উর্বীরূহ

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: রবি, ১৯/০৮/২০১২ - ৩:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১। প্রায়ান্ধকার ঘরে চুপ করে বসে আছি সেই দুপুরের পর থেকে। একদম চুপ। দূরের টেবিলের উপরে হালকা ডোমপরানো লাল আলোটা জ্বলছে, থ্রী-ডি মুভি ক্যামেরা যুক্ত আলট্রা-মাইক্রোস্কোপ সিস্টেমও সেই একইরকম সেট করা আছে। মাইক্রোস্কোপ-স্টেজের উপরে সেই স্লাইড, তাতেই সেই ভয়ানক স্যাম্পেল। সবচেয়ে আধুনিক অ্যানালাইজার যুক্ত আছে সিস্টেমে, স্ক্রীণে ত্রিমাত্রিক প্রোজেকশন করে করে সংখ্যাতালিকা দিয়ে দিয়ে নির্ভুলভাবে দেখিয়ে দিয়েছে সেই অ্যালিয়েন স্ট্রাকচার, সেই অদ্ভুত রেপ্লিকেশন, তার ভয়ানক প্রক্রিয়া। কী ভয়ানক সেই সত্য!

আমার শেষ আশা, অন্য আরো যে তিনজন স্যাম্পেল পরীক্ষা করতে নিয়েছে তারা অন্যরকম ফলাফল পাক, তাদের নিরীক্ষা বলুক এ সত্য নয়! কিন্তু মনের ভিতরে জানি তা হবে না, এ শুধু আমার কুটো আঁকড়ে ধরার চেষ্টা।

বাইরে নিশ্চয়ই এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে আসছে। পাখপাখালিরা ঘরে ফিরছে, রাতের আশ্রয়ে শান্ত হয়ে যাবার আগে পাখিরা খুব কিচিরমিচির করে। আমার ইচ্ছে করছে সব সুইচ অফ করে বেরিয়ে যাই ঘরটা থেকে, তারা ফুটতে থাকা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলি, আ:। কিন্তু পারছি না, আমার শরীরমন অবশ হয়ে গেছে যেন।

গলায় ঝোলানো স্ট্রিং এ লকেটের মতন ঝুলে থাকা কমুনি-রিংটা টুং টুং করে উঠলো, আবীরা কথা বলতে চায়। আমি তাকে সামনের থ্রীডি স্ক্রীনে প্রোজেক্ট করে বললাম," হ্যালো আবীরা। "

আবীরা সবচেয়ে জুনিয়র ইনভেস্টিগেটর আমাদের গ্রুপে, কিশোরীর মতন নরম মুখচোখের মেয়েটি কাজেকর্মে দারুণ চটপটে। ভালো বলিয়ে-কইয়েও, গ্রুপ মীটিং এর সময় বেশীরভাগ প্রেজেনটেশানই ও দেয়।

আজকে ওর চোখমুখ শুকনো, চুল এলোমেলো, চোখের নিচে কালো ছায়া। আমার ভেতরে কোথায় যেন মোচড় লাগে, দ্রুত নিজেকে সামলাতে সামলাতে অল্প হাসির একটা চেষ্টা করে বলি, "বলো আবীরা , কী খবর তোমার অ্যানালিসিসের? "

আবীরার ঠোঁট কেঁপে ওঠে, চোখ বড় বড় হয়ে যায়, যেন দুঃস্বপ্নের মধ্য থেকে প্রাণপণে বেরোতে চেষ্টা করছে। দু'বারের চেষ্টায় ওর কথা ফোটে, আমি শুনতে পাই, "সুপ্রতীক, আমার ...আমার অ্যনালাইজার খুব অদ্ভুত তথ্য দিচ্ছে। আমি বারে বারে চেক করে দেখলাম একই জিনিস কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।" ওর গলার স্বর শুধু না, সারা শরীর কাঁপছে।

আমার ভিতরে ঝড়, তবু আমি ওকে শান্ত হতে বলি, বলি," আবীরা, তুমি শান্ত হয়ে বসো তো চেয়ারে। তারপরে আস্তে আস্তে আমাকে বলো কী দেখেছ। উত্তেজিত হয়ো না, কোনোরকম দুশ্চিন্তা কোরো না, একেবারে নির্মোহ পর্যবেক্ষকের মত বলো কী দেখেছ।"

আবীরার ত্রিমাত্রিক চেহারা আস্তে আস্তে বসে পড়লো তার চেয়ারে। গভীর শ্বাস টেনে সে বললো,"সুপ্রতীক, তুমিও কি অদ্ভুত কিছু পেয়েছ?"

ওর আশা-আশঙ্কা মেশানো কাঁপা কাপা স্বর শুনে আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো, "না, না, আমি অদ্ভুত কিছু পাই নি, পাই নি, পাই নি।"

দীর্ঘশ্বাস গোপণ করে আমি ওকে বলি, "তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই তোমার ল্যাবে আসছি। আমার অ্যানালিসিসের রিপোর্ট আমি ডক্টর প্রকাশকে ট্রান্সমিট করে দেবো আর কিছুক্ষণ পরে। এতক্ষণ আমি দোটানায় ছিলাম।"

আবীরার চোখ জলে ভরে গেছে, অশ্রুরুদ্ধ গলায় সে বললো, " সুপ্রতীক, তুমিও একই তথ্য পেয়েছ, না? আমি ভাবছিলাম...আমি আশা করছিলাম...হয়তো যা দেখেছি ভুল, হয়তো সবটাই দু:স্বপ্ন একটা।"

"আবীরা, শান্ত হও। চুপ করে বসো, গভীর করে শ্বাস নাও। আমি মিনিট দুয়েকের মধ্যে এসে পড়ছি।"

আবীরার ল্যাবে তার থ্রীডি ভিউয়ারে দেখলাম সেই একই দৃশ্য। মানসিকভাবে তৈরীই ছিলাম, তবু মনটা নতুন করে অস্থির হলো। ল্যাব লক করে দু'জনে ক্লান্ত বিধ্বস্তের মতন বেরিয়ে আসি। বাইরে ঝিরিঝিরি হাওয়া, গাছের পাতায় মর্মর, সন্ধ্যার আকাশ ভরে ফুটে উঠছে অগণিত তারা। বুক ভরে শ্বাস নিই, আর কতদিন নিতে পারবো? এই সুন্দর সবুজ জগৎ, এই ফুলপাতাপাখি--সবই ইতিহাস হয়ে যাবে?

কফিশপ থেকে দু'কাপ কফি কিনে দুজনে পার্কের বেঞ্চে গিয়ে গিয়ে বসি। কিছু কথা হয় না, দু'জনের একজনও কথা বলতে পারি না। কিম জিলুং তার কয়েক মাস বয়সের ছেলেকে প্যারামবুলেটরে বসিয়ে প্র্যাম ঠেলতে ঠেলতে ধীর পায়ে ফিরে যাচ্ছে। আমাদের কাছে এসে হাসলো, জিজ্ঞেস করলো আমরা কেমন আছি। আমরা হেসে বললাম ভালো। কিমের ছেলেটা ভারী মিষ্টি দেখতে। খলবল করে হাসে।

কিম জিলুং চলে গেল ছেলে নিয়ে। ও সারাবছর পুরোহাতা পোশাক পরে। যুদ্ধের সময়ে ও ছিলো বাচ্চা মেয়ে, বোমায় ও খুব মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছিলো, বাঁচার আশাও ছিলোনা। ডাক্তারদের যত্নে ও চেষ্টায় সে বাঁচলো। এখন কিমের সুন্দর সংসার, নতুন মা হয়ে সে পরমানন্দে আছে।

এইসব যুদ্ধ হত্যা মৃত্যু-এত এত ভুল মানবজাতি করেছে, তবু তারও পরে মানুষের ভালোত্ব বেঁচে থেকেছে। তারও পরে আছে ভুল স্বীকার অনুতাপ ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করতে পারা, আছে বলেই সংসার সহনীয় আজও। কী হবে এর পরে?

ডক্টর প্রকাশ ফোন করে জানান কাল সকালে জরুরী মীটিং। আবীরা নিজের ঘরের দিকে চলে যায়, আমি টলতে টলতে যাই নিজের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে। রাতটুকু বিশ্রাম করে নিতে হবে, নাহলে কালকে সকালে আরো গন্ডগোল করে ফেলবো।

এক গেলাস দুধ আর আধখানা পাউরুটি খেয়ে ঢকঢক করে আধবোতল জল পান করে শুয়ে পড়লাম। ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমের মধ্যে সারারাত অদ্ভুত অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম ঝলমলে পাথরের গাছপালা লতাপাতা পশুপাখি সব চুপ করে আছে, সেই পাথরপুরীর মধ্যে একা একা ঘুরতে ঘুরতে অপার্থিব এক ভয়ঙ্কর হাসি শুনছি আমি। কাউকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না, হঠাৎ হঠাৎ কোথা থেকে আর্ত চিৎকার ভেসে আসছে শুধু। শুকনো গলা ভরা তৃষ্ণা নিয়ে জেগে উঠে জল খাই ঢক ঢক করে। বাইরে তখনো কালো রাত। আবার লুটিয়ে পড়ি বিছানায়, কম্বলের নিচে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকি ভোরের অপেক্ষায়।

২। সকালের মীটিংএ আমি যখন পৌঁছলাম তখন প্রান্তিক আর সুকন্যা এসে গেছে। ওদের শুকনো চিন্তিত মুখ দেখে অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে ওরাও একই জিনিস পেয়েছে ওদের পর্যবেক্ষণে।

ডক্টর প্রকাশ নিজের ল্যাবেই ছিলেন, মনে হয় সারারাতই কাজ করছিলেন, তার সাদা ল্যাবকোটের এখানে ওখানে নানা কেমিক্যালের দাগ, চুল এলোমেলো, চোখের নিচে বিনিদ্র রাতের ক্লান্তির ছাপ। তবু মনের স্থৈর্য হারান নি সেটা শান্ত হাসি দেখে বোঝা যায়। এই প্রৌঢ় মানুষটির ভিতরে ভরসা জাগাবার মতন কী যেন আছে! দেখলে মনে হয় হয়তো বিপদ থেকে রক্ষা পাবার একটা কোনো উপায় হবেই।

আবীরা এসে পড়তেই আমাদের মীটিং শুরু হলো। ছোটো কনফারেন্স রুমে প্রোজেকশনের স্ক্রীণ ভয়েস কমান্ডে সক্রিয় করে ডক্টর প্রকাশ বলতে আর দেখাতে শুরু করলেন।

স্ক্রীণে স্যাম্পেলের আণবিক চেহারা ফুটে উঠেছে ত্রিমাত্রিক আকারে। পাঁচটি তন্তু পরস্পরের সঙ্গে জটিলভাবে জড়িয়ে অপরিচিত জ্যামিতি তৈরী হয়েছে। সেই জটিল অণু ঘুরে চলেছে অনবরত, জটিল কৌণিক ঘূর্ণন। ঘূর্ণনটা পুরো বোঝাও যায় না, বাইরের অংশ আর ভিতরের অংশ আর তার আরো ভিতরে অন্য অংশ সব নিজের মতন করে ঘুরছে, তবে ছন্দ ভেঙে যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে জড়ানো চেহারা খানিকটা আলগা হয়ে যাচ্ছে, ছোটো ছোটো লুপের মতন বদ্ধতন্তু বেরিয়ে আসছে। অপার্থিব অজাগতিক ভয়ে শিরশির করে ওঠে মন।

ডক্টর প্রকাশের গলা শোনা যাচ্ছে, "এতক্ষণে তোমাদের চারজনের কাছেই এটা পরিষ্কার যে এই স্যাম্পলে যে জীবনের চিহ্ন পাওয়া গেছে তা ভিন্ন ধরনের জীবন। খুব অদ্ভুত। ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড ভিত্তিক যে জীবন আমরা চিনি, এ তা নয়। এতে ডিএনে নেই, এমনকি আমাদের চেনা প্রোটীনও নেই। এতে আছে সম্পূর্ণ অন্যধরনের মলিকিউল। কিন্তু জীবনের সব চিহ্ন বিদ্যমান, এ পুষ্টিতরল থেকে বস্তু সংগ্রহ করে বেড়ে উঠছে আর প্রতিলিপি বানাচ্ছে ঠিক যেমন ডিএনে নিজের প্রতিলিপি বানায়। তফাৎ হলো যে রেপ্লিকেট করতে গিয়ে সে--" উনি এখানে থামলেন একটু।

শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত। যা আশঙ্কা করছি তাই কি উনি বলবেন?

ডক্টর প্রকাশের গলা আবার শোনা গেল, "পুষ্টিতরলে প্রচুর ডিএনে আর প্রোটীন, স্যাম্পলের এই জীবন্ত অণুগুলোর রেপ্লিকেটিং করার প্রক্রিয়া হলো আশেপাশের থেকে ডিএনে আর প্রোটীন সংগ্রহ করে তা টুকরো টুকরো করে ফেলে তারপরে নতুন করে জুড়ে নিজের উপযোগী দীর্ঘ অণুতে বদলে ফেলা। ডিএনে তে থাকে দু'খানা স্ট্র্যান্ড, এদের পাঁচখানা। আমি সন্দেহ করছি এদের জ্যামিতি উচ্চমাত্রার মোবিয়াস স্ট্রিপের মতন। আমাদের পরিচিত জৈব অণুগুলোকে তাদের দর্পণ প্রতিবিম্বে বদলে দিতে সক্ষম। এরা যদি জীবদেহে সংক্রমণ করে তবে আমাদের পরিচিত জীবজগতের চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে যাবে অতি দ্রুত। ডিএনে বলে আর কিছু থাকবে না। জীবন থাকবে, তবে তা হবে এই অদ্ভুত নতুন ধরনের জীবন, অ্যালিয়েন অণুভিত্তিক জীবন।"

উনি কিছুক্ষণের জন্য চুপ করলেন। আমরা চারটি প্রাণী নির্বাক হয়ে স্ক্রীণের দিকে চেয়ে আছি। আবীরা প্রথম কথা বললো,"কোথা থেকে এ জিনিস এলো আমাদের কাছে? "

ডক্টর প্রকাশ চেয়ারে বসে জলের গেলাসে চুমুক দিলেন। তারপরে বললেন," আজ থেকে ঠিক পঁচিশ দিন আগে উল্কাপাত হয় উত্তরের পাহাড়ী এক গ্রামের কাছে। অবজার্ভেটরি থেকে কনফার্ম করা হয়েছিলো অন্তত ১০-১২ টি মিটিওরাইট পড়েছে। অঞ্চলটি জনবিরল, কাছের গ্রামটিতে আছে মাত্র কয়েকজন মানুষ আর পালিত পশু। এটা পশুপালকদের অস্থায়ী গ্রাম। ওরাই প্রথম উল্কাপাতের মাঠের আশেপাশের গাছপালায় পরিবর্তন আর যে পশুগুলো ঐ মাঠের ঘাস খেয়েছে তাদের মধ্যে অদ্ভুত অসুস্থতা লক্ষ করে। ডক্টর হাসিব মাহমুদ ফিল্ড ওয়ার্কে গেছিলেন একদল সহকর্মী আর ছাত্র নিয়ে। ওরা কয়েকটি মিটিওরাইট সংগ্রহ করে এনেছেন। তার ভিতরে জৈব অণুর অস্তিত্ব তারা সন্দেহ করেছিলেন কারণ এরকম পাওয়া গেছে আগে। কিছু স্যাম্পল আমাদের ল্যাবে তারা পাঠিয়েছেন। এরকম ভয়ানক রকমের জৈব অণু যে পাওয়া যাবে তা আগে কে জানতো! তার চেয়েও সাংঘাতিক ব্যাপার হলো এতদিনে সেই অঞ্চলে কী অবস্থা হয়েছে কেজানে। আমি আজকে বিকালে সেদিকে রওনা হবো। "

শুকনো গলা থেকে কয়েকটা শব্দ কোনোরকমে বার করে বললাম, "স্যর, আমরা?"

"তোমাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যদি কেউ যেতে চাও যেতে পারো কিন্তু আমি তোমাদের তা রেকমেন্ড করি না। তোমাদের বয়স কম, এখনো অনেককিছু করার আছে তোমাদের। "

দু'দিন পরে জীবজগৎ টিঁকে থাকে কিনা সন্দেহ আর তার মধ্যে ইনি বলছেন কিনা অনেক কিছু করার আছে ভবিষ্যতে? আরে, মুন্ডু গেলে খাবোটা কী?

আবীরা উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে বলে,"আমি আপনার সঙ্গে যেতে চাই। আপনি না নিতে চাইলেও আমার যেতেই হবে, না গিয়ে উপায় নেই।" কাল রাতে আবীরাকে একেবারে বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত লাগছিলো, আজকে সকালে একেবারে শান্ত ঠান্ডামাথা দৃঢ়চিত্ত!

আমি, প্রান্তিক আর সুকন্যা উঠে দাঁড়িয়েছি তখন। তিনজনের একজনও কিছু বললাম না কিন্তু আমাদের তিনজনের মুখের দিকে চেয়েই ডক্টর প্রকাশ বুঝতে পারলেন আমাদের আটকাতে তিনিও পারবেন না।

৩। বিকাল থেকে চলা শুরু, অনবরত গাড়ী চলছে। খুব তাড়াতাড়ি আবশ্যকীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরুতে হয়েছে আমাদের। জায়গাটা বেশ দূরে, সারারাত গাড়ী চালিয়ে নিকটতম শহরে পৌঁছানো যাবে। সেখানে কোনো সরাইয়ে চেক ইন করে জিনিসপত্র আর গাড়ী রেখে পরীক্ষানিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হবে সেই পশুপালকদের অস্থায়ী গ্রামে। যদি এখনও সেখানে কেউ থেকে থাকে তাদের সাহায্য আশা করা যায়, তবে ডক্টর জীমান সেখানে এখনও কেউ আছে সেই আশা করেন না।

ডক্টর প্রকাশের মতন এমন নিস্পৃহ নিরাসক্ত ভাবে জীবন ও মৃত্যুকে প্রায় একই দৃষ্টিতে দেখতে পারা বহুকালের সাধনার ব্যাপার। উনি যে সেই সাধনায় সিদ্ধ সে আমরা বুঝতে পারি আর ভেতরে ভেতরে কেমন একটা দুঃখে ভিজে যাই।

বেশ শান্তভাবেই উনি বলছিলেন, "দ্যাখো হে, আমাদের ডিএনে ভিত্তিক প্রাণও হয়তো একদিন এভাবেই জবরদখল করেছিলো পৃথিবীকে। আজ যদি জায়গা ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হয়, হবে। চিরদিন তো আর সমান যায় না। "

সুকন্যা খুব কম কথা বলে, এখন সে বললো, " সত্যিই কি কোনো আশা নেই? কোনো উপায় নেই?"

"পাগলি মেয়ে, আশা নেই কেন? যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। আগে গিয়ে দেখি কী অবস্থা! আরে এখনো তো রাস্তাই ফুরায় নি।" অপ্রত্যাশিত কোমলতা ডক্টর প্রকাশের গলায়। সুকন্যা তাঁর পালিতা কন্যা।

কুড়ি বছর আগে এক বিমান দুর্ঘটনায় মাত্র দুজন সার্ভাইভার ছিল, চল্লিশ বছর বয়সের ডক্টর অনন্ত প্রকাশ আর নয় বছর বয়সের বালিকা সুকন্যা তরফদার। ডক্টর প্রকাশের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সবাই মারা যায় সেই দুর্ঘটনায়, সুকন্যার মা-বাবাও। ডক্টর প্রকাশ সুকন্যাকে নিজের কন্যা হিসাবে দত্তক নিয়ে পালন করেছিলেন।

শেষরাতে চেকইন করলাম আমরা। তারপরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে সামান্য কিছু খেয়েই রওনা। সরাইওয়ালার সহায়তায় স্থানীয় একজনকে গাইড হিসাবে পাওয়া গেল। মাঝবয়সী দোহারা চেহারার শক্ত গড়নের লোক, লোকটির নাম লিয়েম। পেশা গাড়ি চালানো।

লিয়েমকে নিয়ে আমরা রওনা হই অকুস্থলের দিকে। তাকে টুকটাক নানা কথা জিজ্ঞেস করেন ডঃ প্রকাশ, সে খুব অল্প কথায় সেগুলো উত্তর দেয় যতটুকু না বললে নয় ঠিক ততটুকু। নিজে থেকে সে কিছুই বলে না। আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না লিয়েম এমনিতেই স্বল্পভাষী নাকি আমাদের সঙ্গে ভালোমত পরিচয় নেই বলেই কিছু বলছে না!

যতই এগোই ততই দেখা যায় গাছপালা জীর্ণ হয়ে গেছে, পশুপাখি দেখা যায় না। আমরা লিয়েমকে আরো প্রশ্ন করি কিন্তু সে বিশেষ কিছুই বলে না, সামান্য যা বলে তা থেকে কিছুই প্রায় বোঝা যায় না। লোকটার মুখের গড়নটাও এমন যে মুখ দেখে মনের ভাব বোঝা দুরূহ ব্যাপার। কেবল ওর চোখের ভয়টা লুকাতে পারে নি পুরোপুরি। আমরা খুব বেশী চাপাচাপিও করতে পারি না, হয়তো বেচারা মানসিক শকের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।

আমরা আর প্রশ্ন করি না, অনেকক্ষণ সবাই নীরবে থাকি। লিয়েম নীরবে গাড়ী চালাচ্ছে, ডঃ প্রকাশ নিজের পকেট থেকে ছোটো পামটপ ইলেকট্রনিক অর্গানাইজার বার করে কীসব কুটকাট করছেন, আবীরা চুপ করে চোখ বুজে বসে আছে, প্রান্তিক আর সুকন্যা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কী আলোচনা করছে, আমি জানালা দিয়ে দূরের দিকে চেয়ে আছি আর এলোমেলো ভাবনা ঘুরে বেড়াচ্ছে মনের মধ্যে।

হঠাৎ লিয়েম কথা বলে উঠলো, চাপা গলায় বললো, "অভিশাপ লেগেছে। ওখানে অভিশাপ লেগেছে।"

আমি চমকে উঠেছিলাম, বললাম, "কোথায় অভিশাপ লেগেছে, লিয়েম?"

লিয়েম চাপা বিদ্রোহের স্বরে বললো, "যেখানে আপনারা যেতে চান, সেখানে। কেন আপনারা ওখানে যেতে চান? সেই রাতে আকাশের দেবতারা আগুন বৃষ্টি করেছিলেন, সেখানে সব ধ্বংস হয়ে গেছে অভিশাপে।"

ডঃ প্রকাশ কিন্তু শুনতে পেয়েছিলেন। নিজের কাজ করতে করতেই মুখ তুলে ভারী গলায় বললেন, "লিয়েম, আমরা সেই অভিশাপ কাটান দেবার কোনো উপায় আছে কিনা সেই খোঁজ করতে যাচ্ছি।"

লিয়েম চুপ করে যায়, রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে একবার তাকায় পিছনের সীটের ডঃ প্রকাশের দিকে, তারপরে ফিসফিসিয়ে বলে, " প্রার্থনা করি আপনারা সফল হোন।"

আরো খানিকটা এগিয়ে লিয়েমসমেত সবাই সর্বাঙ্গঢাকা বিশেষ পোশাক, জুতো আর হেলমেট পরে নিলাম। পশুপালকদের গ্রামটি পর্যন্ত এসে লিয়েম আর এগোতে চাইলো না। সে ওখানেই অপেক্ষা করবে।

গ্রামটি এখন পরিত্যক্ত। কুটিরগুলি পড়ে আছে ভাঙাচোরা। গাছপালা শুকিয়ে খড় হয়ে গেছে, ঘাস মরে গেছে, পড়ে আছে পাথুরে মাটি। গ্রাম থেকে কিছু দূরেই সেই উল্কাপাতের মাঠ, দেখে মনে হচ্ছে সেখানে যেন স্থানীয় প্রলয় হয়েছে, সমস্ত জীবনচিহ্ন বিলুপ্ত। গাছপালা ঘাস কীটপতঙ্গ সব নি:শেষ হয়ে গেছে, যেন একেবারে মারাত্মক স্টেরিলাইজেশন।

সম্ভবত বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে না এই অণুজীবন, অন্য জীবদেহ ধরে ধরেই এগোয়। প্রাণী উদ্ভিদ ও জীবাণু কিছুই কি এর করালগ্রাস থেকে মুক্ত? কত দ্রুতহারে এ ছড়াতে পারে? কোনো অ্যান্টিডোট কি তৈরী করা সম্ভব? শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন, কোনো উত্তর নেই। সম্ভবত উত্তর বার করার সময়ও নেই।

৪। সেই উল্কাপাতের মাঠের একপাশে একটা মস্ত বাদামী পাথরের চাঁইয়ের পাশে তাঁবু খাটানো হলো। সকলে হাত মিলিয়ে ঝটাপট তাঁবু গেড়ে ফেলেই আমরা তিনটে দলে ভাগ হয়ে গেলাম। আমি আর আবীরা একটা গ্রুপে, আমরা যাবো উত্তর দিকে, সেদিকটা সার্ভে করবো আর স্যাম্পল কালেক্ট করবো। প্রান্তিক আর সুকন্যা যাবে দক্ষিণে। ডঃ প্রকাশ পুব থেকে পশ্চিম একাই সার্ভে করবেন আর স্যাম্পল সংগ্রহ করবেন।

ঠিক হলো সবাই সবকিছু নিয়ে তাঁবুতে ফিরে আসবো বিকালের দিকে। সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগের জন্য বিশেষ কমুনিকেটার পোশাকের কলারের কাছে আটকিয়ে নেওয়া হলো, আর জিপিএস তো অবশ্যই রইলো সবার সঙ্গে। কারুর কোনো ঝামেলা হলেই যাতে বাকীরা জানতে পেরে তার সাহায্যে যেতে পারে। সব ঠিকঠাক হয়ে যেতেই আমরা যে যার দিকে রওনা হয়ে কাজ শুরু করে দিলাম।

গ্লাভসমোড়া হাতে সাবধানে যন্ত্রপাতি দিয়ে ধূলোমাটি সংগ্রহ করি, জিপলক প্যাকেটে পুরি। আমার পাশে পাশেই কাজ করে আবীরা। সে এমনিতেই খুব চুপচাপ স্বভাবের, এখন আর আরো বেশী চুপচাপ। দক্ষ হাতে স্যাম্পল তুলছে আর জিপলকে ঢোকাচ্ছে।

চারিদিকে পাথর বালি ছাই আর ধূলো। পোড়া পোড়া পাথর, ধূসর এক ছাই-ছাই জগৎ। একসময় কাজ থামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাকাই, মরুভূমির মতন শুকিয়ে আসে ভেতরটা। যেন পৃথিবী নয়, হঠাৎ যেন শুকনো একটা মৃত গ্রহে এসে পড়েছি আমরা। অজানা ভয়ে মনটা অবশ হয়ে আসে। মনে হয় সামান্য মানুষ আমরা, বহির্জাগতিক প্রবলতর শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার অস্ত্র খুঁজে পাবার আশা আমাদের নিতান্ত স্পর্ধা, তার চেয়ে শান্তভাবে আত্মসমর্পণ করাই ভালো। মরতে যখন হবেই শান্তভাবেই তাকে বরণ করা ভালো। মনের ভিতরে তবু একটা আর্তবিদ্রোহ জেগে উঠতে চায়, নিজের মনকে বলতে থাকি, কাজ করতে হবে, আবেগকে প্রশ্রয় দিলে হবে না, সবাই কাজ করছে, ভয়কে জয় করতে হবে-

কাজ করতে করতে আবীরা চলে গেছে একটু দূরের একটা পোড়া পাথরের চাঁইয়ের ওপাশে, আমার কেন জানি ঘোর ক্লান্তি ছেয়ে আসে সর্বাঙ্গে, কমুনিকেটারে চাপ দিতে গিয়েও পারি না, চারিদিকে কটকটে রোদ অসহ্য লাগে। কোনোরকমে টলতে টলতে গিয়ে কাছের একটা পাথরের ছায়ায় লুটিয়ে পড়ি।

"এই, এই সুপ্রতীক, কী হয়েছে তোমার? " জেগে উঠলাম। আবীরা আমাকে ঝাঁকাচ্ছিলো জাগানোর জন্য। জেগে খানিকক্ষণ সময় লাগলো স্থানকালের জ্ঞান ফিরে পেতে। পোড়া পাথরের ছায়ায় আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত ভয়ানক এক স্বপ্ন দেখছিলাম।

আমি আস্তে আস্তে উঠে বসে বললাম, " খুব ক্লান্ত লাগছিলো, একটু বিশ্রাম নিতে বসে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অনেকক্ষণ হয়ে গেল, না? তুমি কি অনেক স্যাম্পল কালেক্ট করেছ? "

আবীরা উদ্বিগ্ন গলায় বলে, "সুপ্রতীক, খারাপ লাগছিলো তো তুমি কমুনিকেট করো নি কেন? আমি একটা জিনিস দেখে তোমাকে বলার জন্য কমুনিকেটার অন করে দেখি তুমি জবাব দাও না, তখন খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কীসব বিড়বিড় করছো আর ছটফট করছো।"

" আরে না না তেমন কিছু না। ক্লান্ত লাগছিলো, তাই বিশ্রাম নিতে বসেছিলাম। এখন ঠিক হয়ে গেছি। তোমাদের শুধু শুধু চিন্তায় ফেলে লাভ কী? তুমি একটা জিনিস দেখেছ বললে, কী দেখেছ? "

আবীরা বলে, "চলো আমার সঙ্গে, নিজের চোখেই দেখবে। "

আবীরাকে অনুসরণ করে লালচে রঙের একটা পাথরের চাঁইয়ের ডানপাশ দিয়ে ঘুরে গিয়েই থমকে থেমে গেলাম। সামনে এক আশ্চর্য দৃশ্য। একটা বড় গাছ আগুনে ঝলসে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে, কিন্তু তার গোড়ার কাছ থেকে উঁকি মারছে সবুজ, সতেজ কয়েকটা ডাঁটা, তাতে পাতা এসেছে। গাছটাকে মেরে ফেলতে পারে নি বহির্জগতের আগুন, নতুন জীবন নিয়ে জেগে উঠেছে সে। ঐ আগন্তুক অণুজীবও কিছুই করতে পারে নি একে, সতেজ সবুজ ডাঁটা ও পাতাই তার প্রমাণ।

আনন্দে, উত্তেজনায় পরস্পরের গ্লাভসমোড়া হাত জড়িয়ে ধরি দু'জনে, হয়তো--- হয়তো এই মৃত্যুঞ্জয়ী গাছ আমাদের বাঁচার পথ দেখাবে।

আমরা দু'জনেই কমুনিকেটারে চাপ দিই একসঙ্গেই, দলের বাকীদের জানাতে হবে।

*******


মন্তব্য

আশরাফুল কবীর এর ছবি

#সুন্দর লিখেছেন,শুভেচ্ছা আপনাকে।

#আপনার বইটি কি ইংরেজিতে প্রকাশ করেছেন? এখানে প্রকাশিত অংশটুকুতে ইংরেজির আধিক্য বলে মনে হলো।ভাল থাকুন বাঘের বাচ্চা

তুলিরেখা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

বই না, একটা পাক্ষিক পত্রিকায় বাইর হইছে। বাংলাতেই। হাসি
তবে এক বিদেশিনী বন্ধুনি কাহিনিটার সারসক্ষেপ শুইন্যা ইংরাজিতে লেখতে কইছে। বাপরে, ইংরেজীতে লিখতে পারলে তো! গুগল কাকুরে গল্পটার একটুখানি দিলাম তর্জমা করতে, ভাবলাম দেখি কেমুন হয়, সে এক বিকট তর্জমা কইরা দিলো। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ভাল ভাল।

তুলিরেখা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সত্যপীর এর ছবি

ভাল্লাগসে চলুক

..................................................................
#Banshibir.

তুলিরেখা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লন, সত্যপীর।
আপনার কাছ থেকে আওরংগ-শিবাজীর গপ্পের পরেরটা শোনার জন্যে মন বড় ছটফট করছে। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটা কি এইখানেই শেষ? ভালোই লাগছিল পড়তে -
-অয়ন

তুলিরেখা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
গল্প এইখানেই শেষ হইতেও পারতো। পারতো না? চিন্তিত

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, এইখানে শেষ হতে তো অবশ্যই পারতো, হয়তো হয়েছেও। কিন্তু প্রথম থেকে যে রকম টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে গল্পটা, এবং সুতোর বেশ কিছু আলগা প্রান্ত রেখে দেয়া হয়েছে (যেমন সুপ্রতীকের হঠাৎ ঘুম), তাতে করে মনে হচ্ছিল এই গল্পটা আরো গড়াবে। তাই এই আশাবাদ ব্যক্ত করা।

-অয়ন

তুলিরেখা এর ছবি

সুপ্রতীক ঘুমপ্রবণ ও স্বপ্নপ্রবণ, একেবারে প্রথমাংশেও ওর স্বপ্ন দেখার বর্ণনা রয়েছে। না ঘুমালে স্বপ্ন দেখবে কী করে? হাসি
তবে গল্প আরো গড়াতে পারতো, ঠিক, সত্যি বলতে কী দুনিয়ার কোন গল্পই বা না গড়াতে পারে? :-)। রেশমী রুমালে সূচীকর্ম শেষ হলে, সুতো ছিঁড়ে প্রান্তটুকু আলতো করে সূচ দিয়ে গুঁজে দেওয়া কোনো আলগা সেলাইয়ের ভিতরে, তা বলে সুতো তো শেষ হয় নি, সে তো অনন্ত, তাই না? হাসি
রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের কত গল্প পড়ার পরে মনে হয়েছে আচ্ছা কী হলো তার পর? "অতিথি"র তারাপদর কী হলো? "পোস্টমাস্টার" এর রতনের কী হলো? "ঘাটের কথা" র কুসুমের কী হলো? এরকমই হয় অনেক গল্প পড়ে। হাসি

ভালো থাকবেন, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।