ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি...০০৬

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি
লিখেছেন জোহরা ফেরদৌসী (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/১২/২০১২ - ১২:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাতাসে শীতের গন্ধ । প্রকৃতিতে রংয়ের উৎসব শেষ করে পাতাদের ঝরে পড়াও শেষ । বাদামী রংয়ের শুকনো পাতা মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোথা থেকে ভেসে এল অনেক দিন আগের এই রকম শীতের কোন ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতার গন্ধ...নজরুলের সমাধির পাশে লাইব্রেরীর গেইটে লাল রঙ্গা বাস থেকে নেমে কলা ভবন পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিতাম ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতা । একটু ছিড়লেই সেই পাতা থেকে বের হ’ত অদ্ভুত এক সৌরভ...কোথা হতে ভেসে এলো ফেলে আসা দিনের গায়ে লেগে থাকা সেই সৌরভ...আর তার হাত ধরে চলে এল বন্ধুর মত বন্ধুদের স্মৃতিরা...

... ...

এই সব অদরকারী স্মৃতির কোন পরম্পরা নেই । তবু যদি কারুর আগ্রহ থাকে, তাহলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থপঞ্চম পর্ব এখানে ।

... ...

২০.

টিফিন পিরিয়ডের পরে ইসলামিয়াত ক্লাস হচ্ছে । হুজুর স্যার ধর্ম শিক্ষা বই থেকে আমাদের কিছু একটা লিখতে দিয়ে খবরের কাগজের পেছনে মুখ লুকিয়েছেন । কিছুক্ষণের মধ্যে কাগজটি মৃদু দুলতে শুরু করেছে । সেই সঙ্গে মৃদু নাসিকা গর্জনের আভাষও পাওয়া যাচ্ছে । আমরা জানি হুজুর স্যার এখন গহন ঘুমের দেশে বিচরণ করছেন । ক্লাসের ঘণ্টা পড়ার আগে জেগে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ । এই সময়েই জেগে উঠে আপাত “ভাল ছাত্রীর” মুখোশ পরা “কালো কালো” কিশোরীরা ।

দুরদানা আর আমি ঝোলা থেকে দুর্গম দুর্গ বের করে ভাগাভাগি করে পড়ছি । পড়ার সুবিধার জন্য ডেস্ক দু’টো কাছাকাছি টেনে আনা হয়েছে নিঃশব্দে, যাতে হুজুর স্যারের নিদ্রাভঙ্গ না হয় । ক্লাসের সবচেয়ে “মাসুম” চেহারার সবচেয়ে “হারামি” তন্বী (ওর চেহারা কেমন ছিল ? ঠিক একটি ধানের শীষের ওপর একটি শিশির বিন্দু । সবই চোখের “মায়া”! ) বিড়াল পায়ে চলে এসেছে আমাদের কাছে, “এই দুরদানা, কি বই পড়ছিস ? আজকে টিফিনে কী এনেছিলি ? শেষ করে ফেলেছিস ? বের কর ।”

দুরদানা আতঙ্কিত মুখে ব্যাগ থেকে টিফিনের বাক্স বের করে । বাক্সের গায়ে লেগে আছে পরোটার এক কোনা আর উচ্ছিষ্ট আলু ভাজির এক দলা । তন্বী তখন আলু ভাজির দলা দিয়ে পরোটা মুখে পুরে দিল । তারপর, নিম্ন কণ্ঠে কিন্তু ঝাঁঝালো সুরে বলে, “সব খেয়ে ফেলেছিস কেন ? তোকে না বলেছি যেদিন যেদিন ধর্ম ক্লাস থাকবে বাসা থেকে বেশী করে টিফিন আনবি ? পরোটা একটা বেশী দিতে বলবি তোর মাকে । কতবার বলব হুজুর স্যারকে ঘুমাতে দেখলে আমার খিদে পেয়ে যায় ? এই বার মনে থাকবে তো ? এই জোহরা, তুই কিন্তু সাক্ষী । মনে রাখিস । নইলে-তো জানিসই কি হবে তোদের এই সাধের মাসুদ রানার । রানা সোহানার সঙ্গে প্রেম করবে নাকি রূপার সঙ্গে প্রেম করবে সেই প্রশ্নের কোন উত্তরই জানতে পাবি না ।”

এবারে টিফিনের বাক্স দূরদানাকে ফেরত দিয়ে তন্বী বলছে, “দুরদানা, দে দেখি “সেই উসেন”টা দে । আগামী ধর্ম ক্লাসে ফেরত দেব ।” দুরদানার কম্পিত হাত থেকে নিয়ে “সেই উসেন”কে জামার ভেতরে চালান করে দেয় তন্বী । স্কুল ড্রেসের বেল্টের কারণে বক্ষদেশে ঝুলে থাকে মলাটবন্দী “সেই উসেন”, পড়ে যায় না ...ঠিক দুই মিনিটের মাথায় বোমাটা ফাটে...তন্বী ইচ্ছে করে জিওমেট্রি বক্সটা মাটিতে ফেলে দেয় এবং সজোরে চিৎকার করে ওঠে, “হুজুর স্যার, দুরদানা আর জোহরা আবার “নাপাক” মাসুদ রানা পড়ছে !”

হুজুর স্যারের নিদ্রা ভঙ্গ হয় । ক্রোধান্বিত হুজুর স্যার রক্তচক্ষু করে আমাদের দু’জনকে ধর্ম ক্লাসের ঘণ্টা না পড়া পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখেন । সেই সঙ্গে নসিহত করেন দুনিয়া ও আখেরাতে এই সব “নাজায়েজ” বই পড়ার ফলাফল কি ভয়ানক । দুর্গম দুর্গ “বাজেয়াপ্ত” হয় । পরে মুচলেকা দিয়ে হেড মিস্ট্রেসের কাছ থেকে দুর্গম দুর্গ “উদ্ধার” হয় ।

২১.

গ্রামার ব্যাপারটা যে আমার দুই চোখের বিষ তা বোধহয় আগে এক বার বলেছিলাম । ইংরেজী গ্রামারের টেন্স যেমন “অগম্য দুর্গ” ছিল আমার জন্য, তেমনি বাংলা ব্যাকরণের সমাস, কারক, অব্যয়ও ছিল ভয়াবহ “অভিশাপ” । বন্ধুদের সাথে চলচ্চিত্র দেখার নিমিত্তে টাকা ও অনুমতি চাহিয়া পত্র লেখা ব্যাপারটা তেমন খারাপ ছিল না । ভাব সম্প্রসারণও ভাল ছিল । ভাবের তো কোন অভাব ছিল না সেই সময়ে । মেঘ না চাইতেই জল এসে হাজির হত ( এখন হয়েছে পুরাই উল্টা । বেঁধে পিটালেও কোন ভাবের “উদ্রেক” হয় না ! কোথায় যে গেল সেই সব ভাবেরা ? ) । সমস্যা দেখা দিত লিঙ্গান্তর করা নিয়ে । জেন্ডার ডিসক্রিমেনশন ব্যাপারটা যে খুব “অন্যায়” তা আমি তখন থেকেই জানি । তাছাড়া, কি কি সব “আ- ই-ঈ- উ-ঊ প্রত্যয়” যোগে পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তরিত হয় এর “ভেদ” কিছুতেই ভাঙতে পারতাম না । একবার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের খাতা দিয়েছে ( পুংলিঙ্গ থেকে স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তর করতে বলা হয়েছে ), সেজভাই আমার খাতা সকৌতুকে পড়ছে,

জনক – জননী
হাঁস (হংস) – মুরগী
ঘোড়া (ঘটক) – ঘুড়ি
জেলে – জ্বালা
বন্ধু – বন্ধু

পড়া শেষ করে সেজ ভাইয়ের জিজ্ঞাসা, “বাকী সবগুলো শব্দেরইতো দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছে । বন্ধুর বেলায় ব্যাপারটা কী ?”

আমার সিরিয়াস মুখের জবাব, “বন্ধুত্বের কোন লিঙ্গান্তর হয় না । বন্ধুতো বন্ধুই ।”

সেজভাই কতটা কনভিন্স হয়েছিল জানি না । কিন্তু এই জীবনে আমি সেই নীতি থেকে নড়ি নাই । “বান্ধবী” শব্দটা আমার কাছে “গেঁয়ো গেঁয়ো” লাগত, এখনো লাগে । কাজেই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই আমার বন্ধু, কোন “বান্ধবী” নেই । যার সঙ্গেই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়ি ফেরা যায়, কবিতার আসরে আবৃত্তি শুনে এই পৃথিবীটাকে একটু নাড়া দেয়ার স্বপ্ন দেখা যায়, সেই তো বন্ধু । সে একটা ক্যাটক্যাটে নীল রঙয়ের হাওয়াই শার্টের ওপর টকটকে লাল সোয়েটার পরেছে, না সাদা কামিজের ওপর হালকা আকাশী নীল ওড়না পরেছে, তাতে কী আসে যায় ?

২২.

আমার ইমিডিয়েট বড় ভাই সোহেলের সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান ঠিক চার বছর তিন মাসের । ওর সঙ্গে “লাভ-হেইট” রিলেশনশিপের ব্যাপারটা এবার খোলাসা করি । আমি যখন ক্লাস সিক্সে ও তখন ক্লাস টেন এর ছাত্র । প্রেমে পড়ার বয়স ওর হয়ে গিয়েছে । সে যুগে তো আর খোমা খাতা, মুঠোফোন, ই-পত্র কিংবা রিয়েল টাইমের ভার্চুয়াল “কথোপকথনে”র ( মতান্তরে “চ্যাটিং” ) ব্যবস্থা ছিল না । তখন ছিল প্রেম নিবেদনের আদি অকৃত্রিম পদ্ধতি- স্বহস্তে লিখিত পত্র । সেই পত্র লিখে প্রেমিকার সকাশে পৌঁছানোর জন্যও অনেক উদ্ভাবনী পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হ’ত । মোট কথা, প্রেম নিবেদন ব্যাপারটার মধ্যে অনেক “আত্মত্যাগে”র বিষয় ছিল । যেমন ধরুন, প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে অনেক তরুণ প্রাণ হবু দয়িতার “নিষ্ঠুর” গার্জেনদের (যার মধ্যে বাবা, চাচা, জেঠা, মামা, কাকা, বড় ভাই, ছোট ভাই, ও পাড়াতুতো ভাইও অন্তর্ভুক্ত । পাড়াতুতো ভাইদেরই “রোষ” বেশী থাকতো, কারণ, তিনি হয়তো আগে প্রেম নিবেদন করে ব্যর্থ হয়েছেন ! ) হাতে শহীদ না হলেও, কাছাকাছি চলে যেত । যে প্রেমিক যত বেশী “নির্যাতিত” হয়েও প্রেমে অটল থাকতো, প্রেমিকার মন গলানোর সম্ভাবনা তারই বেশী থাকতো । প্রেমিকার মন গলানোর জন্য সে আমলে আঙ্গুল কেটে “রক্তাক্ষরে” প্রেমপত্র লেখার নজিরও ছিল । যদিও জানি না, সেই রক্ত আসলে খাঁটি ছিল কিনা । রক্ত হলেও সেটি প্রেমিকের নিজের রক্ত কি না সেই প্রশ্ন তুলে ডিএনএ টেস্টের মত “কূট” চিন্তা তখনকার প্রেমিকাদের মাথায় আসেনি । সম্ভাব্য প্রেমিকের কাছ থেকে “রক্তাক্ত” পত্র পেয়েই তখনকার বালিকারা নিশ্চিন্ত মনে মন-প্রাণ সঁপে প্রেমে পড়ে যেত ।

তখনকার প্রেমিক-প্রেমিকারা ছিল রোমিও জুলিয়েটের জীবন্ত প্রতীক । এখনকার মত সহজ ব্যাপার না । এখনকার বাবা-মাও যেন কেমন ! ছেলে মেয়ে প্রেমে পড়লেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে । আগের দিনের গার্জেনদের “দূর্বার প্রতিরোধের” আগুনে পুড়ে পুড়েই না প্রেম খাঁটি হ’ত ! যাই হোক, সোহেল তার প্রথম জুলিয়েটের দেখা পেয়ে গেল । এখনতো তাকে প্রেম নিবেদন করতে হবে । সমস্যা একটাই, ওর হস্তাক্ষরতো সহজে “পঠনযোগ্য” নয় । প্রেমিকাকে গিয়ে তার প্রেম পত্র পড়ে দিয়ে আসার ব্যবস্থাতো আর নেই । তাহলে উপায় ? হাতের কাছেই ছিলাম আমি, আমার হস্তাক্ষর কাজ চালানো গোছের । আরও একটা সুবিধা ছিল । সোহেলতো জীবনেও রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ পড়ে নাই, কোটেশন দিবে কোথা থেকে ? এ ব্যাপারেও আমি ওস্তাদ । কাজেই, আমার “প্রেমে পড়া” ভাই আমার শরণাপন্ন হল । আমাদের দু’জনের মধ্যে তখন নিম্নরূপ কথোপকথন হ’ল:

আমিঃ আমি পত্র লিখে দিব । কিন্তু তুই কি দিবি ?

সোহেলঃ তুই কি চাস ?

আমি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললামঃ এক, তুই কিছুতেই খেলার মাঠে স্যান্ডেল হারিয়ে এসে আমার সবুজ স্যান্ডেল নিতে পারবি না । দুই, আমার সুগন্ধিযুক্ত ইরেজার, পেন্সিল, কলম, ডায়রি ধরতে পারবি না । তিন, খবরের কাগজের সাত নাম্বার পাতায় আমার আগে কাঁচি চালাতে পারবি না ।

এখানে খবরের কাগজের সাত নাম্বার পাতার রহস্যটা বলি । আমাদের বাসায় তখনও দৈনিক পত্রিকা মানিক মিয়ার “ইত্তেফাক” ( সাধু ভাষায় প্রকাশিত ) রাখা হয় । সেই পত্রিকার সাত নাম্বার পাতায় একাধারে খেলার খবর ও চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপন থাকে । আমার ভাই ছিল আবাহনী তথা ফুটবলের “বদ্ধ উন্মাদ” সমর্থক । কাজী সালাউদ্দীন গোলপোস্টে কোন এঙ্গেল থেকে কয়টি শট ( সফল ও অসফল ) দিয়েছেন সব তার নখদর্পণে । সালাউদ্দীন ছিল আমার ভাইয়ের প্রথম প্রেম ( জুলিয়েটেরও আগে ) । কাজেই, সে নিয়ম করে প্রতিদিন আগের দিনের খবরের কাগজ থেকে খেলার পাতায় কাঁচি চালায় । তারপর, গরম ভাত লাগিয়ে পুরানো ব্যবহৃত খাতার পাতায় সংরক্ষণ করে । এদিকে আমিও একই পদ্ধতিতে রুপালী পর্দার অভিনেত্রী “আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন” ববিতার ( ববিতার প্রতি এই মুগ্ধতার জন্ম কবে থেকে, কি দেখে হয়েছিল মনে নেই । তবে, এখনো কাউকে খুব সুন্দর লাগলেই বলি, “কী সমস্যা ? আপনাকে অনঙ্গ বৌয়ের মত লাগছে কেন ?” ) মনোমুগ্ধকর ছবি সংগ্রহ করি । মাঝে মাঝে সালাউদ্দীনের ছবি আর ববিতার ছবি একই পাতার উল্টোদিকে ছাপা হয়ে যায় । তখন কোন একজনের পা নয়তো আরেকজনের গলা কাটা যায় । প্রায়শই আমি ববিতার নান্দনিক ভঙ্গিমার ছবি সংগ্রহে ব্যর্থ হই । কাজেই, এই সুযোগে আমি ববিতার গলা বাঁচানোর নিশ্চয়তা বিধান করতে চাই । আমি জানতাম, আমার “মজনু” ভাইয়ের জন্য এই তিন নম্বর শর্তটাই সবচেয়ে কঠিন হবে । কিন্তু, কি আর করা ? জুলিয়েটের জন্য রোমিও “সালাউদ্দীনের প্রেম” নির্বাসনে পাঠাতে সম্মত হয় (না হয়ে কোন উপায় ছিল না ) । তখন আমি ভাইয়ের হয়ে প্রেমপত্র লিখতে বসি । মনে আছে, নজরুলের “মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল” দিয়ে সেই পত্র শুরু হয়েছিল । আমার ভাইয়ের প্রথম তিন জুলিয়েটদের গোপন সংগ্রহে আমার শিল্পকর্ম এখনো থাকার কথা । প্রত্যেকেরই প্রথম চিঠিতে খোঁপায় তারার ফুলের “প্রলোভন” লেগে আছে । প্রেম নিবেদনে “তারার ফুল” খুব কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছিল ।

২৩.

মাধ্যমিক পরীক্ষার মাত্র একমাস বাকী । হঠাৎ একদিন খেয়াল হল, মারাত্মক দুরবস্থা আমার । ইসলামিয়াত পরীক্ষার কোন প্রিপারেশনই নেই । পুরো বইটা না হয় দু’দিনে পড়ে ফেলা যাবে । কিন্তু, হাদিসের কি হবে ? মানে, আরবিতো পড়তে পারি না ! শিশু বেলায় মসজিদে রাগী হুজুরের বাজখাই গলা শুনে এসে সেই যে খ্যামা দিয়েছিলাম, আর যাই নি । নানান কাজে মাও ব্যাপারটা খেয়াল করেনি । আমি ফস্কে গেছি । কিন্তু ইসলামিয়াত পরীক্ষায় হাদিসটাকে তো আইডেন্টিফাই করতে হবে, তা নইলে হাদিসের শানে নুযূল, ব্যাখ্যা করব কী করে ? এদিকে ইসলামিয়াত পরীক্ষায় “চিঠি” নম্বর (৮০%) না পেলে তো মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল হবে না । আমি “আতান্তরে” পড়ে গেলাম । তখন আমার “মীরজাফর + মজনু” ভাই এগিয়ে এলো, কেমন করে যেন আমার সকল দুর্দশার কথা ও বুঝে যেত ( যেমন, আমাকে হঠাৎ করে নামাজ পড়তে দেখলেই বলত, “আম্মা, কুম্ভকর্ণের পরীক্ষা কবে ? ওকে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে বলেন আম্মা, পড়াশোনা...” ) । আমার বিরস চেহারা দেখেই সোহেল বলল, “কিরে কুম্ভকর্ণ, কি হইছে ? ফাইনাল পরীক্ষার আর কয়দিন বাকী ?”

আমি তাকে সব খুলে বলার পরে, সে গম্ভীর হয়ে বলল, “কী করবি ? সেজ ভাইকে বলবি ? জানিসইতো সে তোকে “আলিফ জবর আ” থেকে শুরু করবে । তোর কি সেই সময় আছে ?”

আমি সজোরে ডানে-বামে মাথা নাড়ি, “নেই, এক দম নেই...”

“হু, কিন্তু ইসলামিয়াত পরীক্ষায় হাদিস চেনা খুব জরুরী । এক কাজ কর । কিন্তু সেজ ভাইকে কিছুতেই এই কথা বলবি না । ”

আমি আবারও সজোরে ডানে-বামে মাথা নাড়ি, “না, কিছুতেই বলব না...”

“তুই আরবি বানান না জানলেও অক্ষরগুলো তো মোটামুটি চিনিস । ঠিক ?”

আমি এবারে সজোরে ওপর-নীচ মাথা নাড়ি ।

“ঠিক আছে । আয় তোকে দেখিয়ে দেই কোন কায়দায় হাদিস চিনতে পারবি । ধর, জিম জবর জা হল বার নাম্বার হাদিস । মানে হল, মাতার পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত । দাল পেশ দু হল আট নম্বর হাদিস । মানে হল, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে মজুরী পরিশোধ কর ।”

এই ভাবে মোট বিশটি হাদিসের আইডেন্টিটিফিকেশন করতে এক ঘণ্টার মত সময় লেগেছিল । উপরি আরও একটা টিপস দিয়েছিল আমার “মীরজাফর” ভাই, “শোন, কোন রকমে ৪০ পৃষ্ঠা লিখলেই ৮০ নম্বর পেয়ে যাবি । প্রথম ১০ পৃষ্ঠার পরে যা ইচ্ছে হয় ( দরকার হলে গীতবিতান থেকেও কিছু লিখে দিয়ে আসতে পারিস ) তাই দিয়ে ৪০ পৃষ্ঠা ভরে দিয়ে আসবি । নির্ঘাত লেটার মার্ক্স পেয়ে যাবি । হুজুর স্যাররা খাতা পড়ে দেখে না, পাতা গুনে নাম্বার দেয় । ” আজকে কবুল করতে দ্বিধা নেই আমার “মীরজাফর” ভাইয়ের টিপস খুবই ফলপ্রসূ ছিল ।

২৪.

মাধ্যমিক ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে । আমার মেজভাই আমাকে তিন মাসের জন্য তার বাসায় থাকার জন্য নিতে এসেছে । আমি মহা খুশী । মেজভাইয়ের মেয়ে শিপুর বয়স তখন নয় মাস । মেজভাইয়ের বাসায় প্রচুর বই । আমার দিন মহা আরামে যাবে । সবচেয়ে বড় কথা “মীরজাফর” দাদু মনির (সোহেল) কাছ থেকে দূরে থাকা যাবে । পত্রিকার সাত নাম্বার পাতা শুধুই আমার । নিজের সকল স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি (ডায়রি, পেন্সিল ও সুগন্ধি ইরেজার) নিয়ে মেজভাইয়ের সঙ্গে চলে এলাম । মনে মনে মহা খুশী, “যা মীরজাফর, আগামী তিন মাস তুই মশার কামড় খা । কে তোকে মশারী টানিয়ে দেবে ? আর আমার সবুজ রংয়ের স্যান্ডেল ? সঙ্গে নিয়ে এসেছি । এবার মজা বুঝবি, আমাকে ছাড়া থাকতে কেমন লাগে...কত ধানে কত চাল এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবি ।”

মেজভাইয়ের বাসায় প্রথম দু’দিন বেশ ফুরফুরে লাগল । অফুরন্ত বই পড়া, গান শোনা, পরীর মত ভাইজীর সঙ্গে “আয় চাঁদ আয় চাঁদ”...আহা, জীবন কি স্বর্গীয় ! কিন্তু তিনদিনের দিন দুপুরে ভাত খাওয়ার পরে কি যে হ’ল, বিছানায় শুয়ে আর ঘুম আসে না । বইয়ের পাতা খোলা পড়ে আছে, কেমন যেন টানছে না...জানালা খুলে দিলাম নির্মল হাওয়ার জন্য...বিছানার বালিশটা পাল্টে নিলাম...কিন্তু কোন লাভ হ’ল না...কি যেন নেই...অথচ সবইতো ঠিক ছিল...এমনকি লেস-ফিতাওয়ালাওতো ঠিক সময়েই ডেকে উঠছে...

সেই নিশ্চল, নীরব দুপুরে আমার প্রথম “পেট পোড়ার” সঙ্গে পরিচয় হল...আমার “মীরজাফর” ভাইটার জন্য ভীষণ পেট পুড়তে লাগল...আমি আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম সেই পেট পোড়াতে মলম লাগাতে, কিন্তু পেট পোড়া এক সময় চোখের জলে পরিণত হ’ল...ঈশ্বরের সফটওয়ারের এই এক মহাভুল । দু’চৌক্ষের মইধ্যে এত জলের দরকারটা কি ? কি কাজে আসে এই জল ? না যায় কাপড় ধোয়া, না যায় থালা-বাসন মাজা...

তার দু’দিন পরে সেজভাই এলো মেজ ভাইয়ের বাসায় । আমি তখন কি বলেছিলাম মনে নেই, তবে সেজভাই আমাকে বাড়ি নিয়ে এসেছিল । তার ঠিক পরের দিন আমি আর “মীরজাফর” আবার লেগে গেলাম ইত্তেফাকের সাত নাম্বার পাতার “দখল” নিয়ে ।

জীবন এক ভয়ানক ধাঁধা । কেন যে এই “পেট পুড়ে” আর কেন যে এই সাত নাম্বার পাতার দখল নিয়ে “লড়াই” বাঁধে, কেউ জানে না । অনেক অনেক দিন পরে, ছেলের সঙ্গে “লায়ন কিং” দেখতে গিয়ে এর কিছু আভাষ পেয়েছিলাম ( শিশুতোষ চলচ্চিত্র কিন্তু খুব ভাল জিনিস, বড়দের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকে । বড়দের নিয়মিত দেখা উচিত । ) । লায়ন কিংয়ের সেই পর্বটির খুব জনপ্রিয় একটি সংলাপ ছিল, “হাকুনা মাটাটা (চিন্তার কিছু নেই)...লুক বিয়ন্ড ইউ সি (চর্ম চোখে যা দেখা যায় তার বাহিরের “সন্ধান” কর)” । এই “বিয়ন্ডের” সন্ধান কোথায় পাওয়া যায় ? পেলেও, সময় থাকতে ক’জন পায় ?

...

পাদটীকা:

বসন্ত জাগ্রত দ্বারে । ডিসেম্বর মাস এসে গিয়েছে । যিশুর জন্মোৎসবের মাসে যিশুখ্রিস্ট কোত্থাও নেই, আছে লাল জোব্বা পরা মোটাসোটা এক বুড়ো । শপিং মলের মধ্যিখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে শিশুরা তার সাথে ছবি তুলছে । সেই বুড়ো বাচ্চাদের কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ পরপর বলছে, “হো-হো-হো ম্যারি ক্রিসমাস” । আনন্দিত শিশুরা বাড়ি গিয়ে সান্টা ক্লসকে উইশ লিস্ট জানিয়ে চিঠি লিখছে । আমি আমার পুরনো ডায়রি ঘেঁটে খুঁজে পেলাম সেই রকম একটি উইশ লিস্ট । একটু যুগোপযোগী করে নিতে হয়েছে – হজমী, কদবেল, চালতার আচার, টফি ইরেজ করে কম্পুর কথা লিখতে হয়েছে । তাছাড়া, আমার কুম্ভকর্ণ নামের সার্থকতাও দেখতে পাবেন ।

ধানের বাঁকানো সবুজ পাতার শেষ বিন্দুতে
ঝরে পড়ার আগের মুহূর্তের সলজ্জ শিশির
গোলাপের পাপড়ির শরীর জুড়ে গাঢ় লাল রং
এসবের কী প্রয়োজন ?
ঈশ্বর, বন্ধ কর তোমার এইসব “অদরকারী” জিনিষের কারখানা ।
আমাদের প্রয়োজন শুধুই গণকযন্ত্রের
নানান কিসিমের- ছোট, বড়, মাঝারী ।

আকাশের গায়ে নানান রংয়ের মেঘেদের মিছিল
ওসবে আমার কিচ্ছু যায় আসে না ।
সরে যাও আকাশ, আমার জানালা থেকে -
আজ আমি "স্বপ্নহীন" নির্ভার ঘুমাবো...


মন্তব্য

দীপ্ত এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো। কেমন মায়া ধরানো, একটানে স্মৃতিচারণের সময়টাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। লেখার জন্য কৃতজ্ঞতা।
আগেরগুলোও পড়ে ফেলব। হাসি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ দীপ্ত পড়ার জন্য ও সহৃদয় মন্তব্য করার জন্য ।

আগেরগুলোও পড়ে ফেলব।

নিজ দায়িত্বে পড়বেন যেন, অনেক "আজাইরা" জিনিস আছে কিন্তু... মন খারাপ

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সত্যপীর এর ছবি

জোস।

ক্যাটেগরি সিলেকশনে ব্যাপক মজা পাইসি খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ক্যাটেগরী সিলেকশন আর ঠিক হ’ল কৈ ? "রক্তাক্ত প্রেমপত্র" হওয়া উচিত ছিল । আরো ঠিক হ’ত যদি একটা ছুরিকাহত প্রেম পত্র (গড়িয়ে পড়ছে প্রেমিকের রক্ত, এককোনায় একটি “ব্রোকেন হার্ট”) সহ প্রচ্ছদ করা যেত । তাহলে ঠিক রোমহর্ষক একটা প্রেমের গল্প হ’ত । সাথেতো সেই উসেন ছিলেনই । সময়াভাবে এসব করা হয়ে উঠেনি...অলস, আমি একটা চিরকালের “কুম্ভকর্ণ” চাল্লু (চোখে চশমা লাগিয়ে ঘুমুচ্ছি আমি)

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনিএকজনঅমানবিকবসলেখক। (এর চাইতে লম্বা মন্তব্য করা গেলনা বলে দুঃখিত)।

এইটা শোনেন।

ফারাসাত

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ফারাসাত, দেখেন ভাই এক প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ নিয়েই বহুত ঝালেমায় আছি । দিন নাই রাইত নাই ডাকাডাকি করে, “এসো এসো আমার ঘরে এসো...” । আপনি আবার কোন লতুন ঝালেমায় ফেলতে চান এই সব ঘাসের দলের গান শোনাতে আসছেন ? এখন কি এই সব বন্ধু ফন্দুর গান শোনার বয়স আছে ? কৈ চইলা গেছে তারা...ঘর গিরস্থালীর কামে ভীষন ব্যস্ত আছে...

তয় গান ভালু পাইছি । শুধু এই মেঘের মধ্যে মেঘ হয়ে যাওয়াটা “নিরাপদ” না...ঠান্ডা লেগে যাবে...আর সর্দি লেগে যাবে...সেই সঙ্গে চৌক্ষে "আজাইরা" জলের ধারা...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারেক অণু এর ছবি

লেখা -গুড়- হয়েছে

আমার দখলে ছিল ইত্তেফাকের ৩ নম্বর পৃষ্ঠার উপরের ডান কোণা! টারজান ছিল যে ! সব কেটে আটা দিয়ে সেটে রাখতাম, খেলার পাতার গুলোর দখল ছিল আমার ভাইয়ের্‌ কিন্তু আবার কচিকাঁচার আসর আর শুক্রবারের সাময়িকী আমার একার। এগুলো কিন্তু এখনো আছে আমাদের সংগ্রহে! দেঁতো হাসি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ঘণু, আমার কিছুতে বিশ্বাস যায় না...সাধু ভাষায় ইত্তেফাক যুগে আপনি ছিলেন । তয় চলিত ভাষার যুগে হইলে কোন কতা নাই দেঁতো হাসি

কচি কাচার আসরের দাদাভাইকে মনে করিয়ে দিলেন রে ভাই।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এত অসাধারণ লেখা কেমনে লিখেন আপু???
অসম্ভব ভালো লাগছে প্রতিটি পর্ব পড়তে।
আমিও কোনদিন বান্ধবী বলি নাই, শব্দটা শুনতেই ভালো লাগেনা। সবাই আমার বন্ধু, শুধুই বন্ধু।

যার সঙ্গেই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়ি ফেরা যায়, কবিতার আসরে আবৃত্তি শুনে এই পৃথিবীটাকে একটু নাড়া দেয়ার স্বপ্ন দেখা যায়, সেই তো বন্ধু । সে একটা ক্যাটক্যাটে নীল রঙয়ের হাওয়াই শার্টের ওপর টকটকে লাল সোয়েটার পরেছে, না সাদা কামিজের ওপর হালকা আকাশী নীল ওড়না পরেছে, তাতে কী আসে যায় ?

চলুক চলুক

আমার উইশ লিস্টে আপনার গুলোর সাথে সাথে শনপাপড়ি চাই। দেঁতো হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এত অসাধারণ লেখা কেমনে লিখেন আপু???

ভাড়ায় প্রেমপত্র লেখার অভিজ্ঞতা আছে যে চোখ টিপি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

বেশ কিছুদিন পড়া হয়নি আপু, আজকে সকালে পড়তে বসব সিদ্ধান্ত নিয়ে পিসি খুলে দেখি আপনার পোস্টঃ একটানে শুরু থেকে আবার পড়ে ফেললাম।
আমার ক্লাসে কেউ আমার নামে নালিশ দেয়ার সাহস পাইত না, আমার এক দোস্ত আবার কয়েকবার ফেল করা বুড়া ছিল কিনা, কেউ আকাম করলেই লেলিয়ে দিতাম।

ঝরঝরে লেখা, একেবারে ভুনা খিচুড়ীর মত করে ধুপধাপ গিলে ফেললাম। পরেরটা কবে আসবে?

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

বেশ কিছুদিন পড়া হয়নি আপু, আজকে সকালে পড়তে বসব সিদ্ধান্ত নিয়ে পিসি খুলে দেখি আপনার পোস্টঃ একটানে শুরু থেকে আবার পড়ে ফেললাম।

পড়ার সময় ব্লগ ভাল না । পড়ার সময় পড়া, ব্লগের সময় ব্লগ ।

ঝরঝরে লেখা, একেবারে ভুনা খিচুড়ীর মত করে ধুপধাপ গিলে ফেললাম। পরেরটা কবে আসবে?

পরের হাড়ির খিচুড়িটা রান্না হোক । বাজার করে নিই আগে...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা ! সে কবেকার কথা। আবছা আবছা মনে পড়ছে। লেখা ভাল লেগেছে।
ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আহা ! সে কবেকার কথা। আবছা আবছা মনে পড়ছে।

আবছা কী মনে পড়ছে ? রক্তাক্ত “...” পত্র লেখার স্মৃতি ? দেঁতো হাসি

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

বন্দনা এর ছবি

আপনার লিখা পড়তে পড়তে নিজের স্মৃতির সাথে একটু মিলিয়ে নিলাম।বান্ধবী শব্দটা আমার কাছে ও কেমন যেন লাগে, সাবধানে এড়িয়ে যেতে চাই।আর আমি নিজে ও পেপারকাটিং সংগ্রহ করতাম, তাতে নায়ক নায়িকা থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট খেলোয়াড় কেউ বাদ যেতেন না। প্রিন্সেস ডায়না মারা যাবার পর আমি পাগলের মত এই মহিলার ছবি জমাতাম। কোথায় যে হারিয়ে গেছে আমার সেই পেপারকাটিংগুলা মনে করতে পারিনা।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

প্রিন্সেস ডায়না মারা যাবার পর আমি পাগলের মত এই মহিলার ছবি জমাতাম।

আহা, সেই দুঃখিনী রাজকন্যাকে মনে করিয়ে দিলেন । সে যে রূপ নিয়ে চলে গেছে কোন দূরে...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

মর্ম এর ছবি

'আতান্তর' শব্দটার সাথে কতদিন পর দেখা হল!

চমৎকার চমৎকার লেখা। এতদিন ধরে পড়িনি ভেবে একটু অপরাধবোধ হচ্ছে!

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

'আতান্তর' শব্দটার সাথে কতদিন পর দেখা হল!

গই গেরামের মানুষতো, এমন অনেক শব্দ চলে আসে...কিচ্ছু করার নেই... মন খারাপ

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

কুমার এর ছবি

চলুক

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সাবেকা এর ছবি

কি মন্তব্য করব বুঝতে পারছি না,অসাধারণ মন ছুঁয়া সব লেখা । একসাথে সব গুলো লেখা পড়ে শেষ করলাম । এরকম লেখা পড়তে পেলে আমি খাওয়া দাওয়া কাজ কর্ম ফেলে সারা দিন রাত বসে থাকতে পারি । বই পড়া গান শুনাতে খুব মিল পেলাম ।

আর ববিতার ছবি কেটে রাখার কথা পড়ে নিজের জীবনের ফেলে আসা সেই সময়টার কথা ভেবে বুকের ভিতর কেমন যে করে উঠল! আমি নিজে চিত্রালী আর পূর্বানী র গ্রাহক ছিলাম শুধু মাত্র ববিতার জন্য! কাগজ দুটি পড়া মাত্রই কেঁচি দিয়ে কাটতে বসে যেতাম । ববিতার যত ছবি থাকত এমন কি বিজ্ঞাপনের ছবি পর্যন্ত বাদ যেত না । এসব করে শত শত ছবি জমিয়েছিলাম ববিতার । ওদিকে আমার বোন কাটত শাবানার ছবি,কিন্তু আমি যেহেতু বড় ছিলাম আমার অগ্রাধিকার ছিল বেশী,আমি ববিতার ছবি তুলে নেওয়ার পর সে মনের দুঃখে শাবানার মুন্ডুহীন, অথবা হাত পা বিহীন ছবি দেখে মন খারাপ করে বসে থাকত আর আমি মনের আনন্দে সেটা উপভোগ করতাম মন খারাপ মাঝে মাঝে এমনকি ইচ্ছা করে শাবানার নাকটা কেঁচি দিয়ে খোঁচা মেরে কেটে নিতাম! (কারণ শাবানাকে যে আমি দুচোক্ষে দেখতে পারতাম না)।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

কারণ শাবানাকে যে আমি দুচোক্ষে দেখতে পারতাম না

চলুক

এক দম হক কথা । কোথায় শাবানা আর কোথায় ববিতা...বিউটি কুইন শাবানাকে আমিও দুই চৌক্ষে দেখতে পারতাম না...ববিতা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল স্টার...ব্যাপারই আলাদা ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ সাবেকা এই "আজাইরা" স্মৃতির সবগুলো পর্ব পড়ার জন্য । নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।