ফয়সালা অন দ্যা স্পট

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: শনি, ২৪/০১/২০১৫ - ১:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক অধিকারের চর্চা করা কোন অযৌক্তিক কিছুনা। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে হরতাল/অবরোধ এর ডাক দেয়া সেই রাজনৈতিক অধিকার চর্চারই অংশ। যদি সেই আন্দোলনের ডাকে সাধারন জনগনের অংশগ্রহনের ইচ্ছা থাকে তাহলে সে নিবে, না থাকলে নেই। বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধের মত রাজনৈতিক কর্মসূচীর বহু ইতিহাস আছে। তাতে আপামর জনগনের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহনেরও উদাহরন আছে যথেষ্ট। পাকিস্তানি শোষক সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তী সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গনআন্দোলন, সবখানেই জনগনের অংশগ্রহন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু আজকে হরতাল-অবরোধের নামে, রাজনৈতিক-গনতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করার নামে, যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে যে সহিংসতার সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। প্রত্যেকদিন সাধারন মানুষকে যে মানসিক ভীতির মধ্যে জীবিকার তাগিদে চলাচল করতে হচ্ছে, যেভাবে আগুনে পুড়িয়ে নিরুপায় মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হচ্ছে, তা কোন স্বাভাবিক বোধ সম্পন্ন নাগরিকের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। দেশকে মৃত্যুপুরীতে রূপান্তর করে আর যাই হোক কোন রাজনৈতিক অধিকারের চর্চা হয়না। সাধারন মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে কোন ভাবেই গনতন্ত্রের চর্চা হয়না। বিএনপি-জামাতের এই নির্বিচারে মানুষ নিধন কর্মসূচী কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়।

পত্রিকার পাতায় এক একটি সংবাদ যে কি পরিমান ক্রোধের জন্ম দেয় তা লেখার মাধ্যমে বোঝানো সম্ভব না। সন্তানকে বাঁচাতে তাকে আঁকড়ে ধরে মা এবং সন্তান দুজনেই পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার্থীর চোখ উড়ে যাচ্ছে বোমার আঘাতে, অন্ধ মায়ের অন্ধকার জীবন আরও নির্মম হচ্ছে বাসে ছোড়া পেট্রোল বোমায় তার একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে, কোলের শিশু আগুনে পুড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে বার্ন ইউনিটের বিছানায়, একের পর এক ঘটনায় সাধারন মানুষ দগ্ধ হচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কত মানুষের সবকিছু। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। শ্রমজীবী মানুষ যাদের জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হয় তাদের উপর এধরনের হত্যাযজ্ঞ যে কোন উপায়ে প্রতিরোধ করতে হবে।

সরকার তার ক্ষমতার প্রয়োগে জনগনের জীবনের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। দেশের সব ধরনের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োগ করা হোক। যে কোন মূল্যে মানুষের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে যে রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং জামাত তাদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তাদের সমাজের সকল স্তর থেকে বয়কট করতে হবে। পাড়া-মহল্লায় সকল বোমাবাজ এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আজকে যে মানুষের আগুনে পুড়ে মরার সংবাদ আমি দেখছি কালকে সেই সংবাদে আমার নামও থাকতে পারে। প্রত্যেক নাগরিককে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। জামাত একটি সন্ত্রাসি সংগঠন, একে নিষিদ্ধ করা অনেক পুরনো একটি দাবী। সরকার এদিকে দৃষ্টি দিক। বিএনপি দিনে দিনে আস্তাকুড়ে পরিনত হওয়া একটি দল, এদের বর্জন করা উচিত। মানুষের জীবনের মূল্যের থেকে আর কোন কিছু বেশি গুরুত্ব পেতে পারে না।

পুলিশ-বিজিবি-র‍্যাব ইত্যাদি সকল নিরাপত্তা বাহিনীকে বোমাবাজদের দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হোক। দরকার হলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভবনের উপরে স্নাইপার নিয়োগ দেয়া হোক। যে কোন মূল্যে যানবাহনে পেট্রোল বোমা হামলাকারীদের রুখতে হবে। কোন রাজনৈতিক দল যদি দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে, সহিংসতার মাধ্যমে জনজীবন বিপর্যস্ত করতে চায়, তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হোক। আলোচনা আর মৌন মিছিলে নয়, যারা বোমা মেরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে, সে সকল নরপিশাচকে তাদের যোগ্য ভাষায় জবাব দেয়া হোক।

বোমার বদলে গুলি চলুক। ফয়সালা হোক অন দ্যা স্পট।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১।
পেশাগত ও পারিবারিক কাজকর্ম মিলিয়ে এই অবরোধের শুরু থেকেই আন্তঃজেলা যাতায়াত অব্যাহত আছে। সেই সূত্রে আমজনতার কথাবার্তা শুনি প্রায় নিয়মিতই। এই প্রেক্ষিতে

পাড়া-মহল্লায় সকল বোমাবাজ এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আজকে যে মানুষের আগুনে পুড়ে মরার সংবাদ আমি দেখছি কালকে সেই সংবাদে আমার নামও থাকতে পারে। প্রত্যেক নাগরিককে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।

এই কথাগুলো দেখে এত দুঃখেও হাসি পেল। হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেনঃ "মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপদজনক।" তিনি যে সঠিক ছিলেন তা টের পাচ্ছি হাড়ে হাড়ে। এই খবরটা পড়ে প্রথমে খুব উৎফুল্ল হয়েছিলাম। পরে অন্যান্য কিছু নিউজসাইট ক্রসচেক করে কিছু পেলাম না। আলু আলুই, বাঙালি বাঙালিই। দুটোর কেউই বদলায়নি। মন খারাপ

২।
মানবাধিকারবারীদের ৫০ দূরে থাক ২৫ জনের কিংবা নিদেনপক্ষে ১০ জনের কোনও যৌথ বিবৃতিও চোখে পড়ছে না। আবারও হুমায়ুন আজাদের শরণ নেইঃ "বাঙলার বিবেক খুবই সন্দেহজনক। বাঙলার চুয়াত্তরের বিবেক সাতাত্তরে এসে পরিণত হয় সামরিক একনায়কের সেবাদাসে।" ভাগ্যিস তিনি বেঁচে নেই। থাকলে, বর্তমানের বিবেকদের জন্যে এই প্রবচনটি আরও তীক্ষ্ণ করে তুলতেন নিশ্চয়। (কেবল ডঃ আবুল বারাকাতকে প্রতিবাদ করতে দেখলাম। স্যারকে শ্রদ্ধা। গুরু গুরু )

৩।
হুমায়ুন আজাদের কবিতা দিয়েই বলিঃ

তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্ট ভ্রষ্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ
মাইলের কথা: তার রাজনীতি
অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যম-লী
জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন
করে আমাকে পীড়ন কোরো না
তার ধানক্ষেত এখনো সবুজ, নারীরা এখনো রমনীয়, গাভীরা এখনো দুগ্ধবতী,
কিন্তু প্রিয়তমা, বাঙলাদেশের কথা তুমি কখনো আমার কাছে জানতে চেয়ো না;
আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, তার অনেক কারণ রয়েছে।

অথবা,

যে তুমি ফোটাও ফুল বনে বনে গন্ধভরপুর-
সে তুমি কেমন ক’রে, বাঙলা , সে তুমি কেমন ক’রে
দিকে দিকে জন্ম দিচ্ছো পালেপালে শুয়োরকুকুর ?

৪।
বড্ড নৈরাশ্যবাদী কথাবার্তা হয়ে গেল, কিন্তু মিছে আশা দিয়ে তো লাভ নেই, তাই না?
ভালো থাকুন অরফিয়াস। ভালো থাকুন সবাই। (আশা ছাড়াইবা কি করার আছে?)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অরফিয়াস এর ছবি

আমার মত নিরাশাবাদি মানুষ পুরা বাংলাদেশে আর একটা আছে কিনা সন্দেহ আছে কিন্তু কি আর করা, দেয়ালে পিঠ ঠেকা রে ভাই। একেবারে পুরা ভুলতেও পারিনা আবার কিছু করতেও পারি না।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাকিদেরও অন্তত বুঝতে তো হবে যেঃ "দেয়ালে পিঠ ঠেকা রে ভাই"
আমি সাধারণ ভাবে নৈরাশ্যবাদী নই। কিন্তু কাদের নিয়ে আশা করব?
জানিনা! নিজেকে/নিজেদের প্রবলভাবে মানসিক সংখ্যালঘু মনে হয়।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

বোমার বদলে গুলি চলুক। ফয়সালা হোক অন দ্যা স্পট।

উত্তম জাঝা!

- ওমেশু

অরফিয়াস এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মাসুদ সজীব এর ছবি

চলুক

বোমার বিরুদ্ধে গুলি হয়তো একটা অস্থায়ী সমাধান কিন্তু স্থায়ী কোন সমাধান নয়, বরং এটি অনেক বেশি বিতর্কের জন্ম দিবে। কারণ গাড়িতে যারা পেট্রোল বোমা মারে তাদের অনেকেই শিশু, ছিন্নমূল মানুষ। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে এরা সেই বোমা ছুড়ছে। গুলি করে স্পটে তাদের মেরে ফেললে পর্দার আড়ালে যারা বসে কলকব্জা নাড়ছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। এছাড়া অনেকগুলো অভিযোগ তাতে উঠবে, দাবি করা হবে নিরীহ মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে।

এরচেয়ে বেশি কার্যকর গাড়িতে আগুন দিয়ে মারার জন্যে দ্রুত বিচারে অপরাধী এবং অপরাধের হোতাদের শাস্তি দেওয়া। দুটোকেই আইনের মুখোমুখি করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন করে এই বিচার করা যায়। আর এখানেই সরকার ব্যর্থ, ২০১৩ থেকে শুরু করে ২০১৫ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কোনটার বিচার তারা করেনি। সেটাই বারবার এমন ঘটনাকে প্রশয় দিচ্ছে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অরফিয়াস এর ছবি

দুঃখিত, যারা টাকার বিনিময়ে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে তাদের শিশু কিংবা ছিন্নমূলের কাতারে ফেলতে আমি রাজি নই, তারা খুনি, টাকার বিনিময়ে মানুষ হত্যা তাদের উদ্দেশ্য। পর্দার আড়ালে কারা নির্দেশ দিচ্ছে তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমান আছে, ইচ্ছা থাকলে এতেই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। যেখানে প্রতিদিন মানুষ আগুনে পুড়ছে সেখানে ফালতু অভিযোগে কান দেয়ার সময় নেই। নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব, তারা আগে সেটা পালন করুক। আর আগুনে যারা পুড়ছে তাদের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের দিকে নজর দেয়ার ব্যাপারে সবসময়ই সম্ভ্রান্ত শ্রেণির সমস্যা থাকে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মাসুদ সজীব এর ছবি

আপনি আমার মন্তব্য সঠিক ভাবে হয়তো বুঝেননি না হয় আমি বুঝাতে সক্ষম হইনি। যারা মারছে তারা খুনী সেটা নিয়ে যেমন কোন সন্দেহ নেই, তেমনি তারা গরীব বা ছিন্নমূল বলে তাদের শাস্তি না হোক এমন কোন অজুহাত ও নেই। সক্রিয় খুনীর শাস্তির পাশাপাশি পেছনের চক্রান্তকারীরও শাস্তি চাই, মন্তব্যে সেটাই বলতে চেয়েছি।

এত প্রমাণ থাকার পর কেন তাহলে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না? শুধু সক্রিয় খুনীদের গুলি করে মেরে ফেললে মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। দুটোর বিরুদ্ধে একই সাথে ব্যবস্থা নিতে পারলেই এমন ঘটনা শেকড় থেকে উৎপাটন সম্ভব। আর না হলে সেটির স্থায়ি কোন সমাধান আসবে না।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অরফিয়াস এর ছবি

কাকের মাংস কাকে খায় না। রাজনীতির অলিখিত নিয়মে একজন আরেকজনের পুটু মারার ব্যাপারে অনিহা থাকে। নাহলে অনেক আগেই ব্যবস্থা নেয়া হত। পরিবারের একজন জামাত, আরেকজন বিম্পি আরেকজন আম্লিগ করলে কে কারে জেলে নিবে?

অবশ্যই সমস্যার সমাধানে শিকড় ধরে নাড়া দেয়া উত্তম কিন্তু এই সমস্যা এইভাবে সমাধান হবেনা। গুলিতে মরা শুরু করলে আচোদা পাব্লিকে টাকার বদলে বোমা মারতে ১০ বার ভাববে। আচোদা পাব্লিকের জন্য কথার বদলে লাঠি উত্তম। কথাতে মানলে অনেক আগেই এইসব বন্ধ হত। যখন গুলিতে মরা শুরু হবে তখন আপ্নেই লাইনে আসবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।