মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১০ [দুর্যোধন]

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৫/০১/২০১৫ - ৩:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দুর্যোধন পলাইছে। শল্য মরার পরপরই ভাগল দিছে দুর্যোধন...

কর্ণ মরার রাত্তিরে কৃপাচার্য আইসা দুর্যোধনরে কইছিলেন যুদ্ধ বাদ দিয়া দিতে। কিন্তু দুর্যোধনের কথা হইল- যুদ্ধ বাদ দিয়া আমার লাইগা যারা মরছে তাগো প্রতি অসম্মান দেখাইতে পারি না আমি। আমি শান্তিবাদী বুড়া হইয়া মরতে চাই না গুরু কৃপাচার্য। হয় আমি রাজা হইয়া মরব না হয় যুদ্ধ কইরা মরব সৈনিকের মতো...

আঠারো নম্বর দিন কুরুপক্ষ শুরু করছিল শল্যরে সেনাপতি কইরা আর পাণ্ডবরা শুরু করছিল শল্য মারার পরিকল্পনা কইরা...

সহদেব মারে শল্যের পোলারে। ভীম মারে শল্যের ঘোড়া; শল্যের সারথি। কৃপাচার্য শল্যরে সরাইয়া নিলে পাণ্ডব বাহিনী আবারো গিয়া তারে ধরে। অতদিন যে যুধিষ্ঠির মেন্দামারা রাজা হইয়া আছিল কর্ণ মরার পরে সেও আইজ বিশাল এক বীর। সে সকলরে ডাইকা কয়- তোমরা সকলেই বহুত বীর মারছ। আইজ মোরে শল্য মারার সুযোগখান দেও...

যুদ্ধ শুরুর দিন যুধিষ্ঠির শল্যরে মামু কইয়া অনুরোধ করছিল সাহায্যের আর আইজ নিজেই ঘোষণা করল শল্যের সহযোগিতার পুরস্কার- নিজ হাতে মারা...

ভীম আগে; সাত্যকি ডানে; ধৃষ্টদ্যুুম্ন বামে; অর্জুন পিছনে আর মাঝখানে যুধিষ্ঠির। দ্বিতীয়বার অশ্বত্থামা শল্যরে সরাইয়া নিয়া গেলেও পাণ্ডবরা আবার গিয়া তারে ধরে...

শল্য যুধিষ্ঠিরের ঘোড়া মারে। ভীম মারে শল্যের ঘোড়া। শল্য ঢাল আর তলোয়ার নিয়া আগাইলে ভীম শাবল দিয়া ফালাইয়া দেয় শল্যের ঢাল-তলোয়ার আর যুধিষ্ঠির তার বুকে ঢুকাইয়া দেয় একখান বর্শা...

কুরু সৈনিকদের পলায়ন আর ঠেকাইতে পারে না কেউ। দুর্যোধনের কথায় তারা একবার অস্ত্র ধরে তো আরেকবার দেয় দৌড়। দুর্যোধনের শেষ হাতি বাহিনীও ভীম শিখণ্ডী সাত্যকি আর ধৃষ্টদ্যুুেম্নর হাতে বিনাশ হইলে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ সাংবাদিক সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্ররে সংবাদ সাপ্লাই বাদ দিয়া চাইরজন অনুচর নিয়া খাড়ায় ধৃতরাষ্ট্রের পোলাদের পক্ষে...

অর্জুন তাগো হাতে পায়ে মারে তীর; সাত্যকি তাগো লাঠি দিয়া পিটায়...

অর্জুন হিসাব করে কৃষ্ণের লগে- ধৃতরাষ্ট্রের পোলাগো মাঝে বাকি আছে দুর্যোধন আর সুদর্শন। তাগো দুই ভাইর লগে আছে অশ্বত্থামা-কৃপাচার্য-সুশর্মা-শকুনি-উলুক আর কৃতবর্মা; এই ছয়জন। আর কিছু ঘোড়া এবং পদাতিক...

হিসাব শেষ কইরা অর্জুন সাত্যকিরে কয়- আমার মনে লয় দুর্যোধন ভাগল দিছে। সঞ্জয়রে প্যাদানি দিলে তার সংবাদ পাওয়া যাবে। এ কুরুপক্ষের সবকিছু জানে...

পাণ্ডবগো ঝাড়া আক্রমণে অর্জুনের হাতে মরে সুশর্মা; ভীমের হাতে মরে দুর্যোধনের ভাই সুদর্শন; সহদেবের হাতে মরে শকুনি আর শকুনিপুত্র উলুক। বাকি থাকে মাত্র চাইরজন; কৃপাচার্য-অশ্বত্থামা-কৃতবর্মা আর দুর্যোধন। এবং এই চাইরজনই দিছে ভাগল...

পিছমোড়া কইরা হাত বাইন্ধা ধৃষ্টদ্যুুেম্নর লগে সাত্যকি সঞ্জয়রে পিটায়- দুর্যোধন কই?
এর মাঝেই শোনা যায় একটা ধমক- খবরদার...

স্বয়ং কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন খাড়া সাত্যকি আর ধৃষ্টদ্যুুের সামনে- সঞ্জয়রে ছাড়ো...

দ্বৈপায়নের আদেশে মুক্তি পাইয়া সঞ্জয় দৌড়ায়। যাইতে যাইতে দুই মাইল গিয়া দেখে একলা একটা গদা নিয়া দুর্যোধন পলায়। দুর্যোধন কয়- তুমি গিয়া বাবারে কইও তার পোলা দুর্যোধন দ্বৈপায়ন হ্রদে লুকাইয়া আছে। আমি আর রাজ্যে ফিরা যামু না সঞ্জয়। আমার ভাই নাই; বন্ধু নাই; সৈনিক নাই; পুত্ররা মারা গেছে যুদ্ধে। এমন অবস্থায় আধমরা হইয়া বাইচা আছি আমি...

দুর্যোধন লুকাইয়া থাকে হ্রদের পাড়ে জঙ্গলে আর একটু পরেই সেইখানে আইসা হাজির হয় কুরুপক্ষের বাকি তিনজন; কৃপাচার্য কৃতবর্মা আর অশ্বত্থামা। অশ্বত্থামা কয়- আমরা তো এখনো মরি নাই তবে রাজার পলানোর কী কাম?

সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্যোধনের কোনো সংবাদ না পাইয়া যুদ্ধ শেষ বইলাই ধইরা নেয় সকলে। কুরুপক্ষের জোগানদারেরা কুরুক্ষেত্রে আর কোনো কাম নাই ভাইবা জিনিসপত্র নিয়া ফিরতে শুরু করে রাজ্যের দিকে। পাণ্ডবেরাও শিথিল।

যুদ্ধের শুরুর দিন ধৃতরাষ্ট্রের দাসী গর্ভজাত যে পুত্র পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিছিল; সেই যুযুৎসু যুধিষ্ঠিররে অনুমতি নিয়া হস্তিনাপুর রওয়ানা দেয় পিতা আর কাকা বিদুররে সকল সংবাদ দিতে...

সন্ধ্যায় আবারও কৃপ অশ্বত্থামা আর কৃতবর্মা গিয়া হাজির হয় দুর্যোধনের কাছে- রাজা চলো আবার গিয়া যুদ্ধ করি...
দুর্যোধন কয়- কাইল সকালে যুদ্ধ করব আবার। আইজ রাত্তিরে বিশ্রাম নেন সকলে...
অশ্বত্থামা কয়- আমি শপথ কইরা কই; আইজ রাত্তিরে আমি একলাই ঘটামু কিছু...

পাণ্ডবরা দুর্যোধনরে খুইজা না পাইয়া শিবিরে ফিরে...

ভীমের আছিল কিছু অতিরিক্ত অভ্যাসের সাথে কিছু মানুষের লগে বাড়তি যোগাযোগ। চোলাই মদ আর বিচিত্র শিকারের মাংসে আছিল তার দারুণ রুচি। তাই আশপাশের শিকারিরা ভালো শিকার পাইলে তা নিয়া আসতো ভীমের কাছে পুরস্কারের আশায়। তার সেই শিকার জোগানদার দলের লোকরা সন্ধ্যায় বন থিকা ফিরার সময় দুর্যোধনরে দেইখা লাফাইয়া উঠে- আরে; ভীম ভাইয়ের লগে মারামারি কইরা হুমুন্দির পুত দেখি এইখানে লুকায়...

তারা সোজা আইসা হাজির হয় ভীমের তাবুতে আর সন্ধ্যাকালেই পাণ্ডবেরা রওয়ানা দেয় দ্বৈপায়ন হ্রদে। তাগোরে দেইখা কৃপাচার্য অশ্বত্থামা আর কৃতবর্মা সইরা যায় আর দুর্যোধন লুকাইয়া থাকে বনে...

কিন্তু হ্রদের পাড়ে অসংখ্য ঝোপঝাড়। যুধিষ্ঠির কয়- এই অন্ধকার বনে দুর্যোধনরে কই খুইজা পাই?
কৃষ্ণ কয়- বন তছনছ কইরা তারে পাওয়া যাবে না। আপনে চিল্লাইয়া তারে টিটকারি মারেন। দুর্যোধন মরতে রাজি হইব কিন্তু টিটকারি সহ্য করব না...

জীবনে একটামাত্রবার দুর্যোধনের মূল নাম ধইরা ডাইকা উঠে কেউ; আর সেইটা যুধিষ্ঠির- সূর্যোধন...। নামটা তার বাপে রাখছিল বড়ো আহ্লাদ কইরা। কিন্তু অকামে কুকামে তার সূর্যোধন নামটা বদলাইতে বদলাইতে দুর্যোধন হইয়া যায়....

বনের পাড়ে অন্ধকারে খাড়াইয়া যুধিষ্ঠির তার আদি নাম ধইরা ডাকে- সূর্যোধন। বীর সূর্যোধন কাপুরুষের মতো লুকাইয়া আছ ক্যান? আসো যুদ্ধ করো আমাগো লগে। তুমি যদি জানের ডরে পলাইয়া থাকো তয় যারা তোমার লাইগা মরল তাগো কাছে পরলোকে মুখ দেখাইবা কেমনে?

যুধিষ্ঠির চিল্লায় কিন্তু অন্যদিকে কোনো সাড়াশব্দ নাই। যুধিষ্ঠির কয়- এখন বুঝতে পারতাছি। তুমি মূলত আছিলা একটা কাপুরুষ কিন্তু করতা বীরের বড়াই...

এমন টিটকারিতে দুর্যোধনের সাড়া না দিয়া উপায় নাই। বনের ভিতর থাইকা সে চিল্লাইয়া উঠে- মুখ সামলাইয়া কথা কবা যুধিষ্ঠির। দুর্যোধন জানের ডরে পালায় নাই। আমি নিরিবিলি বিশ্রামের লাইগা এইখানে আসছি। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো; আমি তোমাগো সকলের লগেই যুদ্ধ করব...
যুধিষ্ঠির কয়- সেইটাতো আমি জানিই। আমিও তো জানি যে দুর্যোধন মরলে বীরের মতো যুদ্ধ কইরা মরব তবু কাপুরুষের মতো পলাইয়া বাঁচব না সে...

আড়াল থাইকা দুর্যোধন কয়- এর লগে বাচা মরার সম্পর্ক নাই। আমার সকল আত্মীয় বন্ধু নিহত। তাদের বাদ দিয়া রসকষহীন বিধবা দুনিয়ায় আমি বাঁচতেও চাই না আর। যতদিন জৌলুস আর ফুর্তি নিয়া রাজত্ব করা যায় ততদিন আমি তা করছি। এখন বুড়া বয়সে বিধবাভারাক্রান্ত রাজ্যের রাজত্ব তুমিই করো যুধিষ্ঠির। আমার আর কোনো দাবি নাই...

এই হইল দুর্যোধন। ডরে লুকাইয়া আছে; যুদ্ধে হাইরা ভাগছে তবু তা স্বীকার যাইব না। বনের আড়ালে লুকাইয়া সে রাজ্য দান কইরা দিলো পাণ্ডবদের। যেন আমার যা খাওয়ার খাইছি অতক্ষণ; এইবার দয়া কইরা তোমাগো ছোবড়া চুষতে দিলাম...

যুধিষ্ঠিরও ক্ষেইপা উঠে- আমি এইখানে তোমার দান নিতে আসি নাই। রাজা যদি হইতেই হয় তবে তোমারে মাইরাই তা হমু। তাছাড়া তোমার তো এখন রাজ্যই নাই; তয় তুমি কেমনে তা আমারে দান করো? এমন কাপুরুষের মতো আড়ালে থাইকা বকবক বন্ধ কইরা বাইরে আসো। যুদ্ধ করো...

বন দাবড়াইয়া উইঠা খাড়ায় দুর্যোধন- তোমরা অতগুলা মানুষ রথ আর অস্ত্রপাতি নিয়া নিরস্ত্র একলা আমার লগে যুদ্ধ করতে আসছ যুধিষ্ঠির? তোমরা যদি একজন একজন কইরা আসো তবে আমি একে একে তোমাগো সবাইরে নিশ্চিত মারব...

দুর্যোধন আধা প্রকাশ্য হইছে। যুধিষ্ঠির তারে পুরা প্রকাশ্য করার লাইগা কিছু না ভাইবাই কইয়া বসে- সাবাস দুর্যোধন। আমি জানি যুদ্ধে ডরাও না তুমি। ঠিকাছে; আমি তোমারে কইতাছি তুমি আসো এবং তোমার পছন্দমতো অস্ত্রে আমাগো যে কোনো একজনের লগেই যুদ্ধ করো। আমাগো মধ্যে যে কোনো একজনরে হারাইতে পারলেই তুমি তোমার কুরুরাজ্য ফিরত পাইবা; সেই নিশ্চয়তা দিতাছি আমি...

যুধিষ্ঠিরের কথায় কৃষ্ণ চমকাইয়া উঠে- হালা জুয়াড়িটা ঘাটে আইসা আবার নৌকা ডুবাইয়া দিলো। সে গিয়া যুধিষ্ঠিররে ধরে- কী কথা কইলেন আপনে? আপনি যে কইলেন যেকোনো একজনরে হারাইলেই সে রাজ্য ফিরা পাবে? আপনি তো সব ডুবাইয়া দিলেন। গদা যুদ্ধে দুর্যোধনের ক্ষমতা আপনি জানেন? সঠিক নিয়মে গদাযুদ্ধে দুর্যোধনরে হারানোর মতো কোনো মানুষ তো দূরের কথা; দেবতার নামও আমার জানা নাই....

কৃষ্ণ পুরাই হতাশ- আপনে একবার কারো লগে কোনো কথাবার্তা না কইয়া শকুনির কাছে জুয়া খেইলা সকলরে বিপদে ফালাইছিলেন। আইজ আবার আরেকটা বেকুবি কইরা পুরা যুদ্ধটাই মাটি কইরা দিলেন....

কৃষ্ণ হা হুতাশ করে- আমাগো মধ্যে একমাত্র ভীমই পারে তার সামনে খাড়াইতে। ভীমের শক্তি দুর্যোধন থাইকা বেশি। ভীমের সহ্য ক্ষমতাও বেশি কিন্তু গদার লড়াইয়ে দুর্যোধন বেশি এক্সপার্ট। তাও যদি ভীম যায় আমি তারে বুদ্ধি দিয়া সাহায্য করতে পারি। কিন্তু আপনি কিংবা অর্জুন কিংবা নকুল সহদেব তার সামনে গদা নিয়া খাড়াইলে কেমনে কী?...

অন্ধকারে বাকি পাণ্ডবেরা থ মাইরা থাকে যুধিষ্ঠিরের বেকুবিপনায়। কৃষ্ণ প্রায় বিলাপ করে- রাজা হইবার লাইগা কুন্তীর পোলাগো জন্ম হয় নাই। বনবাস আর ভিক্ষা কইরা বাইচা থাকার লাইগাই ফুপি জন্ম দিছিল এইসব কুলাঙ্গার...

ভীম আইসা ধরে কৃষ্ণরে- চিন্তা কইরো না। দুর্যোধনরে মারতে অসুবিধা হইবা না আমার। আমার গদা দুর্যোধনের গদার থিকা দেড়গুণ ভারী...
কৃষ্ণ কয়- তোমার হাতেই যুধিষ্ঠিরে সিংহাসন আসব সন্দেহ নাই। কিন্তু ভাইজানের বেকুবির লাইগা এখন যদি দুর্যোধন অন্য কারো লগে যুদ্ধ করতে চায়?
ভীম কয়- তা করব না। দুর্যোধনরে আমি চিনি। বাকি পাণ্ডবরা মাথা পাইতা দিলেও আমারে রাইখা সে অন্যদের মারব না। আমারে গদা যুদ্ধে হারাইয়া বাকিদের তিলে তিলে মারাই তার বহুদিনের খায়েশ। জয়ের থাইকা বীরত্বটাই তার কাছে বড়ো...
কৃষ্ণ কয়- সেইটাই ভরসা। দুর্যোধনের অহংকার আর বীরত্বের গরিমাই এখন আমাগো শেষ ভরসা। কিন্তু বলা যায় না হঠাৎ কইরা যদি তার মাথায় রাজনীতি খেইলা যায়? যদি সে তোমারে বাদ দিয়া অন্য কারো লগে যুদ্ধ করতে চায়?
ভীম কয়- সেই ব্যবস্থা আমি করতাছি। সে কাউরে বাছার আগেই আমি তারে যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ দিয়া গালাগালি শুরু কইরা দিমু। তাইলে সে যেমন না পারব আমার চ্যালেঞ্জ ফিরাইতে তেমনি না পারব অন্যদের বিষয়ে ভাবতে...

অন্ধকারে বন নাড়াইয়া গদা হাতে দুর্যোধন প্রকাশ্য হইবার আগেই ভীম শুরু করে খিস্তি খেউড়- আয় পাপিষ্ঠ আয়। তুই আর তোর বাপে মিলা যত পাপ করছস আইজ তার হিসাব চুকামু আমি। তুই রাজসভায় দ্রৌপদীরে লাঞ্ছনা করছিলি। শকুনির লগে মিলা আমাগো রাজ্য নিছিলি। সবার মরার ব্যবস্থা কইরা এখন আমার ডরে আইসা বনে লুকাইছস। আয়। বাইরাইয়া আমার লগে মারামারি কর। তোর যুদ্ধের শখ আইজ মিটামু আমি হালা ডরালুক। সাহস থাকলে আইসা আমার সামনে খাড়া...

দুর্যোধন গদা কান্ধে সোজা আইসা খাড়ায় ভীমের সামনে- মশা মাইরা হাত লাল করার অভ্যাস দুর্যোধনের নাই। গদা দিয়া পিটাইয়া যদি কাউরে মারতে হয় তবে তোরে মাইরাই কিছুটা আরাম পামু আমি। তারপর বাকিগুলারে তো পা দিয়া ডলা দিলেই হয়...

দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরের দিকে ফিরে- ভীমের লগে লড়াই করব আমি...

হাফ ছাইড়া বাঁচে কৃষ্ণ। যুধিষ্ঠিরও বাইচা যায় নিজের বেকুবি থেকে...

বনের অন্ধকারে যখন ভীম আর দুর্যোধন গদা নিয়া মুখোমুখি ততক্ষণে সংবাদ পাইয়া কুরুক্ষেত্র থাইকা বহু মানুষ আইসা হাজির হইছে দ্বৈপায়ন হ্রদের তীরে। কর্ণ আর অর্জুনরে তীর যুদ্ধ যেমন কেউ মিস করতে চায় নাই তেমনি ভীম আর দুর্যোধনের গদাযুদ্ধও মিস করতে চায় না কেউ। কিন্তু এইবার একজন বাড়তি মানুষও আইসা উপস্থিত। তিনি বলরাম। তারে দেইখা কৃষ্ণ কয়- ভালৈই হইছে। তোমর দুই শিষ্যের লড়াই দেখতে পাইবা এখন...
বলরাম কয়- গদা যুদ্ধের লাইগা এইটা কোনো জায়গা হইল? বনের অন্ধকারে গদা যুদ্ধ হয় কেমনে? আমি কই কি তোমাগো উচিত কুরুক্ষেত্রের পাশে কোনো পরিষ্কার আর সমান জায়গায় গিয়া দুর্যোধন-ভীমের লড়াই আয়োজন করা...

বলরামের কথা ফেলার সুযোগ নাই। সকলেই রওয়ানা দেয়। গদা কান্ধে নিয়া পাশাপাশি হাঁটে দুর্যোধন আর ভীম। ভীমের লগে সকলেই আছে কিন্তু দুর্যোধন একা। কিন্তু তবুও সে নির্ভীক আর সে রাজা...

কুরুক্ষেত্রের পাশে কিছুদিন আগে যজ্ঞ করার লাইগা একটা জায়গা পরিষ্কার করা হইছিল। সেই সমান জায়গাটাই বলরাম ঠিক করে ভীম-দুর্যোধনের লড়াইর স্থান হিসাবে। শুরু হয় ভীম দুর্যোধনের গদার লড়াই। গদা বাগাইয়া ঘুরতে থাকে দুইজন দুইজনের ফাঁক খুঁজতে খুঁজতে। আক্রমণ শানায় আক্রমণ দেখায় কিন্তু আঘাত হয় না বিশেষ। একজন মারলে আরেকজন পিছায় পায়ের ক্ষিপ্রতায়...

দুর্যোধন একটা বাড়ি বসায়ে দেয় ভীমের মাথায়। ভীমও পাল্টা বাড়ি মারে কিন্তু দুর্যোধন মাথা সরাইয়া ফেলায়। বুকে দুর্যোধনের আরেকটা বাড়ি খাইয়া ভীম পড়ে মাটিতে। উইঠা দুর্যোধনের পাশে একটা বাড়ি বসাইয়া দেয়। দুর্যোধন পইড়া গিয়া উইঠা আরেকটা মোক্ষমে ভীমেরে মাটিতে শুয়াইয়া ফালায়...

ভীমের বর্ম ভাঙে। ভীম রক্তাক্ত। নকুল সহদেব ধৃষ্টদ্যুু সাত্যকি দুর্যোধনের দিকে তাড়াইয়া যায়। ভীম তাগোরে থামাইয়া আবার খাড়ায়। অর্জুন গিয়া কৃষ্ণের কাছে খাড়ায়- মাধব। সত্য কইরা কও তো এই দুইজনের মধ্যে কে ভালো গদারু?
কৃষ্ণ কয়- দুইজনের মধ্যে ভীমের শক্তি বেশি হইলেও দুর্যোধন বেশি কৌশলি আর আর দক্ষ। দেখো না দুর্যোধন কেমনে মাইরগুলা এড়াইয়া যাইতাছে। অর্জুন কেন প্রশ্নটা করছে কৃষ্ণ বোঝে। সে যোগ করে- নিয়ম মাইনা যুদ্ধ করলে ভীমের পক্ষে দুর্যোধনরে হারানো সম্ভব না। নিয়ম ভাইঙাই তারে কাবু করতে হবে...

দুর্যোধন আর ভীমের লড়াই দেইখা অর্জুনও চিন্তিত হয়। এইভাবে চললে ভীমের শক্তি অতি দ্রুত ক্ষয় হইয়া যাবে...

অর্জুন গিয়া খাড়ায় ভীমের কাছাকাছি। ভীম লড়াই করতাছে। অর্জুন নিজের উরু চাপড়াইয়া দেখায় ভীমেরে। নিয়ম অনুযায়ী গদার লড়াইয়ে কোমরের নীচে আঘাত করা নিষেধ। কোমরের নীচে কেউ আঘাত করে না বইলা গদারুরা কোমরের নীচে যেমন না পরে কোনো বর্ম তেমনি না নেয় কোনো সতর্কতা....

অনেকক্ষণ লড়াইয়ের পর ভীমেরও মনে হয় এমন যুদ্ধ অনন্তকাল চললেও জয়ী হওয়া সম্ভব না। দুর্যোধনের শরীরে সে আঘাতই বসাইতে পারতাছে না। অথচ ফাঁকে ফোকরে দুর্যোধন তারে বসাইয়া দিতাছে বাড়ি আর গুতা। দুর্যোধনের একটা বিরাশি সিক্কার বাড়ি খাইয়া পইড়া যায় ভীম। ভীম আবার উইঠা খাড়ায়। এইবার সে অন্য সুযোগ খোঁজে এবং একটা সুযোগে সমস্ত শক্তি দিয়া বাড়িটা বসায় দুর্যোধনের উরাতের হাড়ে...

মড়াৎ কইরা উরু ভাইঙা মাটিতে গড়ায় দুর্যোধন। ভীম গিয়া পা দিয়া দুর্যোধনের মাথা চাইপা ধরে- হালা ভণ্ড...

ক্ষেইপা উঠে বলরাম- অসম্ভব। আমার সামনে গদা লড়াইয়ের নিয়ম ভাঙ্গা। এ হইতেই পারে না। দুর্যোধনের উরাতে আঘাত কইরা মারাত্মক অন্যায় করছে ভীম। এর শাস্তি পাইতে হবে তার...

বলরাম নিজের লাঙ্গল বাগাইয়া যায় ভীমের দিকে। কৃষ্ণ দৌড়াইয়া যাইয়া জাপটাইয়া ধরে- ভাইজান থামেন। পাণ্ডবেরা আমাদের মিত্র; আত্মীয়। এদের জয়ে আমাদেরই জয়। তাছাড়া দুর্যোধনের উরু ভাঙা পাশার আসরে ভীমের প্রতিজ্ঞা আছিল ভাইজান...

গোস্বা কইরা বলরাম চইলা গেলে ধীরে ধীরে যুধিষ্ঠির মুখ খোলে- যুদ্ধ প্রায় শেষ। যে যাই বলুক; আমরা কৃষ্ণের নির্দেশে চইলাই যুদ্ধের সমাপ্তি টানছি আইজ। যুধিষ্ঠির ভীমরে জড়াইয়া ধরে- মায়ের নিকট; দ্রৌপদীর নিকট আর নিজের প্রতিজ্ঞার নিকট আইজ তুই ঋণমুক্ত হইলি ভাই...

পাণ্ডবেরা ফিরার উদ্যোগ নেয়। উরুভাঙা দুর্যোধন হাতের উপর ভর কইরা উইঠা বসে। কৃষ্ণরে ডাকে- কংসদাসের পোলা। এই জগতে যদি নিয়ম ভাঙার কেউ থাকে তবে তা তুমি। চক্রান্তকারী। তুমি চক্রান্ত কইরাই হত্যা করছ ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ আর আমারে। নিয়ম মাইনা আমাগো লগে যুদ্ধ করলে কিছুই করতে পারতা না তুমি...

পাণ্ডবেরা কিছু কইতে গেলে কৃষ্ণ থামায়- সর্বদা সত্য কথা কয় বইলা ওর আরেক নাম সত্যবাক। ওর কথাই ঠিক। ওরা চাইছিল বীরত্ব আর সততা দেখাইতে; তারা তা দেখাইছে। আমরা চাইছিলাম বিজয়; আমরা তা পাইছি। চলো...

পাণ্ডবরা চইলা আসার পর দুর্যোধনের কাছে অশ্বত্থামা গিয়া হাজির হয় কৃপ আর কৃতবর্মারে নিয়া। সকল শুইনা অশ্বত্থামা কয়- বাপের অপমানেও অত দুঃখ পাই নাই যত দুঃখ পাইছি তোমার লগে তাগো আচরণে। তুমি আমারে সেনাপতি বানাইয়া যুদ্ধের অনুমতি দেও...

মাটিতে শুইয়া আহত দুর্যোধন অশ্বত্থামারে সেনাপতি বানায়। অন্ধকারে দুর্যোধনরে ফালাইয়া কৃপ আর কৃতবর্মারে নিয়া মিলাইয়া যায় অশ্বত্থামা। অন্যদিকে দুর্যোধনের পতন সংবাদের লগে লগে কুরু সৈনিকেরা আত্মসমর্পণ কইরা ফালায় পাণ্ডবগো কাছে। পাণ্ডব সৈনিকরাও শুরু কইরা দেয় কুরুশিবিরে লুটপাট। আর যুধিষ্ঠির কয়- চলো আমরা হস্তিনাপুর যাই...

কৃষ্ণ আর পাণ্ডবেরা যায় হস্তিনাপুর। সেইখানে আন্ধাপোলা ধৃতরাষ্ট্রের পাশে বইসা আছেন কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। ধৃতরাষ্ট্রের হাত ধইরা কৃষ্ণ কয়- মহারাজ; আপনি জানেন কুলক্ষয় আর যুদ্ধ বন্ধের লাইগা কুন্তীপুত্ররা কী চেষ্টাই না করছিল। শেষ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটা গ্রাম চাইছিল তারা। আপনে তাও দেন নাই। ভীষ্ম দ্রোণ কৃপও আপনারে অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু আপনে মানেন নাই। এখন আপনের পিণ্ডদানের লাইগা পাণ্ডব ছাড়া আপনের বংশে আর কেউ নাই। আপনে আর মাতা গান্ধারী কাউরে দোষ দিয়েন না। ভাতিজাগোরে বরণ কইরা নেন...

যুদ্ধ শেষ হইয়া গেছে ভাইবা কৃষ্ণ আর পাণ্ডবরা যেমন চইলা আসছে হস্তিনাপুর তেমনি গা ঢিলা দিয়া পাঞ্চাল আর পোলাপানরা শিবিরে ঘুমাইতাছে বেঘোর। আর তখনই জঙ্গলের ভিতর কৃপাচার্য আর কৃতবর্মারে ঘুম থাইকা জাগাইয়া অশ্বত্থামা কয়- এখনই পাণ্ডব শিবির আক্রমণ করব আমি...

কেউ পলাইতে গেলে ধরার লাইগা কৃপ আর কৃতবর্মারে বাইরে রাইখা অশ্বত্থামা ঢোকে পাণ্ডব শিবিরে। প্রথমেই ধৃষ্টদ্যুম্নের ঘর; লাত্থি দিয়া তারে ঘুম থাইকা জাগায়। এক পায়ে গলায় চাপ দেয় আর অন্য পায়ের গোড়ালির ঘায়ে তার শ্বাস বাইর কইরা ফালায়। ...কৌরবপক্ষের শেষ সেনাপতির পায়ে বেঘোরে প্রাণখান বাইরাইয়া যায় পাণ্ডবপক্ষের আগাগোড়া একমাত্র সেনাপতির...

ঘুমন্ত পাণ্ডব শিবিরে তাণ্ডব চালায় অশ্বত্থামা। কেউ কেউ প্রতিরোধ করতে চাইলেও সকলেই কাটা পড়ে অশ্বত্থামার তলোয়ারে। কাটা পড়ে দ্রৌপদীর ভাই শিখণ্ডী। কাটা পড়ে পঞ্চ পাণ্ডবের ঔরসে দ্রৌপদীর পাঁচ পোলা প্রতিবিন্ধ্য- সুতোসোম- শ্র“তকর্মা- শতানীক আর শ্র“তসেন...

মানুষ মাইরা অশ্বত্থামা পাণ্ডবগো হাতি ঘোড়া মারে। যারা পলাইতে যায় তারা মারা পড়ে বাইরে খাপ ধইরা থাকা কৃপাচার্য আর কৃতবর্মার হাতে...

দুর্যোধনের আশপাশ ঘিরা আছে শিয়ালের দল। অতি কষ্টে শিয়াল তাড়াইয়া বাইচা আছে রক্তবমি করা দুর্যোধন। এরই মাঝে অন্ধকার ফুইড়া তার সামনে আইসা খাড়ায় অশ্বত্থামা- পাণ্ডবপক্ষে জীবিতের সংখ্যা এখন মাত্র সাত। পাঁচ পাণ্ডব; কৃষ্ণ আর সাত্যকি। পাণ্ডবগো বাকি সব বংশধর; সমস্ত পাঞ্চাল; এমনকি হাতিঘোড়ার একটাও অবশিষ্ট নাই...

দুর্যোধন কয়- অশ্বত্থামা তুমি এক রাত্তিরে যা করলা; অতদিন যুদ্ধ কইরা ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণও তার একাংশ করতে পারে নাই। আইজ আমার থাইকা সুখী কেউ নাই। যুধিষ্ঠির হয়ত জয়ী হইছে কিন্তু তার আনন্দ করার ক্ষমতা কাইড়া নিছি আমি। যুধিষ্ঠির এখন এক হাহাকার রাজ্যের রাজা। হা হা হা...

কৃপ আর কৃতবর্মারে নিয়া অশ্বত্থামা চইলা গেলে গেলে একলা যে মানুষটারে নোয়ানো যায় নাই বইলা সারা যুদ্ধের সমস্ত সমীকরণ তৈয়ারি হইছে; সেই দুর্যোধন নেতাইয়া পড়ে অন্ধকার মাঠে। আর মৃত সিংহের মাংসে দাঁত বসাইতে ধীরে ধীরে আগাইয়া আসে শিয়ালের দল...

মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৯ [কর্ণ ৪]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৮ [দ্রোণ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৭ [কর্ণ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৬ [কর্ণ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৫ [কর্ণ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৪
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৮
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৭
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৬
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৫ [ঘটোৎকচ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৪: ঘটোৎকচ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৩: ঘটোৎকচ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ২
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ১
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ১]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ১। সত্যবতী


মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বেশ কিছুদিন ধরেই আপনার এই সিরিজের লেখাগুলি পড়ছি। প্রতিবারই মনের ভেতর দু'টো প্রশ্ন বার বার লতিয়ে উঠে। জিজ্ঞেস করবো করবো ভেবে আর করাই হয়না। দ্বিধা এসে কীবোর্ডের দখল নিয়ে নেয়। আজ বলি।

এক। এই সিরিজটিতে ভাষার চলিত যে রূপটি আপনি ব্যবহার করেছেন, তার কারণ কি? লক্ষ্যই বা কি?

দুই। এটি কি মহাভারতের আংশিক নব-নির্মাণ? তিন রাজনৈতিক নারী শিরোনাম হলেও প্রাসঙ্গিক, দূর-প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলীর সমাবেশ কেন?

অজ্ঞতা মার্জনীয়!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাষার বিষয়টা নিয়ে নোট লিখছি; এর কিছু কারণ আছে কিন্তু কোনো উদ্দেশ্য বোধহয় নাই। এরকমই লিখতে ইচ্ছা করছে আর আরামও পাচ্ছি; দেখি কোথায় দাঁড়ায়

০২
এখন আর আংশি নির্মাণে নাই। রাজনৈতিক নারী নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম কিন্তু এখন পুরা মহাভারতেরই পুনর্লিখন হচ্ছে। নামটা বদলাচ্ছি না সিরিজের ধারাবাহিকতা রাখার লাইগা। শেষ হয়ে গেলে বদলে ঠিকঠাক করে দেবো

মেঘলা মানুষ এর ছবি

অ্যাম্নে না লিখলে আমরা কিন্তু পড়ুমনা।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আইচ্চা; তয় এমনে লেখার গ্রামারখান বানইব কেডা? যে পুস্তক পড়িলে আ্যাম্নেভাবে লিখিতে পারা যায়?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

খারাপ লাগছে এই ভেবে যে সিরিজ শেষ হয়ে এলো। আপনার এই লেখাটা পড়ে যে কী পরিমাণ মজা পেয়েছি বলে শেষ করতে পারবো না। বই আকারে বের হলে প্রথম দিকেই কিনে ফেলার একটা ইচ্ছে আছে। যদি পারেন ই-বুক সংস্করণও বের করেন।

____________________________

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শেষ করতে না চাইলে তো আমারে হিন্দি সিরিয়াল বানাইতে হইব; ননস্টপ গিয়াঞ্জাম ইন মহাভারত

আয়নামতি এর ছবি

লীলেন্দা, আপনার এই সিরিজ বই হিসেবে আসবার সম্ভাবনা আছে নাকি?
কয়েকটা পর্ব পড়েছি এটার। বই হয়ে আসলে এক্কেবারেই পড়বো তা'হলে দেঁতো হাসি
----
এখানে ব্যবহৃত ভাষা কিন্তু আমার মজারু লাগে। কিছুদিন আগে সচলের এক পোস্টের সূত্র ধরে ভানুর কৌতুক শুনেছি( হাসান মুর্শেদ ভাইয়ের পোস্ট ছিল ওটা, তাঁকে ধন্যবাদ এ জন্য)।
এরকম ভাষাতেই ভানু রামায়ণের কিছু ব্যাপার স্যাপার বর্তমানের সাথে রিলেট করেছেন, শুনতে ব্যাপক মজারু কিন্তু!
এটার কথা বলছি। শুনে না থাকলে শুনতে পারেন হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বই বেরোবো এইবারই; তবে একটু অন‌্যভাবে; পুরা মহাভারত

০২
ভানুর অনেকগুলো কৌতুক শুনেছি; রামায়ণ নিয়া্ও। তবে আমারটা খোচা না; গল্প

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বই কি রেডি? কয় তারিখ নাগাদ বের হবে লীলেন্দা?
ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই ঢাকা থাকার সম্ভাবনা আছে।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বই বেরোবে; তবে এক তারিখ না। এক তারিখ বইমেলায় প্রধানমন্ত্রী থাকেন; আপনি গেলে তার মতো ভিআইপি হইবেন; আমরা অভাজনেরা যামু পরে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গুড, তাইলে আবার আসুম চাল্লু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

লীলেনদা, দ্রৌপদীর গর্ভে পঞ্চপাণ্ডবের পাঁচ পুত্রের নাম নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে! হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দ্রৌপদীর সঙ্গে পঞ্চপাণ্ডবের বিয়ে "fraternal polyandry"-র মহাভারতীয় দৃষ্টান্ত। এ ধরণের বিয়ে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে, বিশেষতঃ নেপাল, ভুটান, তিব্বতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ প্রচলিত। এই বিয়ে থেকে উদ্ভূত সন্তানদের সেসব সমাজে বৈধ বলেই গণ্য করা হয়।

Emran

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। অবৈধ কইল কেডায়?

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রৌঢ় ভাবনা ভাইয়ের যে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি এই মন্তব্য করেছিলাম, সেই মন্তব্যটা আর দেখছিনা।

Emran

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাবনা ভাই তো ভাবনায় ফালাইয়া দিলেন। দ্রৌপদীর পাচ পোলার নামের লগে বিভ্রান্তি কই? সিরিয়াল মতে পাচ পাণ্ডবের পাচ পোলার নামই তো দিলাম

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

না, লীলেনদা, আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। ভাবনাটা আসলে উইকিপিডিয়ার তথ্য নিয়ে। উইকিতে লিখেছে, 'তিনি যুধিষ্ঠির থেকে প্রতিবিন্ধ্য, ভীম থেকে সুতসোম, অর্জুন থেকে শ্রুতকীর্তি, নকুল থেকে শতানীক এবং সহদেব থেকে শ্রুতকর্মাকে লাভ করেন । মহাভারতে দ্রৌপদীকে অনিন্দ্য সুন্দরী ও তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে । দ্রৌপদী তাঁর শ্বশ্রূ কুন্তীর মত পঞ্চকন্যার অন্যতমা ।' এর মধ্যে আমি নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।