জীবন - এক বহতা নদী

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৯/০৭/২০১৪ - ৬:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গিয়েছিলাম কাঁচাবাজারে। গিন্নি বিরাট এক ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তা দোকানিদের সাথে দরাদরি, বকাঝকা করে ফর্দমাফিক মালপত্র কেনা হলো বটে তবে ততক্ষণে আমার ব্রহ্মতালু দিয়ে আগুনে তাপ বেরুচ্ছে। যাহোক, হেকেডেকে রিক্সা জোগাড় করে ঝাকামুটে আমায় রিক্সায় তুলে দিলে। বাড়ি ফিরলাম। রিক্সা থেকে নেমে বাজারের থলেগুলো গুছিয়ে নিয়ে এক পা এগুতেই মাথাটা কেমন ঘুর দিয়ে উঠলো। হাতের থলে ফেলে দিয়ে কোন রকমে রিক্সার হুড ধরে সে যাত্রা পতন ঠেকালুম।

এতদিনে মনে হলো, আমার বয়স হয়েছে, বুড়ো হচ্ছি।

তা বয়সতো যথেষ্ট হয়েছেও বটে। শারীরিক অবস্থারও যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। আগের মতো আর শরীর-মনে বল পাইনা। সাহসেও ভাটার টান। মনের মাঝে মৃত্যুচিন্তা উঁকি দিল। কোথায় যেন কার একটা লেখায় পড়েছিলাম, "প্রৌঢ়ত্যে বা বার্ধক্যে রক্তের তেজ কমে আসলে মৃত প্রিয়জনদের কথা মনে পড়লে নিজের মৃত্যুচিন্তাও মনের মাঝে ভর করে। আসন্ন বিচ্ছেদের আশঙ্কায় মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। যৌবনে সাধারণত মানুষের মনের মাঝে মৃত্যুভয় সেভাবে
ক্রিয়াশীল নয়।"

মনে পড়ে গেল সুধীন দাশগুপ্তের গীত,

♪♫"সাধের খাঁচা পড়ে রবে তোর ক্ষ্যাপা
ভাঙবেনাতো ঘুমের ঘোর
সাধের খাঁচা পড়ে রবে তোর
মিছে দেহের গুমোর করোনা
কোনদিন পাখি পালিয়ে যাবে
তাওতো জানোনা
সাধের খাঁচা পড়ে রবে তোর- "

কদিন ধরে ভাবছি, সংসারে বেঁচে থাকার অপর দিকটিতো প্রতিটা মূহুর্ত মৃত্যুর প্রতিক্ষায় থাকা। যেন রেলস্টেশনে বসে আছি শেষ ট্রেনের অপেক্ষায়। হাতে একটি ম্যাগাজিন, নাম তার 'সচলায়তন'।

আর সেই সাথে দুদ্দাড় করে মনের মাঝে স্মৃতিগুলো সব ভিড় করে এলো।

সেই বুঝতে শেখার পর থেকে এ যাবতকালের কত স্মৃতি মনের মাঝে উঁকিঝুকি দেওয়া শুরু করলো। আজ এই অবেলায় এসে মনে হলো স্মৃতি সবই সুখকর! তা সে মিলনের হোক বা বিরহের! মনে পড়ে গেল, সাবালক হবার পর প্রথম যেদিন মেয়েটি বলেছিলো, 'বাহ্ আপনাকে তো বেশ ম্যানলি লাগছে'। আহা কী সুখস্মৃতি! সে কবেকার কথা কিন্তু এখনও যেন পষ্ট দেখছি...। কিছুদিন পরে আব্বার বদলির কারণে আমরা সে শহর ছেড়ে চলে এসেছিলাম। আর কখনও দেখা হয়নি মেয়েটির সাথে।

আর ঐযে সেই হিন্দু মেয়েটি, যে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো, মুক্তিযুদ্ধের সময় চখন বিহারি পাকসেনা নিয়ে এসে তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। অনেককাল পরে কাদের মোল্লার ফাঁসির দিনে তার কথা খুব করে মনে পড়েছিল।

আর খুব মনে পড়ে সত্তরের দশকের শেষের দিকের ধাঙরপট্টির সাঁঝবেলার আসরগুলোর কথা। সে সময়ে ঢাকার উঠতি কবি-সাহিত্যিক, গায়ক, সাংবাদিকদের বড়সড় একটা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল হাটখোলার ধাঙরপট্টি।

প্রতিটি সন্ধ্যা জমজমাট থাকতো তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে। কোথাও চলছে কবিতার আসর, কোথাও চলছে গান, রাজনীতি, আবার কোথাওবা জীবনের গভীরতর দর্শনের আলাপচারিতা।

ঐ ধাঙরপট্টিতেই অনেক সন্ধ্যা কেটেছে তখনকার উঠতি কবি-গায়ক-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের সাথে। আসরে নিয়মিত ছিলেন একজন কবি পরবর্তীতে যিনি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিলেন। আর তাঁর সাথে আসতেন তাঁর এক বন্ধু যিনিও পরবর্তীতে একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘকাল। এখন অবশ্য উভয়েই বিগত। তো সেই কবিসঙ্গী প্রায় প্রতি সন্ধ্যায়ই নতুন নতুন কবিতা সুর করে আবৃত্তি করে শোনাতেন।
ঐ আসরে মাঝেমধ্যে এক রহস্যময় চরিত্রের লোক আসতেন। তাঁর পরিচয় আমরা শত চেষ্টা করেও জানতে পারিনি। আমাদের ঐ পট্টিঘরের মহাজন গুরুমূর্তি তাঁর সম্পর্কে বলতো, তিনি খুনের আসামী। হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আমরা অনুমান করেছিলাম, তিনি চরমপন্থী একটি গোপন দলের নেতৃস্থানীয় কেউ একজন। সে যাই হোক, মানুষটা কিন্তু বেশ বিদগ্ধ ছিলেন। আমাদের আলোচনা বা কবিসঙ্গীর আবৃত্তির ঠিক সঠিক সময়েই তিনি হয়তো কখনও গেয়ে উঠতেন,
'মোরা আর জনমে হংসমিথুন ছিলাম...... বা 'তুমি এসেছিলে পরশু, কাল কেন আসনি...।'..।'

আহা, কত কথা! কতযে স্মৃতি!

খুঙ-ফু-ৎসে (কনফুসিয়াস) যখন 'লু' রাজ্যের আমাত্য, তখন তাঁর এক আত্মীয় ছিল সেই রাজ্যেরই একজন দুর্ধর্ষ দস্যুসর্দার। রাজার অনুরোধে খুঙ-ফু-ৎসে একদিন সেই দস্যুসর্দারের সাথে দেখা করেন। কথোপকথনের এক পর্যায়ে দস্যুসর্দার বলেছিলেন, "মহাকালের ব্যাপ্তিতে মানুষের জীবনকালের স্থায়িত্ব কতটুকু? জানালার ক্ষুদ্র একটি ছিদ্র দিয়ে রেসের ঘোড়া দেখার মতো।"

ভাবছি... জীবনটাতো একটা বহতা নদীর মতো। নদী যেমন উৎস হতে মোহনা পর্যন্ত নিজস্ব গতিতে বয়ে চলে।

চরৈবেতি - চরৈবেতি, চল, অগ্রসর হও, এই চলার নামইতো জীবন।

আমিতো জীবনকালের প্রায় সবটাই পার করে এসেছি। স্রোততো এখন মোহনার মুখে।

লালনের গানের পঙতিগুলো মনে পড়লো,
"এমন মানব জনম আর কী হবে,
মন যা কর ত্বরাই কর এই ভবে।"

এত বছর পেরিয়ে এসে জীবনের এই পর্যায়ে মনে হল জীবনটা বড়ই মূল্যবান। সময় সত্যিই দুর্মূল্য। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই অনিশ্চিত। তাই ঠিক এই মুহূর্তটি যেন পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারি! এই অনিশ্চয়তায় ভরা জগতে পরমুহূর্তটিই হয়তো আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত! কি জানি কখন কি হয়?

তাই আমি বলি, এ মানব জনম এক পরম পাওয়া ! প্রতিটা মুহূর্ত বাঁচার আনন্দ উপভোগ করো। বাঁচার মতো বাঁচো। মন যখন যা চাইবে তাই করো । এ মানব জীবন বড়ই অনিশ্চিত। আমি বলি, মানব জীবনে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। আছে অতীত আর চরমতম সত্য হচ্ছে বর্তমান, মানে ঠিক এই মুহূর্তটি । এ জগতে কে কবে আগামীকাল দেখেছে!

মৃত্যু, সেতো জীবনের এক অলঙ্ঘনীয় বিধি। ক্ষয়, লয়, মৃত্যু অনিবার্য।

তারপরও শেষ কথাটিতো - "মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে...।"


মন্তব্য

আয়নামতি এর ছবি

সত্যিই বুড়ো হয়ে গেছেন দেখি ভাইয়া! এইটা কোন কথা হলো নাকি? মরবার আগেই মরতে হবে কেনু র‍্যা?
বেঁচে থাকবার গান ধরুন/শুনুন তারচে'। ডিজনীতে এক সত্তর বছরের বালকের সাথে পরিচয় হয়েছিল।
আহা কী তাঁর ঝকমকে তারুণ্য! শরীরটাকে সুস্হ রাখুন। প্রেশার বেড়েছে না? চেকাপ নিয়মিত করেন নাকি সেটাও দর্শনের
চাপে হাওয়া হয়? এরপরের পোস্টটা যদি এমন দিয়েছেন তো খবরই আছে! সুস্হ থাকুন। সত্যিকারের ভালো থাকুন হাসি
আমার একটা পছন্দের গানশুনুন হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

নাগো দিদি, বুড়ো হয়ে যাইনি, বুড়ো হবার অ্যাক্টো করছি। কদিন রাত জেগে একটু কাহিল আরকি! তা এই বয়সে ২২ বছরি ছোড়াদের মত লম্ফঝম্ফ কী আর শরীরে সয় বলুনতো!

গানটা ভালো লাগলো। গানের মাঝের কিছু কথা, "
আজ হাওয়া যেমন পাতায় পাতায়
মর্মরিয়া বনকে কাঁদায়
তেমনি আমার বুকের মাঝে
ঘা দিয়া কাঁদাওগো আজ।।
এওতো বিষাদেরই প্রকাশ! আর জীবনের বড় সত্যটাকে মেনে নেয়ার রিহার্সাল করছি। তবে এটাও জানি আমি মরবো বটে কিন্তু বুড়ো আদৌ হবনা। আচ্ছা, পরের লেখায় জীবনের গানই গাইব।

তাসনীম এর ছবি

নানান কারণে সচলে ঢোকা হচ্ছে, আজ হঠাৎ করেই চোখে পড়ল। শরীরের যত্ন নিন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। লেখাটা খুব ভাল লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, অনেকদিন পরে আপনাকে মন্তব্য করতে দেখলাম। অনেক পুরনো দিনের কথা মানে আমার সচলায়তনে লেখার শুরুর দিকে একটা পোস্টে বেশ সমালোচনার শিকার হয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েছিলাম। মনে পড়ে, আপনি এবং আরও দু-একজন আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমায় সাহস যুগিয়েছিলেন। সেই পোস্টে আপনার একটি মন্তব্য,

লিখেছেন তাসনীম (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৮/২০১১ - ২:৫০পূর্বাহ্ন)
চলুক

লিখতে থাকুন। আপনার গদ্যে সাবলীলতা আছে।

পাঠক প্রস্তুত।

আজ আমার লেখা 'জীবন - এক বহতা নদী'তে আপনার মন্তব্যে যেন আমার দায়মুক্তি হলো! ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

[আবদারঃ ধাঙ্গরপট্টির আড্ডার স্মৃতিচারণ চাই হাসি ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার আবদারটি একটু কঠিন বটে। সে সব কথা না হয় কানে কানে বলবোখন!
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

কল্যাণ এর ছবি

ধাংড়পট্টির আড্ডায় যে পানাহারেরও ব্যবস্থা ছিল, সেটাতো বেশ চেপে গেলেন! এইটা কি ঠিক হইল? পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

নাহ্, চেপে যাইনিতো! ঐযে লিখলাম,

আমাদের ঐ পট্টিঘরের মহাজন গুরুমূর্তি...।

তা, গুরুমূর্তিতো আর আমাদের তার ঘরে বসিয়ে ছোলা-মুড়ি সহযোগে চা খাওয়াতো না। সব কি বলে দিতে হয়, বুঝদারের জন্য ইশারাই যথেষ্ট নয়কি!
ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

বৃদ্ধের সংজ্ঞা পাল্টাতে হবে, বয়েস দিয়ে বৃদ্ধ বা যুবক মাপা উচিত্না মোটেও। আমি যেখানে থাকি সেখানে ওরা েই কথাটা খুব বলে যে, 'লাইফ বিগিন্স অ্যাট ফরটি'। আগে ভাবতাম কি বলে এরা, কিন্তু আজ সত্যি আমিও মনে করি সেটাই সত্যি, জীবনের অবশ্য কর্তব্য গুলো শেষ হোয়ে গেলেই না আসলে জীবন উপভোগের সময়। এখানে ৬০ও কেউ বুড়ো নয়, ৮০-৯০ হলে তবেই বুড়ো। তারপরেও অনেকেই আছেন, যাদের মন ৯০ নয় ৩০ পেরুই নি। টাই আপনিঅ বুরো হবেন না, শুধু শরীর টার যত্ন নিন, আমার মতো কাউকে দেখান( চোখ টিপি ) বয়স কোন সমস্যাই নয়। ভালো থাকুন, শুভকামনা।

লেখা ভাল লেগেছে, ইদানীং আমাকে খুব বাউল গানে পেয়েছে।

রীতু

'সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে...
সেই যেখানে কেউ যায়না, কেউ যায় নি কোনদিনই...'

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বয়স দিয়ে মাপছিনেগো দিদি। শরীরটা একটু কাহিল হয়েছে বটে। তা, রাত জেগে এত অনিয়ম করলে শরীরে এত সইবে কেন!
আমার লেখাটাওতো বাউলিয়ানাই, নয়কি! লেখাটা গদ্যে, এই যা তফাৎ। বুড়িয়ে যাইনি একটু বাউলিপনা করলুম।
ভাল থেকোগো দিদি, আনন্দে থেক।

মর্ম এর ছবি

লেখাটায় সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখার ছাপ পেলাম। ভাল লাগল বড়!

আফসোসের সুর, নস্টালজিয়া, বর্তমানকে হতাশা নিয়েই মেনে নেয়া- এ সব তো থাকবেই, কিন্তু সেটাকে গোছগাছ করে প্রকাশ করতে পারাটা আর পাঠককে ছুঁয়ে যেতে পারাটা মন্দ কীসে?

ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আর আপনার হাতের ম্যাগাজিনে আপনার লেখাও দিন গোটাকতক। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

বুড়ো হওয়া নিয়ে ভাবতে গেলে আরো বুড়ো হয়ে যাবেন। তাই, সে ভাবনা নয়।
ট্রেন যখন আসবে তখন দেখা যাবে।
এখন নিশ্চিতমনে প্ল্যাটফর্মের চেয়ারে হেলান দিয়ে অন্যদের হুড়োহুড়ি দেখুন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভকামনা জানবেন।

----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

তা হুড়োহুড়িতো দেখছিই। দেখতে দেখতে নিজেও যে কখনও সখনও হুল্লোড়ে মেতে যাই। মাঝে-মধ্যে হয়তো অতিরিক্ত করে ফেলি, সেটা হয়তো শরীরে সয়না। শরীরটা খারাপ হলে মনটা একটু দুর্বল হয় বৈকি! তবে সেটা সাময়িক। এখন দিব্বি আমি একজন যুবক। হ্যাঁ, আপনার সাথে পাল্লা দেব বৈকি! হা হা হা।
আপনিও ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কমপক্ষে দুটো গল্প চেপে গেলেন। এক, একটা প্রেমের গল্প যার ট্রাজিক পরিণতি হয়েছে ১৯৭১-এ। দুই, ধাঙড়পট্টির আড্ডা। খামাখা মৃত্যুচিন্তা না করে গল্প দুটো লিখতে বসে যান।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

চলুক চলুক

****************************************

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

১৯৭১ এর কথা বলছেন? সেতো ছিল পাকিস্তানী আমল। কবেই তা ছাড়িড়ে মাড়িয়ে পার হয়ে এসেছি। এখনতো আমি একজন গর্বিত বাংলাদেশী।
আর আড্ডার কথা যদি বলেন, কত ওজনদার নামিদামি লোকেদের দেখা পেয়েছি সে সময়ে। সেসব নামতো আজ আর বলা যাবেনা। আর সে আড্ডবাজির সময়কালওতো ছিল বেশ কয়েক বছর। সহস্র রজনীরও অধিক।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আজকে আমার মনটা খুব খারাপ। ছোট্ট একটা পাখির বাচ্চা আমার জানালার নীচে কোনায় বসে ছিল। আমি ওকে ঘরে নিয়ে এসেছিলাম কারণ ও উড়তে পারে না আর বাইরে বিড়াল আছে। ও ঘরে থাকলে বিড়ালের হাত থেকে বাঁচবে ভেবেছিলাম কিন্তু ওকে বাঁচাতে পারলাম না। পাখিটা কিছুই খেল না। কিভাবে খাওয়াতে হয় তাও আমি জানতাম না। আমার একটা ভুলের জন্য একটা জীবন ঝরে গেল। নিজেকে খুনি মনে হচ্ছে। অনেক কাঁদলাম কিন্তু কিছুতেই মন থেকে এই বোঝা কমছে না। তাই মনে হল একটু সচলায়তনে দেখি কিছু পড়লে হয়ত মনটা ভালো লাগবে। এসে দেখি আপনার এই পোস্ট ‘জীবন-এক বহতা নদী’। খুব অবাক হলাম। আমি যখন ভাবছি যে কালকেও বাচ্চা পাখিটার জীবন ছিল কিন্তু আজকে নাই তখনই এমন একটা লেখা পড়া।

ফাহিমা দিলশাদ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

তা, লেখা পড়ে মনটা ভাল হলো কিনা তাতো জানালেন না!

অতিথি লেখক এর ছবি

মাফ করবেন, ব্যস্ততার কারণে উত্তর দিতে একটু দেরি হয়ে গেল। আসলে কারো মৃত্যুর কারণ হওয়া অনেক বড় আর ভয়ানক একটা ব্যপার তাই মন ভালো হয়নি। জানি না কখনো নিজেকে মাফ করতে পারব কিনা। যাই হোক আপনার লেখা পড়ে ভালো লেগেছে। আমার বাবারও একটু প্রেসার আছে। হয়ত আপনি আমার বাবার বয়সিই হবেন। ভালো থাকবেন।

ফাহিমা দিলশাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

মানব জীবনে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। আছে অতীত আর চরমতম সত্য হচ্ছে বর্তমান, মানে ঠিক এই মুহূর্তটি ।

চলুক

আপনি তো হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগিয়ে দিলেন মন খারাপ

মাসুদ সজীব

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

কখনও সখনও বেদনাও সুখকর হয় বৈকি! বেদনাবিলাশ আরকি!
যাহোক, বেদনা জাগানোর জন্য দুঃখিত। মন খারাপ

দীনহিন এর ছবি

কদিন ধরে ভাবছি, সংসারে বেঁচে থাকার অপর দিকটিতো প্রতিটা মূহুর্ত মৃত্যুর প্রতিক্ষায় থাকা। যেন রেলস্টেশনে বসে আছি শেষ ট্রেনের অপেক্ষায়। হাতে একটি ম্যাগাজিন, নাম তার 'সচলায়তন'।

মৃত্যুর প্রতীক্ষায় হাতে 'সচলায়তন'? না, প্রৌঢ়দা, সচলায়তন বরং শেষ ট্রেন থেকে একেবারে প্রথম ট্রেনটিতে তুলে দেবে আপনাকে! না হলে, এত্ত এত্ত সচল আছে কি করতে!!

মুক্তিযুদ্ধের সময় চখন বিহারি পাকসেনা নিয়ে এসে তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো।

তার আর কোন খবর জানা গিয়েছিল? তাকে নিয়ে লিখুন না আলাদা করে!

আহা, কত কথা! কতযে স্মৃতি!

আগে কোথাও বলেছিলেন, অনেক স্মৃতি জমানো রয়েছে আপনার! বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধের উপর! লিখুন না, প্রৌঢ়দা! এগুলো না লিখলে, না জানালে, আমরা সচল থাকব কি করে, বলুন তো?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

কিছু স্মৃতি একান্তই নিজের যা কারও সাথে শেয়ার করা যায়না। আর যতটুকু বলা যায় তাতো বলছিই।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।

এক লহমা এর ছবি

জীবনকে ভালবেসে হিন্দু মেয়ে মুসলমান ছেলের সাথে অন্য কোথাও চলে যেতে চেয়েছিল। বদলে পরিণতি হোল পাকসেনাদের হাতে বলি হয়ে। চোখ জ্বালা জ্বালা করে।

লিখুন ভাবনাদা, লিখুন। জীবন-নদীর ঘাটে ঘাটে আহরিত কাহিনীগুলি লিখতে থাকুন। তার পর যেদিন জীবন মোহনায় মিশবে, মিশুক।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

'মরণ তোমার হার হলো যে মনের কাছে।
ভাবলে যারে কেড়ে নিলে সে যে দেখি মনেই আছে,
মনের মাঝেই বসে আছে।'

ধন্যবাদ, ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

"চরৈবেতি - চরৈবেতি, চল, অগ্রসর হও, এই চলার নামইতো জীবন।"

চলুন, ভাবনাভাই, চলতে থাকুন। আর লিখতেও থাকুন - আপনার কাহিনিগুলো নিসন্দেহে আমাদের প্রেরণা যোগাবে।

____________________________

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এ মানব জনম এক পরম পাওয়া ! প্রতিটা মূহুর্ত বাঁচার আনন্দ উপভোগ করো। বাঁচার মতো বাঁচো। মন যখন যা চাইবে তাই করো। এ মানব জীবন বড়ই অনিশ্চিত। আমি বলি, মানব জীবনে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। আছে অতীত আর চরমতম সত্য হচ্ছে বর্তমান, মানে ঠিক এই মুহূর্তটি । এ জগতে কে কবে আগামীকাল দেখেছে!

সমস্ত লেখাজুড়ে মনখারাপিয়া বাতাস ছুটোছুটি করলেও এই লাইনগুলো পড়ে মন ভালো হয়ে যাবে নিশ্চিত। শেষ বেলায় এই বোধটুকুই জেগে থাকুক। মানব জনমে আর কি চাওয়ার আছে। আপনার কিন্তু লেখার অনেক গল্পই আছে সেটা বিটুইন দ্য লাইন বোঝা যায়। সুতরাং দেরী না করে আনন্দের সাথে লিখতে শুরু করুন।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

["কোই এ-নাউমেদি মা রো, উমেদ হা অস্ত্।
সেই এ-তারিকি মা রো, খুরশেদ হা অস্ত্।।" ফার্সী কবিতা
অর্থাৎ,
"জীবনে আশাও আছে নৈরাশ্যও আছে। আশা থাকতে নিরাশ হব কেন? আশাই আমার পথ। চারিদিকে এত আলো, চাঁদ-সুরুজ-তারা থাকতে আমি আঁধেরাকেই সাচ্চা বলে মেনে নিতে রাজী নই।"/quote]

ধন্যবাদ।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

মানব জীবনে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। আছে অতীত আর চরমতম সত্য হচ্ছে বর্তমান, মানে ঠিক এই মুহূর্তটি।

আসলে মানব জীবনে বর্তমান বলেই বরং কিছু নেই, আছে শুধু বাস্তব অতীত আর বিমূর্ত ভবিষ্যৎ। যে মুহূর্তটিকে আপনি বর্তমান বলে ভাবছেন, তা আসলে অতি সাম্প্রতিক অতীত যা ঘটে গিয়েছে এবং অতি নিকটবর্তী ভবিষ্যতে যা ঘটতে চলেছে তার একটি সংমিশ্রন। প্রতি মুহূর্তেই আমাদের মনে আগের মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির অনুরণন চলতে থাকে, আর আসন্ন ভবিষ্যতের একটি রুপরেখা সৃষ্টি হয়, এ দুটি অনুভবের সমষ্টিই হল বর্তমান।
যাই হোক, আপনার তো রয়েছে দেখা যায় সমৃদ্ধ অতীত, সুতরাং উজ্জল ভবিষ্যৎ। আপনার লেখামালায় সে সবেরই প্রতিধ্বনি দেখতে চাই।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার বিশ্লেষণ ভাল লেগেছে। ভবিষ্যৎ উজ্জল! বলছেন?
হাসি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ভবিষ্যৎ যেহেতু অতীতেরই সম্ভাব্য ফলাফল এবং আপনার অতীত যেহেতু সমৃদ্ধ, সুতরাং ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে বাধ্য চোখ টিপি , চালিয়ে যান।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হাল নাগাদ করা হয়েছে। হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।