যাত্রাপথ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২২/০৩/২০০৮ - ১২:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারণে স্কাউটে যোগ দিতে পারিনি আগে। তাই বুয়েটে ভর্তি হয়ে প্রথম চান্সেই স্কাউটে ঢুকে গেলাম।
ট্র্যাকিং এ প্রথমবারের মত গেলাম নারায়নগঞ্জ। গিয়ে দেখি সকলেই আগে একাধিক বার ট্র্যাকিং করেছে, আমি আর আরেকজন এই প্রথম।
আমাদেরকে বলে দেয়া হয়েছিলো স্কাউট ভবনে মিট করতে। ঠিক দুইটার সময় গেলাম। এরপর কয়েকজনের সাথে পরিচয় করে দেয়ার পর সবগুলা গ্রুপের হাতে একটা করে কাগজ ধরায় দেয়া হলো, হতভম্ব হয়ে দেখি একটা বিশাল কবিতা লেখা! তাও রবীন্দ্রনাথের হলে হতো, হাবিজাবি কি কি সব লেখা। ওইটা পড়ে পড়ে বলে সেকন্ড ডেস্টিনেশনে যেতে হবে! আচ্ছা ভালো কথা, পড়ে ক্লু গুলা বের করলাম। ফ্লাইওভার দিয়ে যেতে হবে, একটা নির্দিষ্ট মিষ্টির দোকানের কথা লেখা আছে। ওটাতে গেলে একজন আমাদের ক্লু দেবেন। শুরু হলো প্রথম কম্পিটিশন- কোন গ্রুপ কত আগে পৌছাতে পারবে তার। সিএনজি নিয়ে আমরা চারজন রওনা দিলাম। পারলে পথিমধ্যে নিজেরাই ঠেলে নিয়ে যাই।
একসময় দোকানে পৌছালাম। গিয়ে দেখি একটা গ্রুপ মিষ্টি খেতে বসেছে। কি যেন একটা খটকা লাগলো। পরের লাইনে একটু অপ্রয়োজনীয়ভাবে আরেকটা দোকানের কথা লেখা আছে। ওখানে গিয়েই পেয়ে গেলাম সেকন্ড ক্লু। একটা ঘাটে যাতে হবে। রিকশা নিয়ে রওনা দিলাম। মাঝপথে আরেকজনের কাছে ক্লু পেলাম।
সেইটা নিতেই বুয়েটের সেকন্ড টিমটার সাথে দেখা হয়ে গেলো। দুই টিম একসাথে নৌকা ভাড়া করলাম।
নৌকা নিয়ে এবার আবার যাত্রা। এবার লক্ষ্য হলো আর একটা অজানা ঘাট। নৌকাচালককে বুঝায় বলতে যথেষ্ট বেগ পেতে হলো।
আমরা নৌকা ভাড়া করে যখন তীর থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি, তখন দেখি আরেকটা গ্রুপ তীরে এসেছে মাত্র। আমরা তো খুব খুশি। ওই গ্রুপকে আনন্দের সাথে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হলো। কিন্তু একি! আমাদের নৌকা যে পাবলিক বাস! একটু পর পর একটা করে ঘাটে থামছে আর মানুষ নামায় দিচ্ছে।
একটু পর দেখি আমাদের সামনে অন্যান্য গ্রুপের দুই দুইটা নৌকা চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত যখন আমরা আমাদের ঘাটে পৌছালাম, ততক্ষণে আমাদের পেছনে মাত্র একটা টীম!!
ঘাটে উঠে একটা মাত্র চায়ের দোকান। তার পাশে কিছু গাছ, পাশে একটা রাস্তা। এ ছাড়া আর কিছুই নাই। এইবার? কোত্থেকে ক্লু পাবো? দোকানটাকে সন্দেহ হলো। গিয়ে দেখি, হুম, ঠিকই। ওখান থেকে পরের ক্লুটা পেলাম। ডিকোডিং করে আবার কিছু হাবিজাবি কথাবার্তা। ত্রিশকটের কথা লেখা। চিন্তায় পড়ে গেলাম, এইটা কি? আশেপাশে তাকায় দেখি ...ইউরেকা!! রিকশা।
কিন্তু যে রিকশাটার দিকে তাকায় এই অভূতপূর্ব আবিষ্কার- তাতে করে আমাদের সাথে আসা অন্য টিমটা চলে যাচ্ছে,...এবং সেইটাই শেষ রিকশা। এখন?
ঘাটে আমরা, দোকানদার আর দুই একজন মানুষ ছাড়া আর কেউ নাই। অন্য রিকশা দূরের কথা। হতাশ হয়ে সামনের দিকে হাটা শুরু করলাম। এই সময় পেছনের একমাত্র টিমটাও আমাদের পাস করে গেলো। তেরটা টিমের মাঝে আমরা লাস্ট!
একটু সামনেই একটা বাজার। ওইখানে গিয়েও লাভ হলো না। একটা দোকানে বসে চারজনে মিলে আরসি খাচ্ছি, এইসময় হঠাৎ কোত্থেকে একটা ট্যাক্সি দেখা গেলো! গ্রামের রাস্তায় ট্যাক্সি! আমাদের ঠিক বিশ্বাস হতে চায় না, তাও পড়িমরি করে দৌড়...কিন্তু, কাছে গিয়ে আমাদের উৎসাহ ফাটা বেলুনের মত ফুটুস। লোক ভর্তি। জিজ্ঞাস করলাম, বলে উনারা ঢাকা যাবেন। মানে আমরা যেইদিকে যাবো তার ঠিক ঊল্টাদিক।
বারবার করে বলে দিলাম যদি পথে কোনো ট্যাক্সি পায় অবশ্যই যেন পাঠায় দেন।
আমরা হতাশ হয়ে আবার ফিরে বসে আছি। একটু পর দেখি ট্যাক্সিটা ফিরে আসছে!! এও কি সম্ভব! দেখি লোকগুলা নেমে বলতেসেন আপা আপনাদের তাড়াতড়ি যেতে হবে বুঝতে পারসি, আমাদের পরে গেলেও চলবে। আপনাদের নামায় দিয়ে ট্যাক্সিটা আমাদের নিয়ে যাবে।
আমরা কিভাবে যে ধন্যবাদ দিবো...মানুষ এত ভালও হয়?? এই রকম কাজে মুখে ধন্যবাদ দেয়া সম্ভব?? কোনমতে ধন্যবাদ দিয়ে ট্যাক্সিতে চড়ে বসলাম। এইবার শুরু হলো আসল কাহিনী।
ট্যাক্সিআলা বোধহয় পূর্বজন্মে রোলার কোস্টারের ড্রাইভার ছিলো, তিনি আমাদের কে নিয়ে মোটামুটি আলোর গতিতে উড়ায় নিয়ে চললেন। পেছনে তিনজন, আর ড্রাইভারের পাশের সিটে আমি। পেছনের তিনজন আনন্দের সাথে গল্প গুজব করছে, আর আমি দাত কপাটি লাগা অবস্থায় দুই হাতে সিট খামচায় ধরে বসে আছি। দুই পাশে নদী বয়ে গেছে, মাঝখান দিয়ে সরু একটা রাস্তা, সেই রাস্তায় আমাদের ড্রাইভার রোলার কোস্টার চালাচ্ছেন। কোনো মতে যদি একটু এদিক ওদিক হয় তাহলেই...দাতে দাত কামড়ে আমি সামনের দিকে তাকায় স্টিফ হয়ে বসে আছি।
তবে সেইদিন উনার রোলার কোস্টার চালানোর মাযেজা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। আমরা রওনা দিয়েছিলাম সবার শেষ দল হিসেবে, রোলার কোস্টারের কল্যাণে একে একে দলগুলাকে পেছনে ফেলে আমরা পাঁচ নম্বরে এসে গেলাম। ক্লু অনুযায়ী নামতে হবে একটা স্কুলের মাঠে। নেমে যখন ভাড়া দিচ্ছি তখন দেখি বুয়েটের অন্য টিম, রিকশার ভাড়া মেটাচ্ছে। আমরা কোনদিকে না তাকায় আবার দৌড়। কিন্তু গিয়ে দেখি এটাই শেষ না, এরপর আবার কিছুদুর নৌকা, তারপর আমাদের ডেস্টিনেশন। নৌকায় উঠলাম। ওইপারে গিয়ে দৌড়। কোনমতেই যেন ওই গ্রুপ আমাদের আগে পৌছাতে না পারে।। দুই গ্রুপই নিজেদের কান্ড দেখে হাসাহাসি করছি, আর সমান তালে দৌড়াচ্ছি। লাস্ট পর্যন্ত আমরাই জিতলাম। আগে পৌছালাম। কিন্তু তারেক ভাই সেটা কিছুতেই স্বীকার করবে না। যাই হোক, আমরা পাঁচ নম্বর হলাম আর উনাদের ছয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো।
এর পরের দুইটা দিন খুব মজায় কেটেছিলো। আমি ভালো লিখতে পারিনা বলে এখানে শুধু যাত্রাপথটুকুই বলতে পারলাম। আমি এর আগে কোন ট্রেনিং ক্যাম্পে যাই নাই। সেইবার যে মজাটা পেয়েছিলাম, সেটা সারা জীবন মনে রাখতে হবে বোধহয়। বিশেষ করে ক্যাম্প ফায়ারের রাতে হঠাৎ আকাশে তাকিয়ে লক্ষ লক্ষ তারা দেখার যে অনুভূতি- এটা মনে হয় কোনো দিনও ভুলতে পারবো না।

..........................
ঘুড়ি


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

আমি যখন আইডিয়ালে পড়তাম তখন অতি উৎসাহে যোগ দিয়েছিলাম স্কাউটিং এ। কিন্তু বাবা মার কঠিন শাসনে থাকায় কোন ক্যাম্পেইন কিংবা জাম্বুরি কিছুতেই যাওয়া হয়ে উঠেনি। অতঃপর ক্যাডেট কলেজ, আইইউটি...স্কাউটিং তা আর করা হলো না।
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

শিক্ষানবিস এর ছবি

একেবারে এপিক জার্নি দেখা যাচ্ছে! কজনারই বা এমন অভিজ্ঞতা হয়!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ভালো
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা!
দ্য ক্রিস্টাল মেইজ!
ভালো লেগেছে ।

অমিত আহমেদ এর ছবি

সাহিত্য না করে রাইট টু দ্য পয়েন্ট কাহিনীর বর্ণনা ভাল লেগেছে। আপনাদের ক্যাম্প ফায়ারের গল্পটাও শোনান। স্কাউটিং আমিও করেছি, সে কথা মনে পড়লো... গুড ওন্ড ডেইজ।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

মাহবুবুল হক এর ছবি

সাহিত্য না করে রাইট টু দ্য পয়েন্ট কাহিনীর বর্ণনা ভাল লেগেছে।

অমিতের কথার সাথে একমত হতে পারলাম না। লেখকের অভিজ্ঞতা পড়ে মনে হল বেশ মজা করে লেখা যেতো এমন ঘটনা। একটু সাহিত্য করতে পারলে, মানে রস জুড়ে দিতে পারলে, দারুন হতো। হবে হবে, সচলায়তনে লিখতে লিখতে হাত খুলে যাবে।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমি আপনার সাথে একমত হলাম।
তবে আমি যা পয়েন্ট আউট করেছি তা হলো, লেখিকা নিজের সীমাবন্ধতা জানেন, এবং সে ভাবেই লেখাটা লিখেছেন। সাহিত্য করতে গেলে বরে শাপ হতো।
লিখতে লিখতে হাত খুলে যাবে সন্দেহ নেই।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

স্বপ্নাহত এর ছবি

স্কাউটিং এর কথা শুনে আবার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আমরা যেবার ক্যাডেট কলেজ এ ঢুকলাম সেবারই একটা স্কাউট জাম্বুরীতে যাবার সুযোগ সামনে এসেছিল।এমনকি গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনরে তেলাইয়া তেলাইয়া ক্যাম্পিং এর জন্য বাশ জোগাড় করেছিলাম।সেই বাশ প্রায় একমাইলের মত কাঁধে বয়ে নিয়ে আসতে হইসিল।
কাঁধের ব্যাথাটা ঠিকই রয়ে গিয়েছিল মাগার ক্যাডেট কলেজে ক্লাস আগেই শুরু হয়ে যাওয়ায় শেষমেষ আর জাম্বুরিতে যাওয়া হয়নি মন খারাপ

যাই হোক লেখা ঝাক্কাস হইসে।শুভ শ্রীঘ্রম সচলায়তন(এইটা কিছু হইলো কিনা জানিনা।বুঝে নিয়েন কি বলতে চাইসি চোখ টিপি )

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রায়হান আবীর এর ছবি

ব্যাপার না, নেক্সট টাইম...
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

রায়হান আবীর এর ছবি

ক্যাম্পফায়ারের বর্ণনা চাই...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।