আমাজন -১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/০৪/২০০৯ - ৪:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাজন! আমাজন!! আমাজন!!!

auto

আমাজন নিয়ে প্রথম পড়ি তিন গোয়েন্দায়। ছোটবেলায় পড়ার সেই সময়টা আজো বেশ স্পষ্ট মনে আছে, কেমন একটা ঘোর ঘোর লাগতো ঐ বই দুইটা (ভীষণ অরণ্য - ১,২) পড়ার সময়। মনে হতো কিশোর, মুসা আর রবিনের সাথে আমিও আছি ( সেইরকম ক্লিশে একটা কথা হইলো, কিন্তু আসলেই মনে হইতো), আমাজন নদীতে ভেলায় ভাসতেছি একবার, তো একবার জঙ্গলে নাইমা যুদ্ধ করতেছি জাগুয়ার এর সাথে। ঐ বয়সে অবশ্য যেই তিন গোয়েন্দা পড়ছে, তার এরকমই মনে হওয়ার কথা।

যাই হোক, আমাজন এর সাথে প্রথম পরিচয় সেখানেই। আগ্রহ পাইছিলাম অনেক, কিন্তু তখন এত ঘাঁটাঘাঁটি করার সুযোগ ছিলো না সবকিছু নিয়ে, কারন নেট তো ছিলো না। তাও হাবিজাবি বই এ মাঝে মাঝে পাইতাম আমাজন এর কথা, গোগ্রাসে হজম করে ফেলতাম। এরমধ্যে একদিন আব্বুর সাথে নিউমার্কেট গিয়ে পায়া গেলাম একটা চরম বই, বিশাল সাইজের একটা ঝকঝকা সচিত্র আমাজনকোষ। ঐটা পড়তে পড়তে আর দেখতে দেখতে আমাজন কেমন আরো রহস্যময় হয়ে গেলো। ঐ মোহমুগ্ধতা আজও কাটে নাই, এখনো হুটহাট আমাজন নিয়ে দিবাস্বপ্ন জুড়ে দি, একদিন সত্যিসত্যি একটা ভেলা নিয়ে ভেসে পড়বো।

তো যেই আমাজন নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম, সেটা নিয়ে আরেকটু কচকচি করে নি, আপনারাও হয়তো আমার দলে চলে আসবেন। আমাজন বলতে মূলত দুইটা জিনিষ বোঝায় - আমাজন নদী, আর আমাজন জলঅরণ্য (রেইনফরেস্ট এর বাংলা জানি না, নিজেই বানিয়ে নিচ্ছি। আক্ষরিক করলে যদিও বৃষ্টিজঙ্গল হওয়া উচিত, কিন্তু আমার কাছে জলঅরণ্য নামটাই বেশী ভালো লাগছে)। শুরুটা নদী দিয়েই করি।

আমাজন নদী বেশীরভাগ দিক দিয়েই পৃথিবীর সবচাইতে বড় নদী। যেই পরিমান পানি এটার মধ্য দিয়ে বয়ে যায়, পরের আটটা নদী মিলায়েও সেই সমান হয়না। গোটা দুনিয়ার নদীপ্রবাহের পাঁচ ভাগের এক ভাগ এই একটা নদী দিয়েই বয়ে যায়। তবে একটা কথা আছে, আমাজন কিন্তু আসলে ঠিক একলা একটা নদী না, বেশ কয়েকটা নদীর মিলনে একটা সিস্টেম। আমাজনের শাখা-প্রশাখার মধ্যে নামকরা ম্যারানন, উকাইলি, রিও নিগ্রো, মাদেইরা ইত্যাদি।আমাজন এর শুরুটা হয় পেরুভিয়ান আন্দেস এর নেভাদো মিসমি নামের একটা তুষারশৃঙ্গ থেকে। ঐ তুষারগলা পানি সৃষ্টি করছে কারহুসান্তা নামে একটা ছোট নদীতে (ব্রুক) , যেটা গিয়ে পড়ছে রিও আপুরিমাক এ (যেটা কিনা আসলে রিও উকায়ালির একটা অংশ); আবার এইটা গিয়া পড়ছে ম্যারানন এ। এই ম্যারানন কে মোটামোটি আমাজন এর আম্মাজান বলা চলে। ম্যারাননের একটা অংশকে আবার ব্রাজিলিয়ানরা ডাকে রিও সলিমোস নামে। রিও সলিমোস আর রিও নিগ্রোর একটা জটিল ব্যাপার আছে, ছবি দিচ্ছি, তাইলেই ভালো বুঝবেন।

auto

এই দুইটা পাজি নদী পাশাপাশি অনেকদূর গেছে, কিন্তু মিশে নাই। কুচকুচা কালো যেটা, সেটা রিও নিগ্রো আর বালি বালি যেটা সেটা রিও সলিমোস।

যাই হোক, ফেরত যাই আমাজনে। এই নদীটা জন্মস্থান থেকে শুরু করে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পড়ছে আটলান্টিকে। নিচের ছবিটা হলো এই মুখটার, যেখানে আমাজন গিয়ে মিশছে মহাসমুদ্রে।
auto

আমাজন নদী জায়গায় জায়গায় প্রায় দুইশ কিলোমিটার চওড়াও হতে পারে। এত লম্বা নদী, তবু এই নদীর উপর কোথাও কোন সেতু নাই। একটা কারন এটার চওড়া হলেও মূল কারনটা অন্য। আমাজনের বেশীরভাগ জায়গাতেই তেমন কোন জনবসতি নাই, আর তাই সেতুর দরকারটাও তেমন পড়ে নাই।

আমাজন নদীতে কত প্রকার মৎস্যকূলীয় প্রাণী বসবাস করে সেটা এখুনি বলবো না, অরণ্য-নদী মিলিয়েই লিখবো। কাজেই এখন চলে যাই আমাজন জলঅরণ্যে (নাকি পানি-জঙ্গল??)।

আমাজন নদী যদি যদি সবচেয়ে বড় হয়, তো বনও পিছিয়ে থাকবে কোন বেদনায়? আমাজন হলো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জলঅরণ্য। এতটাই বড় যে গোটা পৃথিবীর অর্ধেক জলঅরণ্য আমাজন একাই। নয়টা দেশ আর প্রায় পৌণে দুই বিলিয়ন একর জুড়ে বিস্তৃত এই বন। প্রায় গোটা বছর জুড়েই বৃষ্টি হয় এই বনে (এইজন্যই তো নাম রেইনফরেস্ট!)। রেইনফরেস্ট এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমাজনের জঙ্গলও চাঁদোয়াকৃতি। এর মানে?এরমানে হলো লম্বালম্বি আমাজনকে ভাগ করা যায় বেশ কয়েকভাগে। সবার উপরের স্তরটা হলো প্রায় ১০০-১৫০ ফিট উঁচু লম্বা গাছের পাতা আর শাখা-প্রশাখা দিয়ে তৈরি শামিয়ানা।
auto
ছবিতে দেখেন, গাছগুলো এত ঘন যে মাটিতে সূর্যালোক পৌঁছায়ই না বেশীরভাগ জায়গাতেই, অসূর্যমস্পর্শা হয়েই থেকে যায়। মাটি আর উপরের এই সীমানাটার মাঝের জায়গাটাকে ভাগ করা যায় আরো কয়েকটি ভাগে, আর এই বিভিন্ন ভাগে দেখা যাবে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ। বিশেষ উল্লেখ করতে হচ্ছে দুই ধরনের উদ্ভিদের - লিয়ানা আর হেমিপিফাইট। লিয়ানা জীবন শুরু করে মাটিতে, আর এরপর গাছ পেঁচিয়ে উঠে যায় একদম চাঁদোয়া স্তরে। আর হেমিপিফাইট উল্টো, অর্থাৎজীবন শুরু হয় উপরে, আর পরে শুধুই অধঃপতন।

আজকে ব্যাকড্রপটা করে নিলাম, এরপরেই লিখবো আমাজনের জীববৈচিত্র নিয়ে। শুধু হালকা একটা ধারনা দিয়ে রাখি, পৃথিবীতে যত রকমের প্রাণ আছে, তার তিনভাগের একভাগের দেখা মিলবে শুধু এই আমাজনেই। আজ এখানেই থামলাম।
-------------------------------------------------------------------------
ভুতুম


মন্তব্য

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

মজা পেলাম অনেক..... রেইনফরেষ্টকে একটা নাম দিয়ে যাই আমিও, 'বাদলাবন', এইটা ক্যামন হলো?

তথ্যবহুল লেখার জন্য ধন্যবাদ!
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

বড়ই সৌন্দর্য হইছে নামটা।
আর ধন্যবাদ আপনারেও।

আকতার আহমেদ এর ছবি

লেখা ভাল্লাগসে "ভুতুম"!

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

খুব খুশী হইলাম। ধন্যবাদ।

আসিফ আসগর এর ছবি

চমৎকার লাগলো। চলুক
সাগ্রহে অপেক্ষা করছি পরবর্তী অংশের জন্য।

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ। আমিও ধান্দায় আছি তাড়াতাড়ি লিখে ফেলার।

সিরাত এর ছবি

আহ, রিও নিগ্রো আর সলিমোস এর অংশটা হেভি লাগলো মিয়া! কি কান্ড! কি দুনিয়া।

এরল লিংকন উইস এর ব্রাজিল পড়তেছি, আমাজনের নানা ট্রাইব নিয়ে প্রথম দুই চ্যাপ্টার। সেরকম একখান বই!

লিখতে থাকো!

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

এককাজ করেন না, আপনি ট্রাইব গুলা নিয়ে লিখে ফেলেন একটা। আমাজনের জনবসতি নিয়ে আমার ভালো আগ্রহ আছে, কিন্তু জানার পরিধি একটু ভাসা ভাসা। তবুও চিন্তা করছিলাম যে লিখব, কিন্তু আপনি লিখলে তো আরো জোস হয়!

সিরাত এর ছবি

তুমিই লেখো আগে। আমি গ্যাপ প্লাগ ইন করুম লাগেল। বেশি টপিক হাতে মিয়া!

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

হেহে, এইটাও অবশ্য ঠিক। ড্রেক নিয়ে লেখাটা দেন তাড়াতাড়ি।

সিরাত এর ছবি

ওই মিয়া মাইনষেরে মনে করাও কিল্লাই? সবুরে মেওয়া ফলে!

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

খাসা হয়েছে, চালাও হে
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

খাসা বলে তো খুশী করে দিলেন। ধন্যবাদ।

সিরাত এর ছবি

এই লেখাটার নাম হওয়া ছিল 'পাজি নদী'। তাহলে ফাটাফাটি হতো। দেঁতো হাসি

মুস্তাফিজ এর ছবি

ভুতুমের জ্ঞান তো দেখা যায় অনেক!! লেখাটাও ভালো হইছে

...........................
Every Picture Tells a Story

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

মুস্তাফিজ ভাই, অনেক ধন্যবাদ। আর জ্ঞান - হেহ্ হেহ্ হে। আমি জ্ঞানী এই কথাটা আমার আম্মাও বিশ্বাস যাবে না।

সিরাত এর ছবি

আম্মাগো সাক্ষী রাখো কেন মিয়া? নিউটন আইনস্টাইনের আম্মারাও বাচ্চাগো বেত্তমিজ গাব মনে করতো। আমি কইলাম তুমি বেশ জ্ঞানী, যাও! চোখ টিপি

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

আমার আম্মার একটা ফেভারিট গালি আছে আমার লাইগা রিজার্ভ - সাড়ে বাইশ হাত লম্বা গাউর, আক্কল ভরি কি কুত্তায় মুইতছেনি? বুঝলেন তো, এই হলো আমার গৃহস্থালি ইমেজ। এমতবস্হায় আপনাদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করা বড়ই দুষ্কর। দেঁতো হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

লেখা জট্টিল হইতেছে ভাই ! তাই লেখাটায়ও আমাজনের ব্যাপ্তি চাই ! হা হা হা ! চলুক।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

আমাজন নিয়ে আরো দুইটা লেখার ইচ্ছা আছে। দোয়া রাইখেন।

সচল জাহিদ এর ছবি

তথ্যবহুল লেখা। একটি বিষয় পরিষ্কার করে দেয়া প্রয়োজন বোধ করছি, নদীর বিশালতা পরিমাপ করা হয় মূলত দু'টি সুচক দিয়ে, একটি এর অববাহিকার ক্ষেত্রফল আরেকটি এর দৈর্ঘ্য। অববাহিকার বিচারে আমাজনকে ধরা হয় বিশ্বের এক নম্বর নদী [১] আর দৈর্ঘ্যের বিচারে এটি মূলত দুই নাম্বারে[২], যদিও এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে [১]।

একটি পরামর্শঃ এই জাতীয় লেখাগুলি যেহেতু তথ্যনির্ভর তাই প্রয়োজনীয় তথ্যসুত্র দেয়া (সেই সাথে ছবিগুলোর, যেমন উইকিমিডিয়া কমন) বাধ্যতামূলক বলে মনে করি। লেখাটির অনেক তথ্যই উইকিপিডিয়াতে আছে পাঠকরা ইচ্ছে করলে সেখান থেকে বিশদ জানতে পারবেন।

[১] আমাজন নদী উইকিপিডিয়া

[২] দৈর্ঘ্যের মাপে বিশ্বের নদী সমুহ উইকিপিডিয়া

-----------------------------------------------------------------------------
আমি বৃষ্টি চাই অবিরত মেঘ, তবুও সমূদ্র ছোবনা
মরুর আকাশে রোদ হব শুধু ছায়া হবনা ।।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ভুতুম [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ। আসলে উইকিকে তথ্যসুত্র হিসেবে দেয়ার কথা কখনো মনে আসে না, এটা এতটাই কমন। যাই হোক, ভবিষ্যতে খেয়াল থাকবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।