বসন্তমঞ্জরী

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বুধ, ১২/১২/২০১২ - ২:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সে ছিলো অনেক আগের এক বসন্তকাল। তখন এক চওড়া নদীর তীরের ছোট্টো শহরে থাকতাম। বসন্ত এলেই চারিদিকে কেমন একটা উল্লাস জেগে উঠতো। প্রকৃতিতে আর মানুষের সদরে অন্দরে। শীতে সব চারিপাশ কেমন ধূসর আর নীরক্ত লাগতো, সব পত্রমোচী গাছেরা তখন পাতাহীন ন্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। যেই না আকাশের দক্ষিণে হেলে পড়া সূর্য সরে আসতো অনেকটা উত্তরে, ফুরফুরে দক্ষিণা হাওয়া বইতে থাকতো, শীত বিদায় নিতো। রংবাহারী ফুলে আর মনোহর সবুজ কিশলয়ে ভরে উঠতে থাকতো গাছেরা, কোথা থেকে দলে দলে পাখি আর বড় বড় ভ্রমর এসে পড়তো। প্রকৃতিতে যেন ঋতুরাজ বসন্তের বিজয়-বৈজয়ন্তী উড়তে শুরু করতো।

আমাদের রুটিন কাজ-নেটওয়ার্ক-ডেডলাইন-মুঠোফোন-বাড়ি-গাড়ি-আপিস এইসব দিয়ে আঁট করে বাঁধা জীবনেও কোথা থেকে যেন ঢুকে পড়তো মনকেমনের হাওয়া। গভীর রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়েও চট করে ঘুম আসতো না, বাতি নিভিয়ে দিলেও ঘর সম্পূর্ণ অন্ধকার হতো না, চারিপাশের নানা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবুজ আলো জ্বলতো নিভতো, বৈদ্যুতিন জোনাকি যেন। ওদের জ্বলা নেভা জ্বলা নেভা দেখতে দেখতে চোখ জুড়ে আসতো ঘুমে, ঘুমের সমুদ্রে হারিয়ে যাবার আগে আগে মনে পড়তো ফেলে আসা ছোটোবেলার ঘরবাড়ি মাঠ বাগান ঝোপঝাড়, সেখানে সন্ধ্যের পর ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকি জ্বলতো, গাছে গাছে জোনাকির মেলা যেন।

একদিন কাজকর্মের মধ্যে ফাঁক খুঁজে নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম ছবি তুলতে, মাঠ-বন-বাগান সবুজে সবুজ, ফুলে ফুলে চারিদিক ছয়লাপ। ঘাসফুলেদের বেগুনি হলদে পেরিয়ে গোলাপি আজেলিয়ার ঝাড়ের কাছে এসে যেখানে লুটিয়ে পড়েছে সোনালি রোদ, ছবিতে তুলে নিতাম সেটা। চারিদিকে আলো আর ছায়ার খেলা, রঙের খেলা, হাওয়ার খেলা। সব আজেলিয়া গোলাপি না, লাল আছে, কমলা আছে, সাদা আছে। আমার দোপাটীর কথা মনে পড়তো। মনে পড়তো সেই গানের কলিগুলো, "তোমার ঐ নীলদোপাটী চোখ/ শ্বেতদোপাটী হাসি, /লালদোপাটী কানের ফুল দেখতে ভালোবাসি।" কবে যেন শুনেছিলাম ঐরকম কোনো গান? সে কি গতজন্মে?

দক্ষিণের মাতাল বাতাসের ঝাপ্টায় আজেলিয়ার ঝোপ এলোমেলো হয়ে হাসতো, ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে উড়তে থাকতো হাওয়ায়, রেণু ঝরে পড়তে থাকতো পথের ধূলায়। পথের দুইপাশে ওক গাছেরা অজস্র নতুন সবুজ পাতায় ভরে উঠেছে তখন, মঞ্জরী ধরেছে গাছ ভরে, রাস্তা ভরে গেছে সেই ঝরা মঞ্জরীতে।

বসন্তে কিছুদিন ছুটি থাকতো তখন, তাকে বলতো স্প্রিং ব্রেক। সপ্তাহখানেকের ছুটি। তখন সবাই এদিক ওদিক ঘুরতে যেত। একবার আমারও ইচ্ছে হোলো বন্ধুকে নিয়ে হারিয়ে যাই নতুন বসন্তের জঙ্গলে, তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন করি বনে। মধ্যরাত্রে ঘুম ভেঙে চুপি চুপি উঠে নিঃসাড়ে বেরিয়ে আসি অরণ্যজ্যোৎস্নায়, দেখি কথা কয়ে ওঠে কিনা রহস্যময় বনস্থলীর কোনো আত্মা, যেমন কইতো বহু বহু বছর আগে, যখন সেখানে শ্বেতকায়রা প্রবেশ করেনি। সেই ভূখন্ড তখন ছিলো লালমানুষদের, তারা জানতো পৃথিবী তাদের মা, পাহাড় তাদের ভাই, নদীরা তাদের বোন। তারা শুনতে পেতো ফুলের কুঁড়ি খোলার শব্দ, শুনতে পেতো নদীর গান, দেখতে পেতো অনেক অনেক অনেক দূর। সেই লালমানুষেরা আর তো নেই সেখানে, হয়তো তাদের উত্তরপ্রজন্ম আছে কোনো বিশেষ সংরক্ষিত অঞ্চলে। তারা হয়তো ভুলে গেছে তাদের সব পুরানো কথা---সেই বলাকা, ঋক্ষবান, বনকুসুমীদের সব গল্প ভুলে গেছে হয়তো।

হ্যাঁ, কী যেন বলছিলাম? সেই বসন্ত ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার গল্প। আমরা জোরেসোরে প্ল্যান করতে থাকি ক্যাম্পিং এর, নানা প্রস্তাব উঠতে থাকে, পড়তে থাকে, কখনো একমত হয়ে জোরালো হয়, কখনো দ্বিমত হয়ে ভেঙে পড়ে। কোনো কিছু স্থির হয় না, তবু প্ল্যান করতে আনন্দ। ক্লান্ত অথচ তৃপ্ত মনে আমরা সেদিনের মত চলে যাই যে যার বাড়ী।

রাতে ঘুমের সময় বারে বারে কেন জানি মনে আসতে থাকে কেবলই এক অপার্থিব অরণ্যজ্যোৎস্নার কথা, ঘরের মধ্যে নানাবিধ গ্যাজেটের হাল্কা চাপা গুম গুম শোঁ শোঁ শব্দ আর অসংখ্য জ্বলানেভা নীল আর সবুজ আলোর মধ্যে অনুভব করি তাকে, যে ছিলো অনেকদিন আগে, যে আছে এখনও, যে থাকবে আরো অনেক অনেক দিন পরেও। যে জানে আমাদের লক্ষ লক্ষ বছরের অতীত, জানে আমাদের কৃপণ বর্তমান-প্রতি মুহূর্তে আমাদের হাতের মুঠো থেকে ফসকে পালিয়ে পালিয়ে যাওয়া ক্ষণগুলোর জন্য আমাদের দুঃখঝলমল অশ্রুকণিকা, জানে আমাদের প্রসারিত অনন্তস্পর্শী ভবিষ্যৎ। সভ্যতার এই পরতের পর পরত খোলসগুলো আমাদের ঢেকে রেখেছে পোশাকের মতন, ঘরের মতন, যানবাহনের মতন, ডেডলাইনের মতন, আরো আরো অনেক ছোটোবড়ো কনস্ট্রেইন্টের মতন। এত এত দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বন্দীত্ব আমাদের! আমাদের ব্যথিত আত্মা যখন কেঁদে ওঠে সেই হারানো জিনিসগুলোর জন্য, হারানো সম্পর্কগুলোর জন্য, হারানো ক্ষণগুলোর জন্য, তখন সে কোনো আশ্চর্য কৌশলে ছুঁয়ে দেয় আমাদের ভিতরমন, আমাদের আত্মা, এমন করে ছোঁয় যেন সে ছিলোই আমাদের একদম ভিতরে, কোনো খোলস না পেরিয়েই কেমন করে জানি পৌঁছে গেছে সেইখানে। সেই যে সেই ফ্ল্যাটল্যান্ডে বেড়াতে আসা নীরেট গোলক যেমন সোজাসুজি পৌঁছে গেছিলো বৃত্তের কেন্দ্রে, পরিধি না ছুঁয়েই!

নানা কারণে ক্যাম্পিং হলো না সেইবার, আমরা ছুটির দিনে বাইসাইক্ল ট্রেইল ধরে ঘুরতে গেলাম এমনি এমনি। বসন্তের সবুজ গাছগাছালি, সুরমুখর পাখপাখালি আমাদের অভ্যর্থনা করলো নীরবে ও সরবে। হরবোলা পাখির ডাক শুনতে শুনতে আমার কেবলি মনে পড়তে থাকলো ফেলে আসা সেই দুপুরবেলাগুলো, আমার দেশের দুপুর, সেখানেও তো ঘু ঘু ডাকে ঘুঘু উ উ উ, কেমন একটা মনকেমন ঘুমেলা ডাক। আর এমন বসন্তের সকালে বিকালে শালিক চড়াই কাক কোকিল সবাই ব্যস্ত ডাকাডাকিতে আর আরো নানা কাজে।

পরদিন এক বন্ধুর সঙ্গে গেলাম কাছের এক স্টেট পার্কে, সেখানে একটা মস্ত হ্রদ আছে। বসন্ত সবুজ উদ্যান, হ্রদের ধারে বেশ ভালো ছায়াওয়ালা জায়্গা বেছে আমরা বসি দুপুরবেলার পিকনিকে। আকাশ এক্কেবারে নীল, রোদ্দুরে ঝলমল করছে সব, দূরে চিল পাক খাচ্ছে, হ্রদের জলে সরু পাতলা মোটরচালিত নৌকায় লোকে জলবিহার করছে, নৌকার দ্রুতগতিতে জল কেটে বেরোনো আর উল্টোদিক থেকে লাগা শাঁ শাঁ হাওয়া নৌকাবিহারীদের নিশ্চয় খুব আনন্দ দিচ্ছে, ওরা সবাই আনন্দে চিৎকার করছে।

আমাদের খাওয়াদাওয়া দ্রুতই সমাপ্ত হয়, স্যান্ডউইচ আর চিপস আর কোল্ড ড্রিংক। খাওয়া দাওয়া শেষ করে কচি সবুজ ঘাসগুলোর উপরে কাত হয়ে শুয়ে পড়ি, কানের কাছে ঘাসের সুড়সুড়ি লাগে, দারুণ লাগে। মুগ্ধ বিস্ময়ে বন্ধুকে বলি, "তোমার দেশ এত সুন্দর!"

সে ব্যস্ত হয়ে বলে, "আরে না না, এর চেয়ে অনেক সুন্দর জায়্গা আছে, রেড উডের বন আছে, সেখানে পাঁচ হাজার বছরের পুরানো জ্যান্ত আছ আছে। গত গ্রীষ্মে গেছিলাম সেখানে। সেইসব গাছ এক অদ্ভুত ব্যাপার, তুমি ঐ গাছ ছুঁলে মনে হবে টাইম মেশিনে চড়ে বুঝি চলে গেছো সেই তত হাজার বছর আগে, যখন কিনা মিশরের পিরামিডগুলো তৈরী হচ্ছে। "

আমি হেসে ফেলি, বন্ধুটি বেশ কল্পনাপ্রবণ। সে ভয় পাচ্ছে পাছে এই দুটো গাছগাছালি পাখপাখালি দেখে একেই সেরা সৌন্দর্য ভেবে বসি, তাই ব্যস্ত হয়ে আশ্চর্য সুন্দর সব জায়গার কথা বলছে। বিখ্যাত বিখ্যাত সব জায়্গা আশ্চর্য আশ্চর্য সব জিনিস তো আছেই দুনিয়ায়, কিন্তু তা বলে কি হাতের কাছের, ছোঁয়ার মধ্যের, চোখের সামনের অপরূপ রূপ বৃথা হয়ে গেল? জগতের প্রতিটা কোণেই তো অফুরন্ত সৌন্দর্যের, অফুরন্ত আনন্দের উৎস লুকানো আছে। নিজেদের বাঁধা জালগুলোর বাঁধন কাটতে পারলেই রূপকথার সোনার পালক আপনিই উড়ে এসে পড়ে হাতে মাথায়, চোখে, মুখে। তাই নয় কি?

বেলা পড়ে আসে, ঢলে আসা রোদ্দুরে কোমলতা। পশ্চিমদিগন্তের কাছে মেঘে মেঘে সূর্যাস্তের ঘোরলাগা রঙ। আমরা ফিরতে থাকি আমাদের পরিচিত শহরের পরিচিত ঘরের দিকে, মনের ভিতরে বসন্তের ছুটির দিনের স্মৃতিটুকু সযত্নে জড়িয়ে রেখে।

*******


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জগতের প্রতিটা কোণেই তো অফুরন্ত সৌন্দর্যের, অফুরন্ত আনন্দের উৎস লুকানো আছে। নিজেদের বাঁধা জালগুলোর বাঁধন কাটতে পারলেই রূপকথার সোনার পালক আপনিই উড়ে এসে পড়ে হাতে মাথায়, চোখে, মুখে। তাই নয় কি?

- ঠিক। সৌন্দর্যকে চিনতে, বুঝতে ও অ্যাপ্রিশিয়েট করতে শিখতে হয়। চোখ সবারই আছে, তবে সবাই দেখতে জানে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তীরন্দাজ এর ছবি

একেকটি সৌন্দর্যের একেক সময়ে একেক রকম মূল্যমান। আপনার লেখাটিও সেরকমই সুন্দর।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তুলিরেখা এর ছবি

দিনে রাতে সকালে বিকালে গ্রীষ্মে বর্ষায় শরতে শীতে বসন্তে একই ভূমির সৌন্দর্য বদলে বদলে যায়, কখনোই অবিকল ফিরে আসে না একই সূর্যোদয় একই সূর্যাস্ত একই দুপুর একই সন্ধ্যা। কী বিচিত্র এই পৃথিবী!
ধন্যবাদ, লেখাটা পড়ার জন্য।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা এর ছবি

ঠিকই। চোখের আড়ালে চেতনা, সে যদি জাগে, তবেই তো দেখা! সেই চেতনা হয়তো বা কুঁড়ির মতন একটুখানি ফুটেছে মাত্র, পুরো প্রস্ফূটিত হতে অনেক দেরি।
ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

মধ্যরাত্রে ঘুম ভেঙে চুপি চুপি উঠে নিঃসাড়ে বেরিয়ে আসি অরণ্যজ্যোৎস্নায়, দেখি কথা কয়ে ওঠে কিনা রহস্যময় বনস্থলীর কোনো আত্মা, যেমন কইতো বহু বহু বছর আগে, যখন সেখানে শ্বেতকায়রা প্রবেশ করেনি। সেই ভূখন্ড তখন ছিলো লালমানুষদের, তারা জানতো পৃথিবী তাদের মা, পাহাড় তাদের ভাই, নদীরা তাদের বোন। তারা শুনতে পেতো ফুলের কুঁড়ি খোলার শব্দ, শুনতে পেতো নদীর গান, দেখতে পেতো অনেক অনেক অনেক দূর। সেই লালমানুষেরা আর তো নেই সেখানে, হয়তো তাদের উত্তরপ্রজন্ম আছে কোনো বিশেষ সংরক্ষিত অঞ্চলে। তারা হয়তো ভুলে গেছে তাদের সব পুরানো কথা---সেই বলাকা, ঋক্ষবান, বনকুসুমীদের সব গল্প ভুলে গেছে হয়তো।

চলুক চলুক চলুক

জগতের প্রতিটা কোণেই তো অফুরন্ত সৌন্দর্যের, অফুরন্ত আনন্দের উৎস লুকানো আছে। নিজেদের বাঁধা জালগুলোর বাঁধন কাটতে পারলেই রূপকথার সোনার পালক আপনিই উড়ে এসে পড়ে হাতে মাথায়, চোখে, মুখে। তাই নয় কি?

উত্তম জাঝা! এত চমৎকার কেম্নে লিখেন তুলিপু? চিন্তিত

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ তোমাকে সাফিনাজ আরজু, খুব ভালো লাগলো তোমার কমেন্ট পেয়ে।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা ! এই বদ্ধ ঘরের মধ্যে থেকেও প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করলাম।
ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।

তুলিরেখা এর ছবি

লেখাটা পড়েছেন বলে ধন্যবাদ। ভালো লাগলো আপনার অনুভবটি। ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।