ঢাকা কত দূর?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৪/২০০৮ - ১০:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঢাকা কত দূর?

কাজের ফাঁকে সময় পেলেই আমি গুগল আর্থে ঘুরে বেড়াই। চলে যাই প্যারিস থেকে দিল্লী, ডেনভার থেকে ঢাকা। ঘুরতে ঘুরতে একদিন খুঁজে পেলাম, আমার বাসা, মানে হাজার মাইল উপর থেকে তোলা আমার বাসার একটা উপগ্রহ চিত্র। সাথে সাথে পিন করে ফেললাম। ছবিটা দেখে, যেন কি হল- মনে হল ঢাকা যাওয়াটা আমার বড্ড বেশী দরকার। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম দেশে যাব।

কিন্তু, দেশে যে যাব, টিকেট এর টাকা যোগার করি কিভাবে? দেশ ছাড়ার আগেই ঠিক করেছিলাম, নিজের টাকায় টিকেট করতে পারলেই কেবল যাব, নয়তো নয়। সেজন্য ফিরতি টিকেটটা ফেলে দিয়েছঈলাম বহু আগেই। কি করি এখন?
একটা সহজ সমাধান অবশ্য আছে, ক্রেডিট কার্ড , সেক্ষেত্রে পরের সেমেস্টারের টুইশান ফি নিয়ে ঝামেলায় পরতে হবে।

কি করা যায় ভাবি আর অন্তর্জালে টিকেত খুঁজে বেড়াই। টিকেটের দাম দেখে আরেক দফা ভিম্‌রি খাই। নিজ়েকে গালি দিই কেন নিজ়ের পয়সাতে দেশে যাবার জেদ ধরেছিলাম!!

এমন সময় ভাগ্য সাহায্য করল। অফিস থেকে ফিরছি, পিছনের গাড়িটা মারল ধাক্কা। লটারি জেতেও মানুষ এত খুশি হয়না, যতটা আমি হলাম অ্যাকসিডেন্ট করে। পিছনের গাড়ির ইন্সুরেন্স থেকে পাওয়া টাকার সাথে কিছু নিজের পকেট শুন্য করে কিনে ফেললাম ঢাকার টিকেট। কিনেই ঢাকাবাসীকে জানানোর দায়িত্ব দিয়ে দিলাম, Voice of Viqqi (ভিকারুন্নেসার কন্ঠ) খ্যাত বন্ধুকে।
সাথে সাথে আমার ইনবক্স ভরে ঊঠল নানা বাজারের লিস্টিতে। টিকেট কেনার সময় খেয়াল কেনাকাটার খরচটা মাথায় আসেনি। ই-চিঠিতে কাজ হছে না দেখে বন্ধুরা মুঠোফোনে বার্তা দিল... “কিরে, তুই এমন কিপ্‌টা হলি কবে থেকে...”
উত্তর দিই না, আমেরিকান গরীবের দুঃখ বঙ্গবাসীকে বুঝানো দায়।

শুকনো মুখে টিভির চ্যানেল ঘুরাই আর মেইল চেক্‌ করি। হঠাত দেখি বুশ বাবাব্র চিঠি , অর্থনীতি মোটাতাজা করনের জন্য সকল করদাতাকে কিছু টাকা দেয়া হবে। আমাকে আর পায় কে সাথে সাথে ছুটলাম মলে। দেখতে দেখতে আমার ঘরের আনাচে কানাচে ভরে উঠলো নানা উপহার সামগ্রীতে।
এরমধ্যে আইটেনারি (ই-টিকেটের বিবরণ) হাতে চলে এসেছে, একটু পর পর খালি আইটেনারিটা দেখি আর দেশে যাওয়ার দিন গুনি। কম্পিউটার খুললেই উইন্ডোজ ক্যালেন্ডার বলে আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকী। Snooze ই দিয়ে রাখি, একটু পর পর দেখতে ইচ্ছা করে শুধু।

সামনে ফাইনাল পরীক্ষা, পড়াশোনা করা হয় না। ভাবি , দেশে তো যাচ্ছি, একটাতে B পেলে কি আসে যায়। দু ঘন্টা পর একটা পরীক্ষা আছে, এখনো আরও তিনটা চ্যাপ্টার বাকী... বই খুলে বসে থাকি, আর ভাবি, ঢাকা কতদূর?

-অপরিচিতা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশে যাবেন ভালো কথা, এটা এত ঘটা করে বলার দরকার কি? আমাদের বুঝি দেশে যেতে ইচ্ছা করে না?রেগে টং
~রেনেট

তানভীর এর ছবি

বুশ বাবার চিঠি আরো অনেকেই পাইছে শুনছি, আমি তো এখনো পাই নাই! চিন্তিত

=============
"আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম"

অমিত এর ছবি

এই সময়টা খুবই আনন্দের। মনে হয় কোনকিছুই ব্যাপার না।
তবে ট্যাক্সের টাকাটা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত বাজারে যাওয়াটা ঠিক হয় নি। আর বাংলাদেশের স্টুডেন্টরাও তো এবার শুনলাম অনেক ট্যাক্স রিটার্ন পাবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢাকা অনেক দূর।
আর সহ্য হচ্ছে না!

দ্রোহী এর ছবি

আপনি কত ভাগ্যবান! আমি মাঝে মাঝে গোপনে গুগল ম্যাপ খুলে বাসার ছাদটা দেখি। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলি।

ট্যাক্সের টাকাতো এখনো পেলাম না। ক্রেডিট কার্ডের এ.পি.আর ফ্রি শেষ হয়ে আসছে।

বালের জীবন আমার!


কি মাঝি? ডরাইলা?

অপরিচিতা এর ছবি

রেনেট : আমার আনন্দটা সচলদের সাথে ভাগ না করে পারলাম না। অনেক সাহস করে পোষ্ট করলাম।

তানভীর : বুশ বাবার চিঠি কেবল হতদরিদ্রদের জন্য। আপনি সে দলে নাই মনে হয় চোখ টিপি

অমিত : জানিরে ভাই, কিন্তু কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারলাম না।

দ্রোহী : ডাইরেক্ট ডিপজিট করে থাকলে , মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাওয়ার কথা। আর কটা দিন একটু কষ্ট করে চালিয়ে নিন না হয়।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

গুড লাক!

তানভীর এর ছবি

না রে ভাই, বুশ আব্বার চিঠি মনে হয় শুধু ভাগ্যবানদের কাছেই গেছে চোখ টিপি আমার বসেরাও পাইছে, খালি আমি পাই নাই মন খারাপ

এখন আমার ট্যাক্সের টেকা আইলেই হয়।

আপনার ঢাকা যাত্রা শুভ হোক।

=============
"আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম"

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ঢাকা বোর্ডবাজার থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার। দেঁতো হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

কনফুসিয়াস এর ছবি

ইস! এইসব কেন পড়তে হয় আমারে!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সবজান্তা এর ছবি

কি আনন্দ তাই না !

তবে আগাম অভিনন্দন, দেশে কিন্তু মারকাটারি লোডশেডিং আর তার চেয়েও চমৎকার গরম !
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

খেকশিয়াল এর ছবি

আহা কি মজা ! আমাদের জন্য কি আনতেসেন ? দেঁতো হাসি

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ইয়োরোপ ধরে গেলে, জার্মানীর পাশ্চাত্যভাগ থেকে কৈ মাছের দোপেয়াজা'র দাওয়াত থাকলো।
একদিনই রানছি, খারাপ হয় নাই। দেঁতো হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অপরিচিতা এর ছবি

ধন্যবাদ ধূসর গোধুলি। কদিন ধরে খুব ঢাকাই জিলাপি খেতে ইচ্ছা করছে এখন তার সাথে কই মাছও যুক্ত হল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।