ইতিহাসবৃত্ত

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শনি, ০৮/১১/২০০৮ - ৫:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১। নী

গোল জানালাটির সামনে এসে দাঁড়ায় নী। আস্তে আস্তে হাত বাড়িয়ে ছোঁয় নীল বোতামটাকে। এখন সে হাত পায়। কয়েকমাস আগেও অত উঁচুতে হাত যেতোনা নী'র। তখন ওর সঙ্গে ওরাককে আসতে হতো। কিন্তু নী'র ভালো লাগতো না, কেমন যেন মনে হতো এক একা আসতে পারলেই ভালো হতো। ওরাকের সোনালী ধাতব মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই, কিন্তু নী'র মনে হতো ওরাক যেন ভেতরে ভেতরে বিরক্ত, রুটিন কাজের বাইরে এই কাজটি তাকে করতে হওয়ায়। নী জানতো না ওরাকের রাগ, বিরক্তি, মান-অভিমান এইসব মানবিক অনুভূতিগুলি নেই, সেগুলো তাকে দেন নি তার নির্মাতারা। সেকথা নীকে জানানোর কেউ ছিলো না সেখানে।

নীল বোতামটায় আস্তে আস্তে চাপ দেয় নী। এই অন্ধকার করিডরের শেষে এই গোল জানালাটার সামনে দাঁড়ালে প্রতিবারই কেমন যেন একটা বুক ধুকপুক ধুকপুক করে নী'র। তবু কিছুদিন বাদে বাদেই সে এইখানে না এসে পারে না।

গোল জানালার অস্বচ্ছ ঢাকনা সরে গিয়ে স্বচ্ছ ঢাকনা বেরিয়ে পড়লো। নী ওর মুখ আরো এগিয়ে আনে। একদম কাছে আনে চোখ। ওর নবীন জ্বলজ্বলে চোখের সামনে প্রকাশিত হয় মহাকাশ। অবর্ণনীয় বিস্ময়! । অসংখ্য গ্রহতারা নীহারিকাময় রহস্যভরা মহাকাশ, ঘন অন্ধকারে বিন্দু বিন্দু আলোজ্বালা তারারা, দূরের গ্যালাক্সির ঘূর্নীবাহু, নেবুলার মেঘওড়না, কখনো বা হালকা তুলোর মতন--ধূলিহীন তীব্রতায় ঝকঝক করছে সব।

নী ইস্কুলে শুনেছে আর পড়েওছে ওরা সবাই এই মহাকাশের মধ্য দিয়ে ছুটে চলেছে, অনেক অনেক দিন পরে যখন তারা অনেক বড় হয়ে যাবে, তখন অনেক অনেক দূরে একটা নীল গ্রহে গিয়ে সবাই পৌঁছবে। বহু বহু শতাব্দী আগে ঐ গ্রহটা থেকেই নাকি তাদের এই যানটি, নির্মাতারা যারা নাম রেখেছিলো ফিনিক্স১, যাত্রা শুরু করেছিলো মহাশূন্যে। হিমায়িত করে রাখা মনুষ্যভ্রূণদের নিয়ে। পরে কখনো হানাহানির দুর্যোগ কেটে গেলে আবার যাতে তারা ফিরে আসতে পারে। তখন যদি গ্রহের মানুষ নিঃশেষ করে ফেলে নিজেদের, তবু মহাশূণ্যে নিরাপদ দূরত্বে ফিনিক্সের মতন নানা মহাকাশযানে রয়ে গেলো তাদের বংশধারা। অনুকূল পরিস্থিতে ফিরে আসতে পারবে জননীগ্রহকে পুনর্মানবায়িত করতে। এইসব ভেবেই সবকিছু সেইভাবে প্রোগ্রাম করে দিয়েছিলেন নির্মাতারা । সঙ্গে ছিলো অফুরন্ত নিউক্লীয় শক্তি-উত্‌স আর নক্ষত্রের আলোর শক্তিকে সংগ্রহ করার প্রকৌশল। এসব এখনো সব বুঝতে পারে না নী, এখানে যে দশজন মানুষ আছে ,তারা কেউই সবটা বুঝতে পারে না। আরো বড় হয়ে নাকি বুঝবে। নী আরো বুঝতে চায়, এখনি।

কী অপরূপ সুন্দর ওই ঘুর্ণী গ্যালাক্সিটা! নী'র মনে হয় আচ্ছা, ওখানে কি নী'র মতন কেউ আছে? দিওতিমার মতন? তাভামের মতন, ওরিনের মতন? যদি থাকে, তবে সে কি এমন করে চেয়ে দেখে মহাকাশ! সে কি ভাষায় কথা বলে? তারও কি খুব কাছের বন্ধু আছে যেমন নী'র আছে দিওতিমা?

নী নিজে নিজে খুব আস্তে আস্তে নিজের সঙ্গে কথা বলার মতন করে বলে,"এই, এই শোনো! তোমার নাম কি গো? তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো? আমি নী, তোমার নাম কি? তুমি কি আমার বন্ধু হবে? দিওতিমার মতন বন্ধু?" বলে ফেলে নিজের মনেই হেসে ফেলে সে, কার সঙ্গে সে কথা বলছে?

নী পায়ের শব্দ পায়, সে চেনে এই পায়ের শব্দ। ওরাক। নিতে আসছে নী কে। এখন ওদের পড়তে বসার সময়। নী বোতাম টিপে গোল জানালার ঢাকনা বন্ধ করে দেয়। ওরাক এসে গেছে, ওর হেলমেটে হালকা কমলা রঙের আলো জ্বলছে,নী'র দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সে তার ওঠানামাহীন ধাতব গলায় বলে,"নী, তোমার পড়ার সময় হয়ে গেছে। চলো।" নী কোনো কথা না বলে হাত বাড়িয়ে ওরাকের শক্ত হাত ধরে বলে, " চলো।"

(চলবে)


মন্তব্য

শিক্ষানবিস এর ছবি

থিমটা খুব ভালো লেগে গেলো। নিয়মিত পড়বো। তবে আগামী এক সপ্তাহ পড়া হবে না। ঘোড়াশাল যাচ্ছি ইন্ডিস্ট্রিয়াল ট্রেনিং এ। এক সপ্তাহে যতগুলো পর্ব আসবে সবগুলো একসাথেই পড়ে নেব।
চালিয়ে যান।
"ফিনিক্স" নাম রাখার পেছনে কি মঙ্গলে পাঠানো "ফিনিক্স" অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে?

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুন ! চলুক চলুক ..

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

ভাল হচ্ছে আপুনি তবে চরিত্রে নাম গুলা মহা কঠিন হইছে। এ ধরনের লেখায় সবাই কঠিন এবং আজিব নাম ব্যবহার করে ক্যান ?
চালায় যান অহনা আপু !

--------------------------------------------------------

রণদীপম বসু এর ছবি

মহাকাশে তো উড়ালেন। দেখা যাক কই নিয়া ঠেকান !
উড়াল দিলাম।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ওকে... নেক্সট?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

শিক্ষানবিস,
ঘোড়াশালে যাবেন শুনে আমার স্মৃতি উতল হলো। আমার ঠাকুমার পিত্রালয় ছিলো শীতলক্ষ্যার তীরে, ওরা বলতো লক্ষ্যা নদী। কবেই ঠাকুমা চলে গেছে , রয়ে গেছে তার বলা গল্পগুলো।
ফিনিক্স আসলে কল্পকথার ফিনিক্স থেকে, আগুনে পুড়ে মরে ও যে শেষ হয় না, নতুন করে জন্মায় ধ্বংসস্তূপ থেকে। অমর জীবনের প্রতীক।
ভালো করে ট্রেনিং করুন। ভালো থাকবেন।

রণদীপম,খেকশিয়াল, নজরুল, পিচ্চি ভুত,
আপনাদের সকলে অনেক ধন্যবাদ।
ভুত,
নামগুলো এরকম দেওয়া ছাড়া উপায় নেই, দূর ভবিষ্যতের নাম কিনা! নাম থেকে যাতে জাতি ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠী বোঝা না যায় সেটা বিষয়ে সাবধান থাকতে হয়। আজকের দুনিয়ার মতন তো হবে না তখন!!!

সামনের সপ্তাহে আমিও থাকছি না, শনিরবি পোস্টাবো, তারপরে আবার সেই সামনের শনিবার। দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।