দেখা হবে। পর্ব-৩।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: সোম, ২৪/০৩/২০০৮ - ১০:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

পর্ব-২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ সময় দুপুর বারোটা। সকাল ন'টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ার কথা ছিল।। ইশতিয়াকের আসবার কথা ছিল সাড়ে আটটায়। এখন বাজে সাড়ে দশটা। এবং ইশতিয়াক এখনো অফিসে আসেনি।

প্রবল বিরক্তি এবং টেনশন নিয়ে আপন মনেই দু'বার মাথা নাড়লেন আলহাজ মাহফুজ সরকার। সুরমা-কুশিয়ারা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড এর এম ডি তিনি। সাধারণতঃ তিনি টেন্ডার জমা দেওয়ার মতো সাধারণ ব্যাপারে নিজেকে জড়ান না। তাঁর দায়িত্ব হোল প্রতিদিন সকালে তিনটা সংবাদপত্র থেকে টেন্ডার নোটিশের বিজ্ঞাপন পড়া এবং পছন্দসই বিজ্ঞাপনগুলো (যদি থাকে) খুঁজে বের করে লাল কালিতে দাগ দেয়া। খবরের কাগজগুলো তারপর চলে যায় ইশতিয়াকের টেবিলে। ইশতিয়াকের কাজ হচ্ছে সেগুলোকে আর একবার ইভ্যালুয়েট করা এবং এদের মধ্যে থেকে বাছাই করা বিজ্ঞাপনগুলোকে কেটে একটা ফাইলে জমিয়ে রাখা। সপ্তাহের শেষদিনে জমাকরা বিজ্ঞাপন গুলো নিয়ে তিনি আর ইশতিয়াক বসেন। ফাইনাল সিলেকশন করার কাজটি আজও তিনি নিজে করেন। যদিও ইশতিয়াকও ইদানিং একাজে যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে উঠেছে, তবুও তাঁর এখনো পুরোপুরি আস্থা হয়নি।

আজকের টেন্ডারটি জমা দিতে হবে গাজীপুরের বেঙ্গল টেক্সটাইলে। প্রায় পচাত্তর লাখ টাকার কাজ। কাপড়ের রং সাপ্লাই এর কাজ। মাহফুজ সাহেবের ব্যবসা ইন্ডেন্টিং এর। জার্মানীর বোয়েরিঙ্গার কোম্পানীর বাংলাদেশের একমাত্র পরিবেশক তাঁরাই। ফলে বোয়েরিঙ্গার কোম্পানীর তৈরী রং কিনতে চাইলে সুরমা-কুশিয়ারা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ছাড়া উপায় নেই। সাধারণতঃ তিন সাড়ে তিন পার্সেন্ট কমিশন থাকে এই জাতীয় অর্ডারে। আজকের অর্ডারটা পেলে প্রায় তিন লাখ টাকার একটা ইনকামের ব্যবস্থা হোত।

ইশতিয়াক এখানে কাজ করছে গত দেড় বছর ধরে। এর আগে এই কাজগুলো করতো মোহসীন বলে একটি ছেলে। সে হঠাত্ একদিন অফিসে এসে মাহফুজ সাহেবকে কদমবুসি করে বললো, যে সে লটারীতে আমেরিকার ইমিগ্র্যান্ট ভিসা পেয়ে গেছে এবং সে দু সপ্তাহের মধ্যে নিউইয়র্ক চলে যাবে। অকস্মাত্ এই জাতীয় নোটিশে তিনি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। দু সপ্তাহের মধ্যে ফট করে একজন বিশ্বাসযোগ্য লোক পাওয়া তো মুখের কথা না, আর উপর সে সময়ে বেশ কয়েকটা বড় বড় কাজের জন্য টেন্ডার তৈরীর প্রয়োজন ছিল। কোন কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় এই চিন্তা করছিলেন তিনি, কিন্তু সাহায্য এলো অপ্রত্যাশিত ভাবে।

তার মেয়ে রেশমা একদিন সঙ্গে করে ইশতিয়াককে নিয়ে এলো। "ড্যাড, তুমি তোমার কাজে একে নিয়ে নাও। এ খুব ভাল ছেলে, ভেরী ডিপ্নেন্ড্‌বল্‌। আমার সঙ্গে পড়েছে ইউনিভার্সিটিতে, পাশ করে বর্তমানে বেকার।"
মাহফুজ সাহেব মনে মনে প্রমাদ গুনেছিলেন। ছেলেটি রেশমার প্রেমিক নয়তো? কায়দা করে কি তাহলে রেশমা ছেলেটিকে ব্যবসার মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ইশতিয়াক চলে গেলে তিনি সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলেন রেশমাকে। সে তো হেসেই আকুল।
"তুমি রীতিমতো প্যারানয়েড হয়ে যাচ্ছো ড্যাড। আমি যাকেই বাড়িতে নিয়ে আসবো তাদের সবাইকে কি আমার প্রেমিক হতে হবে? তোমাকে এই ব্যপারে এতো অস্থির হতে হবেনা। প্রথমতঃ আমার এই মুহুর্তে কারো সাথে কোন লাভ এ্যফেয়ার চলছে না। আর দ্বিতীয়তঃ ইশতিয়াক ছেলে হিসেবে ভাল, তবে তার সাথে বাবলি বলে একটি মেয়ের খুব খাতির আছে। হয়তো তার সাথে বিয়ে-টিয়েও হবে। অতএব তোমার এই মুহুর্তে দুশ্চিন্তা করার কোনই কারণ নেই।"

কিছুটা আশ্বস্ত হলেও পুরোপুরি দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারেননি তিনি। কেননা রেশমাকে তিনি খুব একটা ভাল বুঝতে পারেননা। সে খেয়ালী প্রকৃতির মেয়ে। তার কথা বদলাতে দু' সেকেন্ড সময় লাগেনা। রেশমার বিয়েটা না হওয়া পর্ষন্ত আশঙ্কাটা থেকেই যাবে। কিন্তু এই মুহুর্তে রেশমা বিয়ের কথা কানেই তুলছেনা, কেননা সে বর্তমানে ছবি আঁকা শিখছে। বিয়ের সঙ্গে ছবি আঁকার বিরোধটা কোথায় একদিন জানতে চেয়েছিলেন তিনি।
"ছবি আঁকাটা তো বিয়ের পরও শেখা যাবে।"
"একটা জিনিস সম্পর্কে না জেনে কথা বলাটা ঠিক না, ড্যাড। তুমি কি জানো, আমি কেন ছবি আঁকা শিখছি?"
মাহফুজ সাহেবের মুখে এসেছিল, যেহেতু তোর বাপের অনেক টাকা আছে আর তোর খেয়েদেয়ে আর কোন কাজ নেই তাই। কিন্তু সে কথা রেশমাকে বললে সে হয়তো রাগের চোটে ঘরে আগুন লাগিয়ে বসবে। তাই তিনি ভাল মানুষের মতো মুখ করে বলেছিলেন, "না, আমি জানিনা।"
"আমি জানতাম যে তুমি জানোনা। জানলে তুমি এই জাতীয় কথা আমাকে বলতে না।"
"ঠিক আছে। এখন আমাকে বল।"
"ড্যাড, আমি চাই যার সাথে আমার বিয়ে হবে সে যেন পারফেক্ট একটা ছেলে হয়। তার যেন কোন খুঁত না থাকে আমার চোখে। কিন্তু পারফেক্টনেস এর সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। তুমি যাকে পারফেক্ট ভাববে, তাকে হয়তো দেখেই আমার গায়ে ঝাঁটার বাড়ি পড়তে থাকবে। তাই আমি ভাবলাম বিয়েটা যেহেতু আমারই, তাই আমার কাছে পারফেক্ট লাগে এমন একজনকে আমাকে খুজে বার করতে হবে। কিন্তু সে কেমন দেখতে হবে তা তো জানিনে। তাই ভাবলাম, প্রথমে একটা পারফেক্ট মুখের ছবি এঁকে ফেলি। তারপর সেই ছবিটাকে খবরের কাগজে ছাপিয়ে একটা বিজ্ঞাপন দেব,'আপনাকে আমার ভীষন প্রয়োজন। অতি সত্বর যোগাযোগ করুন।' নীচে আমার আমার নাম আর ফোন নাম্বার দিয়ে দেব। ব্যাস- সাতদিনের মধ্যে পাত্র নিজেই এসে হাজির হবে। মামলা কমপ্লিট। তারপর তোমার কাজ হচ্ছে সানাই আর বিরিয়ানীর বন্দোবস্ত করা। প্ল্যানটায় খুঁত শুধু একটাই, যে আমি ছবি আঁকতে পারিনে। অতএব, মোস্ট লজিক্যাল ডিসিশন হচ্ছে ছবি আঁকা শেখা। এবং এই মুহুর্তে আমি সেই কাজেই ব্যস্ত। আমার প্রগ্রেস ভালই চলছে। আর অল্প কিছুদিন পরেই আমি তোমাকে ছবিটার প্রাথমিক খসড়া দেখাতে পারবো। কি- খুশী এবার?"
মাহফুজ সাহেব সে কথা শুনে হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারেননি। গালে কষে একটা চড় মারতে পারলে হয়তো ঠিক কাজ হোত, কিন্তু মেয়েটাকে আদর দিয়ে এই পর্যায়ে তিনিই নিয়ে এসেছেন, অতএব সে চড়টা নিজের গালেই মারাটাই বেশী যুক্তিযুক্ত হবে।
"কিন্তু মা, সেই চেহারার কোন ছেলে যদি এই দেশে না থাকে? অথবা তার যদি ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকে? কিংবা সে যদি তোমার এই বিজ্ঞাপন না পড়ে?"
"তুমি শুধু নেগেটিভ কথা বলো, ড্যাড। আমি নিশ্চিত জানি সে আসবে। সে এই বিজ্ঞাপনের অপেক্ষায় বসে আছে বহুদিন। প্রতিদিন সে সংবাদপত্র কিনছে এই বিজ্ঞাপনটি পড়বার জন্য। আমাকে তাড়াতাড়ি ছবি আঁকাটা শেষ করতে হবে। তোমার সাথে কথা বলতে বলতে আমার একগাদা সময় নষ্ট হোল।" রেশমা দ্রুত পায়ে তার ঘরে চলে গিয়েছিল।

মাহফুজ সাহেব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন। আজকালকার ছেলেমেয়েদের বোঝা বড়ই কঠিন। এই যেমন, এখনো পর্যন্ত ইশতিয়াকের কোনই দেখা নেই। গাজীপুর সময়মতো যেয়ে পৌঁছাতে পারলে হয়।
সাধারণতঃ তিনি নিজে টেন্ডার জমা দিতে যান না। এই কাজটি বরাবরই ইশতিয়াক করে থাকে। কিন্তু আজকের টেন্ডারটি একটু বিশেষ প্রকৃতির। বেঙ্গল টেক্সটাইল এর পারচেজ অফিসার হারুন সাহেব তাকে গত সপ্তাহে ফোন করে বলেছিলেন যে তার শরীর ভাল যাচ্ছে না, ডাক্তার বলেছে একটু বাইরে বেড়িয়ে আসতে। ইঙ্গিত বুঝতে কষ্ট হয়নি মাহফুজ সাহেবের, এই ব্যবসায়ে টিকতে হলে এইসব আলাপের মূল অর্থ ধরতে পারাটা খুবই জরুরী। তাই তিনি সিঙ্গাপুরের দুটো রাউন্ড-ট্রিপ টিকিট কিনেছেন, সাথে দিয়েছেন সাতদিনের হোটেল ভাড়া আর অন্যান্য খরচা বাবদ কিছু ডলার। ভেবেছিলেন নিজে গিয়ে স্বহস্তে দিয়ে আসবেন। কিন্তু ইশতিয়াক যে হারে দেরী করছে, তাতে টেন্ডারটাই জমা পড়ে কিনা শেষ পর্যন্ত তারই ঠিক নেই। ধীরে ধীরে তার বিরক্তি রাগে পরিনত হতে থাকে।

খোলা দরজা দিয়ে কে একজন উঁকি দিল। মাহফুজ সাহেব মুখ তোলেন। ড্রাইভার সাদেক আলী। অন্যান্য দিন তিনি দশটার মধ্যে অফিস ত্যাগ করেন।
"স্যারের কি আইজকা দেরী হইবো বাসায় যাইতে?"
প্রবল রাগে মাহফুজ সাহেব ধমকে ওঠেন," আমার যখন সময় হবে তখন আমি বাসায় যাবো। তোমাকে কৈফিয়ত দেবার তো কোন দরকার দেখিনা। আমাকে কারণে অকারনে বিরক্ত করবে না সব সময়। যাও- তুমি মাহে আলমকে পাঠিয়ে দাও।"

সাদেক আলীর মুখ এক লহমায় অদৃশ্য হয়। তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যে দরজায় উঁকি দেয় বসন্তের দাগে ভরা আর একটি মুখ। পানের রসে মুখ লাল। ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জর্দার সুগন্ধ। মাহফুজ সাহেব এই গন্ধকে একদম সহ্য করতে পারেন না। তিনি পকেট থেকে র‌্যালফ লরেনের কোলোন মাখা রুমাল বের করে নাক ঢাকেন।
"আমাখে খি ডাকলেন, সার?"
মাহে আলম এই কোম্পানীর টাইপিস্ট। যদিও সে বহুদিন থেকে কাজ করছে এখানে, তবে কোন এক অজানা কারণে মাহফুজ সাহেব তাকে একদম সহ্য করতে পারেন না। সে বিহারী পরিবারের ছেলে, কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পর কেন যেন তাদের পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়নি। মাহে আলমের কথায় স্পষ্ট অবাঙ্গালী টান বোঝা যায় এতদিন পরেও, এবং সে এই টানটি ত্যাগ করার তেমন কোন চেষ্টাও করেনা সজ্ঞানে।
টাইপিস্ট হিসেবে সে খুবই খারাপ। প্রথম দিকে প্রতি লাইনেই সে কমপক্ষে পাঁচটা বানান ভুল করতো। আজকাল প্রতি লাইনে একটা-দু'টা হয়। ধমক দিলে সে মাথা নীচু করে আস্তে আস্তে বলতো,"আমিতো ঠিকই টাইপ কারলাম। মাগার টাইপ রাইটারটা পুরানা আছে। দো-চার লেটার আপনা আপনি ছুটকে গিয়া।‘"
এখন আর সে এই অজুহাত দেখায়না, কেননা নতুন টাইপ রাইটার কেনা হয়েছে বছর খানেক আগে। তবে মাহফুজ সাহেবের বিশ্বাস যে আর মাস ছয়েকের মধ্যেই পরনো অজুহাতের আগমন ঘটবে।
মাহে আলমের প্লাস পয়েন্ট একটাই যে সে প্রচন্ড বিশ্বাসী লোক। মাহফুজ সাহেব এবং অফিসের জন্য সে যে কোন কাজ চোখের পাতা এক বিন্দু না কাঁপিয়ে করতে পারে। এখনো সমস্ত টাকা পয়সার হিসেব মাহে আলমই দেখে।
"ইশতিয়াক সাহেব কখন আসবেন জানো কিছু?"
"আমাখে তো কিচু বোলেন নাই। তোবে আসে পোড়বেন জোল্‌দী।"
"টেন্ডারের কাগজ-পত্র সব তৈরী আছে তো? কোন সই-টই করা বাকী নেই তো?"
"জ্বি স্যার, সোব কিচুতো কাল রাতেই খতম হোয়ে গেছে স্যার। আমি এখোন নোয়োনতারা শাড়ী হাউসের টেন্ডারটা রেডী কোরতেছি। এটা পোরশো দিন ডিউ আচে।"
"ঠিক আছে, তুমি যাও। ইশতিয়াক এলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও।"
মাহে আলম ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার মুহুর্তেই বিকট আওয়াজে ফোন বেজে উঠলো। মাহফুজ সাহেব নিজে কখনো অফিসিয়াল ফোন রিসিভ করেননা। অফিসের ফোনটা তাই রাখা আছে ইশতিয়াকের টেবিলে। তার ব্যক্তিগত সব ফোনই আসে মোবাইলে। মাহে আলম ফোন ধরতে গেল। মাহফুজ সাহেব ঘড়ি দেখলেন। দশটা সাইত্রিশ বাজে।
মাহে আলম আবার ঘরে এলো। অভ্যাসবশতঃ মাহফুজ সাহেবের হাত চলে গেল পকেটের রুমাল অন্বেষনে।
"স্যার, একজোন ইস্তি স্যারের তালাশ করতেছেন। আপনার সাথে কোথা বোলতে চান।"
"কি নাম?"
"নাম জানিনা। বোলতেছেন খুব দোরকার আছে।"
"নাম জিজ্ঞাসা করোনা কেন? এতদিন পরেও এইসব জিনিষ কি তোমাদের শিখাতে হবে আমাকে? দাও, ফোনটা এখানে এনে দাও।"
দু-তিনটে চেয়ার টেবিল ঘড়াং ঘড়াং শব্দে সরিয়ে মাহে আলম ফোনের তার টেনে ফোন নিয়ে এলো।
"হ্যালো, আমি মাহফুজ সরকার বলছি।"
"স্লামালেকুম, আমার নাম মুশতাক আহমেদ। আমি ইশতিয়াকের ভগ্নিপতি।"
"ওয়ালায়েকুম আস-সালাম। ইশতিয়াক সাহেব এখনো অফিসে আসেননি। আমি কি কিছু বলবো তাকে?"
"জ্বি- আপনি যদি কাইন্ডলি তাকে বলেন যে আমি তার অফিসে আসছি অল্পক্ষন পরেই। খুবই জরুরী একটা ব্যপারে তার সাথে আমার একটু আলাপ আছে। সে যেন অবশ্যই আমি না আসা পর্যন্ত অফিসে আমার জন্য অপেক্ষা করে। আমি দু' ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যাবো।"
"আপনার নামটা কি বললেন?"
"মুশতাক আহমেদ। আমি তার বোনের হাসব্যান্ড।"

মাহফুজ সাহেব ফোন নামিয়ে রাখেন। ভগ্নিপতি মানে যে বোনের হাসব্যান্ড এটা ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন ছিলনা। বিরক্তিতে তার মুখ কুঁচকে আসে। কি দরকার কে জানে। তবে কথা শুনে মনে হোল গুরুতর কিছু একটা হবে। হয়তো টেন্ডারটা শেষপর্যন্ত তাকেই গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। আজকালকার ছেলেমেয়েদের দায়িত্ববোধের বড়ই অভাব।

ইশতিয়াক এলো এগারোটার পাঁচ মিনিট আগে। সে গিয়েছিল যাত্রাবাড়ীতে নয়নতারা শাড়ী হাউসে রঙের স্পেসিফিকেশন আনতে। ফিরবার পথে তার মোটরসাইকেল এ্যক্সিডেন্ট করেছিল। খুব মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, শুধু ইশতিয়াকের হাতে কেটে গিয়েছে অল্প। সে মাহফুজ সাহেবের মোবাইলে ফোন করেছিল কয়েক বার, কিন্তু ফোনের রিঙ্গার অফ করা ছিল বলে মাহফুজ সাহেব তা টের পান নি। এবং সর্বশেষে, গাজীপুরের টেন্ডার জমা দেবার শেষ সময় আসলে বিকাল চারটা, দুপুর বারোটা নয়।

মাহফুজ সাহেব আশ্বস্ত হয়ে হাসেন। রেশমা তাহলে তাকে একেবারে খারাপ লোক দেয়নি। কার মেয়ে দেখতে হবে না ? তিনি এবার ইশতিয়াকের হাতের দিকে নজর দেন।
"তুমি কি ডাক্তার-টাক্তার দেখিয়েছ কিছু?"
"খুবই অল্প কেটেছে স্যার, ডাক্তারের দরকার নেই।"
"অল্প কাটাও পরে অনেক ভোগাতে পারে। অবহেলা করোনা। টাকা লাগলে মাহে আলমের কাছ থেকে নিয়ে যাও।"
"লাগবে না স্যার। চলেন তাহলে এবার গাজীপুরের দিকে রওনা দেই।"
"অতো ব্যস্ত হয়োনা ইশতিয়াক। চলো, আগে কোথাও লাঞ্চ খাই। কাছাকাছি ভাল খাবার জায়গা কোথায় আছে?"

সাদেক আলীর হাতে গাড়ীটা যেন উড়ে চলছে। মাহফুজ সাহেব পরিতৃপ্ত ভংগীতে পেছনের সিটে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছেন। লাঞ্চটা আজকে একটু বেশীই হয়েছে। সামনের সিটে বসে আছে ইশতিয়াক। সে একটু ছটফট করছে, কেননা অনেকক্ষন তার কোন সিগারেট খাওয়া হয়নি। গাজীপুর পৌছাতে এখনো বেশ বাকী।
মাহফুজ সাহেব বললেন,"সাদেক, দেখোতো কোন ভাল গানের সিডি আছে নাকি? থাকলে বেশ জমজমাট দেখে একটা লাগাও। জার্নির সময় ধুমধাড়াক্কা মার্কা গান না হলে ঠিক জমেনা।"

দামী স্পীকারে নুসরাত ফতেহ আলী খানের কাওয়ালী বেজে উঠলো গমগম করে। ইশতিয়াক গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে দিল। সে গান এমনিতেই খুব একটা পছন্দ করেনা। তার উপর এজাতীয় উঁচু স্কেলের গান শুনলে তার বমি আসে।

উত্তরা আবাসিক এলাকা পার হবার সময় মাহফুজ সাহেব বললেন,"ভাল কথা ইশতিয়াক, তোমার ভগ্নিপতি, আই মীন তোমার বোনের হাসব্যান্ড, মুশতাক সাহেব ফোন করেছিলেন। কি যেন একটা জরুরী আলাপ ছিল তার।"

পরের পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।


মন্তব্য

পরিবর্তনশীল এর ছবি

চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

জাহিদ হোসেন এর ছবি

এই উপন্যাস (??)টি যদি পড়তে ভাল না লাগে, তাহলে প্লিজ আমাকে জানাবেন কিন্তু। আমি তাহলে এটি শেষ করার দায়িত্ব থেকে রেহাই পাই। এবং অন্য কিছুতে মনোনিবেশ করতে পারি।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ভালো না লাগার কোন কারণ তো আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
শুধু ভালো লাগার হাজারটা কারণ মাথায় ঘুরছে।

তবে একটা ছোট্ট অনুরোধ,
উপন্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য লেখাও চাই...
একদিন উপন্যাসের একটা পর্ব দিলেন... আরেকদিন অন্য একটা গল্প।
তবে উপন্যাসের সমস্যা হচ্ছে... একটা ধারাবাহিকতা থাকা লাগে পড়ার ক্ষেত্রে।

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

জাহিদ হোসেন এর ছবি

দেখি পুরনো গল্প দু একটা খুঁজে পাই কিনা।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

উদাস এর ছবি

অবশ্যই লেখা থামাবেন না। খুব ভালো লাগছে, তবে এবারের অধ্যায়টা কি একটু ছোট হয়ে গেছে নাকি আমার ক্ষুধা বেড়ে গেছে বুঝলাম না। এগিয়ে যান, আপনার উপন্যাসটি অনুসরণ করছি নিয়মিত।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কেউ বলে লম্বা, কেউ বলে খাটো
কেউ বলে বড় করো, কেউ বলে কাটো
কেউ বলে ছোট বলে মিটলো না খিদে
কারো কাছে বড় বলে চোখ ভরে নিঁদে
আমার কি দোষ ভাই, গরীব লেখক
মাপসই হয়নাকো মোর বকবক।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

স্বপ্নাহত এর ছবি

নিয়মিত পড়ছি কিন্তু...

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কিন্তু কি?

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

নিঝুম এর ছবি

দ্বিতীয় পর্ব মিস করে ফেলেছিলাম।এখন ২য় আর ৩য় একসাথে পড়লাম।দারুন হচ্ছে।

চালিয়ে যান লেখক।
--------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।