বানর ও কতিপয় বর্নবাদী

অনিকেত এর ছবি
লিখেছেন অনিকেত (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০১/২০০৮ - ২:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

www.bdnews.com এর বরাত দিয়ে জানা যাচ্ছে যে, সিডনি টেষ্ট চলাকালীন সময়ে ভারতের হরভজন সিং অষ্ট্রেলিয়ার সাইমন্স কে 'বাঁদর' বলে গালাগাল দিয়েছেন। তারই ফলশ্রুতিতে হরভজন আগামি তিনটি খেলায় নিষিদ্ধ হয়েছেন, ICC এর সিদ্ধান্তে।

এতে ভারতের গোঁস্বা হয়েছে। তারাও এর শেষ দেখে ছাড়বে।

কথা হলো----হরভজন সাইমন্স কে বাঁদর কেন বললেন? তাকে গাধা, ঘোড়া, ছাগল ইত্যাদি পরিচিত গালাগাল না দিয়ে কেন বাঁদর বললেন? আমি ধারনা করে নিচ্ছি যে হরভজন ইংরাজীতে গালিগালাজ করেছেন। কারন এছাড়া সাইমন্সের বোঝার কথা না কি গাল তিনি খেয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না, এ জ়ীবনে আমি কাউকে ইংরাজীতে monkey বলে ডেকেছি কি না। এমনকি দেশে থাকতে 'বাঁদর' বলে গালাগাল শেষ কবে শুনেছি, সেটাও মনে করতে পারছি না। অবশ্য এর মানে এই নয় যে আমি 'বাঁদর' অভিধার উপযুক্ত ছিলাম না। পরিচিতজন কে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন, আমার দুর্বৃত্তপনার স্কেলে বাঁদর গালাগাল্টা অনেকটা প্রশংসার মত শোনায়।

যাই হোক, কথা হচ্ছিল হরভজন কে নিয়ে। হরভজন কি জানেন না 'যস্মিন দেশে যদাচার, কাছা তুলে নদী পার"? তুমি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে মানুষজন কে 'ক্যাঙ্গারু' না বলে 'বাদর' বলবে কেন? সাইমন্সের রাগ হতেই পারে।

দ্বিতীয়তঃ, সাইমন্স সম্ভবত Intelligent Design এর মতানুসারী। কাজেই বাদর বা তদীয় প্রজাতীর সাথে তাকে সম্পর্কিত করাটা তার মানবাধিকার লংঘনের সামিল। প্রত্যেকের অধিকার আছে তার পছন্দনীয় গালাগাল শোনার।

আমাকে 'গাধা' বললে আমি স্বভাবতই রাগ করব। বিবর্তনবাদের একজন অনুসারী হিসেবে আমি বানরের সাথে সম্পর্কিত হতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করব বেশি। কিন্তু গালিগালাজ তো আমার স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী হবে না , কারন তাতে ঐটা আর গালি থাকল না।

তৃতীয়তঃ, বানর বলে ডাকাডাকিটা কি করে বর্নবাদের বিষয় হল সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। তার মানে কি অস্ট্রেলিয়ায় দুই বর্নের মানুষ আছে? বানর আর......অ-বানর?
বানর বলে গালাগাল দিলে আপনি রাগ করতে পারেন, যদি আপনি Intelligent design এর অনুসারী হোন। কিন্তু বানর বলে ডাকাডাকি কোনোভাবেই 'বর্নবাদী' বলা যাবে না। আর যদি এইটা বর্নবাদী মন্তব্য হয়, তাহলে ICC কে অনুরোধ করব---বানর ও অ-বানর এর মধ্যে কোন ক্রিকেট ম্যাচ না দিতে।

যাই হোক, হরভজন ও সাইমন্স দুজনেরি ভুল হয়েছে এই ক্ষেত্রে। হরভজনের ভুল হল সাইমন্স কে 'অপরিচিত' এবং সম্ভবত সাইমন্সের অননুমোদিত বিবর্তনবাদের ফলাফল(!) হিসেবে দেখানো। আর সাইমন্সের ভুল হলো, একটি ভুল বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করা এবং ক্লাস ৩ এর বাচ্চাদের মত এই নিয়ে রাগ করা।

আমি ক্রিকেটারদের ' বিবর্তনবাদ' নিয়ে পড়াশোনা করতে অনুরোধ করছি।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমাকে 'গাধা' বললে আমি স্বভাবতই রাগ করব। বিবর্তনবাদের একজন অনুসারী হিসেবে আমি বানরের সাথে সম্পর্কিত হতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করব বেশি।

কি আশ্চর্য্য! পড়তে পড়তে আমারও মনে হচ্ছিলো ঠিক যেন কোন কবি বা ‘কপি’র লেখা!

এটা কিন্তু প্রশংসা, আপনার মানদন্ড অনুযায়িই ঃ)

অনিকেত এর ছবি

স্নিগ্ধা'পু,

'রতনে রতন চেনে'

হে হে হে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ব্যাপারটা এভাবেও দেখা যায় - "কানাকে কানা খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, উহারা মনে কষ্ট পায়"।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বিবর্তনবাদ তো বিশ্বাসের ব্যাপার। আর বিশ্বাস করলেই কেউ বাঁদর বললে খুশি হবে কেন তাও একটা ভাবার বিষয় বৈকি। লেখাটা পড়ে অবশ্য বেশ মজা পেলাম।


এ জ়ীবনে আমি কাউকে ইংরাজীতে monkey বলে ডেকেছি কি না। এমনকি দেশে থাকতে 'বাঁদর' বলে গালাগাল শেষ কবে শুনেছি, সেটাও মনে করতে পারছি না।
এ প্রশ্ন আমারো!

অনিকেত এর ছবি

বিবর্তনবাদ তো বিশ্বাসের ব্যাপার।

আমার মনে হয় আপনি অন্যকিছু বলতে চেয়েছিলেন। বিবর্তনবাদ মোটেও বিশ্বাসের বিষয় নয়। পুরোদস্তুর বিজ্ঞান। গত ২০০ বছর ধরে প্রানীকুলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম ব্যাখ্যানকারী----বিবর্তনবাদ।

তানভীর এর ছবি

বুশ নামক প্রিয় বান্দরটার কথা আপনারা সবাই দেখি ভুলে গেলেন!হাসি

হরভজন চাল্লু মাল। সাইমন্ডসের চেহারাখানও বান্দরের মত। এইজন্যেই ওর লাগছে

অনিকেত এর ছবি

আরে সাবাস!!!!

দুর্দান্ত,বস। এইটাই বাকী ছিল লেখাটা তে।

ধন্যবাদ।

দিগন্ত এর ছবি

বুশের ছবিগুলোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর দ্বিতীয় কথা হল, হরভজনের (এবং শচিনের) দাবি অনুসারে উনি সাইমণ্ডসকে মোটেও বাঁদর বলেননি। কে জানে কোনটা ঠিক ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

পুরুজিত এর ছবি

তবে হরভজন নাকি এর আগেও ভারতে হয়ে যাওয়া ওয়ান-ডে সিরিজে সাইমন্ডসকে বানর বলেছেন এবং খেলার পরে সাইমন্ডস তাকে বলেছিলেন কেন এই বিশেষ মন্তব্যটি তার কাছে বেশি আপত্তিকর মনে হয়। আর এখন যেভাবে ভারতীয়দের বর্ণবাদবিরোধী হিসেবে দেখানো হচ্ছে তার সাথে ঐ ওয়ানডে সিরিজের দর্শক আচরণ মেলানো দায়।

অনিন্দিতা এর ছবি

অষ্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার দের তো খেলার পাশাপাশি গালিগালাজ নিয়ে ও খ্যাতি(?) আছে। তো এবার বুঝুক নিজে গালি খেতে কেমন লাগে।

পুরুজিত এর ছবি

আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা লিমিটের মাঝে স্লেজিং পছন্দ করি। ক্রিকিনফোতে একবার মজার সব স্লেজিং এর কথা পড়ছিলাম, যেমন একবার নাসের হুসেন ব্যাটিং করছেন, মার্ক ওয়া রেগুলেশন কাভারে ফিল্ডার। ইয়ান হিলি বলে বসলেন, "মার্ক, আরেকটু পেছনে যাও, ঠিক হুসেন এর নাকের ডগাতে..."
(হুসেন এর নাকটা দেখতে কেমন এইবার ভাবেন)
প্লেয়ারদের মুখ বন্ধ করে দিলে খেলা দেখে এবং খেলে কোন মজা নাই। রোবটরা ক্রিকেট খেলা শেখার আগে অন্ততঃ বেচারাদের একটু শান্তিমত খেলতে দেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।