা আমি তোগো চালায়া নিছিলাম। এখন আমারে আমার পথে যাইতে দে...

বিদুর পা মিলায় বনবাসী দলে। আজীবন অনুচর সঞ্জয়ও চলে ধৃতরাষ্ট্রের লগে...

বনে চলেন শতপুত্র হারানোর শোক নিয়া গান্ধারী আর সাথে সাথে চলেন পাণ্ডবজননী কুন্তী; তার মনেও সন্তান হারানোর দুখ...

মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১২
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১১
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৯
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১০ [দুর্যোধন]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৯ [কর্ণ ৪]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৮ [দ্রোণ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৭ [কর্ণ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৬ [কর্ণ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৫ [কর্ণ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৪
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৮
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৭
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৬
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৫ [ঘটোৎকচ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৪: ঘটোৎকচ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৩: ঘটোৎকচ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ২
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ১
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ১]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ১। সত্যবতী


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার ঘটার পর্বগুলা কিন্তু অসাধারণ হইছে। আর এই শেষ দিকে আইসা একটা অতৃপ্ত বিষাদ ছড়াইয়া দিছেন !


কোন্ সপ্তায় আত্মপ্রকাশ ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

"কুরুপিতা না ভাইবা" - টেকনিকালি পান্ডবরাও তো কৌরব।

"একটা পিতা। অন্ধ বৃদ্ধ অসহায়।" আমার তো মনে হয় যত দোষ সবই এই ধৃতরাষ্ট্রের।
ভীমের রাগটা কিন্তু খুবই স্বাভাবিক। আর রাগ ঝাড়ার সব পাবলিক মারা গেলে ধৃতরাষ্ট্র ছাড়া আর কাকে খোচা দেবে? তবে কর্ণের নাম টাকা না দেওয়াটা একটু বাড়াবাড়ি। আসলেই দেয়নি?

ভীষ্মের বয়সের রহস্যের একটা সুরাহা পেয়েছি মনে হয়। অভিমন্যু যদি ষোলো বছর বয়সের আগেই বাবা হতে পারে, তাহলে সম্ভবত সে সময়ের লাইফ এক্সপেকট্যান্সী বা জেনারেশন গ্যাপ ছিল মোটামুটি ১৬ - ২০ বছর। অনেকটা ইউরোপের 'ডার্ক এজ' এর সময়ের মত। সে হিসেবে ভীষ্মের বয়স = ২০ (অভিমন্যুর জেনারেশন ) + ২০ (অর্জুন) + ২০ (পান্ডু) + ২০ (বিচিত্রবীর্য) = ৮০ র মতো।

-সো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।