আষাঢ়ে গল্প: নোয়াহ'র মহাপ্লাবণ

দ্রোহী এর ছবি
লিখেছেন দ্রোহী (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০২/২০০৯ - ৮:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মুখফোড়ের নোয়ার গল্পতো পড়লেন। এবার তাহলে দ্রোহীর গল্পটাও পড়ে ফেলুন জলদি।
মারাত্বক দৌড়ের উপর আছি। নতুন পোস্ট আপাতত আসার সম্ভাবনা খুব কম। মন খারাপ



নোয়াহ্'কে সকলেই অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে পছন্দ করিত। গঞ্জে যে বড় মাছ বাজারটি ছিল, নোয়াহ্ সেইখানে বসিয়া ঝালমুড়ি বিক্রয় করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিত। তাহার ঝালমুড়ির সুখ্যাতি সুদুর চীনদেশ পর্যন্ত পৌছিয়া গিয়াছিল। কথিত আছে, চীনদেশের রাজকণ্যা প্রতিনিয়ত ঝালমুড়ি খাইবার লোভে নোয়াহ্ কে বিবাহ করিতে উদ্যত হইয়াছিল। নোয়াহ্'র প্রথম পক্ষের বিবি ছিল অতিশয় দজ্জাল প্রকৃতির। অত্যাচারিত নোয়াহ্'র সংসার জীবন সম্পর্কে বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতা হইয়া গিয়াছিল। তাই রাজকণ্যার প্রস্তাবে রাজী হওয়ার কথা দুর্জনের কল্পনাতেও ঠাঁই পায়নি।

সেইবার খুব গরম পড়িল। নোয়াহ্'র ঝালমুড়ি ব্যবসায় ধস নামিল। বণিকগণের আশংকা, গরমের দিন- জল ব্যতীত ঝালমুড়ি খাইয়া কোন বিপদ হয়! শেষে বরফ লইয়া হাগনকুঠিতে ঢুকিতে হইবে জ্বলুনি বন্ধ করিবার নিমিত্তে।

হঠাৎ একদিন নোয়াহ্'র মাথা বিগড়াইয়া গেল। সে বাজারের এমাথা-ওমাথা দৌড়াদৌড়ি করিতে লাগিল এবং বণিকদের গালমন্দ করিতে লাগিল, "তোমরা সবাই আমার সাথে ফাইজলামী কর, আমার কথা অমান্য কর, তোমরা ধ্বংস হইবে। তোমাদিগকে ধ্বংস করিবার নিমিত্তে শীঘ্রই একটি মহাপ্লাবন আসিবে। আমি একটি জাহাজ তৈরি করিব। যাহারা আমা হইতে ঝালমুড়ি কিনিয়া খাইবে, কেবলমাত্র তাহাদিগকেই উক্ত জাহাজে উঠিতে দিব। বাকীরা ডুবিয়া মরিবে।"

সবাই ভাবিল, নোয়াহ্ ঝালমুড়ির বিক্রয় বাড়াইবার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপনী ফন্দি আঁটিয়াছে! তাহারা সিটি বাজাইয়া নোয়াহ্'কে উৎসাহ দিতে লাগিল। কতিপয় দুষ্টুলোক নোয়াহ্'র বউকেও বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় ব্যবহার করিবার পরামর্শ দান করিল।

দুইদিন যাইতে না যাইতেই নোয়াহ্ এলাকার সবচাইতে বড় কড়ই গাছটা কিনিয়া ফেলিল। গঞ্জের বণিকেরা তাহার পাগলামীতে ক্রমান্নয়ে বিরক্ত হইয়া উঠিতে লাগিল। নোয়াহ্ তাহাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করিয়া জাহাজ তৈরিতে উঠিয়াপড়িয়া লাগিল। কিয়দ্দিন বাদেই গঞ্জের অদুরবর্তী খালে একটি জাহাজের কাঠামো ভাসিয়া থাকিতে দেখা গেল।

যতই দিন যাইতে লাগিল, নোয়াহ্'র অভিসম্পাতের পরিমানও কড়ায়-গন্ডায় বাড়িতে লাগিল। বণিকেরা অত্যাচার সহ্য করিতে না পারিয়া নোয়াহ্'র বিরুদ্ধে শালিশ বসাইল। সাব্যস্ত হইলো, নোয়াহ যদি নিজেকে না শুধরাইয়া লয়, তাহা হইলে তাহার জাহাজ ধ্বংস করিয়া দেওয়া হইবে, এবং তাহাকে মাথা মুড়াইয়া, ঘোল ঢালিয়া তাড়াইয়া দেওয়া হইবে।

নোয়াহ্ উক্ত শালিশের সিদ্ধান্ত মানিয়া লইলো না। বরঞ্চ সে বলিয়া বেড়াইতে লাগিল, সবাই তাহার বিরুদ্ধে ভিলেজ-পলিটিক্স করিতেছে। তাহাকে সকলে মিলিয়া ছাগুরাম বানাইতে চেষ্টা করিতেছে।

পরদিন প্রাতঃভ্রমনে বাহির হইয়া নোয়াহ্ আবিষ্কার করিল, কে যেন তাহার সাধের জাহাজে হাগিয়া রাখিয়াছে! সেইদিন গঞ্জবাসী সকলের ঘুম ভাঙ্গিল নোয়াহ্'র তীব্র গালাগালিতে। তাহারা স্ববিস্ময়ে আবিষ্কার করিল নোয়াহ্ সভ্যতা-ভব্যতা ভুলিয়া মোড়ল হইতে শুরু করিয়া চামারের মা-বাপ তুলিয়া গালমন্দ করিতেছে। কিয়ৎকাল বাদে মোড়ল আসিয়া উপস্থিত হইল। তখনো নোয়াহ্'র গালাগালি বন্ধ হয় নাই।

নোয়াহ'র মুখে অতিশয় কুৎসিত গালাগালি শুনিয়া মোড়ল শুধাইলো, "উচিৎ কাজ ইহয়াছে।" মোড়লের কথা শুনিয়া গঞ্জের সকলের হৃদয়ে আনন্দের ফোয়ারা বহিতে লাগিল। নোয়াহ্'র অত্যাচারে সকলের নাভিশ্বাস উঠিয়া গিয়াছিল।

গঞ্জের আবালবৃদ্ধবণিতা নোয়াহ্'র জাহাজে হাগিয়া বেড়াইতে লাগিল। কিয়দ্দিনের মধ্যেই জাহাজ পুরীষে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল এবং তাহার সুগন্ধ চতুর্দিকে ছড়াইয়া পড়িল। নোয়াহ্ অসহায় হইয়া ঘুরিয়া বেড়ায় এবং গঞ্জবাসীদের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করিতে থাকে।

গঞ্জের পার্শ্ববর্তী গাঁয়ে বাস করিত এক বুড়ি। বার্ধক্যজনিত কারনে সে চোখে খুব একটা দেখিত পাইতো না। লোকজনের কানাঘুষা শুনিয়া বুড়িও একদিন উৎসাহী হইয়া নোয়াহ্'র জাহাজে হাগিবার নিমিত্তে বাহির হইল। লাঠি ঠুক-ঠুক করিয়া, প্রচুর সময় ব্যয় করিয়া, বুড়ি একসময় গিয়া নোয়াহ্'র জাহাজের সম্মুখে উপস্থিত হইল। ততোক্ষনে জনে জনে বার্তা পৌঁছাইয়া গিয়াছে। প্রচুর লোক উপস্থিত হইয়াছে বুড়ীকে উৎসাহ দেয়ার জন্যে। প্রবল করতালির মধ্য দিয়া বুড়ি হাগিতে বসিল।

বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ কি হইতে কি হইয়া গেল! বুড়ি টুপ করিয়া পুরীষের মধ্যে পতিত হইল। চারিদিকে গেল গেল রব উঠিল! কিয়ৎকাল বাদে সকলে সবিস্ময়ে লক্ষ্য করিল, বুড়ি যে স্থানে পতিত হইয়াছে সেই স্থান হইতে এক অপরুপ সুন্দরী, উদ্বিন্ম যৌবনা নারী উঠিয়া আসিতেছে।

বাতাসের অধিক দ্রুত গতিতে এই খবর চতুর্দিকে ছড়াইয়া পড়িল। আশেপাশের দশ গাঁয়ের সব বুড়ো-বুড়ী আসিয়া নোয়াহ্'র হাগু ভর্তি জাহাজে স্নান করিতে আরম্ভ করিল সুন্দর হইবার দুরাশায়। কালক্রমে লোকসমাগম এতই বাড়িয়া গেল যে তাহারা জাহাজের কাষ্ঠপৃষ্ঠ হইতে হাগু কাঁচাইয়া লইয়া যাইতে শুরু করিয়া দিল।

এমনি করিয়া ঈশ্বর সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য নিদর্শন রাখিয়া দিল যাহাতে তাহারা হাউকাউ চেঁচামেচি ফেলিয়া রাখিয়া সময় থাকিতে বাঁচিবার আশায় জাহাজ বানাইতে সক্ষম হয়।

গল্পের মোরাল: হে মানবজাতি। তোমরা ঈশ্বরের সাথে ফাইজলামি চোদাইও না। ঈশ্বর বিরক্ত হইলে খবরই আছে।

বিঃদ্রঃ - এই গল্প প্রথম যখন প্রকাশ হইয়াছিল তখন আরবের লোকেরা গরু চরাইয়া জীবিকা অর্জন করিতো। পৃথিবী ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত।


মন্তব্য

জিজ্ঞাসু এর ছবি

গল্প ভাল হইছে।
আরবের লোকেরা ঝালমুড়ি খায় আর গরু চড়ায়??

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মিয়া মশকারী করেন? আপনের আর মুখা, দুইজনেই চ্রম ফাঁকিবাজ পাবলিক। দুইটারেই দুইটার বুখে জড়াইয়া রাখোন দরকাম! চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নোয়াহ্‌ দিবস পালিত হচ্ছে যেন আজকে। আরো চাই! হাসি

অমিত আহমেদ এর ছবি

এইটা পড়েও মজা পাইলাম।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমি কমেন্ট করলাম না। রেটিংও দিলাম না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হায়... এরা জানলোই না এখন নোয়াদের বেইল নাই... এখন নোরা-দের দিন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এনকিদু এর ছবি

বিঃদ্রঃ - এই গল্প প্রথম যখন প্রকাশ হইয়াছিল তখন আরবের লোকেরা গরু চরাইয়া জীবিকা অর্জন করিতো। পৃথিবী ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত।

আমার ধারনা ছিল সেই আমলে আরবের লোকে গুহায় বাস করিত । আপনার গাল গল্প পড়িয়া নতুন জিনিস শিখিলাম ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

গল্পের মোরাল পইড়া ব্যাপক হাসলাম হো হো হো

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

দৃশা এর ছবি

হই মিয়া, পুরান গল্প আর কত দিন? রেগে টং
---------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

সৌরভ এর ছবি

স্যারে পড়ে নাই, কিন্তু আমি পড়সি। হাসি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

তানবীরা এর ছবি

হাসতে হাসতে চোখে পানি এলো। পাচ তারা ।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

বিপ্লব রহমান এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

গৌতম এর ছবি

পাবলিক ক্যাম্নে যে এইসব লিখে! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।