সোনার হরিণ চাই

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৬/২০০৮ - ২:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছুটছি! খানাখন্দ, মাঠঘাট, বাড়ীঘর পেরিয়ে ছুটছি। এ চলার কোন শেষ নেই। ক্লান্ত পা, পেশীতে পেশীতে কাটা কাটা যন্ত্রনা! তারপরও ছুটে চলেছি। যে করেই হোক, আমাকেই আগে পৌঁছুতেই হবে। নইলে জীবন আর মরণের মাঝখানে যে সামান্য সেতুবন্ধন, তা ভেঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। একজনের তো ভাঙ্গবেই, হয় আমার নয় শিহাবের। আরেকজনের কথাও বলতে হয়। তার জন্যেই তো সব! শায়লা। একহারা গড়নের লাস্যময়ী মেয়েটি। বলেছিল,

- তোমাদের দু’জনকেই ভালবাসি আমি। কাকে বেশী, কাকে কম, তা জানি না।
- এভাবে চলবে কি আর! একসময় একজনকেই বেছে নিতে হবে।

সত্যি কথা বলতে কি, শায়লা তো শিহাবেরই ছিল। আমিই উড়ে এসে জুড়ে বসেছি! কথাটি পুরোপুরি ঠিক হলো না। বরং শায়লাই উড়ে এসে জুড়ে বসেছে আমাদের জীবনে। আমার আর অনিকের জীবনে। অনিক নিজেকে দূরে রাখতে পেরেছে, কিভাবে পেরেছে জানিনা। আমি পারিনি। আকন্ঠ ডুবে আছি শায়লার নামের একটি মেয়ের প্রতিদিনের রোজনামচায়। বেরুনোর চেষ্টা করেছি, পারিনি, শায়লাও আমাকে সে সুযোগ দেয়নি। ভালোবাসা এমনি এক শক্তি, অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে একজনকে, সামনে পেছনে ভাবার সুযোগ দেয়না। আমাকে দেয়নি, শায়লাকেও দেয়নি। শিহাবের সে ভাবনার দরকার পড়েছে কি না, জানা নেই। সে তো আগে থেকেই শায়লার হৃদয়ে একটি ভালোবাসার মানুষ হয়ে জেঁকে বসে আছে।

অথচ এমন হবার কথা ছিল না। অনিকের আর আমার সাথে যখন পরিচয় হলো শায়লার, ওকে বন্ধু হিসেবেই নিয়েছিলাম। শায়লাও তাই। শিহাবের কথা পরিচয়ের প্রথম দিনই জানিয়ে দিয়েছিল শায়লা। ওর বন্ধুত্বের ভেতরে এমন এক মোমোর মতো নরম উষ্ণতা ছিল, আমরা সহজেই মেনে নিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল আমরা তিনজনই একই কবিতার তিনটি ছত্র, একই গানের সুরের বিন্যাস। শিহাব থাকে দেশের বাইরে, ওর সাথেও যোগাযোগ হলো আমাদের। দেখা না হলেও শায়লার সাথে ওর সম্পর্ক মেনে নিয়ে আমাদের সাথে ওরও একটি বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। শায়লাকে ঘিরে আমাদের উপরও একটি নির্ভরশীলতা তৈরী হলো তার।

এভাবে চলতে পারলে তো সহজই হয়ে যেত জীবন। কিন্তু নিজেরা নিজেদের সম্পর্ককে আরো বেশী খুঁটিয়ে দেখতে চাইলাম। এর কারণ কি, জানা নেই, হয়তো শুধুমাত্রই কৌতুহল। অনিক বন্ধুত্বের বাইরে আরো কিছু দেখলো না। কিন্তু আমার ভেতরে শায়লার প্রতি যে ভালোবাসা ফাল্গুনের ধারার মতো বহমান, তাকে অস্বীকার করতে পারলাম না। শুনে শায়লা কোন কথা না বলে অনেক্ষণ মাথা নীচু চুপ হয়ে রইলো। তারপর আরেকবার জানতে চাইল, হয়তো স্পষ্ট করেই,

- তুই আমাকে ভলোবাসিস?
- হ্যা, বাসি?
- এটা কি করে হয়? তুই তো শিহাবের কথা জানিস।
- হ্যা, জানি। সেটা তোর আর শিহাবের ব্যাপার! আমার কথা জানতে চেয়েছিস, জানালাম। তুই না চাইলে তোর ধারেকাছেও আসবো না।
- আমাদের বন্ধুত্ব যদি নষ্ট হয় তাতে?
- তুই চাইলে হতেও পারে।

অনিক চুপচাপ আমাদের কথা শুনলেও, ওর চেহারায় যে মেঘের ছায়া পড়েছে, তা নজর এড়ালো না। এবার মুখ খুললো ও,

- শিহাবের সাথে এতোবড় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলি তুই?
- এর মাঝে বিশ্বাসঘাতকতার কি দেখলি অনিক? শায়লাকে ভালোবাসি, তাই জানালাম। কোন দাবী প্রকাশ করছি না।
- ভালোবাসাটাই একটা দাবী।
- সেখানে আমার কি করার আছে? আমার ভেতরে যা আলোড়িত. জানালাম শায়লাকে। তুইও জানলি। তোরা চাইলে সরে যাব তোদের দু’জনেরই জীবন থেকে।
- সেটাই ভাল হয়। এসবের পর কি আর বন্ধুত্ব বজায় রাখা যায়?

শায়লা চোখে জল নিয়ে হোষ্টেলে নিজের ঘরে ফিরে গেল। অনিক আর আমি কোন কথা না বলে নিজেদের রুমে ফিরে গেলাম। আমাদের দু’জনের মাঝে যে দূরত্ব তৈরী হলো, এক ঘরে থেকেও আমরা তা কমিয়ে আনতে পারলাম না।

এভাবেই কেটে যায় সময়। আমাদের সুন্দর দিনগুলোর উপর যেনো একটি কালো ছায়া পড়লো। অনিকের সাথে দরকার ছাড়া কোন কথা নয়। শায়লার ডিপার্টমেন্টের ধারে কাছেও গেলাম না অনেকদিন। ওদের দু’জনের মাঝে কোন কথা হতো কি না, জানতে আগ্রহী হলেও নিজেকে থামিয়ে রাখার অসম্ভব এক ক্ষমতা তৈরী করে নিলাম নিজের ভেতরে। হয়তো নিজের প্রতি কোন এক ক্ষোভ সেই ক্ষমতার কারিগর।

তারপর একদিন এলো শায়লা। হোষ্টেলে আমার রুমেই, বাইরে কৌতুহলী অন্য ছাত্রদের সজাগ দৃষ্টি গায়ে মেখেই। অনিক কোন জরুরী খবরে দেশের বাড়ীতে, আর আমি একা। দরজায় টোকা শুনেই খুলে দেখি দাঁড়িয়ে আছে শায়লা। পাশে সরে ঢোকার জায়গা করে দিতেই, আস্তে করে ঘরে ঢুকলো ও। বিছানার একপাশে বসলো, আমি আমার পড়ার টেবিলের পাশে চেয়ারে গিয়ে বসলাম। বাইরে তখন শরতের উজ্জল রোদ। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম শাড়ীর আঁচলে মুছে নিয়ে মুদূ হাসলো ও। আমিও বিষন্ন হাসলাম।

- তোর কোন দেখা নেই কেন? জানতে চাইল ও।
- পড়াশোনা নিয়ে একটি ব্যাস্ত আছি শালু। সামনে পরীক্ষা, বুঝেতেই পারছিস!
- আমাকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করিসনা সুমন! বোকা ভাবিস নাকি?
- তোকে বোকা ভাবতে যাব কেন? যে প্রশ্নের উত্তর জানা তোর, সে প্রশ্ন করে বিপদে ফেলিস কেন!
- তুই কি আমাকে একেবারেই ভুলে যেতে চাইছিস?
- তা কি করে বলি। চেষ্টা করছি তো বটেই! তোর কি মনে হয় পারবো?

আমার উত্তর শুনে হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলো শায়লা। কিন্তু আঁচল চাপা দিল না। আমি কিছু না বলে চুপচাপ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। একসময় কান্নার দমক থেমে গেলেও চোখের ভিজে কোল বেয়ে জল বয়ে গেল অবিরত। আমার খুব ইচ্ছে হলো ওর কাছে এগিয়ে যেতে। কিন্তু জোর করে নিজেকে থামিয়ে রেখে বললাম,

- কাঁদছিস কেন এতো? শিহাবকে ভালবাসিস জানি। আমার ভালোবাসার কোন দাবী নিয়ে তোর সামনে কখনোই দাঁড়াবো না। তুই চাইলে বন্ধুত্ব আগের অবস্থাতেই ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করতে পারি।
- তুই আবার বন্ধুত্ব ফিরিয়ে আনবি! তোর কি সে চোখ আছে?
- কেন,তুই তো শিহাবকে ভালোবাসিস! এ তো নতুন কিছু নয়! তোকে সেভাবেই চিনেছি শালু, চিরদিন তোকে সেভাবেই চিনবো বলে কথা দিচ্ছি।
- আমি যে তোকে ভালোবাসি সুমন। আজও সেটা টের পাসনি?

কথাটি শুনে আমি অবাক হয়ে শায়লার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কোন কথা সরলো না আমার মুখে। মনে হলো যেন একগুচ্ছ ফুলের পাপড়ি খেলা করছে আমার মাথায়, মুখে, বুকের উপরে, সমস্ত শরীরে। কখনো কখনো সে পাপড়ীগুলো একসাথে হয়ে চেপে বসছে শরীরের কোন অংশে, কষ্ট দিচ্ছে। সে চাপচাপ কষ্ট খেলার আনন্দকে ছাপিয়ে শ্বাসরোধ করছে আমায়। অনেকটা সময় সে আনন্দ উপভোগ ও যন্ত্রণা সহ্য করার পর বল্লাম,

- শিহাবের কি হবে তাহলে?
- আমি ওকেও ভালোবাসি। ওকেও ছাড়তে পারবো না আমি।

শায়লা খাটের কোন ছেড়ে এগিয়ে এলো আমার কাছে। আমার মাথায় হাত রাখলো পরম ভালবাসায়। আমি শিহাবের কথা ভুলে গেলাম সহসা। উঠে দাঁড়িয়ে চুমু খেলাম শায়লার মুখে। শায়লা কোন বাঁধা দিল না। বরং আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমায়। মনে হলো পৃথিবীর পার্থিব, জাগতিক, অলৌকিক সব ধরনের রস এসে জমা হয়েছে আমাদের ঠোঁটের মাঝে। বাস্তব পৃথিবী পেরিয়ে কোন এক কোন এক অলৌকিক জগতের মাটি আর আকাশের মাঝামাঝি কোন এক নাগরদোলায় যেন দুলছি আমরা। আমাদের মুখের মাঝে পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু কোন এক অপার্থিব ফল আমাদের দুজনেকে মিলিয়ে একজনের মাঝে আরেকজনকে বিলীন করে দিচ্ছে।

কতোক্ষণ পরই বিদায় নিল শায়লা। আমি ওকে আমাদের হোষ্টেলের গেট অবধি এগিয়ে দিয়ে এলাম।

কদিন পরই ফিরে এলো অনিক। আমরা ওকে কিছু না বললেও শায়লার আর আমার সাথে আবার নতুন যোগাযোগ দেখে গম্ভীর হয়ে গেলো। সেসাথে আমাদের দুজনের চোখের চাউনী দেখে যা বোঝার, বুঝে নিল। কিছুই লুকোতে পারলাম না। শিহাবকে চিঠি লিখলো অনিক। আমরা বাঁধা দিতে গিয়েও দিলাম না। কিছুদিন পর শিহাবের একটি চিঠে পেয়ে গম্ভীর হলো শায়লার চেহারা। আমাকে কিছুই বললো না। আমি সময়ের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে আনন্দ আর কষ্টের দোলায় দুলে দুলে সময় কাটাতে লাগলাম।

অন্যদের নজরের আড়ালে ভার্সিটি চত্তরের একটি গাছের ছায়ায় বসলাম আমরা। শরতের রোদের তাপ সে ছায়াতে স্পর্শ করলেও মাঝে মাঝে একটু দমকা হাওয়া আদর জানালো শরীরে। শায়লা বইখাতা পাশে রেখে চুপচাপ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। আমিও কতোক্ষণ কিছু না বলে মুখ খুললাম অবশেষে।

- কেমন আছিস্ শালু?
- ভাল।
- শিহাব কি লিখলো?
- অনিকের কাছে সব জেনে মন খারাপ করেছে খুব। দ্রুত আমার সিদ্ধান্ত জানতে চায়।
- যে সিদ্ধান্তই নিস না কেন, মেনে নেব আমি, খুব কষ্ট হলেও। তাছাড়া আমি নিজেই তো উড়ে এসে জুড়ে বসেছি তোদের মাঝামাঝি।
- আমি জায়গা না করে দিলে তুই বসতে পারতি নাকি?
- সে যাই হোক। তুই শিহাবের হয়ে থাক্, শালু। আমার কষ্ট হবে খুব। তোরা চাইলে আমি নাহয় আগের মতোই বন্ধু হয়ে থেকে যাবো।

এ কথার কোন উত্তর দিল না শায়লা। যেন শুনলই না আমার কথা। আপন গহনে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইল। সে গভীরতায় পৌঁছোনোর সাধ্য সে মূহুর্তে আমার ছিলনা।

- আমাকে পাবার জন্যে যুদ্ধ করতে হবে তোদেরকে।
- সেকি?
- হ্যা, যুদ্ধই করতে হবে।
- আমি কোন যুদ্ধ করতে চাই না শালু। বিনা যুদ্ধেই তোকে শিহাবের হাতে ছেড়ে দিতে রাজী।
- তাহলে ভাববো, তুই আমাকে ভালোবাসতি না।

ইতিহাসের ছাত্রী শায়লা। মধ্যযুগ নিয়ে পড়াশেনা বেশী তার। সে সময়কার প্রেম, কাহিনী, দন্ধযুদ্ধ নিয়ে ভাবে অনেক। মাঝে মাঝেই সে সব ভাবনা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়।

- সুমন। তোকে বলেছিলাম না, আমাদের গ্রামে আমার প্রিয় একটি পুকুর রয়েছে।
- হ্যা, বলেছিলি। একসময় আমাদেরকে নিয়ে যাবারও কথা ছিল।
- সঠিক ঠিকানাটা তুই জানিসনা, শিহাবও জানেনা। আমি কাল একা যাচ্ছি গ্রামে। ঠিকানাটি দিয়ে যাব তোদেরকে। পরশু সুর্য জোবার আগে যে ওখানে আগে যাবে, সে আমাকে পাবে।

চমকে উঠলাম আমি। এ আবার কোন ধরণের খেলা! এই শতাব্দীতে এ খেলা তো একেবারেই অচল। কিন্তু যতোই বাইরে বাইরে বলি, শায়লা শিহাবের সাথেই জীবন গড়ুক, ভেতরে ভেতরে শায়লাকে পাবার অদম্য ইচ্ছেটি এত সহজে বিসর্জন দিই কি করে। তাই রাজী হয়ে গেলাম। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো শায়লা,

- এমনও হতে পারে, তোমরা কেউই আসবে না। তখন কি ঘটবে, তা এখন বলতে পারবো না।

তাই ছুটছি আমি। পাগলের মতো এলাকার পর এলাকা ছাড়িয়ে, গ্রামের পর গ্রাম মাড়িয়ে। যে করেই হোক, শিহাবের আগেই পৌঁছুতে হবে আমাকে শায়লার কাছে। কতোক্ষণ আগে একটু বৃষ্টি হয়ে গেলো। মাটি পিচ্ছিল হয়ে আছে। পা টিপে টিপে চলতে হচ্ছে আমাকে। কাছে কোথাও বাজার বসেছে। হাটুরেরা কেনাকাটা শেষে বাড়ী ফিরছে। বোঝা মাথায় নিয়েও ওদের হাঁটায় কোন জড়তা নেই। শায়লা একটি বাজারের কথা বলেছিল। মনে হলো এটাই সেই বাজার। তারপর সামান্য পেরিয়েই শায়লার সেই পুকুর ঘাট। হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম আরো। একবার দু’বার পা পিছলে পরেও গেলাম। আবার উঠে দাঁড়ালাম। হঠাৎ এক ভয় এসে বাসা বাঁধলো বুকের ভেতরে। ভুল পথে যাচ্ছি না তো? সুর্য ডুবতেও বেশী বাকী নেই আর। হাটুরেদের আর দেখতে পাচ্ছি না। বাজার থেকে দুরে সরে গেলাম কি? পাগলের মতো ছুটলাম আবার। আমার তো দেরী হয়েই যাচ্ছে। শিহাবও যদি দেরী করে? তাহলে কি করবে শায়লা? ভয়ে হিম হয়ে গেল শরীরের রক্ত। শিহাব যেনো এতোক্ষণে পৌঁছে যায়, এ কামনাই করতে লাগলাম বারবার। আমার আগেই হলেও, যেন পৌঁছে যায় সে। শায়লার যেন কিছু না হয়!

নানা ঘুরপথে ধাক্কা খেয়ে যখন বাজারটি খুজে পেলাম, তখন অন্ধকার চারপাশ। দোকানীরা কুপি জ্বালিয়েছে মাত্র। লোকজনও তেমন বেশী নেই। দ্রুত বাজারটি পেরিয়েই একটি আধভাঙ্গা পুল পেরিয়ে সেই পুকুরপাড়ে এসে দাঁড়ালাম। অনেক লোকজনের একটি জটলা বেঁধে সেই পুকুরের পাড়ে। কিছুক্ষন আগে নাকি একটি মেয়ের মৃতদেহ ভেসে উঠেছে পুকুরে।

×××××××××××
সকাল বেলা অনিক ঘুম থেকে ডেকে তুললো আমাকে। জানালা দিয়ে যেভাবে রোদ ঢুকেছে ঘরে, মনে হলো বেলা হয়েছে বেশ।
- কিরে! ক্লাশে যাবি না?
- ক’টা বাজে এখন?
- এগারোটা প্রায়। একটা ক্লাশ শেষ হলো। তুই ঘুমুচ্ছিলি বলে একবার ডেকে আর ডাকিনি।

মুখহাত ধুয়ে বেরিয়ে পড়লাম অনিকের সাথে। কেমন যেন অদ্ভুত মনে হচ্ছিল চারদিক। কেমন যেন আলোছায়ার এক খেলা। বাস্তব আর কাল সারারাতের সপ্ন সেই আলোছায়ার মাঝে রহস্য হয়ে আছে। আমাদের পায়ের শব্দকেও কেমন যেন স্বাপ্নিক মনে হচ্ছিল। মেয়েদের হোষ্টেলটি পেরিয়ে যাবার পর ভাবলাম, শায়লা নামে ওখানে থাকে কি কেউ?


মন্তব্য

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

কেমন যেন অদ্ভুত মনে হচ্ছিল চারদিক। কেমন যেন আলোছায়ার এক খেলা। বাস্তব আর কাল সারারাতের সপ্ন সেই আলোছায়ার মাঝে রহস্য হয়ে আছে। আমাদের পায়ের শব্দকেও কেমন যেন স্বাপ্নিক মনে হচ্ছিল।
আমিও যেন স্বপ্নের ঘোরেই পড়লাম। রেশ রয়ে গেল...

তীরন্দাজ এর ছবি

আমি এখনো সেই রেশেই পড়ে যাই...।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

খুব স্বাপ্নিক গল্প, কি যানি বলে ইংরেজীতে মনে হয় রুপক টাইপের কিছু। মানুষের কামনা বাসনা নিয়েই তো স্বপ্ন। ভাল লাগল খুব।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ পুতুল মহারাজ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

স্পর্শ এর ছবি

দারুন!!! আমি ভেবে অবাক হই আপনি এত লিখেন কি করে !! অ্যাঁ
একের পর এক অসাধারণ গল্প!

আমি তো লিখতে চাইলেও অনেক সময় সময়ই পাইনা!! আপনার লেখনী চলুক, চলতেই থাকুক। আর এই ফাকে আমরাও পড়েনিই দারুণ কিছু গল্প!
শুভেচ্ছা
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। জ্বরে ভুগে পড়ে আছি বাড়ীতে। তাই লিখতে পারলাম।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

কীর্তিনাশা এর ছবি

দারুন টান টান গল্প। আপনার গল্পের শেষের দিকের সেই চমকটাও রয়েচছ। খুব ভালো লাগলো।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ কীর্তিনাশা...!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

রায়হান আবীর এর ছবি

এই তীরুদাকেই আমার ভালো লাগে। প্রতিদিন একটা করে মন কাড়া গল্প।

---------------------------------

তীরন্দাজ এর ছবি

খুব খুশী হলাম রায়হান!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এবং জটিল...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! শুভকামনা রইল!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে তীরুদা। আপনার গল্পের শেষের দিকটায় যা দারুণ চমক থাকে, উপভোগ করার মতো।

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আখতারুজ্জামান!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আমি সময়ের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে আনন্দ আর কষ্টের দোলায় দুলে দুলে সময় কাটাতে লাগলাম।

চমৎকার লাগলো।

রণদীপম বসু এর ছবি

চমৎকার গল্প !
তবে ওই হোস্টেলে চুমুর ব্যাপারটা কেন জানি গল্পের আবহের সাথে কিছুটা আরোপিত মনে হয়েছে। আমি বলছি না যে আমার এই মনে হওয়াটাই স্বতঃসিদ্ধ। তবু মনে হলো তাই বলে ফেলা।
ধন্যবাদ তীরন্দাজ ভাই।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ রণদীপম। বিরাট গল্পকার নই। হয়তো আমি নিজেই পাঠককে সঠিক আবহে এনে দাঁড় করাতে পারিনি।

পুরো গল্পটি সত্যি সত্যি কেউ একজন এভাবেই সপ্নে দেখেছে। সে যেভাবে বর্ণনা দিয়েছে, তাতে চুমুর বিষয়টি একেবারেই আরোপিত নয়। আমি ঠিকমতো বর্ণনা দিতে চাইলে, এটি নিয়েই আরো একশো লাইন লিখতে পারতাম।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহীন হাসান এর ছবি

এমনও হতে পারে, তোমরা কেউই আসবে না। তখন কি ঘটবে, তা এখন বলতে পারবো না।
....
চুড়ান্ততমস্বপ্নই বটে! অসাধারণ!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তীরন্দাজ এর ছবি

ঠিক ধরেছেন, চুড়ান্তই বটে! অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ধুসর গোধূলি এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

শালু নামে আমার এক বান্ধবী আছিলো!

কোন দেশী?


কি মাঝি? ডরাইলা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কোন দেশী আবার, আমাগো দেশি!
স্বদেশী পন্য কিনে হও ধন্য। আমি বিদেশী জিনিষ প্রেফার করি না। চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তীরন্দাজ এর ছবি

হ, কৈসে! কৈ সে?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তীরন্দাজ এর ছবি

বড়ই কষ্টের কথা ধুসর! এখন কই সে?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দেশে। আছিলো তো সেই বৃটিশ আমলে। এখন কই কেমনে জানি!
মো.পুর ইকবাল রোডে থাকতো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তীরন্দাজ এর ছবি

আহারে...!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মুশফিকা মুমু এর ছবি

মনে হলো যেন একগুচ্ছ ফুলের পাপড়ি খেলা করছে আমার মাথায়, মুখে, বুকের উপরে, সমস্ত শরীরে। কখনো কখনো সে পাপড়ীগুলো একসাথে হয়ে চেপে বসছে শরীরের কোন অংশে, কষ্ট দিচ্ছে।

এত ভাল আপনি লিখেন কিভাবে!!!
খুব ভাল লাগল। হাসি
-----------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার প্রশংসায় খুব আনন্দিত হলাম। অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পরিবর্তনশীল এর ছবি

স্বপ্নময়।

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

তারেক এর ছবি

তীরুদা স্পেশাল যথারীতি। আমি নিজেই স্বপ্ন টা দেখলাম মনে হল খাইছে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।