বাংলাদেশ আর বাংলাদেশে নেই।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: শুক্র, ০৫/০৯/২০০৮ - ৪:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

থাকি আমেরিকার এক কোণায়। মাঝারী আকারের একটি শহরে। এই শহরটি ভালই লাগে আমার। খুব গরম না, খুব ঠান্ডা না। ঝামেলা শুধু একটাই। আকাশটি প্রায়শঃ মেঘে ঢাকা থাকে। সারা বছর জুড়ে বৃষ্টি হয়,এমন একটি বদনাম রয়েছে শহরটির। যদিও দলিল-দস্তাবেজ ঘাঁটলে দেখা যাবে যে আমেরিকার অন্য শহরের তুলনায় এখানে বৃষ্টির পরিমাণ কমই।

সূর্য্যের দেখা বেশী মেলেনা বলেই অনেকের কাছে শহরটিকে ভাল লাগেনা,অনেকে মনে করে যে এখানে বেশীদিন থাকলে লোকে নাকি পাগলাটে কিসিমের হয়ে যায়। কে জানে সে কথাটি কতটুকু সত্যি, তবে একটা জিনিস কিন্তু সত্যি। আমেরিকার বেশ কয়েকটা নামকরা (কুখ্যাত) সিরিয়াল কিলারের সাথে এই শহরের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কারো জন্ম হয়তো এই শহরে, কেউ হয়তো একসময় থাকতো এখানে।

যাকগে সেকথা। আমাদের এই শহরে বাঙ্গালীর সংখ্যা বেশী না। মেরেকেটে পাচ-ছ'শোর বেশী হবেনা। প্রথমে যখন এখানে আসি তখন এর দশ ভাগও ছিলনা। কালেকালে নতুন বাঙ্গালীর সংখ্যা বেড়েছে। যারা এখানে আসে তারা কেউই আর এখান থেকে যেতে চায়না। হয়তো চাকরীর জন্য, কেউ হয়তো শহরটির পরিবেশের জন্য, কেউ হয়তো এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য। আমরা যারা পুরনো, তারা ঠাট্টা করে বলি, ইট্‌স আ ওয়ান ওয়ে স্ট্রীট।

আমি এমনিতেই ঘরকুনো কিসিমের লোক। কাজ থেকে ঘরে ফিরে আসি ঘড়ির বাঁধা নিয়মে। তারপর আর বেরুইনে কোথাও। কারো বাড়িতে দাওয়াত থাকলে অবশ্য অন্য কথা। উইক এন্ডে যারা লং ড্রাইভে বেরোয়,আমি তাদের দলে নেই। শুনি কতজনে এদিক সেদিক যায়, হাইকিং, র‌্যাফটিং, বাঞ্জি জাম্পিং। তিনদিনের ছুটি পেলে তো কথাই নেই। এক দু দিন একস্ট্রা ছুটি নিয়ে লোকে উড়ে চলে যায় অন্য স্টেটে।

আমাদের তেমন কোন আত্মীয়-স্বজনও নেই যে তাদের কাছে বেড়াতে যাবো। আছে শুধু একপাল বন্ধু, কিন্তু তারা সবাই ইস্ট কোস্টে। কেউ নিউইর্য়ক, কেউ বস্টন, কেউ ফিলাডেলফিয়া। তারা ডাকাডাকি করে, কিন্তু কেন জানিনে ওদিকে যেতে ভয় লাগে। তাই শেষমেশ আমাদের আর কোথাও যাওয়া হয় না। শুধু দুবছরে একবার বাংলাদেশে যাই। সেখানে গিয়ে অতিকষ্টে জমানো যত্ সামান্য টাকা আর ছুটি খুইয়ে আসি। ব্যাস- এইই আমাদের ঘুরে বেড়ানো।

যখন দেশের কথা মনে হয়, তখন টেলিফোনই ভরসা। তারে ভেসে আসা মায়ের গলাটি আজকাল বড় নরম মনে হয়। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে আজকাল অনেক কিছুই পয়সা দিলেও বাজারে পাওয়া যায় না। মা মাঝে মাঝে বলেন, ছেলেবেলায় কত রকমের মাছ খেতাম, আজকাল আর সেগুলো দেখি না। মানুষ জনও কেমন যেন বদলে যাচ্ছে আজকাল। আগের মানুষেরা কত ভাল ছিল, এখন সবাই বড় ব্যস্ত, পয়সা কামানোয় ব্যস্ত।

বন্ধুরা মাঝে মাঝে ফোন করে। সেদিন একজন ঠাট্টা করে বললো,"খবর শুনেছিস? বাংলাদেশকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।"
"তার মানে কি? বাংলাদেশ আবার কোথায় গেল? ডুবে গেল নাকি?"
"আরে না। তুই তো খবর-টবর রাখিস না। বাংলাদেশ এখন নিউইয়র্কে।"
"গোটা দেশ নিউইয়র্কে চলে এসেছে? কিভাবে?"
"এখানে এলেই টের পাবি। এখানকার এস্টোরিয়া কিংবা জ্যামাইকা এলাকায় গেলেই বুঝতে পারবি।"
"একটু খুলে বলতো ব্যাপারটা।"
"বাংলাদেশের সবকিছু এখন এখানে দোস্ত। কি চাস? সবই পাবি এখানে। মাছ খেতে চাস? এখানে সব আছে। শাকপাতা, জামাকাপড়, বইপত্র, খেলনা, পানের মশলা, মায় বাংলা গালি পর্যন্ত তুই এখানে পাবি। এখানে ফুটপাথে লোকেরা লুংগী পরে হাঁটে, পানের পিক ফেলে অবলীলায়, চায়ের কাপ আর সিগারেট নিয়ে রাজনীতির তর্ক চলে রাতবিরেতে। এসব জিনিস তুই এখন আর বাংলাদেশে গিয়ে পাবিনা। সব এখন এখানে।"

এবার সামারে মনে কি এক কুবুদ্ধির উদয় হোল। কোথাও বেড়াতে গেলে মন্দ হয়না। কাছাকাছির মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া। চলো-তাহলে সেখানেই যাওয়া যাক। ডিজনীল্যান্ডে সেই কবে একবার গিয়েছিলাম।

ক্যালিফোর্নিয়াতে সূর্য্যের আলো বড্ড প্রখর। আমাদের শীতে অভ্যস্ত চামড়ায় গরম লাগে। ডিজনীল্যান্ডের ভিতরেও গাছ দেখলেই থমকে যাই। একটু ছায়ায় জিরিয়ে নিলে হোতনা? ছেলেমেয়েরা মুখ বাঁকায়, "ইউ গাইজ আর গেটিং ওল্ড। লেটস গো!"

শুনেছি ক্যালিফোর্নিয়াতে নাকি বাংলাদেশী দোকান-টোকান আছে মেলা। সেখানে যেতে ইচ্ছে হোল। একটি খুঁজে পেলাম, নাম লিটল ঢাকা। বাহ্‌, বেশ চমত্কার নামতো! জিপিএস এর সাহায্য নিয়ে মিনিট পনেরোর মধ্যেই হাজির হলাম সেখানে।

দোকানটি ছোট, কিন্তু সেখানকার মানুষেরা বিরাট। হূদয়ের দিক দিয়ে। আমরা বেড়াতে এসেছি শুনেই একজন চা সাধেন, আর একজন পিয়াজুঁ এগিয়ে দেন। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখি দোকানে থরেবিথরে সাজানো আছে কত রকমের জিনিস। বিশেষতঃ মাছ। কত রকমের মাছ। তার সব গুলোর নামও জানিনা আমি। এইসব মাছ বাংলাদেশ থেকে এসেছে? আমার প্রশ্ন শুনে দোকানের লোকেরা হাসে। "হ্যাঁ ভাই-সব মাছই বাংলাদেশের। প্যাকেটটা দেখেন না! সব বাংলায় লেখা।"
ওমা-তাইতো! রংচঙ্গে প্যাকেটের গায়ে বাংলায় লেখা মাছটির নাম।

একপাশে রয়েছে বাংলা পত্রিকা। কিনতে চাইলে কিনতে পারেন। না চাইলে এক কাপ চা নিয়ে বসুন না! চা খান আর পত্রিকা পড়ুন।

কি খিদে লাগছে? দোকানে খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত আছে। কি খাবেন? রুটি-সব্জী, নাকি ভাত-মাছ? নাকি মুরগী বা গরুর সালুন? আছে, সবই আছে। হাত ধুয়ে বসে পড়ুন। সদ্যকাটা লেবুর টুকরো থাকবে প্লেটের পাশে। কাঁটা-চামচ দিয়ে খেতে পারেন, বা ইচ্ছে হলে একদম দেশী কায়দায় হাত দিয়ে মাখিয়ে খান। কেউ কিছু বলবে না, কেউ চোখ বাঁকা করে আপনার দিকে তাকাবেও না। আমরা সবাই বাংলাদেশী।

যদি আরও একটু ভাল কিছু খেতে মন চায়, তাহলে বলে ফেলুন। উনাদের ধোঁয়া-ওঠা বিরিয়ানী খেলে আপনার মুখের হাসিটি মেলাবে না বহুক্ষণ। (ওই দোকানের বিরিয়ানীটা আসলেই ভাল খেতে।)

আমাদের অবস্থা ছিল হাভাতের শাকের ক্ষেত দেখবার মতো অবস্থা। যাই দেখি, তাই ভাল লাগে। যাই দেখি, তাই কিনতে ইচ্ছে করে। আহা- ফার্মের ফ্রোজেন মুরগী খেতে খেতে টাকরা ব্যথা হয়ে গেছে। এখানকার সদ্য জবাই করা মুরগী যদি নিয়ে যেতে পারতাম। পাশ থেকে দোকানদার উসকে দেন,"আমাদের বললে আমরা হাঁসও নিয়ে আসতে পারি। যা স্বাদ! একবার খেলে আর ভুলতে পারবেন না।"

লোভে আমাদের চোখ জুলজুল করে।

দোকানের সামনে কয়েকটি ছোট টেবিল-চেয়ার পাতা। সেখানে চলছে ধুন্ধুমার আড্ডা। কান পাতলে শোনা যাবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ম্যাককেইনের ভাষণের জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ, শোনা যাবে আশরাফুলের কি ধরণের শাস্তি হওয়া উচিত খারাপ খেলার জন্যে, শোনা যাবে ঠিক কবে নাগাদ ওবামাকে মেরে ফেলবে সাদারা। বিনে পয়সায় এমন জ্ঞান আহরণের সুযোগ দেশী ভাইয়েরা ছাড়া কে দেবে আপনাকে?

আমাদের অবস্থা দেখে দোকানের লোকেরা হাসে। "আহা-আর কিছুদিন থেকে যাননা, একসাথে ঈদ করি। চাঁন রাতে এই দোকানের সামনে বসে বিরাট আড্ডা। আপনার খুব মজা পাইতেন।"

আর চাঁন রাত? গভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলি শুধু। বুঝলাম, আসলেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশে নেই। সেটি এখন প্রবাসে।

কোথায় যেন একবার সুনীল গাংগুলী লিখেছিলেন যে বাংলা সংস্কৃতি ধরে রাখবে বাংলাদেশীরাই। আমার মনে হোল, তার কথা সত্যি, তবে সে বাংলাদেশীরা বাংলাদেশে থাকেনা, তারা থাকে বিদেশে। কি গভীর মমতায় আমরা সবাই দেশের ঘ্রাণটুকু বুকের ভিতরে ধারণ করে আছি।

দোকান থেকে বেরোনোর সময়ে স্ত্রী বললো,"ও ভাল কথা- বাড়ী ফিরবার আগে আমাদেরকে আবার এই দোকানে আসতে হবে একটু।"
"কেন? সবাইকে খোদা হাফেজ বলবার জন্যে।"
"ফাজলামো করোনা। আমি ওনাদেরকে বলেছি যে আমি এখান থেকে এক ডজন ফ্রেশ শক্ত মুরগী আর গোটা ছয়েক হাঁস নিয়ে যাবো। আর কয়েক পদের মাছ।"
"তোমার কি মাথা খারাপ? এইসব জিনিস নিয়ে প্লেনে উঠতে দেবে আমাদের?"
তার নির্বিকার উত্তর, "সেটা তোমার সমস্যা।"

পরের কাহিনী আর নাইই বা বললাম, তবে বাড়ীতে ফিরে এসে শক্ত মুরগীর মাংস চিবোতে ভালই লাগছে।


মন্তব্য

রাগিব এর ছবি

সারা বছর বৃষ্টি = সিয়াটল?

লিট্ল ঢাকাতে গিয়েছিলাম। সান্তা ক্লারাতে ক্যাফে ঢাকা আছে, বে-এলাকায় গেলে ঘুরে আসতে পারেন, তেহারীটা ভালোই ওদের।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অমিত এর ছবি

ক্যাফে ঢাকা আর নাই, উঠে গেছে।ফুল টাইম জব করে ঐটা চালানো সম্ভব হচ্ছিল না আর।
সিয়াটলের ঐদিকটায় যাওয়া বাকি আছে। কোন সময়টা ভাল যাওয়ার জন্য ?

রাগিব এর ছবি

সেকী, গত বছরের আগস্টেও তো ছিলো!!

বে-এলাকার সবেধন নীলমণি দুইটা বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টের একটা তাহলে বন্ধ হলো - অন্যটা তো জঘন্য। মন খারাপ

শিকাগোতে সোনারগাও রেস্টুরেন্ট ছিলো বছর চারেক আগে, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমেরিকা নিয়ে একসময় একটা কৌতূহল ছিলো। কালে কালে তা মিলিয়ে গেছে। এই আমেরিকার প্রতি ভালোবাসা মিইয়ে যাওয়াতে এক হয়ে ওঠা হলো একজনের সঙ্গে। কিন্তু কিছু কিছু জায়গার নাম শুনলেই ধড়াক করে ওঠে ভেতরে। খুব ছোটবেলা থেকে চাইতাম, জায়গাটা কেমন একটু দেখবো বলে! আমেরিকার মাটিতে প্রথম পা দিয়ে ছাদখোলা গাড়িতে ধূধূ রাস্তা মাড়িয়ে যাবার সময় গুনগুন করবো "মাই ফার্স্ট ডে ইন মেরিকা" গানটা!

এখনোব্দি হলো না। হবে বলেও মনে হয় না। ইচ্ছা নেই, শখ নেই। তবে ধড়াক ভাবটা রয়ে গেছে। আপনার লেখায় কয়েকটা নাম আর গণক মিস্তিরির কমেন্টে সেই ধড়াক ভাবটা ফিরে এসেছে। হয়তো মিইয়েও যাবে একটু পরেই। তবু ভালো লাগাটা হয়তো রয়ে যাবে পরবর্তী কোনো উষ্কানির জন্য।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অমিত এর ছবি

আরে ধুগো ভাইজান তাড়াতাড়ি চইলা আসেন। নিজের না থাকলেও কারও না কারও শালীর ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বেশ্বাস করিনা কাউরে। এক দ্রোহী মেম্বর যে মূলা ঝুলাইছে আমাগো সামনে। এই করে করে আমাদের দুই জিগরী দোস্তের এখন মুখ দেখাদেখি বন্ধ। আপনেও আবার মূলা ঝুলান। এইবার যে কী দেখাদেখি বন্ধ হয় আল্লাই জানে!

এইত্তা নাই। আপাততঃ আগের মন্তব্যের তিন নাম্বার বাক্যে একটা "না" শব্দ বাদ পড়ছে, এইটা কইয়া যাই। শালি সংক্রান্ত পরবর্তী কথাবার্তা জনগণ আইসা বলবোনে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আশাকরি অচিরেই আম্রিকায় আপনার পদ(গো)ধূলি পড়িবে। তবে আমার শালী-টালী নেই একথা আগে থেকেই বলে দিচ্ছি কিন্তু।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

টেস্ট।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দারুণ হইছে। এতোদিন ফন্টের একটা ঝামেলা ছিলো আইই তে। এখন কাটলো মনেহয়। সেই পুরানা রূপ। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আহারে! পড়ে মজাও লাগল আবার মনও খারাপ হয়ে গেল মন খারাপ
সিডনীতেও অনেক বাংগালী, এখানেও সবই পাওয়া যায়, এমন কিছু নাই যা পাওয়া যায়না, তবে থুতু ফেলা বা লুংগি পরা পাবলিক নাই খাইছে আমি অন্তত দেখিনি এখনও। সিডনীর বৈশাখী মেলায় গেলে বোঝা যায় এখানে যে কত কত বাংগালী। কিছুদিন আগে দেশের বনফুল মিষ্টির একজন এখানে আসে, তারপর থেকে উনি বনফুলের মজার মজার মিষ্টি সাপ্লাই দেয় এখানের বিভিন্ন বাংগালী দোকানে। বালুসাই নামে যে অসম্ভব মজার এক মিষ্টি আছে সেটা উনি আসার আগে জানতামই না দেঁতো হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

রাফি এর ছবি

কখনো দেশের বাইরে যাইনি বলে দেশকে কখনো এভাবে অনুভব করিনি। লেখাটা নতুন করে বাংলাদেশকে চেনালো।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমাদের এখানে বিদেশীরা বলে সাউথ আমেরিকানদের পরই নাকি বাঙালীরা নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে বেশী সিরিয়াস ...মত-দ্বিমত দুটোই আছে, তবে ক্ষেত্রবিশেষে কথাটা সত্যি

এবারের টোকিও বৈশাখী মেলায় দেখলাম একজন ঝালমুড়ি বানাচ্ছে ...স্বাদে মূল ঝালমুড়ির ধারে-কাছে দিয়েও যায়নি, তাও দেখি পাবলিক সমানে গিলছে হাসি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জাহিদ হোসেন এর ছবি

দুটো কথা আছে।
আমিতো জানতাম যে আমরাই ঐতিহ্য নিয়ে সবচেয়ে বেশী মাতামাতি করি, আমরা সাউথ আমেরিকানদের পিছে সেকেন্ড হইলাম কেমনে?

দেশের খাবার কি আমরা স্বাদের জন্যে খাই? আমার মনে হয়না। আমরা খাই স্মৃতির জন্যে। ঐ বিস্বাদ ঝালমুড়ি খেলে কারো মনে পড়ে স্কুলের বন্ধুদের কথা, কারো মনে পড়ে গাছের তলায় বসে প্রেমিকার সাথে আড্ডা দেবার কথা। প্রিয় কবি আবুল হাসানের "পাতা কুড়োনীর মেয়ে" বলে একটি কবিতা আছে। সেই ঢং এ বলি,
"-প্রবাসী বাংগালী, তুমি কি খাচ্ছো?
-আমি খাচ্ছি স্মৃতি, মায়ের স্মৃতি, বাবার স্মৃতি,
আমি খাচ্ছি দেশের স্মৃতি।"

ভাল থাকবেন।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

কনফুসিয়াস এর ছবি

এখানে বাঙ্গালী কম না, আবার সিডনির মত এত বেশিও না। তবে বাঙ্গালী দোকানগুলো বেশ কাজের, অনেক কিছু তুলে নিয়ে আসে দেশ থেকে, কেবল বই ছাড়া। এটাই দুঃখ। মন খারাপ
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

পরিবর্তনশীল এর ছবি

জাহিদ ভাই- একটা কথা হাচা কইরা কন তো। এত সুন্দর করে লিখেন ক্যাম্নে? এত আপন করে লিখেন ক্যাম্নে? আমার মনে হচ্ছিল লিটল ঢাকায় আমি আপনাদের সাথে হাঁটছি।

আর হ্যাঁ- বুকের ভেতর বাজছে
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।

আপনার লেখা পড়লে একটা সমস্যা হয়
প্রত্যেকটা লেখা প্রিয় পোস্টে এড করে ফেলতে ইচ্ছে করে।
পরে ভাবি - কী দরকার
আপনার ব্লগে গেলেই তো
আমার প্রিয় সব লেখা পড়া হয়ে যাবে।

এখন অসংখ্যবার পড়া একটা লেখা আবার পড়ব
'নির্বাসনে যাবার আগে''

ভালো থাকেন।
কিন্তু একটা অভিযোগ--
আরো অনেক অনেক লেখা চাই।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

জাহিদ হোসেন এর ছবি

হাজার মাইল দূর থেকে আমার লেখাটি পড়েছেন এবং সেকথাটি আমাকে জানিয়েছেন কি দারুন সব শব্দাবলী দিয়ে। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই আমার। আর একটি কথা-আপনি যদি আমার লেখার প্রশংসা করেন, তাহলে আমাকে তো আপনাকে প্রশংসার রক্তগংগা বইয়ে দিতে হবে। আপনার লেখার ভক্ত এ ব্লগের সবার সাথে আমিও।
"লিটল ঢাকা" দোকানটি এমন আহামরি কিছু নয়, এমন দোকান আমেরিকার বহু শহরেই আছে (আমাদের এখানে নেই অবশ্য)। কিন্তু তারপরেও যে কেন এত ভাল লেগে গেল খোদা জানেন। ইউটিউবে ওদের একটা বিজ্ঞাপনী ভিডিও আছে, সেটা এখানে দিলাম।

জানিনা স্পীডের কারণে দেখতে পারবেন কিনা।
ভাল কথা-এখানে বলে রাখা ভাল যে লিটল ঢাকা তার প্রচারের জন্য আমাকে কোন অনুরোধ বা জোর করেনি। আমি শুধু আমার ভাল লাগার কথাটিই বলছি এখানে।

কাজের চাপে লেখা-টেখা শিকেয় উঠেছে, এর মধ্যেই যতটুকু পারি লিখি।
আপনি ভাল থাকুন।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍লেখাটা পড়েই জল এসেছিল জিভে, আর ভিডিওটা দেখে খিদে পেয়ে গেল রীতিমতো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

জাহিদ হোসেন এর ছবি

এতেই খিদে পেল?
তাওতো আমি আর একটি দোকানে দেখা শুটকি মাছের তরকারি আর ঝালঝাল গরুর ভুড়ির কথা বলিইনি। যদিও আমি নিজে এ দুটো পদের কোনটারই ভক্ত নই, অনেকেই এদুটি পেলে আর কিছু খেতে চান না।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍দুটোর কোনওটাই খাই না হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

শিক্ষানবিস এর ছবি

এটাই বোধহয় সময়ের প্রয়োজন। এভাবেই হয়তো সময় বিশ্বকে এক করতে চাইছে।
লেখাটা খুব ভাল লাগল, অনেক কিছু অনুভব করতে পারলাম।

স্বপ্নাহত এর ছবি

আমি অলস মানুষ। ভালৈ হৈছে। পরিবর্তনশীল আমার সব কথাগুলা লিখে দিয়ে গেসে। আমার আর কষ্ট করতে হৈলোনা। হাসি

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আমিও আলসে একই রকম, তাই উত্তরটিও ওখানেই রইলো।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

নিরিবিলি এর ছবি

আপনার লিখা পড়ে অর্থহীনের একটা গান মনে পড়ে গেল-কত দিন দেখি না তোমায় আমার বাংলাদেশ

আমরা দেশে থেকে অতীতের বাংলাদেশ অনেক মিস করি। আপনার লিখাটা ছবির মতো লাগল পড়তে। হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

আসলেই, দেশে থাকি বলেই দেশের খুব ছোট্টখাট্ট বিষয়গুলো ঘটনাগুলো আমাদের মধ্যে ঐভাবে অনুরণন তোলো না। সত্যি, আপনারাই বাংলাদেশটাকে বড় আদরে বুকে ধরে রেখেছেন।
ধন্যবাদ আবেগস্পর্শি চমৎকার লেখা উপহার দেয়ার জন্য।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।