একজন আনন্দিত ব্যক্তির দুঃখিত কাহিনী – ১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০৩/২০০৮ - ১:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শুরুতেই বলে নিই, কাহিনীর সকল নামই ছদ্মনাম শুধু আমার নামটি ছাড়া।

ছোট বেলা থেকেই আমার অনেকগুলো শখের মধ্যে একটি শখ ছিল মানুষের কথা শোনা। আসলে ছিল বললে ভুল বলা হবে, আজও আছে। বিশেষ করে দুখী মানুষের কথা শোনার মাঝে আমি এক আলাদা ধরনের মজা এবং উৎসাহ খুঁজে পেতাম। এই কারণে আমার বন্ধু মহলে অনেকেই আমাকে তাদের ভেতরের কথা বলত। কেননা, আমি শুধু চুপ করে শুনে যেতাম, কিন্তু কাউকে এসব ব্যাপারে কিছু বলতামনা, এবং কখনও কখনও কিছু সমস্যা থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় সে ব্যাপারে সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সাহায্যও করতাম। এক সময় আমার এই শখের খবর বন্ধু মহল থেকে ছড়িয়ে আশেপাশের কিছু লোকের কাছেও চলে গেল। আশেপাশের কিছু লোকের সাথেও আমার কথা হতে লাগল। এমনি করেই একদিন আমার পরিচিত এক বড় ভাইর সাথে আমি বসলাম। এই ভাইয়াটি সবসময় দেখি খুব আনন্দে থাকেন। উনাকে হাসি বৈ গোমড়া মুখে কখনও দেখিনি। তাই ভাইয়াকে আমি ধরে বসলাম। বললাম,
- ভাইয়া, আজকে আমাদের সাথে এখানে কেউ নাই। আজকে আপনি আমাকে বলেন আপনি কিভাবে এত খুশি থাকেন সবসময়?
- এটা জেনে তোর লাভ কি?
- আপনিতো জানেন যে আমি মানুষের কথা শুনতে পছন্দ করি। এমনকি মাঝে মাঝে কিছু উপদেশ বাণীও দিয়ে থাকি। All time আনন্দে থাকার রহস্য যদি জানা যায়, তাহলে হয়তো এই পদ্ধতি ওই দুখী জনগণকেও বলা যেতে পারে try করে দেখতে।
- হুম্ম্, খারাপ বলিস নাই।
- আরে আমি খারাপ আবার বলি কখন। আমার কথা সবসময়ই ভাল। আপনারাই না পাত্তা দেননা এই অধমের কথা।
- ম্যালা ফ্যাচফ্যাচ করিস না। কার উপর কি try করবি ওইটাকে আমি ভাল বলি নাই। আমার আনন্দের ঠেলায়তো আমি কাউকে কিছু বলতে পারিনা, তাই ভাবলাম তোমাকে আজকে আমার life story খুলে বলি। তোমার অভিজ্ঞতা বাড়ল, জানতে পারলে যে কত দুঃখে আজ আমি এত আনন্দিত, আর আমিও একটু হালকা হলাম আরকি। তবে brother ওয়াদা করতে হবে যে কাহিনীটা কোনদিন কাউকে বললেও আমার নাম কোন মূল্যেই প্রকাশ পেতে পারবেনা। এমন কোন hints ও দিতে পারবেনা যাতে প্রকাশ পায় যে আমি কে। ok?
- আমি রাজি। আপনি জানেন যে, আমি কখনই এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ করিনা। সে যেই হোক না কেন। আপনি নিশ্চিনচিত্তে বলে যেতে পারেন।

ভাইয়া বলতে শুরু করলেন।

আমার জন্ম বেশ বড়লোক পরিবারেই। বলা যেতে পারে সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম। কিছু চাওয়ার আগেই দেখা যেত তা আমার কাছে হাজির হয়ে গিয়েছে। বিশাল বাড়ি, বাড়ির সামনে বিশাল বাগান, যেখানে চলত আমার অন্তহীন ছোটাছুটি। তার উপর আমি বাবা-মার একমাত্র সন্তান, তাই আমার সাতখুন মাফ। কিন্তু এক সময় আমার স্কুলে যাবার সময় হলো এবং আমাকে একটি স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হলো।

স্কুলে যাবার চেয়ে স্কুল থেকে ফিরে আসাটা আমার কাছে বেশি মজার ছিল। কারণ, বাসায় ফিরে দেখতাম চৌধুরী চাচ্চু বসে আছেন একটা চকলেট হাতে নিয়ে যা কিনা আমি আসা মাত্রই আমার হাতে দিয়ে দিতেন। কিন্তু শুক্রবারে উনি আসতেন না। চৌধুরী চাচ্চু যে আমার কেমন চাচা হতেন তখন আমি তা বুঝতে পারতাম না, কারণ কোন family get together এ উনাকে আমি দেখতাম না, কিন্তু আমাদের বাসায় উনার নিয়মিত যাতায়াত ছিল।

একটু একটু করে বড় হবার পাশাপাশি আমি টের পেতে লগলাম যে, বাইরে থেকে আমার বাবা-মার খোলসটা ভিন্ন। কেননা, তাঁরা ভীষন ঝগড়া করতে পারে এবং যা এতদিন আমার সামনে করতো না, তা এখন আমার সামনেও শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি বুঝতে পারলাম প্রকৃত অর্থে আমার বাবা-মার মাঝে কোনই মিল নেই। শুধুই ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ চিন্তা করে তাঁরা বাইরের মানুষের কাছে ভাল মানুষটি সেজে বসে থাকে। আর আমাকে নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথাও তাদের নেই। শুধু তাদের বদনাম হয় এমন কিছু আমি না করা পর্যন্ত তাদের তেমন কোনই চিন্তা নেই আমার ব্যাপারে।

স্কুলে আমি এমনিতে পড়াশুনায় ভালই ছিলাম। কিন্তু একবার জ্বরের কারণে পরীক্ষা খারাপ হয়ে গেল। খারাপ মানে সেরকম খারাপ, একদম ফেল মেরে গেলাম। আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এসে দুপুর বেলা বাবা-মা দুজনকেই ফোন করে একথা বললাম। কিন্তু তারা দুজনেই শুধু হু হা করে ফোনলাইন কেটে দিলেন। আমি আমার মত স্কুলের পড়া শেষ করে একটু খেলাধুলা করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল মার খেতে খেতে, কারণ আমার বাবা আমাকে বেত দিয়ে মার দিচ্ছেন, আর আমার মা আমাকে চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। আমিও নগদে কান্না শুরু করে দিলাম। আমি আজও সে দিনের কথা ভুলিনি। প্রচন্ড ব্যাথায় আমি কুকড়ে মেঝের উপরে শুয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে বেদম পিটুনি থামেনি। আমার দোষ ছিল আমি কেন ফেল করেছি এবং তা তাদের না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়েছি চোরের মত। তাদের জানতে হয়েছে ঘটনা আরেক আন্টির কাছ থেকে। শুনেতো আমি হতভম্ব। আমি বললাম যে তারা যেন redial list ভাল করে দেখে, তাহলে দেখতে পাবে যে, আমি তাদের ফোন করেছিলাম এবং ঘটনা বলে দিয়েছিলাম। যাই হোক, এই পর্বের শেষ হল। কিন্তু তারপর বহুদিন আমি ঘুম থেকে উঠে বসে থাকতাম আর ভাবতাম, না জানি কে আবার কি বলল, আর আমাকে এখনই হয়তো ঘুমের মাঝেই মার খাওয়া শুরু করতে হবে।

যদি এটা প্রকাশিত হয়, তাহলে পাঠকমহল, আমি দুঃখিত যে আরও লিখতে পারিনি সময়স্বল্পতার জন্য। পরে বাকিটা লিখব। (যদি আপনারা না করেন, তাহলে অবশ্য আলাদা কথা)

আজমীর


মন্তব্য

পরিবর্তনশীল এর ছবি

লিখেন...
খুব ভালো হয়েছে

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হুম...

স্বপ্নাহত এর ছবি

মন খারাপ হল।
বাকিটূকুর অপেক্ষায়...

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।