প্রতিভা নিয়ে মিডিওকার আলাপ-সালাপ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: সোম, ০১/০৩/২০১০ - ১০:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
ছোটোবেলায় আমপারা মুখস্ত করার স্মৃতি মনে পড়ে। সমবয়সী বন্ধুরা যেখানে হুজুরের কাছে গড়গড় করে মুখস্ত করে সুরে সুরে কোরআন পড়া দিচ্ছে, সেখানে আমি কেবলই সুঁতাকাটা ঘুড়ির মতো খাবি খাচ্ছি। কোরআনের মতো এমন ছন্দোবদ্ধ একটা বই কেন অন্যদের মতো মুখস্ত করতে পারছি না, এতে নিজের ওপরই বিরক্তি ধরে যেত। এই বন্ধুরাই আবার স্কুলে আমার চেয়ে দুই-তিন ক্লাস নিচে পড়তো এবং স্কুলের পারফর্ম্যান্সে আমি বলা যায় তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলাম। অবশ্য স্কুলেও ঝামেলার বিষয় যে ছিলো না, এমন না। সমাজ বিজ্ঞান ছিলো ডেঙ্গুর মতো আতঙ্কের। কোন নবাব কতো সালে নবাবী করে গেছেন আর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কি কি ধারার ওপর বেইজ করে চলে, তা মুখস্ত করতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখতাম। পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো টুকলিফাইংয়ের ঘটনাও ঘটায় এই সমাজবিজ্ঞান!

খেলাধুলায় আবার আমি ভালোও না, খারাপও না। আমার ক্লাসের সেকেন্ড বয় আনিস যেমন ফুটবলে দুর্দান্ত, তেমনি পাস করতে হিমশিম খাওয়া আবু বকরও হিট প্লেয়ার। অন্যদিকে প্লেয়িং ইলেভেনে চান্স পেলেই আমার চলে। সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে সাবলীলতার চেয়ে সীমাবদ্ধতার অভিজ্ঞতাই আমার কপাল। অনায়াসে ছন্দ মিলিয়ে ছড়া লিখতে পারলেও এমনকি সমবেত সঙ্গীতেও হাঁটু কাঁপে। তিন লাইনের প্রেমপত্রে তেত্রিশটা ভুল বানান লেখা তানিয়া আবার কেমনে নিখুঁত উচ্চারণে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়!

আমি নিজে ভাগ্যবান যে, আমার এই দুর্বলতাগুলো অনেক ছোটো বয়সেই সনাক্ত করতে পারি এবং পাশাপাশি শাক্তিশালী দিকগুলো সম্পর্কেও ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠি। কি পারি আর কি পারি না, এটা জানা থাকলে আত্মবিশ্বাসে টান পড়ে না, যাকে বলে 'প্রতিভা'র বিকাশে 'কাজ' করে যাওয়া যায়।

২.
একটা দেশের জন্য আসলে কি দরকার? খুব সরল ভাষায় বললে তার নাগরিকদের প্রতিভাকে বিকশিত করার সুযোগ দেয়া। এই প্রতিভার সংজ্ঞায় গিয়েই বাঁধে যতো গন্ডগোল। এবং এই গন্ডগোলের সুযোগে আমরা যতো সহজে অন্যকে প্রতিভাহীন বা মিডিওকার বলে আখ্যা দিয়ে তার গুষ্ঠিউদ্ধার শুরু করি, সেটা প্রবণতা হিসেবে খুবই অস্বাস্থ্যকর। মানুষের জীবন ধারণের জন্য, একটা সমাজ বা রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য, সর্বোপরি মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবিষ্কৃত এবং অনাবিষ্কৃত 'ক্ষেত্র' সংখ্যা আসলে অসীম। মানব সভ্যতার জন্য একজন নিউটনের যেমন দরকার আছে, তেমনি রাজপথের ঝাড়ুদার রমিজ মিয়ারও দরকার। এখানে কার অবদান বেশি, কার অবদান কম, সেই ঝগড়া মূলত 'শরীরের মাথা বেশি কাজ করে, নাকি হাত; নাকি পেট শুধু খায় ...' সেই গল্পের মতোই অপ্রয়োজনীয়। সময়ের সাথে সাথে মানুষের প্রয়োজন পালটায়, কাজের প্রায়োরিটি পালটায়, এক এক কনটেক্সে এক এক কাজ সেই সময়ের জন্য বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।

এখানে 'কাজ' করাটাই মূল কথা এবং 'প্রতিভা' মূলত এই কাজটা সফলভাবে করতে পারার ক্ষমতা। মানব সভ্যতা সবচেয়ে বেশি লাভবান হতো, যদি প্রত্যেকটা মানুষই তার সর্বোচ্চ 'প্রতিভা' অনুসারে কাজ করতে পারতো। কিন্তু এটাও অতিসরলীকরণ। কারণ, সভ্যতার প্রয়োজন অনুযায়ী এক এক কাজের প্রায়োরিটি এক এক সময়ে এক এক রকম। এজন্যই বাস্তবে 'প্রতিভা'র সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হয় না; বরং কাজের গুরুত্বও মানুষের কর্মক্ষেত্র বাছাইয়ের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়।

এভাবে কর্মক্ষেত্র বাছাইয়ের পরে আসে সেই ক্ষেত্রে 'কাজ' করা। মূলত এ পয়েন্টে এসেই 'প্রতিভা'র সংজ্ঞাটা আরেকটু ঝালাই করে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। একজন মানুষের সহজাত পারদর্শিতার বিষয়টি তার তাত্ত্বিক প্রতিভা নির্দেশক হলেও কাজের মাধ্যমে ইমপ্লিমেন্ট করতে না পারলে সেটা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিভার ব্যবহারিক দিকটি এজন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাত্ত্বিক-প্রতিভাবান একজন মানুষ তার শক্তিশালী ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পেলে সেই কাজের আউটপুট ভালো আসা স্বাভাবিক; কিন্তু তাত্ত্বিক-প্রতিভা ইটসেলফ একজন মানুষকে সাফল্যের নিশ্চয়তা দেয় না। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন অপেক্ষাকৃত কম তাত্ত্বিক-প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ বেশি সফল হতে পারে। এই সমীকরণ আসলে আমাদের খুবই জানা; কিন্তু জানা জিনিসও বারবার চোখে আঙুল দিয়ে না দেখালে অজানার খাতায় নাম লেখায়। হাসি

৩.
আচ্ছা, প্রতিভার লেভেলটা মাপা হবে কিভাবে? কাকে জিনিয়াস বলবো, কাকে মিডিওকার, কাকে প্যাথেটিক? কার সাফল্যে বাহবা দেবো, আর কার সাফল্যেই বা নাক সিঁটকাবো? আমার নিজের কাছে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো প্রয়োজন অনুযায়ী 'কাজ'। মনে মনে মহা জিনিয়াস একজন যদি প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ না করতে পারে, তাইলে তার তেমন কোনো বেইল নাই। অন্যদিকে একজন তথাকথিত 'মিডিওকার' (তাত্ত্বিক-প্রতিভার সংজ্ঞানুসারে) যদি আমার প্রয়োজনটা মেটাতে পারে, তাকে বাহবা না দেয়ার কোনো কারণই নেই। যেহেতু প্রতিভার কোনো স্ট্যাটিক লেভেল নেই; বরং আপেক্ষিকতাই এর বিচারকাঠি, সেহেতু ওপরের উদাহরণের দ্বিতীয় জনই আমার কাছে সুপার জিনিয়াস! শিল্পী মমতাজের 'বুকটা ফাইট্টা যায়' গান শুনে যদি একজনের সঙ্গীতের কাছ থেকে 'প্রয়োজন'টা মেটে, তাইলে তা-ই সই, মমতাজ এখানে শিল্পী হিসেবে জিনিয়াস।

এই হিসাবকে খুব সহজেই ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে নিয়ে যাওয়া যায়। সে-ই বেশি জনপ্রিয় হবে, যে বেশি মানুষের প্রয়োজনকে ভালোভাবে মেটাতে পারবে। যেমন, গানের সুর-তাল-লয় এখানে মূখ্য না, ইনফ্যাক্ট সুর নিজেই মানুষের 'প্রয়োজন' এর দাস।

৪.
প্রতিভার সংজ্ঞা থেকে আবার সেই দেশের উন্নতির প্রশ্ন, মানব সভ্যতার অগ্রগতির প্রশ্নে ফিরে যাই। একটা দেশের কথাই ধরি। মনে করি, প্রত্যেকটা পেশাই এক একটা 'প্রয়োজন'। প্রত্যেকটা প্রয়োজন আবার তার উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব (সময় ও কনটেক্স-নির্ভর) দ্বারা কমবেশি সংজ্ঞায়িত। সেই প্রয়োজনটা কে কতো ভালোভাবে মেটাতে পারছে, সে অনুযায়ী সেই পেশার মানুষদেরকে সুপার জিনিয়াস, জিনিয়াস, মিডিওকার, বিলো অ্যাভারেজ, প্যাথেটিক - এই অনুযায়ী ভাগ করা যায়। প্যাথেটিকদের ক্ষেত্রে হয় তারা 'কাজ' করে না, নাহয় কাজের 'ক্ষেত্র' বাছাইয়ে পুরোপুরি ভুল হয়েছে বলে ধরা যায়। এক্ষেত্রে তারা কাজ করতে পারে, বিকল্প ক্ষেত্রও বাছাই করতে পারে। কিন্তু পুরোপুরি তাত্ত্বিক-প্রতিভাহীন মানুষ নিশ্চিতভাবেই হাতেগোনা। অন্যদের ক্ষেত্রে একটা কথাই খাটে, তাহলো কাজের মাধ্যমে প্রত্যেকের প্রতিভার বিকাশ আরো উন্নত করা বা অন্য কথায় পেশার প্রয়োজনটা ভালোভাবে মেটানোর চেষ্টা করা।

কোনো দেশ বা রাষ্ট্র মূলত সেই চেষ্টাই করে (করা উচিত আর কি!), যাতে এর নাগরিকেরা তাত্ত্বিক-প্রতিভার সাথে রাষ্ট্রের প্রয়োজনের সমন্বয় সাধন করে কর্মক্ষেত্র বাছাই করতে পারে। যেহেতু প্রতিভার (ব্যবহারিক) লেভেলটা আপেক্ষিক, সেহেতু পরিসংখ্যানের স্বাভাবিক নিয়মে মিডিওকাররাই সংখ্যাগুরু। এরাই প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহটা চালু রাখার মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে। জিনিয়াসেরা কাজ করে মূলত প্রয়োজনের সংজ্ঞাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

৫.
প্রকৃত প্রতিভাবানেরা কাজ করে, সাফল্যকে ফর-গ্র্যান্টেড হিসেবে ধরে নেয় না।

(ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দগুলোর মানানসই বাংলা আর বানানের ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আগাম ধন্যবাদ)


মন্তব্য

স্বাধীন এর ছবি

যেহেতু প্রতিভার (ব্যবহারিক) লেভেলটা আপেক্ষিক, সেহেতু পরিসংখ্যানের স্বাভাবিক নিয়মে মিডিওকাররাই সংখ্যাগুরু। এরাই প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহটা চালু রাখার মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে। জিনিয়াসেরা কাজ করে মূলত প্রয়োজনের সংজ্ঞাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

এটাই সার সংক্ষেপ চলুক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ঠিক। নাভিদের পোস্ট এই জিনিসটা ক্লিয়ার না করাই অধিকাংশের রিঅ্যাকশনের মূল কারণ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই কথাটুকুর সাথে একমত আমিও। "অধিকাংশ" আপত্তির মূল কারণ এটা হতেই পারে, তবে প্রথম দিকের মন্তব্যগুলো খুব বাজে ছিলো। অনেক মন্তব্যই চিপ-শটে ভরা ছিলো। প্রাথমিক মন্তব্যগুলোই পোস্টের টোনটা সেট করে দিয়েছিলো।

আমি খুব হতাশ হয়ে কয়েকটা বিষয় লক্ষ করলাম।
১) সচলদের অতিথিপরায়নতা কমতে কমতে শূন্যের কোঠায়।
২) অধিকাংশই ভাসা-ভাসা ভাবে লেখাগুলো পড়েন। একটা লাইন কিংবা তিনটা শব্দ পড়েই দু'টা কমেন্ট করে নিজেদের জ্ঞান জাহির করতে যান অনেকে। সামগ্রিক বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি খুব কম, চোখটা বন্ধ করে দু'মিনিট ভাবার প্রবণতা কম।
৩) ইদানীং সচলে ধুম-ধাম ব্র্যান্ডিং/ট্যাগিং-এর একটা বাতাস আমি দেখতে পাই। কোনো রকম যুক্তি-তর্কের ধার না ধেরে "আপনি তো একটা অমুক!" বলে ভেগে যাওয়া হয় খুব। লেখক যদি এ-ধরনের বালখিল্যতাকে প্রশ্রয় না দেন, তখন আবার জবাব না দেওয়ার দোষে দুষ্ট হয় লেখাটা।
৪) কিছু অদেখা "লিটমাস টেস্ট"-এ ভরে গেছে সচলায়তন। শুরুতে পুরনো সচল এবং মডুরা নজরদারি করতেন প্রতিক্রিয়াশীল লোকজন দূরে রাখতে। এখন আগ বাড়িয়ে সচলেরাই সেটা করে বেড়ান (এটা অনেক দিন ধরে জমতে থাকা একটা সামগ্রিক পর্যবেক্ষণ, বিশেষ কোনো পোস্টের আলোকে বলা না)। আজকে অনেক প্রগতিশীল মানুষও প্রতিক্রিয়াশীল-সুলভ ব্যবহার পেয়ে বসেন লেখা কিংবা মন্তব্যে। এটা দূর পাল্লায় সচলায়তনের জন্য খারাপ।

আপনাকে ধন্যবাদ একটু ভেবে-চিন্তে একটা পোস্ট দেওয়ার জন্য। আরও রবীন্দ্রনাথ-সিরাজুল ইসলাম চাইবার দায়ে "হিটলার-মুসোলিনি-এলিটিস্ট-স্নব" হয়ে গেলে তো লেখকের রুষ্ট হওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। এই লেখার মতো একটি মন্তব্য দিয়ে শুরু হলে ঐ পোস্টে কিছু গঠনমূলক আলোচনার সুযোগ ছিলো।

টু ইচ হিজ ওউন... তাই এই নিয়ে আর বাদানুবাদ করতে চাচ্ছি না। আমার মতামতটুকু রেখে গেলাম।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ব্লগ বা সচলের মতো অনলাইন লেখক ফোরামে লেখার জন্য লেখককে নিজেকেই তৈরি হতে হয়। বছর চারেক আগে একজন ব্লগার এই তৈরি হওয়ার জন্য যতোটা সময় পেতেন, এখন পান তারচেয়ে অনেক কম। এখন পাঠকের প্রত্যাশা বেড়েছে, সেই প্রত্যাশাকে না মেটাতে পারলে হতাশার বহিঃপ্রকাশও তাই অনেক সময় রুক্ষ হয়ে যায়। অতিথিপরায়ণতার বিষয়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অনেকদূর গড়ালেও সচল সামগ্রিকভাবে অতিথপরায়ণ। ইদানিংকালে সচলের প্রথম পা্তায় অতিথিদের পোস্টই বেশি থাকে, মন্তব্যেও অতিথিদের অংশগ্রহণই বেশি। আর পাঠক হিসেবে অতিথির সংখ্যা সচলদের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ।

ভাসা ভাসা পড়ার ব্যাপারটা ঠিকাছে। আমি নিজেও অনেক সময় কিছু পোস্টে শুধু চোখ বুলিয়ে যাই। তবে মন্তব্য করলে সাধারণত একটু বেশি সময় দেই। সামগ্রিক বক্তব্যের সাথে 'কী-ওয়ার্ড' ক্যাচ করাটাও এক অর্থে দরকার আছে। 'সুঠাম দেহের অধিকারী'র উদাহরণে গোলাম আযমকে টানা, দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চায় জামায়াতের উদাহরণ, 'প্রতিভা'র উদাহরণ হিসেবে আল মাহমুদকে উল্লেখ (বিশেষ করে তার জামায়াততোষণকে 'অনোন্যপায়' হিসেবে দেখানো) একটু রিস্কি। তখন পাঠক রিঅ্যাক্ট করবেই এবং পাঠক যদি বক্তব্য ভুল রিড করে থাকে, তাহলে সেটা বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব লেখকের। লেখক এই দায়িত্ব পালন না করলে ভুল বোঝাটা সঠিক বোঝা হিসেবে স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।

'ট্যাগিং' জিনিসটা যেমন খারাপ, তেমন দরকারীও। চেনা বামুনের পৈতা লাগে না বলে একটা কথা আছে। ডিটেলসে গেলাম না।

লিটমাসের ক্ষেত্রেও একই কথা। তবে সচলে এই জিনিসটা একদিনে হয় নাই, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও মিথস্ক্রিয়তা থেকেই হয়েছে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মনে করেন, তাকে ভুলভাবে ট্যাগিং করা হচ্ছে, তাহলে তিনি সেই ভুল ভাঙ্গানোর চেষ্টা করাই শান্তিরক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। ভুল মানুষের হয় এবং সেটা সংশোধনও মানুষই করতে পারে।

-------------
বংশ দিয়ে মানুষকে বিচার করাও একটা ভুল ব্র্যান্ডিং। মানুষের পরিবেশ পরিস্থিতি (যার মধ্যে বংশ, পরিবার, অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদিও আছে) তার চরিত্র গঠনে সাহায্য করতে পারে; কিন্তু সেই প্রভাবকে অতিক্রম করে কাজের মাধ্যমে বড়ো কিছু অর্জনও মানুষের পক্ষেই সম্ভব। পরিস্থিতি মানুষের অর্জনের পথে একটা নিয়ামক; কিন্তু কেউ ভালো পরিস্থিতি পেয়েও কাজে লাগাতে পারে না, কেউ খারাপ পরিস্থিতিকেও অতিক্রম করে কাজের মাধ্যমে। এজন্য বিচারের মাপকাঠি হতে হবে মানুষের 'অর্জন', তার পরিস্থিতি (বংশ পরিচয়) না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

লেখককে নিজেই প্রস্তুত হতে হবে, তা নিয়ে আমিও একমত। সে-জন্য তাঁকে সুযোগ তো দিতে হবে। সব অতিথি কিন্তু ব্লগিং-এ পুরনো না। সেই বিবেচনার অনুপস্থিতিটাই চোখে লাগছে। বরং পূর্ব-পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে চিপ-শট নেওয়া হয়। এটা খুব খারাপ। সামগ্রিক ভাবে, সাম্প্রতিক সময়ে সচল একটু বেশিই স্পর্শকাতর লাগে আমার চোখে। একটু এদিক-ওদিক হলেই যুদ্ধংদেহী অবস্থা হয়ে যায়।

কী-ওয়ার্ডের প্রসঙ্গে একমত, তবে তা একটা পর্যায়ে পথরোধকারী হয়ে দাঁড়ায়। একটা বড় উদাহরণ হলো নীটশে। কয়টা মানুষ আদৌ নীটশে পড়েছেন, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। জ্ঞান কম বলে কিন্তু লেখার কোথাও নীটশে দেখলেই ব্র্যান্ডিং থেমে নেই। এভাবে চলতে থাকলে গঠনমূলক আলাপ-আলোচনা প্রায় অসম্ভব নয় কি?

'চেনা বামুন' প্রসঙ্গে একমত, তবে তা দরজা বন্ধ করে দেয় একটা সময়ে। যদি ধরে নেই যে মানব-সমাজের সকল তারতম্য শ'পাঁচেক নিয়মিত ব্লগারের মধ্যেই দেখা যায়, তাহলে এই প্রথা নিয়ে আপত্তি নেই আমার। এদের বাইরের কেউ এলেই "অচেনা" হওয়ার দায়ে দুর্ব্যবহার ঠিক না। এমনটা যাঁরা করেন, হয় তাঁরা বাংলা ব্লগকে বেশি উন্নত মনে করেন, নয়তো তাঁদের মস্তিষ্কের আকার ক্ষুদ্র।

ফারুক হাসান এর ছবি

পোষ্ট পড়ে একটা কথাই মনে হল, বলাইদা একজন প্রতিভাবান ব্লগার।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পোস্টে তো সবাইকেই প্রতিভাবান বললাম। চোখ টিপি
ব্লগিংয়ে অবশ্য আমার প্রতিভা মিডিওকার। নেচারাল ট্যালেন্ট ৮০%, কাজ ৬৫%।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মামুন হক এর ছবি

মনের কথাগুলো বলে দিয়েছেন।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হুম, মিডিওকাররাই দলে ভারী। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

দুর্দান্ত এর ছবি

উচিত কথা। কাজ কাজ আর শুধুমাত্র কাজই হল আসল, বাকী সবই গরম হাওয়া।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জীবনটাই একটা কাজের যন্ত্র!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফাহিম এর ছবি

এক প্রতিভাবান আশরাফুল প্রতিভার ঠেলায় গড়াতে গড়াতে কোথায় নেমেছে সেটা মনে পড়ে গেল।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ অতিরিক্ত প্রতিভা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!

=======================
যদি আমি চলে যাই নক্ষত্রের পারে —
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হা হা হা।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রেজওয়ান এর ছবি

"প্রকৃত প্রতিভাবানেরা কাজ করে, সাফল্যকে ফর-গ্র্যান্টেড হিসেবে ধরে নেয় না।"

যে কোন সাফল্যের পেছনেই অধ্যাবসায় এবং কাজ করার বিকল্প নেই। আমার প্রাক্তন বস বলতেন সাফল্য পাবার একমাত্র উপায় কঠোর পরিশ্রম।

একটা দেশের জন্য আসলে কি দরকার?

যার যেদিকে প্রতিভা সে ক্ষেত্রে পড়াশোনা বা জীবিকা অর্জনের সুযোগ নিশ্চিত করা। নাহলে প্রতিভার সঠিক সদ্ব্যবহার ও উৎকর্ষতা কখনই আসবে না। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এদিকে মোটেই নজর দেয়া হয় না।

প্রতিভা মানুষকে অনেক সাহায্য করে। একজন মমতাজ সঙ্গীতের প্রাথমিক শিক্ষা না নিয়েও অনেকের চেয়ে ভাল গায়। যেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ আমার প্রতিভা নেই। তবে মমতাজের বর্তমান সাফল্যের পেছনে তার অধ্যবসায় ও পরিশ্রমটাও উল্লেখযোগ্য। না হলে সে আরেকজন আশরাফুলের মত ফুল হয়ে থাকত।

আমার অভিজ্ঞতায় প্রতিভাবান কোন বন্ধু এখন কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে আবার মেধায় অনুজ্জ্বল কোন বন্ধু এখন জীবনে সাফল্যমন্ডিত।

সাফল্য পেতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। প্রতিভা - সেতো একটা ভ্রান্ত ধারণা।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

রেজওয়ান ভাই, থ্যাঙ্ক্স। সাফল্যের পিছনে সম্ভবত ভাগ্যও একটা ফ্যাক্টর। ভাগ্যের ওপর হয়তো আমাদের হাত নেই; কিন্তু পরিশ্রমের ওপর আছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাবিহ ওমর এর ছবি

বাকরুদ্ধ এবং হিংসিত। যাই বনে গিয়ে ঘাস কাটি। যার যা কাজ মন খারাপ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ঘাসের আঁটি বান্ধা হলে খবর দিয়েন, মাথায় করে নিয়ে আসবো। চোখ টিপি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

দ্রোহী এর ছবি

আমার প্রতিভা নাই, কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা ও নাই। আমার কী হবে গো?

লেখায় জাঝা।

সাবিহ ওমর এর ছবি

আপনার সিক্স-প্যাক আছে না? খাইছে

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আপনার কিছুই হবে না, তবে আপনি আইনস্টাইন হবেন। দেঁতো হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

সাফল্য কাকে বলে?

প্রতিভা বলে কি কিছু আসলেই আছে?

-------------------------------------------------------------------
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সরলভাবে সাফল্য হলো কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া বা উদ্দেশ্য/দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা।

থাকার কথা। নাইলে আমার এক ফ্রেন্ড যতো সহজে ছবি আঁকতে পারে, আমি পারি না কেন?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সিরাত এর ছবি

কঠোর পরিশ্রম করা ইনএফিশিয়েন্ট হয়ে যায় না? এটার মানে কি এরকম না যে আপনি ঠিক ফিল্ডে নেই?

ফারুক হাসান এর ছবি

কঠোর পরিশ্রম করা ইনএফিশিয়েন্ট হবে কেন? কেউ যদি এফিশিয়েন্টলি কঠোর পরিশ্রম করে? আসলে সবকিছু নির্ভর করে আউটপুটের উপর। আমার মতে, যে যত বেশি এবং ভালো আউটপুট দিতে পারবে তার সাফল্য তত বেশি। এবং একইসাথে বেশি ও কোয়ালিটি আউটপুট দেয়া অসম্ভব কিছু নয়।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ফিলড চয়েসের ক্ষেত্রে প্রয়োজনটাও একটা বড়ো নিয়ামক। তবে সহজাত প্রতিভার যতো কাছে থাকা যায়, ততোই মঙ্গল।
কঠোর পরিশ্রম মানে আসলে চোখমুখ বন্ধ করে গাধার খাটুনি খাটা না। প্ল্যানিংটাও গুরুত্বপূর্ণ, কাজের ভালো আউটপুট পেতে পরিশ্রমকেও অভিযোজিত হতে হয়। ফিজিক্সের কাজের সংজ্ঞা মনে হয় এক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একটা দেশের জনসংখ্যার আদর্শ সমীকরন এরকম হলেই ভালো -
প্রতিভাধর ১% মিডিওকর ৭০% ভুদাই ২৯%

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

২৯% অনেক বেশি। যারা দেশের প্রয়োজনে সামান্য হলেও অবদান রাখতে পারে, তাদেরকে 'ভুদাই' শ্রেণী থেকে বাদ দিতে হবে। এই শ্রেণীটা হবে যারা মোটেই অবদান রাখে না; বরং উলটা বৈঠা টানে। উলটা টানার হার ২-৩% এর বেশি হওয়া উচিত না। সুস্থ দেশে এরাও জিনিয়াসদের মতোই প্রান্তিক।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ওডিন এর ছবি

আমার ক্লিনিক্যালি রেকর্ডেড আইকিউ আটান্ন। (সাইকিয়াট্রির স্যার কেম্নে কেম্নে জানি মাপছিলেন) তার মানে আমি প্রান্তিক এবং ভুদাই- অনেকটা তথাকথিত জিনিয়াসদের মতোই! দেঁতো হাসি

(সরি এই মন্তব্যটা পড়ে একটু ঠাট্টা করার লোভ সামলাতে পারলাম না।)
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আইকিউ নিশ্চিতভাবেই একটা ভ্রাণ্ত ধারমা!
আইকিউর ভিত্তিতে প্রান্তে ঠেলে দেওয়া ততোধিক ভ্রাণ্ত ধারমা।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

(মাথা চুলকাই)

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পোস্ট চাই। শিমুল আর সৌরভ আমার চেয়েও ফাঁকিবাজ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

s-s এর ছবি

প্রকৃত প্রতিভাবানেরা কাজ করে, সাফল্যকে ফর-গ্র্যান্টেড হিসেবে ধরে নেয় না।পুরো লেখার সারকথা এটাই। যে লেখার পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন সেখানে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভঙ্গীতে প্রতিভাবানদের পথ সুগম করতে "সাধারণ" বা মিডিওকারদের কি করা উচিত/ আসলে কি করে ধরে মিডিওক্র্যাসিকে চাবকানো উচিত সেটা বলা হয়েছিলো, যেটা আদৌ কোনো সুস্থ চিন্তার পরিচায়ক ছিলো না। মিডিওকারদের প্রয়োজন কি সেটা আপনার লেখায় অনেক স্পষ্ট। ধন্যবাদ আপনাকে।

রেনেট এর ছবি

আমারও দ্রোহীভাইয়ের মত অবস্থা মন খারাপ
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

ফারুক হাসান এর ছবি

তবে দ্রোহী যেহেতু আইনষ্টাইনের দখল নিয়ে নিয়েছে, আপনার হকিং হওয়া ঠ্যাকায় কে?

জি.এম.তানিম এর ছবি

ফাহা ভাই, আমারেও একটা সায়েন্টিস্ট দিতি হবে। ইইইইইইই (কান্না)
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- একটা ভাব সম্প্রসারণের কথা মনে পড়ে গেলো—

"আলো বলে অন্ধকারেরে, তুই বড় কালো।
অন্ধকার হাসিয়া কহে, ভাই তাই তুমি আলো!"

জগতে সবাই আইনস্টাইন হয়ে গেলে সেই আইনস্টাইনদের মূল্যায়ন করবে কারা?

তখন তো আইনস্টাইনদের মাঝেও "আইনস্টাইন-আইনস্টাইন", "মিডিওকার-আইনস্টাইন" শ্রেণী তৈরী হবে। তারা আবার কাইজ্যাও করবে, কে 'জিনিয়াস' আইনস্টাইন, এই নিয়ে।

সো, এই মিডিওকার-প্রতিভাবান তুলনাই তো বাতিলের খাতায় জায়গা করে নেয়া জিনিষ। ট্র্যাশে ফেলে দেয়া জিনিষ নিয়ে আলোচনার কী আছে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

মিডিওকার- প্রতিভাবান বলে আসলে বিভাজনটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ না। কারণ, হয়ত একজন হঠাৎ করে একটা ব্যপার বুঝে ফেললো, অন্যজন সেটা একটু দেরিতে বুঝলো, কিন্তু, বাস্তবিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমজনের চাইতে দ্বিতীয়জন আগে কাজটা করে ফেললো, তাইলে কোনজন প্রতিভাবান?

পোস্টের সাথে সহমত।

- মুক্ত বয়ান

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

একজনের ভাবনায় কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় প্রতিভা হিসেবে ধরা দিতে পারে এবং যাদের মাঝে তা অনুপস্থিত, তাদেরকে তখন মধ্যম বা নিম্ন-মধ্যম-মানের মনে হতে পারে। কিন্তু সেই "মধ্যম-মানধারী"দের সমালোচনা করার চেয়ে নিজে যেটাকে প্রতিভা হিসেবে মনে করছি, সেটা অর্জনের উপায় বাতলে দেয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। প্রতিভা, মান, এইসবই আপেক্ষিক ব্যাপার-স্যাপার।

----------------------------------
~জীবন অনেকটা জড়ই, কিন্তু অনন্য!~

মামুন হক এর ছবি

এই পোস্টে নাভিদ সাহেবের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ শুনতে পারলে ভালো লাগতো। তাহলে তার বক্তব্যটা আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমাদের কাছে আরেকটু পরিষ্কার হতো।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তিনি আর আসবেন না। তাঁর জায়গায় আমি-আপনি হলেও খুব সম্ভবত আসতাম না। আমি জবাব দেওয়াটা যদি গর্হিত না হয়ে থাকে তো বলতে পারি।

সেই লেখাটার পটভূমি ব্যাখ্যা করলে একটু আন্দাজ পাবেন। আমি এবং নাভিদ ভাই দু'জনেই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি এবং রবীন্দ্রনাথের খুব ভক্ত। যুগের হাওয়া এখন কোন দিকে বইছে, তা নতুন করে বলে দিতে হবে না। আমরা ক্রমে একটা অন্ধকার যুগে প্রবেশ করছি। ক্রমাগত লঘুকরণ করতে করতে আমরা আমাদের মূল্যবোধ এবং যৎসামান্য উৎকর্ষ হারাতে বসছি। কথা-বার্তার শুরু সেখানেই ছিলো। সংখ্যাগত বিচারে আমরা এগিয়েছি ঠিকই, উৎকর্ষের দিক থেকে পিছিয়েছি। রবীন্দ্রনাথের চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের গ্রন্থের সংখ্যা বেশি, এটাই এই যুগের বাস্তবতা। এগুলো নিয়েই লেখা ছিলো।

রবীন্দ্র-নজরুল ক্ষণজন্মা প্রতিভা হয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু এই সমাজে একজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি বা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদও আর আসবেন না। এটার পেছনের সম্ভাব্য কারণ নিয়েই কথা হচ্ছিলো। এ-নিয়ে একটা লেখা আমার মাথায় ঘুর-ঘুর করছিলো; অর্ধেকটা লেখাও ছিলো। তবু নিজে না লিখে ওনাকেই বললাম সচলে লিখতে। বহুদিন পর একটা লেখা লিখে দুপুর নাগাদ জমা দিলেন। রাতে ঘরে ফিরে দেখেন তিনি হিটলার-মুসোলিনি-এলিটিস্ট-স্নব হয়ে গেছেন। এটা কি খুব জরুরী ছিলো? লেখা যেমনই হোক না কেন, *সচলায়তনে* আমি এটা আশা করিনি।

ওনার মতগুলো আমার নিজেরও। আমাদের সামগ্রিক আক্ষেপগুলোর কথাই তো বলা ছিলো লেখায়। সে-কারণেই আমি জবাব দিচ্ছিলাম, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে না। আরেকটা কারণ হলো, লেখাটা অনেকেই আদৌ মনোযোগ দিয়ে পড়েননি পর্যন্ত। আপনি, সুবিনয় মুস্তফী, আলমগীর ভাই, প্রমুখ কারও সাথেই আমার খারাপ সম্পর্কে নেই। সবাইকেই আমি শ্রদ্ধা করি, এবং তা আপনাদের জানা থাকার কথা। আমি আদর্শিক অবস্থান থেকেই বলছিলাম যা বলার। কিন্তু সেটার জবাব না দিয়ে বারবার লেখকের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছিলো।

সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কিছু কথা বলছি। আলমগীর ভাইয়ের একটা মন্তব্যও কি প্রাসঙ্গিক ছিলো? সুবিনয়ের মতো চিন্তাশীল ব্লগারের কি স্রেফ বুয়েট-ঘেঁষা লেখা দেখেই এভাবে গুঁতানো দরকার ছিলো? প্রাইভেট ভার্সিটির দুর্নাম করা মানেই লেখক এলিটিস্ট হয়ে গেলেন। সেগুলোর আখাস্তা মান সম্পর্কে কি আমরা কেউ জানি না? s-s কোন অধিকারে পূর্ব পরিচয়ের জের ধরে কাউকে "স্নব" ডেকে আজকে জাতির বিবেক হিসেবে আবির্ভূত হন? নাভিদ সালেহ-র সাথে বিতর্ক করেছেন বলে জানালেন। জানতে ইচ্ছা হয়, সেই বিতর্কের ফলাফল কী ছিলো। উইকিপিডিয়া থেকে নীটশে-কে উদ্ধৃত না করে নীটশে থেকে নীটশে-কে উদ্ধৃত করতে পারেন, এমন কেউ কেন বড় লেখকের রেফারেন্স দেবেন না? লেখা ঋদ্ধ করা কবে থেকে পাপাচার হয়ে গেল? এই ট্যাগিং/প্রশ্নগুলোর জবাব কি একজন নতুন লেখককে তাঁর প্রথম দিকের লেখায় চাইতে হবে? এই রকম মন্তব্যের জবাব দিতে দেরি হওয়ায় তাকে কেন ক্রমাগত এলিটিস্ট গালি খেতে হবে?

"বংশ" নিয়ে অনেক কপচানো হয়েছে। শিক্ষা প্রয়োজন, কিন্তু শিক্ষিত মানেই সদাচারী না। মানুষের সুকুমারবৃত্তিগুলো পরম্পরা পায় তার বংশের মধ্য দিয়েই। এখানে সামাজিক যশের চেয়ে আচরণগত শুদ্ধির ভূমিকা বেশি। লেখার মেজাজটা বুঝে থাকলে এটা খুব কিন্তু ঝাপসা ছিলো না। আল-মাহমুদকে কোথাও সমর্থন করা হয়নি। শুধু সমালোচনা করা হয়েছে সুনীল-শামসুর রাহমানদের মতো যথাযথ এলিট না হওয়ায় অন্যান্য অনেক প্রতিভাবান কবি অবহেলিত থাকার প্রথার। লেখার কোথাও কিন্তু জাত্যভিমান ছিলো না। কোথাও নিজেকে প্রতিভাবান বলা হয়নি, বরং প্রতিভাবানের উত্থান আহ্বান করা হয়েছিলো আমাদের সবার স্বার্থে। বলা হয়েছিলো যে রবীন্দ্রনাথদের মতো প্রতিভার মূল্যায়ন করা শিখলে পরবর্তী প্রজন্মে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসদের মতো মানুষ আসেন। মিডিওকার হওয়া দোষের না, কিন্তু সংখ্যার জোরে গলাবাজী করে প্রতিভাবানদের দাবিয়ে রাখা দোষের। বলা হয়েছিলো যে যথাযথ ভাবে না শিখে কোনো কিছুতে হাত দেওয়া ঠিক না। এই কথাগুলোয় অন্যায় কোথায়?

দুই দিন নষ্ট করেছি ঐ পোস্টে। সে-কারণেই এই পোস্টেও স্পষ্ট রেফারেন্স আসার আগ পর্যন্ত কিছু বলিনি। অফটপিক হয়ে থাকলে বলাই দা'র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার মতামত একবারেই যথেষ্ট স্পষ্ট করার চেষ্টায় বিস্তারিত লিখলাম। এনিওয়ান ইজ ওয়েলকাম টু হ্যাভ দ্য লাস্ট ওয়ার্ড।

নৈষাদ এর ছবি

ইশতিয়াক রউফ, নাভিদ সাহেব একটা চমৎকার বিষয় নিয়ে লিখেছিলেন। লেখাটার কিছু কিছু বিষয় নিয়ে আমি নিজেও কিছু ফোরামে কথা বলেছি। আমি খুব চাইছিলাম কেউ লিখুক এমন একটা বিষয়ে। কিন্তু সমস্যাটা হয়েছিল, আমার ধারণা উনার উপস্থাপন করা নিয়ে। (আপনি নিজেও তো প্রেসেন্টেশনের উপর একটা চমৎকার লেখা লিখেছিলেন সচলায়তনে)।

শুরুতেই ব্লগের প্রতি কিছুটা উন্নাসিকতা প্রকাশ পেয়েছ বলে আমার মনে হয়েছে। হয়ত ব্যাক্তি জীবনে তিনি চমৎকার একজন মানুষ, এবং আপনি যেহেতু তাকে ব্যাক্তিগত ভাবে চেনেন আপনার কাছে তেমনটি মনে হয়নি। কিন্তু একজন পাঠক হিসাবে আমি ব্যাপারটা অনুভব করতে পারি। যার ফলে প্রথমেই তিনি পাঠকের সাথে কানেক্ট করতে ব্যার্থ হন, এবং পাঠক কিছুটা ডিফেন্সিভ হয়ে যায়।

নিৎশের ব্যাপারটাও তেমনি অনেকটা। যেহেতু আমার মত অনেকেই নিৎশে পড়েনি, উইকি থেকেই জেনেছে, তাঁর রেফারেন্সটা অনেকটা উন্নাসিকতায় ভরা মনে হয়েছে, হয়ত ‘আউট-অভ-কন্টেক্সেটে’র করণেই। সেই ক্ষেত্রে কন্টেক্সটটা ব্যাখ্যা করার দায় তাঁরই।

‘ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড’ কিন্তু খুবই স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার। এটা নিয়ে কোন ইন্ডিকেশন দিলে সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত এদেশেও ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড কিংবা এলিটিজমের সাথে মেরিটোক্রেসির সরাসরি সম্পর্কের কথা চিন্তা করা হত একসময়। আইসিএস কিংবা সিএসপি হতে হলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির ছাত্র/ছাত্রী হলেই হত না, ‘ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড’ থাকতে হত। এমন কি নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের কিছু মাল্টিন্যাশেনালে ‘ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড’ দেখা হত নতুন লোক নেয়ার ক্ষেত্রে। ব্যাপারটা থেকে অন্য দেশের মত আমরাও দূরে সরে আসতে পেরেছি।

কিন্তু এখনও এলিটিজমের গভীর সমর্থক আছে এদেশে। একজনের উদাহরণ দেই। তিনি অবশ্যই এলিট। কঠিন ‘ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড’। উচ্চ শিক্ষিত, প্রচুর পড়াশুনা করেন। স্পেশালাইজড – যে বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন সেই বিষয়েই তাঁর ব্যবসা, প্রমিত বাংলায় কথা বলেন। টেবিল ম্যানার থেকে শুরু করে সবকিছুই প্রমিত। বিশুদ্ধ ধ্রুপদী সংগীত শোনেন, কখনও উচ্চস্বরে কথা বলেন না। চমৎকার একজন মানুষ। কিন্তু এই এরিস্টোক্রেসি-মেরিটোক্রেসি সম্পর্কের গভীর সমর্থক। দেশের সব কিছু নিয়েই উন্নাসিকতা আছে।

আমি ছাত্র হিসাবে এবং চাকুরী সূত্রে ম্যানেজমেন্টের এর সাথে সম্পর্কিত হওয়ায়, থিওরী এবং এর প্রযোগ দিয়ে এলটিজমের অন্তঃসারশূন্যতা বুঝাতে চেষ্টা করি তাঁকে। তিনি যুক্তি দেন জেনেটিক ডিসপোসিসনের, আমাদের ছোট-বেলায় যে ‘ফ্রেম-অভ-রেফারেন্স’ তৈরী হয় তার উপর ফ্যামেলির প্রভাবের। এক সময় তিনি ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্টটাকেই ধ্রুপদী ধারার বাইরে একটা খেলো জিনিস বলে মত দেন। কথা হল যে আপনি যদি এমন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, তবে তো সমালোচনা শোনার জন্যও তৈরী থাকতে হবে।

ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ডের একটা ছোট উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। চা-শিল্পের ‘ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড’ থিওরী থেকে সরে আসছিল মাত্র আশির দশকের শেষে অথবা নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। সেই সময়ই বুয়েটের কিছু ইঞ্জিনিয়ারকে নেয়া হল ম্যানেজমেন্টে... চা-শিল্পের এলিটরা বিরক্ত হয়েছিল। এসব অকুলীন লোকজন দিয়ে ম্যানেজমেন্ট? ওহ্‌।
ডু ইউ সাবস্ক্রাইব টু দ্যাট আইডিয়া?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি লেখকের সমস্ত দায়বদ্ধতার কথার সাথেই একমত। আমার আপত্তি লেখকের কাছে প্রশ্ন পেশের বদলে আপত্তিকর এবং জাজমেন্টাল মন্তব্য নিয়ে। লেখক নিয়মিত ব্লগ লেখক না। ব্যস্ততা এবং অনভ্যস্ততার কথা স্পষ্ট করেই বলা ছিলো। লেখকের মন্তব্য থেকে এটুকু স্পষ্ট হওয়ার কথা যে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের স্পষ্ট ও গভীর জবাব আসতো।

শুধু বংশ না, আমি যেকোন রকম মানদণ্ডের কারণে কাউকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার বিপরীতে। এই প্রসঙ্গে অন্য মন্তব্যে লিখেছি।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

লেখক বংশ শব্দটা একবার উল্লেখ করেছেন। বিস্তারিত ব্যাখ্যা ওনার থেকে আসে নি। আপনি যেটা ব্যাখ্যা দিলেন, সেটা ওনার ব্যাখ্যা হিসেবে মনেও করছি না। আপনার

শিক্ষা প্রয়োজন, কিন্তু শিক্ষিত মানেই সদাচারী না। মানুষের সুকুমারবৃত্তিগুলো পরম্পরা পায় তার বংশের মধ্য দিয়েই

এই কথা মানতে পারছি না। এর ইম্প্লিকেশনেও পজিটিভ কিছু নেই, কিন্তু নেগেটিভ, স্নবিশ একটা টোন অবশ্যই আছে। অন্তত আমার উপলব্ধিতে। সত্যি বলতে, আপনার এই লাইনটি পড়ে আমি সত্যিই হতাশ। এমন কথা পড়তে হবে আসলেই আশা করি নি।

আমার মনে হয় মানুষের সদাচারিতার সাথে বংশের যে সম্পর্ক তৈরী করলেন, তা মিডিওক্রিটির সমস্যায় (বা তার সমাধানে) কিভাবে প্রাসংগিক তা আপনার আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। সম্পর্কটারও আরো ভিত্তি আশা করছি। এটা একটা নেহায়েত তর্ক মনে করবেন না, আপনার ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে আমার উপলব্ধিগত পুনর্বিবেচনা অবশ্যই থাকবে। এই কথাটা এক লাইনে (বিশেষত: মিডিওক্রিটি প্রসংগে) বলে ফেলার বা মেনে নেবার মত মনে হয় নি বলেই ব্যাখ্যা চাচ্ছি।

----------------------------------
~জীবন অনেকটা জড়ই, কিন্তু অনন্য!~

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কথাটা উল্টোভাবে পড়ছেন। আমি বলিনি যে উচ্চবংশীয় হওয়া মানেই সদাচারী হওয়া। যা বলেছি তা হলো, আমার বোধ এবং উপলব্ধিগুলো পরম্পরা পাবে বংশানুক্রমে আমার সন্তানদের মাঝে। আমার দাদা তার ১০ ছেলে-মেয়ের সবাইকে সমান শিক্ষার সুযোগ করে দিতে পারেনি। যাদের উচ্চশিক্ষা দিতে পারেনি, তাদের অন্তত সদাচরণ শেখানোর চেষ্টা করেছে, মৌলিক কিছু মূল্যবোধ শেখাতে চেষ্টা করেছে। আমার খালা নিজে গানের চর্চা ধরে রাখতে না পারলেও তার মেয়েকে শিশুকাল থেকে গান শিখিয়েছে। এটাই আমার চোখে সদাচরণ ও সুকুমারবৃত্তিকে ব্যক্তির মধ্যে শেষ হতে না দিয়ে বংশানুক্রমে পরম্পরা দেওয়া।

মিডিওক্রিটির সমস্যার সমাধানে কোনো সিলভার-বুলেট নেই। আমি যা মানি তা হলো, কোনো মানুষেরই একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে অতিরিক্ত আয়েশী হয়ে যাওয়া ঠিক না। শুরুটা যেখানেই হোক, প্রতিনিয়ত আত্মোন্নয়নের একটা সক্রিয় প্রয়াস থাকা উচিত।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

অর্থাৎ শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি সুকুমার-বৃত্তির চর্চা-(সেটা পরিবার থেকে অর্জন করা না গেলেও)-ও প্রয়োজন, এবং প্রয়োজন তা পরবর্তী প্রজন্ম, নিজের পরিবার, ছাত্র, বন্ধু, আপনজন, সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। জনগণের মিডিওক্রিটির উপর পরিবার থেকে ওই চর্চা না পেয়ে বেড়ে ওঠার দায় নাই। ফলে, বংশের উল্লেখ ব্যতিরেকেই এই কথা বলা যাচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য।

----------------------------------
~জীবন অনেকটা জড়ই, কিন্তু অনন্য!~

হাসিব এর ছবি

শিক্ষা প্রয়োজন, কিন্তু শিক্ষিত মানেই সদাচারী না। মানুষের সুকুমারবৃত্তিগুলো পরম্পরা পায় তার বংশের মধ্য দিয়েই।

হাসলাম কিছুক্ষন । ঐ ভদ্রলোকের পোস্ট মিস করছিলাম । তবে এই দুইটা লাইন পৈড়া বিষয় মনে হয় একটু একটু ক্লিয়ার । উচ্চবংশীয় লোকজনের এইদিকে পা না দেয়াই মনে হয় ভালো ।

সাবিহ ওমর এর ছবি

মানি বংশ শব্দটা উচ্চারণ করা ভুল ছিল এবং যদি এটা সচেতনভাবে বলা হয়ে থাকে অনেকেই আহত হতে পারেন। আমি নিজেও সেরকম কূলীন কেউ না। আমার বংশ বিলো-মিডিওকার।

কিন্তু পুরো লেখার মধ্যে ঐ জায়গাটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল? এমনকি ডিরেক্টলিও তো বলা হয় নাই, "যার যার নিচ জাত, দূরে গিয়া মর"। "অর্থ (পিরিয়ড) শিক্ষা বা বংশ নয়" --এটার অর্থ কি এমন হয় না যে, লেখক আগের ট্র্যান্ডের সাথে এখনকার তুলনা করলেন? কোথাও তো প্রতিভার সাথে বংশমর্যাদাকে রিলেট করা হয় নাই, অন্তত লেখক নিজে করেন নাই। আমার লেখককে (বা লেখাটাকে) অতীতচারী মনে হয়েছে, এলিটিস্ট মনে হয় নাই।

আর লেখাটায় কি আলোচনা/সমালোচনা করার মত কি আর কিছুই ছিল না? এটা তো অনেকটা "এর চোখ কটা, এ ডাইনী" এরকম ব্যাপার হল। আর ইশতিয়াক ভাই যেহেতু ঐ পোস্টটা নিজে লেখেননি, তার ইন্টারপ্রিটেশন/মন্তব্য শুধুই একটা পাঠ প্রতিক্রিয়া (আমি অন্তত সেভাবে দেখি)। যেহেতু তিনি আগে এভাবে চিন্তা করেছেন, নিজেও এরকম কিছু লিখছিলেন, তাই তার সমর্থন/উৎসাহটাও জোরালো। এখন তার বা অন্যদের মন্তব্যের জের ধরে মূল লেখককে গালাগালি করা কতটা সমিচীন?

ধ্যাৎ, আবার লেবু কচলাচ্ছি...লেবু কচলানো ভাল না, ভাইসব। বিশেষত ব্লগের মত অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে...

হাসিব এর ছবি

সাবিহ ওমর, গুগল করে ঐ পোস্ট খুঁজে বের করে পড়লাম । ঐ পোস্টের ত্যানা যদি এই পোস্টে প্যাচাইতে চান তাহলে আমি রেডি আছি ত্যানাটারে আরো প্যাচানির জন্য । কারন একটা দাবি হুট করে ফেললে সেইটার জবাব দেয়াটা মাঝে মাঝে জরুরী হয়ে দাড়ায় । ঐখানে পোস্ট লেখকরে কেউ গালাগালি করে নাই । (গালাগালি শব্দটারে আমি এখানে প্রচলিত নিয়মে চ-বর্গীয় শব্দ উচ্চারণ হিসেবে ধরলাম । ) শুধু একটা কথা বলে শেষ করি - দুধ নষ্ট করার জন্য একফোটা চোনা যথেষ্ট ।

সাবিহ ওমর এর ছবি

ঐ পোস্টে বুঝে না বুঝে, অতি উৎসাহে বেহুদা লেবু কচলানোর জন্য কিঞ্চিত লজ্জিত। জানি এখন বলে লাভ নাই, কিন্তু কেউ আহত হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী...

Shizumu Wabishii Tawakemono [অতিথি] এর ছবি

সামগ্রিক ভাব সহমত।
তবে এই অংশ দ্বি-মত ।

অছ্যুৎ বলাই লিখেছেন:

৩.
আচ্ছা, প্রতিভার লেভেলটা মাপা হবে কিভাবে? কাকে জিনিয়াস বলবো, কাকে মিডিওকার, কাকে প্যাথেটিক? কার সাফল্যে বাহবা দেবো, আর কার সাফল্যেই বা নাক সিঁটকাবো? আমার নিজের কাছে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো প্রয়োজন অনুযায়ী 'কাজ'। মনে মনে মহা জিনিয়াস একজন যদি প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ না করতে পারে, তাইলে তার তেমন কোনো বেইল নাই। অন্যদিকে একজন তথাকথিত 'মিডিওকার' (তাত্ত্বিক-প্রতিভার সংজ্ঞানুসারে) যদি আমার প্রয়োজনটা মেটাতে পারে, তাকে বাহবা না দেয়ার কোনো কারণই নেই। যেহেতু প্রতিভার কোনো স্ট্যাটিক লেভেল নেই; বরং আপেক্ষিকতাই এর বিচারকাঠি, সেহেতু ওপরের উদাহরণের দ্বিতীয় জনই আমার কাছে সুপার জিনিয়াস! শিল্পী মমতাজের 'বুকটা ফাইট্টা যায়' গান শুনে যদি একজনের সঙ্গীতের কাছ থেকে 'প্রয়োজন'টা মেটে, তাইলে তা-ই সই, মমতাজ এখানে শিল্পী হিসেবে জিনিয়াস।

এই হিসাবকে খুব সহজেই ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে নিয়ে যাওয়া যায়। সে-ই বেশি জনপ্রিয় হবে, যে বেশি মানুষের প্রয়োজনকে ভালোভাবে মেটাতে পারবে। যেমন, গানের সুর-তাল-লয় এখানে মূখ্য না, ইনফ্যাক্ট সুর নিজেই মানুষের 'প্রয়োজন' এর দাস।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই অংশটা আবার পড়লাম। দ্বি-মতের কারণটা ধরতে পারছি না। আপনি একটু বিস্তারিত বললে সুবিধা হতো। এমনিতে একটানে লেখা, অন্য একটা পোস্টের প্রতিক্রিয়াই বলা যায়। ভুল-ভাল থাকবেই। সুতরাং নিঃসঙ্কোচে আপনার কথাটা বলুন। আপনার মন্তব্য অবশ্যই পোস্টের বক্তব্যের বিশুদ্ধতা বাড়াবে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্নবারি নিয়ে আমার বরাবরই অবজেকশান আছে।

১৫ কোটি লোকের দেশে যেখানে লাখে লাখে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আছে প্রতিটা বিভাগে প্রতিটা বছরে, সেই দেশে কিভাবে মাত্র তিন-চারটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার রাখে যে কে মেধাবী আর মেধাবী না, কে সুযোগ্য আর কে অযোগ্য? আইবিএ থেকে পাশ করলে শার্প আর নর্থ-সাউথ থেকে পাশ করলে গবেট?

যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা আমাদের মাত্র দ্বিগুণ, তাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৫,০০০ আর এর মধ্য থেকে একদম টপ টিয়ার ইউনির্ভাসিটি/কলেজ হবে কম করে হলেও শতাধিক। চীন প্রাণপণ চেষ্টা করছে আমেরিকাকে ধরে ফেলার - তারা মিশন হাতে নিয়েছে নিজ দেশে ১০০টা প্রথম সারির রিসার্চ ইউনি তৈরী করবে, পশ্চিমা দেশ থেকে এখন বিশাল টাকার লোভ দেখিয়ে চীনা এবং অচীনা একাডেমিকদের ধরে নিয়ে আসছে। ভারতের আইআইটি শুরু হয়েছিল মাত্র চারটা দিয়ে, অথচ গত দুই বছরে আরো ৮টা নতুন আইআইটির শাখা খুলেছে।

বাংলাদেশের সাথে এই দেশগুলোর সরাসরি তুলনা চলে না কিন্তু তারপরেও একটা কারণেই এই উদাহরণগুলা দিলাম। উচ্চ শিক্ষার প্রসারকে নানা উপায়ে উতসাহ দেয়ার বদলে আমার নাভিদের লেখা পড়ে মনে হয়েছে যে মেধার বিচার/উচ্চশিক্ষা/ভালো চাকরি গুটিকয়েক হাতে বন্দী থাকলেই তিনি বরং খুশী হবেন। উনি যাই বলুন, প্রাইভেট ভার্সিটি খোলার সিদ্ধান্তকে আমি লং-টার্মে ভালো সিদ্ধান্ত হিসাবে দেখি - ব্যর্থতা যদি কোথাও থেকে থাকে, সেটা কর্তৃপক্ষের মান নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা।

এলিটতন্ত্র কিভাবে কাজ করে? আইবিএ মাফিয়ার প্রাক্তন সদস্য হিসাবে বলতে পারি যে ঢাকায় উঁচু দামের চাকরির বাজারটা এই মাফিয়া খুব সফলভাবেই কব্জা করে রেখেছে। প্রতিটা বড় পোস্টে আইবিএ-র লোক। নতুন চাকরি দেয়ার বেলায় এই লোকগুলো তাদের নিজেদের গোত্রের লোকের ভালোটা দেখে সবার আগে। যদিও আমি এমনও শুনেছি বড় কম্পানীর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারের কাছ থেকে যে নর্থ সাউথ বা ব্র্যাকের একটা গড়পরতা গ্র্যাজুয়েটের কাজের প্রতি নিষ্ঠা আইবিএর ছেলেমেয়েদের থেকে ঢের বেশী। তারা কেবল এই তালে থাকে না যে কিভাবে ছয় মাস বাদে আরো বিশ হাজার টাকা বেশী বেতনে অন্য কম্পানীতে জাম্প করবো।

নাভিদের লেখায় অনেক কিছুই আছে, যেই কারনে আমি বলেছি লেখার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নাভিদ বা ইশতির মন্তব্যে আমি এখন পর্যন্ত কোথাও দেখিনি যে সাধারণ মানুষের ভালোর জন্য (মানে বাকি ১৫ কোটির জন্য) একটা দিক নির্দেশনা আছে। তবে ষাটের দশক, সত্তর দশকের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের হারিয়ে যাওয়া কুলীন সংস্কৃতির জন্য একটা চিকন আক্ষেপ আছে - যে কারণে হয়তো ইলিয়াস বা সিরাজুলদের নামে ঘুরে ফিরে আসে।

ঠিক আছে, নস্টালজিয়া তো হলো - কিন্তু তারপর? যুগটা বিশ্বায়নের, খোলা বাজার আর খোলা দরজা-জানালার - সেটা চান বা না চান। এই যুগের সবারই যে রুটি-রুজি-স্বচ্ছলতার প্রতি একটা দুর্নিবার আকাংখা, সব মেধার ছেলেমেয়েদেরই যে নিজের অবস্থার পরিবর্তন/উন্নয়ন ঘটানোর একটা অদম্য বাসনা আছে, সেটা মনে হয় না নন-মিডিওকার-রা গোণায় ধরতে চান। আম-পাব্লিকের ভালোর কথা যদি জোরগলায় আগের প্রজন্মের নন-মিডিওকার-রা বলতেন, তাইলে আজকে তাদের কথা শোনার লোক থাকতো। তাদের একটা মরাল অথরিটি থাকতো। বরং তারা উপহার দিয়েছেন ভাঙ্গা দেশ আর হতাশ সমাজ। তাদের কথা কেন আজকে উপেক্ষিত হবে না, তার সলিড কারণ শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি লেখার কোনো অংশ নিয়েই আর বলতে যাচ্ছি না। লেখাটা সম্পূর্ণ না, ত্রুটিমুক্ত না। এ-নিয়ে পাঠকের প্রশ্ন থাকতেই পারে। লেখক তো সেটা জেনেই লিখেছেন। যে-কথাগুলো প্রশ্ন হিসেবে আসতে পারতো, সেগুলো অভিযোগ এবং ব্র্যান্ডিং হিসেবে এসেছে। আমার আপত্তি এবং লেখকের অস্বস্তি এখানেই। এগুলো যেকোন নতুন লেখককে নিরুৎসাহিত করে। মূল লেখক যাতে নিরুৎসাহিত না হন, সে-কারণে অবান্তর কথাগুলোর জবাব আমি দিচ্ছিলাম।

"হিটলার-মুসোলিনি-এলিটিস্ট-স্নব" মন্তব্যগুলোকে ভালো ভাবে বলা যেতো মাত্র দু'মিনিট সময় দিলেই। মন্তব্যকারীরা ভালো কিছুই অর্জন করলেন না, শুধু শুধু পাঁচ বছর পর বাংলা লেখায় হাত দেওয়া একজন লেখকের প্রয়াসকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করলেন।

লেখার একটা-দু'টা শব্দ যদি চোনার মতো পুরোটাকে বিনষ্ট করে থাকে, তেমনি কিছু কু-মন্তব্যও সেটাই করেছে। লেখক যা লিখেছেন, তার দায় লেখকের। তবে, সচলদের উচিত তাঁদের অসহিষ্ণু মন্তব্যের দায় নিতে শেখা, এবং নতুন কাউকে দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা থেকে সরে আসা।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

মূল লেখক যাতে নিরুৎসাহিত না হন, সে-কারণে অবান্তর কথাগুলোর জবাব আমি দিচ্ছিলাম।

পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, মন্তব্যের পাহাড় জমিয়ে ফেলার আগেই উত্তর বা ব্যাখ্যা দিয়ে ফেললে এমনটি হতো না। মূল সমস্যা হয়েছে মূল লেখকের ব্যাখ্যার অভাবে "সাহাবীগনের" আবির্ভাবের ফলেই। যার দায়, প্রথমে তার মতো করে তাকেই ডিফেন্ড করতে দিলে এত ত্যানা প্যাচানি হতো না।

লেখক ব্লগে নতুন লিখছেন বলে দায় এড়ানোর কোনো উপায় নেই - ব্লগে লেখার জন্য ডিপ্লোমা নিয়ে আসতে হয় না - তবে লিখার আগে দুই তিনটা ব্লগ পড়ে ব্লগের মেজাজ বুঝে নিলে ভালো হয়। সেইটাও যদি লেখক করতে অপারগ হন, তাহলে আর কিছু বলার নাই। দলবদ্ধ আক্রমন যেমন বাঞ্চনীয় না, ব্লগে কিছু কমেন্টের কারণে গেলাম গা টাইপের মনোভাবও কিন্তু বাঞ্চনীয় না।

মেঘমন্দ্রস্বর [অতিথি] এর ছবি

আমার মতে প্রতিভা প্রাকৃতিক ! না কাটা হীরক খন্ড। পরিশ্রম আর অধ্যবসায় এর অবিরাম কর্তনে ঝকঝকে-তকতকে হীরক এর সন্ধান দেয় আমাদের, তখন সেই ঝকঝকে-তকতকে হীরক কেই প্রতিভাবান বলি আমরা।

বিঃদ্রঃ সবার ভেতরেই এই না কাটা হীরক আছে , কেউ তার সন্ধান পায় , কেউ পায় না !

সুন্দর পোষ্টের জন্যে লেখক কে ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।