বাচ্চা পয়দার ক্ষেমতাই যার নাই সেই ব্যাডায় আবার করছে দুইখান বিবাহ। রাজরানি হইবার লোভে নামর্দ স্বামীরে মাইনা নিলেও আঁটকুড়া বেডার ঘরে সতিনের সংসার কেমনে মানা যায়?
কিন্তু সতিন হজম না কইরাও উপায় নাই কুন্তীর। পাণ্ডুরে দ্বিতীয় বিবাহ করাইছেন ভীষ্মদেব নিজে। নিজে তিনি বিয়াশাদি না করলেও শান্তনু বংশে গত তিন প্রজন্মের বিবাহকর্তা তিনি। তার অনুমতির উপরই নির্ভর করছিল তার নিজের বাপের দ্বিতীয় বিবাহ। এর পরে তো ছোট ভাই কিংবা বড়ো ভাতিজার বিবাহের সিদ্ধান্তে কাউরে জিগানোরও দরকার মনে করেন নাই তিনি। পাত্রী সামনে আইনা ভাই-ভাতিজারে জানাইয়া দিছেন- আইজ তোর বিয়া... কিন্তু ঝামেলা বাধাইল তার ছোট ভাতিজায়। কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ একদিন স্বয়ংবর সভায় গিয়া কুন্তীরে নিয়া আইসা খাড়াইল তার সামনে- আমি বিয়া কইরা ফালাইছি জ্যাঠা...
বাইরে ভাতিজাবধূরে আশীর্বাদ করলেও তিন জেনারেশন ধইরা তার ঘটকালির অধিকার নষ্ট করায় মনে মনে ভীষ্ম ভালোই খেপলেন। কিন্তু তার খেপাটা যে অত বেশি তা অনুমান করতে পারে নাই কুন্তী। হঠাৎ একদিন তিনি মাদ্রীরে আইনা খাড়া করলেন পাণ্ডুর সামনে- তোর বৌটা আঁটকুড়া। তাই তোর লাইগা দ্বিতীয় বিবাহের আয়োজন করছি আমি...
এক পোলার মা কুন্তীরে আঁটকুড়া কয় নির্বংশ বেটায়... কথাখান মনে মনে কইলেও বাইরে কুন্তী স্বাভাবিক থাকে। কুন্তীর বহুদিন আগে থেকে সংসার কইরাও নিঃসন্তান ভাসুরবধূ গান্ধারীরে তিনি কিছু বলেন না কেন; এই প্রশ্নও সে ভীষ্মরে করে না। রাজ্যের সমস্ত সৈনিক যার অধীন; সেই ভীষ্মরে খেপাইয়া সৈনিকবিহীন রাজা পাণ্ডুর জীবনটা আরো কঠিন কইরা ফালানি কোনো বুদ্ধিমানের কাম না। তাই সতিনই সই। কিন্তু পাণ্ডুরে দিয়া কিছু হইব কি হইব না মাদ্রী সেইটা বুঝবার আগেই যেন কুন্তীর পোলাপান হস্তিনাপুরের মাঠে দৌড়াইতে পারে সেইটা নিশ্চিত করতে হইব তার... কিন্তু কোনোকিছু ফাইনাল করার আগে সত্যবতীরে একটু বাজাইয়া নেওয়া দরকার। তাই কুন্তী গিয়া বুড়িরে খোঁচায়- আমারে আঁটকুড়া বইলা নাতিরে তো আরেকখান বিয়া করাইলেন দাদি। কই? আপনের নতুন নাতবৌয়ের শইলেও তো গর্ভের কোনো লক্ষ্মণ নাই...
পাটনি সত্যবতী বুদ্ধিমান আর নির্বোধের পার্থক্য বোঝেন দিন আর রাইতের মতো। বড়ো নাতিবৌ গান্ধারী বহুত আদব কায়দা জানে; ধর্মকর্ম করে; সত্য কথা বলে; স্বামী কিংবা গুরুজনে ভক্তির অভাব নাই তার। কিন্তু খালি ধর্ম আর সত্য কইয়া সংসার চলে না। সব যোগ্যতাই ছিল ভীষ্মের; শুধু জানা ছিল না সময়ে সময়ে সত্যরে কেমনে নিজের পক্ষে ব্যবহার করতে হয় কিংবা দরকার মতো সত্য বানাইয়া নিতে হয়। এই কারণেই সারা জীবন সত্যবাদী থাইকা সে রাজা বানায় কিন্তু নিজে রাজা হইতে পারে না কোনোদিন... কিন্তু যাদব বংশের মাইয়া কুন্তীর তো এই সমস্যা থাকার কথা না...
দাদি সত্যবতী সরাসরি কুন্তীর চোখে তাকান- নাতির আমার সমস্যা আছে আমি জানি। কিন্তু আমি তার ঘরে তোমাদের পোলাপান দেখতে চাই... কথাটা বুঝতে পারছ তুমি?
কুন্তীর না বোঝার কারণ নাই। কিন্তু বুড়িরে আরেকটু নাড়ানো দরকার- দাদিজান। আপনি যা কইলেন তাই সত্য। কিন্তু ভীষ্মদেবেরে কথাখান কে বুঝাইব কন? অবস্থা দেইখা তো মনে হয় বছর না ঘুরতেই তিনি আরো দুই চাইরখান সতিন আইনা আমার ঘাড়ে তুলবেন...
সত্যবতী এইবার কুন্তীরে নিশ্চিন্ত করেন- এই বিষয়ে ভীষ্ম আর কিছু করব না সেইটা আমি তোমারে কইয়া দিতে পারি। কিন্তু আমার কথাবার্তা খুব সোজা। নাতি আমার অক্ষম হইলেও তার ঘরে আমি পুতাদের মুখ দেখতে চাই। শাস্ত্রে বহুত বিকল্প আছে; খালি সমাজের চোখে একটু ধুলা দিতে হয়; আমার মনে হয় সেই বুদ্ধি তোমার ভালোমতেই আছে..
সবকিছু জাইনাও কুন্তীরে সতিনের ভাত খাওয়াইছে বুড়ি। বুড়ির কইলজায় একটা খোঁচা মারতে না পারলে কুন্তীর জান ঠান্ডা হইব না। কুন্তী এইবার বেক্কলের মতো চেহারা নিয়া জিগায়- দাদিজান। ছোট পোলার বিধবাগো গর্ভে সন্তান জন্ম দিবার লাইগা আপনে কুমারিকালের বড়ো পোলা দ্বৈপায়নরে পাঠাইছিলেন ছোটভাইয়ের বৌদের ঘরে। সেই সিস্টেমে যারা জন্ম নিছে তারা শেষ পর্যন্ত আপনার বংশেরই পোলাপান হইছে। এখন কি আপনি তিনারেই আবার পাঠাইতে চান নিজের পোলার বৌদের বিছানায়?
সত্যবতী খিটখিট কইরা উঠেন কুন্তীর কথায়- বেশরমের মতো কথা কবা না কলাম। দ্বৈপায়ন তোমার স্বামীর সাক্ষাত পিতা। তোমার নিজেরও পিতার সমান। আর কোনো বিকল্প দেখো না তুমি? তুমি ভালো কইরাই জানো যে এই বাড়িতে দ্বৈপায়ন খালি ধৃতরাষ্ট্র আর পাণ্ডুরে জন্ম দেয় নাই। তোমার দেবর বিদুরও দ্বৈপায়নের ছেলে। দাসীর গর্ভে জন্মাইছে বইলা রাজবাড়িতে সে একটু তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে আছে। হ রাজবাড়ি। বোঝোই তো। পাটনি মায়ের পোলা দ্বৈপায়নের ঘরে জন্ম নিয়া দুইজন হয় ক্ষত্রিয় রাজপুত্তুর আর একজনে নমশূদ্র অচ্ছ্যুত। এইটাই সিস্টেম শান্তনু বংশের। তা যাই হোক; কিন্তু পাণ্ডুর শইলে যেমন আছে দ্বৈপায়নের রক্ত; বিদুরের শইলেও তাই। আমার কাছে তোমার স্বামী ভাসুর দেবর তিনজনই আমার পোলার ঘরের নাতি। বিদুর বুদ্ধিমান পোলা। শান্তনু রাজ্যের নিয়ম যেমন সে জানে ধর্মটর্মের নিয়মকানুনও তার ভালোমতো জানা। কথাটা বুঝতে পারছ তুমি?
প্রকাশ্যে লজ্জা দেখাইলেও কুন্তী মনে মনে হাসে- তুমি কি মনে করো বুড়ি তোমার বুদ্ধির লাইগা আমি বইসা ছিলাম? আমি বিদুরের শরণাপন্ন হইছি কি না সেইটা তোমার ছানিপড়া চোখে ধরা পড়ার কথা না। বিয়ার আগে পোলা জন্ম দিয়া সেই পোলারে লুকাইতে পারো নাই বলে এক বুইড়ারে বিয়া করতে হইছিল তোমার। কিন্তু এক পোলা জন্ম দিবার পরেও কুমারী সাইজা স্বয়ংবরা পর্যন্ত করেছি আমি... আমার ঘরে পাণ্ড বংশের পোলাপান হইলে যদি কারো চোখ টাটানি হয় তবে তুমি তা সামলাইবা কি না তা আমার জানার দরকার ছিল; আমি তা জাইনা গেলাম। আর তুমি যেখানে আছ সেইখানে ভীষ্মদেবরে যে ভয়ের কিছু নাই সেইটা সক্কলেই জানে... বুড়া শান্তনুর জোয়ান পোলার সমবয়েসি তরুণী বিমাতা সত্যবতী। কে জানে... তাগো মধ্যে অন্য কিছু আছিল কি না। কুন্তীর মাঝে মাঝে মনে হয় বুড়িরে গিয়া জিগায়- ও দাদি। দাদারে তো মজাইছিলা রূপরস দিয়া। কিন্তু সতিনের জোয়ান পোলারে ব্রহ্মচারী কইরাও সারাজীবন ঘরে বাইন্ধা রাখছিলা কোন মন্ত্র দিয়া কওতো শুনি?
গঙ্গার নন্দন ভীষ্ম। নিজে সংসারী না হইলেও সংসার তিনি বোঝেন সকলের থেকে বেশি। এক কান দুই কান কইরা পাণ্ডুর অক্ষমতা এখন অনেকেই জানে। যৌনরোগে আক্রান্ত পাণ্ডরাজা যদি হস্তিনাপুরেই মারা যায় তবে বড়োই কলঙ্ক হবে বংশের মুখে। ভীষ্ম তাই বিধান দিছেন পশু শিকারের নামে পাণ্ড বনবাসে যাইব দুই বৌ নিয়া। সেইখানে গিয়া সে শিকারের সাথে ধম্মকম্ম করব আর মুনিঋষি দেবতার দয়ায় চেষ্টা করব সন্তান পাবার...
কুন্তী জানে জীবন্ত পাণ্ডু আর হস্তিনাপুরে ফিরা আসতে পারব না কোনোদিন। ভীষ্ম তারে নির্বাসনে মৃত্যুর বিধানই দিছেন। পাণ্ড মরার পর যদি কোলে পোলাপান নিয়া আসতে পারে তবে পাণ্ডর বৌরা ফিরতে পারব হস্তিনাপুরে। না হইলে তাদেরও এইটা শেষ যাত্রা... ভীষ্মের বিধানে এখন আন্ধা বড়োভাই ধৃতরাষ্ট্রই থাকবেন ভারপ্রাপ্ত রাজা। এর অর্থ পাণ্ডু বোঝে। ভারপ্রাপ্ত নয়; ভীষ্ম তার সিংহাসনটা বড়ো ভাইরে দান কইরা দিলেন। কিন্তু ভীষ্মের কথা অমান্য করার সাহস তার নাই। শান্তনু বংশের সমস্ত সৈনিক আর সামন্তরা ভীষ্মের কথা মানে। আন্ধা হইবার কারণে বড়োভাই হইয়াও যে রাজ্য ধৃতরাষ্ট্র হারাইছেন; এখন সুযোগে সেই রাজ্য পাইয়া ধৃতরাষ্ট্রও চান পাণ্ড দূর হয়ে যাক। যতদিন পর্যন্ত না পাণ্ডুর পোলাপান রাজা হইবার যোগ্য হয় ততদিন পর্যন্ত ধৃতরাষ্ট্র অনির্দিষ্টকালের লাইগা হস্তিনাপুরের রাজা...
মাদ্রী পাণ্ড আর কুন্তীর পিছে পিছে চলে...বনে ঢুকেই কুন্তী পাণ্ডুরে ডর দেখায়- পুত্রহীনের স্বর্গে যাবার নিয়ম নাই এইটাতো আপনি জানেন মহারাজ? পাণ্ড কয়- হ তা তো জানি বৌ কিন্তু কেমনে কী করি?
কুন্তী এইবার তারে শাস্ত্রের কাহিনী শোনায়। বৌয়ের গর্ভে অন্য কেউ সন্তান দিলেও সেইটা তার পোলা বলেই সকলে জানে। এই যেমন; আপনে তো মূলত পাটনিপুত্র দ্বৈপায়নের পোলা। কিন্তু রাজার বৌয়ের গর্ভে জন্মাইছেন বইলা রাজপুত্র হইছেন। আপনারে কিন্তু কেউ পাটনিপুত্র কয় না। ...তো আপনেরে আমি একখান ঘটনা কই মহারাজ; আমি কিন্তুক কুমারী আছিলাম না বিবাহের সময়। এর আগেই আমার একটা পোলা আছিল। সেই পোলা কিন্তু কোনো মাইনসের পোলা না। দেবতা সূর্যের সন্তান। ...তো কেমনে সেই পোলা পাইলাম সেই কাহিনী কই। পোলা পাওনের আগে আমি আছিলাম মুনি দুর্বাসার সেবিকা। মুনি দুর্বাসারে সেবা কইরা কেউ খুশি করতে না পারলেও আমি কিন্তু পারছিলাম। সেই খুশিতে তিনি আমারে একটা মন্ত্র দিয়া যান। মন্ত্রটার জোরে নিজের গর্ভে সন্তান উৎপাদনের লাইগা আমি যে কোনো দেবতারে ডাকতে পারি। তো মন্ত্রের ক্ষমতা পরীক্ষার লাইগা আমি একদিন হঠাৎ সূর্যরে ডাইকা বসলাম। তারপর দেখি আমার ডাক শুইনা সত্যি সত্যি সূর্য চইলা আসলেন আর আমারেও একটা পোলা দিয়া গেলেন। ....পরে অবশ্য তারে আমি গাঙে ভাসাইয়া দিছিলাম রাজকন্যার এমন পোলা থাকা উচিত না বইলা। ...তো সেই মন্ত্র কিন্তু এখনও আমার আছে। আমি কিন্তু দেবতাগোরে ডাইকা আইনা আপনেরে পোলাপান দিতে পারি মহারাজ...
দুর্বাসা থাইকা দ্বৈপায়ন কোনো অংশে ছোট ঋষি নন। মন্ত্র দিয়া যদি দেবতারে ডাইকা মানুষের গর্ভে সন্তান পয়দা করা যাইত তবে নিজে গিয়া দ্বৈপায়ন উঠতেন না ছোটভাইয়ের বৌদের বিছানায়। কুমারী সেবিকা কুন্তীরে দুর্বাসা মন্ত্র দিছে না পোলা দিছে সেইটা পাণ্ড ঠিকই বোঝে। ...কিন্তু রাজি না হইয়াই বা তার কী উপায়? পোলাপান না থাকলে স্বর্গ কি নরক হয় সেইটার থেকে বড়ো কথা হলো সমাজে বিবাহিত আঁটকুড়ার কোনোই জায়গা নাই...
পাণ্ডরে সিস্টেম কইরা কুন্তী তার কোলে একটা পোলা তুইলা দেয়- দেখেন দেখেন রাজা পাণ্ডু। দুর্বাসার দেয়া মন্ত্রের ক্ষমতায় ধর্মের ঔরসে এ সন্তান জন্মাইছে আমার গর্ভে। এই পোলা কিন্তু আপনার প্রথম সন্তান। আপনের পরে এই পোলায়ই হইব হস্তিনাপুরের রাজা... এর নাম রাখছি যুধিষ্ঠির...
এরপরে একটা। তারপর আরেকটা। দেবতার নাম করে কুন্তী তিন তিনটা পোলা তুইলা দেয় পাণ্ডুর কোলে। পাণ্ডু খুবই খুশি। এখন আর তারে নিঃসন্তান কইতে পারব না কেউ। কিন্তু মাদ্রী খেইপা উঠে কুন্তীর উপর- আমারে বেক্কল পাইছ তুমি? দেবতারে ডাক দিলা আর তারা আইসা তোমারে পোল দিয়া গেলো। ...সাদা সাদা আর্য দেবতারা আইসা তোমারে দিয়া গেলো ভীম আর অর্জুনের মতো কালা কালা পোলা? এইসব ভগিচগি অন্যেরে বুঝাইলেও আমারে বুঝাইতে আসবা না কইলাম। কুড়াইন্যা পোলাপানও পাণ্ডরাজা মাইনা নিবো। কিন্তু আমারে অত নাদান ভাইব না তুমি। বনবাসে আইসা পোলা জন্মানোর যে স্বাভাবিক সময়কাল তা পূরণ হইবার আগেই প্রথম পোলা হইছে তোমার। তুমি যদি মনে করো যে হস্তিনাপুরে বিদুরের লগে তোমার ঢলাঢলি আমার চোখে পড়ে নাই তবে তুমি ভুলের মধ্যে আছ। তুমি যে পয়লা পোলার বীজ হস্তিনাপুর বিদুরের ঘর থাইকাই লগে নিয়া আসছিলা সেইটা পোলার চেহারাতেই প্রমাণ। আর তোমার দ্বিতীয় পোলা ভীমের চেহারা এইখানকার যে কোনো পাহাড়ি মানুষের চেহারার লগে খাপে খাপে মিল; সেইটা কি অস্বীকার করবা তুমি? আর এইখানকার নিষাদ পোলাপানের লগে তোমার তিন নম্বর পোলা অর্জুনরে ছাইড়া দিলে তো তুমিই তারে তাগোর থিকা আলাদা করতে পারবা না। ...আমারে ওইসব মন্ত্রফন্ত্র বুঝাইও না। আমি কিন্তু সবাইরে কইয়া দিমু তুমি কেমনে কী করছ...
কুন্তী হাসে- বেক্কল নারী। বুদ্ধি থকলে কি ভাই তোরে নামর্দের কাছে বিক্রি কইরা দেয়? তুই বুদ্ধিমান হইলে তো ভাইয়ে তোর লাইগা স্বয়ংবরা করত...। মাদ্রীও খেঁকিয়ে উঠে- ভাইয়ে বিক্রি করুক আর দান করুক। এখন আমি পাণ্ডুর রানি। চোখের সামনে তুমি ভংচং কইয়া পোলা বিয়াইবা আর আমি আঁটকুড়া হইয়া বইসা থাকুম?
- তোরে পোলা বিয়াইতে নিষেধ করছে কেডায়? সবকিছুই যখন বুঝস তখন যা; দুইচারটা পোলাপান তুইও পয়দা কর...
মাদ্রী এইবার একটু দমে যায়- বাচ্চা পয়দা করার সিস্টেমতো জানি। কিন্তু তুমি যেমন দেবতা টেবতার নাম দিয়া সেইগুলারে জায়েজ কইরা ফালাইতে পারো; সেইটাতে আমি জানি না...
কুন্তী হিসাব করে; এখন মাদ্রীর পোলাপান হইলে তারা সকলেই হইব কুন্তীর তিন পোলার বয়সে ছোট। সিংহাসন দাবি করার দিকে তারা থাকব সকলের পিছনে। তাছাড়া তার তিন পোলার আরো দুয়েকটা ভাই থাকলে হাতের শক্তি বাড়ে। হউক। মাদ্রীরও তাইলে পোলাপান হউক। তাতে তার মুখ যেমন বন্ধ হবে তেমনি নিজের ছিদ্র ঢাকার লাইগা সে কুন্তীর ছিদ্রও ঢাইকা রাখব আজীবন....
মারামারি না কইরা শত্রুরে কৃতজ্ঞ বানাইতে পারলে বেশি কামে দেয়। কুন্তী আস্তে আগে গিয়া মাদ্রীরে ধরে- তুই গর্ভধারণের সিস্টেম কর। মন্ত্র দিয়া তোর গর্ভ জায়েজ করার দায়িত্ব আমার। তুই খালি গিয়া পাণ্ডরাজারে কবি যে- আমিও পোলার মা হইতে চাই। দিদিরে কও তার দেবতা ডাকার মন্ত্র আমারে একটু ধার দিতে। এইটা হইলেই হইব। তাতে সকলেই জানব যে একই সিস্টেমে দেবতাগোরে ডাইকা পাণ্ডরাজার বংশরক্ষার লাইগা পোলাপান পয়দা করছি আমরা...
মাদ্রী গিয়া পাণ্ডর কাছে কয় কুন্তীরে কইতে মন্ত্রখান তারে ধার দিতে। পাণ্ডও কয়। কুন্তীও মাইনা নেয় কিন্তু মাদ্রীর পোলাপানের সীমাসংখ্যা একটু বাইধা রাজা জরুরি বিবেচনা কইরা কয়- তারে আমি মন্ত্র দিমু। কিন্তু একবারের বেশি কইলাম দিমু না। এতে আমার অসুবিধা আছে...
কিন্তু একবারেই মাদ্রী জন্ম দেয় যমজ সন্তান। সে যাতে আবার পোলা জন্ম দিবার চেষ্টা না করতে পারে সেইজন্য কুন্তী গিয়া স্বামীরে বোঝায়- কইছিলাম না আপনের ছুডু বৌ একটা হারামজাদি? দেখছেন কী করছে সে? সে একবারে মন্ত্র দিয়া দুই দুইজন দেবতারে ডাইকা আইনা দুইটা পোলা জন্মাইছে। এইটা কিন্তু মন্ত্রের শর্তের পরিষ্কার লঙ্ঘন। আপনে আমারে আর অনুরোধ কইরেন না মাদ্রীরে মন্ত্র ধার দিবার...
মাদ্রী আর মন্ত্রও পায় না; ছেলেও নিতে পারে না আর। তার থাকে দুইটাই ছেলে। কুন্তীর তিন আর সব মিলে পাণ্ডরাজা পায় পাঁচখান পাণ্ডব...
গান্ধারী জননী হইছে একশো পোলার। কুন্তী হাসে। গাঞ্জাগপ্পের আর জায়গা পায় না। বিয়ার অত বছর পার হইলেও যে একটা পোলার জন্ম দিতে পারল না; কুন্তী বনে আসার পর এক সাথে সে জন্ম দিয়া দিলো একশোটা পোলা আর একখান মাইয়া। পোলা মাইয়া জন্মানো যেন নদীতে জাল ফেইলা ছোট মাছ ধরা। জাল ফেললাম আর তুইলা গুইনা কইলাম একশো একখান হইছে। রাজ্যের সেনাবাহিনী ভীষ্মের হাতে; তাই ধৃতরাষ্ট্র ধান্দা কইরা একশো পোলার গপ্প বানাইছে। সকল সৈনিক ভীষ্মের কথা শুনলেও বড়ো হইয়া এই একশোটা পোলা চলব ধৃতরাষ্ট্রের ইচ্ছায়। কী একখান গল্প বানাইছে তারা; গান্ধারী নাকি কুমড়া প্রসব করছে। তারপর সেই কুমড়ারে কাইটা টুকরা কইরা ঘিয়ে ভিজাইয়া থুইছেন শ্বশুর দ্বৈপায়ন। সেই ঘিয়ে ভিজানো কুমড়ার টুকরা থাইকা একশো একটা পোলামাইয়ার মা হইছে গান্ধারী...। কিন্তু কাহিনীটা না মাইনাও কুন্তীর উপায় নাই। কারণ কাহিনীর সাথে গান্ধারী শ্বশুর দ্বৈপায়নের নামখানও জড়াইয়া নিছে। দ্বৈপায়নের অতই কেরামতি; তিনি কুমড়া কাইট্টা ঘিয়ে ভিজাইয়া থুইলে সেইখান থাইকা মানুষ পয়দা হয়। তার যদি এতই ক্ষমতা তবে ছোটভাইয়ের বৌগুলার বিছানায় না গিয়া ঘিয়ের মধ্যে কুমড়া ভিজাইয়াই তো তিনি ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ড আর বিদুরের জন্ম দিতে পারতেন?...
কিন্তু উপায় নাই; দ্বৈপায়ন নিজেও এই কাহিনীর বিরোধিতা করেন নাই। মুনিঋষিদের নামের লগে এইরকম কিছু অলৌকিক ক্ষমতার কাহিনী থাকতে হয়। ঋষিরা বহুত কষ্ট কইরা এইসব কাহিনী বানায়। দ্বৈপায়ন যদি এইরকম একটা ফাও কাহিনী পাইয়া যান তো ছাড়বেন কেন? এইটা একটা সুবিধাও। ঋষিরা নিজের নামে ফাও কাহিনী চালান বইলাই অন্যের ফাও কাহিনীগুলাও তারা মাইনা নেন। এই যেমন কুন্তীর দেবতা কাহিনী। এই কাহিনীটাও তো দ্বৈপায়ন মাইনা লইছেন; স্বীকৃতিও দিছেন... থাউক। নিজের কাহিনীর খাতিরে গান্ধারীর চাল কুমড়া কাহিনীটাও কুন্তীরে মাইনা নিতে হইব... যদিও কুন্তীর সন্দেহ হয়; বোধহয় দ্বৈপায়নই নিজে একই বয়সের এই একশো একটা পোলাপান আইনা গান্ধারীরে দিছেন... হইতেও পারে; ধৃতরাষ্ট্র তার বড়োপোলা। তার লাইগা মায়া থাকতেই পারে তার। কিন্তু ভীষ্মদেব কি মাইনা নিছেন গান্ধারীর একশো পোলার কাহিনী? ভিতর থাইকা না মানলেও বাইরে না মাইনা তার উপায় নাই। যেহেতু দ্বৈপায়ন এই কাহিনীর সাথে সরাসরি যুক্ত আছেন......
গান্ধারীর এখন একশোটা পোলা। তাই নিজেদের পোলাদের আরেকটু শক্ত পোক্ত না কইরা হস্তিনাপুর যাওয়া ঠিক না। নিজের পোলাদের সুবিধার জন্যই পাঁচ ভাইরে এক কইরা বড়ো করা দরকার। পাঁচ ভাই এক থাকলে হিসাব মতোই বড়োভাই হিসাবে কুন্তীর ছেলেরা মাদ্রীর ছেলেদের সেবাযত্ন পাইব। তাই কুন্তী একাই পাঁচটা পোলার দেখাশোনা করে আর মাদ্রী সেবা করে পাণ্ডুরাজার। এর মধ্যে একদিন পাণ্ডুরাজা যায় মইরা। মরা স্বামীর লাশ সামনে রাইখা কুন্তী আগুন হইয়া উঠে মাদ্রীর দিকে- হারামজাদি। নিজের গতর ঠান্ডা করার লোভে স্বামীরে মাইরা ফালাইলি তুই?
এমন অভিযোগ মাদ্রী কল্পনাও করে নাই। বনের ভিতরে স্বামীরে নিয়া ঘোরাঘুরির সময় তার প্রতি স্বামীর হঠাৎ খায়েশ জাগে। না না কইরাও আর শেষ পর্যন্ত সে না করতে পারে না। কিন্তু স্বামী তার দুব্বল হার্টের মানুষ। উত্তেজনায় শরীর টানটান হইয়া উঠলে ধুম কইরা তার হৃৎপিণ্ডখান বন্ধ হইয়া যায়। মাদ্রী অতটা বোঝে নাই। কিন্তু কামোত্তেজনার সময় যে পাণ্ডরাজা মরছে সেইটা তো আর অস্বীকার করতে পারে না। সে মুখ নত কইরা রাখে। কিন্তু কুন্তী আগে বাড়ে আরো- বেশরম বেহায়া নারী। তেরো বচ্ছর বয়স তোর নিজের দুইটা পোলার। পাণ্ডুরাজার বড়োপোলাটা ষোলো বচ্ছরে পা দিছে এইবার। তাগোরে কী বলবি তুই তাদের বাপের মৃত্যুর কারণ? তুই কি তাদের বলতে পারবি যে তোর লগে যৌনখেলা খেলাইতে নিয়া তাগোর বাপেরে খাইছস তুই?... কোন মুখে তুই এখন হস্তিনাপুর যাবি? নগদ পয়সা দিয়া কেনা ভীষ্মের দাসী তুই। এখন হস্তিনাপুরে গেলেই সন্তান দুইটারে কাইড়া নিয়া তোরে আবার কারো কাছে বিক্রি করবেন না ভীষ্ম; তার কি নিশ্চয়তা? আর তোর অপরাধে আমারেও মানতে হবে নির্বাসনের বিধান। কেননা অসুস্থ রাজা পাণ্ডুরে দেইখা রাখার ভার আমার উপরেই দিছিলেন গঙ্গার নন্দন আর পাটনি সত্যবতী.... থাক তুই... তুই থাক তোর কামবাসনা নিয়া। এখন স্বামীও নাই। এদিক সেদিক যেদিক ইচ্ছা গিয়া তুই তোর কাম বাসনা কর। নিজের পেটের পোলাগোর সামনে যৌনখেলায় পিতার মৃত্যুর বর্ণনা দিবার থাইকা আমার মইরা যাওনই ভালা। পোলাগের সামনে তাগোর অসুস্থ পিতার লগে যৌনকর্মের কাহিনী বলার লাইগা বাইচা থাক তুই। আমি বরং আত্মঘাতী হয়ে সহযাত্রী হই নিহত স্বামীর। কেননা পৃথার কাছে অসম্মানে বাইচা থাকনের চেয়ে মৃত্যুই ভালো; বিশেষ করে যে স্বামীরে শতশত পাত্রের সামনে মালা দিয়া বরণ করছি আমি। তোর তো ওইসব কিছু না। সম্মান তোর কোনো কালেই ছিল না; বাকি জীবনও তুই কাটায়ে দিতে পারবি দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা কিংবা দাসীগিরি করে। নিজের পোলাদের ভবিষ্যৎ নিয়া আমার চিন্তা নাই। কারণ বংশের বাত্তি পঞ্চ পাণ্ডবরে বুকে তুইলা রাখবেন ভীষ্ম আর সত্যবতী। ... সংবাদটা শুইনা তাই স্বামীর লগে সহমরণে যাইবার লাইগা আমি সাথে কইরা নিয়া আসছি বিষ...
বিষপাত্র তোলে কিন্তু মুখে দেয়া না কুন্তী। আড়চোখে দেখে মাদ্রী কী করে। মাদ্রী ভাইঙ্গা পড়ে। কুন্তী অপেক্ষা করে। আঘাতখান জায়গামতোই লাগছে মাদ্রীর। মাদ্রী দৌড়াইয়া আইসা কুন্তীর বিষের পাত্র কাইড়া নেয়- দিদি গো। জীবনে আমার সম্মান আছিল না সত্য। কিন্তু নিজের পোলাগো সামনে এই কাহিনী আমারে কইতে কইও না গো দিদি। দোষ আমারই। যিনি এই দোষ থাইকা আমারে খণ্ডাইতে পারতেন তিনি এখন নিথর। আমি আর নিজের পোলাগো সামনে যাইতে চাই না। তুমি যা হয় একটা কিছু তাদের বুঝাইয়া কইও আর নিজের পোলাগো লগে আমার দুইটা পোলারেও একটু জায়গা দিও দিদি...
বিষ খেয়ে মাদ্রী পাণ্ডুর সহগামী হয় আর প্রায় সতের বছর পর পাণ্ডু আর মাদ্রীর লাশ নিয়ে হস্তিনাপুরে পা দেয় কুন্তী। সাথে তার পাঁচ পাঁচটি তরুণ পাণ্ডব। যুধিষ্ঠির ষোলো- ভীম পনেরো- অর্জুন চৌদ্দ- নকুল সহদেব তেরো। কুন্তী জানে এখন রাজা পাণ্ডুর সৎকার আর শোকেই ব্যস্ত থাকবে সবাই। এই শোকসময়েই পিতামহী সত্যবতীকে ম্যানেজ করে প্রাসাদে জায়গা করে নিতে হবে। পাঁচ নাতির দায়িত্ব সঁপে দিতে হবে কুরুবুড়া ভীষ্মের হাতে। আর বিদুরের লগে আলাপ করে বুঝে নিতে হবে রাজ্যের বাতাস....
সৎকারের শেষ দিনই দ্বৈপায়ন আইসা সত্যবতীর হাতে ধরেন- চলো মা। এইবার তুমি আমার আশ্রমে চলো। বহুত করছ তুমি এই বংশের লাইগা। এইবার তাগোর ভবিষ্যৎ তাগোরে ব্যবস্থা করতে দেও। আর অশান্তির দরকার নাই তোমার...
দ্বৈপায়ন বহুত বুদ্ধিমান মানুষ। ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ড পর্যন্ত পুরা বংশটাই ছিল সত্যবতীর। সেই বংশ এইখানে শেষ। দ্বৈপায়ন তো জানেন তার দুই পুত্রবধূর পোলাপান একটাও তার নিজের পোলাগো পয়দা না। এদের মইধ্যে মারামারি অনিবার্য। সত্যবতীর এক নাতি মইরা গেছে; আরেকটা বুড়া। এই বংশ বৃদ্ধির আর কোনো পথ নাই। হস্তিনাপুরে এখন শুরু হইব কুন্তীর না হয় গান্ধারীর বংশ বিস্তার। তাই এই অশান্তি থাইকা তিনি মায়েরে সরাইয়া নিতে চান...
সত্যবতীও রাজি। সাথে তার দুই পুত্রবধূ অম্বিকা আর অম্বালিকারেও নিলেন। তারপর যে কানীন পুত্রকে রেখে রাজবধূ হয়েছিলেন তিনি। সেই কানীন পুত্রের হাত ধরেই শান্তনুর পরিবার ছেড়ে বনবাসী হলেন সত্যবতী। পেছনে পড়ে রইল নিজের বংশ বিস্তার করতে গিয়া যার বংশবিস্তার তিনি বন্ধ কইরা দিছিলেন; সংসারে আটকা পড়া নিঃসঙ্গ সেই ব্রহ্মচারী গঙ্গার নন্দন আর দুই নাতিবৌ গান্ধারী-কুন্তীর সংসার....
২০১২.১১.১০-১৭
মন্তব্য
পাঙ্খা হচ্ছে লীলেন ভাই। জোরসে চলুক।
ফারাসাত
এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। চ্রম কাহিনী! মহাভারতের সারাংশ এত চমৎকার হতে পারে চিন্তা করি নাই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সারাংশ তো ঠিকই। কিন্তু কুন্তীরে নিয়া লিখতে গেলে তো মহাভারতের প্রায় পুরাটাই লিখে ফেলতে হয়
বাংলা মহাভারতের লিংক দেয়া যাবে?
http://www.onushilon.org/corpus/mohavarot/mohaindex.htm
এইখানে দেখতে পারেন। এখানে কালীপ্রসন্নেরটা আছে। গুগল করলে অন্যগুলাও পাওয়া যায়
ধন্যবাদ।
গুগলে অনেক সার্চ করেও মহাভারতের বঙ্গানুবাদের লিংক পাই নাই। কালী প্রসন্নেরটাও না। যে সব কিওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা করসিঃ " Mahabharat in bengali online", "Read mahabharat in bengali online", " Mahabharat bengali", "Mohabharot in bengali online", "মহাভারত বঙ্গানুবাদ অনলাইন", "মহাভারত বাংলা অনলাইন", "মহাভারত বাংলা"।
আবারো ধন্যবাদ।
বৃষ্ণি বংশের রাজা সুরসেনের কন্যা, শ্রীকৃষ্ণের পিসি 'পৃথা' পরবর্তীতে নিঃসন্তান রাজা কুন্তিভোজের পালিকা কন্যা 'কুন্তি' যখন সদ্যই যৌবনপ্রাপ্ত তখনই চারিদিকে তাঁর রূপও গুণের কথা ছড়িয়ে পড়ে। এসব জেনে ঋষি দুর্বাশা স্বেচ্ছায় রাজা কুন্তিভোজের অতিথি হন। ঋষি দুর্বাশা খুব রাগী প্রকৃতির ছিলেন, তাই রাজা কুন্তিভোজ তাঁর পালিতা কন্যা কুন্তিকে, ঋষি দুর্বাশার সেবার দায়িত্ব দেন। কুন্তি, ঋষি দুর্বাশার সব ধরনের আবদার মেনে নিয়ে তাঁকে সেবায় সন্তুষ্ট করেন। বিদায় কালে ঋষি দুর্বাশা কুন্তির গর্ভে সন্তানের বীজ এবং আশির্বাদ স্বরূপ একটি বর দান করেন ! এইটা আমার কথা না। কোন কোন ব্যাখ্যাকারগণ এমনটাই মনে করেন।
লেখাটা উপভোগ করছি। বিস্তারিত লিখুন।
নজরুলের কোন কবিতায় যেন পড়েছিলাম দুর্বাশা তাপসের কথা। ক্ষেপে গিয়ে তিনি যেন কাকে (অভি)শাপ দিয়েছিলন?
উপাখ্যানটা কারো জানা থাকলে দয়া করে শেয়ার করুন।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
দুর্বাসা কাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন মানে? তিনি কাকে দেন নাই? শিবেরে পর্যন্ত অভিশাপ দিয়া বসছিল এই লোক
০২
নজরুলে বিদ্রোহী কবিতায় এই দুর্বাসার উল্লেখ আছে- খ্যাপা দুর্বাসা' নামে। লোকটা সত্যিই ছিল খ্যাপ। তবে বুদ্ধিসুদ্ধি মনে হয় একটু কম আছিল
আপনি সম্ভবত মহাকবি কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলা কাব্যগ্রন্থের কথা বলতে চাইছেন। সেখানে আছে, ঋষি দুর্বাশা শকুন্তলার আতিথ্য চেয়েছিলেন কিন্তু শকুন্তলা সেটি প্রত্যাখ্যান করায় দুর্বাশা তাকে এই শাপ দিয়েছিলেন যে তার (শকুন্তলার) প্রেমিক তাকে ভুলে যাবে।
মাহবুব ভাইয়ের ভাষাতেই বলি- শকুন্তলার কথা মনে আছে তো? তার আলাভোলা বাপ বিশ্বামিত্ররে মেনকা কিরকম বুদ্ধু বানাইয়া শকুন্তলারে গছাইয়া দিয়া গেছিল। তয় শকুন্তলারে তার ঋষি বাপে সব শাস্ত্রই শিক্ষা দিছে, তাই দুষ্মন্ত বিয়ার অংগীকার না কইরা তারে কিছু করতে পারে নাই। ঘটনা শুইনা দুর্বাসা আসছে তারে কিছু পরামর্শ দিতে, ফাঁকতালে কুন্তীর মত কিছু একটা মাজেজা যদি দেখান যায়! কিন্তু শকুন্তলা এই বুইড়ারে মোটেই পাত্তা দেয় নাই। তখন দুর্বাসা রাগে গরগর করতে করতে দিছে একটা শাপ! যাও মাইয়া, আমারে পাত্তা দিলা না, দুষ্মন্ত তোমারে চিনবারই পারবো না। আসলে দুর্বাসা জানতো, বড়লোকের খেয়াল! কাম তো সাইরা ফেলাইছে, এখন কি আর পাত্তা দিব! হইলোও তাই, দুষ্মন্ত যখন আর আসে না, শকুন্তলা তখন দুষ্মন্তের ঔরসজাত বাচ্চা সহ রাজবাড়ীতে গিয়া হাজির। আর দুষ্মন্ত কয়, এই মাইয়া কেডা, হেরে তো আমি চিনিই না।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
শকুন্তলারে মেনকা বিশ্বামিত্রের কাছে গছায়া ভাগে নাই। বরং বিশ্বামিত্র আর মেনকা দুইজনেই তারে ঋষি কণ্বের কাছে রাইখা ভাগছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পালক পিতা ঋষি কণ্বের আগেও শকুন্তলার জীবনে আর একটা অধ্যায় আছে। মেনকা শকুন্তলাকে মালিনী নদীর তীরে বনের মাঝে রেখে স্বর্গে চলে যান। সেখানে একদল শকুন শিশুটিকে লালন পালন করতে থাকে, সে কারনেই তার নাম শকুন্তলা। পরে একদিন কণ্ব সে পথে যাবার সময় শকুন পরিবেষ্টিত অবস্থায় একটি শিশু দেখতে পান এবং তাকে আশ্রমে নিয়ে এসে লালন পালন করতে থাকেন।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
অসাম
ধন্যবাদ
কাহিনী আরেকটু লম্বা করলে কী ক্ষতি আছিল ? মুহুর্তে শেষ হয়ে গেল
পরের পর্বের অপেক্ষায় উদগ্রীব....
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
লম্বা কেমনে করি স্যার? সন তারিখ গোত্র নাম মিলাইতে মিলাইতেই তো খরব হইয়া যায়
এখান থেকেই নমশূদ্র আর ক্ষত্রিয়ের বিভাজন শুরু? আচ্ছা, ক্ষত্রিয় এবং নমশূদ্র শব্দ দুটোর মানে কী?
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
শূদ্র আর ক্ষত্রিয়ের বিভাজন এইখান থাইকা শুরু না। আরো আগেপরে। মহাভারতে বরং বেশ কিছু ফ্লেগ্জিবিলিটি আছে.... বাপ ব্রাহ্মণ মা শূদ্র; এই ছেলের ব্রাহ্মণ হইবার কথা না; কিন্তু দ্বৈপায়ন একজন ব্রাহ্মণ হিসেবে স্বীকৃত আবার দ্বৈপায়নের ছেলে বিদুর কিন্তু শূদ্র; শুধু তার মা দাসী বলে,,, ঝামেলা আছে এই হিসাব নিকাশে
০২
সাধারণভাবে গেরস্থ- রাজকর্তা-এবং সৈনিকরা। এদের জীবিকা চাষবাস আর রাজনীতি
ধর্মকর্ম-শিক্ষাদান আর গরুপালন যাদের পেশা তারা ব্রাহ্মণ
রাজারে করটর দিয়ে সার্ভিস যবে যারা কাজ করে তারা বৈশ্য; সাধারণত এরা বিজিত রাজ্যের মানুষ থাকে
আর দরিদ্র শ্রেণির মানুষ; যারা কৃতদাস না হইলেও কামলা শ্রেণির; তারা সবাই শূদ্র...
কিন্তু এই ভাগেরও আবার বহুবিভাজন আছে। সময়ে সময়ে এই সজ্ঞা বদলে গেছে। কোথাও কোথাও বেশি শিথীল আবার কোথাও বেশ কড়া...
অন্য হিসাবে ক্ষত্রিয়রা সত্যযুগের অসুরদের বংশধর। যারা স্থায়ী মানুষ ছিল। স্থায়ী বলেই তারা রাজনীতি আর উৎপাদনে নিয়েজিত ছিল। মহাভারতের প্রায় পুরোটাই ক্ষত্রিয় ঘটনা...
ব্রাহ্মণরা সত্যযুগের দেবতাদের বংশধর। তারা পশুপালক আর ভ্রাম্যমান। কিন্তু বুদ্ধির জোরে ক্ষমতাবান। কিন্তু মহাভারতে ব্রাহ্মণরা শক্তিহীন আর বৈশ্য শূদ্ররা স্থানীয় মানুষ...
কিন্তু এই ব্যাখ্যার পরেও আরো বহু ব্যাখ্যা আছে.....
মোটা দাগে; মুচি (চামাড়), জেলে, তাতী, কুমার (মৃতশিল্পী), কামার (লোহা পিটিয়ে দা-কুড়াল বানানো লোত), নাপিত, মেথর (এখন কিন্তু বেশীর ভাগ মেথর খৃষ্টান, তাঁরাও এক সময় হিন্দু নমশূদ্র ছিল?) এরাই নমশূদ্র?
ভয়ের কারণ;
এই বাক্যটি। এই পর্যন্ত যা বললেন (আপনার লেখার এই ষ্টাইলটা, মুখে মুখে কিচ্ছা-কাহিনী বলার মতো সহজ-সাবলীল জীবন্ত); সেটুকু বুঝতে এবং মনে রাখতে মাথার ২৫ ভাগ চুল সাদা হয়ে গেছে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
বেশিরভাগ খৃস্টান কেন? বেশিরভাগ মুসলমানও ছিল এককালের নমশূদ্র
জী, আরও বহু ব্যাখ্যা আছে। শুধু একটা বলি, বেদযুগে রাজার প্রথম পুত্র রাজা হতো। তাই রাজদন্ড থাকতো তার হাতে। সে হতো ক্ষত্রিয়। আর কোন কোন পুত্রের হাতে থাকতো ধর্মদন্ড। সে হতো ব্রাহ্মণ।
পুরাণকথা, পর্ব-৭
হ। স্যার। আরোও কাহিনি আছে...
পুরাণকথা, পর্ব-৭
অনার্য ভারতে বর্ণ বা কাস্ট সিস্টেম ছিলনা অথবা ভিন্ন আকারে ছিল। আর্যরা এই বর্ণ-জাতিভেদের প্রয়োগ করে তাদের ঔপনিবেশিক সৃার্থ কায়েক করতে। ব্রাহ্মন (আমলা, আইনপ্রণেতা) ও ক্ষত্রিয় (সামরিক ও পুলিশ) যথাক্রমে দুইটা মূলত বহিরাগতদের আদর্শিক ও সামরিক ক্ষমতাশীলের পরিপূরক শ্রেনীদের পদবী, এবং এদের পরিচিতি জীবিকা বা বংশ-গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত নয়। এদের বাইরে স্থানীয়দেরকে সাধারনভাবে অবদমন ও শোষনের জন্য় বর্ণ ও জাতিতে ভাগ করা হয়েছে।
বাসায় মহাভারত থাকা সত্ত্বেও "ছোটোদের মহাভারত" এর উপরে ওঠা হয় নি অলসতায়। আপনার লেখা পড়ে ছোটোদের ভার্সনের সুগারকোটিংগুলো মনে করে হাসি আসছে। মহাভারতটা পড়েই ফেলতে হবে এবার!
লীলেন'দা, লেখাটা খুব ভালো লাগছে। এবং প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে। রোমিলা থাপারের ভারতবর্ষের ইতিহাস পড়ার পর থেকেই ব্যাপারগুলো অন্যরকম লাগতো, আপনার এই লেখাটার কল্যাণে ভেতরের অনেক কিছু জানতে পারছি। অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
মহাভারতটা পড়ে ফেলেন। আমার এইটারে মহাভারতে ভার্সন না ধরাটাই ভালো; এইটা এক ধরনের সমীকরণ বলা যেতে পারে
লা-জবাব।
-অয়ন
ক্যান?
মহাভারত পড়েছি আগেই। মজাও পেয়েছি খুব। কিন্তু অলৌকিকতার মেদভূঁড়িগুলো বাদ দিয়ে দিলে সাধারন হাড়-মাংসগুলোকে কী অবস্থায় পাওয়া যায় তার চমৎকার উদাহরন আপনার লেখাটা। পড়ে একদম জবান বন্ধ হয়ে গেছে।
-অয়ন
ফাটাফাটি লীলেনদা, কিন্তু দ্রৌপদীরে নিয়া যে রাজনীতিটা করলো হেইডা বাদ দিলেন যে? মনে হয় দৌপদী পর্বে আসতেছে তাই না?
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
খালি ধান্দায় থাকলে হইব? দ্রৌপদী এখন আসবো কইথাইকা? এখনো তার জন্ম হইছে কি না কে জানে?
এখনো অর্জুনের বয়স মাত্র ১৪ বচ্ছর। আগে অর্জুন তোমার বয়সে পৌঁছাক তার পরে না দ্রৌপদী...
ঠিক ঠিক!
facebook
ঠিক তো অবশ্যই। বুড়ারা মহাভারত বলতে যেমন খালি শ্রীকৃষ্ণচরিতামৃত আর ভগবান কৃষ্ণের লীলা বোঝে; আবিয়াইত্তা পোলাপান তেমনি মহাভারত বলতে খালি বোঝে দ্রৌপদী। এর মধ্যে কাইলকে আবার আমারে একজন মেইল কইরা জিগায়- দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণটা কেমনে বর্ণনা দিবেন দাদা?
ধুরু! আমি কুন্তী দ্রৌপদীরে নিয়া যে রাজনীতি করসে অইটা কইসি
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ঊঠতি পোলাপাইনের নিষ্পাপ চরিত্র নিরাপদ সংরক্ষণের নিমিত্তে এই সিরিজটাকে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ পর্ব মুক্ত রাখা হোক !!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
উঠতি পেলাপান যতই বলুক না কেন যে ওইটা আছিল দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ। কিন্তু তারা এইটা ভুইলা যায় যে ওইসময় কৃষ্ণ দ্রৌপদীরে হিজাব পরাইয়া দিছিল...
মহাভারত আগেই পড়া । কিন্তু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখা এই মহাভারত পড়ে একদম নতুন করে পড়ার মজা পাচ্ছি । অযৌক্তিক মনে হওয়া ঘটনাগুলোর তাৎপর্য টের পাচ্ছি । পরের পর্বের প্রতীক্ষায় আছি অধীর আগ্রহে ।
মহাভারতটা আসোলে বহু মানুষের রচনা। মুখে মুখে প্রায় হাজার চারেক বছর চলার পর তা লিখিত রূপ পায়। যার জন্য এর মেদমাংসভূড়ির পরিমাণও কম না
এ বিষয়ে বিজ্ঞ-বিদ্বানদের ধারণা যে (বিশেষ করে রাহুল সাংকৃত্যায়ন), মহাভারতের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ থেকে শুরু হয়ে খ্রিস্টঅব্দ ৪০০ পর্যন্ত এই বিরাট সময় জুড়ে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে। অতএব বংশ পরম্পরায় বারোয়ারি মালের যা হয়, নানান মত, দর্শন, মতাদর্শ সবকিছুই ঠাঁই পেয়ে গেছে এখানে। হা হা হা !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হ আমিও তাই জানি। এর রচনাকাল আর লিখিত রূপ পাইবার কালের মধ্যে হাজার চারেক বছরের ফারাক
দারুণ মজা পাচ্ছি লীলেন'দা। ভীমকে নিয়ে একটা ডাউট অলোয়েজ ছিল আমার। বেটা ঘুরে ফিরে হিড়িম্বাদেরই রুপে মুগ্ধ হত। মহাভারতীয় কল্পকথার চরিত্রগুলো যে মানবীয় ছিল এবং তাদের বিচিত্র কিচ্ছা-কাহিনীগুলোও যে আমাদের সাধারণ নিত্যকার জীবনের কাহিনীর মতই তা তুলে ধরছেন বলে ধন্যবাদ।মহান পুরুষগুলোও যে আমাদের মতই সাধারণ; কাম-শঠতা-ধূর্তামি আর মিথ্যাচারীতায় ভরপুর তাদের জীবন এটা কেন যে মানতে চাইনা! কোথাকার কোন যদু-মধুরা এসে যা খুশি তাই বলে গেল আর আমরা হাজার বছর ধরে তাদের মাথায় তুলে ধেই ধেই করে নাচি আর তাদের নামে কেউ দু'টো একটা রসিকতা করে তাদের কাছা খোলার চেষ্টা করলেই রে রে করে তেড়ে আসি, যেন আমার নিজের জালিয়াতির কথা ফাঁস করে দিচ্ছে বলেই, ''ওরে থামা থামা শয়তানের দোসরটাকে'' বলে সবাইকে জড়ো করার চেষ্টা করি।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ভীম মহাভারতের একমাত্র চরিত্র যে তার নিজের বৌকে সম্মান করে। সার্বিকভাবে নারীদের সম্মান করা চরিত্র্ও একমাত্র এই ভীম...
পঞ্চ পাণ্ডবদের বাকি চারজনের ক্ষেত্রেই দ্রৌপদী ছিল প্রথম স্ত্রী। ভীমের ক্ষেত্রে দ্রৌপদী ছিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দ্রৌপদীকে বিয়ে করার পরে অন্য সব পাণ্ডবরাই একাধিক বিয়ে করে। অর্জুন তো প্রায় এক গণ্ডা বিয়ে করে। ভীমের কিন্তু আর কোনো বিয়ের সংবাদ পাওয়া যায় না..
কুন্তীর সমস্ত সংসারে মায়ের গেরস্থালি আর পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণের একমাত্র নির্ভর ছিল ভীম
দ্রৌপদীরও একমাত্র সহায় ভীম। দ্রৌপদীর অপমানের প্রতিশোধ ভীম ছাড়া অন্য কোনো পাণ্ডবই নেয়নি। সবগুলাই একাই নিয়েছে ভীম...
ভীম-ই বস্ত্রহরণের সময় প্রতিবাদ করেছিল। আপনার কথা ঠিক।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
খালি প্রতিবাদ না। পাশা খেলে এই দুর্গতি টেনে আনার জন্য গদা দিয়ে যুধিষ্ঠিররে মেরে ফেলতে গিয়েছিল। অর্জুন তাকে আটকায়
সম্ভবত মহাভারতে ভীমই একমাত্র চরিত্র যে আসলে অকৃত্রিম একটি মানুষের চরিত্র পেয়েছিল। সেই সহজ-সরল মানবিক রক্তের উত্তরাধিকার হয়েছিলো। আর সবগুলো চরিত্রই পুরা বিটিশ ! হা হা হা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
শুধু ভীম না; তার ছেলে ঘটোৎকচ এবং ঘটোৎকচের নাতি অঞ্জনপর্বাও কিন্তু ভীমের মতো মানবিক মানুষ ছিল
ঠিক, একই রক্তস্রোতের উত্তরাধিকার বলেই হয়তো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বাপরে! এক নিঃশ্বাসে পড়তে গিয়ে সব গুলিয়ে গেল
বইমেলার উপকরণ কি তৈরি হয়ে যাচ্ছে?
আরে না। বহুত দূর বইমেলা পর্যন্ত পৌছানো
অন্যরকম আঙ্গিক থেকে দেখা মহাভারত খুবই উপভোগ্য লাগছে। গোগ্রাসে গিললাম দুটি পর্বই। দারুণ মজা পাচ্ছি লীলেন'দা।
তৃতীয় নারীর অপেক্ষায় রইলাম।
অকাল কুষ্মাণ্ড বাগধারাটি যে গান্ধারীর কুমড়া প্রসব থেকে এসেছে আগেই জানতাম। যেদিন জানতে পারি খুব হেসেছিলাম। আজ মনে হয় আসল রহস্য বুঝতে পারছি।
অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের!
হ। অকাল কুষ্ণাণ্ডটা গান্ধারীর কুমড়া প্রসবই
হতে পারে লাউয়ের খোলে করে শিশুগুলোকে আনা হয়েছিল.... অথবা হতে পারে শিশুগুলোকে এনে লাউয়ের খোলের মধ্যে রাখা হয়েছিল.... বড়ো সাইজের লাউয়ের খোল লম্বালম্বি করে কেটে অর্ধেকটা দিয়ে বানানো শিশুর দোলনাও হতে পারে এইটা.... অথবা শিশুগুলোকে আনার পর লাউয়ের খোল থেকে ঘি নিয়ে মালিশ করার কারণেও এদের সাথে লাউ যুক্ত হয়ে যেতে পারে...
অথবা শ্রেফ আনার পর লাউয়ের মুরব্বা খাওয়ানো হয়েছিল এদের; হয়ত সেই মুরব্বার সাথে ঘি ছিল...
লাউ কিন্তু বহুযুগ ধরে মানুষের বিভিন্ন জিনিস রাখার পাত্র হিসেবে কাজ করেছে; এখনো করছে। গান্ধারীর ছেলেমেয়েদের সাথে লাউয়ের কোনো না কোনো একটা সম্পর্ক থাকাই স্বাভাবিক
অসাধারণ লেখা। শেষ পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কুন্তীকে নিয়ে পর্ব মনে হয় আরো দুটো হবে; একটা পাণ্ডুদের বনবাস যাওয়া পর্যন্ত আরেকটা ফিরে এসে যুদ্ধ এবং তারপর কুন্তীর মৃত্যু পর্যন্ত। মাঝখানে আসবে দ্রৌপদী পর্ব
আপনার এই মন্তব্য পড়েই খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। (আকর্ণ বিস্তৃত হাসির ইমো) লেখার কথা আর নাই বলি। অসাধারণ বল্লেও কম বলা হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।
ইতিহাস, মীথ, উপকথা, লোককাহিনী এগুলো নিম্নবর্গের মানুষের কনটেক্সট থেকে দেখলেই অনেক কিছু ফক্ফকা হয়ে যায়। গোঁজামিল দেবার জন্য যেসব মাজেজা আমদানী করা হয়েছিল সেগুলোর কাছা খুলে যায়। মহাভারতের নতুন পাঠ চলুক!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গোজামিল দেবার বর্তমান সূত্রটা দেখলেই কিন্তু স্যার ঘটনাগুলা পরিষ্কার হয়ে যায়। বর্তমানেও দেখবেন অনেকে বলে- আমার দাদায় আছিল পলোয়ান। খালি হাতে বাঘ মাইরা ফালাইছিল সে.... খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে তার সেই পূর্বপুরুষ লঠি সড়কি দিয়ে মেরেছিল একটা বনবিড়াল... এই রকমই আরকি; এগুলো ওইসব মানুষদের পরবর্তী প্রজন্মের সংযোজন
পিটার ব্রুক কে কোনভাবে লেখাটা পড়ানো গেলে
পিটার ব্রুকের মহাভারত বললে পাজামা-টিশার্ট পরা পাণ্ডব আর সালোয়ার-কামিজ-ওড়না পরা দ্রৌপদীর কথা মনে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পিটার ব্রুত পড়লে তো আর এইটা মহাভারত থাকবে না। হয়ে যাবে মাহাবারাটা
ওইটা হবে তখন মহাভর্তা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আচ্ছা ভাতার কথাটা কি ভর্তা কথাটা ভাইঙ্গা আসছে। আমার তো সেরমই লাগে। কারণ আগে ভর্তা কইতো স্বামী, পতি, পালনকারীরে।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
হ। স্বামী মানে ভর্তৃ ভতার ভর্তা; যারে বানাইতে হয় পিণ্ডি চটকাইয়া
ভাল লাগছে পড়তে লীলেন্দা
দ্রৌপদীর একখান ছবি রেডি করা যায় না খেকশিয়ালের লাইগা?
করা যায় - কিন্তু সেখানে তারেকাণুর নজর পড়বে সবার আগে
সুন্দর লেখা।
একটা অধারাবাহিকতা চোখে পড়লো। আপনার থিওরি মত যুধিষ্ঠির বিদুরের পোলা। এইটা আবার শেষের আগের প্যারার সাথে কন্ট্রাডিক্ট করে। ব্যাস মিয়ার ত জানার কথা যে তার একখান বংশধর এখনো আছে, সে আবার সিংহাসনের ১নং দাবিদার।
হ। কিন্তু সেইটাতো কেয়ারঅফ কুন্তী
একসময় গান্ধারীর শতপুত্রের কথাই শুধু জানতাম, কুষ্মান্ডের ব্যাপারটা জানতাম না। তখন ভেবেছিলাম গান্ধারী যদি ফি বছরেও একটা করে পুত্রের জন্ম দেয়, তাহলেও তো একশ বছরের ব্যাপার। বাপরে! অত বয়সেও গান্ধারী কত উর্বরা, আর ধৃতরাষ্ট্র কত বীর্যবান। পরে অবশ্য কুমড়া বড়ির ঘটনা জানলাম।
কিছুদিন আগে এক ব্লগে দেখলাম ভিন্ন ব্যাখ্যা। সেখানে মহাভারতে বর্নিত বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র যে আসলে পারমানবিক অস্ত্রশস্ত্র, ব্যাখ্যা সহকারে তাই বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। অর্থাৎ সুদূর অতীতেই ভারতের লোকজন পারমানবিক শক্তির অধিকারী হয়েছিল। গান্ধারীর শতপুত্র লাভের ঘটনা আসলে অতি উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে করা হয়েছিল, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রীগন সে আমলেই টেষ্ট টিউব বেবী জন্মদানে সক্ষম ছিলেন, এমনকি একটি টিউবে অগনিত সংখ্যক শিশু জন্মদানের টেকনোলজীও তাদের জানা ছিল।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
আপনে জানেন না, সব কিছু ব্যাদে লেখা আছে!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
হ। নবী মুসা আছিল একশো হাত লম্বা মানুষ। কিন্তু ইস্তাম্বুলের জাদুঘরে তার যে লাঠি আছে সেইটা নাকি আড়াইফুট লম্বা মাত্র; মানে আমার মতো সাড়ে পাঁচ ফুট লোকের লাঠি যতবড়ো হয় ততবড়ো আরকি [তথ্য চাইলে তারেক অণুরে জিগান। সে মুসারে না দেখলেও মুসার লাঠি দেইখা আসছে]
০২
পরমাণুর ব্যবহারের নিদর্শন থাকলে পরিবেশে তার চিহ্ন পাওয়া যেত; তবে আগুন- আগুনের গোলা ছুড়ে মারার কোনো এক টেকনলজি ছিল;
লড়াই করতে করতে কোনো কিছুর সাহায্যে শূন্যে উঠে যাওয়া কিংবা কোনো কিছুর সাহায্যে লাফ দিয়ে মানুষের মাথার উপর দিয়ে উঠে যাওয়া কিংবা বড়ো লাফ দিবার টেকনলজি বোধহয় ছিল
[শ্রীলংকার গ্রিজ ডেভিলের টেকনলজি ওই সময়ের নাকি? নাকি লম্বা বাঁশ দিয়ে লাফ দিবার টেকনলজি?]
০৩
শতপুত্রটা দুই ধরনের বিষয় হতে পারে- এক) অনেক ছেলে অর্থে। আমরা যেমন বলি শত শত মানুষ। কুরুযুদ্ধে ধৃতরাষ্ট্রের সব ছেলেই মারা যায়। আমি বহুবার আঠারো দিনের মৃত্যু তালিকা গুনে দেখেছি- ধৃতরাষ্ট্রের একশো পোলার লাশ পাই নাই...
দুই) আর শতপোলা কিন্তু বহু বিবাহ আর দত্তক ছেলে দিয়েও হতে পারে। যুধিষ্টিরের আর কোনো বিয়ে নাই। একজন দাসীর গর্ভে তার এক মেয়ে আছে [নাকি ছেলে?]
দত্তক নেবারও আর কোনো কারণ নেই
তিন) গ্রামবুড়াদেরও কিন্তু পিতা ডাকার নিয়ম ছিল। সেই হিসাবে গ্রামের/বাহিনীর সকল তরুণই তার ছেলে। এই হিসাবে শত কেন? হাজার সন্তানও হতে পারে
আর যদি এর কোনোটাই না হয় তাইলে যেই বেডায় মহাভারতে পারমাণবিক বোমা আর টেস্টটিউব বেবির থিউরি দিছে তারে কন তাড়াতাড়ি গিয়া যেন ওইসবের পেটেন্ট রেজিস্টার করে...
তেইন একজন গেনী বেক্তি, তারে বেডা বেডি কওন বালা না।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
মহাভারত কতটা গল্প আর কতটা সত্যি? আমার তো ধারণা মহাভারত পুরোটাই গল্প, তবে সমসাময়িক সময়ের অনেক কিছু তা থেকে জানা যায়। সুতরাং শত-সন্তানের ব্যাপারটা পুরোই গল্পকারের উপস্থাপন। অনেক সন্তান ছিল - এটাই বোঝানো হয়েছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
গুনাগুনতি নিয়ে আসোলে বেশি কিছু ভাবার নাই; এটা অনেকটা- লাখে লাখে সৈন্য মারে কাতারে কাতার/ সুমার করিয়া দেখি সাড়ে তিন হাজার' এর মতো
০২
গল্প যে তা অবশ্যই। জন্মেজয় তার গৌরবময় ইতিহাস লেখাতে চেয়েছে। ঠিক যেমন অগস্টাস সিজারের (অক্টাভিও) মা তার ছেলের জীবনী মহান বানানোর জন্য ভার্জিলকে দিয়ে ঈনিড লিখিয়েছিলেন...
ভার্জিল রাজকীয় পযসায় অগস্টাসের জীবনি লিখে তাকে ট্রয় যুদ্ধের ঐতিহ্যের সাথে জুড়ে দিয়ে রোমান জাতির প্রতিষ্ঠাতা ইনিয়াসের (এইটাও কি ভার্জিলের আবিষ্কার না?) বংশ বলে চালিয়ে দিলেন
মহাভারতও ঠিক সেরকম। জন্মেজয়ের পূর্বপুরুষের ইতিহাসকে মহান করে লেখার জন্য দ্বৈপায়নকে নিয়োগ করা [এইখানে দ্বৈপায়নের বয়স নিয়ে একটা ঘাপলা হয়। এই হিসাবে দেখা যায় শান্তনু থেকে জন্মেজয় পর্যন্ত মোট সাত পুরুষের সমসাময়িক ছিলেন দ্বৈপায়ন...]
কিংবা অন্য হিসাবে এই রকমও হইতে পারে। দ্বৈপায়নের লেখা কানিহী যা প্রথমে মহাভারত নামে পরিচিত ছিল না [জয়] সেইটার সাথে কিছু চ্যাপ্টার যোগবিয়োগ করে মহাভারত বানানো হয়েছে জন্মেজয়ের সময়
জন্মেজয়ের মারা সাপগুলি কারা?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কথাখানের উত্তর ড. অতুল সুরের 'মহাভারত ও সিন্ধু সভ্যতা থেকে তুলে দেই
'
পড়ছি, ভালো লাগছে, আরও পড়বো।
জানুয়ারিতে দেশে আসছি, কথা হবে।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আসেন। আলাপ হবে। সম্ভব হলে কিছু জার্মান লোক সাহিত্য [ইংরেজি অনুবাদ] নিয়ে এসেন
কর্ণ-কুন্তী সংবাদের অপেক্ষায় রইলাম।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
আসবে
০২
অন্যপ্রসঙ্গ
নামের নীচে জীবনানন্দের কবিতার শেষ লাইটারে এমন কসাইর মতো কাটলেন কেন?
চমৎকার লাগলো। দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় ছিলাম। মহাভারত পুরোটাই রাজনীতি। আগে পড়া ছিল। বহুদিন পর, নতুন আঙ্গিকে ও বয়ানে পড়তে পেরে ভালো লাগছে।
স্বয়ম
ধন্যবাদ
যখন ছোট ছিলাম, মনে পড়ে উঠানে বসে শেষ বিকেলের আলোয় দিদিমা সুর করে পড়ে যেতেন কাশীদাসী মহাভারত। মহাভারতের কাহিনী তো জানা হয়ে গেল ঐ ভাবেই। পরে পড়েছি প্রথমে রাজশেখরের, পরে কালীপ্রসন্নের মহাভারত ও। দিদিমা মারা যাবার পরে, মহাভারত হাতে নেই নি অনেক দিন। আজ আপনার ভিন্ন আঙ্গিকের, ভিন্ন ভাষায় লেখা মহাভারতের এই নবরূপ পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
বৈঠকে পড়ার জন্য কাশীদাসী আর কৃত্তিবাসী দুইটাই দারুণ। আর বইগুলার ভেতরে মাঝে মাঝে দুয়েকটা ছবি- আহা; আমি প্রায় সময়ই উল্টে উল্টে দেখি
দ্রৌপদীর অপেক্ষায়
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
হ। আইসবে
দারুণ হচ্ছে...
ধন্যবাদ
সত্যি বলতে ভাষার জন্য লেখাটা পুরো পড়তে পারলাম না।
তার জন্য খুবই দুঃখিত। ধরিয়ে দিলে চেষ্টাব অন্যভাবে করার
উনিশশতকে ইউরোপিয় অপেরা-থিয়েটারের খোলসে বেড়ে ওঠা আমাদের যাত্রাশিল্পকে অবলম্বন করে আরব্য়রজনী, আর শেক্সপেয়ারিয় জুলিয়াস সিজার গল্পের একটা তালগোল মিশেল ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল খান আতার সিয়ারুজুদ্দৌলা সিনেমায়। আমরা যদি সিরাজুদ্দৌলা সিনেমার সিরাজ চরিত্রকে পর্যালোচনা করি, তাহলে হলিউডের চার্লটন হেস্টন আর ঢাকার আনোয়ার হোসেন, খান আতা এদের ব্য়াক্তিত্ব এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক উত্তাপ যতটা প্রকাশিত হয়েছে, পলাশির সিরাজের ব্য়াক্তিত্ব বা ঐতিহাসিক পরিস্থিত অথবা সেসময়ে লিখিত (যদি থাকে) সিরাজের পারিপার্শ্বিক ততটা প্রকাশিত হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।
শশী থারুরকে একটা সাক্ষাতকারে বলতে শুনেছিলাম তার মতে মহাভারতের বিভিন্ন ভার্সানকে ঠিক সেই সময়ের বিশ্বকোষ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। এর উদ্দেশ্য় কোন একটি গল্প বা একটি ধারণা বা একটি বক্তব্য়কে ধারন করা নয়, এর উদ্দেশ্য় লেখকগোষ্ঠির জানা-অজানা-কল্পিত-সংগ্রিহীত সকলপ্রকার তথ্য় একটি বালামে টুকে রাখা, যেটাকে সমসাময়িক ইতিহাসের রূপান্তর হিসাবেও গণ্য় করা যায়। মহাভারতের যে ভার্সান থেকে আপনি আমাদের এই অতি সুলিখিত বয়ানটি উপস্থাপন করছেন, সেটা সেই সময়ের একটি সাংস্কৃতিক স্ন্য়াপশট হতে পারে কি?
ভাল লাগছে, এই কথাটা এবার আলাদা করে আর না বলি।
প্রথম অংশটার প্রসঙ্গে আমি পুরো একমত। সিরাজ সেদিনের মানুষ। তার কর্মকাণ্ড প্রায় সবকিছুরই দলিল আর প্রমাণ আছে। তাতে তাকে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সিরাজ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা মানুষই মনে হয়
সিরাজউদ্দৌলা নাটকটা আসোলে সিরাজের নাম নিয়ে করা একটি সাহিত্য; যেখানে সিরাজ নামটাকে কেন্দ্র করে একজন জাতীয় বীর তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে অন্যান্য সাত্যির বীরদের চরিত্র অনুসরণ করে [বিশেষত শেক্সপিয়র]
০২
মহারভারত সম্পর্কে 'সেই সময়' বললে কয়েক হাজার বছরের সামাজিক- সাংস্কৃতিক বিবর্তনকে ধরতে হয়
এটা প্রথমে ছিল ৮০০০ শ্লোকের একটা বই। নাম ছিল 'জয়'। এইটার লেখক কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। এইটাতে কুরুযুদ্ধের কোনো বিবরণ ছিল না
তারপর এটা উন্নীত হয় ২৪ হাজার শ্লোকে। নাম হয় 'ভারত' এটাও দ্বৈপায়নের নামে চলে কিন্তু তখন তার থাকার কথা না
তারপর এটা পৌছায় ৮০ হাজার শ্লোকে/১ লাখ শ্লোকে। এবং নাম হয় 'মহাভারত'; যা আমরা বর্তমান বই হিসেবে পাই
গণিতবিদ বরাহমিহিরের গণনা অনুসারে আদি মহাভারতের কাহিনীকাল হচ্ছে খৃষ্টপুর্ব ২৪৪৮ সাল
আর হিসাব মতে এর রচনাকাল আর লিখিত হবার কালের মধ্যে ব্যবধান প্রায় তিন হাজার বছর
[৫ শতকের দিকে এটা লিখি হয়]
সুতরাং এইটাকে সেই সময়ের বিশ্বকোষ বললে একটু ঝামেলা হয়ে যায়। এটা সেই সময়ের সবকিছু ধারণ করে না। বরং অনেক সময়ের অনকেকিছুকেই এক সময়ের নামে চালাতে গিয়ে বেশ গোজামিল করে দেয়
০৩
সমসাময়িক ইতিহাসও এটাকে বলা বোধহয় ঠিক হবে না। বরং এক্ষেত্রে আমি রবীন্দ্রনাথের কথাকে মেনে নেবার পক্ষপাতি। তার ভাষায়'
যেখানে যুগের বিবর্তনগুলোও রয়ে গেছে; কিন্তু হারিয়ে গেছে সিকোয়েন্স;
০৪
আমার লেখাটায় বোধহয় সাংস্কৃতিক সেই সময়ের সাংস্কৃতিক উপাদান খোঁজা ঠিক হবে না
আমি গল্পটার শরীর থেকে অলৌকিকত্ব সরিয়ে প্রধানত বর্তমান দৃষ্টিকোণ থেকেই গল্পটা বলছি; যেখানে প্রেক্ষাপট রয়ে গেছে প্রাচীন
০৫
মহাভারতে সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের ব্যাখ্যাগুলো ড. অতুল সুরের বইতে বেশ মচৎকার ভাবে দেয়া আছে। ঢু মেরে দেখতে পারেন
এই বর্তমান দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পটা বলা হচ্ছে বলেই আকর্ষণীয় হয়ে ঊঠছে ! সাহিত্যের সবগুলো মহাকাব্যই আসলে কোন না কোন নারীকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধে অবশেষে ডাল-পালা গজিয়ে সবকিছুর সমাহারে মহাক্ষেত্র হয়ে ঊঠার কাহিনী। আর মহাভারত তো আসলে আপনার এই তিন নারীকেন্দ্রিকতা নিয়েই সবকিছুকে ধারণ করে ফেলেছে। অতএব, আপনার এই তিন নারী কেন্দ্রিক লেখাটার মধ্যে দিয়েই যে মূলত গোটা মহাভারতকেই বর্তমানের দৃষ্টিতে যাচাই করে নেয়ার দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে যাচ্ছি তা অনস্বীকার্য।
খুব কষ্ট হবে জানি, তবু আশা করবো লেখাটা যেন পূর্ণতা না পেয়ে না থামে। চলুক---
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হ স্যার
বুঝি নাই যে কুন্তীরে নিয়া লিখতে গিয়া পুরা মহাভারতই আগাগোড়া কপচাইতে হইব
০২
অন্য প্রসঙ্গ
দ্বৈপায়নের লেখা উশনা/উশনঃ (শুক্রাচার্য) পুরাণটার কি বাংলা আছে?
আর যদি না থাকে তবে আপনারেই ধরতে হবে সংস্কৃত থাইকা বাংলা করার লাইগা
আমি কথিত ১০০টা বার্হস্পত্য সূত্রের বাংলা করার লাইগা মানুষ খুইজা পাইতেছি না। তিরিশ পয়তিরিশটা সূত্রের অনুবাদ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করে পেরেছি। বাকিগুলান না-হইলে একটা খুঁত থাইকা যায় বলে পেরেশান হইয়া ভাবতেছি আপনেরে ধরমু লোক খুইজা দেওনের জন্যে । আর আপনি কন আমারে !! বড়ই পরিতাপের বিষয় !
তয় মহাভারতের বাংলা তর্জমাসহ আদি সংস্কৃতে ইয়া সাইজের মোট ৪৩ খণ্ডের সবগুলা এখনো ঘরে তুইলা সারতে পারি নাই। প্রক্রিয়া চলমান।
উশনাপুরাণটার বাংলা আছে কিনা খোঁজ লাগাইতে হবে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
খোঁজ লাগান স্যার
ভারতের নৃতত্ত্বে এই ভার্গব বংশটা বড়োই প্রতিপত্তিবান; তার মধ্যে শুক্র রীতিমতো এক বিশাল বিষয়
উশনাপুরাণটা পাইলাম না, তবে ঊনবিংশতি সংহিতা পাইলাম যা অত্রি, বিষ্ণু, হারিত, যাজ্ঞবল্ক্য, উশন, অঙ্গির, যম, আপস্তম্ব, সম্বর্ত্ত, কাত্যায়ন, বৃহস্পতি, পরাশর, ব্যাস, শঙ্খ লেখসে, চলবে?
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
উশন পুরাণ না; পাতিপুরাণ বা উপপুরাণ। তোমারটা একটু দেখা দরকার
এইখানে দেখেন সব আপলোড কইরা রাখসে হে হে হে (হাসলাম ক্যান সাইট দেখলে বুঝবেন) http://www.oneallah.org/bengali/freedownload.php?page=12
১২ পৃষ্ঠা থিকা সামনের দিকে আগাইতে থাকেন
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
হ। হাসার কারণ বুঝছি। এইরকম আরো দুয়েকটা আল্লাদারি ওয়েবসাইট আছে যারা বিধর্মী গ্রন্থ আপলোড কইরা কইয়া দেয়- ওইগুলা খ্রাপ.... আমি আরো দুয়েকটা বই পাইছি এইরকম সাইট থাইকা
ভুল কইসি 'লিখিত' আরেকজনের নাম মনে হইতাসে, ডজ খাইসি। আসল কথাটা হইলো - অত্রি, বিষ্ণু, হারিত, যাজ্ঞবল্ক্য, উশন, অঙ্গির, যম, আপস্তম্ব, সম্বর্ত্ত, কাত্যায়ন, বৃহস্পতি, পরাশর, ব্যাস, শঙ্খ , লিখিত, দক্ষ, গৌতম শাতাতপ ও বশিষ্ঠ সংহিতা। হ উনিশটা সংহিতা, ঠিকই আছে।
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
দ্রৌপদীর জন্যে অপেক্ষা কর্তেছি।
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
নাহ। নীল ট্যাবলেট আসলেই জরুরী ছিলো!!
নতুন মন্তব্য করুন