স্মৃতি বিপর্যয় - ৫: চাঁদের গাড়িতে আমরা ক’জনা

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফুল আরেফীন (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৪/২০০৮ - ৪:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[আমার স্মৃতি বিপর্যয় সেক্যূয়েলটা নিয়মিত পড়তে থাকা কেউ যদি ভেবে থাকেন যে, এটা একটা রম্য ধারার সিরিজ তাহলে সেটা সম্পূর্ণরুপে তার নিজস্ব ধারণা। সুতরাং পড়ার পরে “তেমন হাসি পেলো না” - জাতীয় হতাশা বোধের জন্য লেখক হিসেবে আমার কোন দায় নেই।]

এক
বিয়ে বাড়িতে আঁশযুক্ত গরুর মাংস খাওয়ার পরে কিছু লোককে দেখা যায় মাড়ির গহীন এবং প্রত্যন্ত কয়েকটা দাঁতে দিগভ্রান্তের মতোন খোঁচাখুঁচি করতে। কাজটা করার সময় তাদের মুখের যে খিঁচানো চেহারা হয়, ঢাকা শহরে একসময় কিছু টেম্পোর চেহারা ছিল অবিকল সেরকম। অনেক আগে মিরপুর ১ নম্বর গোল চত্বর থেকে কাকলী অবধি চলতো এই টেম্পুগুলো। এখনকার অবস্থা জানা নেই। টেম্পুগুলো ধোলাইখালের মৌলিক আবিষ্কার বলতেই হবে। কৃষিকার্যে ব্যবহৃত শ্যালো ইঞ্জিনের ওপরে একটা একচালা টিনের ঘর বসিয়ে তাকে টেম্পু বানানো হতো। পুরো বাহনটির আগাগোড়া পরিত্যাক্ত গাড়ির নানা অংশ জুড়ে দিয়ে বানানো – চাকা, স্টিয়ারীং, এক্সেলরেটর, ব্রেক সবকিছুই রিসাইকেল করা। এই টেম্পোগুলোর একটার সাথে আরেকটার চেহারাতে বেশী মিল নাই। পেছনে লোহার চেয়ে শক্ত তিনখানা বেঞ্চি যাত্রীদের বসার জন্য। তবে সামনে ড্রাইভারের ২পাশেও ২ জন বসতে পারে। আমি ঘটনাক্রমে ২ বার ঐ যন্ত্রে সওয়ার হই। এর মধ্যে একবার ড্রাইভারের পার্শ্বে বসার বিরল ভাগ্য বরণ করি। তখন মেকানিক্যালে পড়ি – যন্ত্রচালিত সকল বাহনের প্রতি কৌতুহল দেখানো আমার একাডেমিক দায়িত্ব মনে করতাম! ড্রাইভারের পাশে বসে ঘনিষ্ঠভাবে অবলোকন করে দেখেছি - স্টিয়ারীং ঘোরানো বা গিয়ার বদলানো থেকে শুরু করে গাড়ি চালনার প্রতিটি কৌশলই অত্যন্ত মৌলিক।

যখনই ব্রেক চাপবার দরকার হচ্ছে, ড্রাইভারকে দেখি, পা দিয়ে ব্রেক প্যাডেলে আগুন নেভানোর স্টাইলে এলোপাথারী কোপাচ্ছে। বললাম,
- ব্রেক ধরে না? নাকি?
- একবারে ধরে না; কয়েকবার মারলে ধরে।

আমি ঢোক গিললাম। পরে আরোও বেকুব হই যখন ড্রাইভার আমাকে বললো একটু সরে বসতে কারণ গিয়ার চেঞ্জ করতে হবে।
- একটু ডাইনে চাপেন ভাইয়া।
- ক্যান? এদিক তো জায়গাই নাই।
- গিয়ারটা ফালামু, একটু চাপেন।

আমি সরে বসার চেষ্টা করলাম। তার আগেই অবশ্য ড্রাইভার বিশেষ কায়দায় গিয়ার বদলে ফেলেছে। একটা আঁকাবাকা “দ” আকৃতির লৌহ-দন্ড আমার ২ উরুর সন্ধিস্থলের কাছাকাছি এসে থমকে রইলো। ঐটাই গিয়ার। গাড়ি ২/১ বার ঘোৎ ঘোৎ আওয়াজ তুলে অবশেষে মসৃণ হলো। তবে যতোক্ষণ টেম্পো ঐ গিয়ারে চললো ততোক্ষণই আমার নড়াচড়া বন্ধ থাকলো।

যে সীটে বসেছিলাম সেটার নীচেই কোনওখানে শ্যালো মেশিনটা সেট করা ছিল। মেশিন থেকে নির্গত ধোয়া পালানোর জায়গা না পেয়ে আমাদের সীটের চারপাশ দিয়েই ভকভক করে বের হতে থাকলো! আর সেই কালো ধোয়ার মধ্যে নিজেদেরকে “ক্যাফে ঝিলে”র পোড়া মুরগী বলে মনে হচ্ছিল আমার কাছে। ধোয়াটা এমন যে চোখে লাগামাত্র জ্বালাপোড়া সমেত চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসে।

- গাড়ি কি তেলে চলে নাকি টিয়ার গ্যাসে?
- কি কন ভাই? ডিজেলে চলে।
ড্রাইভার রসিকতা বুঝলো না। আমিও আর কথা বারালাম না।

ঢাকা শহরের ঐ টেম্পোগুলো ছিল গরীবের বাহন। দেশের উত্তরাঞ্চলে হিরামন, নসিমন বা রকেট নামেও বিভিন্ন রকম টেম্পোর চল আছে। সেগুলো অবশ্য গরীবের বাহন নয়। বরং, একমাত্র বাহন বলা যায়। বান্দরবান গিয়ে এরকম একমাত্র বাহন হবার কারণেই উঠতে হয়ে ছিল চাঁদের গাড়িতে।

দুই
কোনও এক শুক্রবারের সকাল ছিল সেটা। বান্দরবান গিয়েছি বেড়াতে। বন্ধুদের মতে এখানে এসেও যদি চিমবুকে না যাই তাহলে বলার মতোন কিছুই থাকবে না এই ট্রিপ সম্পর্কে। সুতরাং সবাই একবাক্যে চিমবুক যাবার বিষয়ে মনস্থির করলাম। বান্দরবান থেকে চিমবুক - যাবার একমাত্র বাহন চাঁদের গাড়ি। যেখান থেকে সেই গাড়ি ছাড়ে সেখানে গিয়ে হাজির হতেই দেখি বিরাট হাঙ্গামা! শত শত লোক বাস ডিপোতে অপেক্ষমান। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে কতোক্ষণে টিকেট পাবো আর কতোক্ষণে চিমবুক যাবো এই চিন্তায় যখন কিঞ্চিত অস্থির, তখনই একটা গাড়ি ছেড়ে গেল। আর সেটা ছেড়ে যেতেই ডিপোর অর্ধেক লোক হঠাৎ করে “নেই” হয়ে গেল! যদিও বারবার বাস ডিপো বলছি, আদতে এখানে কোনও বাস নেই। আছে ২/১ টা মাইক্রোবাস। আর আছে কিছু ল্যান্ড ক্রুজার (ইউটিলিটি ভেহিকল বা সাধারন বাংলায় ‘জীপ’গাড়ি)। এতো যাত্রী সব কোথায় গেল – রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে ছেড়ে যাওয়া গাড়িটার দিকে চাইলাম। ২ চোখকে বিশ্বাস করা কঠিন, তবে বাস্তবতা হচ্ছে ডিপোর অর্ধেক লোক নিয়ে মাইক্রোবাসটা ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমে গেছে! সাধারণ বুদ্ধিতে যে বাসটাতে সর্বোচ্চ ১২ জন যাত্রী বহন করার কথা ভাবা যায়, সেরকম একটা বাসে উঠেছে মোটামুটি ২৫ থেকে ৩০ জন লোক! কাস্টোমাইজেশনের দিক থেকে এই গাড়ির নির্মাতা সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখিয়েছে বলে মনে হলো। একটা জিপ গাড়িকে টেনে হিচড়ে লম্বা বা উঁচু করে তার ধারণক্ষমতা যে ২ থেকে ৩ গুণ বাড়ানো যায় সেটা এই গাড়ি না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন!

ছেড়ে যাওয়া গাড়িটির যাত্রীদের ওভাবে হাঁচরে পাঁচরে ঝুলে যাওয়া দেখে আমি ভেবেছিলাম, ওটাই বুঝি আজকের শেষ গাড়ি। কিন্তু আদতে চাঁদের গাড়িতে সীটের কোনও ধারণাই চালু নেই। লোকজন এখানে টিকেট কিনেছে মূলতঃ গাড়ির কোনও একটা অংশকে আঁকড়ে ধরার বিনিময়ে। টিকেট কেনার পরে বাকি বিষয়টা যাত্রীর স্বকীয়তার ব্যাপার যে, সে কিভাবে গন্তব্য পর্যন্ত এই গাড়িতে চেপে যাবে। এই প্রচেষ্টায় অগ্রবর্তী ১৫ জনের মতোন বসে পরে গাড়ির ভেতরে ড্রাইভারে পেছনের জায়গাটায়। বাকিদের জায়গা করে নিতে হয় ছাদে, বনেটে এমনকি সাইডের পাটাতনে (বাম্পারে)।

যাহোক, টিকেট কেটে যখন বাসে ওঠার পালা তখন ওপরের বর্ণনা মোতাবেক প্রাথমিক ১৫/২০ জন বাসে অলরেডি গুঁজে গিয়েছে। আমাদের অপশন গুলো হচ্ছে ছাদ, বনেট আর বাম্পার। আমি জোড়ালোভাবে এই ভ্রমন থেকে নিজের নাম কেটে নিলাম। বাকিরা দেখলাম যথেষ্ট সাহসী। সবাই ছাদে উঠতে আগ্রহী। আমার আতঙ্কিত মুখ দেখে কতিপয় সহজ সরল আঞ্চলিক ভাইয়ের মনে দয়া হলো, তারা আমাকে ভেতরে বসার জন্য জায়গা ছেড়ে দিলো। কিন্তু ভেতরে বসবো কি, ঐ জায়গাটার কাছাকাছি হওয়াই দুষ্কর - মনে হয় ইটের ভাটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সেখানে বসে থাকা সম্ভব নয়। অগত্যা দুরু দুরু বুকে ছাদে করেই যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। চাঁদের গাড়ির ছাদে উঠে রওনা হলাম আমরা সবাই।

তিন
জীবনে প্রথমবার বাসার ছাদের বাইরে অন্য কোনও ছাদে ওঠার অভিজ্ঞতা হলো। আমার উচ্চতাভীতি চরম পর্যায়ের। বাস্তবে তো নয়ই স্বপ্নেও আমি বেশীক্ষণ উঁচু জায়গাতে থাকতে পারি না। আমার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত স্বপ্নগুলো হলো, অদৃশ্য কারো তাড়া খেয়ে পাহার বা ছাদ থেকে পড়ে যাচ্ছি-ধরণের। এখানে চাঁদের গাড়ির ছাদে অবশ্য অবস্থানটা দীর্ঘতর হলো। অভিজ্ঞতাটা প্রথম প্রথম যথেষ্ট ভীতিকর। তবে সেটা মূলতঃ রাস্তার কারণে। রাস্তাটা ক্ষীণ, এবড়োখেবড়ো, এবং বাঁক সমৃদ্ধ। রাস্তার দু’পাশেই অথৈ ঢাল খারা নেমে গেছে কয়েক হাজার ফুট নীচে! গাড়ির ছাদে একটা ক্ষীণ গ্রীল আছে – মেরে কেটে ৮ ইঞ্চী খানেক হবে। আমি প্রথমত চেষ্টা করলাম সেটাকে ২ হাত প্রসারিত করে ২দিক থেকে ধরে রাখার। সেই চেষ্টা সফল হলো না। ২ পাশ আমার হাতের চে’ সামান্য চওড়া। আমি বসেছি একটা পরিত্যাক্ত টায়ারের ভেতরে। টায়ারের ভেতরে বসায় ব্যাথা খানিকটা কম পাচ্ছিলাম। তবে নড়াচড়ার কোনও জায়গা অবশিষ্ট ছিল না। এ অর্থে আশেপাশে গাড়িটা নিজে পরে না গেলে আমার এককভাবে পরে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম।

গাড়ি মোটামুটি উর্দ্ধমুখী হয়ে রইলো গোটা যাত্রাপথ। চাঁদের গাড়িকে তো আর উবু হয়ে থাকলে চলবে না – যাচ্ছি একরকম চাঁদেই। আশেপাশের বিস্তৃত প্রকৃতির সৌন্দর্য শুরুতে ভয়ের কারণে টের না পেলেও, ধীরে ধীরে ভয়টা সয়ে এলো। সৌন্দর্য অবলোকনে মনোনিবেশ করতে পারলাম। রাস্তাঘাটের অবস্থা যথার্থই খারাপ – ফলে থেকে থেকেই গাড়ি দুলে দুলে উঠছিল, কিন্তু এতে কারো কেনও বিকার নাই দেখে বুঝলাম দুললেও সম্ভবতঃ পরে টরে যাবার রেকর্ড নেই।

পাশাপাশি বসা শোয়েব দেখলাম এরই মধ্যে এক চাকমা ছেলের সাথে ভাব জমিয়েছে। ওরা দুজনেই বসেছে ছাদের বামপাশে ৮ ইঞ্চি রেলিংএর ওপর দিয়ে পা ঝুলিয়ে। মাঝে মধ্যে ছিটে ফোটা যে দুচারটা কথা কানে এলো তাতে বুঝলাম গল্পের বিষয়বস্তু হচ্ছে মাদকদ্রব্য - অত্র এলাকায় হেরোইনের সহজলভ্যতা আর কিভাবে ঐ জিনিস খায় এসবের টুকিটাকি। গল্পের ধরনই বলে দিলো যে ঐ ছেল নিজেই একজন হেরোইনসেবী। শোয়েব গোল গোল চোখ করে শুনছে আর ছেলেটা তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছে।

বুঝলাম এই এলাকায় মাদক খুবই সহজলভ্য। পুলিশের উৎপাত সামান্য আছে, তবে ওগুলো কোনও ব্যাপার না। মোটামুটি যত্রতত্রই ঐসব খাওয়া চলে। গাড়ি চিমবুকে পৌছালে ঐ ছেলে লাইভ ডেমোন্সট্রেট করে দেখাবে সেটা। একে তো চাঁদের গাড়ি থেকে পরে যাবার আতঙ্ক, তার ওপর হেরোইনখোর পোলাপানের সংসর্গ। আমি ভয়ে কুঁচকে বললাম, "থাক দেখানো লাগবে না। বিশ্বাস করছি"। কিন্তু ছেলেটা অনবরত থুথু ফেলছিলো। নেশা ওঠার লক্ষণ সেটা। বললো, চিনি (হেরোইন) না খেলে ও বেশিক্ষন চলতে পারবে না।

চার
গাড়ি খানিক পরেই চিমবুকে পৌছালো। আমাদের সাথে গুটিকতক লোক নেমে গেল এখানে। বাকিরা চললো ওপরের দিকে। এরপরের স্টেশন সম্ভবতঃ থানচি। আর তার পরেই বার্মা। গাড়ি থেকে নেমে আমি যখন প্যান্ট ঝারছি তখন দেখতে পেলাম গাড়ির ড্রাইভারকে। দশাসই আকারের এক মহিলা দাপটের সাথে স্টিয়ারিং হুইল আঁকড়ে বসে আছে! এই দৃশ্য আগে দেখি নাই বলে ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিলাম!

আমরা মোটামুটি জনশুন্য একটা বাজারে নামলাম। বাজারের মোট দোকানের সংখ্যা আঙ্গুলে হিসেব করা যায়। আর সেখানে প্রাপ্য সদাইয়ের পরিমান আরো নগণ্য। নেমেই সবাই সিগারেটের খোঁজ করলো। কিন্তু এখানে সর্বোচ্চ ব্র্যান্ড হচ্ছে নেভি আর স্টার। বাধ্য হয়ে সবাই নেভিই টানতে লাগলো। ছেলেটা এগিয়ে এসে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট আর ভেতরের রাংতা কাগজটা টেনে বের করে নিলো। শোয়েব জানালো তার বন্ধু (?!) আমাদেরকে এখন হেরোইন খাওয়া দেখাবে। বুকে ঢিপ ঢিপ নিয়ে আমরা পার্শ্ববর্তি একটা ভাতের হোটেলে ঢুকলাম। জায়গাটা সম্ভবতঃ চাকমা ছেলেটার পরিচিত। সে সোজা গিয়ে ঢুকলো বেড়া দিয়ে আলাদা করে রাখা হোটেলের রান্নাঘরে।

সিগারেটের প্যাকেট থেকে বের করা রাংতার কাগজটা ভাঁজ করে চারকোণা একটা সসপ্যান বানালো সে। পকেট থেকে বের করা পুরিয়াটা খুলে সাদা পদার্থটুকু ঢাললো সেখানে। ঘুরে তাকিয়ে আমাদের দিকে একটা হাসি বিনিময় করে পকেটে হাত দিলো। হাতে উঠে এলো একটা আধূলী। সেটাকে এবার জিহ্বার ওপরে মাঝামাঝি একটা জায়গায়ে শুইয়ে দিয়ে মুখ বন্ধ করে ফেললো। একটা ছোট্ট কুপিবাতি নিয়ে সেটার শিখার ওপরে রাংতা কাগজের সসপ্যানটা বিশেষ কায়দায় ধরতেই সাদা পাউডার থেকে বাষ্পিভূত ধোয়া উঠে আসতে লাগলো। একটু আগে নেওয়া সিগারেট থেকে সব তামাক ঝেরে ফেলে শুধু খোলটা আরেক হাতে ধরেই রেখেছিল সে। এবারে সেটাকে পাইপের মতোন ব্যবহার করে উদীয়মান সাদা ধোয়াটা টেনে নাকের ভেতরে নিয়ে নিলো – একবার। দু’বার। দুই নাকেই ২’বার করে টেনে নিতেই ৫ গ্রাম পাউডারের সবটা ফুরিয়ে গেল। উবে গেল ৫০০ টাকা। পয়সাটা মুখ থেকে বের করে আবার যথাস্থানে রেখেই ছেলেটা সহাস্য বদনে বললো, এবার চলো, আমি এখন অনেকক্ষণ এনার্জেটিক থাকতে পারবো। কয়েকমাইল পাড়ি দেওয়া কোনও ঘটনাই না। পয়সার রহস্যটা বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করি, সেটার কাজটা কি। জানলাম হেরোইন সেবনের সময় ধোয়া থেকে একটা বিষাক্ত পদার্থ জমা হয় অধক্ষেপ হিসেবে। সেটাকে পয়সাটার ওপরে জমতে দিলে বিষক্রিয়া এড়ানো যায়। নইলে সেটা সরাসরি জিহ্বার ওপরে জমবে।

আলাপে ধীরে ধীরে আরোও জানলাম, ছেলেটার পেশা নাকি ধর্ম প্রচার! খৃষ্ট-ধর্ম প্রচার করাই তার কাজ। খৃষ্টানদের ২ টা ধারার মিশনারীই আছে পাহারে। সে আছে প্রোটেস্ট্যান্টদের সাথে। আগে অবশ্য ছিল ক্যাথলিকদের দলে, তবে টাকা বেশী পাওয়ায় সে ধর্মান্তরিত হয়ে প্রোটেস্ট্যান্ট হয়েছে। যেহেতু ধর্ম প্রচারের কাজ, সুতরাং তাকে মেনে চলতে হয় যাজকদের জীবনধারা। যেমন, শিং বা মাগুরের মতোন আঁশবিহীন মাছ, মাংস ইত্যাদি খাওয়া চলে না তার। চলে না দুধ-চা খাওয়াও! লিকার চা খাওয়া যেতে পারে। হেরোইন খাওয়া চলে কি না জানতে চাইলে হেসে ফেলে। এই মরণনেশা কিছুতেই ছাড়তে পারছে না বলে আফসোস করলো। ২ বার রিহ্যাব ঘুরে এসেছে। ফাদার জানেন সে ছেড়ে দিয়েছে সেসব। এজন্যই চাকরী দিয়েছে ধর্ম প্রচারকের – যে নিজে পূণ্য পথের সন্ধান পেয়েছে, সেইই তো অন্যকে দেখাবে পথ!


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

লেখাটা মাশাল্লা হয়েছে। (বিপ্লব)

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আলহামদুলিল্লাহ্ ... ...
হো হো হো

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভাল্লাগলো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ জুবায়ের ভাই।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

তীরন্দাজ এর ছবি

কক্সবাজারে চাদের গাড়ীতে চড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল এবার। ভাল লাগলো আপনার লেখা।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অভিজ্ঞতা মিললো কি না জানালেন না হাসি

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সময় কম, তাই "এক" পড়েই দৌঁড়াচ্ছি। শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে!! অসামান্য। আমিও এককালের মিরপুরবাসী। আমরা ডাকতাম "ভটভটি"।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

পুরাটা পড়া হইলে আবার খারাপও লেগে যেতে পারে। ভয় হচ্ছে। আমার নিজের কাছে পুরাটা পড়ার পরে ভালো লাগে নাই, শুধু ১ম পর্বটুকু ভালো লেগেছে।

তবুও পড়বেন আশা করি। হাসি

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়ে ফেললাম। মিল পাওয়া গেল একটা। আমিও স্বপ্নে শুধু ধাওয়া খাই। ঈমানে বলছি, দেশে থাকতে বেশি বেশি বাংলা সিনেমা দেখতাম না! খাইছে

মাল্যবান এর ছবি

"গাড়ি কি তেলে চলে নাকি টিয়ার গ্যাসে?"--
হা-হা-, একেবারে মোক্ষম কথা কইছেন। আরেক চিজ ছিল আমাদের তথাকথিত বেবিট্যাক্সি। টু-স্ট্রোক ইন্জিনের ল্যুব অয়েল পোড়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় চোখ-নাক জ্বালা করা আর বমি পাওয়া তো ছিলই, বাড়তি ছিল নামার পর কাপড়-চোপড় আর চুলে সেই ধোঁয়ার গন্ধ লেগে থাকা।
অনেক পুরান কথা মনে করিয়ে দিলেন।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

২ স্ট্রোক এর মূল সমস্যাটা লুব অয়েল নয়, আমার মেকানিক্যাল বিদ্যায় বলে, ২ স্ট্রোক এ জ্বালানীটা সম্পূর্ণ দহন হয় না, যেটা ৪ স্ট্রোকের ক্ষেত্রে হয়। ফলে আন-বার্ন্ড ফুয়েলটুকু একজস্ট দিয়ে বেড়িয়ে এসে চোখে জ্বালা দেয়।

গুরুগীরি করলাম, গুস্তাখি মাফ করবেন।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বিশাল লেখা।

সাথে ক্যামেরা ছিলো না?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ভালো লেখা নাকি বড় হলেও টের পাওয়া যায় না।
টের যেহেতু পেয়েই গেলেন .... ... মন খারাপ

নাহ-আমার কাছে সারাজীবন কোনও ক্যামেরা ছিলো না। এখন একটা কিনেছি।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

নাহ-আমার কাছে সারাজীবন কোনও ক্যামেরা ছিলো না।

আর আমার এখনো হলো না ;(

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍প্রথম অংশটি পড়ে খুব জোশ পেয়েছি।

হেরোইন সেবনের বর্ণনা পড়তে গিয়ে মনে হলো (কিছুটা অফ টপিক হয়তো), সিনেমা-টিভিতে বা গল্প উপন্যাসে হত্যা বা অত্যাচারের মতো নির্দয় নিষ্ঠুর ব্যাপারগুলোর বিশদ বর্ণনা বা প্রকাশে আমরা শিঁউরে উঠি না। আঁতকে উঠি না মরণনেশা হেরোইন-মারিজুয়ানা সেবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃশ্য দেখে বা পড়ে। আর সেই আমরাই পর্দায় বা লেখায় মানবজীবনে অপরিহার্য ও অনিবার্য যৌনতার সামান্যতম প্রকাশে হাউকাউ শুরু করে দিই কেন? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কী যে করি! আবার ফোন করেছিল মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়াম থেকে... হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কথা অতীব জটিল বলেছেন। আমার কাছে ক্ষুদ্র একটা ব্যাক্ষ্যা আছে - নিজের না ধার করা। মানুষ নাকি ধর্মের কাছ থেকে যৌণতাকে গোপন করতে শিখেছে। আমার কাছে এটা গ্রহনযোগ্য বলে মনে হয়। ধর্মে এই অতি প্রয়োজনীয় বিষয়টা নিয়ে লুকোচুরির শেষ নাই।

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হাসি
একটা কথা কন - মাদক সেবনের বর্ননা দিয়ে কি ভুল করলাম?

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সন্ন্যাসীর বক্তব্য অশ্লীল, তার ফাঁসী চাই।

লেখাটা সুবহানাল্লাহ্ হৈছে। বিশেষ করে বললে শেষের ছত্রটা।

চান্দের গাড়িতে এখনো উঠি নাই। হয়তো ওঠার প্রয়োজন হলে পথটুকু পদব্রজেই পার করে দিতে চাইবো। আমার ভয়টা পরিমানে সামান্য একটু বেশি।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমি যদি জানতাম যে একজন মহিলা গাড়িটা চালাচ্ছেন তাহলে সিদ্ধান্ত আমারও যে কি হতো বলা মুশকিল। ওরা নাকি জন্মগতভাবেই খারাপ গাড়ি চালায়! এটাও শোনা কথা।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍মৌলবাদীরা নিপাত যাক!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কী যে করি! আবার ফোন করেছিল মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়াম থেকে... হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এতো ইস্যু একবারে না তুলে ১টা ১টা করে তুলেন। আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হউক, এরপর ঐগুলা... ...

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

বিপ্লব রহমান এর ছবি

অনেক দেরীতে বলছি। কী ভাবে যেনো এই চমৎকার লেখাটি দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিলো।

চাঁদের গাড়িতে পাহাড়ে ঘুরেছি খুব। কিন্তু আপনার মতো করে পাহাড় দেখা আর কোথায় হলো!

...মাদকাসক্ত ওই চাকমা ছেলেটির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

দেরী কিসের ভাই। ইদানীং অনেক ঘণ ঘণ ভালো ভালো লেখা আসছে সচলে। তাই প্রথম পাতার লেখাগুলো অনেক বেশী সচল হয়ে গেছে। আসে আর যায় ... ...

আপনার মন্তব্য পেতে সবসময়ই ভালো লাগে। ধন্যবাদ।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

দ্রোহী এর ছবি

উল্টা দিক থেকে পড়ে আসলাম স্মৃতি বিপর্যয় সিরিজ। আপনার লেখার ধরনটা খুব চমৎকার।

চাঁদের গাড়িতে দুইবার উঠেছি। রুমা বাজার থেকে চিম্বুক যাবার জন্য। অসাধারণ অভিজ্ঞতা। দুইবারই আমি নিজেই সেধে ছাদে গিয়ে বসেছিলাম সিগারেট খাবার জন্য। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা!


কি মাঝি? ডরাইলা?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অনেক দিন পরে মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগাটা অন্যরকমের। এটা কি আপনি জানেন?

ধন্যবাদ!

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

হিমু এর ছবি

চাঁদের গাড়িতে বেশ কয়েকবার চড়েছি, বান্দরবানেই। একবার গুলির মুখোমুখিও হয়েছিলাম। শেষ গিয়েছিলাম রুমা থেকে থানচি। অসাধারণ একটা জার্নি ছিলো সেটা।

লেখাটা চমৎকার লেগেছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।