কাজলরেখা

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শনি, ১৪/১১/২০০৯ - ৯:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
মালা ডাকলো, " কাজল, এই কাজল।" কোনো জবাব নেই।

আবার ডাকলো, এবার একটু চড়া গলায়," কাজ-অ-অ-ল, কিরে হতচ্ছাড়ী, শুনতে পাসনা? ভাত বেড়েছি, খাবি না?"

কোনো সাড়াশব্দ নেই। এবার মালা রেগে ওঠে। " কী হলো? বলি হলোটা কী? এতক্ষণ ধরে ডাকছি, নবাবনন্দিনীর কোনো জবাব নেই?" কিন্তু এবারেও কোনো আওয়াজ আসে না কাজলের দিক থেকে। মালা রেগে এবারে একেবারে তেতে ওঠে, দুম দুম পা ফেলে কাজলের ঘরে ঢোকে। চুলের মুঠি ধরে টেনে আনবে ওকে।

কাজল বিছানায় শুয়ে আছে কুঁকড়েমুকড়ে। ওর চোখ বন্ধ, ঘুমাচ্ছে নাকি? পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে ঘুম হচ্ছে? চুলের মুঠিতে এক টান দিয়ে তুলতে হয় হতচ্ছাড়ী মেয়েকে। সেই উদ্দেশ্যেই মালা এগোয়, কিন্তু এসে মেয়ের গায়ে হাত রেখে চমকে উঠলো মালা। জ্বরে ওর গা পুড়ে যাচ্ছে।

ঘুমন্ত জ্বোরো মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মালা। করুণ একটা মুখ, এলোমেলো চুলগুলো মাথা-মুখ-গলার চারপাশে ছড়িয়ে আছে অযত্নে। রোগা হাড়পাঁজরা বার করা চেহারা! গায়ের জামাটার একজায়গায় একটু ছেঁড়া, বেশ পুরানো জামা। হঠাৎ মালার মনে পড়লো কাজল পয়লা বৈশাখে একটা নতুন জামা চেয়েছিলো, মালা জামা না দিয়ে ধমক দিয়েছিলো ওকে। তারপর থেকে পুরানো জামাই শুধু পরে, নতুন জামা আছে, কিন্তু পরে না কাজল। আহ, যে জামাটা পরে আছে সেটা এককালে হালকা সবুজ ছিলো, এখন এত পুরানো যে খুবই বিবর্ণ হয়ে গেছে, রঙ বোঝার উপায় নেই।

চোখ বুজে এমন করে শুয়ে আছে কাজল যেন আর কোনোদিন চোখ মেলবে না। মালার বুকটা আবার ছ্যাঁত করে উঠলো সেই বহুদিন আগের মতো। সেই সেবার যখন খুব শ্বাসকষ্ট হয়ে মেয়ে মর মর হয়ে গেছিল।

হঠাৎ মালার চোখে জল এসে পড়লো। সে এতদিন দেখতে পায়নি কেন? কেন মেয়েটাকে দেখতে পারে না সে? পড়াশোনায় আগে ভালো ছিল কাজল, এখন বছর কয়েক ধরে সেখানেও ভালো করছে না। কেন? তাঁরই অবহেলায়? বহুদিন আগের কথা মনে পড়লো-তখন কাজল খুব ছোটো, ইস্কুলেও ভর্তি হয় নি। তখনই যা একবার দেখিয়ে দিত তাই মনে থাকতো ওর। ওর মধ্যে বুদ্ধির ঝকঝকে ঝিলিক দেখে মাঝে মাঝে সে বিহ্বল হয়ে যেত। সেই মেয়ে হারিয়ে গেল তাঁরই অবহেলায়? হে ঈশ্বর!

সে আলতো করে ওর গায়ে হাত রেখে ডাকল, " কাজল! "

কাজল জ্বরে রাঙা চোখ মেলে মাকে দেখে ধড়মড় করে উঠতে গেল। কোনোরকমে বললো," আমি তো কাজগুলো করেছি। হয়নি ভালো মতো?"

মালা ধরা গলায় বলে," জ্বর হয়েছে, বললি না কেন? এই এত জ্বর নিয়ে কাজ করলি? একবার বলতিস যদি! তাহলে---" মালা শেষ করতে পারে না কথা, কেন জানি তার খুব কান্না এসে যায়।

কাজল করুণ হাসে, জামার হাতা তুলে দেখায় ডানবাহুতে কালচে একটা দাগ, ওর মা রেগে গিয়ে খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকা দিয়েছিল একদিন। বলে, " ভয়ে বলি নি। যদি আবার খুন্তি গরম করে চেপে দাও এখানে?"

মালা ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকে, কিছুই বলতে পারে না। চারিদিক হঠাৎ যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। পাশের ঘরে কাজলের ভাই আর বাবা কথা বলছে, টিভিতে খবর পড়ছে একটা পরিচিত গলা, পাশের বাড়ীর রান্নাঘর থেকে রান্নার শব্দ আসছে, প্রেশার কুকারের হুইসিল - সব যেন হঠাৎ করে মুছে যায় মালার কাছে।

মনে পড়ে সেইদিনটা, কাজলকে জোরে চেপে ধরে গরম খুন্তি চেপে ধরেছিল ওর বাহুতে। মেয়েটা ওর ভয়ার্ত চোখ দুটো মেলে তাকিয়েছিল মালার দিকে। কিচ্ছু বলে নি মুখে, শুধু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছিল। কাউকে বলে নি। পরে মালা যখন বার্নল লাগিয়ে দিয়েছিল, তখনো ভয়ে সিঁটিয়ে ছিল। এতদিন পরে কেন ঐ কথা বলছে?

কাজলের হাসিটা কেমন অভিমানে ভিজে যায়। আস্তে আস্তে বলে," আমার কেউ নেই। কে আর আমায় বাঁচাবে?"

মালা বলল," মাথায় জল দিয়ে দিই, চুপ করে শো দেখি। খুব জ্বর তোর।"

কাজল আবার বিছানায় লুটিয়ে পড়ে যায়। পাশে রাখা চাদরটা টেনে নেয় গায়ের উপর। মালা পাশের বাড়ী থেকে কয়েক টুকরো বরফ চেয়ে আনে। কাজলের কপালে বরফ ঘষার সময় ও উঁ উঁ করে।

মালা বলে," কী রে, লাগছে নাকি?"

কাজল মায়ের হাত সরিয়ে দেয় কপাল থেকে। বলে," খুব কষ্ট হচ্ছে মা। বরফ দিয়ো না। তোমার ঠান্ডা হাতটা বরং রাখো।"

একটু পরে, যখন একটু ভালো লাগছে ওর, তখন মালা গেল ছেলেকে আর স্বামীকে খেতে দিতে। ওরা যখন খাচ্ছে, তখন একটু দুধ গরম করে এনে দিল কাজলকে, সঙ্গে সেঁকা পাঁউরুটি। কাজল খেতে চাইছিল না, মালা একটু জোর করল। কাজল বললো," না খেলে আবার গরম খুন্তি লাগিয়ে দেবে?"

মালা এমনিই বলল, " হ্যাঁ।"

কাজল ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বিছানায় পড়ে গেল অচেতন হয়ে।

তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডেকে আনল কাজলের বাবা, তিনি যখন এলেন তখন কাজলের জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার ভালো করে পরীক্ষা করে দেখলেন, বললেন, " খুব দুর্বলতা, অপুষ্টি। রক্তচাপও খুব কম। সাবধানে রাখবেন মেয়েকে। যত্ন করবেন। আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি আর একটা ভালো ভালো খাবারের তালিকা করে দিচ্ছি। ওগুলো খাওয়াবেন। এই বেড়ে ওঠার বয়সে এত অপুষ্টি, এ তো ভালো কথা নয়।" ডাক্তার ওষুধ লিখে আর ডায়েট চার্ট তৈরী করে দিয়ে চলে গেলেন।

সারারাত কাজলের খুব জ্বর, ভুল বকছিল জ্বরের ঘোরে। মালা বিছানার পাশে বসেছিল, ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। একবার ওর হাতের পোড়া দাগটার উপরে হাত বোলাতে বোলাতে চোখে জল এলো তার। মনে মনে সে বলছিলো, "কাজল, তুই ভালো হয়ে উঠলে আমরা চারজন বেড়াতে যাবো। তুই আমি তোর ভাই তোর বাবা। সমুদ্র ভালো লাগে তোর? তাহলে আমরা সমুদ্র দেখতে যাবো। তোকে ভালো ভালো জামা কিনে দেবো। কচিকলাপাতা রঙের যে জামাটা তোর পছন্দ ছিলো, সেইরকম একটা ঠিক কিনে দেবো। তুই ভালো হয়ে ওঠ। আর কখনো তোকে কোনো কষ্ট দেবো না। "

কয়েকদিন জ্বরে ভুগে ভালো হয়ে উঠলো কাজল। তার কদিন পরেই সে চলে গেল ভিনরাজ্যের ইস্কুলে পড়তে। সেটা বেশ ভালো নামী ইস্কুল, কাজল স্কলারশিপও পেয়েছে, বাবাই সব ব্যবস্থা করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সেখানে ইস্কুলের হোস্টেলে থাকবে কাজল।

ট্রেনে তুলে দেবার সময় খুব কাঁদছিল মালা। কাজল ট্রেনে ওঠার আগে মাকে বাবাকে প্রণাম করলো, সে বোধহয় ভাবছিলো মায়ের তো ভালোই হলো, যে নিত্য তার মেজাজ খারাপ করে দেয় তাকে তার দেখতে হবে না।

মালা ভাবছিলো, "বলা হোলো না, আর কোনোদিন কি বলা হবে? ভালোবাসার কথা বলা এত কঠিন! অথচ রাগের কথা তো কত বলেছে সে, কত বকুনি দিয়েছে তার কালো মেয়েকে! আসল কথাটা বলা হোলো না।"

২।
আবার সেই রেলস্টেশন। বহু বছর পরে, প্রবাসিনী কাজল বাড়ী ফিরছে। উ:। কত বছর বাইরে ছিল সে! কতদিন পরিচিত কাউকে দেখেনি। বন্ধুদের দেখেনি, মাকে দেখেনি। ভাইকে দেখেনি। বাবাকে দেখে নি।

স্টেশনে ওকে নিতে এসেছিল সবাই। প্রাথমিক উচ্ছ্বাসটুকু কেটে যাবার পর এখন সবাই বেশ শান্ত। ট্যাক্সিতে জিনিসপত্র তুলে গুছিয়ে বসেছে সব। সারাটা দুপুর আর বিকেল খুব হৈ চৈ চললো। তারপরে রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিয়ে সবাইকে শুতে পাঠাল মালা। সারাদিন যা হৈ হুল্লোড় গেছে!

ঘরে নীল ঘুম বাতি জ্বলছে। সারাদিনের ক্লান্তির পরে নি:সাড়ে ঘুমিয়ে গেছে কাজল। মালা এসে চুপ করে ওর বিছানার পাশে বসল। মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে রইল বহুক্ষণ। কত বছর ধরে তাঁর অদেখায় কত সুন্দরী হয়ে উঠেছে কাজল! এমন রেশমের মতো চুল হয়েছে ওর? ভাবতে ভাবতে বিছানা জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ওর রেশমকোমল কেশগুচ্ছ হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে নাড়েচাড়ে মালা। "আহা বেঁধে দিতে হবে কাল!" ভাবে মালা।

ঘুমের ঘোরে পাশ ফেরে কাজল। মালা ওর হাতের পোড়া দাগটাতে হাত রাখল। নি:শব্দে কাঁদছিল সে। মুখ নামিয়ে সেখানে চুমো খেতেই জেগে গেল কাজল। প্রথমে অনেককাল আগের মতো লজ্জায় কুঁচকে গেল। তারপরে মাকে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে মায়ের বুকের মধ্যে মুখ রাখলো। বহুকাল পরে দুটি তপ্ত প্রাণ একসঙ্গে জুড়োচ্ছে আজ। বাইরে অঝোরধারে নামলো বৃষ্টিধারা।
***


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাষাহীন...

তুলিরেখা এর ছবি

ভাষাহীন ভাষা আসলেই খুব শক্তিশালী। তবে কিনা আমা হেন দুর্বলের পক্ষে বোঝা মুশকিল হয়।
ভাষাময় কমেন্টের অপেক্ষায় রইলাম। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

কি করি বলুন, মা -বাবা কিংবা অন্য যে কোন সর্ম্পক নিয়ে লেখা পোষ্টগুলো গোগ্রাসে গিলি... আবেগের ঠেলায় শব্দ হাতড়েও পাওয়া যায় না...লেখা ভালো লেগেছে--এটুকু জানিয়েই তৃপ্তি!! *তিথীডোর

তুলিরেখা এর ছবি

আবেগের ঠেলায় শব্দ হাতড়ে পান না?
খুব মুশকিল! হাসি

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

ভালোবাসার কথা বলা এত কঠিন! অথচ রাগের কথা তো কত বলেছে সে ..............
গল্পটা পড়তে বেশ ভাল্লাগলো আপুনি হাসি

---------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....


-----------------------------------------------------------------------------------------------------

" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ মউ।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

হুমমম...

আপনার লেখার হাত ভালো বলে দাঁড়িয়ে গেছে, কিন্তু এইটা আপনার লেভেলের হয় নি। কাজল আর মালার একটা কনফ্রন্টেশন (ঝগড়াই বলছি তা না, মোট কথা একটা আবেগের বহিঃপ্রকাশ) না থাকায় সেই শেষ হয়্যা হৈল না টাইপ হয়্যা গ্যালো।

তুলিরেখা এর ছবি

বলি মূলত পাঠক, এই ছিলো আপনার মনে? ঝগড়া শুনতে চান? আরে হলো তো ঝগড়া মায়েঝিয়ে, ভীষণরকম, ভাষাও খুব শাণিত ছিলো, উদা দেখুন। %$#@*&*&@!&^*

কিছু বুঝলেন?
এই কারণেই কার্টেন ফেলে দিয়েছি ঝগড়ার সময়ে। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা এর ছবি

সিরিয়াসলি বললে বলতে হয় মেয়েটা নীরব প্রতিবাদ করে গেছে একটা অন্যায়ের, একটা অপরাধের যেটার প্রতিকারের ক্ষমতা তার ছিলো না, আশেপাশের সমাজও তাকে সাহায্য করবে না কারণ সংস্কৃতিটাই যে সেরকম নয়। সে তার মতন করে প্রতিবাদ করেছে।

মেয়ের মায়ের দিক থেকে দেখলে দেখা যায় ভুল বুঝতে পেরে মা দীর্ঘ প্রায়শ্চিত্ত করেছে কিন্তু তখন তারও উপায় নেই অসেতুসম্ভব সেই দূরত্ব অতিক্রমের।

অবশেষে সবই কালের হাতে পড়ে ঠিক হলো।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

লেখাটা ভালো। খুন্তির ছ্যাঁকা জায়গাটা অমানবিক। এটা না লিখলেই হতো।
লিখতে থাকুন আরো।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ শুভাশীষ।
অমানবিকের দেখেছেন কি আর! জীবনের আসল গল্পগুলো যদি শোনেন, তাহলে বিস্ময়ে বেদনায় মূক হয়ে যাবেন। অনেক পালিশ দিয়েও থেকে যায়, কিছুতেই রক্তচিহ্ন মোছা যায় না।
জন্ম থেকে অযত্নে হেলাফেলায় বিনা কারণে বাপমায়ের হাতে মার খেতে খেতে একটা বাচ্চা মেয়ে ভাবতো অপরাধটা তার কী! তাকে তার মহিলা অভিভাবকরা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছিলো "আহারে তোর বাপের কত সাধ ছিলো পোলা হইবো। তুই হইলি কিনা মাইয়া! আর মাইয়া তো মাইয়া আবার এমন পাতিলের তলের মত কালো! মুখপুড়ী তোর ব্যবস্থা করতে গিয়া তো তোর বাপে দেউলিয়া হইয়া যাইবোগা! সাধে কি মারে আর।" অনেকদিন থেকেই জ্বর হতো মেয়েটার, কোনো চিকিৎসা হতো না, কালো মেয়ের আবার চিকিৎসা কিসের! সবই তো লস! শেষে মামাবাড়ী বেড়াতে গিয়ে সেখানে ডাক্তার দেখানোর পরে ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। দাতব্য হাসপাতালে দেওয়া হয় মেয়েটাকে, সেখানে কিছুদিন ভুগে মেয়েটা মরে গিয়ে বেঁচেছে। বয়স হয়েছিলো বারো। এর গল্প চাঁছাছোলা ভাষায় লিখলে কী দাঁড়াবে ভাবুন তো একবার।

ভাবিনা আজকাল আর! এর চেয়েও ভয়ানক কাহিনি ও তো নিত্য বোনা হয়ে চলেছে আমাদের চারপাশে। আমার দুবলা কলম এসব লেখার উপযুক্তও নয়, তবু মাঝে মাঝে-

ভালো থাকবেন।

----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

তুলিরেখা, আপনার এই গল্পটা লিখুন না চাঁছাছোলা ভাষায়। পড়ার ইচ্ছে জানিয়ে গেলাম।

তুলিরেখা এর ছবি

বলি, আমারে কি হুমায়ুন আহমেদ পাইলেন? তিনি ইচ্ছা করলে পারেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আমি সহমত আপনার সাথে। নানান বাজে কিছু ঘটছে দুনিয়াতে। বাংলাদেশেও। মেয়েদের প্রতি অনেক খারাপ কিছু হচ্ছে হরহামেশাই। সুতরাং গল্পে তা উঠে আসবেই।

খুন্তির ছ্যাঁকা গল্পটিতে অনেকটা আই-ক্যাচারের মতো কাজ করেছে। অমানবিকতার একটা কাল্পনিক পাল্লা আমাদের মাথায় কাজ করে। ফলে বাকী গল্পে খুন্তির ছ্যাঁকা মাথা থেকে সরে না। অল্পকথায় তাই লিখেছিলাম-

খুন্তির ছ্যাঁকা জায়গাটা অমানবিক। এটা না লিখলেই হতো।

মানে আপনার গল্প পুরা জায়গায় দড় ( মানে গাঁথুনী শক্ত ) থাকতো। এসব আমার ব্যক্তিগত মতামত। চোখ টিপি

আপনি ভালো লিখছেন। আরো লিখুন। ভালো থাকবেন।

তুলিরেখা এর ছবি

সেই উদ্দেশ্যেই তো ওটা বলা। যাতে শুরু থেকে শেষ অবধি ওটাই পাঠকের মনে তীক্ষ্ন হয়ে ফুটতে থাকে। সাদাসিধে সবই তো ভালো চলছে, এই সব বেশ চলছে চলুক এর আড়ালে আমাদের চেনা মধ্যবিত্ত সংসারেও যে কত ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে থাকে, সবচেয়ে সাংঘাতিক হলো সমাজ এটাকে প্রতিরোধ করে না, অপরাধ বলে মনেও করে না-"তোমার পাঁঠা তুমি ঘাড়ে কাটো কি লেজে কাটো তোমার ব্যপার। " আইনের কথা তো না বলাই ভালো।

ভুল কিছু যে আছে সেটা কেবল অস্বীকার করে করেই আমরা কাটিয়ে দিই। আর আমাদের শিশুরা বাড়ীতে ইস্কুলে মারধোর খেতে খেতে প্রশ্ন না করতে করতে মেনে নিতে নিতে আদেশ পালন করতে করতে একসময় মেরুদন্ডটাই নরম দুর্বল করে ফেলে, আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে কি, অঙ্কুরেই তো সে জিনিস নষ্ট! সে তো ছোটো থেকে দেখে আসছে কেবল সবলের কথা মেনে নিতে আর দুর্বলের উপরে হম্বিতম্বি করতে।

বড় হয়ে যখন সে দেখে চোর নেতা গুন্ডা পুষে ইয়া বড় গলায় এই করবো সেই করবো বলে যাচ্ছে, সে প্রতিবাদ করতে পারে না, সে দেখে ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না, সে প্রতিবাদ করতে পারে না, বরং ঘুষ দিতে শুরু করে।

আসলে প্রতিবাদের প্রথম উন্মোচোন তো হওয়া উচিত সেই ছোট্টো বেলাতেই যখন সে প্রহারকের উদ্যত হাতের সামনে নিজের অধিকার রক্ষায় কোনো একটা নম্বরে ডাক পাঠাতে পারবে, রাষ্ট্র তার ভবিষ্যতের নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যবস্থা করে দিতে পারবে ফস্টার কেয়ারের। ইস্কুলের মারকুটে মাষ্টারদের যেদিন দলে দলে জেলে পাঠানো হবে ভায়োলেন্সের জন্য। শুরুটা ভালো না হলে পরে ভালো কিকরে হবে? একতলা না করে কখনো কি দোতলা করা যায়?
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ও আপনি ওটাকে আই-ক্যাচার করতে চাইছেন। তাইলে ঠিক আছে। হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

স্নিগ্ধাজী ঈঈঈঈ।
আপনে কই?

----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

স্নিগ্ধা এর ছবি

কী হয়েছে মা তুলিরেখা? কী বারতা?

তুলিরেখা এর ছবি

আপনার দেখা না পাইয়া চিন্তিত ছিলাম। এখন নিশ্চিন্ত হইলাম। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

স্নিগ্ধা এর ছবি

বৎসে, যাক একজন অন্তত পাওয়া গেল যে আমাকে দেখতে পারে, আমার জন্য চিন্তিত হয়(এখানে একইসাথে হতভম্ব এবং বিগলিত হওয়ার ইমো দেঁতো হাসি )!

গল্পটা নিয়ে কিছু বলি নি কেন জানেন? প্রথম কথা, নিজে মেয়ে বলে (এবং মা বলেও) জানি এরকম ঘটনা অনেক ঘটে, অনেক। 'এবিউজ' এর পর্যায়ে না গেলে কি আর খবর হয়? অথচ এরকম ব্যবহার যে একটা বাচ্চাকে কোথায় ঠেলে দিতে পারে, তা যদি মায়েরা বুঝতেন! আরও খারাপ লাগে যখন সেই মা'টি মানুষ খারাপ না হয়েও এই অনর্থক নিষ্ঠুরতাটা করতে থাকেন, এর ফলাফল কী হতে পারে সেটা না বুঝেই, না ভেবেই।

দ্বিতীয় কথা, আপনি এই গল্পে (আমার সন্দেহ) একটা চালাকি করেছেন হাসি
কিছু কথা বলবেন না বলে, ছোটখাটো একটা উল্লম্ফন দিয়ে শেষে মা আর মেয়ের মধ্যেকার দূরত্বের অবসান দেখিয়েছেন। সেটা করতে গিয়ে গল্পটার বুনোট (মূলত কু-চিন্তক আর শুভাশিষের মন্তব্য দ্রষ্টব্য) একটু মার খেয়েছে।

খুন্তির ছ্যাকা দেয়া মায়ের আরেকটু আত্মপীড়ন দরকার ছিলো!

লিখে ফেলুন না সেই মেয়েটির গল্প! মরে বেঁচেছে ঠিকই, কিন্তু আমরা নাহয় তাকে একটু মনে করি, একসময় যে বেঁচে ছিলো সেটারই স্বীকৃতি দেই?

তুলিরেখা এর ছবি

আপনেই আমারে বুঝলেন। কি আর কমু, লোকে তো আমারে দেখলেই উল্টাদিকে দৌড় দেয়। যাক সে কথা। আপনের জন্য কিন্তু অনেকেই চিন্তিত হয়, জন্মদিনের ঝাল পোস্ট টা দেখেন নাই? হাসি

আসলে বারো বছর বয়সে ক্যানসারে ভুগে মরে বেঁচে যাওয়া সেই অবহেলিত মেয়েটির গল্প লিখতে পারার মতন শক্তি সত্যি আমার কলমের নাই, কলম থেকে রক্ত পড়তে থাকলে লেখক তো আর লিখতে পারে না।

আর সত্যি ই এইসব মেয়েরা যারা অবহেলায় অনাদরে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় অত্যাচারে মরে গেছে, আইন যাদের খুনি হিসাবে কাউকে চিহ্নিত করে নি, সমাজ যাদের রক্ষা করে নি, সেই তাদের হত্যার পাপ পরোক্ষে আমাদের সকলের হাতেই রক্ত মেখে দিয়ে যায়। চেনাজানা সংসারেই কত দেখেছি, গর্ভের ভ্রূণটা মেয়ে জানামাত্র খালাস করে এসেছে সেই মা, তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে তারই স্বামী, সেই সন্তানের পিতা। নিজেদের সন্তানকেই হত্যা করে মন হালকা করে ফিরে এসেছে তারা। অথচ তারই পাশের বাড়ীতে একই বয়সী আরেক দম্পতি নিজেদের ছেলে হবে জানতে পেরে উৎসবে মগ্ন। এইসব পাপ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে, সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হোলো কোনো প্রতিকার নেই,প্রতিকার হবার ব্যবস্থাও নেই।

এইসব সত্যি সত্যি পুরো ইমপ্যাক্ট নিয়ে লিখতে পারেন খুব বড় লেখকেরা, আপনাদের মধ্যে হয়তো কেউ যারা খুব কাছ থেকে কাজ করেছেন, খুব আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেছেন। আমার ভাবনাচিন্তা আর প্রকাশভঙ্গী খুব সীমিত, আমার সে সাধ্য নাই।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাফি এর ছবি

বড় ভাল লাগলো

তুলিরেখা এর ছবি

শুনে আমার ও। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অজয় দেবঘন নাই চোখ টিপি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তুলিরেখা এর ছবি

হায় অজয়!
কিন্তু আপনার মতটা তো খুইলা কন না! চিন্তিত
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ওডিন এর ছবি

তুলিরেখা লিখেছেন:

আসলে প্রতিবাদের প্রথম উন্মোচোন তো হওয়া উচিত সেই ছোট্টো বেলাতেই যখন সে প্রহারকের উদ্যত হাতের সামনে নিজের অধিকার রক্ষায় কোনো একটা নম্বরে ডাক পাঠাতে পারবে, রাষ্ট্র তার ভবিষ্যতের নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যবস্থা করে দিতে পারবে ফস্টার কেয়ারের। ইস্কুলের মারকুটে মাষ্টারদের যেদিন দলে দলে জেলে পাঠানো হবে ভায়োলেন্সের জন্য।

শুধু এই মন্তব্যটাই একটা আলাদা পোস্ট হিসাবে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।

---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। চিন্তিত

তুলিরেখা এর ছবি

কি আর বোলবো ওডিন, দেখি আর মন কেমন করে। কিছু করার নিজের তো কোনো সাধ্য নাই, কোনো অধিকারও নাই। শুধু মনে হয় যাদের আছে তারা যদি করতো! তারাই দেখি কেমন শক্ত শক্ত করে বলে, "আমার বাচ্চাকে আমি পিটাই তোর তাতে কী রে? আমার বাচ্চার ভালো আমি বুঝবো।"

মাস্টারেরা পিটিয়ে পুটিয়ে সিংহশিশুদের ভেড়া বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে, তারা ই দেখি বলে "আহা, উনি পিটিয়েছেন বলেই তো আমি মানুষ হয়েছি।" আহা, কথা শুনে সেই একেবারে তর হয়ে যেতে হয়।

তাই আমাদের রাজনীতি সমাজনীতি পথঘাট আপিসকাছারি এমনকি আমাদের চিন্তাভাবনার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যন্ত হায়েনায় ভরে গেছে, আমাদের সিংহরা যে সব ভেড়া হয়ে গেছে! কোথাও যে আমাদের আত্মশক্তি বিকাশের অবস্থা নেই!
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ওডিন এর ছবি

সাধ্য আছে কি না জানি না- তবে অধিকারের ব্যপারটাতেই মার খেয়ে গেছি।

মাসখানিক আগে এক নতুন আত্মীয়ের বাসায় বসে আছি, ছোট্ট বাচ্চা দুষ্টুমি করতে করতে পড়ে গিয়ে গ্লাস ভেঙ্গে ফেললো। ভদ্রমহিলা সাথে সাথে আমাদের সামনেই বাচ্চাটাকে পেটানো শুরু করলেন। - শুধু বাচ্চাটাকে টেনে নিয়ে এসে বললাম মারছেন কেন। তখন উনি আমাকে অধিকারবিষয়ক ভাষন দিলেন, এরমধ্যেই বাচ্চাটাকে আরো দুইটা চড়ও বসিয়ে দিয়েছেন। আমার কিছু বড়ধরনের সমস্যা আছে- এগুলাতে মাথা ঠিকমত কাজ করে না। আমি শুধু বলেছিলাম এরপরে ওকে চড় দিলে আমিও আপনাকে চড় দেব। এরপরে অনেক কিছুই হল আর রেজাল্ট হচ্ছে আমার ছায়া এখন ওইবাড়ির ত্রিসীমানায় নিষিদ্ধ, আর আমার মামামামি এখনো আমার সাথে কথা বলা শুরু করেন নি।

স্কুলে প্রথম মার খেয়েছিলাম কোন দুষ্টুমি বা পড়া না পারার জন্য না- আমি শুধুমাত্র বাঁ হাতে লিখি বলে!

সাইফ ভাই আর আপনার এই লেখা পড়ার পরে অনেকবারি ভেবেছিলাম কিছু লিখবো এইস নিয়ে- কিন্তু আপনার কথা ধার করেই বলি- কলমে যখন রক্ত ঝরে- কিভাবে তখন লেখা সম্ভব!

---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। চিন্তিত

আহির ভৈরব এর ছবি

তুলিরেখা, খুব ভালো লাগলো লেখাটা, বেশ ক'বার পড়লাম, ভাবলাম একটু জানিয়ে যাই।

শারিরীক মারামারি তো বটেই, আমাদের দেশে পরিবারের মধ্যে এবং স্কুলগুলিতে ভীষণ অপমানকর কিছু ব্যবহার প্রায়ই করা হয় শিশুদের প্রতি। যেমন পড়াশুনায় তেমন সুবিধা করতে পারছে না এমন একটা বাচ্চাকে ফ্রী-লি গাধা-গরু-অপদার্থ ইত্যাদি বলে থাকেন অভিভাবক/শিক্ষকরা। এতে করে একটা বাচ্চার আত্মবিশ্বাস কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এ বিষয়টি তারা ভেবে দেখেন না। একটা বাচ্চার পড়া না পারার বহু কারণ থাকতে পারে, বাচ্চাটি ডিস্‌লেক্সিক হতে পারে, আরো নানা রকম সমস্যা থাকতে পারে। এবং পড়াশুনায় খারাপ হলেই যে একটা বাচ্চা অপদার্থ হয় তাই বা কেমন কথা? এমন একটি বাচ্চার অন্যান্য গুনগুলি তো গুন হিসাবে বিবেচিতই হয় না, বরং সেগুলি যেন আরো বড় দোষ হয়ে যায়! আমার একটি বন্ধু ছিলো, পড়াশুনায় মোটেই ভালো ছিলো না, কিন্তু গান গাইতো অপূর্ব! তার বাবা-মা এবং শিক্ষকরা যে কী প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণা দিতো মেয়েটাকে, আর কী বলব! আর কথায় কথায় গানের খোটা তো ছিলোই, "পড়াশুনায় ঘন্টা, গান তো ঠিকই মনে থাকে!", যেন এটা একটা অপরাধ! মেয়েটার পড়াশুনা তো হলোই না, গানও হলো না, স্কুল শেষ হওয়ার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচলো - অথবা বাঁচলো না - আর কোনোদিন দেখা হলো না বন্ধুটির সাথে।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

তুলিরেখা এর ছবি

কী আর বলবো বলুন! এসব এত দেখেছি যে নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের নানামুখী প্রতিভাই যে মানবজাতিকে আলোর পথে অগ্রসর করে এসব তো অজানা নয়। কিন্তু ওসব লাটসাহেবী নাকি আমাদের জন্য না, আমাদের " ধুরন্ধর চালাক" অভিভাবকেরা ছেলেপুলেদের খুব ভালো চান কিনা, তাই ঠেলে গুঁতিয়ে মুখস্থ করিয়ে সেই লাইনে ঢোকান যেখানে নাকি ভালো "চাকুরি" আছে। সত্য কথাই। "চাকুরি"। কী আর বলা যায়।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শারীরিকভাবে না, যে মায়েরা এমন কি পূর্ণবয়স্ক সন্তানকে মানসিকভাবে অত্যাচার করে! তেমন গল্পগুলো কেমন?

গল্পটা বেশ লেগেছে। মা হিসেবে মালা একটা সময়ে যা করেছে সেটা ঠিক করেনি মোটেও। পরিণামে মেয়েকে হারিয়েছে চোখের সামনে থেকে। মায়ের সব কার্যই সবসময় সঠিক হয় না। সেই ভুলগুলো চোখে পড়ে অনেক বড় খেসারতের পর!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তুলিরেখা এর ছবি

ভুল করলে খেসারত আসলে মানুষকে দিতেই হয়। আগে বা পরে তাতে কি বা আসে যায়?
আসলে হয়েছে কি এসব মানসিক টেক্সচার বিষয়ে আমার দুবলা কলমে লেখাটা ভালো কথা নয়। এসব বড় বড় লেখকের লেখার কথা, যেমন ধরুন হুমায়ুন আহমেদ । কিন্তু ওঁর সাম্প্রতিক লেখাগুলো পড়ে এমন মনখারাপ হয়! কী ছিলো কী হয়েছে! আচ্ছা কেউ কিছু বলেন না ওঁকে?
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।