যে কোন বিজ্ঞানের ছাত্র যখন প্রথমবার কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়ে তার চিন্তাভাবনার জগতে বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা লাগে। এটা আমার মত অভাগা গ্রাজুয়েট ছাত্রের কথা না, স্বয়ং নেইলস বোর বলেছেন, “কেউ যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রথম দেখায় ধাক্কা না খায়, তাহলে খুব সম্ভবত সে এটা বুঝতেই পারেনি!” কিন্তু আমাদের পদার্থ যে কোয়ান্টাম কণা দিয়েই তৈরি, তাই পদার্থের স্বরূপ বুঝতে হলে আমাদের কোয়ান্টাম জগতেই যেতে হবে। এ জগতে প্রবেশের সাথে সাথেই আপনি বুঝতে পারবেন, পৃথিবীর সবচাইতে অদ্ভুত সায়েন্স ফিকশনের জগত থেকেও এই জগত আরও অনেক বেশি অদ্ভুত, রহস্যময়, হয়ত ভৌতিক বললেও কম বলা হবে। কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের অনেকগুলো আজব ব্যাপারের মধ্যে একটা হল এটা কিন্তু ন্যাচারালি যুক্তির সিঁড়ি পার হয়ে আসেনি, এটা এসেছে পরীক্ষালব্ধ ফল থেকে। অনেকটা প্রকৃতি যেন মানুষকে বলছে, আমি এরকম, এই আমার সৌন্দর্য, তুমি না বুঝতে পারলে, না গ্রহণ করতে পারলে, অন্য কোন মহাবিশ্বে যাও, যেই মহাবিশ্বে নিয়মগুলো তোমার মনের মত। রিচার্ড ফাইনম্যানের ভাষায়, “If you want to know the way nature works, we looked at it, carefully, (look at it, see) that's the way it looks! You don't like it..., go somewhere else! To another universe! Where the rules are simpler, philosophically more pleasing, more psychologically easy. I can't help it! OK! If I'm going to tell you honestly what the world looks like to the... human beings who have struggled as hard as they can to understand it, I can only tell you what it looks like.” মহামতি ফাইনম্যান যখন এ কথা বলেছেন, আমি তো কোন ছার! আমিও তাই পাঠককে গল্প শুরুর আগে বলে নিচ্ছি, আমি সত্যি সত্যি জানি না এ সবকিছু কেন এভাবেই হয়, আমি শুধু জানি কি হয় আর জানি সেই সব অসম্ভব বুদ্ধিমান মানুষের গল্প যারা এই রহস্যের অতল গহ্বর থেকে আমাদের জন্য দুই-একটা মুক্তো কুড়িয়ে আনেন। আজকে এরকম তিনজনের গল্প শুনাব।
গল্প শুরুর গল্পঃ
দুটো জিনিস দিয়ে প্রথমে শুরু করতে চাইঃ একটা হল সিমেট্রি বা প্রতিসাম্য, আরেকটা হল ইনভ্যারিয়েন্স বা অপরিবর্তনীয়। সিমেট্রি খুব সম্ভবত প্রকৃতির সবচাইতে সুন্দর ব্যাপারগুলোর মধ্যে একেবারে এক নম্বর। ব্যাপারটা এমন না যে, কোন কিছু সিমেট্রিক হলে তাকে দেখতে সুন্দর লাগে তাই। সিমেট্রির গল্প বলতে হলে চলে যেতে হবে ১৯১৫ সালে, যখন আইন্সটাইন এক অচেনা নারী-গণিতবিদের ভূয়সী প্রশংসা করে সেই সময়ের ডাকসাইটে গণিতবিদ ড্যাভিড হিল্বারটকে লিখলেন, “The old guard at Göttingen should take some lessons from Miss Noether! She seems to know her stuff.” খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, ভদ্রমহিলার পুরো নাম এমি নয়েথা। তাঁর ১৯১৫ সালে প্রমাণ করা একটা থিওরির সারমর্ম ছিল এরকমঃ যেখানেই সিমেট্রি পাওয়া যাবে, সেখানে অবশ্যই কোন না কোন কঞ্জার্ভেশন ল’ বা নিত্যতার সূত্র (সংরক্ষণশীলতার সূত্র) খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, নিত্যতার সূত্র কি? কোন একটা নিত্যতার সূত্র বলে, আমার কাছে এমন কোন ভ্যারিয়েবল আছে, যেমন ভর, শক্তি, চার্জ ইত্যাদি, যেটা কোন একটা ট্রান্সফরমেশন বা রুপান্তরের মধ্য দিয়ে গেলেও অপরিবর্তিত (বা ইনভ্যারিয়েন্ট) থাকে। উদাহরণ দেইঃ আপনার কাছে একটা বড় মসৃণ লোহার গোলক আছে। আপনি যদি এটাকে এক চক্কর ঘুরিয়ে আনেন, তার আগের চেহারা এবং এখনের চেহারার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে? না, থাকবে না। এর অর্থ হলঃ গোলকটার রোটেশনাল সিমেট্রি (ঘূর্ণন প্রতিসাম্য) আছে।
এখন আসি নয়েথার থিওরেমে। প্রথমে ধরে নেই, আমাদের মহাবিশ্বের যে কোন সিস্টেমে পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলো আগেও যা ছিল, ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। তার মানে আমরা ধরে নিচ্ছি, আমাদের সূত্রগুলো সময়ের সাথে সিমেট্রিক। মানে আমি যদি সময় এর রুপান্তর বা ট্রান্সফরমেশন করি, সূত্রগুলো একই থাকবে। সুতরাং নয়েথারের থিওরি অনুযায়ী এখানে কোন একটা নিত্যতার সূত্র আছে। আমরা হিসাব-নিকাশ করলে দেখতে পাব, আসলেই আছে আর সেটা হল “শক্তি”র নিত্যতা! (তার মানে শক্তির নিত্যতার সূত্র আকাশ থেকে টুপ করে পড়েনি, এর পিছনে প্রকৃতি আরও সুন্দর একটা ব্যাখ্যা এতদিন লুকিয়ে রেখেছিল)। আবার আমরা যদি ধরি, আমাদের সিস্টেম স্থানের সাপেক্ষেও সিমেট্রিক। মানে আমি সিস্টেম নিয়ে আমার বাসায় কাজ করি বা পাশের বাসায় নিয়ে কাজ করি, একই ফলাফল পাব, তাহলেও নয়েথারের থিওরি অনুযায়ী একটা নিত্যতার সূত্র লুকিয়ে আছে। হিসাব করে দেখুন, পাবেন “ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র”! (ভরবেগ হল পদার্থের গতিশক্তি বুঝার একটা উপায়, কারো ভরবেগ বেশি হওয়া মানে সে অন্য বস্তুর উপর বিশাল গতিশক্তিতে আঘাত করতে পারবে)। বিজ্ঞানীরা এজন্য পার্টিকেল এক্সিলেটরে নতুন নতুন কণার জন্য হন্যে হয়ে সিমেট্রি খুঁজতে থাকেন, কারণ সিমেট্রি পাওয়া গেলেই বুঝা যাবে, এরা কোন সূত্র মেনে চলে। কি সহজ, কিন্তু অসাধারণ একটা ব্যাপার!
সিমেট্রির সাথে পদার্থবিজ্ঞানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা জড়িতঃ সেটা হল পদার্থের Phase বা ‘দশা’। পদার্থের দশা বলতে আসলে তার অবস্থাকে বুঝায়ঃ যেমন, পানির তিনটি দশা - বরফ, পানি এবং বাষ্প। তাপমাত্রা এবং চাপ পরিবর্তন করে আমরা এই ‘দশা’কে পরিবর্তন করতে পারি। পদার্থের স্বরূপ জানার জন্য তার ‘দশা’র রহস্য বিজ্ঞানীদের জানতে হয়। এখন যদি আপনি প্রশ্ন করেন, দশা কি? এটা যখন পরিবর্তন হয় তখন আসলে পদার্থের কোন বৈশিষ্ট্যটা পরিবর্তন হয়? তাহলে উত্তর দেয়ার জন্য আমি আরও সহজ প্রশ্ন করবঃ বলুন তো, পানি আর বরফের মধ্যে আসলে পার্থক্যটা কি? দুইটাতেই এক জোড়া হাইড্রোজেন একটি অক্সিজেনের সাথে জোড়া বেঁধে পানির অণু তৈরি করে, কিন্তু এই দুই দশায় বাইরে থেকে দেখতে এদের আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন কেন? উত্তর হলঃ এদের আণবিক বিন্যাস এবং অণুদের মধ্যে আকর্ষণ-বিকর্ষণ আলাদা। এই আণবিক বিন্যাস বা অণুগুলো সাজানোর উপর নির্ভর করে পদার্থের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়। সাধারণত একটি বিশেষ তাপমাত্রায় অণুরা নিজেদের সাজ পরিবর্তন করে। আর যেখানেই সাজ বা বিন্যাস, সেখানেই কিন্তু সিমেট্রি। সহজ ভাষায় বললে, পদার্থের দশা পরিবর্তন হওয়া মানে তার অভ্যন্তরে কোন একটা সিমেট্রির বিবর্তন হওয়া।
দশা এবং সিমেট্রির সম্পর্ক একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝালে মনে হয় সবসময় সুবিধা হয়। মনে করুন, পানি তরল অবস্থায় আছে। আপনি যদি এখন পানির অনু-পরমানুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতে গিয়ে চারদিকে তাকান, দেখবেন অসংখ্য পানির অণু যে যেভাবে পারে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। আপনি ওই জগতে যেভাবেই দাঁড়ান, ১০ পা সামনে এগিয়ে, বা আধা চক্কর ঘুরে, বা কোণাকুণি ঘাড় বাঁকিয়ে, সবসময় সবদিকে একই অবস্থা দেখতে পাবেন। এই ঘটনার তাৎপর্য হলঃ তরল অবস্থায় পানির অণুদের বিন্যাসে ট্রান্সলেশন(আগে-পিছে) এবং রোটেশনাল(ঘুরিয়ে-বাঁকিয়ে) সিমেট্রি আছে। এবার চলুন বরফের জগতে যাইঃ এই জগতে সব অণু যার যার অবস্থানে স্থির এবং সবাই একই ভাবে সজ্জিত। যেন একটার পর একটা ঘর এবং সেই ঘরের বিভিন্ন জায়গায় অণুগুলো সাজানো, কিন্তু প্রত্যেক ঘরের ঠিক একই জায়গায় একই ভাবে অণুরা বসে আছে। এক ঘরের মাঝখান থেকে আরেকঘরের মাঝখানে গেলে মনে হয় যেন আগের ঘরটাতেই আছি। এটা হল ক্রিস্টাল সিমেট্রি। এই সিমেট্রিতে ঠিক নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব পার হলেই শুধু সব আগের মত দেখায় (এক ঘরের কেন্দ্র থেকে আরেক ঘরের কেন্দ্র)। ধরা যাক, এক ঘরের কেন্দ্র থেকে আরেক ঘরের কেন্দ্রের দূরত্ব ২০ পা, আপনি যদি ১০ পা যান, অথবা ২৫ পা যান, আপনি কিন্তু একই রকম দেখবেন না। আপনাকে সবকিছু আগের মত পেতে হলে ঠিক ২০ পা করেই এগুতে হবে। এজন্য এটাকে বলে ডিসক্রিট (টুকরো-টুকরো) ট্রান্সলেশন সিমেট্রি। ডিসক্রিট বলা হচ্ছে, কারণ সিমেট্রি পেতে হলে আপনাকে ২০ পা, অথবা ২x২০ = ৪০ পা, অথবা ৩x২০ = ৬০ পা করে আগাতে হবে। এর মাঝে কিছু হলে আপনি সিমেট্রি পাবেন না। সুতরাং বরফ আর পানির পার্থক্য হলঃ পানি তরল অবস্থায় কন্টিনিউয়াস ট্রান্সলেশন এবং রোটেশনাল সিমেট্রি দেখায়, কিন্তু বরফ হয়ে গেলে শুধু ডিসক্রিট ট্রান্সলেশনাল সিমেট্রি দেখাবে।
সিমেট্রি এবং দশার গল্প শেষ করব একটা শেষ উদাহরণ দিয়ে। যে কোন কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল কণার (যেমন ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, ফোটন ইত্যাদি) স্পিন নামে একটা কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য থাকে। ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন এদেরকে বলা হয় ফার্মিয়ন, কারণ এরা ফার্মি-ডিরাক স্ট্যাটিস্টিক্স মেনে চলে। এ ধরণের কণার স্পিন হয় ভগ্নাংশ, যেমনঃ ১/২, এদের দিয়ে আমাদের সব পদার্থ তৈরি। অন্যদিকে ফোটন, গ্র্যাভিটন এরা হল বোসন, কারণ এরা বোস-আইন্সটাইন স্ট্যাটিস্টিক্স মেনে চলে। এ ধরণের কণার স্পিন হয় পূর্ণ সংখ্যা, যেমনঃ ১, এরা সব ধরণের শক্তি বহন করে, যেমনঃ গ্র্যাভিটি, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম ইত্যাদি। এখন এক্সপেরিমেন্টালি ইলেক্ট্রন এবং অন্যান্য ফার্মিয়নদের স্পিনের দুই রকম চেহারা পাওয়া গিয়েছেঃ স্পিন আপ এবং স্পিন ডাউন। একটা পরমাণুতে যদি জোড় সংখ্যক ইলেক্ট্রন থাকে তাহলে এরা আপ-ডাউন করে এমন ভাবে থাকে যাতে লব্ধি শূন্য হয়ে যায়। আর বিজোড় সংখ্যক থাকলে পরমাণুটির একটা লব্ধি স্পিন থাকে। একইভাবে পদার্থের অণুগুলোরও স্পিন থাকতে পারে। কোন পদার্থে সব স্পিন যদি একই দিকে থাকে তখন সেই পদার্থ চৌম্বক ধর্ম দেখায়। মজার ব্যাপার হল, একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার উপরে উঠলে অণু-পরমাণুগুলো এতই কাঁপা-কাঁপি শুরু করে যার জন্য তারা সব স্পিনকে আর একদিকে রাখতে পারে না। এই তাপমাত্রা (কুরী তাপমাত্রা) পার হলে চুম্বক আর তার চৌম্বকত্ব দেখাতে পারে না। আবার সেই একই জিনিসঃ প্রথমে এক রকম সিমেট্রি ছিল, তাই এক রকম দশা ছিল। যেই ভিতরের সিমেট্রি বদলে গেল, সাথে সাথে দশা পরিবর্তন হয়ে গেল।
১৯৫০ সালের দিকে গিঞ্জবার্গ এবং ল্যান্ডাউ অণু-পরমাণুর বিন্যাস এর সিমেট্রি এবং পদার্থের দশার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে একটি গাণিতিক মডেল দাঁড়া করেন। মডেলটা বলে যে, তাপমাত্রার পরিবর্তনে পদার্থের অণু-পরমাণুদের অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন হয়, এরকম হতে হতে যখন পদার্থের মধ্যে নিজে নিজে (স্পন্টেনিয়াস) সিমেট্রি ব্রেকিং হয়, তখনই পদার্থ তার দশা পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা বহু পদার্থের দশা এবং এ সম্পর্কিত নানা পরিক্ষালব্ধ ফলাফল গিঞ্জবার্গ-ল্যান্ডাউ মডেলের সাহায্যে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন। কিন্তু ঝামেলা বাঁধে কিছু দ্বিমাত্রিক এবং একমাত্রিক পদার্থের ক্ষেত্রে। পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছিতে এদের আচরণ উপরের থিওরি এবং মডেল দিয়ে নানাভাবে চেষ্টা করেও বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হন।
কস্টার্লিটজ, থুলেজ এবং এক পশলা জ্যামিতিঃ
বিজ্ঞানীরা যখন দ্বিমাত্রিক এবং একমাত্রিক পদার্থের দশা পরিবর্তন নিয়ে চুল ছিঁড়ছেন, তখন হ্যান্স কস্টার্লিটজ এবং ডেভিড থুলেজ নামে দুইজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ সাহস করে এগিয়ে আসলেন। কস্টার্লিটজ এবং থুলেজ বললেন, দ্বিমাত্রিক পদার্থের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা যেভাবে সিমেট্রি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, সেখানে আসলে গণ্ডগোল আছে। আমাদের জানাশোনা বিন্যাসভিত্তিক সিমেট্রির বাইরেও প্রকৃতির কাছে আরও অদ্ভুত সিমেট্রি আছে। সেই সিমেট্রি পেতে হলে আমাদের গণিতের কাছে যেতে হবে (কারণ গণিত খুব সম্ভবত একমাত্র ভাষা যেই ভাষায় প্রকৃতি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে)। গণিতের এই সিমেট্রির নাম হলঃ টপোলজিক্যাল সিমেট্রি। এর উদ্ভব হয়েছে জ্যামিতির টপোলজি থেকে। এটা পদার্থের জ্যামিতিক আকার নিয়ে কাজ করে। সাধারণ জ্যামিতির ভাষায়, দুইটা সমান ব্যাসার্ধের বৃত্ত যেমন একই জিনিস, টপোলজির ভাষায় একটা গোলক আর একটা সিলিন্ডার আসলে একই জিনিস, কারণ গোলককে না ভেঙ্গে/ছিঁড়ে শুধু হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সিলিন্ডার বানিয়ে ফেলানো যায়। এখানে দুইটি বস্তু একই হওয়ার শর্ত হল, আপনি পরিবর্তনের সময় তাকে ছিঁড়তে বা ভাঙ্গতে পারবেন না এবং তার মাঝে যে কয়টা গর্ত আছে, সেই সংখ্যাটা অক্ষুণ্ণ রাখবেন। একই যুক্তিতে একটা আংটিকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আপনি একটা ফ্রিজবি বানিয়ে ফেলতে পারবেন, এমনকি ওই ফ্রিজবিকে আবার পিটিয়ে চা’য়ের কাপ বানিয়ে ফেলতে পারবেন। সুতরাং টপোলজিক্যালি এরা একই জিনিস। কস্টার্লিটজ এবং থুলেজ বললেন, পদার্থের মধ্যে যদি টপোলজিক্যাল সিমেট্রির পরিবর্তন হয়, তাহলেও পদার্থের দশা পরিবর্তিত হবে।
ষাটের দশকের বিজ্ঞানীরা গিঞ্জবার্গ-ল্যান্ডাউ মডেলের সাহায্যে হিসাব কষে দেখান যে, দ্বিমাত্রিক তরল হিলিয়ামকে সুপার-ফ্লুয়িড দশায় নেয়া সম্ভব না (পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকছি এই বিশেষ দশা পাওয়া যায়, এই দশায় পদার্থের কোন সান্দ্রতা থাকে না। সান্দ্রতা হল আকৃতি পরিবর্তনে তরল পদার্থ কতটুকু বাঁধা দেয়, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়ঃ পানির থেকে মধুর সান্দ্রতা অনেক বেশি)। তাঁরা যুক্তি হিসেবে দেখালেন, সাধারণ দশায় এধরণের তরল হিলিয়ামে পরিবেশ থেকে যে তাপশক্তি পায় তার সাহায্যে স্পিনের ঘূর্ণিস্রোত বা ভরটেক্স তৈরি করে। আমরা যদি তাপমাত্রা আরও কমিয়ে আনি, তাহলে তাপশক্তির প্রাপ্যতা আরও কমে যাবে। ফলে ঘূর্ণিস্রোত বা ভরটেক্সের পরিমাণও হ্রাস পাবে। কিন্তু শুন্য তাপমাত্রায় না আসা পর্যন্ত এরকম দুই-একটা ভরটেক্স থাকবে এবং সিস্টেমটা আলোড়িত অবস্থায় থেকে যাবে। এ অবস্থায় কোনভাবেই সুপার-ফ্লুয়িড বা “সান্দ্রতা-শূন্য” দশা পাওয়া সম্ভব না। অর্থাৎ সিস্টেম নতুন কোন দশায় পরিবর্তিত হয়ে স্থিতিশীল হতে পারবে না। কিন্তু ১৯৭২ সালে কস্টার্লিটজ এবং থুলেজ বললেন, যদি দুইটা ভরটেক্স একে অপরের উল্টোদিকে ঘুরতে থাকে, তাহলে কি হবে? এধরণের জোড়া ভরটেক্স একে অপরের প্রভাবকে নিষ্ক্রিয় করে দিবে। ফলে আমরা দেখব, একটা সিস্টেম ভরটেক্স-যুক্ত অবস্থা থেকে ভরটেক্স-শূন্য অবস্থায় রুপান্তরিত হয়ে স্থিতিশীল হয়েছে। ফলে সুপার-ফ্লুয়িড বা “সান্দ্রতা-শূন্য” দশা পেয়ে যাওয়া সম্ভব। এখন একটা ভরটেক্স মানে একরকম টপোলজি আর একজোড়া বিপরীত ভরটেক্স হল আরেকরকম টপোলজি। সুতরাং উপর থেকে দেখতে যদিও মনে হয় অনেকগুলো ভরটেক্স ছাড়া তো আর কিছু না, কিন্তু ভিতরে আসলে টপোলজি বদলে যাচ্ছে। তাই নতুন সিমেট্রি তৈরি হচ্ছে, দশাও পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা দেখালেন, এটা শুধুমাত্র টপোলজি হিসাবে নিয়ে গণনা করলেই পাওয়া সম্ভব। এরকম অবস্থায় তাঁরা পুরনো বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে বললেন, দ্বিমাত্রিক তরল হিলিয়ামেও সুপার-ফ্লুয়িড দশা পাওয়া যাওয়া উচিৎ। ১৯৭৮ সালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাঁদের ভবিষৎবাণী সত্য প্রমাণিত হয়।
আরেকটি বিশাল ধাঁধা বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে রেখেছিলঃ যার নাম Integer Quantum Hall Effect; যদি আপনি ইলেক্ট্রনের একটা দ্বিমাত্রিক শিট নিয়ে তার উপর শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করেন, দেখবেন ওই শিটে কারেন্ট তৈরি হয়েছে এবং তার জন্য একটা ভোল্টেজ পাওয়া যাচ্ছে। পদার্থবিদ্যার জানাশোনা সূত্রগুলো বলে, আপনি চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তি যত বাড়াবেন, ততই ভোল্টেজ বাড়তে থাকবে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায়, ভোল্টেজ চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে সুষমভাবে বাড়ে না, বরং লাফিয়ে লাফিয়ে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা অনেক খুঁজেও সংশ্লিষ্ট কোন সিমেট্রির পরিবর্তন বা ব্রেকিং পাননি যেটা এর জন্য দায়ী হতে পারে। থুলেজ বললেন, এখানেও আসলে টপোলজির খেলা। ১৯৮২ সালে তিনি প্রমাণ করেন যে, আমরা যদি টপোলজির সিমেট্রি নেই, তাহলে দেখব ইলেকট্রনের শক্তি এবং ভরবেগের একটা নির্দিষ্ট রূপ আছে যেটার একটা টপোলজিক্যাল অর্ডার আছে। তিনি তাঁর হিসাব থেকে দেখান যে, এই অর্ডারটা চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে বা কমে। সুতরাং আমরা এক্সপেরিমেন্ট করে যে ভোল্টেজ পাব, সেটাও লাফিয়ে লাফিয়েই পরিবর্তন হবে। ১৯৮৫ সালে প্রকৃতিতে Integer Quantum Hall Effect এর উপস্থিতি প্রমাণ করার জন্য ক্লাউস ভন-ক্লিটজিং নোবেল প্রাইজ পান।
হ্যাল্ডেন এবং তাঁর একমাত্রিক জগত
ডানকান হ্যাল্ডেন সমসাময়িক সময়ে একজন পোস্ট-ডক্টরাল রিসার্চার হিসেবে পদার্থের অবস্থার উপর কাজ করছিলেন। ১৯৮০ সালে হ্যাল্ডেন তাঁর কল্পনার জগতে একটা অসীম দৈর্ঘ্যের মুক্তোর হার তৈরি করেন। তবে এই হারে মুক্তোর বদলে ছিল কোয়ান্টাম কণাঃ ফার্মিয়ন এবং বোসন। হ্যাল্ডেনের কল্পনার মতো আপনি যদি পর পর এরকম কণা বসিয়ে একটা একমাত্রিক হার তৈরি করেন, তাহলে প্রত্যেকটা কণা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূত্র অনুযায়ী তার প্রতিবেশীদের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করবে এবং সামগ্রিক সিস্টেমের আচরণ নির্ভর করবে কণাদের স্পিন এর উপর। চেনা-চরিত থিওরিগুলো অনুযায়ী, শুধু ফার্মিয়ন বা শুধু বোসন দিয়ে তৈরি হার আপাতদৃষ্টিতে একই আচরণ করবে। হ্যাল্ডেন ভাবলেন, আমি যদি টপোলজি হিসাবে নেই, তাহলে কি হয়? তিনি হিসাব কষে দেখলেন, এখন এরা আর একইরকম আচরণ করছে না, বরং সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, ফার্মিয়নের শেকলটাতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলেই তারা ভয়ংকরভাবে আন্দোলিত হতে থাকে। আবার বোসনের শেকলটাতে অনেক শক্তি দিয়ে আঘাত করলেও সে সহজে আন্দোলিত হয় না। হ্যাল্ডেন প্রমাণ করলেন, একমাত্রিক পদার্থের জগতও টপোলজির সিমেট্রিকে ধারণ করে। পরবর্তীতে আরও হরেক রকমের একমাত্রিক এবং দ্বিমাত্রিক পদার্থে টপোলজি কিভাবে দশা পরিবর্তন করে তার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা তিনি দিতে সমর্থ হন।
কস্টার্লিটজ, থুলেজ এবং হ্যাল্ডেনের কাজ সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের সামনে পদার্থের দশা কিভাবে কাজ করে সেই জ্ঞানের নতুন দরজা খুলে দিয়েছিল। এরপর গত ৩০-৪০ বছরে বিজ্ঞানীরা একের পর এক টপোলজিক্যাল দশা পরিবর্তনের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। একমাত্রিক, দ্বিমাত্রিক, ত্রিমাত্রিক সব ডাইমেনশনে টপোলজিক্যাল পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। একবিংশ শতাব্দিতে এসে এই বিষয়ক গবেষণা Condensed Matter Physics এ সবচেয়ে আলোচিত এবং আরাধ্য হয়ে উঠেছে। আমরা জানতে পেরেছি কঠিন, তরল আর বায়বীয় ছাড়াও শূন্য তাপমাত্রার নিকটে পদার্থের আরও কত রকম দশা আছে। মানুষের কৌতুহল এবং অধ্যাবসায় এর কাছে হার মেনে প্রকৃতি আমাদের দেখিয়েছে, কত অসাধারণ পদার্থ আমাদের সামনে লুকিয়ে আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিসমাথ সেলেনাইড। যাকে দিয়ে যদি আপনি একটি সিলেন্ডার বানান, তবে সেই সিলেন্ডারের দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠতল পাওয়া যাবে পরিবাহী আর অভ্যন্তরের ত্রিমাত্রিক বপু (Bulk) জুড়ে সে অপরিবাহী। মানে একটা পদার্থ একই সাথে কারেন্ট কন্ডাক্টর এবং ইন্স্যুলেটর। এজন্য আমরা এর নাম দিয়েছি “টপোলজিক্যাল ইন্স্যুলেটর”। এমন হাজারো নতুন নতুন আবিষ্কারের পথ যারা খুলে দিলেন, সেই তিনজন অনন্য মেধাবী মানুষকে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে "নোবেল পুরষ্কার ২০১৬" দিয়ে সম্মানিত করেছে। আমাদের দেশের ডঃ জাহিদ হাসানও বর্তমানে প্রিন্সটনে অধ্যাপক হিসেবে এই বিষয়ে গবেষণা করছেন, আগ্রহী পাঠক তাঁর ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন। ঈর্ষনীয় এবং অসাধারণ সব এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করছে তাঁর গবেষণা দল। কে জানে অদূর ভবিষ্যতে এই ফিল্ডে আবার কেউ নোবেল পেলে হয়ত উনাকে লরিয়েটদের কাতারে দেখতে পারব!
নোবেলের দুঃখঃ
ডেভিড থুলেজের বর্তমান বয়স ৮২ বছর, তিনি মারাত্মক স্মৃতিভ্রম রোগে ভুগছেন। তাঁর সহকর্মীরা মনে করেন, তিনি হয়ত তাঁর নিজের কাজের কথা মনে করতে পারেন না, এমনকি নোবেলের কথা জানানোর পরও তিনি হয়ত তেমন কিছু বুঝবেন না এবং ভুলে যাবেন। বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় পুরষ্কারটি এ অসাধারণ কল্পনাশক্তির অধিকারী মানুষটির হাতে উঠে ধন্য হল, কিন্তু বড্ড দেরি করে। ভালো থাকুন প্রফেসর ডেভিড... ভবিষ্যত প্রজন্ম আপনার গল্প শুনে হাজার বছর অনুপ্রাণিত হবে!
পরিশিষ্টঃ
আমি যখন বাংলায় এরকম বিষয় নিয়ে কিছু লিখতে বসি তখন একটা জিনিস মনেপ্রাণে ঠিক রাখার চেষ্টা করি সেটা হল, বিজ্ঞানের সঠিক ব্যাখ্যাটা থেকে দূরে সরে না গিয়ে যতটা সম্ভব সাধারণ এবং নন-টেকনিক্যাল ভাষায় লেখা। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই অনেক কিছু ওভারসিমপ্লিফাইড হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে চেষ্টা থাকে বিজ্ঞানটাকে একটু জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও যাতে বিজ্ঞানের মানবিক দিকটা তুলে ধরা যায়। টপোলজিক্যাল দশা পরিবর্তনের বিষয়ে সঠিক বিজ্ঞান জানতে আগ্রহী পাঠক নোবেল কমিটির "সায়েন্টিফিক ব্যাকগ্রাউন্ড ২০১৬" পড়ে দেখতে পারেন। আমি মূলত সেটাকেই অনুসরণ করে লেখার চেষ্টা করেছি। আর সব কিছুর পর গুগল এবং গুগল স্কলার তো আছেই!
নোবেল কমিটির সায়েন্টিফিক ব্যাকগ্রাউন্ড ২০১৬ঃ http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/2016/advanced-physicsprize2016.pdf
- বাহাউদ্দীন
মন্তব্য
আপনার এই প্রাঞ্জল লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। পদার্থবিদ্যার সাম্প্রতিক ছোটো-বড় আবিষ্কারগুলো নিয়ে আরেকটু ঘন ঘন লিখুন। সচলায়তনে নিবন্ধন করে নিতে পারেন, তখন সব লেখা একটি অ্যাকাউন্টে চলে আসবে।
ধন্যবাদ! নিবন্ধন করে নিব। আশা করি, আরও কিছু ভালো গল্প শুনাতে পারব
অনেক ভাল লাগলো সাথে অনেক কঠিন কিছু বিষয় খুব সহজেই বুজলাম। এভাবেই পদার্থ বিজ্ঞান আর আকর্ষণীয় হয়ে উঠুক আপনার হাত ধরে এই শুভ কামনায় ।
কঠিন জিনিস লিখতে গিয়ে আসলে নিজেও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি, মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! অনুপ্রাণিত হলাম
চমৎকার! প্রচুর লিখুন।
..................................................................
#Banshibir.
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!
আপনার লেখার হাত বাঁধিয়ে রাখার মত!
অনেক অনেক ধন্যবাদ! অনুপ্রাণিত হলাম
খুবই ভাল লেখা হইসে।
- প্রতীক
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!
অনেক ভাল লাগলো লেখাটি, এই ধরণের বিষয় সাধারণের বোঝার মত করে লেখা বেশ কঠিন , আপ্নাকে সাধুবাদ।।।।।।।।।।।অনু
অনেক ধন্যবাদ !!
অসাধারণ চমৎকার লেখনি। নিয়মিত লিখতে থাকুন। এইরকম প্রাঞ্জল ভাষায় বিজ্ঞান পড়ার মজাই অন্যরকম।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
আনন্দ নিয়ে পড়েছেন জেনে সার্থক অনুভব করছি।
বিজ্ঞানের সুকঠিন কিছু বিষয় বেশ সহজভাবে উপস্থাপন করে অশেষ ধন্যবাদার্হ হলেন। আপনার লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকবো।
ধন্যবাদ ! আশা করি সামনে আরও কিছু ভালো গল্প শুনাতে পারব
খুবই ভালো লাগল লেখা। কিছু প্রশ্ন মনে এসেছে। আরেকটু পড়াশোনা করে সেগুলো এখানে লিখব। আপাতত ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম। আরো লিখবেন নিশ্চয়ই!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
প্রশ্নের অপেক্ষায় রইলাম , মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ
আগে আড্ডায় বসে বিজ্ঞান নিয়ে এটা ওটা আলোচনা, বোঝানো, বোঝার চেষ্টা এসব চলেছে, কিন্তু দিন দিন বিজ্ঞান বিশষ করে পদার্থ বিজ্ঞানটা এতো খানিই অদ্ভুত হয়ে উঠেছে যে হালে পানি পাইনা। বাংলায় সহজ করে যে ক’জন বিজ্ঞান নিয়ে লেখেন তাদের দিকেই অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকি। খুব ভালো লিখেছেন, সাধারন মানুষের ভাষাটা অনেকেই ভুলে যান।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
আমি তো ভাবতাম বিজ্ঞানের গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে মানুষজন আঁতেল ডাকে ভালো হলো, এখন ব্লগে আপনাদের সাথে মনের পুলকগুলো ভাগাভাগি করা যাবে
ভাই আমি নিজেও পদার্থবিদ্যার ছাত্র। আমার শিক্ষকরা কোনদিন আমারে বলে নাই "বাবা সিমেট্রি এই কাজে লাগে", এই প্রথম জানলাম। ভাই আপনার লেখাটা সোনা দিয়া বান্ধায়া রাখার মত। খুবই উচু লেখা এসথেটিকালি এবং সায়েন্টিফিকালি উভয় দিক দিয়ে। অনেকে বলে বিজ্ঞান শুধু আংরেজিতেই হয়, শুধু ভাল বিজ্ঞান লেখকের অভাবে এই কথাটা বলার সাহস পায়। ভাই আপনি আরো লিখুন অভাগী মাতৃভাষায়। "আশীর্বাদ করলাম, আপনার সোনার দোয়াত কলম হোক"(বারবারা বিডলার-কে থেকে)!
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! অনেক অনুপ্রাণিত হলাম
সুপার ফ্লুইডিটি দেখতে এই ভিডিও টায় নজর দিতে পারেন -
https://www.youtube.com/watch?v=2Z6UJbwxBZI
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ইদানিং ভ্যাকুয়ামের সুপার-ফ্লুইডিটি নিয়ে মানুষজন অনেক গবেষণা করছেন, তাঁদের আশা মহাবিশ্বের স্পেস-টাইম কন্টিন্যুইয়াম কিভাবে কাজ করে সেই কসমোলজিক্যাল মডেল আমরা পদার্থের এই দশার চেহারা থেকে ধারণা করতে পারব
বহুদিন দৌড়ের ওপর থাকতে থাকতে লগাইতে ভুলে যাই। পড়ে-টড়ে চলে যাই।
আজ লগাইলাম এই লেখাটার জন্য। প্রিয় বাহাউদ্দীন, আরো লিখুন প্লিজ!
পুনশ্চঃ সচল মডুদের কাছে আবেদন জানাই এঁকে হাচল করে নেবার জন্য!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রিয় সাক্ষী, একটু বেশি প্রশংসা করে ফেললেন অনেক অনেক ধন্যবাদ, লেখার চেষ্টা থাকবে!
ভালো লেগেছে, তাই বলেছি। যেদিন লাগবে না, সেটাও বলে দেব!
(আপনি সচলে নিবন্ধন করে ফেলুন না, প্লিজ! অপেক্ষায় রইলাম। )
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লেখাটা এক টানা পড়ে ফেললাম। এটা লেখকের কৃতিত্ব। বিজ্ঞানের ছাত্র নই কিন্তু বিজ্ঞানের প্রায় সব লেখাতেই আগ্রহ আমার। লেখককে নতুন তথ্যসমৃদ্ধ এ লেখার জন্য ধন্যবাদ। এ ধরনের লেখা বিজ্ঞান অধ্যয়নে আরো বেশি ছাত্রকে আগ্রহী করে তুলবে।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ !!
চমৎকার লেখনি
Ahsanul Kabir
সুন্দর লিখেছেন
নতুন মন্তব্য করুন