ওরিয়ানা ফাল্লাচি : আমৃত্যু সংগ্রামী এক মানবের শিরোনাম

বর্ণদূত এর ছবি
লিখেছেন বর্ণদূত [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০১/১২/২০০৮ - ২:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উপন্যাস এবং স্মৃতিকথা লিখলেও ইতালিয়ান লেখিকা ওরিয়ানা ফাল্লাচি আপসহীন রাজনৈতিক সাক্ষাতকার গ্রহণকারী হিসেবেই সবচেয়ে পরিচিত। তিনি ১৯২৯ সালের ২৯ জুন ইতালির ফোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ফ্যাসিবাদ বিরোধী একজন সক্রিয় কর্মী। দীর্ঘ পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তিনি অত্যন্ত সফল। সাংবাদিক হিসেবে ওরিয়ানা আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত রাজনৈতিক ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। তাদের মাঝে হেনরি কিসিঞ্জার, ইরানের শাহ, আয়াতুল্লাহ খোমিনি, উইলি ব্রান্ডিট, জুলফিকার আলী ভুট্টো, ওল্টার ক্রনকিট, ওমর খাদাফি, ফেডরিকো ফেলিনি, ইয়াসির আরাফাত, ইন্দিরা গান্ধী, শন কনারি প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। অবসর গ্রহণের পর তিনি ইসলাম এবং আরব প্রশ্নে সহিংসতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক বিতর্ক নিয়ে লেখালেখি করেন। ফলে অচিরেই ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওরিয়ানা ফাল্লাচি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গণতান্ত্রিক স্বশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠী 'গুইয়াসতিজিয়া ই লিবার্তা'য় যোগ দেন। তার পিতা এদোয়ার্দো ফাল্লাচি ছিলেন একজন কাঠশিল্পী ও সক্রিয় রাজনৈতিককর্মী। ইতালির ফ্যাসিস্ট বেনিটো মুসোলিনি'র বিরুদ্ধে তারা সংগ্রাম করছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন। তবে এর জন্যে এদোয়ার্দো ফাল্লাচিকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। মুসোলিনির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ওরিয়ানার পিতা এদোয়ার্দো একবার ধরা পড়েন। অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। ওরিয়ানার মা তোসকা ফাল্লাচি ছিলেন অসম্ভব সাহসী এক নারী। ওরিয়ানা ফাল্লাচির কথায় জানা যায়, তার পিতাকে যে কক্ষে নির্যাতন চালানো হচ্ছিল তার মা সেই কক্ষ খুঁজে বের করে সেখানো কোনো পরোয়া না করেই ঢুকে যান। সেই কক্ষে আরো দু'জনের সাথে তার পিতাও ছিলেন। সেখানকার দায়িত্বে থাকা মেজরের কাছে গিয়ে এদোয়ার্দোকে ছেড়ে দেয়ার কথা বল্লে, মেজর জানান, আগামীকাল সকাল ছ'টায় বন্দিদের মেরে ফেলা হবে, তাই কাল যেন তোসকা ফাল্লাচি কালো পোশাক পড়ে। তোসকা জবাবে বলেছিলেন, 'শুনুন মেজর, আপনার কথা অনুযায়ী আমি কাল আসবো, কালো পোশাকও পড়বো। তবে আপনিও জেনে রাখুন, কোনো মাতৃগর্ভে আপনার জন্ম হয়ে থাকলে তাকেও বলবেন কালো পোশাক পড়তে, আপনার সময়ও শেষ হয়ে আসছে।' অবশ্য তার পিতাকে শেষ পর্যন্ত মেরে ফেলা হয়নি। বিপ্লবী পিতা আর সাহসী মায়ের সন্তান ওরিয়ানা ফাল্লাচি ততদিনে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং নির্মমতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে ফেলেছেন। ১৯৫০ সালে 'এল মাতিনো দেল ইতালিয়া সেন্ট্রাল' পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজের মধ্য দিয়ে অল্প বয়সেই ওরিয়ানা ফাল্লাচি তাঁর সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ভিয়েতনাম, ইন্দো-পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন যুদ্ধে বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। রাজনৈতিক ম্যাগাজিন 'এল ইউরোপীয়' তে দীর্ঘদিন বিশেষ রাজনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বহু খ্যাতনামা সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনে লেখালেখি করেছেন। ১৯৬৮ সালে মেক্সিকান স্বশস্ত্র গোষ্ঠী ওরিয়ানার ওপর তিনবার বন্দুক হামলা চালায়। প্রতিবারই তিনি অল্পের জন্যে প্রাণে রক্ষা পান। ১৯৭৩ সালে সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস'র প্রেমে পড়েন তিনি। ১৯৬৭ সালের গ্রিক একনায়কের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস। ১৯৭২ সালে ওরিয়ানা ফাল্লাচিকে দেয়া সাক্ষা'কারে হেনরি কিসিঞ্জার, 'ভিয়েতনাম যুদ্ধ'কে অপ্রয়োজনীয় বলে স্বীকার করে নেন। কিসিঞ্জার পরবর্তীতে এই সাক্ষাতকার সম্পর্কে লিখেছেন, 'প্রেসের সঙ্গে জড়িত কারো সঙ্গেই ইতোপূর্বে আমি এতো ভয়ঙ্কর কোনো আলোচনা করিনি।' 'লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস' এ ওরিয়ানাকে চিত্রিত করা হয়েছে এভাবে, 'কোনো বিশ্ব ব্যক্তিত্বের পক্ষেই যে সাংবাদিককে 'না' বলা সম্ভব নয়।' নিজের সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন ছিল, 'আমি কখনোই নিজেকে শান্ত একটি রেকর্ডারের মতো বিবেচনা করি না, যে শুধু যা দেখে এবং শোনে সাফল্যের সঙ্গে তাই ধারণ করে রাখে। 'ওরিয়ানা ফাল্লাচির এই বক্তব্যের মধ্যে তার নিজস্ব দর্শনের কিছুটা ছাপ পাওয়া যায়। অর্থাত সবকিছুর পরও নিজের অভিমত বা সিদ্ধান্তকে তিনি মর্যাদা দিতে আগ্রহী। ওরিয়ানা তাঁর নেয়া সাক্ষাতকার সম্পর্কে বলেছেন, 'প্রতিটি সাক্ষা'কারই আমার নিজের আঁকা ছবি।' বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি যদি চিত্রকর হতাম এবং তখন তোমার ছবি আঁকতাম, তবে সে সময় আমি যেভাবে তোমাকে আঁকতে চাইতাম সেভাবে আঁকার অধিকার কি আমার থাকতো না?'

ওরিয়ানা ফাল্লাচির নিজের বিবৃতিতে জানা যায়, মাত্র ৯ বছর বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেছেন। অল্প বয়সেই তার মাঝে নিজস্ব অভিব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রকৃতার্থে ১৬ বছর বয়স থেকেই লেখার প্রতি মনোযোগী হন, যখন কিনা তিনি একজন রিপোর্টার হিসেবে ফোরেন্সে কাজ শুরু করেন। সাংবাদিকতা বেছে নিয়েছিলেন কারণ তিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন। জীবনের সবচে' উল্লেখযোগ্য পরিস্থিতি বা অবস্থা কী? এ বিষয়ে ওরিয়ানা জীবনের সবকিছুকে উল্লেখ করলেও কিছু কিছু বিষয়ে তার পক্ষপাত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'প্রথমত সবকিছু। প্রকৃতপক্ষে একটি উদার এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত পরিবারে আমার জন্ম। সেই পরিবেশে শৈশব কাটানো, ইতালির প্রতিরোধের বীরত্বপূর্ণ দিনগুলো, যে প্রতিরোধে আমার বাবাও ছিলেন একজন সামনের সারির নেতা। ফোরেন্সের একজন নাগরিক হয়ে ওঠাও আনন্দের। এখানকার সভ্যতা ও সংস্কৃতি সবকিছুই।' ওরিয়ানা আরো বলেন, 'যখন তুমি একজন নারী, তখন তোমাকে অনেক বেশি সংগ্রাম করতে হবে, তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি দেখতে হবে, ভাবতে হবে, সেই সঙ্গে অনেক বেশি সৃজনশীল হতে হবে। একই ভাবে যদি তুমি দরিদ্র হও, টিকে থাকাটাই অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।'

নিজের লেখালেখির প্রণোদনা সম্পর্কে জানান, 'অর্থপূর্ণ কোনো গল্প আমি শোনাতে চাই। অবশ্যই অর্থের জন্যে নয়। আমি কখনোই টাকার জন্যে লিখি না অর্থাত কোনো ফরমায়েসি বা কোনো প্রকাশকের সঙ্গে হৃদ্যতার সূত্রে আমি লিখি না।'

ওরিয়ানা ফাল্লাচির লেখার সবচে' প্রভাববিস্তারকারী বিষয় হচ্ছে, মহান আবেগ। তা মনোগত, রাজনৈতিক কিংবা জ্ঞানগর্ভ আবেগও হতে পারে। যেমন, ভিয়েতনামের ওপর লেখা তার 'নাথিং অ্যান্ড সো বি ইট' গ্রন্থ। এটি শুধুমাত্র ভিয়েতনামের ওপর লেখা কোনো গ্রন্থ নয়, এটা যুদ্ধভিত্তিক একটি গ্রন্থ। একটি অপ্রয়োজনীয়, নির্বোধ এবং নির্মম যুদ্ধই প্রতিভাত হয় 'নাথিং অ্যান্ড সো বি ইট' গ্রন্থের প্রতিটি পৃষ্ঠার পরতে। 'লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন' বইটি জন্ম না নেয়া এক শিশুকে নিয়ে লেখা। এই বইয়ের জন্যেই তিনি সর্বপ্রথম সাহিত্যের আলোচনায় উঠে আসেন। বইটি 'হাত বাড়িয়ে দাও' শিরোনামে বাংলা ভাষায় ওরিয়ানা ফাল্লাচির একমাত্র অনূদিত উপন্যাস। 'এ ম্যান' গ্রন্থটি ওরিয়ানার প্রেমিক আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস কে নিয়ে লেখা। অবশ্য কেউ কেউ ওরিয়ানা ফাল্লাচির উপন্যাস বা লেখাগুলোর মূল প্রবণতায় মৃত্যুকে অধিকমাত্রায় সনাক্ত করেন। এই তিনটি বইয়ে মৃত্যু বিষয়টি বার বারই উঠে এসেছে। ওরিয়ানা বলেন, 'আমি মৃত্যুকে ঘৃণা করি। আমার যুদ্ধ মৃত্যুর বিরুদ্ধে। সবকিছুর মধ্যে মুক্তিই একমাত্র লক্ষ্য। লেখার জন্যে আমাকে সত্যিই যদি কিছু তাড়িত করে থাকে তবে সে হচ্ছে মৃত্যুর আচ্ছন্নতা।' অমানুষিক পরিশ্রম করতে পারতেন তিনি। এ বিষয়ে তার নিজের বক্তব্য, 'খুব সকালেই আমি কাজ শুরু করি। ৮ থেকে ৮.৩০'র মধ্যে। কোনো বিরতি ছাড়া একটানা তা চলে সন্ধ্যা ৬ থেকে ৭ টা পর্যন্ত। তার মানে দাঁড়াচ্ছে কোনো বিশ্রাম এবং খাদ্যগ্রহণ ছাড়াই এ সময়টা আমি কাজ করি। আমি অনেক বেশি সিগারেট খাই। প্রতিদিন ৫০'র কাছাকাছি সিগারেট আমার প্রয়োজন হয়। রাতে খুব বাজেভাবে ঘুমাই। কাউকে দেখিনা। টেলিফোনের কোনো উত্তর দেই না, কোথাও যাই না। আমি রোববার, যে কোনো ছুটির দিন, ক্রিসমাস এবং নববর্ষ অপছন্দ করি। যদি আমি বেশি উতপাদন না করতে পারি তবে আমার পাগল পাগল অনুভূতি হয়, খুব অসুখী আর অতৃপ্তি বোধ করি। নিজেকে অপরাধী মনে হয়। যা হোক, লেখক হিসেবে আমি খুব স্লথ। নিশ্চিত ভাবেই আমি এক লেখা শেষ হয়ে যাওয়ার পর বার বার পরিমার্জন করি। তাই দিন দিন আমি অসুস্থ আর কুতসিত হয়ে যাচ্ছি,আমার ওজন কমে যাচ্ছে, শীর্ণ হয়ে পড়ছি।' সমসাময়িক সাহিত্যবোধ, রুচি সম্পর্কে ওরিয়ানা ভালোভাবেই জানতেন। এ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, 'সমৃদ্ধ, ভীষণ সমৃদ্ধ কিছু লিখতে চাই। কতটুকু বাস্তবতায় এই সমৃদ্ধি আসে, কে জানে? একমাত্র সময়ই তা নির্ধারণ করে দিতে পারে। যাচাইয়ের জন্যে একজন লেখকের সময় প্রয়োজন, নিজের মূল্যায়নের জন্যে সময় প্রয়োজন। জীবনের সফলতা বলে কিছু নেই। সাফল্য আপামর মানুষের কাছে একটি ফ্যাশন কিংবা তেমন কিছু। মৃত্যুর পরও একজন লেখক লেখকই থাকে। আর তাই মৃত্যুর বহু বহু বছর পরেও তার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। একজন লেখক তখনই লেখক যখন তার কাজ সামনে এগিয়ে যায়, সকল সীমাবদ্ধতা, ভাষার গণ্ডি ছাড়িয়ে সবার হয়ে উঠলে তবেই লেখকের স্বার্থকতা। লেখক অবশ্যই বৈশ্বিক। স্থান এবং কালের ঊর্ধ্বে হবে তার দৃষ্টি।'

'লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন' এ ওরিয়ানা ফাল্লাচি আপাত বাস্তবতার আবহে একজন নারী গর্ভের সন্তানের কথা বলার বিষয়টিকে সংলাপাত্মক এবং বর্ণনার ঢঙে টেনে নিয়ে গেছেন। বইটিতে গর্ভবতী একজন মাতা তার আসন্ন সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন। প্রকৃত অর্থে মা নিজে নিজেই কথা বলেন। কিন্তু এই সন্তান সামাজিক স্বীকৃতি পাবে না কেননা সন্তানের পিতার সঙ্গে মাতার সামাজিকভাবে স্বীকৃত কোনো সম্পর্ক নেই, তাদের বিয়ে হয়নি। অবশেষে অনাগত সন্তান অনাগতই রয়ে যায়, পৃথিবীর আলো দেখে না, মাতার গর্ভেই তার মৃত্যু হয়। ফাল্লাচি'র নিজের জীবনের তিনমাসের অন্তঃস্বত্তার অভিজ্ঞতার আলোকেই এই উপন্যাসের কাঠামো নির্মিত হয়েছে। মারিয়া অ্যালেনা রেমন্ড'র লেখা 'ফেমিনিস্ট রাইটার্স' এ 'লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন'র প্রসঙ্গে ওরিয়ানাকে গর্ভধারণ, অ্যাবরশন এবং আবেগি নির্যাতন বিষয়ে নিখুঁত নারীবাদী লেখক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

'এ ম্যান' গ্রন্থে ওরিয়ানা ফাল্লাচি গ্রিক কবি ও প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতা আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস'র সঙ্গে প্রেমের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। যদিও তিনি এই গ্রন্থকে উপন্যাস হিসেবে দাবি করেছেন তথাপি 'এ ম্যান' প্রকৃতার্থে গ্রিসের মুক্তির লক্ষ্যে আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস'র প্রতিরোধ যুদ্ধের সত্য কাহিনীই উঠে এসেছে, যে যুদ্ধ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস চালিয়ে গেছেন। ১৯৬৭ সালে আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস গ্রিক একনায়ক সাবেক কর্নেল জর্জিয়োস পাপাডোপোউলাসকে হত্যার চেষ্টা চালান। যে রাস্তা দিয়ে পাপাডোপোউলাস প্রতিদিন যাতায়াত করতেন সেই রাস্তায় বোমা হামলা চালিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই হত্যা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং প্যানাগোউলিস ধরা পড়েন। তাকে কারাবন্দি করে পরবর্তী ৫ বছর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। বিপ্লবের গতি এবং লক্ষ্য নষ্ট করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই দ্বিমাত্রিক নির্যাতন বেছে নেয়া হয়। কিন্তু এই বর্বর নির্যাতনের পরও বিপ্লবের পথ থেকে বিচ্যুত হতে অস্বীকৃতি জানান প্যানাগোউলিস। ফলে তাকে অন্ধকার ছোট্ট নির্জন কক্ষে আটক রাখা হয়। ১৯৭৩ সালে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তির আগ পর্যন্ত প্যানাগোউলিস সেই নির্জন কক্ষেই বন্দি ছিলেন। বন্দিদশা থেকে মুক্তির দু'দিন পরই ওরিয়ানা ফাল্লাচি আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস'র সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। কিন্তু এই সাক্ষাতকারের মাধ্যমেই দু'জন দু'জনের ওপর আস্থা স্থাপণ করতে সক্ষম হন, কয়েক সপ্তাহের মাঝেই তার পরস্পরের ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে যান। পরবর্তী তিন বছর ওরিয়ানা এবং প্যানাগোউলিস একত্রে স্বপ্নের মতো দিনগুলো অতিবাহিত করেন। প্যানাগোউলিস বলতেন, 'আমি শুধুমাত্র সুখী হওয়ার জন্যে কোনো নারীকে চাই না। পৃথিবীতে অসংখ্য নারী, তুমি তাদের মতো করে সুখী হতে পার। আমি একজন সহচর চাই যে হবে আমার কমরেড, বন্ধু, শুভাকাঙ্খী, ভাই। আমি যুদ্ধের মধ্যে বসবাস করা একজন মানুষ। আমি সবসময় তাই থাকবো। 'প্যানাগোউলিস'র জীবনে ওরিয়ানা সব সময় তাই হয়ে ছিলেন। তার জীবনের সকল স্বাধীনতা প্যানাগোউলিস'র কাছেই অর্পন করেছিলেন। কিন্তু পাগলাটে এই বিশাল মানুষটির সঙ্গে থাকা ভীষণ কঠিন এক বিষয় ছিল। অথচ ভবিষ্যতহীন একটি জীবন ওরিয়ানা শুধুমাত্র প্রেমের কারণেই বেছে নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক শত্রুদের হাতে প্যানাগোউলিস ১৯৭৬ সালের ১ মে নিহত হন। যদিও আপাতভাবে একটি গাড়ি দুর্ঘটনার আবরণ ছিল, কিন্তু আসলে তা ছিল গুপ্ত হত্যা। ১৯৭৯ সালে আলেক্সজান্ডার প্যানাগোউলিস কে নিয়ে 'এ ম্যান' গ্রন্থটি প্রকাশ করেন, যাকে ওরিয়ানা নিজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচনা করেন।
ওরিয়ানার ফাল্লাচি 'ইনশাল্লাহ' উপন্যাসটি লিখেছেন ১৯৮৩ সালে ইতালিয়ান বাহিনীর লেবাননে অবস্থানের প্রেক্ষিতে। লেবাননে আমেরিকা এবং ফ্রান্সের শান্তিরক্ষী বাহিনী আত্মঘাতী ট্রাকবোমা হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তু ছিল। ইতালিয়ান বাহিনী সব সময়েই এই ভয়ে ছিল যে তৃতীয় লক্ষ্য হয়তো তারাই। 'লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস' এ রিভিউ লিখতে গিয়ে লেখক ক্রিস্টোফার ডিকে এই উপন্যাসকে 'তৈরি হয়ে থাকা কাসিক ট্রাজেডি' আখ্যা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'ইনশাল্লাহ' অবশ্যই ওরিয়ানা ফাল্লাচির মেধার একটি চিহ্ন। ২০০১ সালে 'দ্য রেজ অ্যান্ড দ্য প্রাইড' এবং ২০০৪ সালে 'দ্য ফোর্স অব রিজন' নামে ওরিয়ান ফাল্লাচি'র দু'টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত বই দু'টিতে ইসলাম এবং জেহাদের সমালোচনা স্থান পেয়েছে বিস্তৃত পরিসরে। ফলে বই দু'টি ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়। অভিযোগ করা হয়েছে, বই দু'টিতে ইসলামকে হেয় করা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে? এই গ্রন্থ দু'টি লেখার নেপথ্য কারণই বা কী। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

৭০'র দশকে ওরিয়ানা ফাল্লাচির নেয়া কয়েকজন বিশ্ব নেতার সাক্ষাতকারের কিছু কিছু বিষয়ে আলোকপাত করলে এ ব্যাপারে একটি ভাবনা-চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।

গোল্ডা মেয়ার : আমার মনে হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের এই যুদ্ধ অনেক অনেক বছর ধরে চলবে, কেননা জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া আরব নেতারা অভিন্ন, কেননা মানুষের জীবনের মূল্য তাদের কাছে বেশি কিছু নয়, কেননা আরবের জনগণেরা প্রতিবাদ জানাতে অক্ষম, কেননা তারা বলতে পারছে না 'যথেষ্ঠ হয়েছে'।

ইয়াসির আরাফাত: 'না! আমরা শান্তি চাই না। আমরা যুদ্ধ চাই, চাই বিজয়। আমাদের কাছে শান্তি মানে হচ্ছে ইসরাইয়েলের ধ্বংস এর বাইরে আর কিছুই না।'

জুলফিকার আলী ভুট্টো: 'মুসলমান এবং হিন্দুরা পরস্পরের ভাই নয়। আমাদের মাঝে কখনোই সুসম্পর্ক ছিল না, কখনো হবে না।'

ওরিয়ানা ফাল্লাচি 'দ্য ফোর্স অব রিজন' গ্রন্থ প্রকাশের প্রায় বছর খানেক আগে এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। তিনি জানান, 'দ্য পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন'র মার্কসবাদী নেতা জর্জ হাবাসই এসব প্রশ্নের উত্তর ১৯৭২ সালে দিয়েছেন। জর্জ হাবাস বলেন, 'আমাদের এই বিপ্লব বিশ্ব বিপ্লবেরই একটা অংশ। এটাকে শুধু প্যালেস্টাইনের স্বাধিকার অর্জনের লড়াই বিবেচনা করা ঠিক হবে না।' মার্কসবাদী কোনো আদর্শের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ না করেই হাবাস জানান, 'প্যালেস্টানিয়ানরা আরব জাতির একটি অংশ। সমগ্র আরব জাতি অবশ্যই একদিন ইউরোপ এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে। পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হবে সেই যুদ্ধ। সেটা চলবে। আমেরিকা এবং ইউরোপ জানে না, আমরা আরবরা আমাদের লক্ষ্য পূরণের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের সুবিধাজনক সময়ের জন্যে অপেক্ষা করছি। শান্তি পশ্চিমাদের জন্যে নয়। দশকের পর দশক ধরে একটু একটু করে এগোচ্ছি। এটাই আমাদের কৌশল যার মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মা-েই ছড়িয়ে পড়বো।'

'দ্য ফোর্স অব রিজন' নির্মাণের পশ্চাতে ৭০'র দশকে আরব নেতাদের বক্তব্য কিছুটা প্রভাব রেখেছে। গোল্ডা মেয়ারের দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ফাল্লাচির প্রশ্ন এবং উত্তর খুঁজে নেয়া, 'জীবনের মূল্যহীনতার কারণ কী? কেননা ইসলামের বিধান অনুযায়ী যে ব্যক্তি আল্লাহ'র পথে হত্যা করবে কিংবা নিহত হবে তার জন্যে বেহেশতের অফুরন্ত সুখের জীবন অপেক্ষা করছে। কেন ইয়াসির আরাফাত আলোচনা কিংবা সমঝোতার ব্যাপারে সকল সম্ভাবনাকে বাতিল করে দিয়ে প্রকাশ্যে ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করেছেন? কেননা ইসলামি আদর্শ বিবেচনা করে অমুসলিম এবং অবিশ্বাসীরা সেই স্থানে শাসন চালাতে পারবে না যে স্থান একসময় মুসলিমরা শাসন করতো। কেন জুলফিকার আলী ভুট্টো হিন্দু-মুসলিমদের একত্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অসম্ভব আখ্যা দিয়েছেন? তার সেই কথার উত্তর ইসরাইল এবং আরবদের সম্পর্কে দেয়া ইয়াসির আরাফাতের বিবৃতির মাঝেই লুকিয়ে আছে। কেননা জিহাদের আদর্শে মুসলিম এবং অমুসলিমদের একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে সমঅধিকার নিয়ে বসবাসের কোনো স্থান নেই।'

ওরিয়ানা ফাল্লাচি বলেন, 'আজকের বিশ্বে জেহাদিদের বিরুদ্ধে আমেরিকার অবস্থানকে সমর্থন করা হয়তো এক ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বরের মতো ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক হামলার পরও কি তা অপরিবর্তিতই থাকবে?' তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'এ কোন ধরনের গণতন্ত্র যে গণতন্ত্রে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ নেই, পরিবর্তে শাস্তি নির্ধারিত হয়, অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়? এ কোন ধরনের গণতন্ত্র যে গণতন্ত্রে শিশুদের কণ্ঠ শোনার বদলে নিরব করে দেয়া হয়, নির্যাতন এবং পীড়ন করার জন্যে শত্রুর হাতে তুলে দেয়া হয়? এ কোন ধরনের গণতন্ত্র যে গণতন্ত্রে মোল্লাতন্ত্রকে সমর্থন করা হয়, মুক্তমনের ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়, খুঁটিতে বেঁধে অগ্নিদগ্ধ করা হয়? এ কোন ধরনের গণতন্ত্র যে গণতন্ত্রে সংখ্যালঘু গণণা করা হয়, এটা কি অন্যায় নয়, ভয় দেখানোর কৌশল নয়?!? আমার কাছে এসবই অগণতান্ত্রিকতা, প্রতারণা, মিথ্যা। এ কোন ধরনের স্বাধীনতা যে স্বাধীনতা আমাদের চিন্তা প্রতিরোধ করে, বাধা দেয়, আমাদের কণ্ঠরোধ করে, যে স্বাধীনতা বিরুদ্ধ মতামত দলিত করে, প্রতিবাদ সহ্য করে না? এ কোন ধরনের স্বাধীনতা যে স্বাধীনতা আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা, কামানের গোলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার দেয় না? এ কোন ধরনের স্বাধীনতা যে স্বাধীনতায় নাগরিক সর্বদা অপরাধী হিসেবে গণ্য হবার ভয়ে উদ্বিগ্ন থাকে? এ কোন ধরনের স্বাধীনতা যে স্বাধীনতায় মুক্তচিন্তা প্রকাশে সব সময় কর্তিত হওয়ার অনুভূতি থাকে, নির্ধারণ করে দেয় আমি কাকে ভালোবাসব এবং কাকে নিশ্চিতরূপে দেব ঘৃণার পাত্র, আর তাই যদি আমি আমেরিকাকে ঘৃণা করি তবে আমার জন্যে বেহেশতের দরোজা খোলা, যদি মুসলিমদের ঘৃণা করি তরে নিশ্চিত দোজখ আমার ভবিতব্য? এটা স্বাধীনতা নয় উপহাস, মনে করি ঠাট্টা।'
লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে ইতিবাচক সমালোচনার পাশাপাশি বিরূপ সমালোচনাও জুটেছে ওরিয়ানা ফাল্লাচির কপালে। অতিমাত্রায় বর্ণনা এবং সুবিস্তৃত প্লট ধরে লেখার কারণে পাঠক সব সময় ওরিয়ানার ভুল ত্রুটিগুলো এড়িয়ে যান এমন অভিযোগও তাঁর লেখার বিরুদ্ধে রয়েছে। তবে জটিল কিংবা বিরূপ সমালোচনা ওরিয়ানাকে মোটেও ভারাক্রান্ত করতো না। অন্তত নিজের জবানিতে দেয়া বক্তব্যে এই বিশ্বাসই জাগে। ওরিয়ানা ফাল্লাচি বলেন, 'আমি সমালোচকদের মোটেও সম্মান করি না। তারা প্রায় প্রত্যেকেই একজন ব্যর্থ লেখক, সচরাচর লেখকদের প্রতি তারা এক ধরনের ঈর্ষা বোধ করেন, আমি জানি তারা একটি বিরক্তিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত কেননা এটা খুব অনৈতিক এবং নির্বোধের কাজ যে, একটি ছোট্ট রচনার মধ্যে একটি গ্রন্থের বিচার-বিশ্লেষণ তুলে ধরা। হয়তো যে গ্রন্থের সমালোচনা করা হচ্ছে সেটি কয়েকবছর পরিশ্রম করে নির্মাণ করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি প্রকৃত সমালোচনাকারী হচ্ছেন পাঠক। আমি আমার পাঠকদের চিঠি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি। সারা বিশ্ব থেকেই আমি আমার পাঠকদের চিঠি পাই এবং তারা সবসময়ই তথাকথিক সমালোচকদের থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলে থাকেন। এ প্রসঙ্গে ওরিয়ানা ফাল্লাচি কয়েকটি উদাহরণ টানেন। তিনি বলেন, একটি চিঠি এসেছিল ফোরেন্সের ৪০ বছর বয়স্ক এক দরিদ্র শ্রমিকের কাছ থেকে। তিনি লিখেছেন, 'আমি আপনার লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন বইটি তিনবার পড়েছি। কেন জানেন? কেননা এই বইয়ে আমি তাই পেয়েছি জীবন সম্পর্কে আমি যা ভাবি।' অন্য একটি চিঠি এসেছে সাংহাইয়ের এক ছাত্রের কাছ থেকে। সে লিখেছে, 'শব্দের মুক্তির মানে আমি আপনার কাছ থেকে শিখেছি।'

নিজের লেখা গ্রন্থ সম্পর্কে ওরিয়ানা ফাল্লাচির বিবেচনা, 'মানুষকে উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে, উন্নত চিন্তার সহায়ক হতে, একটু বেশি জানায় আগ্রহী করে তুলতে আমি কিছু গল্প আর ভাবনা দিয়েছি মাত্র। আর কী? আমার প্রকাশের একমাত্র পথ লেখা আর তারপর আমার প্রয়োজন। লেখকদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্য, 'ছাপানোর জন্যে ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। পরিমার্জন, পরিমার্জন এবং পরিমার্জন করা উচিত যে কোনো লেখা।' ব্যক্তি ও লেখক সম্পর্কে ওরিয়ানা ফাল্লাচির দীপ্ত উচ্চারণ, 'আমি দেখেছি লেখক হিসেবে বড় অনেককেই ব্যক্তি হিসেবে শ্রদ্ধা করা যায় না, তাদের শুভাকাঙ্খী হওয়া সম্ভব হয় না। আমি ব্যক্তিস্বত্ত্বা এবং লেখক স্বত্ত্বাকে আলাদা ভাবে বিচার করতে অক্ষম।'

সাংবাদিকতায় ওরিয়ানা ফাল্লাচি দুইবার সম্মানজনক 'সেন্ট ভিনসেন্ট' পুরস্কার অর্জন করেন। এ ছাড়াও সাংবাদিকতায় এবং লেখালেখির কারণে তিনি বহু পুরস্কার অর্জন করেন। শিকাগোর কলাম্বিয়া কলেজ তাঁকে 'ডি লিট' সম্মানে ভূষিত করেছে। ওরিয়ানা ফাল্লাচি ইউনির্ভার্সিটি অব শিকাগো, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, হার্ভাড ইউনিভার্সিটি এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে লেকচার দিয়েছেন। ওরিয়ানা ফাল্লাচি’র লেখা বিশ্বের প্রায় ২১টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে, এ ম্যান (১৯৭৯), দ্য সেভেন সিনস অব হলিউড (১৯৫৮), দ্য ইউজলেস সেক্স: ভয়েজ অ্যারাউন্ড দ্য ওম্যান, (১৯৬১), পেনেলোপ এট ওয়ার (১৯৬২), লাইমলাইটার্স (১৯৬৩), দ্য ইগোটিস্ট: সিক্সটিন সারপ্রাইজিং ইন্টারভিউস (১৯৬৩), কুয়েল জিওরনো সুলা লুনা (১৯৭০), ইনশাল্লাহ, ইফ দ্য সান ডাইস, ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরি (১৯৭৬), লেটার টু অ্যা চাইল্ড নেভার বর্ন, নাথিং অ্যান্ড সো বি ইট, ওরিয়ানা ফাল্লাসি ইন্টারভিসতা ওরিয়ানা ফাল্লাচি (২০০৪), দ্য রেজ অ্যান্ড দ্য প্রাইড (২০০১) এবং দ্য ফোর্স অব রিজন (২০০৪) উল্লেখযোগ্য।

সাংবাদিকতা এবং লেখালেখির জন্যে ফাল্লাচিকে আদালত এবং ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠীদের রোষানলেও পড়তে হয়েছে। 'দ্য রেজ অ্যান্ড দ্য প্রাইড' গ্রন্থের জন্যে ২০০২ সালের নভেম্বরে সুইস ক্রিমিনাল কোডের ২৬১ নম্বর আর্টিকেল লঙ্ঘণ করার অভিযোগ এনে ওরিয়ানা ফাল্লাচি বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন এক সুইস বিচারক। সেই সঙ্গে ইতালির সরকারের কাছে ফাল্লাচিকে গ্রেফতারের অনুরোধ জানায়। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে ইতালি সরকার বদ্ধ পরিকর। এই জন্যে সুইস আদালতের অনুরোধ রাখা ইতালির সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ২০০৫ সালের মে মাসে ইউনিয়ন অব ইতালিয়ান মুসলিমস'র প্রেসিডেন্ট আদেল স্মিথ ফাল্লাচির 'দ্য ফোর্স অব রিজন' এ ইসলামকে হেয় করে কিছু কিছু বিষয় উপস্থাপণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে বারগ্যামো'র আদালতে মামলা করেন। এর ফলে গত জুন মাসে মামলার তারিখ নির্ধারণ করে তাঁকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু ফাল্লাসি আদালতে হাজির হতে অস্বীকৃতি জানান। এ প্রসঙ্গে ফাল্লাচি বলেন, 'আমি এখনো জানি না আগামী বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবো কি না। ক্যান্সার খুব বাজে পরিস্থিতি ধারণ করেছে। আমার মনে হচ্ছে জীবন পথের শেষ সীমায় আমি চলে এসেছি। আমি জীবন ভালোবাসি বলেই কেবল বেঁচে থাকতে চাই তা নয়। আমি এই বিচারের ফলাফলও দেখতে চাই। মনে হয় আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে।' ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার সর্বশেষ সুযোগ দেয়া হয় ফাল্লাচিকে। কিন্তু তার আর প্রয়োজন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ব্রেস্ট ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। জীবনের শেষ বছরটি তিনি কাটিয়েছেন নিউইয়র্কে। সেখানে তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিকিতসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি আর টিকে থাকেননি। ২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর , ৭৭ বছর বয়সে নিজ শহর ইতালির ফোরেন্সে চিরঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছেন আমৃত্যু সংগ্রামী ওরিয়ানা ফাল্লাচি ।

শারিরীক বাস্তবতায় তিনি আর নাই। কিন্তু সাহসের মূর্ত প্রতীক হিসাবে ওরিয়ানা ফাল্লাচি নিশ্চিতই টিকে থাকবেন আমাদের চিন্তায় আর মননে।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

প্রিয় বর্ণদূত,

প্রত্যেক প্যারার পর একবার অন্তত "এন্টার" এ চাপ দিয়ে একটা সেকশন ব্রেক করে নেবেন। তা না হলে ব্রাউজার আপনার লেখাটা দেখাতে পারবে না। শিরোনামের পর ফাঁকা একটা স্পেস দেখাবে কেবল।

এই অনুরোধ আপনাকে আগেও একাধিকবার করেছি বলে দেখতে পাচ্ছি। বিস্মিত হচ্ছি তারপরও আপনি এই সামান্য কাজটি করছেন না দেখে। ফলে আপনার লেখায় মডারেটরদের হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে সেকশন ব্রেক গুঁজে দেবার জন্যে।

ভবিষ্যতেও এ ধরনের ব্রেকশূন্য লেখা এলে তা ত্রুটিপূর্ণ বিবেচিত হবে, এবং অপ্রকাশিত থেকে যাবে। আপনার সহযোগিতার জন্যে অগ্রিম ধন্যবাদ জানবেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

বর্ণদূত এর ছবি

আমি দুঃখিত। আসলে লেখার সময় বিষয়টি মাথায় থাকে না।
এরপর থেকে সচেতন থাকার চেষ্টা করবো। লেখা প্রকাশ না করার যে হুমকি দিলেন, সচেতন না হয়ে উপায় আছে!
ভালো থাকুন। কষ্ট স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

ধন্যবাদ। দুঃখ এখানেই, যখন মৃদু ও বিনীত অনুরোধের কোন উত্তর বা প্রতিক্রিয়া আসে না, কর্কশ মেসেজে মানুষ নড়েচড়ে বসেন। অতিথিদের হুমকি দেয়া আমাদের স্বভাব বা উদ্দেশ্য নয়, কিন্তু মিহি গলার মিষ্টি গান কানে না পৌঁছুলে বিকল্পটি বেছে নিতে হয় হাসি


হাঁটুপানির জলদস্যু

রাগিব এর ছবি

কিন্তু ইনিই না সেই লেখিকা, যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধাপরাধী ও খুনি বলে গল্প ফেঁদেছিলেন? এখানে এই লেখিকার একটি রচনার বঙ্গানুবাদে যা পড়লাম, তাতে করে তার প্রতি সম্মান আসে না, বরং তার লেখা নিয়েই প্রশ্ন উঠে। এই লেখার শুরুটা এভাবে


রবিবার সন্ধ্যা : আমি কলকাতা হয়ে ঢাকার পথে যাত্রা করেছি। সত্যি বলতে কি, ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী তাদের বেয়নেট দিয়ে যে যজ্ঞ চালিয়েছে তা প্রত্যক্ষ করার পর পৃথিবীতে আমার অন্তিম ইচ্ছা এটাই ছিল যে, এই ঘৃণ্য নগরীতে আমি আর পা ফেলবো না। এ রকম সিদ্ধান্ত আমি নিয়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার সম্পাদকের ইচ্ছা যে, আমি মুজিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি।

মুক্তিযুদ্ধে সদ্য স্বাধীন বাংলাতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু চোখে পড়েনা, অথচ রাজাকারদের জন্য দরদে বাঁচেন না, আর সেজন্য সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে "ঘৃণ্য" বলে অবলীলায় অভিহিত করে ফেলেন, এমন মানুষের জন্য আমার ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

আলবাব এর ছবি

ফালাচিরে ভাল লাগেনা। বাংলাদেশ নিয়া তার চুলকানি ছিল। আর সে হইলো সেই টাইপ মানুষ যারা এমনেই সব কিছু নিয়া চুলকানি দেয়। চুলকাইতে হবে বলে চুলকায়। ভাবটা হইলো, উল্টা বলুম, সবাই যা বলে তার উল্টা, কিছু কইলে কও আমার কিছু নাই... এইরম।

স্বাধীনতার পরে ইনি বাংলাদেশে আসছিলেন। এবং উল্টা পাল্টা আচরণ করছিলেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এটা কি অনুবাদ? তাই মনে হলো... যদি হয়ে থাকে তাহলে মূল লেখার কথাটা উল্লেখ করলে ভালো হতো।

আমার জানামতে ফাল্লাচির দুটো বই বাংলায় পাওয়া যায়... আমি দুটো পড়েছি... বাকিগুলোর অনুবাদ হয়েছে কি না আমার জানা নেই। ১. ইনটারভিউ উইথ হিস্ট্রি, ২. হাত বাড়িয়ে দাও (মূল নাম মনে নেই, অনুবাদ আনু মোহাম্মদ)

ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রির একটা বিতর্কিত অংশ শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাত্কার... অথচ এই লেখায় তার কোনো উল্লেখই দেখলাম না। এমনকি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যেও পেলাম না সে নাম।

ফাল্লাচি যখন বলেন- 'প্রতিটি সাক্ষা'কারই আমার নিজের আঁকা ছবি।' তখনই তার সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। সাক্ষাত্কার কোনো পেইন্টিং না... বানানো কথা না... এটা তিনি জানতেন না!

আপনার এই লেখায় ফাল্লাচিকে মহিমান্বিত হতে দেখে ভালো লাগলো না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

একজন [অতিথি] এর ছবি

The rage and The pride এর বাংলা অনুবাদ আছে -'আমার ক্ষোভ আমার অহংকার' নামে। সন্দেশ থেকে প্রকাশিত, ২০০৮ বইমেলায় প্রকাশ। সম্ভবত অবনি আচার্যের অনুবাদ। সঠিক মনে করতে পারছি না।

অবনি অনার্য [অতিথি] এর ছবি

প্রিয় নীড়পাতা
ওরিয়ানা ফাল্লাচির কথা বলতে গিয়ে আমার অনুবাদের প্রসঙ্গ এসেছে। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

দুর্ভাগ্যক্রমে আমার নামটি ভুল এসেছে। মজার বিষয় হচ্ছে এই ভুলটি অনেকেই অনেকবার করেছেন। আমি 'আচার্য ' নই, 'অনার্য '। পুরো নাম অবনি অনার্য
আমার অনূদিত "আমার ক্ষোভ আমার অহংকার (মূল: ওরিয়ানা ফাল্লাচি)" বইটির প্রকাশক সন্দেশ। প্রকাশিত হয়েছে এবারের (২০০৮) একুশে বইমেলায়।
ধ:ন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

অবনি অনার্য
http://www.auboni-aunarjo.com/

সৌরভ এর ছবি

ফালাচিরে মহিমান্বিত হইতে দেইখা বড় আমোদ পাইতেসি। পশ্চিমরে ক্যামনে তেল দিতে হয়, খুব ভালো কইরা তার সব উপায় জানতো এই খালাম্মা। বেচাল কথাবার্তা কইয়া ফোকাসে থাকনের উপায়ও রপ্ত ছিলো তার।

The Rage and the Pride এর লিংক দিয়া গেলাম।
ওনার কল্যাণেই জগতের মানুষ জানছে, বাংলাদেশে রাজাকাররাই আসলে ম্যাসাকারের শিকার হইসে। ওনার বন্ধু মানুষ ছিলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো।
সবাই পড়েন, সুবহানাল্লাহ।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আলমগীর এর ছবি

সুবহানাল্লাহ বললাম সৌরভের কথামতো।

বর্ণদূত আপনি উইকি এন্ট্রিটা দেখেছেন? আমি পড়ে মিলাতে পারছি না।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ওরিয়ানা ফালাচি কি রাজাকার বান্ধব হিসেবে মহিমান্বিত?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ফালাচি হইছে জামাতের জন্য সবচেয়ে বড় প্যারাডক্স চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

পলাশ দত্ত এর ছবি

ফালাচির হাত বাড়িয়ে দাও বইটা ভালো।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

হিমু এর ছবি

ওরিয়ানা ফাল্লাচির মুখে ছ্যাড়ছ্যাড় করে মুতে দেই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

পলাশ দত্ত এর ছবি

কঠিনচলুক আসলে আপনি সবসময়ই সুপার, হিমু। এই বাক্যটাই অন্য কেউ লিখলে লিখতো, ওরিয়ানা ফালাচির মুখে মুতে দেই। আপনি এতে ছ্যাড়ছ্যাড় যোগ করে বাক্যটাকে অন্য মাত্রা দিছেন। কংগ্র্যাটস।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

হিমু এর ছবি

না, বাক্যটি আমার নয়। অন্যপাড়ার কষ্টে থাকা এক ডাক্তার সাহেবের। থামস আপটি তাঁর প্রাপ্য।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

@ হিমু

আমি আপনার সাথে জামাত করে প্রক্রিয়াটিতে অংশ নিতে চাই।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমৃত্যু সংগ্রামী ওরিয়ানা ফাল্লাচি

ফালাচি'র 'সংগ্রাম'টা ঠিক কিসের বিরুদ্ধে বা পক্ষে ছিলো?! অনেকেই এর মধ্যে এই মহিলার বাংলাদেশ, মুক্তিযোদ্ধা, ইসলাম এসব বিষয়ে মতবাদ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তাই আর পুনরাবৃত্তিতে গেলাম না - কিন্তু জানার ইচ্ছা থাকলো, 'সংগ্রামী' বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছিলো কি কারণে!

ওরিয়ানা ফাল্লাচির লেখার সবচে' প্রভাববিস্তারকারী বিষয় হচ্ছে, মহান আবেগ। তা মনোগত, রাজনৈতিক কিংবা জ্ঞানগর্ভ আবেগও হতে পারে।

সে তো 'ইয়েলো জার্নালিজমে'ও থাকে আবার আজকে আমি এসে জামাতীদের পক্ষে লিখলে তাতে'ও থাকতে পারে! 'মহান' আবেগ থাকাটা কি খুব বড় কিছু, নাকি কি কারণে আবেগের মহত্ত্ব প্রকাশিত হচ্ছে সেটাই আসল?

ওরিয়ানাকে গর্ভধারণ, অ্যাবরশন এবং আবেগি নির্যাতন বিষয়ে নিখুঁত নারীবাদী লেখক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

করতে পারেন, কিন্তু যে মহিলা আর্টিফিসিয়াল ইন্সেমিনেশনের বিরুদ্ধে কথা বলে তাকে ঠিক কি হিসাবে নারীবাদী বলা যায় আমি বুঝতে পারি না!

পলাশ দত্ত এর ছবি

একটা কথা বোধহয় বলা দরকার: ফালাচির হাত বাড়িয়ে দাওটা আমি পছন্দ করি। ব্যক্তিকে নয়।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটি পড়ে 'ওরিয়ানা ফাল্লাচি' সম্পর্কে কিছুটা জানতে পারলাম। তবে লেখক মহোদয়, ফাল্লাচি'র বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতাগুলো (লেখাগুলো ) উল্লেখ করলে আমাদের মতো কাঁচা পাঠকদের জন্য ভাল হতো বলে আমার মনে হয়। পাশাপাশি ফাল্লাচি'র দোষ গুলোও( যদি থেকে থাকে ) একটু ষ্পর্শ করে যেতেন তা হলে পাঠকদের কাছে ব্যাক্তি ওরিয়ানা ফাল্লচি'কে আরও ভালভাবে চেনা যেত।
তারপরও লেখককে ধন্যবাদ, লেখাটি আমাদরে মতো নতুন পাঠকদের জন্য প্রয়োজন ছিল।

হামোম প্রমোদ

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটি পড়ে ওরিয়ানা ফাল্লাচি ' সম্পর্কে কিছুটা জানতে পারলাম। তবে লেখক মহোদয়, ফাল্লাচি'র বাংলাদেশ সম্পর্কে লেখাগুলো কিংবা অভিজ্ঞতাগুলো উল্লেখ করলে আমাদের মতো কাঁচা পাঠকদের জন্য আর্ও ভাল হতো। পাশাপাশি ফাল্লাচি'র দোষগুলোও (যদি থেকে থাকে) কিছু স্পর্শ করে গেলে ব্যাক্তি ওরিয়ানা ফাল্লচি'কে আরও পূর্নভাবে জানা যেত।
তারপরও ধন্যবাদ লেখককে, বিষয়টি ব্লগে প্রকাশ করার জন্য।
চেষ্টা করবো ওরিয়ানা ফাল্লাচি' সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার।
হামোম প্রমোদ

বর্ণদূত এর ছবি

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

suhan এর ছবি

ফালাচির দ্যা ম্যান কিংবা আমার ক্ষোভ অহংকার বই দুটোর অনুবাদ দরকার. দ্যা ম্যান এর ইংরেজী ভার্শনের পি ডি এফ হলেও চলবে।
কেউ সাহায্য করলে খুশী হব।

সাক্ষী সত্যানন্দ  এর ছবি

ফালাচির "ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি" আমি পড়িয়াছি, তাই তাহার মহিমা জানিতে চাই না আর...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি আমি পড়িয়াছি... তাই, ফালাচির লেখা পড়িতে চাই না আর... ...
(সস্তা বিনোদনের প্রয়োজন ছাড়া)

নজমুল আলবাব এর ছবি

লেখাটা সামনে যখন আবার আসলই তখন ফালাচিরে আবার একটা গাইল দেই, "খবিশনি"

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

এই জন্যেই মনের মুকুরে আমার ভাল লাগে।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।