লুদমিলা এবং দুইজন নব্য পিতা-মাতার গল্প

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি
লিখেছেন লুৎফুল আরেফীন (তারিখ: সোম, ১৩/১২/২০১০ - ৮:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিদেশ থেকে ট্যুরিস্টরা আমাদের দেশে এসে রিক্শা দেখে ‘ওয়াও’ বলে। বাস থেকে লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে নামছে, সেটা দেখে ‘ওয়াও’ বলে। কালো ধোয়া দেখে মুখ ঢাকা বাদ দিয়ে ‘ওয়াও’ বলে। আমি বন্ধুদের সাথে একবার কক্সবাজারে গিয়ে ভাবলাম, নতুন জায়গায় এসেছি আমারও টুকটাক ‘ওয়াও’ বলা উচিত। বার্মিজ মার্কেটে গিয়ে এই কারণে যা দেখি তাতেই ‘ওয়াও’ বলা শুরু করলাম। কাজটা যে বিরাট রকমের ভুল হচ্ছে সেটা টের পেলাম যখন দেখি বিক্রেতারা আমার ‘ওয়াও’ শুনে সব কিছুর দামই বেশি করে হাঁকাচ্ছেন। এরপরে থেকে 'ওয়াও' গুলোকে ‘হুমম’-দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে দেখলাম খানিকটা উপকার পাওয়া যাচ্ছে! যাহোক, সবকিছু দেখে বিস্মিত হবার জন্য আদর্শ বয়সটা এই মুহুর্তে পার হচ্ছে আমাদের মেয়ে লুদমিলা। মাস দেড়েক আগে সে এক বছর পূর্ণ করেছে। এই নতুন মানবশিশুটির অবস্থা অনেকটা আমাদের দেশে বেড়াতে আসা সেই সব ট্যুরিস্টদের মতই। এর চোখে ভাল-মন্দ নাই, আছে শুধু বিস্ময়। সবকিছুই তার কাছে চুরান্ত আগ্রহের বিষয়। সবকিছুকেই ধরে ছুঁয়ে নেড়েচেড়ে কামড়ে দেখতে না পারলে তার কৌতূহল মেটান সম্ভব না।
প্রতিদিনই কিছু একটা নতুন বিষয় শিখছে লুদমিলা। সম্প্রতি উপরের আর নিচের পাঁটি মিলিয়ে বেশ ক'টি দাঁত সম্বল হয়েছে তার। অবশ্য আমাদের দৃষ্টিতে যেটা মাত্র কয়েকটা দাঁত, সেটা লুদমিলার কাছে প্রস্তর যুগ থেকে ইস্পাত যুগে প্রবেশের মতন বিরাট ব্যাপার! মেয়ের মুখে দাঁতের আবির্ভাবে পুলকিত হয়ে আমরা বাজার থেকে কামড়ান যায় এরকম নানান খেলনা কিনে আনলাম - আমাদের আশা, দাঁত দিয়ে কি করা উচিত, এগুলো কামড়ে কামড়ে মেয়ে সেই বিদ্যে আয়ত্ব করে ফেলবে। তখন মাথাতেই আসেনি যে, আদম দম্পত্তিকে আপেল কামড়ানো শিখানো লাগে নাই। ঐরকম প্রেমমত্ত অবস্থার মধ্যেও ওনারা আপেল হাতে পেয়ে সেটার ওপরে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে 'আ+হা' লিখতে যান নাই কিংবা 'ক্যাচ-ক্যাচ' খেলার চেষ্টা করেন নাই; খেয়েছিলেন এবং কামড়েই খেয়েছিলেন ( ঙযয১ুযৃ১ৃুয১যুৃ১১ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃ - এইটুকুন লেখালেখির সময় আমার মেয়ের কীর্তি, তুলে দিলাম)।
আমি মফশ্বলে থাকতে দেখেছি ছেলেপেলেরা 'জাম্বুরা' নামক একটা সবুজ বর্ণের ফল দিয়ে ফুটবল খেলত; দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল যে, ঐ ফলটা খেলার জন্যেই গাছে ধরে। অবশ্য আমাদের সেই মফশ্বলে এরকম বিভ্রান্তিকর কর্মকান্ড আরও হত। সঠিক জিনিস দিয়ে সঠিক কাজটা ওখানে প্রায়ই করা হত না - এই একই ছেলেপেলের দল একটা বিশেষ 'জিনিস' ফুলিয়ে বেলুন বানিয়ে খেলত যার কাজ মোটেও বেলুন হিসেবে পোলাপানদের আনন্দ দেওয়া নয়; বরং জিনিসটা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে হয়ত এই পোলাপান গুলার নাম-নিশানাই থাকত না। যাহোক, আমাদের মেয়ের বুদ্ধিমত্তা তার বাবার চাইতে ভাল - সে দাঁতের প্রযুক্তি যথার্থই কাজে লাগাতে শুরু করেছে। আগে বাবার ইউ.এস.বি কেবল, জরুরী ফাইলপত্র আর মায়ের চুল ছিঁড়তে হাত দিয়ে অনেকখন টানাটানি করা লাগত। বর্তমানে ধারালো এই প্রযুক্তির কারণে কাঁটাছেড়ার গতি এবং গন্ডী দুটোই বেড়ে গেছে। কি কারণে জানি না, এই বয়সের বাচ্চাদের নিয়ম হচ্ছে এরা খেলার জিনিসপত্র দিয়ে খেলতে চায় না; অনেকটা আমাদের দেশের রাজনীতিবীদদের মতন, এনারাও খেলার জিনিস দিয়ে খেলেন না; খেলেন জনগনকে নিয়ে। যাহোক, আমার মেয়ের প্রিয় খেলনার তালিকাতে থাকে পুরানা ব্যাটারি, চকচকে কাগজের প্যাকেট, নানারকম স্যুভেনিয়ার, ল্যাপটপের পাওয়ার কেবল, বাবা-মা'র পুরানা জুতা, তসবীর একশ' নাম্বার দানা (যেইটা আকারে বাকিদের চাইতে বড়সড়), টুথপেস্টের খালি টিউব, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শ্যেন দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া টুকরাটাকরি ময়লা ইত্যাদি। প্রায়শঃই দেখি মাউস, কিইবোর্ড, ক্যামেরা বা চশমার ফ্রেমে মেয়ের অটোগ্রাফ জ্বলজ্বল করছে। ছোট ছোট দাঁত দিয়ে কিভাবে এত কাজ করা যায় ভেবে নিজেই বিস্মিত হই!

আমাদের দুইজন মানুষের পরিবারে এই শিশুটির সংযোজন বাসার কর্মব্যস্ততাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলাই বাহুল্য। মাঝে মাঝে হিমশিম খাই না একথাও বলা যাবে না। মেয়ের খাওয়া-দাওয়া আর ঘুম আমাদের দৃষ্টিতে সবচাইতে জরুরী দুইটা বিষয় হলেও আমার মেয়ের কাছে সম্ভবতঃ তার বিশাল কর্মযজ্ঞের মাঝে ঐ দুইটাই সবচেয়ে বড় বাঁধা। ফলে তার সবটুকু ক্ষমতা দিয়ে সে এই দুই কাজে বাঁধা দেবার চেষ্টা করে যায়।খাওয়া-দাওয়ার প্রতি মেয়ের এই বৈরাগ্য রীতিমতন উদ্বেগজনক। খাওয়ানোর জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসানো এবং অতপর ‘বিব’ গলায় জড়ান মাত্র তার চেহারা থেকে যাবতীয় উৎফুল্লতা কর্পূরের মত উবে যায়। মনে পরে, হিন্দী সিরিয়ালের মাঝখানে হঠাৎ করে কারেন্ট চলে গেলে আমার মা-বোনদের ঠিক এই রকম একটা চেহারা হত। সাথে কিছু অম্লমধুর গালিও বর্ষিত হত ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিটির নামে। ভাবে মনে হত প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে কারেন্টের মেইন সুইচ উঠা-নামা করছেন। তবে আমার মেয়ে এখনও কথাই বলতে শিখে নাই। সুতরাং সে গালাগালি করে না; প্রতিবাদ জানায় নিঃশব্দে - মুখ ঘুড়িয়ে রেখে অথবা ঠোটে ঠোট চেপে। মা যতই চামচ নিয়ে মুখের কাছে ধরুক না কেন, সে মুখে পাসওয়র্ড দিয়ে বসে থাকে। ওর মা সুষম খাবারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে নানারকমের পরিজ থেকে শুরু করে, ইয়োগার্ট, ফ্রুট-ককটেল, খিচুড়ি, জুস সবই রাখে মেন্যুতে। মেয়ে যেন একই রকম খাবারে বিরক্ত না হয়ে পরে সেকারণে খাবারের মেন্যুতে নিয়মিত পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু লুদমিলা যতটা আগ্রহ নিয়ে কলমের মাথা কামড়াতে চায়, তার সিকিভাগও খাবারের প্রতি বিনিয়োগে আন্তরিক নয়।

যাহোক মেয়ের মুখ খোলার জন্য আমরা পাসওয়র্ড সন্ধান করতে শুরু করি। সঙ্গীতে মেয়ের খানিকটা আগ্রহ আছে সুতরাং ঐখান থেকেই শুরু হয় খোঁজ খবর। দেখা গেল, খাওয়ানোর সময় প্রিয় গানের ভিডিও চললে কাজ খানিকটা সহজসাধ্য হয়। সুতরাং দেরী না করে গোটা ইউটিউব ঝাঁড়া দিয়ে শ'খানেক শিশুসূলভ গান/ভিডিও বুকমার্ক করা হল। সেইখান থেকে ব্যবহার ভেদে ওর জন্য এ পর্যন্ত গোটা পাঁচেক ‘প্লে লিস্ট’ বানান হয়েছে - কোনওটা খাওয়ার, কোনওটা ঘুমের আর কোনওটা বা স্রেফ রিল্যাক্স করার। বলে রাখা দরকার যে, মেয়ের মস্তিষ্কের বিকাশের কথা মাথায় রেখে আমার স্ত্রী জন্মের আগে থেকেই তাকে যন্ত্রসঙ্গীত শুনিয়ে শুনিয়ে সংক্ষিপ্ত কোর্স করিয়ে রেখেছিল। সময় স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক বর্ণপরিচয়, একের ঘরের নামতা ইত্যাদি শেখান হয়ে ওঠে নাই। তবে যে কারণেই হোক, আমাদের মেয়ে খানিকটা সঙ্গীত-অনুরাগ নিয়েই জন্মেছে সেটা পরিস্কার। সঙ্গীতের বিষয়ে তার আগ্রহ যতটা ব্যাপক ততটাই পরিবর্তনশীল। এর সাথে যোগ হয়েছে কোন ভাষাই বুঝতে না পারার লাগামহীন সুবিধা। ফলে বাংলা, ইংরেজি, জার্মান, ফরাসী, জাপানী থেকে শুরু করে স্প্যানিস পর্যন্ত সকল ভাষার গানই যুক্ত হয়েছে ওর প্লে-লিস্টগুলোতে। জার্মানীর ‘Gummy Baer’ ফ্রেন্চ ‘Bebe Lilly’ আর ‘Dino Island’ এর বিশালাকার ডাইনোসর তার একেকটা প্রিয় চরিত্র। এই ত্রয়ীর প্রতি মেয়ের অনুরাগ এতোটাই ঈর্ষণীয় যে, এদের দুই একটা কর্মকান্ড বাবা হিসেবে আমাকেও খানিকটা রপ্ত করতে হয়েছে মেয়ের কাছে গ্রহনযোগ্যতা হারানোর ভয়ে! তবে এই প্রক্রিয়ায় কতদিন দৌড়াতে পারব সেটা বলা মুশকিল। মেয়ে ‘ওয়ন্ডার ওম্যান’এর ভক্ত হলে সেটা ওর মায়ের দায় বলে এড়িয়ে যেতে পারবো কিন্তু স্পাইডারম্যান বা সুপারম্যানের ভক্ত হয়ে গেলে তো আমাকেই প্যান্টের ওপর (?) দিয়ে জাঙ্গিয়া পরে ঘরময় 'আইই ভিশুমা! ভিশুমা!' করা লাগবে। এই লোকগুলা পোষাক নিয়ে এহেন বালখিল্য না করলেও পারতেন!

ধীরে ধীরে লুদমিলার ‘এসো নিজে করি’ তালিকাতে যুক্ত হয় 'নিজের পায়ে হাঁটা'। সপ্তাখানেক প্রচুর ধরাধরি আর অধ্যাবসায়ের পরে সে বেশ খানিকটা পথ সাহায্য ছাড়াই এগুতে শিখল। দাঁতের গোড়াপত্তনকে 'ইস্পাত যুগ' বললে এই আবিষ্কার নি:সন্দেহে চাকা আবিষ্কারের চাইতে কম গুরুত্বপূর্ন নয়। ঘটনার পর থেকে সে বিপুল আনন্দিত; কারণ তাকে দাঁতের অভাবনীয় ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য আর কারো দারস্থ হতে হবে না। এটা লুদমিলার ১১ মাস বয়সের কথা। এখন ওর বয়স ১৩ মাস। দু'মাস পেড়িয়ে এসে এখন মনে হচ্ছে, আমাদের এই ৪৮ বর্গমিটারের এপার্টমেন্টটা ওর জন্য খুবই ছোট। বাবা-মা'র পিছু পিছু বাড়িময় দৌড়ে বেড়ানো এখন লুদমিলার প্রিয় কাজ। প্রবাস-জীবনের নির্জনতায় মেয়েটার ছোট্ট পৃথিবীতে আপন-মানুষ বলতে আমরা দু'জন। আরও দুই-একজন পরিচিত ব্যক্তির মধ্যে আছেন ওর দুইজন ফিজিশিয়ান – এদের কাউকেই লুদমিলা পছন্দ করে না, কারণ বিভিন্ন সময়ে টিকা নেবার স্মৃতির সাথে এরা দুইজন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে প্রিয় মানুষদের ছোট্ট তালিকাতে এখনও পর্যন্ত বাবা-মা' ছাড়া আর কারও অন্তর্ভুক্তির সুযোগ হয় নাই।আমাদেরকে মুহুর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করতে চায় না সে। চা বা কফি বানাতে রান্নাঘরে গেলে গুটি গুটি পায়ে অল্পক্ষণের মধ্যেই মেয়েটা এসে পা জড়িয়ে ধরে দাঁড়াবে। এরপরে ক্যাবিনেটের কোন পাল্লা ধরে টান দিয়ে খুলে ফেলবে। তখন চা বানানো রেখে মেয়ের হাত থেকে চাল বা ডালের কৌটা সুরক্ষা করতে আমাকে ব্যস্ত হতে হবে। চাল-ডালে সুবিধে না করতে পারলে সেখানে বেশিক্ষন সময় থাকবে না লুদমিলা। পরক্ষণেই মিনারেল-ওয়টারের কেইস থেকে ওর চাইতে অনেক বেশী ওজনের পানির বোতল টেনে তোলার করার চেষ্টা করবে। সেখান থেকে অশ্রুপাত বিহীনভাবে লুদমিলাকে সরাতে হলে এরপরে আমাকে 'টুক্কি টুক্কি' খেলা শুরু করতে হবে - কিচেন থেকে বেরিয়ে সোজা বেডরুম বা লিভিং রুমের সহজ কোন আড়ালে লুকিয়ে 'টুক্কি' বলতে হবে। এই খেলাটা আমার মেয়ের অতি প্রিয়। ইতিমধ্যে বাবার লুকানোর জায়গাগুলো সে মুখস্ত করে ফেলেছে। তারপরেও বাবাকে খুঁজে পাবার পরে ওর মুখ থেকে যে উচ্ছ্বল হাসিটা ঝরে পরে, সেটা দেখলে প্রতিবারই আমার মনে হয় - এমন হাসি কি এর আগে কখনও দেখেছি?! কখনও কখনও এই খেলাতে আমাদের ভূমিকা বদলে যায়। তখন লুদমিলা লুকাবে আর আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। ওকে দেখতে পেলেও ঢাকা মেট্রপলিটান পুলিশের মতন ভান করি যে খুঁজে পাচ্ছি না। চিন্তিত চেহারা নিয়ে ঘরের এপাশ ওপাশ উঁকি দেই। এই কাজেও বেশি সময় ব্যয় করা চলে না, কারণ বেশিক্ষণ বাবা ওকে খুঁজে না পেলে অস্থির হয়ে লুদমিলনিজ থেকেই সামনে এসে 'উ উ' আওয়াজ করতে থাকবে।

লুদমিলার নিত্য নতুন সংযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের নজরদারির পরিমান ধাপে ধাপে বাড়াতে হচ্ছে, কারণ সেটা একটু ঢিলে করলেই দেখা যাবে, ঘরের প্রত্যন্ত কোন চিপাতে গিয়ে কোনও একটা কিছুতে জোঁকের মতন কামড়ে বসে আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই জিনিসটা দাঁত এবং মুখ বান্ধব হয় না। কিন্তু নতুন কিছু শেখার সবচাইতে বড় বিপত্তি হচ্ছে সেই কাজটা অগুণিতবার করতে দিতে হবে। করতে না দিলেই চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলবে যেটা সহ্য করা মুশকিল। মানুষের সন্তান হওয়াতেই কি না জানি না, অজ্ঞাত উপায়ে এরা বুঝে ফেলে যে, চিৎকার চেঁচামেচি করে বেশিরভাগ জিনিসই হাসিল করা সম্ভব। ইতিমধ্যেই অবশ্য লুদমিলা বাবা-মা'র অপছন্দের বিষয়গুলো খানিকটা জেনে গেছে - কোনটা মুখে দিলে মা 'নো-নো' বলবে সেটা ওর জানা, কিন্তু লোভ যখন প্রবল তখন সে পছন্দের জিনিসটা হাতে নিয়ে চলে যাবে এমন কোন চিপাতে যেখানে মা ওকে আর দেখতে পাবে না। এই বুদ্ধি তাকে কে দিল কে জানে!

দোকানে দোকানে ঘোড়াঘুড়ি করা আমাদের দুইজনেরই প্রিয় কাজ। এই অভিরুচি স্বাভাবিকভাবেই মেয়ের মাঝেও সঞ্চারিত হয়েছে। ডিপার্টমেন্টাল শপে খেলনার সেকশনে ছেড়ে দিলে লুদমিলার জগৎটা যেন হঠাৎ করে অনেক বড় হয়ে যায়। খেলনার বিশাল বিশাল তাকিয়ার সামনে গিয়ে পছন্দমত খেলনা নামিয়ে মুহুর্তেই নিজের কল্পনার জগতে ডুবে যায় মেয়েটা। সেইখান থেকে নিঃখরচায় তাকে উঠিয়ে আনা দিন দিন কঠিনতর বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। উঠানোর মূল্য বাবদ হাতে থাকা একাধিক খেলনার মধ্যে থেকে যেকোন একটা কিনে ফেলতে হয়। সেটাও সবসময় অশ্রুপাতবিহীন হয় না।

শুরুতে দুইজন মিলে লুদমিলাকে সামলাতে এবং ঘুম পাড়াতে হিমশিম খেতাম। দেশের বারোয়ারী ব্যবস্থাপনার সুবিধেটা এই প্রবাসে নেই। ফলে সারাদিন বাচ্চার পেছনে আমাদেরকেই সিংহভাগ সময় ব্যয় করা লাগে। অনেক সময়ই সেই কাজে নানাবিধ ব্যর্থতা দিশেহারা করে দেয় । তখন মরিয়া হয়ে এটাসেটা অবলম্বন করতে হয়। আমি এক বড়ভাইকে দেখেছি, ওনার জীবনের সবচাইতে বড় বিনোদন ছিল ঘুম। তিনি ঘুমাতে পারলে বোধ করি আর কিছুই চাইতেন না। ওনার বাবা মা নিশ্চয়ই ছোটবেলায় ভাল আরামে ছিলেন। কারণ, আমাদের মেয়েটা ঘুম পেলেও ঘুমাতে চায় না - বুয়েটে টার্ম ফাইনালের সময় এরকম আমরাও করতাম, ঘুম পেলে উঠে বুক ডন দিতাম, 'ব্রায়ান লারা' খেলতাম কিংবা বারান্দায় খানিকক্ষন দাঁড়িয়ে ঝিমাতাম, ঐখানে কিছু মানুষখেকো মশা বাস করত যাদের কাজ হচ্ছে রক্তের পাশাপাশি খানিকটা করে চামড়া খেয়ে ফেলা! তবে এই কামড়ে কাজ হত। অন্তত আধা ঘন্টার জন্য ঘুম বিদায় নিত! এর পরেও ঘুম পেলে পাশের রুমে আসিফের কাছে যেতাম জোকস শুনতে। এই ছেলেটা সৃষ্টিকর্তার এক আজব নেয়ামত। ওর জোকসের বইটাতে ১০০১টা জোকস ছিল। নামে 'জোকস' হলেও এরা কাজ করত ধাঁধার মতন – শোনার পরে হাসির বদলে ভ্রুঁ কুঁচকে ভাবতে হত যে কোন জায়গাটা মিস করলাম। কিন্তু আমাদেরই সামনে আসিফ জোকসগুলো পড়ত আর হেসে গড়াগড়ি যেত! জোকস শুনে হাসি না পেলেও 'আসিফের কি হবে' এই দুশ্চিন্তায় আমাদের ঘুম'টা বিদায় নিত। যাহোক, আমার মেয়ের সামনে প্রতিদিনই সেই টার্ম ফাইনালের ব্যস্ততা। পুরো বাসায় এত এত জিনিস, এর সিকিভাগও এখন পর্যন্ত নেড়েচেড়ে বা কামড়ে দেখা হয় নাই!! এইরকম পরিস্থিতিতে পরে পরে ঘুমালে কেমনে হবে?!

এখানেও পরিত্রান মেলে ঐ সঙ্গীতের হাত ধরেই। ঘুমের মতন অপ্রিয় কাজটা লুদমিলাকে করাতে হল ‘Lullaby’ শুনিয়ে। যারা পরিচিত নন তাদের জন্য খোলাসা করি - ‘Lullaby’ জিনিসটা আর কিছুই না, ঘুম পাড়ানি গীত। এর কাজ হল নিদ্রাহীনকে নিদ্রা গমনে সাহায্য করা। অনেকটা 'গুপী গায়েন'-র গানের মতন। জিনিসটা শোনা শুরু করলেই হাই উঠতে থাকে। প্রথম প্রথম সঙ্গীতের এই বিপুল ক্ষমতায় বিস্মিত হই! তবে ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, ঘুমের সময় এইসব বাদ্যবাজনা শোনাটা মেয়ের জন্য খানিকটা বাধ্যতামূলক হয়ে যাচ্ছে। দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার লুদমিলাকে ঘুমাতে হয়, বলাবাহুল্য, প্রতিবারেই এই ঘুমের বাদ্য দিয়ে। এদিকে মেয়ের জন্মাবধি তার মায়ের রাতের ঘুম কমতে শুরু করেছে এবং সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সেটা নাইট-গার্ডদের পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। ফলে দিনের বেলায় এই ঘুমের বাদ্য মেয়ের ওপরে যতটা প্রভাব ফেলে, তার চে' বেশি ফেলে তার মায়ের ওপরে।

এখানে ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র কিনলে দুই বছরের গ্যারান্টি পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে জিনিসপত্র নষ্ট হলে দোকানে নিয়ে যেতে হয়, সেটা ফিরিয়ে দিয়ে নতুন আরেকটা নিয়ে আসা যায়। শর্ত থাকে যে, পণ্যের গায়ে কোন 'Physical damage' থাকা চলবে না। সেই অর্থে ঘরের যাবতীয় ইলেকট্রনিক্সের গ্যারান্টি খোয়ানোর পথে আছি আমরা। কারণ আমাদের লুদমিলার কামড়ের চিন্হ নেই এমন একটা জিনিস খুঁজে পাওয়া এখনও সম্ভব হলেও অচিরেই সেই পথ পুরোপুরি বন্ধ হতে যাচ্ছে। অবশ্য মেয়েটা সব কিছুই এলোমেলো ভাবে করছে বললে বিরাট ভুল হবে। হাজারটা এলোমেলো কাজের মধ্যেই অল্প অল্প করে নিজেকে গুছিয়েও তুলছে সে। ওর মা শখ করে একটা মাউথ অর্গ্যান কিনেছিল লুদমিলার জন্য। কেনার সময় মূল লক্ষ্য ছিল মেয়ের ইন্টার-এ্যকটিভিটি'কে খানিকটা উষ্কে দেওয়া। সেই উষ্কানীতে এত কাজ হবে ধারণা করি নাই। মেয়েটা অতি সুন্দর করে মাউথ অর্গ্যান বাজায়। শুরুতে আমি বাজিয়ে বাজিয়ে (অবশ্যই এলোমেলো বাজনা) দেখিয়েছি জিনিসটা দিয়ে কি হয়। বাকিটা মেয়ে নিজেই করেছে। দুই হাতে সম্পূর্ণ দুরস্ত কায়দায় বাশিটাকে ধরে শরীর দুলিয়ে দুলিয়ে ঘরময় হেটে হেটে নানান সূর বাজায় লুদমিলা। মানুষ না কি তার স্বপ্নের সমান বড় হয় – আমার মনে হয় কথাটা সব সময় ঠিক নয়, কখনও স্বপ্নের চাইতে বড় হওয়াটাও সম্ভব বলে মনে করি। কারণ এক বছর আগে সাদা-কালো মনিটরের অনবরত রিফ্রেশ হতে থাকা অস্পষ্ট ছবিতে যে রক্ত-মাংসের টুকরাটাকে দপদপ করে লাফাতে দেখেছিলাম সে যে একদিন আমাদের ছেট্ট ঘরটাকে এমন সুরময় করে তুলবে সেটা আমার কোন স্বপ্নেই ছিল না!


মন্তব্য

কাজল শাহনেওয়াজ এর ছবি

আপনার লেখাটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আপনি লেখেন, যত্ন করে নয়, ভালবেসে - যেভাবে এটা লিখছেন।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এত সুন্দর কমেন্টের জবাব কিভাবে দেব সেটা ভাবছি হাসি

ভাল থাকুন

অতিথি লেখক এর ছবি

ওয়াও! দারুণ লেখা!

লুদমিলার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। হাসি

কুটুমবাড়ি

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা পৌছে যাবে লুদমিলার কাছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।আমাদের জীবনে এখনো কোন লুদমিলা আসেনি।সত্যি বলতে কি,আমি নিজেই একটু ব্যাপারটাক এড়িয়ে চলছিলাম।জানি যে ঘড়ি টিক টিক,টক টক করতে করতে এখন দ্রুম দ্রুম করছে,তবুও।আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগছে,আরো লাগছে ছোটবেলার হিংসা,বড়বেলার শূন্যতা।লুদমিলার জন্য ভালোবাসা রইল।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কিছু করার থাকলে শুরু করে দেন। লুদমিলারা বড়ই আনন্দের জিনিস! এদের ছাড়া জীবন অনেকটাই খালি ... ...

মর্ম এর ছবি

দুর্দান্ত! অনবদ্য! চমকপ্রদ! অসাধারণ!

লুদমিলার জন্য অনেক অনেক আদর!
ওকে নিয়ে নিয়মিত লিখবেন কিন্তু-
অপেক্ষায় থাকলাম পরের লেখার।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কলম দিয়ে লেখা বের হতে চায় না, কি যেন হইছে আজকাল।

লেখাটা আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম হাসি

মর্ম এর ছবি

কলম দিয়ে লিখতে হবে না, কীবোর্ডে টাইপ করে পোস্ট করলেই আমরা পড়ে নেব চোখ টিপি

লুদমিলা এ বয়েসেই লেখালেখির চেষ্টা করছে- ওই লিখতে থাক, আপনি একটু সাহায্য করবেন আর কি- তাহলেই চলবে দেঁতো হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

চেষ্টা করব রে ভাই

অমি এর ছবি

শুভেচ্ছা স্বাগতম,
আরেফিন ভাই এর আগমন।

আপনার লেখার জন্য একসময় তীর্থের কাকের মতন অপেক্ষা করতাম, কিন্তু এবার লিখতে এতই সময় লাগালেন যে, সে কাক ইতিমধ্যে অক্কা পেয়ে গেছে (কৃতিত্ব টুকুন যে তের মাস বয়সী লুদমিলার প্রাপ্য সেটা বুঝতে অবশ্য পি এইচ ডি করা লাগে না)।

আরেফিন ভাই ও তার পরিবারের (বিশেষ করে ছোট্ট লুদমিলা) জন্য রইল অনেক শুভ কামনা...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

সে কাক ইতিমধ্যে অক্কা পেয়ে গেছে

দুঃখিত!

আমি লিখি কম ভাই। আপনি তো লুদমিলাকে ধন্যবাদ দিলেন, এমনও তো হতে পারে ওর কারণেই লেখা আরও কমে গেছে ... হাহাহাহাহাহাহহা.....

ভাল থাকবেন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ওর খাওয়া দাওয়ার প্লে লিস্ট নিয়ে তও চিন্তা ক্যান করেন? হাতের কাছেই আছে গায়েন ময়না বয়াতী। তার কিছু গান তার প্লে লিস্টে যোগ করে দেন। বাকিটা দেখবেন যাদুর মতো কাজ হৈছে। লুদমিলা পারলে বাটি শুদ্ধা সব খেয়ে ফেলবে। ভয়ের চোটে! কারণ, যতোক্ষণ না খাবে, ততোক্ষণ ময়না বয়াতীর গান বাজতে থাকবে তার কানের পর্দার সামনে! বিফলে মূল্য ফেরত দিবো, চ্যালেঞ্জ থাকলো জনাব।

আর, মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে। শীঘ্রই বিবাহ দেন। পাত্র পাচ্ছেন না? অসুবিধা নাই। আছে। আমাদের ময়নার 'হৈবে পোলা'। আমার নিজের কপালে বিয়ার নাম নিশানা না দেখলেও, মরার আগে ময়নার বিয়েটা আমি দেইখা যামুই যামু। এইটা আমার ওয়াদা, বাংলা সিনেমার দাদা-নানাগো মতোন। নাতবউ না দেইখা মরুম না! কসম।

আজকে সকালেই ভাবতেছিলাম। একবছর হয়ে গেলো লুদমিলারে দেইখা আসলাম। এক বছর আগের পাওয়া না পাওয়া লুদমিলার তার ইস্পাত যুগের অস্ত্রের যথাযথ ব্যবহার থেকে বাঁচতে হলে তার ধুগো চাচার অতি শীঘ্র, অনতি বিলম্বে এই বছরের পাওয়া সহ লুদমিলার দরবারে করজোরে দাঁড়ায়ে থাকা ছাড়া আর কোনো গতি নাই।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

দাঁড়ি টারি সেইভ কইরা একবার সামনে আইসো, আমার মেয়ে পছন্দ করলে হ্যাঙ-আউট করতেও পারে চোখ টিপি

ময়না বয়াতির খোঁজ লাগাবো শীঘ্রই....

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আয়হায়, বয়াতীর খোঁজ এখনও পান নাই? লুল্ছিব্বাই কো? লুল্ছিব্বাইরে জিগান, তিনি আবার ময়না বয়াতীর একনিষ্ঠ পাংখা! দুর্জনে বলে (আমি না কিন্তু) তিনি নাকি ময়না বয়াতীরে দিয়া চাইনিজ গানের অনুরোধের আসর সাজান! কিন্তু ময়না বয়াতী আবার একটু বেয়াড়া আছে, চান্স পাইলেই ইস্ট ইউরোপিয়ান এক্সেন্টে পল্লিগীতি ধরে বসে।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অনেকদিন পর আপনার দেখা মিলল! অনেক আদর মামণির জন্যে!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমার লেখা যেখানে, সাইফ আছে সেখানে॥

ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য হাসি

হিমু এর ছবি

বহুদিন পর! এইবার আর ছাড়াছাড়ি নাই বস, সপ্তাহে একটা করে গোলা ছাড়েন!



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হিমু তোমার লেখাটা দারুন লাগছে, তোমার পোস্টে বলছি আবারও বললাম।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। লিখতে গিয়ে কলম আজকাল চলে না। কি জানি হইছে। তবে সচলে আসা হয়, পড়াও হয়। মনে হয় এখন ফুল টাইম পাঠক হয়ে যাবো।

ভাল থেকো।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আজকালকার পিচ্চিগুলা বড়ই পেইন দ্যায় দেঁতো হাসি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হু

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বহুদিন পর লিখলেন। তবে আপনার মতই লিখলেন...

লুদমিলার বর্ণন ইতিহাসে যেভাবে ইষ্পাত যুগ- চাকা আবিষ্কার স্মরণীয় কিছু ঘটনার জন্ম দিয়েছে; সেভাবে ডিজিটাল যুগেও সে যে এক কেউকেটা হয়ে উঠবে তা তার

ঙযয১ুযৃ১ৃুয১যুৃ১১ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃ
লেখার হাত দেখেই বুঝতে পারলাম।

পিচ্চির জন্যে অনেক অনেক শুভকামনা। ভালো থাকুন আপনিও।

_________________________________________

সেরিওজা

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

শুভকামনার জন্য অশেষ ধন্যবাদ, কেউকেটা না হলেও ভাল মানুষ যেন হয় দোয়া করবেন।

আশরাফ [অতিথি] এর ছবি

আপনার লেখার জন্য সত্যি সত্যি অপেক্ষা করে থাকি। প্রবাস জীবনের অনেক হারানোর বিপরীতে একটা বড় প্রাপ্তি হচ্ছে বাবা হয়ে ও অনেকটা মায়ের মত বাচ্চাদের কাছাকাছি আসার সুযোগ পাওয়া। ছুটির দিনগুলোতে বাচ্চাকে খাওয়ানো-গোসল করানো-ডায়াপার চেঞ্জ- ঘুম পাড়ানো এসব করতে করতে বাচ্চার সাথে একাত্ন হওয়ার অনুভূতিটা খুব উপভোগ করি। ভাবি দেশে থাকলে এটা কখনো হয়ে উঠতোনা।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কথাটা অনেকটাই সত্যি। এখানে মনে পড়ে যাচ্ছে, অপারেশনের কারণে আমার মেয়ের জন্মের পরে প্রথমবার ওর ডায়াপার বদলানো পায়খানা পরিস্কারের কাজটা আমাকে দিয়েই করান হয়। এই স্মৃতি আমার জন্য অমূল্য। ওর মা তখন সম্পূর্ণ বিশ্রামে ছিল। আমরা দেশে থাকলে এই স্মৃতিটুকুর মালিক হতে পারতাম না...!

অতিথি লেখক এর ছবি

ফলে বাংলা, ইংরেজি, জার্মান, ফরাসী, জাপানী থেকে শুরু করে স্প্যানিস পর্যন্ত সকল ভাষার গানই যুক্ত হয়েছে ওর প্লে-লিস্টগুলোতে।

খুব ভাল। পারলে আরো অনেক ভাষার গান শুনান। ১০ বছরের নিচে বাচ্চারা যেই ভাষা শুনবে, সেটার জন্য ব্রেইনের ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথওয়ে খোলা থাকবে। ফলে বড় হয়ে যদি সেই ভাষা শিখতে চায়, খুব সহজে শব্দগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারবে।

লুদমিলার জন্য অনেক শুভকামনা থাকল।
-রু

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

শুভকামনা পৌছে দিলাম।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অসাধারণ...
আটপৌরে লেখা এত চমৎকার হতে পারে!!!
লুদমিলার জন্য অনেক শুভকামনা হাসি
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আটপ্রৌঢ়ে লেখার মন্তব্য এমন সুন্দর হতে পারে?!!

অদ্রোহ এর ছবি

কথাটা বলার মওকা অনেক দিন খুঁজছিলাম, এই মাহেন্দ্রক্ষণে বলেই ফেলি, সচলায়তনের "মূলত পাঠক"যুগের প্রাক্কালে আপনার সব লেখাই শুরুতে গোগ্রাসে গিলেছিলাম, আর বলাই বাহুল্য ঘর কাঁপিয়ে ঠা ঠা করে হেসেছিলাম। দীর্ঘ প্রলম্বিত বিরতি শেষে যখন আসলেনই, ধরেই নিলাম এবার আর টেস্ট-ফেস্ট নয়, কুড়ি কুড়ি স্টাইলে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাবেন।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনাদের মন্তব্যগুলা আমার মেয়ের হাসির মতন, কখনই পুরানা হবে না। আমি কৃতজ্ঞ। লিখতে পারব কি না জানি না। তবে লিখলে আপনাদের কারণেই লিখব।

নিবিড় এর ছবি

অনেকদিন পর। তবে আজকে কার লেখা এটা খেয়াল না করেই পড়া শুরু করছিলাম কিন্তু প্রথম প্যারা পড়তে না পড়তেই লেখকের নাম না দেখেই নিশ্চিত হয়ে গেছি এটা আপনার লেখা হাসি
লুদমিলার জন্য শুভকামনা রইল হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

সুন্দর মন্তব্যের জবাবটা সুন্দর করে না দিলে মনে খচ খচ করে।

.... .... আমার এখন মনের মধ্যে খচখচ করছে। আপনি ভাল থাকুন।

তারানা_শব্দ এর ছবি

হিমু ভাইয়ের পোস্ট এ আপনার কমেন্ট পড়ে মাত্র পুনঃকমেন্ট করতে গেলাম যে ভাইয়া আপনি লিখেন না কেন? ঠিক তখনই এক বন্ধু এই লিঙ্ক দিলো!

সময় স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক বর্ণপরিচয়, একের ঘরের নামতা ইত্যাদি শেখান হয়ে ওঠে নাই।

হাহাহাহা...মজা পাইসি...

পিচ্চিটার কথা পড়তে গিয়ে আমার বোনের মেয়ের কথা মনে হলো। রোজ স্কাইপিতে ওকে দেখি...লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছিল আমাদের আনুশার কথাই বুঝি আপনি লিখেছেন...একদম একই কান্ড কারখানা...পিচ্চিগুলা সব এত্তো কিউট হয় কেমন করে কে জানে!!

নিয়মিত লিখেন ভাইয়া...অনেক মজা লাগে আপনার লেখা পড়তে... হাসি

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আনুশা লুদমিলা এরা আসলেই আলাদা না; আপনাকে ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

প্রতিটি ঘটনাই খুব চেনা, কিছুদিন আগেই এই সময়টা পার করেছি। নিধি এখন একটু বড় হয়েছে। সামনের মাসে স্কুলে যাবে।
নিধির ১ বছর কালের সময়টার সবগুলো ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। পিচ্চি মেয়েটা কী বড় হয়ে যাচ্ছে মন খারাপ

নিধির দাঁতালো সময়ে আমাদের কতগুলো সেলফোন সেট নষ্ট হইছে তার হিসাব নাই কোনো।

ধুর, নিধির কথা বলতেছি শুধু... আসলে নিধিটা নানাবাড়িতে দুদিন ধরে... আপনার লেখাটা পড়ে আর ভালো লাগছে না।

লুদমিলাকে শুভেচ্ছা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

শুধু নিধির কথাই বলেন নজু ভাই। আমিও তো শুধু লুদমিলার কথা বললাম আজকে।

দেশে আসতেছি জানুয়ারীর ১ তারিখে। সপরিবারে আপনার বাসায় দাওয়াত নিলাম হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দাওয়াত কবুল... ১ তারিখে বাড়ি বদলামু, পয়লা দুই তিন দিন একটু গুছানোর টাইম লাগবো খালি... তারপর যে কোনোদিন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ওডিন এর ছবি

এই লোকটার লেখার জন্য আমি হা করে বসে থাকি! দেঁতো হাসি

লুদমিলা তাহলে মাউথ অর্গান বাজাইতাছে!!!! ভিডিও করেন দেঁতো হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হু দেখি ভিডিউ দেওয়া যায় কি না

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

লুদমিলার ভিড্যু কো?

এতোদিন পরে আসলেন ক্যান! এরপরেরবার তাড়াতাড়ি আইসেন।

আপনার অন্য কিছু লেখার মতোই এটাও প্রিয়তে গেলো! মন মেজাজ খারাপ হলেই পড়বো আর পিচ্চি আম্মুটার কথা ভেবে মন ভালো হয়ে যাবে! হাসি

অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো! দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হু ভিডিও নিয়ে চিন্তা করতেসি।

অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

তাসনীম এর ছবি

বাবার চাকরিটা বেতন না থাকলেও দারুণ কিন্তু।

লেখা খুব ভালো লেগেছে...লুদমিলার জন্য শুভকামনা...শিশুপালন জীবনের আনন্দময় অভিজ্ঞতাগুলোর অন্যতম। নিজে এটা উপভোগ করুন এবং আমাদেরকেও করান... হাসি

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শামীম এর ছবি

এটার যেই বেতন সেটা অন্য কোনো চাকরীর বেতন দিয়ে কেনা যাবে না।

শিশুপালন সিরিজটা নিয়মিত পড়ি। পটি ট্রেনিং নিয়ে একটু চিন্তিত চোখ টিপি কারণ আমার মেয়ের বয়সও এখন ১৪ মাস ৫ দিন।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হক কথা

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক দিন পর..................... এবং অনবদ্য এক লেখা।

এই বয়সে বাচ্চারা অদ্ভুত সব কিছু করে যা মুগ্ধ হয়ে দেখি, মনে হয় যেন এই দৃশ্যগুলো আটকে রাখি। ছোট ভাইকে খুব কাছ থেকেই বড় হওয়া দেখেছি।

লুদমিলার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

অনন্ত

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

সচলে ভাল ভাল লেখা দিয়ে এখন উপচে পরে, এরপরেও এই অধমকে মনে রাখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছা পৌছে যাবে

আসিফ [অতিথি] এর ছবি

‘ওয়াও’...অসাধারণ হইছে! লুদমিলার জন্য শুভকামনা...
এরকম আর লেখা চাই। আপনি সময় না পেলেও আশা করি পরের পর্ব ও নিজেই লিখে দিবে!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনার মন্তব্যও অসাধারণ হইছে। লুদমিলা লেখা শুরু করলে ভালই হবে, হাচল হিসেবে শুরু কবে দেবে।

কুয়াশা [অতিথি] এর ছবি

প্রতি সপ্তাহে লুদমিলার খবর জানতে চাই ঠিক এরকম আয়তনের পোস্টের মাধ্যমে। লুদমিলার জন্য আদর রইল।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনাকে কি আমি চিনতে পারলাম ঠিকঠাক ভাবী?
ভাল আছেন আশা করি। প্রতি সপ্তাহের কথা বলতে পারি না। তবে মাঝে মধ্যে যে আসবো এতে সন্দেহ নাই। মেয়েটা এমন সব কাজকর্ম করা শুরু করছে যে, লিখে শেষ করা যাবে না।

সারাহ ক্যারিগ্যান এর ছবি

অসাধারণ.........এত অসাধারন এক্ লেখা যে কি বলব...একদিন ট্রেনে করে বাসায় ফিরছি..সেদিন কোনো একটা ইভেন্ট ছিল মনে হয়, ট্রেনে অনেক ভীড়....এমন সময় পাশে দাড়ানো এক পিচ্চি শুরু করল টুকি খেলা... পিচ্চি রা যেমন হয় আর কি...
অবাক লাগছে যে আমি এখন সাদা-কালো মনিটরের অনবরত রিফ্রেশ হতে থাকা অস্পষ্ট ছবিতে ওই রক্ত-মাংসের টুকরাটাকে দেখেই দিন পার করছি। আর কয় মাস পরে হয় তো লুদমিলার মত কেউ সব জায়গায় তার চিহ্ন রাখা শুরু করবে...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

বাহ্ আরেকজন লুদমিলা?

শুনে ভাল লাগল। স্বপ্নের মধ্যে বসবাস। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।

নৈষাদ এর ছবি

অনেকদিন পর। চমৎকার।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ধন্যবাদ।

শামীম এর ছবি

আমাদের লুদমিলা = নীলিয়ার আজ ১৪মাস ৫দিন। দেশে থাকাতে এবং শ্বশুরবাড়ির একই ভবনে বাসা ভাড়া নেয়ার কারণে আমার মেয়েটার জগত আরেকটু বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেজন্যই হয়তো ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী একটু কম আক্রান্ত .. ... তারপরেও সমস্ত প্লাগপয়েন্টে ট্রান্সপারেন্ট টেপ লাগাতে হয়েছে বাধ্যতামূলকভাবে। আর আমিও কম্পুটারে ওর দক্ষতা দেখে বিষ্ময়ে আঁতকে উঠি। নিজের বর্ধিত অস্তিত্বকে বেড়ে উঠতে দেখাটা একটা অনন্য অনুভুতি।

আমার নিজের অনুভুতিগুলোই আপনার কীবোর্ড থেকে এ্যাত অসাধারণ শৈলীতে বেরোতে দেখে ব্যাপক ভাল লাগলো।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এই কমেন্ট এ নিয়ে ৩ বার লিখলাম। এদ্দিন পরে সচলে পোস্ট করলাম, আর আজকেই সচল এরকম হেচকি দিচ্ছে, বিরক্ত।

যাহোক, আমাদের লুদমিলার আজ ১৪ মাস ১ দিন হাসি

হু, নিজের বর্ধিত অস্তিত্ব, কথাটা সুন্দর বলেছেন শামীম ভাই। লুদমিলার সাথে আমার চেহারাগত মিল থাকায় এই অনুভূতিটা আমি প্রবলভাবে উপভোগ করি! ওর জন্মদাগ পর্যন্ত আমার সাথে মিলে যায়!....

... ... ভাল থাকুন।

ইফতেখার নাঈম [অতিথি] এর ছবি

@লুৎফুল আরেফীন ভাইঃ
ভাইয়া, কিচ্ছু বলার নেই। শুধু একটা কথায় বলতে চাই,
অ সা ধা র ণ

লুদমিলার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা আর অনেক অনেক ভালোবাসা হাসি

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমারও কিচ্ছু বলার নেই শুধু - ধন্যবাদ

আদনান [অতিথি] এর ছবি

খুব ভালো লাগলো পড়ে। আমার ছেলের বয়স ১৪ মাস। আপনার লেখা পরছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম, কিভাবে যেনো আমার ছেলের কাজের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে ঃ)

আপনার মেয়ের জন্য অনেক আদর।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অবাক হচ্ছিলাম, কিভাবে যেনো আমার ছেলের কাজের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে ঃ)

অবাক হওয়ার মনে হয় কিছুই নেই। শিশুরা আসলে স্বতন্ত্র একটা জাতি। মেলামেশার জন্য এদের ভাষা বা সংস্কৃতির মিল দরকার হয় না, কারণ এদের সবার ক্ষেত্রেই সেটা কমন বা সাধারণ।

আমরা বিদেশ গিয়ে স্বদেশী খুঁজি মনে র কথা বলার জন্য। আমার মেয়ে যেকোন ওয়েটিং রুমে আরও দশটা বাচ্চা থাকলে কিভাবে যেন কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে তাদেরকে নিজের বন্ধু বলে চিনতে পারে, ওরাও ঠিক তাই।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌লুদমিলাকে অনেক অনেক আদর। বুড়িটা গুটি গুটি পায়ে হাঁটে? দৃশ্যটা ভাবতেই আমার ফাঁকিবাজ পিচকাটার কথা মনে পড়ে। সতেরো মাস চলছে তার। ইচ্ছে করলেই হাটতে পারে, কিন্তু চেষ্টা করবে না। ধরে ধরে হাঁটবে কিংবা ওয়াকারে দৌড়াবে। নিজের পায়ের রিস্ক নেয় না। এখন বুঝলাম মেয়েরা কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আর ছেলেগুলা আত্মবিশ্বাসের অভাবে পিছিয়ে পড়ে আক্কেল সেলামী দিচ্ছে। হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা...মন্তব্য জাঝা

অস্পৃশ্যা এর ছবি

লুদমিলার জন্য অনেক ভালোবাসা আর আদর। পুরো লেখাতেই স্বর্গীয় এক ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে, যা এককথায় অসাধারণ। আমাদের ছোট্ট জীবনেও এমন লুদমিলা চাই।

পুরো পরিবারের জন্য অনেক শুভকামনা রইল, ভাইয়া।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

লুদমিলা দিয়ে ভরে যাক আপনাদের ছোট্ট ঘর। ভয় নাই, বেশি লাগবে না। একজন লুদমিলাই এত ভরপুর করতে পারে যে কল্পনা করতে পারবেন না।

ভাল থাকুন।

লীনা রহমান [অতিথি] এর ছবি

খুব ভাল লাগল আপনার লেখার ভঙ্গি। সত্যি মনকে ছুঁয়ে গেল। আমার চাচাতো বোনটি আমার সাড়ে ১৫ বছরের ছোট। আমাদের সাথেই থাকে ও আর ওর বাবা-মা। যা কিছু বলেছেন ঠিক সেই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমার আদরের বোন নাজিহামনিকে বড় হতে দেখেছি।ওর বয়স এখন ৪ বছরের কিছু বেশি।আজ সে স্কুলে ভরতি হল, তাই এমনিতেই আপ্লুত ছিলাম যে কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল চোখের সামনে! আপনার লেখা পড়ে ওর লুদমিলার বয়সী থাকা অবস্থার স্মৃতিগুলো আবারো উকি দিয়ে গেল। নাজিহাকে যত ভালবাসি তার চেয়ে বেশি ভাল মনে হয় নিজের বাচ্চা ছাড়া আর কাউকে বাসতে পারবনা। অনেক ধন্যবাদ সেই অমূল্য স্মৃতির দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ দেবার জন্য।

মানুষ না কি তার স্বপ্নের সমান বড় হয় – আমার মনে হয় কথাটা সব সময় ঠিক নয়, কখনও স্বপ্নের চাইতে বড় হওয়াটাও সম্ভব বলে মনে করি। কারণ এক বছর আগে সাদা-কালো মনিটরের অনবরত রিফ্রেশ হতে থাকা অস্পষ্ট ছবিতে যে রক্ত-মাংসের টুকরাটাকে দপদপ করে লাফাতে দেখেছিলাম সে যে একদিন আমাদের ছেট্ট ঘরটাকে এমন সুরময় করে তুলবে সেটা আমার কোন স্বপ্নেই ছিল না!

দারুণ বলেছেন।
মানুষ তার স্বপ্নের চেয়ে বড়, একথাটা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বলেছিলেন।
আপনার স্বপ্নের চেয়ে বড়, আপনার সুরলোকের সম্রাজ্ঞী লুদমিলার জন্য অনেক আদর রইল।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ধন্যবাদ এত সময় নিয়ে যত্ন করে মন্তব্য করার জন্য। আপনাকেও শুভেচ্ছা।

অনিকেত এর ছবি

সচলায়তনে আমি যদি কারো হিউমারের ভক্ত হয়ে থাকি তাহলে সে লোকটি আপনি! আজকেও এই লেখাটা পড়ার সময় কতবার যে হেসে কুটিপাটি হয়েছি তার সীমা সংখ্যা নাই--
কিন্তু আজকের লেখার মূল আকর্ষন আপনার হিউমার নয়---আমার লুদমিলা'র কীর্তিকলাপ--মনে হচ্ছে আমি অতি দ্রুত লুদমিলার বাবার সাথে সাথে সাথে লুদমিলারও অন্ধভক্ত হয়ে পড়ছি---

এমন মিষ্টি একটা মেয়ে আপনার--!!
অনেক অনেক শুভকামনা রইল আমার মামনিটার জন্যে

আমার নিজের একটা বাকেট লিস্ট আছে। আজ সেই লিস্টিতে আরো একটা আইটেম যোগ করলাম---পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার আগে যে করেই হোক এই মামনিটার সাথে দেখা করতে হবে---

ভাল থাকুক লুদমিলা
ভাল থাকুক তার বাবা-মা

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

জানুয়ারীতে কোথায় থাকবেন? ঢাকা হলে বাকেট লিস্টের একটা অন্তত পূরণ করা সম্ভব।

মূলত পাঠক এর ছবি

লুদমিলার বাবামাকে অনেক অভিনন্দন, এই রকম ও আরো অনেক নতুন ভ্যারাইটির দুষ্টুমি করে সে আপনাদের জীবন আরো অতিষ্ঠ করে তুলুক এই প্রার্থনা! হাসি

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ধন্যবাদ বদদোয়ার জন্য হাসি

মেঘনাদ [অতিথি] এর ছবি

আপনার পুরো লেখাটা পড়ার সময় চাচ্ছিলাম লেখাটা যেন শেষ না হয়। "স্বাগতম লুদমিলা" পড়ার সময়ও একই অনুভূতি ছিলো। আমার অনাগত লুদমিলার জন্য অনেক স্বপ্ন জমিয়ে রেখেছি মনের কোণে। আপনার মেয়ের জন্য অনেক আদর আর শুভকামনা রইলো।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অনাগতার জন্য অশেষ শুভকামনা। স্বপ্নের পথে সুস্বাগতম!!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

প্রতিটা সেকেন্ড উপভোগ করার মতো সময় পার করতেছেন ভাই। আপনার সোনামনির জন্য আমার তরফ থেকে আদর দিয়েন। আর আপনি মাঝে মাঝে একটু নিয়মিত হইয়েন হো হো হো

ও, আরেকটা কথা। লুদমিলার হাতের লেখা খুবই সুন্দর চোখ টিপি

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

এইরকমভাবে হঠাৎ করে লিখে ফেলাটাই মনে হচ্ছে এখন নিয়ম বানিয়ে ফেলতে হবে।

অনেক ধন্যবাদ্

শঙ্কর [অতিথি] এর ছবি

'ওয়াও' লুদমিলা। লুদমিলা ভালো থাকুক, রোজ আরো আরো দুষ্টুমি করুক।

দিয়া যখন দুতিন মাসের, কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতাম নামতা বলে। প্রথম প্রথম অসুবিধা হয় নি। কদিন পরেই মেয়ে আর ঘুমোতে চায়না, আমার এখনও সতেরো-আঠারো ঘরের নামতা মুখস্থ হয়ে আছে।

যখন হাঁটতে শিখলো, একদিন ভাবলাম একটা প্যাঁক প্যাঁক জুতো কিনে দিই। পাড়ার বাজারে কোলে করে নিয়ে গিয়ে একটা জুতো কিনে দিলাম। কোল থেকে নামালাম, মেয়ে এক পা এগোল, জুতো বলে, 'প্যাঁক'। মেয়ে ভয় পেয়ে আর এগোবে না। ভাবলাম, এতো লোক দেখে ভয় পেয়েছে। নিয়ে এলাম পাড়ার মাঠে। সেখানেও এক-পা হেঁটেই মেয়ে পুতুল বনে গেল। তারপর দেখি, হামা দেবার চেষ্টা করছে। বাড়ী নিয়ে এলাম। সেখানেও একশন রিপ্লে। আধঘণ্টা পরে মেয়ে বুঝলো ঐ শব্দটা থেকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারপর রাত এগারোটা পর্যন্ত শুনেছি, 'প্যাঁক, প্যাঁক, ...'

লুদমিলার প্রথম বার প্যাঁক প্যাঁক জুতো পড়ার গল্পটা কি এরকমই? আরেকটা পোস্ট নামান।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অসাধারণ কমেন্ট!

দেশে যাচ্ছি, দেখি প্যাঁক প্যাঁক জুতা কেনা যায় কি না। তারপর নাহয় লিখব। তবে আপনার লেখার মতন সুস্বাদূ নাও হতে পারে। তার জন্য আগাম অজুহাত দিয়ে রাখি।

মূলত পাঠক এর ছবি

শঙ্কর স্যার, আপনি একটা লিখুন না ঐ প্যাঁকপ্যাঁক জুতোর গল্প। আমার ধারণা ঘনাদার চেয়ে কোনো অংশে খারাপ হবে না সেটা। মজার গল্পের মজাই আলাদা।

সুরঞ্জনা এর ছবি

লুদমিলার নিত্য নতুন সংযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের নজরদারির পরিমান ধাপে ধাপে বাড়াতে হচ্ছে, কারণ সেটা একটু ঢিলে করলেই দেখা যাবে, ঘরের প্রত্যন্ত কোন চিপাতে গিয়ে কোনও একটা কিছুতে জোঁকের মতন কামড়ে বসে আছে।

প্রত্যন্ত চিপাতে গিয়ে জোঁকের মতো... অ্যাঁ

ওয়াও... !! অ্যাঁ
ওয়াও রে ভাই !!! অ্যাঁ
কী নিদারুণ দারুণ বর্ণনা!!!! দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

নাহার মনিকা এর ছবি

বাবা মার ২০০% মনযোগ, উপচে পড়া স্নেহের ভান্ডার- এই না হলে শিশুকাল! কি সুন্দর লুদমিলা!

কৌস্তুভ এর ছবি

আমার প্রিয় লেখক আরেফীন ভাইয়ের এই লেখাটা এত দেরিতে পড়লাম কেন? তা যা হোক, আবারো একটা অমানুষিক লেখা দিয়েছেন। লুদমিলা মিষ্টিমণির জন্য অনেক আদর, তার দন্তরুচি কৌমুদীতর হোক। হাসি

Tamanna এর ছবি

হাসি অসাধারন!!!!

ঢাকাইয়্যা যাদুকর () এর ছবি

আপনি এত ভাল লিখেন কিভাবে???????????

উপরওয়ালার উপর ভারী রাগ হচ্ছে এই বৈষম্যের জন্য

পাঠক এর ছবি

দারুন লাগলো........

মেঘা এর ছবি

এতো অনুরোধ সবার তারপরও ভাইয়া হারিয়েই গেলেন! খুব ভালো লেগেছে লেখা। লুদমিলা এখন নিশ্চয়ই আরো অনেক মজার মজার কাজ করতে শিখেছে। বাবুটার জন্য অনেক আদর।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।