সাইড প্লিজ!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৭/০২/২০০৯ - ১:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাত্র জ্ঞান ফিরেছে এমন একজন লোককে জিজ্ঞেস করা হলো - "ভাই, আপনি অ্যাকসিডেন্ট করলেন কী করে?"
"তাতো জানিনা রে ভাই, মনে হয় সাইড দিতে গিয়ে.."
"মানে? ব্যাপারটা খুলে বলুন তো"
"ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। এমন সময় সামনে একজন লোক এসে পড়লো, তখন তাকে সাইড দিলাম। এরপর সামনে রিক্সা চলে এলো, সেটাকেও সাইড দিলাম। তারপর সামনে একটা ব্রিজ এসে পড়লো, দিলাম সাইড! এরপর আর কিছু মনে নাই!"

××××××××××××××××××××××××××

টানা ৩ দিনের কোনো এক ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম যমুনা সেতুর লাগোয়া যমুনা রিসোর্টে। বাংলোটাইপ ১৪/১৫ টা বাড়ি আর বাগান, রেস্তোরা, সুইমিংপুল, মিউজিয়াম, কনফারেন্স রুম ইত্যাদি মিলিয়ে খুব সুন্দর করে তৈরী করা একটা জায়গা (গলাকাটা বিল পরিশোধ করতে হয়)। সময়টা ছিলো ঘূর্ণিঝড় 'রেশমী'-র; সারাদেশে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। তাতে যেন যমুনার রূপ আরো খোলতাই হয়ে উঠেছে।

রিসোর্ট থেকে যেদিন ফিরব (তখনো বৃষ্টি চলছে) সেদিন খবর পেলাম, পিচ্ছিল হাইওয়ের কারনে সমস্ত দূরপাল্লার বাস কোম্পানি তাদের ট্রিপের সংখ্যা অর্ধেক করে ফেলেছে। সিরাজগঞ্জ-ঢাকা রুটের মাঝপথে যমুনা রিসোর্ট থেকে বাসে উঠবো বলে আমাদের সবাই তাই খালি সিট পাবে না। পথিমথ্যে কেউ নেমে গেলে তখন সিট পাওয়া যাবে।

সিট না পেয়ে আমার জায়গা হলো ড্রাইভারের পাশে বাসের ইঞ্জিনের ওপর। বসতে অসুবিধা হলেও জায়গাটা আমার পছন্দ হলো; কারন, এখানে বসে সামনে রাস্তা আর তার আশেপাশের সবকিছু বিনাবাধায় দেখা যায়। তার ওপর বৃষ্টির কারনে চারদিকে একটা সতেজ ভাব - রাস্তাগুলো একদম পরিষ্কার, ধূলাবালির চিহ্ণও নেই, হাইওয়ের দু'পাশে ফ্যাকাসে দেখতে যে গাছপালা থাকে, সেগুলোও যেন ঈদের নতুন সবুজ আর গাঢ় বাদামী পোশাক পরে আছে! আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারনে রাস্তায় লোকজনও কম। শুধু কিছুক্ষন পর পর অন্য বাস, ট্রাক কিংবা লোকাল বেবিট্যাক্সি বা রিক্সা দেখা যাচ্ছে।

"ওস্তাদ, সামনে বেবি!"
- আমার বাম পাশে বাসের হেল্পার, ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল। তাকিয়ে দেখি, আসলেই কিছু দূরে রাজধানী হতে বিতাড়িত একটা হলুদ-কালো বেবিট্যাক্সি রাস্তার মাঝখান দিয়ে ভটভট করে চলছে। খুব সমীহের সাথে সে আমাদের বাসকে ওভারটেক করার জায়গা ছেড়ে দিলো। কতক্ষন পরে হেল্পার আবার চ্যাঁচায় - " সামনে সোনারগাঁও।" এ্যাঁ, বলে কি! এখানে সোনারগাঁ কোথায়? লক্ষ্য করে দেখি, সামনে সোনারগাঁও কোম্পানির একটা বাস যাচ্ছে। কি ব্যাপার! এত বড় বাসটাও কি ড্রাইভার দেখে না?

ঢাকার লোকাল বাসের হেল্পাররা ট্রাফিক জ্যামের সময় এরকম ধারাভাষ্যে ড্রাইভারদের রাস্তার হাল-হকিকত জানায়, যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে। কিন্তু এই ফাঁকা রাস্তায় এসব রানিং কমেন্ট্রির দরকার কী? ড্রাইভারের দিকে তাকালাম - প্রৌঢ় একজন মানুষ; দেখে নেশাখোর বা ঘুমকাতুরেও মনে হচ্ছে না। দৃষ্টিও তো সোজা রাস্তার দিকে! এরই মধ্যে ব্যাটা হেল্পার চেঁচিয়ে যাচ্ছে - "ওস্তাদ, সামনে রিক্সা" কিংবা "সামনে মাইক্রো!" ড্রাইভারও একে একে সবাইকে পাশ কেটে পার হয়ে যাচ্ছে।

কতক্ষন পরে আবার - "ওস্তাদ, সামনে ডাইনে মোড়, উল্টাদিকে টেরাক আছে" ঠিকই সামনে রাস্তা ডানে মোড় নিয়েছে এবং উল্টোদিকে একটা ৫x৫=২৫ টনি ট্রাকও দেখা যাচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষন চলার পর হেল্পারকে জিজ্ঞেস করি - "কি ব্যাপার! ড্রাইভার সাহেবকে এতসব বলতে হয় কেন?" তার সোজা-সাপ্টা জবাব - "সারাক্ষনই তো বইস্যা রাস্তার দিকে তাকায়া থাকে; মাথায় কতকিছু চিন্তা চইল্যা আসে, তাই আওয়াজ দিই!" যুক্তিটা মন্দ না; তবুও কেমন জানি ভয় ভয় লাগে।

এভাবে ড্রাইভার একের পর এক বিভিন্ন যানবাহন, কতগুলো স্পিডব্রেকার আর অনেকগুলো ডানে-বামে মোড় পার হয়ে এলো। আস্তে আস্তে সময় কেটে যায়, আমার চোখ ঢুলু ঢুলু হয়ে আসে। একটু ঝিমোচ্ছিলাম, এমন সময় হেল্পার চিৎকার করে ওঠে -

"ওস্তাদ, সামনে ব্রিজ!!!"


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালোই তো, কৌতুকটাকে একটা বাস্তব রূপ দিয়েছেন।

ভাঙ্গা মানুষ [অতিথি] এর ছবি

বাস্তব রূপ দিলাম কোথায়! এটাতো আসলেই বাস্তব ঘটনা। সৃশ্টিকর্তার কী লীলাখেলা!

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম...
ভালোই।
(শব্দশিল্পী)

তানবীরা এর ছবি

হাহাহাহাহা

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ধুসর গোধূলি এর ছবি
কনফুসিয়াস এর ছবি
অতিথি এর ছবি

হা হা হা ...মজার হাসি

মুস্তাফিজ এর ছবি

হেল্পারদের এভাবে বলতে থাকার অনেকগুলো কারন আছে।
আমাদের দেশের প্রায় সব রাস্তাই দুইলেনের, একদিকে আসে আর একদিকে যায়। এখানে বড় গাড়ী যারাচালায় বেশিরভাগ সময় ডান দিকের ট্রাফিক খেয়াল করে চালায়। বাদিকের ট্রাফিক বা রাস্তার অবস্থা এবং পাশের গাছপালার দায়িত্ব সাধারনত হেল্পাররাই নিয়ে থাকে। তাতে চালকের সুবিধা হয়।

লেখাটায় মজা পেয়েছি।

...........................
Every Picture Tells a Story

ভাঙ্গা মানুষ [অতিথি] এর ছবি

মজা পেয়েছেন শুনে ভালো লাগলো... হেল্পারদের এভাবের বলার কারনগুলো বুঝেছি, কিন্তু তাই বলে ব্রিজ!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।