মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৯ [কর্ণ ৪]

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: রবি, ১১/০১/২০১৫ - ১২:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অবশেষে কর্ণ আর অর্জুন মুখামুখি...

সতেরা নম্বর দিন শেষ বিকালে বিনা ঘোষণাতেই দুইপক্ষের সকল অস্ত্র থাইমা যায়। কেউ কাউরে মারে না; সকলে দর্শকই হইয়া আইসা খাড়ায় দুই যোদ্ধার লড়াই দেখতে...

দ্রোণ মরার পর ষোলো নম্বর দিন থাইকা কর্ণ কুরু সেনাপতি। এর আগের দুই সেনাপতি হইছিল কর্ণের প্রস্তাবে আর কর্ণের নাম প্রস্তাব করে অশ্বত্থামা। দুর্যোধন কয়- আইজ আমি আমার মূল সেনাপতিরে পাইলাম সূতপুত্র; তুমি সামনে থাকলে অর্জন কৃষ্ণ কেউই সাহস করব না আগাইতে...

ষোলো নম্বর দিন পাণ্ডবগো সকল চেষ্টা কর্ণরে ঘিরা রচিত হইলেও অর্জুন সামনে আসে নাই তার। অর্জুন দূরে দূরে খুচরা সেনাসৈনিক মারছে আর কৌরবগো পিটাইছে সাত্যকি-ভীম...

গুরুমরার দুঃখে ষোলো নম্বর দিনও অর্জুন উদাসীন কিন্তু আগের দিনের মতো সেদিনও গুরুপুত্র তিরাইতে ছাড়ে না তারে। অশ্বত্থামা তিরাইয়া কৃষ্ণ অর্জুন দুইজনরেই রক্তাক্ত কইরা ফালানোর পর কৃষ্ণের খোঁচায় অর্জুন জাইগা অশ্বত্থামারে ভাগায়। তারপর কৃষ্ণ তারে টাইনা নিয়া গেলে হাতিবাহিনীর নেতা মগধরাজা দণ্ডধররে ফালাইয়া আইসা আবার সংশপ্তকগো লগে তিরাতিরি করে...

অশ্বত্থামা মারে পান্ডরাজরে। নকুল গিয়া খাড়ায় কর্ণের সামনে- আইজ তরে নরকে পাঠামু আমি...
কর্ণ কয়- আগে তুমি কী কী যুদ্ধ কৌশল জানো তা আমারে দেখাও...

কর্ণ নকুলের রথ আর ঘোড়া শুয়াইয়া ফালাইলে নকুল একটা মুগুর নিয়া আগায়। সেইটাও কর্ণের আঘাতে পইড়া গেলে নকুল দেয় ভাগল। কর্ণ দৌড়াইয়া গিয়া ধনুকের ছিলায় নকুলের গলা আটকাইয়া থামায়- পলাও কেন বাহাদুর? আগে যা কইছিলা তা আরেকবার কও তো শুনি?

নকুল কথা কয় না। কর্ণ কয়- যাও। নিজের থাইকা বড়ো কারো লগে যুদ্ধ না করাই ভালো...

কর্ণ তারে ছাইড়া দিছে এইটা নকুল বিশ্বাস করতে পারে না। সে বেকুবের মতো গিয়া যুধিষ্ঠিরের রথে উঠে- ভাইজান। বন্দী করার পরেও কর্ণ আমারে ছাইড়া দিছে...
যুধিষ্ঠির দীর্ঘশ্বাস ছাইড়া কয়- কার মনে কী আছে কে জানে ভাই। তবে আমরা কিন্তু পাইলে তারে ছাইড়া দিমু না...

ষোলো নম্বর দিনে কর্ণের হাতে পাঞ্চাল; অর্জুনের হাতে ত্রিগর্ত সংশপ্তক; ভীমের হাতে কুরুসেনা ছত্রখান হয়। যুধিষ্ঠিরের মাইর খাইয়া দুর্যোধন অজ্ঞান আর সত্যসেনের শাবলের আঘাতে কৃষ্ণের বাম হাত বিদ্ধ হইয়া সে রথ থাইকা পইড়া গেলেও দিনের শেষে দেখা যায় লাভের হিসাব পাণ্ডবগো দিকেই ভারী...

সতেরো নম্বর দিন কর্ণের শুরু হয় অর্জুনের হাতে মরা কিংবা অর্জুন মারার প্রতিজ্ঞা আর শল্যরে নিজের সারথি কইরা...

গাড়োয়ানের পোলার রথের গাড়োয়ানি করতে রাজা শল্য সহজে রাজি হয় নাই। দুর্যোধন বহুত তেলানির পর; কৃষ্ণের লগে তুলনা করার পর সে রাজি হয় একটা শর্ত দিয়া- একটা শর্তে আমি ছোটলোকের পোলার সারথি হমু; আর তা হইল তারে যা ইচ্ছা গালাগালি করার অধিকার থাকব আমার...

সকলে শর্ত মাইনা নিলে শল্য কয়- দুর্যোধন। কর্ণ যদি অর্জুনরে মাইরাও ফালায় তবু মনে রাইখ তুমি; কৃষ্ণ কিন্তু তোমাগোরে শুয়াইয়া ফালাইব। আইজ পর্যন্ত কৃষ্ণের বিপক্ষে কাউরে জিততে শুনি নাই আমি...
দুর্যোধন কয়- আরে রাখেন। আপনে আছেন না? কৃষ্ণ কি কোনোদিন আপনের সামনে খাড়াইছে?

শল্য ফুইলা উইঠা নিজের সম্পর্কে বহুত কথা কর্ণরে শুনায়- হ। আমি হইলাম গিয়া ইন্দ্রের সারথি হইবার যোগ্য। তোমার সাত জন্মের কপাল যে আমি তোমার সারথি হইছি। যাউক গা। চিন্তা কইরো না; আমি তোমার রথ চালাইলে তোমার ডরের কিছু নাই...
কর্ণ কয়- আপনে খালি রথটা ঠিকমতো চালাইয়েন। যা করা লাগে আমিই করব...
শল্য কয়- তুমি দেখি আমারে অবহেলা করার লগে লগে পাণ্ডবগোও অবহেলা শুরু কইরা দিলা। তুমি কি জানো যে অর্জুনের গাণ্ডিবের আওয়াজ শুনলে তোমার গুমুত বাইরাইয়া যাইব ডরে?
কর্ণ কয়- চলেন যাই...। পাণ্ডবগো দিকেই নিয়া চলেন...

সূতপিতা অধিরথের নিজের হাতে তৈয়ারি কর্ণের রথের চাকায় ঘরঘর শব্দ হয় না। চার ঘোড়ায় টানা এই হালকা রথ প্রায় নিঃশব্দে চলে। শল্য রথ চালায় আর কর্ণরে খোঁচায়- আমার কিন্তু সত্যি সত্যি হাসি পায় গাড়োয়ানের পুত; তুমি যাইতাছ অর্জুনরে মারতে। কই পুরুষশ্রেষ্ঠ অর্জুন আর কই নরাধম তুমি। এরেই কয় তালের গোটায় আর বালের গোটায় তুলনা...

শল্য ঘ্যান ঘ্যান কইরা অর্জুন বন্দনা করে আর কর্ণরে খোঁচায়- আইজ তোমার বাচার একমাত্র পথ হইল যুদ্ধ ছাইড়া ভাগল দেওয়া। না হইলে বেঘোরে মরণ নিশ্চিত তোমার...

পাণ্ডবগো সামনে আইসা কর্ণ দেখে অর্জুন কোথাও নাই। সে চিল্লায়- অর্জুন কই? যে আইজ অর্জুনরে দেখাইয়া দিতে পারব; তারে আমি যা চায় তাই পুরস্কার দিমু...
শল্য কয়- অর্জুনরে খুঁজতে হইব না আর পুরস্কারের লাইগা তোমার টেকাও খর্চাইতে হইব না গাড়োয়ানের পুত। যখন তোমার মরণ ঘনাইয়া আসব তখন অর্জুন আপনাতেই তোমার সামনে আইসা খাড়াইব। অপেক্ষা করো...
কর্ণ কয়- আপনের মতো মিত্র যার আছে তার আর শত্রুতে কী কাম? আমার তো মনে হয় অর্জুনের তীর খাইয়া মরার আগে আপনের কথার বিষেই মইরা যামু আমি। আপনে আমার সারথি হইছেন নাকি আমার রথে উঠছেন আমারে ডর দেখাইতে?
শল্য কয়- ডর দেখানোর আবার কী আছে? তুমি হইলা গিয়া একটা পাতিশিয়াল আর অর্জুন একটা সিংহ। সিংহের লগে শিয়ালের যুদ্ধে কী হইতে পারে তা কইলে কি ডর দেখানো হয়?
কর্ণ কয়- কথা দিয়া শূল বিদ্ধ করেন বইলাই মনে হয় আপনের নাম হইছে শল্য। অন্য কোনো গুণের কথা তো আপনের নিজের মুখ ছাড়া কারো মুখে শুনে নাই। আর আপনে যে কৃষ্ণ আর অর্জুনরে নিয়া অত প্যান প্যান করেন; আপনে জাইনা রাখেন যে আমি কৃষ্ণ আর অর্জুনের ক্ষমতা সম্পর্কে যতটা জানি; তার থাইকা বেশি কেউ জানে না। আপনি তো কানাকড়িও জানার কথা না। তারপরেও আমি তাগোর সামনে যাইতাছি; এর মানে অবশ্য আপনের বোঝার কথা না যে আমার আত্মবিশ্বাস আর ক্ষমতা কতটুকু। ...আমার দুর্ভাগ্য; আমার বিপরীতে অর্জুনের রথ চালায় তার বন্ধু আর মামাতো ভাই আর আমার রথ চালায় এক বিষাক্ত বাচাল...

শল্য খেক খেক কইরা উঠলে কর্ণও খ্যাপে- আরে তোমাগো ছাতু খাওয়া মদ্রদেশের মাইনসের স্বভাবই তো এই; মাছে মাংসে মদে যারা একলগে মাখাইয়া খায় তাগো কাছ থিকা কথার চেয়ে বেশি আর কীই বা আশা করা যায়? এর লাইগা সবাই কয়- মদ্রদেশের লোকের লগে শত্রুতা মিত্রতা দুইটাই জঘন্য। সাপুড়েরা বিষ ঝাড়ার সময় মিয়া তোমাগো নাম কইরা সাপের বিষ নামায়। তোমরা এতই বিষাক্ত যে তোমাগো নাম শুনলে সাপের বিষও নাইমা যায়। তোমাগো দেশের মাইয়ারা মদ খাইয়া ন্যাংটা হইয়া নাচে; উট আর গাধার মতো খাড়াইয়া ঠ্যাং চেগাইয়া পেশশাব করে আর মদের পয়সার লাইগা পোলা কিংবা স্বামীরেও বেইচা দেয়। সেই দেশের মানুষ হইয়া বড়াই করো মিয়া? হালা পাণ্ডবের দালাল। তুমি খালি প্রকাশ্যে দুর্যোধনের পক্ষে আছ আর আমারও মাইনসের ক্ষমা করার অভ্যাস আছে তাই তোমার জানটা আইজ আমার হাত থিকা বাইচা গেলো....

শল্য থামে না। কর্ণরে হাঁসের পালক পরা কাউয়া কইয়া গালাগাল করে। যুদ্ধে পঙ্গু লুলাটুন্ডা অক্ষম কয়। কর্ণ আবার নিজেরে সামলায়- মদ্ররাজ মনে রাইখেন। ভয় পাওয়ার লাইগা কর্ণ জন্মায় নাই। শল্য ছাড়াই আমি শত্র“ জয় করতে পারি...
শল্য কয়- সেইটা আমিও পারি। হাজারটা কর্ণ যেইসব যুদ্ধ জিততে পারে না; সেইসব যুদ্ধ আমি একলাই জিততে পারি...

এই কথাটা কর্ণের লাইগা হজম করা কঠিন। সে আবার ক্ষেইপা উঠে। শেষ পর্যন্ত দুর্যোধনরে আইসা থামাইতে হয় কর্ণ-শল্যের কথা চালাচাল। থামার পর কর্ণ কয়- যথেষ্ট হইছে এইবার রথ চালান...

শল্য রথ চালায় কিন্তু একবার দূরে অর্জুনরে দেইখা আবার হই হই কইরা শুরু করে অর্জুন বন্দনা- এইবার আসতাছে তোমার যম। এইবার আসতাছে কৃষ্ণ আর অর্জুন একলগে। এইবার বুঝবা ঠেলা...

কিন্তু দিক বদলাইয়া অর্জুনের রথ সরাইয়া নিয়া যায় কৃষ্ণ আর কর্ণের সামনে আইসা খাড়ায় পাঞ্চাল সেনা। কর্ণ তাগো খেদাইয়া দেখে সামনে যুধিষ্ঠির; একপাশে শিখণ্ডী অন্য পাশে সাত্যকি। কর্ণ শিখণ্ডী আর সাত্যকিরে ভাগাইয়া সামনে আগাইলে পাণ্ডব আর পাঞ্চাল বাহিনীর ভিতর লুকাইতে লুকাইতে যুধিষ্ঠির কয়- সূতপুত্র। তুমি সর্বদাই দুর্যোধনের লগে মিলা আমাগো লগে শত্রুতা করো; অর্জুনরে মারতে চাও। এইটা কিন্তু ঠিক না। আইজ দেখবা তুমি মজা...

যুধিষ্ঠির বাহিনী আক্রমণ করে কর্ণরে। কর্ণের বাম পাশ আহত হইলেও কর্ণ পৌছাইয়া যায় যুধিষ্ঠিরের কাছে। যুধিষ্ঠিরের রথ আর বর্ম যায় কর্ণের ভল্লের আঘাতে। আহত যুধিষ্ঠির অন্য রথে উইঠা পালায়। কর্ণ দৌড়াইয়া গিয়া তারে ধরে। কর্ণ তার কান্ধে হাত রাখে- তুমি না রাজা? তয় জান লইয়া ভাগো ক্যান?

বন্দী যুধিষ্ঠির থর থর কাঁপে। কথা কয় না। কর্ণ কয়- নিজেরে না তুমি কুন্তীর বড়ো পোলা বইলা পরিচয় দেও? এইরকম কাপুরুষ বড়ো পোলার কাছে কুন্তী অতকিছু আশা করেন ভাবতেও করুণা হয়। যাও মায়ের কাছে যাও...

কর্ণ ছাইড়া দিলে যুধিষ্ঠির নড়তে পারে না। ডরে কাঁটা দিয়া উঠে তার শরীর। তবে কি যে সত্য ঘটোৎকচ জানতো সেইটা কর্ণও জানে?

মাথা নীচা কইরা যুধিষ্ঠির নিজের বাহিনীতে গিয়া হম্বিতম্বি করে আর বেকুবের মতো হা কইরা চাইয়া থাকে শল্য- হালায় যুধিষ্ঠিররে মারল না কেন? ওরে মারলেই তো যুদ্ধটা এখন শেষ হইয়া যাইত? কে জানে এই কর্ণটার ভিতরে কী আছে...

অন্যদিকে ভীম পিটাইতেছিল কুরু বাহিনী। শল্য আবার নিজের বেকুবতা কাটাইয়া পাণ্ডব বন্দনা শুরু করে। এইবার কর্ণরে কয়- দেখো একলা ভীমই তো তোমার সব সৈন্য সাফ কইরা ফালইতাছে। তোমারে পাইলেও সে ভর্তা বানাইব আইজ...
কর্ণ কয়- ভীমের কাছেই চলেন...

ভীম চালাইতেছিল তীর। কয়েকটা তীর কর্ণের শরীরেও বিদ্ধ কইরা ফালাইলে কর্ণ সইরা আইসা অর্জুনরে খোঁজে। কিন্তু অর্জুনরে ভিড় বাট্টায় সরাইয়া রাখে কৃষ্ণ। শল্য রথ চালায় আর খিস্তি খেউড় করে। কর্ণ কিছুটা হজম করে আবার কিছুটা ফিরাইয়া দেয়...

যুধিষ্ঠিররে ঘায়েল কইরা অশ্বত্থামা গিয়া পৌঁছায় অর্জুনের কাছে। অশ্বত্থামারে ঘায়েল কইরা অর্জুন আবার মিলাইয়া যায় জনতার ভিড়ে। কর্ণ অর্জুনরে খোজার কৌশল বদলায়। সে গিয়া আক্রমণ শানায় যুধিষ্ঠিরের দিকে। যুধিষ্ঠির আক্রান্ত হইলে কৃষ্ণ নিশ্চয় অর্জুনরে নিয়া পৌছাইব রাজারে বাচাইতে...

যুধিষ্ঠির আক্রান্ত হয় কর্ণের কাছে। ভীম আসে। আসে নকুল সহদেব। আসে ধৃষ্টদ্যুুম্ন। কর্ণের বর্শার আঘাতে যুধিষ্ঠিরের বুক বিদ্ধ হয়; রাজমুকুট মাটিতে গড়ায়; কিন্তু অর্জুন আসে না রাজারে বাচাইতে কর্ণের হাত থিকা...

যুধিষ্ঠিরের বেকায়দা দেইখা শল্যমামা ভয় পাইয়া যায়। যেভাবে কর্ণ দাবড়াইতাছে একটু পরে তো যুধিষ্ঠিররে মাইরা যুদ্ধই শেষ কইরা দিবো। সে কয়- আরে বাদ দেও। আধা ব্রাহ্মণ যুধারে মাইরা তোমার কী লাভ? ওরে তো এর আগে তুমি ছাইড়াই দিছিলা। চলো ভীমের কাছে যাই; অন্তত একটু হইলেও লড়াইয়ের মজা পাইবা তুমি...

পাণ্ডব মামা শল্য কর্ণরে নিয়া যায় ভীমের কাছে আর আহত যুধিষ্ঠির আহত নকুলের লগে আহত সহদেবের রথে উইঠা পালায়...

ক্ষত বিক্ষত যুধিষ্ঠির তাবুতে গিয়া শরীর থাইকা তীর বর্শার ফালি খোলে। আর দূর থাইকা ভীমের সাথে ভার্গবাস্ত্র; মানে কুড়াল নিয়া যুদ্ধ করা কর্ণরে দেখাইয়া অর্জুন কৃষ্ণরে কয়- কর্ণের ভার্গবাস্ত্র চালানোর কায়দাটা দেখো; এইগুলো না যাবে সামলানো; না যাবে তার লগে যুদ্ধের সময় পলানো; কী যে সংকট আমার...
কৃষ্ণ কয়- সময় হইলে দেখা যাবে। এখন শিবিরে গিয়া রাজা যুধিষ্ঠিররে একবার দেইখা আসি। তিনি কর্ণের লগে যুদ্ধে আহত হইছেন। একটু রেস্টও কইরা আসা যাবে...

যাইতে যাইতে পথে অর্জুন ভীমরে যুধিষ্ঠিরের সংবাদ জিগায়। ভীম কয়- কর্ণের হাতে মারাত্মক মাইর খাইলেও মনে হয় বাইচা যাবে...
অর্জুন কয় আপনে গিয়া তার সংবাদ নিয়া আসেন। আমি থাকি...
ভীম কয়- তুই যাইতাছস যা। আমি মাঠ ছাইড়া গেলে পাব্লিকে আমারে কইব ডরাইয়া ভাগছি...
কৃষ্ণ কয়- হ। ভাই ভীম বাইচা থাকতে কেউ তারে ডরালুক বলার সুযোগ দেওয়া ঠিক না। তার থিকা চলো আমরা গিয়া দেইখা আসি...

পাঁচ পাণ্ডবের মাঝে মাঠে লড়াই করে ভীম আর চাইর পাণ্ডব গিয়া আশ্রয় নেয় শিবিরে...

কৃষ্ণ আর অর্জুনরে একলগে শিবিরে দেইখা যুধিষ্ঠির খুশিতে লাফাইয়া উঠে- কর্ণরে নিশ্চয়ই মাইরা আসছ তোমরা...
খুশিতে যুধিষ্ঠির লাফাইতেই থাকে কাউরে কিছু বলতে না দিয়া- যে গাড়োয়ানের পোলার ডরে আমার পুরা জগৎ অতদিন কর্ণময় আছিল। আরেকটু হইলে আইজ যে আমারে মাইরাই ফালাইত...। সাবাস অর্জুন সাবাস...

যুধিষ্ঠির নিশ্চিত যে কর্ণরে না মাইরা কৃষ্ণ আর অর্জুন শিবিরে ফিরে নাই যুদ্ধের সময়। নিজের উচ্ছ্বাসরে আরেকটু চাগাইয়া নিতে এইবার সে গিয়া ধরে অর্জুনরে- ক তো ভাই; কেমনে মারলি তুই পাপিষ্ঠ কর্ণরে। আমারে একটু বিস্তারিত বর্ণনা শোনা তো ভাই। যার ভয়ে আমি তেরো বচ্ছর শান্তিতে ঘুমাইতে পারি নাই; যার ভরসায় ধৃতরাষ্ট্র আর দুর্যোধন আমাগো পাঁচটা গ্রামের অনুরোধও ফিরাইয়া দিছিল সেই কর্ণরে কেমনে তুই মারলি আমারে একটু ক...

কৃষ্ণ আর অর্জুন মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। যুধিষ্ঠির অর্জুনরে ঝাঁকায় কর্ণ হত্যার বিস্তারিত জানতে। অর্জুন তারে ধুনফুন বোঝায়- ভাইজান আমি আইজ বহুত মানুষ মারছি। অশ্বত্থামারে মাইরা ফালাফালা কইরা দিছি...
যুধিষ্ঠির কয়- কর্ণরে কেমনে মারলি সেইটা ক...
অর্জুন কয়- কর্ণের অস্ত্র চালনা যে কী জিনিস আইজ নিজের চোক্ষে তা আমি দেখছি ভাইজান...
যুধিষ্ঠির কয়- সেইটা আমি নিজেও দেখছি কিন্তু তুই কেমনে কী করলি সেইটা ক...
অর্জুন কয়- শুনছি আপনি কর্ণের আক্রমণে আহত হইছেন...
যুধিষ্ঠির কয়- পিরায় মাইরাই ফালাইছিল আমারে কিন্তু সেইটা কোনো বিষয় না। তুই কেমনে কর্ণরে কাবু করলি সেইটা ক...

অর্জুন আমতা আমতা করে- আমি আসছি আপনেরে দেখতে ভাইজান। ফিরা গিয়া মারব কর্ণরে...

ধপাস কইরা বইসা পড়ে যুধিষ্ঠির- সবাইরে কর্ণের হাতে ছাইড়া জান নিয়া পলাইয়া আসছ তোমরা? অর্জুন তুই মায়ের গর্ভরে কলঙ্কিত করলি আইজ। অথচ তোর ভরসাতেই আমি কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস করছিলাম। ...থুক দেই তোর গাণ্ডিবের বড়াইরে। তুই যদি কর্ণরে এতই ডরাস তয় তোর গাণ্ডিব অন্য কাউরে দেস না ক্যান? ছি ছি ছি। জন্মের আগে ক্যান কুন্তীর গর্ভেই মইরা গেলি না তুই?

এই ধিক্কার সহ্য হয় না অর্জুনরে। তার হাতে উইঠা আসে তলোয়ার। কৃষ্ণ থাবা দিয়া ধরে- করোটা কী?
অর্জুন তড়পায়- যে আমার গাণ্ডিব নিয়া কথা কয় তার ধড়ের উপরে মাথা থাকনের কোনো অধিকার নাই...

- হ মার। কৃষ্ণ ওরে ছাড়ো। ও আমার শরীর থাইকা মাথাটা নামাইয়া দেউক। সেইটাই বরং কর্ণরে জীবিত রাইখা বাইচা থাকার চেয়ে আমার লাইগা সম্মানজনক আর অর্জুনের লাইগাও ভালো। কারণ ওর পক্ষে যেহেতু অস্ত্রধারী কর্ণরে মারা সম্ভব না সেইহেতু আমার মতো নিরস্ত্ররে মাইরাই ওরে গর্ব করতে দেও। মার। মাথাটা কাইট্টা ফালা আমার। কাপুরুষ অর্জুনের ভাই হইয়া বাইচা থাকার চেয়ে ছোটভাইয়ের তলোয়ারে মইরা যাওয়া অনেক সম্মানের...

কৃষ্ণ অনুমানও করতে পারে নাই বিষয়টা অতদূর যাবে। অর্জুনরে সে সরাইয়া নিয়া আসছে যুদ্ধের মাঠ থিকা। সেইটাই অর্জুনরে লাইগা যথেষ্ট অপমানের ছিল। তার উপর যুধিষ্ঠিরের এই খোঁচা। কিন্তু অর্জুন অতটা ক্ষেইপা উঠব ভাবতেও পারে নাই সে। অর্জুনরে সে ঝাড়ি লাগায়। যুধিষ্ঠিররে তেলায়। কিন্তু কেউ থামে না। অর্জুন কয়- তুমি যে কথা কইলা সেইটা যদি ভীম আমারে কইতেন তবে আমি তা মাইনা নিতাম। কারণ ভীম নিজে যুদ্ধের মাঠে আছে। কিন্তু কর্ণের ডরে পলাইয়া আইসা আমারে এমন কথা কেমনে কও তুমি?
যুধিষ্ঠির কয়- যা করার তা তো একলা ভীমই করে। কিন্তু এই জীবনে তুমি আর তোমার গাণ্ডিব কোন কামটায় লাগছে আমার?

কৃষ্ণ কাউরে থামাইতে পারে না। অর্জুন জীবনেও যুধিষ্ঠিরের মুখে মুখে তর্ক করে নাই; খারাপ কথা কওয়া তো দূরের কথা। কিন্তু আইজ অর্জুনের কথা বাধ ভাইঙা পড়ে- শত শত রথী মহারথীরে হারাইয়া আমি দ্রৌপদীরে জয় করছিলাম; তুমি আমার সেই বৌরে নিয়া শুয়াইছ নিজের বিছানায়। তোমারে সম্রাট বানাইবার লাইগা ভীম আর আমি আশপাশের সব রাজারে তোমার বশীভূত করছি। আমার কারণেই তুমি রাজসূয় যজ্ঞ কইরা সম্রাট বনছিলা। আমি নিজে কৃষ্ণরে নিয়া যে ইন্দ্রপ্রস্থ রাজ্য বানাইছিলাম তোমার জুয়ার নেশায় তা হারাইয়া বনবাসে যাইতে হইছে। তোমারে আবারও রাজা বানাইবার লাইগা যুদ্ধে আমার দুই দুইটা পোলা মরছে। আর তুমি কও আমি কোনো কামে লাগি নাই তোমার?

কৃষ্ণ অর্জুনরে ঠেইলা নিয়া যায় বাইরে- চুপ কইরা বইসা থাকো এইখানে। সারা জীবন ধইরা যখন যুধিষ্ঠিররে কিছু কও নাই তখন এখন তা কওয়া ইত্রামি। বইসা ভাবো কিছুক্ষণ। কর্ণ জীবিত শুইনা যুধিষ্ঠিরের রাগ হইতেই পারে; কারণ যুদ্ধের আগে কর্ণ ছাড়া অন্যকারো কথা কেউ ভাবে নাই সে। বইসা ভাবো...

অর্জুনরে বাইরে বসাইয়া কৃষ্ণ আইসা যুধিষ্ঠিরের সামনে খাড়ায়- অর্জুনরে মাঠ থাইকা আমি সরাইয়া নিয়া আসছি যাতে সে একটু বিশ্রাম নিতে পারে। কর্ণ টানা কয়েক দিন ধইরা যুদ্ধ করতাছে; বিকাল পর্যন্ত যুদ্ধ করলে সে কাহিল হইব; তখন নতুন তেজে অর্জুন তার সামনে খাড়াইলে তারে কাবু করা যাবে। কর্ণ সহজ যোদ্ধা না সেইটা আপনেও জানেন। খালি খালি তার সামনে যাওয়া আর আত্মহত্যা করা এক সমান। তাই আমি অর্জুনরে তার সামনে নিতে চাই না যতক্ষণ পর্যন্ত না কর্ণরে পরাজিত করার সময় আসে। আর আপনার ভুইলা যাওয়া উচিত না যে আমি অর্জুনরে পাইলা পুইষা রাখতাছি খালি কর্ণের লাইগা। এমন উল্টাপাল্টা কথা কওয়া ঠিক হয় নাই আপনার। কারণ আপনার এই সমস্ত কথায় যদি অর্জুন আউলা হইয়া উঠে তবে কর্ণের সামনে গেলে হিতে বিপরীতও হইতে পারে...

যুধিষ্ঠিরের রাগ কমে নাই। সে কয়- তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু সে আমারে কইলোটা কি তুমি শুনলা?
কৃষ্ণ কয়- শুনছি কিন্তু কানে তুলি নাই। ধইরা নেন তা আপনেও শোনেন নাই। অর্জুন আপনের কাছে মাপ চাইব। আপনি তারে খুশি কইরা দিবেন এইটাই আমার শেষ কথা। তারপর অর্জুনরে নিয়া আমি যাব কর্ণরে হত্যা করতে যাতে আপনের রাজ্য ফিরা আসে। আমি আপনার কাছে রাজা যুধিষ্ঠিরের আচরণ চাই; যে যুদ্ধের সময় তার দরকারি সৈনিকের মাথা আউলা করে না। আমি অর্জুনরে নিয়া আসতাছি....

কৃষ্ণ বাইরাইয়া যায়। অর্জুন ঝিমায়। কৃষ্ণ জিগায়- কিছু ভাবলা?
- ভাবছি। তলোয়ার যখন খুলছি তখন একটা না একটা মাথা তো নামাইতেই হবে। ভাইজানেরটা যেহেতু কাটতে পারব না সেহেতু নিজেরটা কাটারই সিদ্ধান্ত নিছি আমি...
- তাইলে তো যুধিষ্ঠিরের কথাই ঠিক। কর্ণের ডরে ভাইগা আইসা শরমে অর্জুনের আত্মহত্যা...

অর্জুন ক্ষেইপা উঠে কৃষ্ণের উপর- তোমার লাইগাই আইজ আমার এত অপমান। আমি তোমারে কইছিলাম মাঠ ছাইড়া গেলে পাবলিকে ভাবব আমি ডরাইছি। তুমিই আমারে জোর কইরা নিয়া আসছ এইখানে। আইজ সারাদিন ধইরা কর্ণ আমারে বিছরায় আর তুমি আমারে নিয়া পলাও। তার থাইকা তো ভালো আছিল কর্ণের লগে যুদ্ধ কইরা মরা...
- তাইলে এখন কর্ণের সামনে যাইতে ডরাইতাছ ক্যান?

কৃষ্ণের মুখে এই কথা হজম করা অর্জুনরে লাইগা কঠিন। অর্জুন তলোয়ার নিয়া লাফ দিয়া খাড়ায় কৃষ্ণের সামনে। কৃষ্ণ সইরা গিয়া হাসে- কর্ণরে জ্যান্তা রাইখা একবার যুধিষ্ঠিরের গলায় তলোয়ার ধরা; একবার নিজের গলায় তলোয়ার ধরা আর আরেকবার আমার গলায় তলোয়ার ধরা; এইগুলার মানে বোঝো অর্জুন? উল্টাপাল্টা ছাইড়া চলো মাঠে যাই; কর্ণের সামনে...

অর্জুন রওয়ানা দেয় কিন্তু কৃষ্ণ থামায়- আগে ভিতরে চলো। বড়োভাইর কাছে তোমার মাপ চাওয়া লাগে...

অর্জুন কথা তুলতে চায়। কৃষ্ণ দাবড়ানি দেয়- কোনো কথা শুনতে চাই না। কর্ণের ডরে যুধিষ্ঠির যা ইচ্ছা বলতে পারেন; কিন্তু তোমারও তার মতো আউলা হওয়া সাজে না। চলো...

অর্জুন আইসা পায়ে পড়ে যুধিষ্ঠিরের- এর পরে যদি আপনার সামনে আইসা খাড়াই তবে জানবেন কর্ণ মৃত আর যদি আমারে দেখতে না পান তবে জানবেন কর্ণের লগে যুদ্ধ কইরা অর্জুন মারা গেছে কিন্তু পলাইয়া আসে নাই...

যুধিষ্ঠির তারে জড়াইয়া ধরে- মাথাটা আউলা হইয়া গেছে রে ভাই। তরে বহুত কিছু ্কইছি। আমারে মাপ কইরা দিস...

অর্জুনরে নিয়া কৃষ্ণ যাইতে যাইতে কয়- অর্জুন তুমি বহুত বড়ো যোদ্ধা কিন্তু ভুলেও কর্ণরে অবহেলা কইরো না। মনে রাইখো; কর্ণের উদ্দেশ্য যুদ্ধজয় না; বীরত্ব দেখানো। কিন্তু তোমার উদ্দেশ্য যুদ্ধ জয়...

সেই ভোর থাইকা কর্ণ অর্জুনরে খুইজা বেড়াইছে আর পথে পথে যুদ্ধ করছে অন্যদের লগে। এক সময় মাঠে আর কোথাও অর্জুনের পাত্তা পায় নাই। এখন যখন কর্ণ অন্যদের লগে যুদ্ধে ব্যস্ত তখন কৃষ্ণের রথ চোখে পড়ে শল্যের। সে কর্ণরে কয়- সারাদিন ধইরা যারে খুজতাছিলা সে এখন তোমার দিকেই আসতাছে কর্ণ...

কিন্তু অর্জুন আসে না। অর্জুনের রথ আসতে আসতে আবার ঘুইরা ভীমের কাছে গিয়া যুধিষ্ঠিরের কুশল সংবাদ জানায়; ভীমের যুদ্ধে হাত লাগায় আর কর্ণের দিকে আগাইয়া আসে পাঞ্চাল বাহিনী...

আবারো অর্জুনের রথ আগাইতে থাকে কর্ণের দিকে। তার পিছনে ভীম। তীর মারতে মারতে ভীমরে ঠেকাইতে আসে দুঃশাসন। তিরাতিরিতে দুইজনই আহত হয়। দুইজনই তীর ছাইড়া বর্শা আর গদার মারামারিতে যায়। মাথায় ভীমের গদার বাড়ি খাইয়া মাটিতে গড়ায় দুঃশাসন...

দুঃশাসনের উপর ভীমের প্রচুর রাগ। এই বেটাই চুলের মুঠি ধইরা দ্রৌপদীরে টাইনা আনছিল রাজসভায়। দুঃশাসন পইড়া আছে চিৎ হইয়া। রথ থাইকা একটা তলোয়ার নিয়া নামে ভীম। পা দিয়া দুঃশাসনের গলা চাইপা ধরে আর তলোয়ার খান চালাইয়া দেয় দুঃশাসনের বুকে। রক্ত যখন ফিনকি দিয়া বাইরাইয়া আসতাছে তখন হাতের অঞ্জলি নিয়া ভীম পান করে দুঃশাসনের রক্ত। ভীম থামে না। তলোয়ারের কোপে দুঃশাসনের মাথা আলগা কইরা তুইলা ধরে মুখের উপর; তারপর মুন্ডু থাইকা গড়াইয়া নামা রক্ত খাইতে থাকে গলগল করে...

বেকুবের মতো সকলে তাকাইয়া থাকে। এমনকি কৃষ্ণ অর্জুন কর্ণ। অত দিনের যুদ্ধে বহু মানুষ মারা গেছে বহু মানুষের হাতে। ভীমের হাতেও মারা গেছে অসংখ্য মানুষ কিন্তু এমন দৃশ্য কেউ দেখে নাই...

কর্ণের দিকে যাইতে যাইতে অর্জুনের রথ আরেকবার গতি বদলায়। গিয়া হাজির হয় কর্ণপুত্র বসুসেনের সামনে। বসুসেন যুদ্ধ করতাছিল অন্যদের সাথে। কৃষ্ণ অর্জুনরে কয়- এরে ফালাও...

অর্জুনের আকস্মিক তীরে মারা যায় কর্ণপুত্র বসুসেন। পোলার লাশ কোলে হাহাকার করে কর্ণ আর ঠিক তখন তার সামনে গিয়া খাড়ায় কৃষ্ণার্জুনের রথ...

অবশেষে কর্ণ আর অর্জুন মুখামুখি। শল্য একেবারে চুপ; তার মুখে কোনো গালি উঠে না কর্ণের নামে; কোনো প্রশংসাও সে করে না সে অর্জুনের। এমন যুদ্ধে সারথি হওয়া কপালের বিষয়। নিশ্চুপ শল্য তার ম্যাজিক দেখায় ঘোড়ার লাগামে এইবার...

অর্জুন কয়- কৃষ্ণ আইজ হয় কর্ণের বৌয়েরা বিধবা হবে না হয় ফিরা গিয়া তোমার পিসি কুন্তী; বোন সুভদ্রা; সখী দ্রৌপদী আর রাজা যুধিষ্ঠিররে সান্ত্বনা দেবে তুমি...
নিরুত্তাপ কৃষ্ণ কয়- আমি কী করব না করব সেইটা পরে দেখা যাবে। তুমি তোমার কাম করো। অত আবেগি হইও না। মনোযোগ দিয়া কর্ণরে দেখো...

কর্ণ অর্জুন একে অন্যরে চক্কর দেয়। শত্র“মিত্র যুদ্ধ থামাইয়া দুই যোদ্ধার পক্ষে দর্শক হইয়া খাড়ায়। দুই পক্ষই নিশ্চিত এই লড়াইয়েই নির্ধারিত হবে যুদ্ধের পরিণাম। দুই পক্ষই নিজের পক্ষে আশাবাদ রাখে আর বিপক্ষের ক্ষমতায় ডরায়। ডরে কাঁপে পাণ্ডব। ডরে কাপে কৌরব। সকল শত্র“তা আর হিংসা ভুইলা দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা গিয়া দুর্যোধনের হাত ধরে- দোস্ত ক্ষেমা দেও। যথেষ্ট হইছে। আমি অনুরোধ করলে অর্জুন থামব। কৃষ্ণও বিরোধ চায় না। তুমি খালি একবার শান্তির কথা কও; আমি কর্ণরেও থামামু অনুরোধ করে...
দুর্যোধন স্থির- বহু দেরি হইয়া গেছে দোস্ত। ভীম যেভাবে দুঃশাসনরে মারল তাতে শান্তির আর কোনো পথ নাই। কর্ণরে বারণ কইরো না তুমি...

ততক্ষণে কর্ণ আর অর্জুনের অস্ত্র বিনিময় শুরু হইয়া গেছে। কর্ণের ধনুক সাড়ে চাইর হাত দীর্ঘ আর অর্জুনের ধনুক চাইর। কর্ণের তীরে লোহার ফলা ছোট আর অর্জুনের তীরে দীর্ঘ। কর্ণের হালকা তীর যায় বহুদূর আর অর্জুনের ভারী তীর ধ্বংসাত্মক বেশি। কর্ণ আহত আর টানা কয়দিনের যুদ্ধে প্রচুর কাহিল। অর্জুন বিশ্রামে তরতাজা কিন্তু অতি উত্তেজনায় বেসামাল...

কুড়ালি পরশুরামের শিষ্য কর্ণ প্রায় তীরের সমান দূরত্বে নিক্ষেপ করতে পারে বর্শা। অর্জুনের তীর গায়ে বিধে না কর্ণের কিন্তু কর্ণের বেশ কিছু তীর আর বর্শার আঘাত আইসা বিধে অর্জুনের গায়...

অতদিন বিনা বিশ্রামে যুদ্ধ করা ভীমও এখন দর্শক। অর্জুনরে আহত হইতে দেখে ক্ষেইপা উঠে সে- তুমি মাইর খাইতাছ কেন অর্জুন? সামলাইতে না পারলে সইরা খাড়াও। গদা নিয়া আমিই গাড়োয়ানের পোলারে পিটাই...

কৃষ্ণও খাকারি দিয়া উঠে- করতাছ কী তুমি? এখন পর্যন্ত একটাও তীর বিন্ধাইতে পারো নাই। হয় ঠিকঠাক মতো কাম করো না হয় ভাগো। আমিই চক্র নিয়া নামি কর্ণের সামনে...

আইজ কী হইছে অর্জুনের। তার ভরসাতেই পাণ্ডবপক্ষ কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নিছে। আর আইজ যখন তার কর্ণের সামনে যাইবার সময় তখন যুধিষ্ঠির কয় ধনুক ছাড়তে। ভীম কয় সইরা খাড়াইতে। কৃষ্ণ কয় পলাইতে। এত অপমান কই রাখে অর্জুন। অর্জুন চোখ বন্ধ কইরা সব ভুইলা যাইতে চায়। তারপর ধীর ধৈর্যে হাতে তুইলা নেয় দীর্ঘ আর ভারী এক তীর...

শত্রুর নিশানা এড়াইয়া বাতাসের বেগে চক্কর খায় কৃষ্ণ আর শল্যের রথ। কৃষ্ণ রথ চালায় অদ্ভুত। শল্য কম না মোটেও। এই মুহূর্তে শল্য যেন শুধুই কর্ণের সারথি। অথবা কর্ণের কথা ভুইলা সে রথ চালায় কৃষ্ণরে পাল্লা দিয়া। এর মাঝে স্বয়ং রাজা যুধিষ্ঠিরও আইসা খাড়াইছে দর্শক সারির ভিতর...

অর্জুন সুযোগ খোঁজে। অর্জুন তার তীর ছাড়ে কিন্তু কর্ণের ঢালে তা ফিরে যায়। ভীমের চোখে পড়ে ঢাল দিয়া ফিরাইলেও এই আঘাতে কর্ণের ঢাল বিদ্ধ হয়। ভীম চিৎকার কইরা উঠে- একই তীর আবার মারো অর্জুন...
অর্জুন বিনা চিন্তায় আবারো প্রক্ষেপ করে সেরকম আরেকটা তীর। কিন্তু ব্যর্থ। অর্জুনের একটা তীরও আঘাত করতে পারে না কর্ণের দেহে...

অর্জুন পাগলের মতো তীর মারতে থাকে কর্ণের দিকে। তীর ধরা আর তীর ছোঁড়ায় প্রায় কোনো সময় ব্যবধান থাকে না তার। একটা তীর লক্ষে পৌছাইবার আগেই গুণ থিকা বাইর হইয়া যায় আরো দুইটা তীর। আর এই পাগলা তিরানোর ফলে ঠাস কইরা ছিড়া যায় তার গাণ্ডিব ধনুকের ছিলা...

এইবার শুরু হয় কর্ণের তীর বৃষ্টি; ঝাঁকে ঝাঁকে কর্ণের ক্ষুদ্রক বাণে ছেয়ে যায় কৃষ্ণার্জুনের রথ। অতি ক্ষুদ্র তীর; হত্যা করে না কিন্তু ঝাঁজরা করে দেয়। আর মাঝে মাঝে কর্ণ ছোঁড়ে বক্ষ বিদীর্ণকারী তার দীর্ঘ লোহার তীর; নারাচ...

গাণ্ডিবে নতুন ছিলা পরাইতে পরাইতে অর্জুন আহত। কৃষ্ণও জর্জর কর্ণের তীরে...

নতুন ছিলা নিয়া অর্জুনের তীর বৃষ্টিতে কর্ণ কিছুটা আচ্ছন্ন হয়। আহত হয় শল্য। আশপাশের সবাই দূরে সরে যায়। শুধু খাণ্ডব দাহনের সময় অর্জুন আর কৃষ্ণ যে নাগ জাতিরে উচ্ছেদ করছিল পিতৃভূমি থাইকা সেই জাতির নাগপুত্র অশ্বসেন কাছে আইসা কর্ণের হাতে তুইলা দেয় এক দীর্ঘ আর ভারী তীর। প্রায় বর্শা আকারের এই তীরের ফলা চ্যাপটা আর ধারালো। কাছ থিকা কারো উপর মারলে হাড় পর্যন্ত ভাইঙা ফালাইতে পারে; আর গলায় গিয়া আঘাত করলে তার কার্যকারিতা তলোয়ারের কোপের সমান...

কর্ণের হাতে এই তীর দেইখা হাহাকার কইরা উঠে সকলে। শল্য ভয় পাইয়া কয়- এই তীর দিয়া তুমি অর্জুনরে কিছু করতে পারবা না...
কর্ণ কয়- আমি একবার কোনো তীর হাতে নিলে তা আর বদলাই না। তুমি অর্জুনের কাছে যাও...

অর্জুন বোঝে না কর্ণের তীরের মর্ম। সে ছোট তীর দিয়া বৃষ্টি চালায়। আর অর্জুনের তীর বৃষ্টির ফাঁকে খুব কাছ থাইকা কর্ণের সাড়ে চাইর হাত দীর্ঘ ধনুক ফুঁড়ে অর্জুনরে দিকে নিক্ষিপ্ত হয় লোহার ভারী তীর...

তীরটা খেয়াল করে কৃষ্ণ। চাবুকের এক বাড়িতে ঘোড়া দাবড়াইয়া সে নিজের রথেরে নিয়া কাত কইরা ফালায় খাদে আর আরেক হাতের থাবায় অর্জুনরে বসাইয়া দেয় নীচে...

কৃষ্ণের থাবা খাইয়া বেকুব অর্জুন বসতে বসতে আবিষ্কার করে কর্ণের তীরের আঘাতে তার মাথার মুকুট ভাইঙা গিয়া পড়তাছে দূরে। কর্ণ তীরটা মারছিল তার গলা বরাবর। কৃষ্ণ থাবা দিয়া বসাইয়া না দিলে অতক্ষণে কর্ণের তীরে গলাটাই কাটা পড়ত তার...

নাগ অশ্বসেন আবারও আরেকটা তীর নিয়া আসে কর্ণের দিকে। কর্ণ এইবার খেয়াল করে তারে- তুমি তো আমার তীর জোগালি দলের লোক না। তবে তুমি কেন আমারে তীর দেও?
অশ্বসেন কয়- আমি নাগ জাতির লোক; যাদের শত্রু কৃষ্ণ আর অর্জুন। তাই তুমি আমাদের মিত্র...
কর্ণ কয়- কর্ণ কোনোদিন অন্যের শক্তি দিয়া জয়ী হইতে চায় না। জানলে তোমার আগের তীরও আমি হাতে নিতাম না। তুমি যাও...

অশ্বসেন নিজেই অর্জুনের দিকে তীর মারা শুরু করে আর অর্জুন রথ থাইকা নাইমা হত্যা করে অশ্বসেনরে। যুদ্ধের নিয়ম মাইনা কর্ণ খাড়াইয়া অপেক্ষা করে অর্জুনরে রথ ঠিক হইবার আর এই সুযোগে কৃষ্ণ আবার নিজের ত্যাড়া রথ খাড়া করে মাটির উপর...

যুদ্ধ চলতে থাকে। দুইজনই আহত হইতে থাকে। কর্ণের মুকুট যায়। শরীরে তীর খায়। আর এক সুযোগে অর্জুন একটা ভারী তীর বিদ্ধ কইরা ফালায় কর্ণের বুকে। কর্ণ টইলা উঠে। হাত থিকা ধনুক পইড়া যায়। যুদ্ধের নিয়ম মাইনা অর্জুন তীর থামাইয়া দেয়। কৃষ্ণ ধাতানি দিয়া উঠে- থামলা কেন অর্জুন? বেকুবি কইরো না। বুদ্ধিমানরা শত্র“র দুর্বল সময়রে কামে লাগায়। মারো। তীর মারো। না হইলে একটু পরেই কর্ণ মারব তোমারে...

কৃষ্ণের কথায় অর্জুন তীর চালায় ধনুকহীন কর্ণের উপর। কিন্তু কর্ণ সামলাইয়া উঠে। অর্জুন আর কৃষ্ণের উপর আবারো আইসা পড়তে থাকে কর্ণের তীর...

তিরন্দাজরা ঢালের তেমন সুযোগ নিতে পারে না। দুই হাতই ব্যস্ত থাকে তীরে আর ধনুকে। প্রতিপক্ষের তীরের বিপরীতে তিরন্দাজের মূল ভরসা গায়ের বর্ম; লাফ দিয়া তীরের লাইন এড়াইয়া চলা আর রথের উপর থাকলে সারথির ক্ষিপ্রতা। তিরন্দাজরা যখন আহত হয় তখন সারথির ক্ষিপ্রতার উপরই নির্ভর করে তাদের আবার উইঠা দাঁড়ানোর অবসর। সারথিরা রথ চক্কর দেয় আর সেই সুযোগে শরীর থাইকা তীর খুইলা আবার খাড়ায় তিরন্দাজ...

কর্ণ আর অর্জুনরে তিরাতিরি এখন বন্ধ। দুইটা রথ এখন বেশ দূরে দূরে চলে। কর্ণার্জুন দুজনেই আহত। দুজনেই ক্লান্ত। দুজনেরই কারো হিসাবে মিলে নাই। দুজনেরই দূর পাল্লার ক্ষুদ্র তীর যেমন দুজনের বর্মে ব্যর্থ হইছে তেমনি নিকট যুদ্ধে দুজনের ভারী অস্ত্রও ব্যর্থ হইছে সারথির কৌশলে। কর্ণ আহত হওয়ার বেশি সুযোগ যেমন পাইতাছে না অর্জুন তেমনি কম লড়াই কইরা তরতাজা থাকারও কোনো ফলাফল দেখাইতে পারতাছে না সে...

কুরুক্ষেত্রের মাঠে ম্যাজিকের মতো একের নিশানার ফাঁক গইলা চক্কর মারে কৃষ্ণ আর শল্যের রথ। চক্কর মারতে মারতে অর্জুনরে নিয়া কৃষ্ণ পিছাইতে থাকে। কুরুক্ষেত্রের পুরা মাঠ কৃষ্ণের নখদর্পণে। চক্কর দিতে দিতে তীরের নিশানার বাইরে থাইকা কৃষ্ণ দূরে সইরা যায়। কৃষ্ণ দূরে যায় অর্জুনরে নিয়া আর শল্য আগায় কর্ণরে নিয়া। যাইতে যাইতে কৃষ্ণ গিয়া খাড়ায় ছোট এক জায়গায়। কৃষ্ণ এমনভাবে খাড়ায় যে শল্য সোজা ধাওয়া দিয়া আসে তার দিকে। আর অর্জুনের দিকে সোজা রথ দাবড়াইতে গিয়া শল্য রথের চাকা ঢুকাইয়া দেয় কাদায়...

কর্ণের রথ ত্যাড়া হইয়া আটকাইয়া যায় আর শল্যরে ঠিকমতো ফান্দে ফালাইতে পাইরা হাইসা উঠে কৃষ্ণ। কিন্তু এতে কর্ণ বিচলিত না। কারণ যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী কোনো যোদ্ধার রথ আটকাইয়া গেলে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি। কেউ কোনো আঘাত করব না এখন...

কাইৎ হইয়া থাকা রথে অস্ত্র নামাইয়া খাড়াইয়া থাকে কর্ণ। কিন্তু হঠাৎ সে আবিষ্কার করে বিশাল ভারী এক তীর বাগানো অর্জুনরে নিয়া কৃষ্ণের রথ কাছে আসতাছে তার। কর্ণ চিৎকার কইরা উঠে- কাপুরুষের মতো নিয়ম ভাংতাছো ক্যান অর্জুন? অস্ত্র নিয়া জায়গায় খাড়াও। আমার রথটা উঠাইতে দেও...

অর্জুন কিছু কয় না। কৃষ্ণ চিক্কুর দেয়- যুদ্ধের একমাত্র নিয়ম হইল শত্রুমারা। পারলে ঠেকাও...

মুহূর্তে ধনুক তুইলা নেয় কর্ণ। আর অর্জুন বাণ চালাইবার আগেই একটা ভারী তীর বিন্ধাইয়া দেয় অর্জুনরে বাহুর ভিতর....

মাথা চক্কর দিয়া হাত থিকা গাণ্ডিব পইড়া যায় অর্জুনের। কর্ণ আর অস্ত্র চালায় না। অস্ত্র ছাইড়া নিজেই নাইমা ঠেলা দেয় রথের চাকায়। সারথির পোলা সে; আটকাইয়া যাওয়া রথের চাকা কেমনে তুলতে হয় সে জানে। কিন্তু কাদাটা বড়োই কঠিন...

কর্ণ রথের চাকা ঠেলে আর কৃষ্ণ ঠেলে অর্জুনরে- উঠো। তীর চালাও...

যুদ্ধের আগের রাত্তিরে কৃষ্ণ দ্বৈপায়নের সাক্ষাতে যুদ্ধের যে নিয়মগুলা ঠিক করা হইছিল; কাদায় আটকানো রথের চাকা ঠেলতে ঠেলতে কর্ণ ভাবতেই পারে নাই তারে কাদাতে ফালাইয়া সেই নিয়মগুলা লঙ্ঘন করব কৃষ্ণ। কর্ণ রথের চাকা ঠেলে আর কৃষ্ণ অর্জুনরে নিয়া আইসা খাড়ায় তার কাছে। একদম কাছে...

কৃষ্ণের চোখে চোখ রাখে কর্ণ। কৃষ্ণ চোখ সরাইয়া নেয়। ততক্ষণে অর্জুনের ধনুকের ছিলা থাইকা বাইরাইয়া গেছে চ্যাপটামুখ ভারী অঞ্জলিক তীর...

তীরের দিকে তাকাইয়া কর্ণ একটা হাসি দেয়। তার হাসিমুখ বন্ধ হয় না আর। অর্জুনের তীরটা আইসা বিদ্ধ হয় কর্ণের শ্বাসনালি বরাবর...

শল্য নির্বাক। কর্ণ অর্জুনের যুদ্ধ বেশিক্ষণ সহ্য করতে না পাইরা যুধিষ্ঠির ফিরা গেছিল শিবিরে। অর্জুন শিবিরে গিয়া তার পায়ে ধইরা খাড়ায়- প্রতিজ্ঞা বিফল হয় নাই ভাই...

কৃষ্ণের রথে উইঠা অর্জুনের লগে যুধিষ্ঠির আইসা খাড়া হয় মৃত কর্ণের সামনে- শান্তিতে ঘুমাও বীর...

সবাই অস্ত্র নামাইয়া রাখছে বহুক্ষণ আগেই। এখন না আর কেউ ভাবে অস্ত্র তোলার কথা; না ভাবে কেউ যুদ্ধসমাপ্তি ঘোষণার কথা। পাণ্ডবরা বিশ্বাস করতে পারে না যে কর্ণ নাই তাই পাণ্ডব শিবিরে কোনো বিজয়োল্লাস করে না কেউ। কুরুপক্ষ বিশ্বাস করতে পারে না যে কর্ণ নাই তাই কুরুপক্ষেও হাহাকার করতে পারে না কেউ। শুধু থাইকা থাইকা শোনা যায় দুর্যোধনের মাতম-হা কর্ণ। বন্ধু আমার। আমার ভাই...

মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৮ [দ্রোণ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৭ [কর্ণ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৬ [কর্ণ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৫ [কর্ণ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৪
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৮
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৭
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৬
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৫ [ঘটোৎকচ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৪: ঘটোৎকচ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৩: ঘটোৎকচ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ২
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ১
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ১]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ১। সত্যবতী


মন্তব্য

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

এ এক কঠিন সাধনা। আপনি কিভাবে যে করছেন। অনেকদিন ধরেই পড়তে শুরু করবো ভাবছি। পড়া শুরু করতে আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে মনোযোগ ছুটে না যায়। লেখার পরিসর দেখে ভাবছি লিখতে গিয়ে আপনার কি অবস্থা! আজ থেকে শুরু করলাম। প্রথম পর্ব থেকে প্রিন্ট দিয়ে পড়ব। পিসিতে বা মোবাইলে এমন একটা লেখা পড়া মুশকিল। পুরো মনোযোগ চাই। শুভকামনা রইল।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রিন্ট নিতে যত খর্চা আসবে তা আমারে ফ্লেগজি করে দিয়ে দেন। কয়েকদিন পর আমি আপনারে তার বিনিময়ে ছাপা বইটাই দিয়ে দেবো

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ভালই বলেছেন। বইটির অপেক্ষায়ও রইলাম।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলায় পড়া উপেন্দ্রকিশোরের লেখা মহাভারতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।অসাধারণ লাগছে, নতুন আঙ্গিকে।

রাজর্ষি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মহাভারত পড়ায় আগ্রহী করার জন্য উপেন কিশোরের ওই বইটার বিকল্প নাই। বহু বহু আগে আমারও মহাভারত পাঠ শুরু হয়েছিল ওই বইটা ধরে

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

মহাভারতে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্রদের একজন কর্ণ। একজন সত্যিকারের বড় মনের বীরযোদ্ধা। এই লোকটা তার যথাযোগ্য মর্যাদা পেলে মহাভারতের ইতিহাস হয়তো অন্যভাবে লেখা হতো!!

কর্ণার্জুনের যুদ্ধের যে বর্ণনা আপনি দিলেন লীলেনদা, অসাধারণ!!

____________________________

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কর্ণের অন্য মর্যাদা দিতে গেলে হয়ত মহাভারত পুরা এক ম্যাটম্যাটা কাহিনী হইত যা আমরা কেউ পড়তামই না

০২

ছোটদের মহাভারতে প্রধান আকর্ষন ভীম আর বড়োদের কর্ণ; এইটা আমার হিসাব

এক লহমা এর ছবি

চলুক
গল্প শেষ হয়ে এল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পিরায়

অতিথি লেখক এর ছবি

টাইমআউটের সময় গোল দিতে না পারলে তো দেখা যায় পাণ্ডবরা ম্যাচই জিততে পারেনা!

Emran

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ম্যাচ জিতাই হইল মূল কথা; টাইম ইন আর টাইম আউট দুইটাই খেলার অংশ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আগেরগুলা পড়া হয় নাই, একবারে বইতেই পড়ুম হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সবাই আগে পাইড়ালাইলে বই কিনব কেডা?

অতিথি লেখক এর ছবি

কর্ণের জন্য এর চেয়ে ভালো মৃত্যু মনে হয় সম্ভব ছিল না।
অর্জুনকে যদি কর্ণ মারতে পারতো, তাহলে এর পরে কৌরবদের জেতার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ হয়ে যেত। যদিও কৃষ্ণের যা ক্যারেক্টার দেখলাম এ পর্যন্ত, অর্জুন মরার পরে তার নিজের যুদ্ধে নেমে আসাটা অসম্ভব ছিল না। আর নারায়ণী সেনা আপাতত দুর্যোধনের পক্ষে হলেও, ডিপ্লোমেসী বদলাতে কতক্ষণ? অন্যদিকে কর্ণর হত আরেক ঝামেলা - যুধিষ্ঠির, নকুল, সহদেবকে জ্যান্ত ধরতে পারলেও, ভিমকে জীবিত ধরা হতো প্রায় অসম্ভব। তখন বন্ধুর কথা রাখবে, না মা-কে দেয়া কথা রাখবে?
এত ঝামেলার চেয়ে মনে হয়ে মান সম্মান নিয়ে অসম, অন্যায় যুদ্ধে নিরস্ত্র অবস্থায় মরাটাই তার জন্য মনে হয় ভালো ছিল।
একটা অনুরোধ : কৌরবদের দলের সব সেনাপতিদের নাম ঘুরেফিরে বারবার আসলেও, পান্ডবদের পক্ষে সেনাপতি করা ছিল একদম জানি না। একটা লিস্ট দেন পিলিজ।

- সো ।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কৃষ্ণ দুইবার অস্ত্র ধরছে; একবার অস্ত্র ফিরাইছে আরেকবার অস্ত্র ধরার লাইগা পুরা প্রস্তুতি নিছে... সুতরাং তার অস্ত্র ধরা না ধরায় যুদ্ধে অংশগ্রহণের ধরন বদলায় না

০২
পাণ্ডবপক্ষে আগাগোড়া একজনই সেনাপতি; ধৃষ্ট‌্যুম্ন। দ্রৌপদীর ভাই। যে যুদ্ধের শেষে ঘুমে মারা যায় অশ্বত্থামার হাতে। যোগ করা আছে। দুয়েকবার রিপিট কইরা দিমু নে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।