পাঠ্যবই শিশুদের যা শেখাচ্ছে, যেভাবে শেখাচ্ছে - ২

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: সোম, ০২/০৬/২০০৮ - ২:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্বের আলোচনাটি হয়েছিলো শহীদ তিতুমীর গল্পের মাত্র প্রথম দুটো অনুচ্ছেদকে ঘিরে। দুটো অনুচ্ছেদেই ভাষার যে উদ্বেগজনক ব্যবহার দেখা গেছে, তা ছড়িয়ে রয়েছে পুরো গল্পটির প্রতিটি অনুচ্ছেদেই। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের তৃতীয় লাইনে লেখা আছে- ছোট্ট শিশুটি ছিল যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি বলিষ্ঠ তার গড়ন।

শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের অপরিসীম আদিখ্যেতা আছে। অধিকাংশ সময়েই মানুষের গুণের চাইতে শারীরিক সৌন্দর্য কদর পায় বেশি। মিডিয়ার অব্যাহত প্রভাব মানুষকে প্রথম দর্শনে আকৃষ্ট করার দিকে প্রতিনিয়ত ঠেলে নিয়ে যায়, গুণবিচার হয় পরবর্তী ধাপে। মানুষকে মূল্যায়ন করার এই ভুল পদ্ধতি থেকে পাঠ্যবই বিযুক্ত থাকবে- এই আশা করাটা অপ্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু শিশুটি দেখতে সুন্দর বলার ভঙ্গি ও পদ্ধতির মাধ্যমে পাঠ্যবই ছোটবেলা থেকেই শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি শিশুদের আগ্রহী করে তুলছে। শারীরিক সৌন্দর্য একটি গুণ হিসেবে অবশ্যই বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু যে গুণের (!) ওপর মানুষের নিজের কোনো হাত নেই, যে গুণটিকে মানুষ নিজের মতো করে সাজাতে পারে না বা পরিবর্তিত করতে পারে না, সেই গুণকে প্রথমেই মূল্যায়ন করার যে শিক্ষা পাঠ্যবই দিচ্ছে, বড় হয়ে সেখান থেকে বের হওয়া খুব কঠিন- যদিও সেটি অসম্ভব জরুরি।

অন্য এক প্যারায় কী লেখা আছে দেখা যাক। একবার ওস্তাদের সঙ্গে তিনি বিহার সফরে বেরোলেন। মানুষের দুরবস্থা দেখে তাঁর মনে দেশকে স্বাধীন করবার চিন্তা এল। তিনি মুসলমানদের সত্যিকার মুসলমান হতে আহ্বান জানালেন। আর হিন্দুদের বললেন অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। হিন্দু-মুসলমান সকলে তাঁর কথায় সাড়া দিল।

ঠিক বুঝতে পারলাম না লেখক আসলে এখানে কী বলতে চেয়েছেন। তিতুমীর দেশকে স্বাধীন করতে চান- এর সাথে সত্যিকারের মুসলমান হওয়ার সম্পর্ক কতটুকু? সত্যিকার মুসলমান হলেই কি দেশ স্বাধীন করা যায়? কিংবা দেশ স্বাধীন করার জন্য সত্যিকারের মুসলমান হতেই হবে? মুসলমানদের বলা হলো সত্যিকার মুসলমান হতে, হিন্দুদের কেন সত্যিকার হিন্দু হতে বলা হলো না? খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের বলা হলো না? হিন্দুদের বলা হলো অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, মুসলমানদের কেন বলা হলো না? দেশকে স্বাধীন করা বা অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাথে ধর্মের সম্পর্ক কতোটুকু? এর মাধ্যমে কি রাষ্ট্র পরিচালনা কিংবা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না? তাও আবার পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে?

গল্পের শেষদিকে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এখানেও আবেগের আতিশয্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে খাপছাড়া তথ্যের সমারোহ। কর্নেল স্টুয়ার্ডের যখন হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্য এবং অজস্র গোলা বারুদ, তখন তিতুমীরের ছিলো, লেখকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক। তাঁর না ছিল কামান, না ছিল গোলাবারুদ। এই অবস্থায় যে যুদ্ধ হয়েছিলো, লেখক তাকে বলেছেন প্রচণ্ড যুদ্ধ। একটি বাক্য পরেই আবার লিখলেন- কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ইংরেজ সৈনিকদের গোলার আঘাতে ছারখার হয়ে গেল নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা। প্রশ্ন হলো, যুদ্ধ যদি প্রচণ্ডই হয় তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যে তো ছারখার হয়ে যাওয়ার কথা নয়। সৈনিকদের প্রাণপন যুদ্ধের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধের পার্থক্য সম্পর্কে লেখক সচেতন ছিলেন না মনে হচ্ছে।

একদম শেষদিকে লেখা আছে- শহীদ হলেন বীর তিতুমীর। শহীদ হলেন অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক। তিতুমীরের ২৫০ জন সৈন্যকে ইংরেজরা বন্দি করল। কারো হল কারাদণ্ড, কারো হল ফাঁসি। এভাবেই শেষ হলো যুদ্ধ। ... ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধে বীর তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ।

তিতুমীরের আগে ইংরেজদের বিরুদ্ধে এদেশে অনেকে লড়াই করেছেন, শহীদ হয়েছেন। এমনকি তিতুমীরের সঙ্গে যারা লড়াই করেছেন, তাদেরও অনেকেই তিতুমীরের আগেই শহীদ হয়েছেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে লেখক কোন বিবেচনায় একলাফে তিতুমীরকে বাংলার প্রথম শহীদ বানিয়ে দিলেন, বুঝতে পারলাম না। লেখক যদি বলতেন, তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ নেতা বা এ ধরনের কিছু, তাহলে হয়তো ঠিক হতো; কিন্তু সাধারণ মানুষের বীরত্ব বাদ দিয়ে নেতৃত্ব কিংবা উর্ধ্বতনদের সব কৃতিত্ব দেওয়ার যে সংস্কৃতি আমাদের, লেখক সেখান থেকে বেরুতে তো পারলেন-ই না; বরং শিশুদের এই পথে নিয়ে আসার একটি বড় উদাহরণ এবং ক্ষেত্র সৃষ্টি করলেন।

পুরো লেখাটিই আমার কাছে এক ধরনের উদ্দেশ্যমূলক লেখা বলে মনে হয়েছে। একজন সংস্কৃতিবান ও শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যে বিষয়গুলো আমাদের এড়ানোর চেষ্টা করা উচিত, এই গল্পে সেই উপাদানগুলোই বরং প্রচুর পরিমাণে আছে। লেখক সচেতন না অবচেতনভাবে এটি লিখেছেন, তা জানি না। কিন্তু সম্পাদকমণ্ডলীতে যে বিজ্ঞজনেরা ছিলেন, তাঁরা কীভাবে এই ধরনের বাক্য ও শব্দ প্রকাশের অনুমোদন দিলেন, তা বুঝতে পারি নি। অবশ্য এই গল্পটির লেখক এখানে একজন সম্পাদকও বটে। শিশুদের কাছে তিতুমীরের বীরত্ব দেখাতে গিয়ে তিনি আসলে তিতুমীরের বীরত্বকে অনেকটাই হালকা করে দিলেন এই গল্পের মাধ্যমে। এই বয়সে বুঝতে না পারলেও পরবর্তী সময়ে তারা ঠিকই বুঝতে পারবে, কী বৈসাদৃশ্য তাদেরকে শিখতে হয়েছে প্রাথমিক স্তরে।

আমাদের দেশের পাঠ্যবই নিয়ে অভিযোগ প্রচুর। বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে আঙ্গিক দিক- সবদিকেই। সেখানে এই ধরনের লেখা অভিযোগের সত্যতাই শুধু নির্দেশ করে না; সংশ্লিষ্ট সবাইকে যোগ্যতার মাপকাঠিতে দাঁড় করায়। পরবর্তী সংস্করণে লেখার মানের মাধ্যমে লেখক-সম্পাদকের যোগ্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে বলেই আশা করছি।


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তিতুমীর আওয়ামীলীগ না বিএনপি করতেন সেটা যে বলেনি সেটাইতো তার কপাল

০২

সিরাজউদ্দৌলা পালানোর সময় কোনো এক পর্যায়ে নৌকায় চড়ে নদী পার হয়েছিলেন
এমনও শুনেছি এই কাহিনীকে নৌকামুক্ত করে লেখার নির্দেশ এসেছিল '‌উপর' থেকে

০৩
লালনকে মুসলমান বানালাম। নজরুলকে বানালাম। তিতুমীরকে খাঁটি মুসলমান বানাতে দোষ কী?

গৌতম এর ছবি

কোনো দোষ নেই। একটি ধর্ম-অনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে আপনাকে চলতে হবে রাষ্ট্রের মূলনীতি অনুসারে। সে হিসেবে কোনো দোষ নেই।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মুজিব মেহদী এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন গৌতম। আমি মুগ্ধ।

এই একটি গল্পের বিশ্লেষণই আশা করি প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট যে, আমাদের পাঠ্যপুস্তকগুলোর ভিতর দিয়ে শিশুদের মধ্যে কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি চাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

আপনার পরিকল্পনা কেমন জানি না, তবে আমার মনে হয় এই সিরিজটি অনেক দীর্ঘ হতে পারে। বেশ কাজে দেবে।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

গৌতম এর ছবি

আপনার প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ।

এই একই বইতে এমন কিছু বিষয়বস্তু আছে যেগুলো সত্যিকার অর্থেই চমৎকার। কিন্তু সেগুলো আড়ালে পড়ে যায় শহীদ তিতুমীর গল্পের মতো কিছু বিষয়বস্তুর কারণে।

এই সিরিজটি অবশ্যই দীর্ঘ হবে। তবে নিয়মিত হবে না।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

হিমু এর ছবি

গৌতমদার বিশ্লেষণের পর বুঝতে পারলাম, বাংলা ভাষায় কেন বোকাচোদা কথাটা আছে, এবং কোন ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা প্রয়োজন। তিতুমীর গল্পের লেখকের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার খুব উপযোগী হতে পারতো, কিন্তু তা শোভন নয় বলে ব্যবহার করলাম না। সর্বত্রই রামছাগলেরা মুখ দিচ্ছে, পাঠ্যবই কি আর ব্যতিক্রম হবে? এই ইডিয়টদের হাত থেকে বাচ্চারা মুক্তি পাক, সেই কামনা করি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

গৌতম এর ছবি

আহা! এইভাবে কেউ মন্তব্য করে? বালাই ষাট।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বজনপ্রীতির ভূত যতদিন না যাবে, আমাদেরও সব কিছু মেনে নিতেই হবে। বোর্ডের লেখক, প্রকাশক, সম্পাদক সবাই কোনো না কোনো ভাবে বোর্ড পরিচালকদের আত্মীয় হন।
এই সিস্টেমটা দেশের সর্বোচ্চ পুরষ্কার থেকে আরম্ভ করে থানার প্রতিটি ইউনিয়নের বিধবা ভাতা পর্যন্ত প্রলম্বিত।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

গৌতম এর ছবি

আপনার এই মন্তব্যটি ঠিক মেনে নেওয়া গেল না। আমি যতদূর জানি, বোর্ড পরিচালকের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচারে এখানে কোনো কাজ হয় না বা স্বজনপ্রীতির সরাসরি প্রভাব এখানে নেই। যারা এই বইগুলোর লেখক বা সম্পাদন, তাঁরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব পরিচয় ও কাজে পরিচিত- বোর্ড পরিচালকের সাথে সম্পর্ক আছে বলেও শুনিনি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

ইনারা সরকারি টাকায় দেশ বিদেশ সফর করে, বড় বড় শপিং মলে বেড়িয়ে এসে এসব বই লিখেন বা সম্পাদনা করেন। তাদের জ্ঞান!কে এতটা খাটো করা কি ঠিক হবে? যা তা লিখে নিজের পয়সায় নিজের নামে বই ছাপানো আর প্রাথমিক স্তরের বইয়ে সরকারি টাকায় নিজের নাম ছাপানো তাদের কাছে একই কথা। রামছাগল না হলে সরকারি লেখক হওয়া যায় না। রামছাগল যদি নাও হন সরকারি খাতায় নাম লেখানোর পর রামছাগল বানিয়ে ছাড়বে। লেখায় বস্তুনিষ্ঠতা বলে যে কথা আছে তা তাদের অভিধানে নেই। লজ্জা বলে কোন শব্দও তাদের জানা নেই। রাস্তায় বিবস্ত্র যে পাগল হাঁটে তার লজ্জা নাই, কিন্তু যে দেখে তার লজ্জা। পাঠ্যবইয়ের বিবস্ত্র লেখা দেখে শুধু বিবেকবানের লজ্জা হবে।
সুস্পষ্ট অভিযোগের দায় তারা বেমালুম অস্বীকার করে। লজ্জা লাগেনা। নিজেদের অযোগ্যতাকে ঢাকতে জটিল জটিল আইনের দোহাই দেয়। আর অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজে সাধু-সন্যাসী বনে যায়। লজ্জা লাগেনা।

বিশ্লেষণী লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ গৌতমকে।

জিজ্ঞাসু

গৌতম এর ছবি

সবাইকে অবশ্য এই মন্তব্য করা চলে না। সত্যিকার অর্থে যে কয়জন এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ বা বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন, তাদের সংখ্যা কম; পাশাপাশি তারা বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে নিজেদের কথাগুলো তুলে ধরতে পারেন না বা তুলে ধরতে বাধা দেওয়া হয়। না হলে এই সমস্যা আরো অনেক কম হতো।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই ধরনের বিশ্লেষণমূলক আলোচনা বৃহত্তর পাঠকের গোচরে আনা দরকার বলে মনে করি। ঢাকার কোনো সংবাদপত্রে এগুলি প্রকাশের চিন্তা করতে পারেন। ইন্টারনেট ফোরাম/ব্লগের পাঠক বাংলাদেশে এখনো সীমিত, তা স্বীকার করতেই হবে। পত্রিকায় এলে পাঠকের পাশাপাশি, আশা করা যায়, বোর্ডের কর্তাদেরও নজরে আসতে পারে। কাজের কাজ কিছু হবে কি না বলা মুশকিল, কিন্তু শুরুটা হোক।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

গৌতম এর ছবি

অবশ্যই বেশি মানুষ পড়লে ভালো হতো, কিন্তু ঢাকার সংবাদপত্রগুলোর ওপর আমি বিরক্ত।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইসব পাঠ্যবই তৈরির গোয়ালে আমার কিছু যাতায়াত ছিল
কেউ বললে কি বিশ্বাস করবেন যে পাঠ্যবই কোনো লেখক লেখেন না
এমনকি যাদের নাম যায় তারাও ওগুলো লেখেন না?

উপর থেকে প্রথমে নীতিমালা আসে--
রবীন্দ্রনাথকে আমরা এভাবে দেখাবো
জিয়াউর রহমানকে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করাবো
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে পরহেজগার মুসলিম বানাবো

এইসব নীতিমালা নিয়ে প্রথমে কেরানিরা টেক্সেট এর ড্রাফট তৈরি করে উপরওয়ালাদেরকে দেখায়
তারা এর ভাষা কিংবা কম্পিটেন্সি কিছুই দেখেন না
তারা দেখেন যার জীবনী যেমন হওয়া উচিত তেমন হয়েছে কি না

যদি মনে করেন হয়েছে। তখন তারা কিছু পাতি বিশেষজ্ঞ এনজিও এবং রিটায়র্ড প্রফেসরদেরকে ডেকে বলেন টেক্সেটের ভাষা ঠিক করে দিতে
উনাদের এখতিয়ারে ভাষা ঠিক করার বাইরে কোনো ক্ষমতা থাকে না

তারপর ঠিক করা হয় কোন লেখা কার নামে যাবে
তারপর দেয়া হয় ছাপতে
এবং তারপর ইস্কুলে পাঠানো হয় পড়তে...

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ইয়া হাবিবি!

গৌতম এর ছবি

নীতিমালা ও টেক্সটবই রচনার ক্ষেত্রে আপনি যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো যদি সত্যি হয়- তাহলে তো ভয়াবহ অবস্থা? আপনি কি এনসিটিবির কোনো কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন? নাকি এনসিটিবির বাইরে থেকে প্রকাশিত (এনসিটিবির অনুমোদনপ্রাপ্ত) বইগুলোর কথা বলছেন? দুটোর বিষয়বস্তু সিলেকশন থেকে শুরু করে প্রকাশের পদ্ধতি একেবারেই আলাদা।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দুটোর পদ্ধতি আলাদা হলেও অবস্থা কাছাকাছি
এনসিটিবি যখন প্রথম বই ড্রাফট করে তখন কম্পিটেন্সি লেভেল এবং কারিকুলাম গ্রিড অনুসরণ করেই করে

কিন্তু এর পরে যখন সংশোধন এবং সংযোজন শুরু হয় (পোশাকি ভাষা- সম্পাদনা)
তখনই সব গুবলেট পাকিয়ে যায়

কারণ তখন শুধু ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী বিষয় বিন্যাস নিয়েই চিন্তা করা হয়
আর কোন টেক্সটকে কোন দৃষ্টিতে লেখা হবে তা কারিকুলাম ইউনিটে প্রথমেই নির্দিষ্ট করে ফেলা হয়
যেমন: এই পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা তিতু মীরকে প্রথম মুসলীব বীর শহীদ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে
বৃটিশদের সাথে তিতু মীরের প্রচণ্ড যুদ্ধের বর্ণনা দিতে পারবে....

এর পরে লেখকরা কারিকুলাম ইউনিটের অবজেকটিভ দেখে দেখে টেক্সটে সাজান
সেখানে তথ্য দিয়ে তিতু মীরের প্রচণ্ড যুদ্ধের বর্ণনা দিতে না পারলে শুধু লিখে দেন বৃটিশদের সাথে তিনি প্রচণ্ড যুদ্ধ করেন

কারণ পরে উপরওলালারা চেকলিস্ট ধরে ধরে শুধু দেখেন প্রচণ্ড যুদ্ধের কথাটা এসেছে কি না
কী ভাবে এলো কিংবা খাপছাড়া ভাবে এলো কি না সেটা তাদের দেখার বিষয় না

তারা দেখে গিয়ে আরো উপরে শুধু রিপোর্ট করেন- এই টেক্সট প্রত্যাশিত/নির্দেশিত সবগুলোই উদ্দেশ্যকেই ধারণ করে....

০২
আমি বায়বীয় মানুষ
মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও থাকি
আর প্রায় সময় কোথাও থাকি না

গৌতম এর ছবি

@ মাহবুব লীলেন,

আপনার মন্তব্যটি পড়ার পর প্রাথমিক স্তরের জন্য নির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক ও শ্রেণীভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো আবার দেখলাম। বাংলা বিষয়ের জন্য নির্ধারিত লার্নিং আউটকাম বা শিখনফলগুলোও দেখলাম, যদিও বাংলার জন্য শিখনফলগুলো আলাদাভাবে নির্দিষ্ট করা নেই। ছাড়া ছাড়াভাবে কিছু রয়েছে। কিন্তু সেখানে এ ধরনের কিছু দেখলাম না।

পঞ্চম শ্রেণীর জন্য যে যোগ্যতাগুলো নির্ধারণ করা আছে, শহীদ তিতুমীর গল্পের জন্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলো-

শোনা
২.২ গল্প, বর্ণনা, নাটিকা, বক্তব্য ও আলোচনা প্রমিত উচ্চারণে শুনে বিষয়বস্তু ও ঘটনাধারা বুঝতে পারবে।

পড়া
২.১ ছড়া, কবিতা, গল্প, গদ্যরচনা ও নাটিকা প্রমিত উচ্চারণে ও স্বাভাবিক গতিতে পড়তে ও মূলভাব বুঝতে পারবে।

- এই দুটো ছাড়া প্রাসঙ্গিক আর কিছুই প্রান্তিক যোগ্যতার লিস্টে পাওয়া গেলো না, যেটি এই বই লেখার মূল উপাদান।

একটি বিষয় এখানে বলা দরকার, আমাদের দেশের প্রাথমিক শ্রেণীর জন্য যে প্রান্তিক যোগ্যতাগুলো নির্ধারণ করা আছে, সেগুলো অনুসরণ করেই পাঠ্যবই রচনা করা ও সম্পাদনা করার কথা। সেখানে শিখনফল অনুসারে রচয়িতারা কিছু চেকলিস্ট নির্ধারণ করে এবং সে অনুযায়ী পৃষ্ঠা সংখ্যা নির্ধারণ করে পাঠ্যবইয়ের যাবতীয় কাজ সমাধা করে। আপনি যে উদাহরণ দিলেন, সেটি হলে তা হবে ভয়াবহ ব্যাপার। এর অর্থ হচ্ছে, লেখক বা সম্পাদকরা প্রান্তিক যোগ্যতা ও শিখনফলকে উপেক্ষা করে নিজেরা কিছু আলাদা শিখনফল তৈরি করে সেগুলো পাঠ্যবইয়ে ঢোকায়।

তবে বইয়ে সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম দেখি, তাঁরা প্রত্যেকেই যশস্বী। তাঁদের দ্বারা এমন কাজ হচ্ছে- এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি কথা বলছিলাম লেখার এ্যাপ্রোচ নিয়ে
আপনি যেগুলো বলছেন সেগুলো টেকনিক্যাল কম্পিটেন্সি
বা স্কিলস এর অবজেকটিভ

কারিকুলমা গ্রিডে প্রতিটা টেক্সের সাথে তার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ থাকার কথা
যেমন এই টেক্সট এর বিষয় দেশ প্রেম
ওটা ইতিহাস
ওটা ঐহিহ্য কিংবা মুক্তিযুদ্ধ...

ঝামেলাগুলো সেখানেই হয়
যারা নির্দেশনা দেয় তারা টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়ই না
তারা শুধু বলে দেয় (প্রায় সবক্ষেত্রেই অলিখিত)
অমুক জিনিসটা অমুকভাবে লিখতে হবে
এতে যদি কোনো স্টুডেন্টের টার্মিনাল কম্পিটেন্সির সীমাও পার হয়ে যায় তাতে কিছুই যায় আসে না
(আমাদের স্কুলের পাঠ্যবইগুলোর বেশিরভাগই টেকনিক্যালি একেবারে হযরবল অবস্থায় আছে)

০২

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেখকরা লিখে দেবার পরে এই বিষয়গুলো যোগ করা হয় কেরানিদের দিয়ে
লেখকরা জানেনও না তাদের নামে কী যাচ্ছে

০৩
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রকৃতি বর্ণনায় নৌকার উপস্থিতি কতটুকু চোখে পড়েছে?

০৪
এই পদ্ধতিতেই সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে টেক্সটগুলো বদলায়
এর বীভৎসতম সূচনাটা হয়েছিল ৭৩ তে
সেখানে মোহাম্মদ আলী জিন্নার জীবনীর নিচে একটা সিল মেরে লিখে দেয়া ছিল - কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নার স্থলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পড়িতে হইবে'

এবং সেই ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী পড়তে গেলে মুজিবের বাড়ি হয় পাকিস্তান। তিনি পেশায় উকিল। তার বোনের নাম ফাতেমা জিন্নাহ....

আমাদের এনসিটিবি এর থেকে বেশি দূর যায়নি এখনও

গৌতম এর ছবি

সেখানে মোহাম্মদ আলী জিন্নার জীবনীর নিচে একটা সিল মেরে লিখে দেয়া ছিল - কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নার স্থলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পড়িতে হইবে'

এবং সেই ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী পড়তে গেলে মুজিবের বাড়ি হয় পাকিস্তান। তিনি পেশায় উকিল। তার বোনের নাম ফাতেমা জিন্নাহ....

....মজা পাইলাম।

২.

আমি বায়বীয় মানুষ
মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও থাকি
আর প্রায় সময় কোথাও থাকি না

.... কেমন যেন ঈশ্বর ঈশ্বর গন্ধ!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ফাহিম হাসান এর ছবি

দারুণ আলোচনা। ছোটবেলায় সামাজিক বিজ্ঞান নামক জগাখিচুড়ী বইয়ে ইতিহাসের স্বাদ ছিল তিতা করলার মত। বঙ্গভঙ্গ নিয়ে জনৈক শিক্ষিকার সাথে একবার বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লে তিনি ব্যাপক তুচ্ছার্থ সম্বোধনে আমাকে চুপ করিয়ে দেন।

সাম্প্রদায়িকতার প্রথম পাঠ আমি পাই পাঠ্যপুস্তক (সামাজিক বিজ্ঞান) থেকে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।