মা তো মা-ই

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১২/০৫/২০০৮ - ৮:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-নিরিবিলি

মাকে কখনও নিরাস হতে দেখে নি।সবসময় ছোট্ট হাসিটা মুখে লেগেই থাকতো।হতাশায় আমাদের চোখে পানি অথচ মা এমন আশার বাণী শোনাবে যেন সবকিছুই মায়ের হাসিতে সহজ।মা আমার কাছে মা কম বন্ধু বেশী।এত্ত গুন মায়ের!যা ধরে তাই-ই সুন্দর হয়ে যায়।মায়ের কোন গুন আমি পাই নাই।ছোটবেলা থেকেই এই অসামাণ্য গুনের অধিকারী মানুষটির অনেক কিছু অনুকরন করেছি।কিন্তু যা লাউ তাই কদু।কোন দিন মায়ের মতো করে কিছু করতে পারি নি।আচ্ছা,মা তুমি কিসের তৈরী কেন আমি তোমার মতো করে কিছু
করতে পারবো না?মা বলতো বড় হও মা পারবা।আজ বড় হতে হতে অনার্স থার্ড ইয়ার মায়ের ছিটা ফোঁটাও পারি না।

মনে পড়ে,রাত জেগে যখন পড়তাম ভয় পাবো বলে মা রাতের পর রাত পাশে বসে থাকতো।কই মায়ের কতো জ্বর এসেছে আমি তো একদিনও রাত জাগি নি।মাও দেয় নি রাত জাগতে।কেন পারি না মায়ের মতো করে মায়ের যত্ন করতে?মনে হয় মায়ের মতো আত্নত্যাগী আমরা হতে পারবো না।ছোট বেলায় কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো বড় হয়ে কি হতে যাও?উত্তর আমার সব সময় রেডি থাকতো।মায়ের মতো হতে চাই।তখন কি আর জানতাম সব পারলেও আমি মায়ের মতো হতে পারবো না।
TARC-এ রেসিডেন্সিয়াল সেমিস্টার দুই মাসের জন্য শুধু আম্মুর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।প্রথম এক সপ্তাহ খুব খারাপ লাগত।এমন না যে আমি আম্মু কে ছাড়া কখনও থাকি নাই।বলতে গেলে জীবনের প্রথম পাঁচ বছর আম্মুকে ছাড়াই
কাটেছে।নানুর কাছেই থেকেছি বেশী।প্রথম এক সপ্তাহ আম্মু দিনে তিন-চার বার ফোন করতো।শেষ দুই দিন খুব ভারী লাগতো আম্মুর গলা।দ্বিতীয় সপ্তাহে একদিন অনেক রাতে(দুইটারদিকে)মোবাইল বাজতে থাকে।আম্মুর ফোন দেখে খুব চিন্তায় পরে যাই।আমার ছোট বোনটা বলতে থাকে "আপু,আম্মুর জন্য দোয়া করিস খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিছুতেই স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না।ডাক্তার বলেছে নিউমোনিয়া খুব বাজে ভাবে ধরেছে।"

মাকে ছাড়া কোন দিন কাটাতে হবে সেদিন-ই প্রথম ভাবতে পেরেছিলাম।আমরা তিন বোনই মায়ের খুব ভক্ত।সেদিন রাতে অনেক কিছু একসাথে চোখে ভাসতে থাকে-স্কুলে ফ্রেন্ডদের মধ্যে সবাই বলতো বাবা বেশী আদর করে তখন খুব গর্বের সাথে বলতাম আমাকে আম্মু বেশী আদর করে।...প্রতি শীতে মায়ের পিঠা বানানো...ঘুম না আসলে গল্প শুনানো...যেভাবেই হোক বোনদের আবদার
মেটানো...প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর তিন বোনের মাথায় ফুঁ দেয়া...একসাথে কেরাম,দাবা,লুডু খেলা...আমাদের শাসন করতে করতে হেসে দেয়া...রেগে গেলে কাছে এসে বুঝানো,মাথায় হাত বুলিয়ে কি যে যাদু করতো আল্লাহ-ই
জানে...প্রতি জম্নদিনে ছোট্ট কিছু জিনিস উপহার দিতো।ক্লাস এইটে আম্মুর দেয়া এরকমই একটা চিরুনী আমি ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে আমি হারিয়ে
ফেলেছিলাম।চিরুনী হারিয়ে সেদিন আমি আর ঘুমাতে পারি নি। আম্মু সারাদিন অফিস করে রাতে রান্না করতে হয় কারণ ছিল একটাই আমরা
তিন বোন কিংবা বাবা কেউ ই আম্মুর রান্না ছাড়া খাবো না।
TARC-এর সেই রাত আমি কোন দিন ভুলবো না।যে রাতের প্রতিটা মুহুর্ত ছিল আতংকের,ভয়ের।মা আমার কাছে ছিলো না ঠিকই কিন্তু বার বার মায়ের যন্ত্রণা আঁকা মুখ ভেসে উঠেছিল আমার সামনে।কতগুলো অসহায় মানুষের একজন মনে হয়েছিল নিজেকে।মা বলে কেউ থাকবে না...মামনি বলে কেউ আমাকে ডাকবে
না একথা মনে আনতে ইচ্ছা করছিলো না। মনে হয়েছিল আজকের আমি পুরোটাই মায়ের অবদান।মা না থাকলে আমার কোন অস্তিত্ব-ই থাকতো না।সেদিন প্রার্থনা করেছিলাম এমন দূর্ভাগা করো না আল্লাহ । যে মা কোনদিন একা হতে দেয় নি সে মায়ের শেষ মুহুর্তে আমি কাছে থাকতে পারবো না!

আমার দোয়া সেদিন কবুল হয়েছিল।সৌভাগ্যবান বলেই হয়ত আজ আমি মাকে মা বলে ডাকতে পারি,mother's day তে wish করতে পারি।মাকে নকল করতে পারি।মা আমকে কাছে টেনে বলতে পারে আমার মেয়ে একদিন বিশ্ব
জয় করবে।বিশ্ব বিজয়ী হয়ত হবো না,নিতান্তই সাধারণ মানুষ হয়ে রয়ে যাবো।কিন্তু বিধাতার কাছে এই মিনতি থাকবে-সেই রাতের অভিজ্ঞতা তুমি
কাউকে দিও না।প্রতিটা সন্তানের যেন তার মায়ের শেষ মুহুর্তটুকুতে কাছে থাকার সৌভাগ্য হয়।

বিধাতা মাকে তুমি মা করেই রেখেছ,তাঁর সাথে তুলনার যোগ্য কিছু বানাও নি।মা তো মা-ই যিনি সব উপমার উর্ধ্বে।তবুও ইচ্ছে করে চিৎকার করে বলি,যে মাকে অসহায়ের সহায় করে পাঠাও সেই মাকে চিরকাল কাছে পাবার অধিকারটুকু কেন দাও না?

safina901@yahoo.com


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার মতো করেই বলি, ওই রাতের অভিজ্ঞতা যেন কাউকে না পেতে হয়! তারপরও, (দীর্ঘশ্বাস) চাইলেই কি সব এড়ানো যায়!
সুন্দর লিখেছেন। আপনার মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।সব মা যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
-নিরিবিলি

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আপনার মাকে মনে হলো অনেক দিনের চেনা সেই চিরকালীন মা। ভালো লাগলো লেখাটা।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মা আসলেই চিরকালীন মা।

রায়হান আবীর এর ছবি

হুম...

---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

অতিথি লেখক এর ছবি

তোরে আর কি বলব...সুন্দর লিখছিস। সব মাই যে কেন একই হয়, ভালো হয়ে আমাদের ঝামেলায় ফেলে দেয়।
..........................................
ঘুড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

ঝামেলা মানে...মাইরা ফালায়
-নিরিবিলি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাঁ মা তো মা-ই............

আমাদের বেঁচে থাকাতে তাদের অবদান অপরিসিম। কিন্ত আমি বুঝতে পারিনা একজন মায়ের সন্তান হয়ে কিভাবে একজন নারীকে অপমান করতে পারে!

..........................
অক্ষর

অতিথি লেখক এর ছবি

চিন্তার বিষয়...।
-নিরিবিলি

শামীম হক এর ছবি

বেশীরভাগ সময় মায়েদের আত্মত্যাগের কথা আমাদের মনেই থাকে না! মন ছোঁয়া লেখা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ
-নিরিবিলি

নন্দিনী এর ছবি

আপনি নিজে মা হলেই বুঝতে পারবেন সব..তখন সতি্য সতি্য ্দেখবেন আপনি নিজেও মায়ের মত হয়ে গেছেন ।

নন্দিনী

পরিবর্তনশীল এর ছবি

মা!

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।