দিগন্তপ্রিয়

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বুধ, ০৪/১১/২০০৯ - ১০:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এখানে আদিগন্ত স্মৃতিরা নশ্বরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়ায়। মাঠের পরে মাঠ অদৃশ্য হয়ে যায় ম্যাজিকের মতন। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় ধানীরঙের স্বপ্ন। ওখানে পাহাড়, ওর শক্ত পাথুরে গা বেয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে। আর পায়ের কাছ দিয়ে ঐ তো বয়ে যায় কালিন্দীর ধারা। সেখানে একসঙ্গে জড়াজড়ি করে ভেসে যায় ভ্রমণবিলাস আর মৃত্যু। পলকহীন চোখে চেয়ে থাকে ছিন্নমুন্ডেরা।

এইখানে ছাদটুকু। এই প্রিয় টুকরোটায় দাঁড়িয়ে নন্দিনীর ভুলে যেতে ইচ্ছে করে মাধ্যাকর্ষণ, মনে হয় হাত দু'খানা ছড়িয়ে গিয়ে হয়ে যাক ডানা, আকাশপ্রিয় দু'খানা ডানা, মনে যার অনন্তস্পর্শী মুক্তি-আকাঙ্ক্ষা। উপরে চাঁদের গায়ে চাঁদ, আরো চাঁদ, আরো চাঁদ। একে একে সব চাঁদ ঝরে গিয়ে নিশ্চন্দ্রা রাত্রি। মিশমিশে কালো আকাশে নক্ষত্রের সাম্পান। তারাফুটফুট আকাশের তলায় তন্দ্রাবিলাস। একেই বলে অভিসার। আসবে কি সে? কখন আসে, কখন আসে, আর বুঝি এলোনা হায়, না ঐ তো দেখা যায়, ঐ বুঝি আসে!

পাতাবাহারের পাতায় কুচি কুচি জল। কোথা থেকে এলো? শিশির নাকি বৃষ্টি না কান্না? হেমন্ত এসে গেছে বুঝি? আঙুলে শিশির মাখতে মাখতে বুকের ক্ষত জুড়াতে চায় নন্দিনী। তবু পোড়াচোখে জল আসে কেন?

অনেক দূরের বনের গাছের পাতাগুলি বুঝি সব রাঙা হয়ে গেছে ঝরে যাবার আগে? শ্রবণ বলেছিলো হেমন্তের অরণ্যের গল্প, বলেছিলো একদিন তারা দু'জনে মিলে দেখতে যাবে। বারে বারে বিষাদচিকচিক চোখ মেলে দিগন্তে চেয়ে শ্রবণ বলতো- কেন এত সীমানাবেড়া? কেন এত কাঁটাতার? নন্দিনী শুধু সমব্যথীর মতন হাত বোলাতো ওর হাতে। বলতো একদিন নিশ্চয় সব খুলে যাবে, সব বেড়া সব পাঁচিল সব বাধা অদৃশ্য হয়ে যাবে।

শ্রবণ ধৈর্য ধরতে পারলো না, একাই চলে গেলো, সীমান্তহীনতায়। মাটির দেশের নন্দিনী সমস্ত আকাশে আকাশে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়েও আর তাকে দেখতে পেলো না। যে ডানা চিরকাল লুকিয়ে রেখেছিলো শ্রবণ, সেই দিগন্তপ্রিয় ডানা মেলে দিয়ে সে চলে গেছে।

ঘরের রাতবাতিটার আলো কেমন অলৌকিক নীল। নীল স্বপ্নের মতন। এই আলোর সামনে ওভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে খুন হয়ে যেতে ভালো লাগে না তার। তবু রোজ রাতে ভিতরকলিকা ছিঁড়ে রক্ত খেয়ে ছিবড়ে করে ফেলে যায় তাকে অন্ধকারের প্রভু। আলোটা তখন রক্তলাল লাগে।

তারপরে বৃষ্টির হাত এসে সবকিছু মুছে নিলে স্বপ্নবাতিটা আবার নীল! গভীর সেই নীল থেকে কথামালা বেরিয়ে এসে শুশ্রূষার জলের মতন বিছিয়ে যায় ভিতরবাহির ঢেকে দিয়ে। নদী, নদী, নদী তখন সব। রূপালী জ্যোৎস্না ছলাৎছলাৎ করে। আকাশে অজস্র চাঁদ, একের পর এক নতুন চাঁদ ওঠে। কেমন নরম, কেমন স্নিগ্ধ আলো! শান্তি, শান্তি, শান্তি। নন্দিনী ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রহর জাগে, প্রহরী জেগে থাকে। কুয়াশা-ধোঁয়াশা-অশ্রু-স্বেদ-ধুলাবালি-পাথর-কাঁকড় রক্তমাখা হাঁসের পালক, পলকে পলকে সহস্র জন্মমৃত্যু সব কিছু পার হয়ে জেগে থাকে বাতিঘরের প্রহরী। আত্মদীপ আকাশ থেকে আলোর ধারা ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু বিন্দু বিন্দু, অশেষ, অনন্ত।


মন্তব্য

যুধিষ্ঠির এর ছবি

আপনার এইরকম ম্যাজিক ম্যাজিক ভাষার মনছোঁয়া লেখা সবসময়ই পড়ি। লেখাগুলো কেমন যেন, শুরু হয়না, শেষ হয়না - কিন্তু চমৎকার লাগে পড়ে যেতে। কিন্তু তারপর এরকম সাধারণ সাদামাটা আটপৌঢ়ে ভাষায় মন্তব্য করতে অস্বস্তি হয়। আজকে তাও সাহস করে করেই ফেললাম।

তুলিরেখা এর ছবি

আরে আপনি মন্তব্য করার আগে এত ভাবেন?
যা মনে হয় বলে ফেলবেন। আমরা আমরাই তো! হাসি
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

এইটা তো একটা গল্প, এটাকে ব্লগরব্লগর বলার জন্য তীব্র ধিক্কার জানাই।

এইটা একটু অন্যরকম, আপনার বাকি লেখার চাইতে, ছিন্নমুণ্ড আগে দেখি নি।

তুলিরেখা এর ছবি

গল্প মনে হলে গল্পই। এতটুকু লেখাকে কি গল্প বলা যায়? কিছু তো ঘটে নি কাহিনিতে! আসলে ব্লগরব্লগর এসে যায় বাই ডিফল্ট।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অম্লান অভি এর ছবি

উপরে চাঁদের গায়ে চাঁদ, আরো চাঁদ, আরো চাঁদ। একে একে সব চাঁদ ঝরে গিয়ে নিশ্চন্দ্রা রাত্রি।

তবু রোজ রাতে ভিতরকলিকা ছিঁড়ে রক্ত খেয়ে ছিবড়ে করে ফেলে যায় তাকে অন্ধকারের প্রভু। আলোটা তখন রক্তলাল লাগে।

এ কোন নিসঙ্গ পথযাত্রী জীবন মৃত্যুর কাব্য গাঁথায়! এমন শব্দ চয়ন আর বিন্যাস সত্যি দারুণ। ভালো লাগে, এবারও লাগল।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ অম্লান অভি।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ লাগলো পড়তে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তুলিরেখা এর ছবি

আমারও শুনে ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাফি এর ছবি

সুন্দর যদিও বুঝি কম, কিন্তু আমার উপকথাই চাই।

তুলিরেখা এর ছবি

অপেক্ষা করো, উপকথা আসবে। সবুরে মেওয়া ফলে, জানো তো ? হাসি -----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাফি এর ছবি

জি ঠানদি। মেওয়া গাছে কুড়ি ধরেছে দেখেছি,

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।