সূর্যদীঘল

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: রবি, ১৫/০২/২০০৯ - ৬:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"মোমরঙা সেই ভোরেরবেলা নীল সাগরে পাড়ি
বুকের ভিতর রুদ্রপলাশ সূর্যদীঘল বাড়ী....... "

প্রথম ভোর, নিমফুলী আভা। সূর্য উঠতে কিছু দেরি আছে এখনও। শুকতারা জ্বলজ্বল করছে স্বচ্ছ আকাশের কপালে টিপের মতন। সুরমা এগিয়ে মহাসাগরের জলরেখার কাছে দাঁড়ায়। জলরেখাটি ভিজা বালির উপর দিয়ে সরে যাচ্ছে দ্রুত, ভাসাভাসি ঢেউ হয়ে ফিরে আসবে বলে। বালিতে রেখে যাচ্ছে সূক্ষ্ম কারুকাজ।

ঢেউ আসে ঢেউ যায়। কতকাল থেকে ওরা এমন আসছে যাচ্ছে? সে কি সৃষ্টির শুরু থেকে? ঝুঁকে পড়ে সুরমা, জলে হাত ডুবায়। করতলে তুলে নেয় সমুদ্রের লবণাক্ত জল। বহু বহু আগে সমুদ্র কি এত নোনা ছিলো না? যুগ যুগ ধরে নদীদের বহে আনা লবণই কি এত নোনা করে দিলো সর্বংসহা সাগরের হৃদয়? আগে কি সাগর অন্যরকম ছিলো?

কেমন ছিলো সমুদ্র সেই সুপ্রাচীন কালে, যখন তার হৃদয়ে ভেসেছিলো প্রথম অণুপ্রাণ? যা কিছু গভীর গোপণ অনুভব, যা উন্মোচনীয় নয়, সেইসব তীব্র অনুভব কি লুকিয়ে থাকে জলজীবনের স্মৃতিতে? তাই কি সমুদ্রের কাছে এসে দাঁড়ালে বুকের ভিতর এমন কেমনকেমন করতে থাকে?

সাগরের নীল জলে মাথা জাগিয়ে জাগিয়ে আছে পাথরেরা, কালো, বাদামী বা কোনোটা লতায়পাতায় ছাওয়া সবুজ। সুরমা তাকিয়ে থাকে সেগুলোর দিকে। কতকাল হয়ে গেলো? কতদিন আগে এসেছিলো তারা? তখন মিন্টি কত বছরের? পাঁচ না ছয়? এতদিন হয়ে গেলো?

সুজন পাশে এসে দাঁড়ায়, পুবে এখন আলো আরো বেশী, সূর্যোদয় হতে আর দেরি নেই। উপরের মেঘগুলো কমলা হয়ে উঠেছে, ওরা এখনই দেখতে পাচ্ছে সূর্য। একঝাঁক পাখি মালার মতন উড়ছে। সহসা সুরমা সুজনকে আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ওঠে, "মেয়েটা আসতে চেয়েছিলো,খুব আসতে চেয়েছিলো এখানে আর একবার। ওর আর আসা হলো না।"

সুজন কিছু বলে না, শুধু নীরবে সুরমার লবণমরিচ চুলে হাত বোলায় আস্তে আস্তে, স্পর্শের বৈদ্যুতি ভাষায় বুঝি সান্ত্বনা দিতে চায়। সুরমা বাচ্চা মেয়ের মতন কাঁদতে থাকে, তার উথালপাথাল কান্নায় ভিজে যেতে থাকে সুজনের বুক। তাদের সামনে ঢেউ আসে, ঢেউ যায়। নিরাসক্ত,নির্বিকার। নাকি করুণাময়? কেজানে?

আকাশের স্ফটিকস্বচ্ছ নীলে, সমুদ্রের অতল নীলজলে জেগে থাকে সতেরো বছরের অভিমানী কিশোরীর মায়া-মায়া মুখ, সময় যে মুখে আর দাগ কাটতে পারবে না কোনোদিন। সূর্য উঠে আসে জলদিগন্ত ছেড়ে, কাঁচা-সোনা আলোয় ছেয়ে যায় চরাচর। সেদিনও তো এমনই সকাল ছিলো, বসন্তের প্রথম সকাল!

"মোমরঙা সেই ভোরেরবেলা নীল সাগরে পাড়ি
বুকের ভিতর রুদ্রপলাশ সূর্যদীঘল বাড়ী....... "


মন্তব্য

তানবীরা এর ছবি

কবিতার লাইনদুটো কার? অসম্ভব মিষ্টি কথা গুলো, তুলি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ তানবীরা।
লাইনদুটো হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কীর্তিনাশা এর ছবি

"মোমরঙা সেই ভোরেরবেলা নীল সাগরে পাড়ি
বুকের ভিতর রুদ্রপলাশ সূর্যদীঘল বাড়ী....... "

শুধু এই দু'লাইন দিয়েই একটা পোস্ট দিতে পারতেন।

একরাশ মুগ্ধতা !!

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কীর্তিনাশা।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

হরিপদ কেরাণী [অতিথি] এর ছবি

আপনার লেখাগুলো পড়লে মনে হয়- নীল আকাশের নীচে তুলোউড়া শুভ্র মেঘে ভাসতে ভাসতে মন্দ্রসপ্তকে কোন মিষ্টি গান শুনতে শুনতে অনন্ত স্বর্গের দিকে যাচ্ছি..........! আহা! যেখান থেকে আর কোনদিন ফিরব না ! ফেরার কোন প্রয়োজনও নেই!

মনেহয় বুঝাতে পারলাম না। আসলে আরও সুন্দর কিছু উদাহরণ প্রয়োজন ছিল কিন্তু জ্ঞানে কুলালো না লিখতে।

hafij2005@gmail.com

তুলিরেখা এর ছবি

বুঝাতে পেরেছেন।
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।