পাকিস্তান ভাল খেলে, তাই সমর্থন দেই। আসলেই? (পর্ব-২)

ধ্রুব আলম এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব আলম [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২২/০২/২০১৫ - ৩:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাকিস্তানের বিশ্বকাপরঙ্গ চলার আগেই, এশিয়া কাপ চলার সময় এদেশীয় পাকি-পেয়ারুদের শীৎকারের আবেগ থামাতে একটা লেখা লিখেছিলাম। আজকাল আর পাকি সমর্থক তেমন পাওয়া যায় না, আড়ালে-আবডালে তাদের চাপা কান্না শুনি, তবে ফেসবুকে হাহাকার (পড়ুন ম্যাৎকার) কমে গেছে। এখন তারা কথা বলে ব্যালেন্সিং করে, ভারত হারলে খুশি হয়,কিন্তু পাকি হার-জিতে আবেগ প্রকাশ করলে আশেপাশে দুষ্টু 'খেলার সাথে রাজনীতি' মেশানো লোকজন দৌড়ে এসে ভরে দেয়।

সেই লেখার আর ২য় পর্ব লেখার আগ্রহ বোধ করিনি। কিন্তু অলস বসে আছি বলে মনে হলো, লিখেই ফেলি (অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা)। পাকি-পেয়ারুদের যত বাগারম্বড় তো সেই এক বিশ্বকাপ জয় নিয়েই। শুরু করি পাকিস্তানের বিশ্বকাপ কাহিনী।

ইংল্যান্ড, ১৯৭৫ঃ

পাকিস্তান এতে খেলে তিনটি ম্যাচ। বলার মত এমন কিছু করেনি। অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হার, আর দুর্বল শ্রীলংকার সাথে জয় নিয়ে গ্রুপ থেকে বিদায় নেয়। শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ম্যাচটিতে, তারা আগে ব্যাটিং করে ২৬৬ রান তুলে, ১৬৬ রানে তাদের ৮ উইকেট ও ২০৩ রানে ৯ উইকেট ফেলে দিয়েও, এক উইকেটে ম্যাচ হারে। মোটামুটি ১ম বিশ্বকাপ থেকেই পাকিরা জানান দেয় যে, তারা হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ছেড়ে দিতে সিদ্ধহস্ত।

আর সদ্য খেলতে শেখা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বিরাট এক জয় পায় ১৯২ রানের।

ইংল্যান্ড, ১৯৭৯

এবারে তাদের অবস্থার আপাতদৃষ্টিতে একটু উন্নতি ঘটে। ১ম ম্যাচে উড়িয়ে দেয় কানাডাকে ৮ উইকেটে। ২য় ম্যাচেও জয় পায় অস্ট্রেলিয়ার সাথে, এইখানে একটা কিন্তু আছে। কেউ যদি মনে করেন যে, এটি পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়া তবে ভুল হবে। কেরি প্যাকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজের গ্যাঁড়াকলে পড়ে তাদের অধিকাংশ সেরা খেলোয়াড়কেই দেশে রেখে আসতে হয়।

৩য় ম্যাচ থেকেই পাকিরা দেখানো শুরু করে আসল রূপ। ইংল্যান্ডের সাথে মাত্র ১৬৫ রান তাড়া করতে গিয়েই ১৪ রানে হেরে যায়। ৩৪/৬ হয়ে ১০০ করে কিনা সে নিয়ে সন্দেহই জাগিয়ে দিয়েছিলো আর কি, আসিফ ইকবাল ফিফটি করে মান-সম্মান রক্ষা করে।

যাকগে, সেমি-ফাইনালে খেলে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে (সেযুগে দুটো ম্যাচ জিতেও সেমিতে যাওয়া যেতো)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ২৯৩, পাকিরা বেশ খেলছিলো, তাদের ২য় উইকেট পড়ে ১৭৬ রানে। এরপরেই তাদের শুরু হয় হারাকিরি, ১৭৬/২ থেকে ২৫০/১০, সে সময় খেলা হতো ৬০ ওভারের, ৫৭ ওভারেই অলআউট হয় তারা, অতঃপর বিদায়।

ইংল্যান্ড, ১৯৮৩

এই বিশ্বকাপটি বিশেষ সুবিধার হয়নি পাকিস্তানের। শুরুতে শ্রীলংকার সাথে জয় আসলেও (শ্রীলংকাকে আমাদের ধরতে হবে ১৯৯৭-৯৮ থেকে ২০০০-২০০১ এর জিম্বাবুয়ের মত দল, যারা মাঝেমধ্যে অঘটনের জন্ম দিতো, কিন্তু হারতো অধিকাংশ ম্যাচ), এরপরে মাঝারি মানের দল নিউজিল্যান্ডের সাথে হার (যেখানে তারা শূণ্য রানে ৩ উইকেট হারায়, এবং ৬০/৬ হয়ে, স্পিনার আবদুল কাদিরের ৪১ রানের ওপর ভর করে ১০০ পার করে)।

ইংল্যান্ডের সাথে ৮ উইকেটে শোচনীয় পরাজয়, শ্রীলঙ্কার সাথে ১১ রানের জয় (যেখানে মামুলি ২৩৫ তাড়া করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা ১০০/১ থেকেও ২২৪ এ অলআউট হয়, হয়তো অভিজ্ঞতার অভাবেই), এবং সবশেষে নিউজিল্যান্ডের সাথে টেনেটুনে ১১ রানের জয় (নিউজিল্যান্ড ১৮৭/৮ থেকেও ম্যাচ প্রায় জিতে নিয়েছিলো, ২৬১ রান তাড়া করতে গিয়ে থামে ২৫০-এ)।

এইবারেও সেমি-ফাইনাল, এবং প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, গতবার বেশ খেললেও এবার ফিরে আসে আপন ফর্মে/ ছন্দে। ১৮৪ তে অলআউট হয় পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ জিতে নেয় ৮ উইকেটে, ১০ ওভারের বেশি হাতে রেখে।

ওদিকে চিরশত্রু ভারত, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েই ১ম বারের মত বিশ্বকাপ জিতে নেয়।

ভারত-পাকিস্তান, ১৯৮৭

এবার নিজদেশে বিশ্বকাপ, শুরু করে ভালই, ভাগ্যের হাত ধরে। প্রথম তিন ম্যাচের গল্পগুলো এমনঃ ১ম ম্যাচে, শ্রীলঙ্কার সাথে কোনমতে ১১ রানে জয়, ২য় ম্যাচে, পাকিস্তানের করা ২৩৯ তাড়া করতে গিয়ে ইংল্যান্ডের ১০০/২ থেকে ২২১ অলআউট, ৩য় ম্যাচে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ২১৬ তাড়া করতে গিয়ে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা করে ১ উইকেটে জয়।

৪র্থ ও ৫ম ম্যাচে এসে মনে হয় তারা এতদিনে হোম এডভান্টেজ কি জিনিশ বুঝতে পারে, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার সাথে বড় জয় পায়। তবে শেষে এসে, আবার হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে।

সেমি-ফাইনালে খেলে অস্ট্রেলিয়ার সাথে, বেশ লড়াই করেই ১৮ রানে হেরে যায়।

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, ১৯৯২

এটা পাকিপ্রেমীদের প্রিয় গল্পের বিশ্বকাপ, যা জয় করে পাকিস্তান, পুরোপুরি ভাগ্যের হাত ধরে, যা তারা চেপে যায়। জঘন্য শুরু করে পাকিস্তান, ১ম পাঁচ ম্যাচে উইন্ডিজের সাথে ১০ উইকেটে পরাজয়, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে যথাক্রমে ৪৩ ও ২০ রানের পরাজয় (ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিলো যথাক্রমে মাত্র ২১৬ ও ২১১, উভয়ক্ষেত্রেই পাকিস্তান ২০০ও পার করতে পারেনি।)। একমাত্র জয় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত ইংল্যান্ডের সাথে।

ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচটি নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন, এতে ৭৪ রানে অলআউট হয় পাকিরা, ইংল্যান্ড ৮ ওভারে ছিল ২৪/১। কে ম্যাচটি জিততো, সহজেই অনুমেয়, তবে বৃষ্টিতে সেটি ভেসে যায়। এটি হারলেই বিদায় ঘন্টা বেজে যেতো। পাক-পেয়ারুরা কখনো এ ঘটনাটি ভুলেও মুখে আনে না।

সে যা হোক, পরের ৩ ম্যাচ টানা জিতে তারা চলে যায় সেমি-ফাইনালে (এক অস্ট্রেলিয়া বাদে বাকি দুই জয় আসে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মত মাঝারি মানের দলের সাথে)। সেমিফাইনালে পায় নিউজিল্যান্ডকে, এবং হারিয়ে ফাইনালে পৌছায়।

আরেক ফাইনালিস্ট ছিলো বরাতজোরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আসা ইংল্যান্ড। স্বীকার করতে হবে, সেদিন ভাল খেলেই ইংল্যান্ডের সাথে জিতে ১ম ও একমাত্র বিশ্বকাপ জয় করে পাকিস্তান।

তবে এই বিশ্বকাপে যে পরিমাণ ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছে পাকিস্তান, এত বরাতজোরে আর কেউ বিশ্বকাপ জেতেনি। পাকি সমর্থকরা অবশ্য এসব চেপে যান।

ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা, ১৯৯৬

আবারো নিজের দেশে খেলা, যাকে স্মরণীয় করে রাখে পাকিস্তান জঘন্য খেলা উপহার দিয়ে। গ্রুপ পর্বে দুর্বল হল্যান্ড, আরব আমিরাত, মাঝারি সারির ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের সাথে জয়, শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকার সাথে পরাজয়। কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে আবারো চিরশত্রু ভারতের সাথে পরাজয় এবং পত্রপাঠ বিদায়। বিশ্বকাপ খতম।

ইংল্যান্ড, ১৯৯৯

এই বিশ্বকাপ নিয়েও ফেটিশ আছে পাকু ভাইদের। এবারেও জঘন্য সুপার সিক্সের নিয়মের বলে পাকিস্তান সেমি-ফাইনাল খেলে। পরবর্তীতে এই নিয়ম বাদ দেয়া হয়। এতে গ্রুপ পর্বের পয়েন্ট সুপার সিক্সেও নেয়ার উপায় ছিলো।

দুর্বল হয়ে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথেমাত্র ২৭ রানের জয় দিয়ে শুরু, এরপরে সহযোগী স্কটল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সাথে জয়ের পরে বাংলাদেশের সাথে হেরে যায় পাকিস্তান! এ হার চেপে গিয়ে যে জয় নিয়ে প্রচুর কথা বলা হয়, সেটিতে অস্ট্রেলিয়া হেরেছিলো মাত্র ১০ রানে (ফাইনালে অবশ্য পুষিয়ে নিয়েছিলো!)।

সহজ গ্রুপ থেকে ৪ পয়েন্ট সঙ্গে নিয়ে সুপার সিক্সে যাত্রা করে পাকিস্তান। জয় পায় শুধুমাত্র জিম্বাবুয়ের সাথে, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে হার। কিন্তু সেই চার পয়েন্টের সুবাদে চলে যায় সেমিফাইনালে এবং মুখোমুখি হয় চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল নিউজিল্যান্ডের সাথে।

তাদের অবলীলায় হারালেও, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া লজ্জাজনক হার উপহার দেয় পাকিস্তানকে। বিশ্বকাপ ফাইনালে, এটি (১৩২) এখনো পর্যন্ত সর্বনিম্ন রান এবং উইকেটের হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয় (৮ উইকেটে)।

দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০৩

আমার বেশি কিছু বলা লাগে না আসলে, মাঠের খেলাই কথা বলে। শুধু হল্যান্ড ও নামিবিয়ার সাথে জয়, জিম্বাবুয়ের সাথে ম্যাচ পরিত্যক্ত, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সাথে বড় ব্যবধানে পরাজয় এবং বিদায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৭

আবারো অবিস্মরণীয় নৈপুণ্য! ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের সাথে পরাজয়, একমাত্র জিম্বাবুয়ের সাথে জয় এবং আবারো ১ম পর্বেই বিদায়। আয়ারল্যান্ডের এটি ছিলো ১ম জয় কোন টেস্ট দলের বিপক্ষে।

ভারত-শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ, ২০১১

এবার পাকিস্তান মোটামুটি তাদের বিশ্বকাপ ভালই শুরু করে, যদিও জয়ের বেশিরভাগই আসে সহযোগীদের (কেনিয়া, কানাডা) সাথে আর টেস্ট দলগুলোর (শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া) সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে (সেগুলো আর যাই হোক কনভিন্সিং বলা চলে না)।

শ্রীলঙ্কার সাথে জিতে ১১ রানে, অস্ট্রেলিয়ার সাথে ৪ উইকেটে জয় আর নিউজিল্যান্ডের সাথে তো হেরেই বসে ১১০ রানে। দুর্বল জিম্বাবুয়েকে হারায় ৭ উইকেটে, আর আনপ্রেডিক্টেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০ উইকেটে।

কিন্তু যথারীতি সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় পুরনো নেমেসিস ভারতের এবং হার। মাত্র ২৯ রানে হার মনে হলেও, পাকিস্তানের ১৮৪/৭ হয়ে যাওয়ার পরে মিসবাহ-আফ্রিদি শুধু ব্যবধানই কমিয়েছিলো।

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, ২০১৫

এখনো পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছে মাত্র দুটি, অবশ্য তাতেই পাকিস্তান নিজের জাত চিনিয়েছে। ভারতের সাথে তো হেরেছেই ৭৬ রানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথেও তারা রেকর্ডের ম্যাৎকার করে দিয়েছে। ১ রানে এর আগে কোন দল ৪ উইকেট হারায়নি। মনে হচ্ছে এবারো তাদের ১ম পর্ব থেকে বিদায়, সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এই হচ্ছে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিশ্বকাপের খতিয়ান। এরপরেও কেউ যদি শুধু 'ভাল খেলে' বলে পাকিস্তান সমর্থন করে, তাকে মিথ্যুক ছাড়া আর কিছু বলার উপায় নেই। আগে দেখিয়েছি, পাকিস্তানের সকল একদিনের ম্যাচে জয়ের শতকরা হার ৫০ ভাগও না। আর এ লেখায় দেখালাম, তাদের বিশ্বকাপের পারফর্মেন্সও এমন আহামরি কিছু না। তাদের থেকে ঢের ভালো রেকর্ড উপমহাদেশে ভারতের এবং শ্রীলঙ্কার, এবং বাইরে অতি অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বর্তমানে তলানিতে থাকা সত্ত্বেও, তাদের রেকর্ড পাকিস্তানের থেকে উত্তম!


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি বলেন কি !!!!!!!!আজকাল পাকি সমর্থক পাওয়া যায় না মানে? আমার অফিসে যে রামছাগল গুলো বিম্পি জামাত করে(জি.এম থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত)সেগুলো তো পাকিস্থানীদের জয়ের জন্য রীতিমতো পারলে মিলাদ-মাহফিল এর আয়োজন করে।বেশ কয়েক বার বাগড়া লেগেছেও আমার সাথে। আমি তো আবার মালাউণ তাই যুক্তিতে যখন পারে না তখন ধর্ম নিয়ে গালি দেয়।

-------------
রাধাকান্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ দারুণ।

স্বয়ম

ধ্রুব আলম এর ছবি

লইজ্জা লাগে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ছিঃ ধ্রুব'দা, আপনি খেলার সাথে পরিসংখ্যান মেশান? খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ধ্রুব আলম এর ছবি

খারাপ লুক তো! হো হো হো

অন্যকেউ এর ছবি

ছি ধ্রুব! ফাকিস্ট্যানকে এভাবে ফাঁক করে দিতে নাই। চন্দ্রবিন্দু খিয়াল্কৈরা।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাকিস্তান সমর্থকদের দেখিয়া-শুনিয়া যেইটুকু বুঝিতে পারিয়াছি, তাহাতে প্রতীতি হয়, তিনারা পাকিদের মন-প্রান সব দিয়া বসিয়া আছেন শুধু একটি কারনেই, আর তাহা হইল, পাকিরা মুসলিম। এই পাকি সমর্থকেরা সেই প্রজাতির, যাহারা শুধু মুসলিম নাম থাকিলেই এমনকি তিরিশ লাখ স্বদেশীর হত্যাকারী এবং দুই লাখ মা-বোনের ধর্ষককারীগনের সাথেও পিরীত করিতে কার্পন্য করিবে না; বলিতে কি, এই প্রজাতির শুধু একখানা মুসলিম নামের প্রয়োজন, এই নামখানা বা পরিচয় দেখিয়া আর সব খেলোয়াড় বাদ দিয়া ইহারা ওবামা বলিতে অজ্ঞান হইবে, অন্য সব নায়ক বাদ দিয়া শাহরুকের বন্দনা করিবে।

অন্ধকূপ

অতিথি লেখক এর ছবি

পরের ৩ ম্যাচ টানা জিতে তারা চলে যায় সেমি-ফাইনালে (এক অস্ট্রেলিয়া বাদে বাকি দুই জয় আসে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মত মাঝারি মানের দলের সাথে)। সেমিফাইনালে পায় ৪ দলের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল নিউজিল্যান্ডকে এবং হারিয়ে ফাইনালে পৌছায়।

১৯৯২ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ড টানা সাত ম্যাচ জেতে; তারা হারায় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে (লিঙ্ক দ্রষ্টব্য)। সুতরাং এই পারফর্মেন্স বিচার করলে ১৯৯২ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে "মাঝারি" এবং দুর্বল" দল বলা যায় না। সেমিফাইনালেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রায় প্রায় পুরো ম্যাচ এগিয়ে থেকে তারা শেষ ১৫ ওভারে হেরে যায়। মিডিয়ার কল্যাণে পাকিস্তানকে ঘিরে একটা মিথ গড়ে উঠেছে (১৯৯২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এই মিথের অন্যতম ভিত্তি), কিন্তু সেই মিথকে খণ্ডন করতে যেয়ে নিউজিল্যান্ডের লেজিটিমেট পারফর্মেন্সকে বাতিল করার তো কোন দরকার নেই।

http://www.espncricinfo.com/ci/engine/series/60924.html

Emran

ধ্রুব আলম এর ছবি

নিউজিল্যান্ড সে সময় চমৎকার খেলেছিলো বটে, অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ৭ ম্যাচ জয়ের সবগুলোই নিজের দেশে, এবং এর মাঝে ছিলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে সময় ফর্ম যদি মাথায় রাখেন তবে এই চার দলের মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাদে বাকি ৩ দলের পারফর্মেন্স ওশেনিয়ায় সবচেয়ে খারাপ, আর উইন্ডিজ সে সময় ক্ষয়িষ্ণু।

আমি মনে করি নিউজিল্যান্ডের সারপ্রাইজ ফ্যাক্টর ছিলো, অনেক কিছুই যা ক্রিকেট পৃথিবী আগে দেখেনি তা তারা করেছিলো। কিন্তু, আপনি যদি ৯২-পূর্ববর্তী রেকর্ডগুলো বিবেচনা করেন, তবে নিউজিল্যান্ড শুধু শ্রীলঙ্কার উপরে থাকবে। ১৯৯২-তেই তারা প্রথম অত্যন্ত ভালো খেলে।

পাকিস্তান স্পিনার দিয়ে বোলিং শুরু বা ব্যাটিং-এর শুরুতেই আগ্রাসী মনোভাব, কোনটিই নতুন করে দেখেনি, তারা অভ্যস্ত এতে। আর উপমহাদেশের সেরা পেস বোলিং তখন তাদের, এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের ফর্ম পুরো টুর্নামেন্টে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। (দ্যা বাবল হ্যাড টু বার্স্ট সামডে)

এছাড়াও আমি ৯২-এর নিউজিল্যান্ডকে দুর্বল বলিনি। পাকিস্তানের সাথে, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে কে বেশি দুর্বল ছিলো, তা বলা শক্ত আসলেই। কাগজে কলমে নিউজিল্যান্ড দুর্বল, তবে ইংল্যান্ডও কম যায় না (তারা জিম্বাবুয়ের সাথে হেরেছিলো গ্রুপে)।

মোদ্দা কথা, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকাকে এড়াতে পেরে খুশি হয়েছিলো বলেই আমার ধারণা। (তখনো তারা 'চোকার' হয়নি, অবশ্য পাকিস্তানের সাথেই হতো কিনা বলা যায় না।)

মাসুদ সজীব এর ছবি

ডারউইন নামের এক মুখপোড়া কি একটা তত্ত্ব দিয়েছিলেন পৃথিবীতে যেটিকে মেনে এখন সবাই সহজে বিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে তাই এখন পাকু ভক্তরা বিবর্তিত হয়ে নিরপেক্ষ হয়ে গেছে (আসলে চেপে যায়) কিন্তু ভার্চুয়াল জগতের বাহিরে পাকু ভক্ত এখনো বাংলাদেশে বেশি। ছোট্র একটা উদাহারণ দেই, গত এক বছরে আমার ৫জন কলিগ নতুন এসেছে, আল্লাহপাকের রহমতে সবগুলা ভাই সাচ্চা মুসলমানের দল করে। আর খেলার সাথে রাজনীতি না মেশানোর উদার বাণী আহবান করে। এরা অনলাইনে সক্রিয় না, ফলে পাকু প্রেম লুকায় না।

পাকু ভক্তি প্রথমত বংশগত, দ্বিতীয়ত এই পাকু ভক্তির জন্যে দায়ী আমাদের হাম্বাদিক আর তাদের সৃষ্ট আবর্জনা। আলু পত্রিকা থেকে শুরু করে বা.. কন্ঠ সব পত্রিকাই মাশল্লাহ পাকু বলতে অজ্ঞান। আর এ কারনেই শুধু সাধারণ মানুষ নয়, জাতীয় দলেও পাকু ভক্তের ছড়াছড়ি। যতদিন এই হাম্বাদিকরা, সাংবাদিক হতে পারবে না ততদিন বাংলাদেশে পাকু ভক্ত কমবে না।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আহারে চোখের সামনে ভাসে, গত বিশ্ব কাপে নিউজিল্যান্ড এরা সাথে রস টেলর কে লেগ সাইডে বল দিয়ে রাজ্জাক এমন ধোলাই খাইল।

আর ভারতের সাথে মিসবাহ আনকেল টিকে থাকার সে কি চেষ্টা , হুবহু একি দৃশ্য এবার ও দেখতে পেলাম। পাকিরা একটা জিনিস ই ভালো পারে, পাতানো খেলা

ট্রোল

ধ্রুব আলম এর ছবি

হো হো হো

গগন শিরীষ  এর ছবি

লেখার মূল সুরের সাথে একমত হলেও কিছু জায়গায় দ্বিমত পোষন করছি।প্রথমত,৯২ এর নিউজিল্যান্ডকে আপনার কেন দূর্বল মনে হল জানিনা।পাকিস্তানের কাছে পরপর দুবার হারার আগে নিউজিল্যান্ড রীতিমত অজেয় ছিল।দ্বিতীয়ত,একটা সময় হারা ম্যাচ জেতায় ওরা ওস্তাদ ছিল।অনেক ম্যাচ তারা অবিশ্বাস্য ভাবে জিতেছে,আবার অবিশ্বাস্যভাবে হেরেছে।আনপ্রেডিক্টেবল টিমের তকমাটা কিন্তু পাকিমনপেয়ারুরা দেয়নি।ইচ্ছে না করলেও আমাকে এটা মানতেই হবে পাকুদের এই ব্যাপারটি ক্রিকেটকে একটা ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।মমাত্র

পাকিমনপেয়ারুরা যাই করুক না কেন,সেটা পাত্তা দেয়ার মানে নেই।সে কারনেই পাকিদের প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতেও আমি দ্বিধা করিনা।পাকিদের ডোবাতে নিজেরাই যথেষ্ট!

ধ্রুব আলম এর ছবি

নিউজিল্যান্ড নিয়ে আমিও দ্বিধায় আছি। এ বিষয়ক জবাব ইমরান ভাইকে দিয়েছি।

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে।

শব্দ পথিক এর ছবি

ধ্রুব, আমি কিছু যোগ করি, এতে ইস্যুটা আরো পরিষ্কার হবে আশা করি।

ওডিআই ফরম্যাটে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স এশিয়া কাপেও যথেষ্ট খারাপ। ক্রিকেটে তুলনামূলক নতুন শ্রীলংকার এশিয়া কাপের পারফরম্যান্স পাকিস্তানের তুলনায় অনেক গুণে ভালো। ওডিআইতে হেড টু হেড পারফরম্যান্সে পাকিস্তান শ্রীলংকা, নিউজিল্যান্ড এবং ভারত ছাড়া সবার সাথেই অনেক পিছিয়ে। ১৯৯৬ থেকে পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে শ্রীলংকা হেড টু হেডে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। ভারত এবং নিউজিল্যান্ড ছাড়া ক্রিকেটে পাকিস্তানের সত্যিকার কোন প্রতিপক্ষ কখনোই ছিলোনা। দক্ষিণ আফ্রিকার এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে পাকিস্তানের ম্যাচ জয় পাকিস্তানিদের কাছে সবসময় একটা স্বপ্নই ছিলো এবং আছে।

ওডিআইতে পাকিস্তানের একমাত্র সাফল্যের জায়গা আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০১ পর্যন্ত শারজাহ ভিত্তিক ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতাগুলো। আর কে না জানে, বলিউড, পাক-ভারতের বাজিকর এবং আমিরাতি শেখদের স্ট্রাটেজিক অংশগ্রহনে এই প্রতিযোগিতা ছিলো দুর্নীতির এবং বেটিং এর আড্ডা। এই প্রতিযোগিতার প্রায় প্রতিটি ম্যাচই কমবেশি পাতানো থাকতো।

১৯৯৮-১৯৯৯ এর এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ৯২ এর বিশ্বকাপের পর দুই-তিন বছর ছাড়া গত ৬৩ বছরে পাকিস্তানের টেস্টে কোন অর্জন নাই। সবসময়ই গো-হারা হেরে চলছে পাকিস্তান।

পাকিস্তান ভাল খেলে বা খেলতো তাই সাপোর্ট করি এটা এখনো যারা বলে তারা পাকি জারজ বৈ অন্য কিছু না।

----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য

ধ্রুব আলম এর ছবি

চলুক

চমৎকার মন্তব্যের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ! হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আছেন কোথায় ? গতকাল এক বাসায় ক্যানবেরায় খেলা দেখার আড্ডা হচ্ছিল। কথা প্রসঙ্গে বলছিলাম যে আফগান সমর্থকদের দেখে মাথা-মোটা, আভদ্র আর শিক্ষায় ঘাটতি আছে বলে মনে হয়েছে। একজন শ্রোতা বলে বসলেন, “কি বলেন এইসব, ওরা না মুসলিম!”

আমার পর্যবেক্ষণ ভুল হতেই পারে কিন্তু যে গ্রাউন্ডে সেটা বাতিল করা হল তাতে পাকিস্তান নিয়ে এদের কি মনোভাব সেটা বুঝতে কষ্ট হয়না। পৃথিবীর অনেক নোংরা জিনিসের মতই পাকি প্রেমিকরা ছিল, আছে এবং থাকবে মন খারাপ

-পিায়াল

এক লহমা এর ছবি

আহা! যাকে বলে ছক্কার পড় ছক্কা! হাততালি দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ধ্রুব আলম এর ছবি

হাসি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের কাছে পাকিদের ৬২ রানে নাকানি-চুবানিকে পাকিপেয়ারুরা বলে ওটাওরা বাংলাদেশকে ছেড়ে দিয়েছিল। যাতে আমরা টেস্ট খেলতে পারি। ছেড়ে দিয়েছিল কিনা এই ভিডিওটা । আমরা দেখেছিলাম সেদিন, কিন্তু যারা দেখেননি, তোরা একটু দেখে নিতে পারেন।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।