ঈশান জয়দ্রথের সাথে শেষবার যা যা কথা হয়েছিল

??? এর ছবি
লিখেছেন ??? (তারিখ: শনি, ০৬/১০/২০০৭ - ৫:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

ঈশান জয়দ্রথকে শেষ দেখা গেছে কবে? কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। বিগত শতকের শেষদিকে হঠাত্ করেই হারিয়ে গেল সে। তার আগে হারিয়ে গেছিল বিষ্ণু বিশ্বাস, একই সময়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল শাহেদ শাফায়েত। ঈশান তখনো ছিল। ১৯৯৪ সালে বের হওয়া ওর বইটার মতই ধুলোমলিন, নিরব। বিষ্ণুকে নাকি একটা গাড়ি নিঃশব্দে ফলো করত, ভয়ে নীল হয়ে যেত বিষ্ণু, হাঁপাতে হাঁপাতে এসে ঢুকত সিনোরিটা রেস্তোরাঁয়। শাহেদকে হাজিরা দিতে হত পুলিশকে প্রায়ই, পুলিশের প্রয়োজনে। ঈশান জয়দ্রথ তখন থেকেই গুটিয়ে যাচ্ছিল, আমার সাথে কদাচিত্ দেখা হত ওর, দেখা হলেও আলাপ একদমই জমত না। তো, একদিন পাওয়া গেল ওকে। একটু খোশ মেজাজে ছিল সে, গিয়ে দাঁড়ালাম ওর সামনে। ১৯৯৪ সালের সেই টগবগে কবিটিকে আর চেনাই যাচ্ছিল না। চারপাশের ওর বন্ধুদের আতঙ্ক, মৃত্যু, স্যানাটোরিয়াম, রিহ্যাব মিলে ওর চেহারায় কী এক অনপনেয় ছাপ রেখে গেছে! কিন্তু আমি তবু ঠিক করলাম আক্রমণ করব। আক্রমণ করব একদা যাকে আমি বানিয়েছিলাম এবং যার শুদ্ধতার কাছে আমি পরাজিত হয়ে গিয়েছিলাম।

.........................................

সু র: "ঝিঁঝিট" বের হবার পর তোমার বিস্ময়কর উত্থান এবং পরমুহূর্তের স্তব্ধতাকে আমার হাউইবাজির আস্ফালন মনে হয়।

ঈ জ: শিশুসুলভ এরোগ্যান্স, নিশ্চয়ই তুমি আমাকে তোমার অস্তিত্বের সবচে বড় হুমকি মনে করো?

সু র: এরকম ভাবনায় আত্মপ্রসাদ হয়! কিন্তু সত্যি কথা হল, তোমার উপস্থিতিতে আমি স্রেফ কৌতুকবোধ করেছি।

ঈ জ: কৌতুক কেন?

সু র: প্রেক্ষাপট, বন্ধু প্রেক্ষাপট। আমার যাবতীয় মূর্ততা, প্রেমঅপ্রেম, সীমাবদ্ধতা এবং উতরানোর ফ্যান্টাসী। তার মাঝে তুমি স্রেফ অর্ধসত্য মাত্র।

ঈ জ: তুমি কি এখনো আমাকে তোমার অস্তিত্বের উপজাত মনে করো?

সু র: কেন করব না? তুমি যখন ফ্রন্টফুটের স্কয়ারকাটে বাউন্ডারি আর মুহূর্মুহু হাততালি পাচ্ছ, আমি তখন এক মুগ্ধ নন-স্ট্রাইকার। ব্যাকফুটে গ্ল্যান্স করে-করে তোমাকে এগিয়ে দিয়েছি স্ট্রাইক। কিন্তু, আমি জানতাম, ঝাঁপিয়ে-পড়া একটি ক্যাচে যখন তোমার যাবতীয় অ্যাডভেঞ্চার ড্রেসিংরুমের পথ ধরবে, দিনের আলোর সাথে পাল্লা দিয়ে ওভার কমে আসবে, রানরেটের পারদ তুরীয়দশায় উঠবে, পিচের আচরণ হঠাত্ করে বদলাতে শুরু করবে, ফিল্ডারদের পাঠিয়ে দেয়া হবে বাউন্ডারি লাইনে আর প্রতি বলেই বোলার খুঁজবে ব্লকহোল.... তখন এই আমাকেই পরিসংখ্যানের পাগলা ঘোড়ার সওয়ার হতে হবে।

ঈ জ: কিন্তু তুমি যখনই গ্লাভস খুলে ফেলো, আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি আমায় ঈর্ষা করছো তুমি।

সু র: ঈর্ষা করি ঠিক। বিশাল একটি অপচয়ের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি যে! সমাজসংশ্লেষের সপ্রতিভ চেহারাটার চর্চা করি, চিরুণি ও ছুরিপকেটে আড্ডা দিচ্ছি ভদ্রলোকদের সাথে। এরচে’ চিরকাল যদি অনাদৃত থাকতে পারতাম! সঙ্গী হিসাবে তোমার কথা ভেবেছি, কিন্তু তোমার অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে একটি অপার্থিব শুদ্ধতার মধ্যে। সেখানে আমি নেই, কোনোদিন যেতেও চাই না।

ঈ জ: অভিমান?

সু র: বরং বল "স্রষ্টার অভিমান" -- ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের কাহিনী তো তোমার পড়া।

ঈ জ: তাহলে নিশ্চয়ই বলা যায় "সৃষ্টি স্রষ্টাকে ছাড়িয়ে গেছে"।

সু র: না। প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে। স্রষ্টার অবিশুদ্ধতায় লালিত হয়ে সৃষ্টি বিশুদ্ধতার ধ্যান ধরছে। লোকসঙ্গীতের ভেতর মার্গীয় সঙ্গীত, চলতি ভাষায়, কানাছেলের নাম পদ্মলোচন!

ঈ জ: ফিলসফি থাক, তোমার মেজাজ চড়ে যাচ্ছে। তুমি তো আবার "অবিশুদ্ধতা"-র পূজারী!

সু র: নিশ্চয়ই। আমি শার্টের হাতায় সিগারেটের পোড়া দাগটিও গোপন করতে চাই না।

ঈ জ: আমি সেখানে রিপু করে দিতে চাই। কল্পনা জাগ্রত হোক জনগণের।

সু র: এভাবেই বুঝি তোমার যাবতীয় নারীপ্রেম ঈশ্বরপ্রেমে সমাহিত হয়?

ঈ জ: অনুপস্থিতির উত্তাপ। তোমার দেহতত্ত্ব সেখানে যায় না জানি।

সু র: শোনো, কবি নামে একটা কবিতা লিখেছি আমি। সেখানে শ্রাবণরাতে একটা চোখ-না-ফোটা বেড়ালছানার কান্না কবিকে ঘুমাতে দেয় না। কবি ওকে নিয়ে ভাবে, ভাবতে ভাবতে একসময় তার মনে হয়, বেড়ালের বাচ্চাটাই সে! কোনো কবিকে রাতভর অনিদ্র রাখছে!

ঈ জ: দুটো অস্তিত্ব পরস্পরকে বদলে নিচ্ছে, কীভাবে সম্ভব?

সু র: পারস্পরিক সর্বনাশের উপলব্ধির এক নিয়মে। তোমার ঐশ্বরিক ভালবাসা এর মূর্ততাকে নস্যাত্ করে দেয়।

ঈ জ: "তার রোগশয্যার পাশে আমি যেন হই একটি করুণ কমলালেবু" -- হাস্যকর!

সু র: কিন্তু অর্থহীন নয়। অর্থহীন নয় বলেই আত্মপ্রকাশে আমি তোমার থেকে স্বচ্ছ।

ঈ জ: স্বচ্ছতা কবিতার একমাত্র শর্ত নয়।

সু র: আমি মনে করি স্বচ্ছতা জীবনের গভীরতম শর্ত।

......


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কিশওয়ারকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য হয়েছিল ।
'৮০ দশকের মতো এতো ক্ষ্যাপাটে,আত্নধ্বংসী,দুর্দান্ত কবিদল নিকট সময়ে বোধ হয় আর জন্মাবেনা ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

ঠিক। কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারকে আমিও দেখেছি কাছে থেকে। বিশেষ করে যখন সে অন্যসব ডাইমেনশন-এর অশরীরী প্রাণীদের অস্তিত্ব বোধ করত তার আশপাশে। আশি-র দশক নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ বই লেখার ইচ্ছা আছে আমার।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দরকারী উদ্যোগ ।
কিশওয়ার এবং তার সমসাময়িকদের আরো কাছ থেকে দেখেছেন এরকম আরেকজন সম্প্রতি সচল হয়েছেন-মাহবুব লীলেন ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

মাল্টিপল নিক এ্যাবিউজ নামে একটা শর্ত চালু হয়েছে কিছু ব্লগে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন ধরনের লেখা অনেক লেখকই ভিন্ন ভিন্ন নামে লেখেন।
ইংল্যান্ড-আমেরিকায় স্বনামখ্যাত সাংবাদিকরা ভিন্ন কলম-নামে জনপ্রিয় ধারার ফিকশন লেখেন।
নামগুলো এখন ব্র্যান্ডিং-প্যাকেজের অংশ। ব্র্যান্ড লয়্যালদেরকে বিভ্রান্ত করবে এমন কোনো পণ্য একই ব্র্যান্ডনামে ছাড়তে নিষেধ করেন মার্কেট বিশেষজ্ঞরা।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

??? এর ছবি

আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা এতটা প্রফেশনাল ছিল না। হাসি আর আমি আমার নিকের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। নিকের অস্তিত্ব আমার নিজের অস্তিত্বকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেছিল।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

ফারুক হাসান এর ছবি

যদিও এই দ্বন্দ্ব থাকার কথা না- মাঝে মাঝে মনে হয়, কই কোনো ডুয়েল তো হচ্ছে না, কেবল টিপ্পনী- তারপরও ধূলিকণার আশ্রয়ে গড়া উঠা জলবিন্দুকেই আমরা বৃষ্টি বলে উচ্ছসিত হই-আর তখনই দ্বন্দ্ব আসে আড়মোড়া ভেঙ্গে- কে কার স্রষ্টা- উত্তর মেলা ভার।

এতো ভারী মজার খেলা!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

??? এর ছবি

বাহ্!
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

??? এর ছবি

মনে হয়! হাসি
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।