আমরা কেন ঘরের বাইরে পা বাড়াই! আমরা কেন আপন ঘর ছেড়ে বিশ্বঘরে খুঁজি ঘর! কেন ছুটে যাই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে, গোলার্ধ ছেড়ে ভিন-গোলার্ধে!
মূলত আমাদের গোপন কিংবা ঘোষিত অভিলাষ - একটি আপাত-মসৃণ জীবন, শ্রেয়তর জীবিকা এবং একটি শান্ত নিষ্কম্প অধিবাস কে ঘিরে।
নিচের পদ্যটি পূর্ব-প্রকাশিত এবং বন্ধুবর জুবায়ের লেখাটিকে সত্যবাদী বলে জানিয়েছিলো টেলিফোনে। প্রয়াত বন্ধুর কথা মনে রেখে...
একটি শান ...
দু’দিনের ছুটি, হাতে গোনা ক'টি টাকা
যেতে হবে বাড়ি বিকেলের ট্রেন ধরে
হাতে চিঠি ধরা বুকের ভেতর ফাঁকা
মা যে লিখেছেন কাঁপা কাঁপা অক্ষরে
বাবা তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে
রেলের বগিতে ভিড় বেশি এবেলায়
কাজ সেরে সব ধরেছে ফিরতি গাড়ি
বসে ঝুলে আর লেগে থেকে গায়ে গায়
চলার ছন্দে ঘামের গন্ধ মিশে
কু ঝিক ঝিক হারিয়ে ফেলেছে দিশে
চিলাহাটি নেমে ছয় কিলো যাবো হেঁটে
যেতে যেতে হবে নিজমনে কতো কথা
কতটুকু আহত হলে দীর্ঘ চুলে? কতোখানি কৃতজ্ঞতা ডিঙিয়ে ছড়ালে জল নৈরবে। যিনি পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর ক্লান্তি দেখে পায়চারি করো; ইচ্ছেগুলোকে নীরবতা মাখিয়ে চেপে ধরো বুকে...
আ-হা, আহারে বাঁকাদৃষ্টিবাহিকা তোমার ছায়াটাও মাড়িয়ে গেল প্রাইভেট-কারে! তুমি কি জানো; বৃষ্টি নামার আগে একটি অকৃতজ্ঞ হাত তোমার বুকের উপর ডানাভরে কেনো উড়ে গেল?
কৃতজ্ঞতা, শুধু আমি উড়ছি না ডানায়। প্রেরণা পেলে আশার আকাশ ...
শূন্যতার সাগরে ভেসে দূর নক্ষত্রের দেশে
আর কতকাল তোমার সন্ধান!
বাউন্ডুলে জীবনের রাশ টেনে
আমি তো চেয়েছি গড়তে ছোট্ট স্বপ্ন
তবু তোমার কি এক আজন্ম তৃষ্ণা-
অস্পৃশ্য সুরার পাত্র হাতে মাতালের মতো
তুমি হেসেছো- ভেসেছো- ভাসিয়েছো-
চাতকের গান আমার শুষ্ক হৃদয়ে
আকন্ঠ টেনেছি-
তবুও চৌচির জমিনে পোড়া ঘাসের গন্ধ
এখনো কাটেনি
এখনো বৃষ্টিহীন
এখনো জেগে ওঠে জ্বালাময়ী আহ্বান!
আমাকে টানে-
টেনে নিয়ে ...
এ সব তুচ্ছ কারাদণ্ড ভালো লাগে না
ওরা গরাদে নেয়-ঘন্টা বাজিয়ে খাবার দেয়
ঘন্টা বাজিয়ে ঘুম থেকে জাগায়
আবার ঘন্টা বাজিয়ে টয়লেটে পাঠায়।
ওরা গরাদে নেয়- মাত্র চার বর্গফুটে থাকতে হয়
হাত, পা, চোখ, মুখ, ঠোঁট, উরু-মাত্র চার বর্গফুটে
কত বলি এতো সব হবে না মাত্র চার বর্গফুটে
মল্লিকাকে দিন, ওর বুক আর কপাল মিলিয়ে
চার বর্গফুটও নেবো না- তবু একটু ঘুমোতে দিন
এ সব তুচ্ছ কারাদণ্ড ভালো লাগে না
ওরা গরাদ ...
একটি বৃক্ষ বলে আমায়, মৃত্যু হয়েছে আমার।
আসলেই।
আত্মীয়েরা নাম নেয়, সেখানে আমি নেই।
বন্ধুরা চায় কিনা, বৃক্ষে শুধাই;
সে দোয়েলের গল্প বলে, বলে প্রজাপতির।
নিজস্ব নামহীনতায় ফিরে আসি হেমন্তের বিকেলের কাছে।
আহা, হেমন্তের বিকেল -
আমায় নিয়ে চল তোমার স্নিগ্ধ বাতাসে,
বুক ভরে নেই হিমেল হাওয়া সজল -
প্রজন্মের ভ্রান্তির ক্লান্তি মুছে যাক, যাক অবসাদ -
দু’য়েকটা পেঁচা কেবল করুক চিৎক ...
এমন দিনে মর্মগ্রহণ, তপ্তসন্তরণ
বহুদূরে তখন ঝরছিল বৃষ্টিফুল
নিকটবর্তী জলানুভব, ভেজাচুল
ছুঁলেই উদ্দেশ্যহীন তুমি; কারণ—
করতলে খুঁজে পাই না রাশিফল
মৃদুকৌশলে ন্যস্ত করো আর্শিবাদ
পঞ্চাঙুলিতে লুফে নাও অমৃতস্বাদ
অপেক্ষা সে-তো গ্রহণের পূর্ণফল
একেলা ভিজো অঝোর বৃষ্টিতে
একেলা জাগাও পুরো বর্ষাকাল
কোন অর্থে তবে উথালপাথাল?
তাহারে ডাকি আমি প্রিয়মুহূর্তে
দাঁড়িয়ে থাকি, পুনরায় দেখি
...
- অনন্ত আত্মা
গালিবী শের
গালিবী শের –দ্বিতীয় পর্ব
[পুরো নাম আসাদুল্লাহ্ খাঁ গালিব হলেও গালিব নামে তিনি সমাধিক পরিচিত। গালিবের মৃত্যুর পর প্রায় দেড়শো বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও গালিব অমর হয়ে আছেন তাঁর রচিত গজল এবং শের এর জন্য। গজল হচ্ছে পাঁচ-সাতটি বা পনের-কুড়িটি শের এর সমষ্টি; সেই অর্থে গজল যদি ‘পূর্ণ বাক্য’ হয় তাহলে শের হচ্ছে এক-এ ...
পুর্বলেখঃ
হার্লেম রেনেসাঁর মধ্যমণি আফ্রো-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ কবি Langston Hughes (১৯০২-১৯৬৭)। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকার বর্ণবাদ তাঁকে ভুগিয়েছিলো, কিন্তু তিনি আপন সততায়, বোধে ও বিশ্বাসে স্থিরচিত্ত থেকে বর্ণবৈষম্যের উর্ধ্বে উঠে বিশ্বমানবতার জয়গানে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা নিংড়ে দিতে পেরেছিলেন। "The Negro Speaks of River" তাঁর সেই 'কসমিক' ভালোবাসার গগণবিহারী রূপটিকেই ফুটিয়ে তোলে। এই কবিতাটির মূলসু ...
সর্বনাশের ব্যাকুল খেলা
হৃদয় জ্বলা দুপুর বেলা।
তৃষ্ণা কাতর পাখির কাঁদন
বুকের মাঝে নূপুর নাঁচন।
ক্লান্ত আমার পা চলেনা
তোমায় দেখার আশ মেটেনা।
তাইতো এমন মত্ত মাদল
সৃষ্টি জুড়ে ধ্বংস বাদল।
তবু তোমার হাতের ছোঁয়া
মনের বনে কদম কেয়া।
টানা ধনুর ছিলার মতো
ভালোবাসার রূপ যে কতো।
রাগে ক্ষোভে অনুরাগে
মনটা তবু তোমার পানে।
ভালোবাসার ধেয়ে চলা -
সর্বনাশের ব্যাকুল খেলা।
#######
-- এহসান নাজিম
enazi ...