যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : একটি প্রস্তাব।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৪/০১/২০০৯ - ৫:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শান্তি লাগছে এই দেখে যে এত বছর পর এই দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে প্রকাশ্যে এবং গণহারে কথা বলছে/বলতে পারছে। গত তিন দশকে কখনো এরকম গণসচেতনতা দেখা যায়নি। আর এই সুযোগে আমাদের 'যোগ্যতম বীর উত্তম' এর সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে নতুন
প্রজন্মকে এ ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। আশার কথা,দেরিতে হলেও অবস্থা বদলেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে, বিশেষ করে সেক্টর কমান্ডার'স ফোরামকে, সাধুবাদ।

আজ সুযোগ এসেছে ভুল শুধরানোর। যদিও এরই মধ্য অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। অনেক সাক্ষী মারা গেছেন, অনেক প্রমান নষ্ট হয়ে গেছে/করা হয়েছে, লোকের স্মৃতি ফিকে হয়ে এসেছে। তার চেয়ে বড় বাধা - অনেক জাতীয় ইস্যুকে আওয়ামী লীগের দলীয় ইস্যু হিসেবে রূপ দেয়া হয়ে গেছে। অনেক জাতীয় বিষয়কে আওয়ামী লীগের দলীয় ব্যাপার হিসেবে সফলভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগও ভুল ভাঙার চেষ্টা করেনি। উদাহরণ : যে শ্লোগান মুখে নিয়ে এ জাতির জন্ম (জয় বাংলা) , তা এখন শুধুই আওয়ামী লীগারদের দলীয় শ্লোগান। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ একা বেজন্মাগুলোর বিচার করতে গেলে, এই উদ্যোগকে নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা চলবে, এবং তাতে দেশী বিদেশী ইন্ধনদাতাও পাওয়া যাবে। যা ঠিকমতো সামাল দিতে না পারলে সবকিছু ভেস্তে যেতে পারে। আবার বিচারে শাস্তি হলেও ভবিষ্যতে কোন 'জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রপতি' এসে বিজয় দিবসে বা স্বাধীনতা দিবসে এদের ছেড়েও দিতে পারে। মান্যবর বিচারকদের বিব্রত হওয়ার কথা নাহয় না-ই ভাবলাম।

তাছাড়া, দেশ ও জাতি - আসলে সমস্ত পৃথিবী আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সব বাঘা বাঘা অর্থনীতি একের পর এক ধরাশায়ী হচ্ছে। ঠেকা দিয়েও ধরে রাখা যাচছে না। এক দুর্ভিক্ষ গত বছর কানের
পাশ দিয়ে চলে গেছে। দ্রব্যমূল্যে মানুষের নাভি:শ্বাস উঠেছে, সারের দামে কৃষক দিশেহারা। সার সংকটে ফলন কম হওয়ার আশংকা। আর এতসব হচ্ছে পর পর দুটো বন্যা এবং সিডরের তান্ডবের পর। অন্যদিকে বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন পড়ে যাওয়ার আশংকা। এর সাথে যোগ হয়েছে রেমিট্যান্সের অধঃমুখী প্রবনতা। সঙ্গত কারনেই অর্থনীতিই এই মুহূর্তের অগ্রাধিকারের দাবীদার।

সর্বোপরি,যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার পরিপূর্ণ রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঙ্গতি নিয়ে একেবারে নিশ্চিন্ত হওয়াও মুশকিল। আবার, যে সুযোগ এসেছে,তা নষ্ট করা যাবে না। এটাই শেষ সুযোগ।

এ অবস্থায় আমার প্রস্তাব :চলুন আমরা আমাদের নীতি নির্ধারকদের বোঝাই তারা যেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি হেগ এর আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের মাধ্যমে করে এবং এদিক থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। এতে করে একদিকে যেমন ভুল বিবর্জিত এবং অবিতর্কিত একটা বিচার নিশ্চিত করা যাবে। অন্যদিকে নতুন সরকার সমস্ত শক্তি নিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল করতে নিয়োজিত হতে পারবে।

বকলম


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আপনি আরো শান্তি পাবেন এ জেনে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে একাধিক আইন রয়েছে। হেগে পরে গেলেও চলবে।

পড়ুন এখানে।

2009_01_03 nirmul com


হাঁটুপানির জলদস্যু

কবি এর ছবি

জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্ত প্রস্তাবই অনেক বেশী মনে হয়েছে সেখানে হেগ এর কথা বোধকরি না ভাবলেও চলবে।

আবির আনোয়ার এর ছবি

বিদ্যমান আইনে কোন জটিলতা না থাকলে এবং রাজনৈতিক প্রভাব না খাটালে এটি দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
অফটপিকঃ
বঙ্গভবন সূত্র এ নিশ্চিত করেছে মইত্যা এন্ড গং কে মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হবে না।

লিংক
http://www.prothom-alo.com/index.news.details.php?nid=MjEwMzQ=

ইরতেজা এর ছবি

আজকের প্রথম আলোতে একটা ভালো লেখা পরেছি

http://www.prothom-alo.com/mcat.news.details.php?nid=MTM0NzQ2&mid=Mw==
_____________________________
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই

_____________________________
টুইটার

বকলম [অতিথি] এর ছবি

১। হেগ এর ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাষ্টিস-ই হচ্ছে জাতিসংঘের বিচার সংক্রান্ত মূল অঙ্গসংগঠন।
২।আমি অবশ্য 'আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন' অধ্যয়ন করিনি।
৩।ভাবুনঃ যদি বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়, তার সদস্য কারা হবে? এদেশেরই মানুষ, যারা বিবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে, অথবা ঘৃণাপূর্ণ হবে। প্রথম ক্ষেত্রে সুবিচার পাওয়া যাবে না, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বিচারকের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠবে। মনে রাখতে হবে- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এদের দোসর এর অভাব নেই। এমনকি মানবাধিকারের ধারক, বাহক, রক্ষক এবং ভক্ষক বেজন্মা স্যাম চাচা প্রকাশ্যে অথবা গোপনে এদের পক্ষে থাকবে- একাত্তরে নিজেদের ভূমিকার কারণে।
৪।"মান্যবর বিচারকদের বিব্রত হওয়ার কথা নাহয় না-ই ভাবলাম।"
৫।ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাষ্টিস - এ যাওয়া কোনভাবেই আমাদের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে না।
৬।এটাই আমাদের শেষ সুযোগ। লেজে-গোবরে করার কোনো সুযোগ নেই।

আলমগীর এর ছবি

আপনি কি আইসিসির (International Criminal Court) কথা বলছেন? কোন কোন দেশ সেটাকে রেটিফাই করেছে? এখন পর্যন্ত কোন বিচারগুলো তারা করতে পেরেছে? তাদের রায় কি বাইন্ডিং না অপশনাল?

বকলম [অতিথি] এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সঠিক সূত্র ধরিয়ে দেয়ার জন্য। ঠিকই ধরেছেন, International Court of Justice কাজ করে দুটো দেশের মধ্যকার বিরোধ নিয়ে কাজ করে। এক্ষেত্রে International Criminal Court ই উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান। তবে যেহেতু এটা ২০০২ থেকে কাজ করছে, ১৯৭১ এর কোন ঘটনার বিচার অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আবার এটাও ঠিক, এ পর্যন্ত (সম্ভবত) সব যুদ্ধপরাধের বিচার হয়েছে যুদ্ধের পরে গঠিত কোন ট্রাইব্যুনালে।

আমি আমার অবস্থান থেকে সরে আসছি। বেজন্মাগুলোর বিচার মনে হয় আমাদেরই করতে হবে। এত বছর পর জাতিসংঘ মনে হয়না আমাদের প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল তৈরী করবে। তাছাড়া '৭১ এর গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্র accomplice ছিল।

খালি ভয় হয়.......

অতিথি লেখক এর ছবি

আমারতো মনে হয় না যে রাজাকারদের বিচার করার জন্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে যাওয়ার দরকার আছে। দেশের বিদ্যমান আইন ও আদালতেই এ বিচার করা সম্ভব। তবে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টা অবশ্যই আন্তর্জাতিক আদালতে নিতে হবে। রাজাকারদের বিচারতো করতেই হবে, না করলে তাদের (যারা করবে না) ছাড়া হবে না। লেট ইজ বেটার দেন নেভার। ধন্যবাদ।
(মহসীন রেজা)

একজন [অতিথি] এর ছবি

যেভাবেই হোক, আমি যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।

আজকের দৈনিক সমকাল এ এসেছে- জামাতের কাদের মোল্লা বলেছে - 'যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে যদি ভরাডুবি হত তাহলে আমাদের ১০ লাখ ভোট বাড়ল ক্যামনে?'
এটা কি সত্যি? সত্যি জামাতের ভোট বেড়েছে? কেউ কি নিশ্চিত করবেন বিষয়টা ?

রণদীপম বসু এর ছবি

এদের যে ভোটের হিসাব, সেখানে বিএনপি'র সমর্থকদের ভোটগুলো ধরেই তা দেখানো। ওগুলো বাদ দিয়ে দেখা যেতে পারে এই দেশে তাদের সমর্থন আদৌ কতো..

auto

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

হিমু এর ছবি

জামাত তাদের ভোট আলাদা করে গুণলো কোন ক্যাল্কুলেটর দিয়ে? আর গত সাত বছরে দেশের ভোটার সংখ্যা কতটুকু বেড়েছে?


হাঁটুপানির জলদস্যু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।