একুরিয়াম ও আদিবা। /দলছুট।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৪/০৯/২০০৯ - ৯:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখক: দলছুট।

আজকাল মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং অভিজাত শ্রেণী পরিবারের বসার কক্ষে একুরিয়াম না থাকলে যেন বসার কক্ষের শোভা বর্ধিত হয়না। সজ্জিত কাঠের ফ্রেমের উপর বসানো কাচের চার দেয়ালের ভেতর পানি, তার মাঝে পাথর, ছোট মোটরের ফোয়ারা কর্তৃক পানির বুদবুদানি, কিছু গাছাকৃতির প্লাস্টিক আর হরেক রকমের মাছের সমন্বয়ে এই আধুনিক জিনিসের নাম একুরিয়াম, যা আধুনিক সমাজের বসার ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এর ভেতরের মাছ গুলির বন্দী জীবন মানূষকে আনন্দ দেয়। মানুষ নিজে আনন্দ উপভোগ করার জন্য মাছ গুলোকে তার আবাস স্থল থেকে তুলে এনে বন্দী জীবন উপহার দেয়। নিজের মনের ফুর্তি পূরণের হীন মানসিকতায় মাছ গুলোকে বাক্স বন্দী করে। মানুষ তার নিজের মনের আনন্দে এই বন্দী মাছ গুলোকে রুটিন মাফিক পরিচর্যা করে, সময় করে খাবার দেয়, নির্দিষ্ট সময় অন্তর পানি পরিবর্তন করে, তাদের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ করে দেয়।

আদিবা বসার কক্ষে বসে একুরিয়ামের দিকে তাকিয়ে মাছ গুলির অহেতুক দৌড় ঝাঁপ দেখছিল। চার দেয়ালের কাচের একুরিয়াম থেকে মুক্তির জন্য সে কি প্রাণান্তকর চেষ্টা। কাঁচের কাছে এসে নরম ঠোঁটের মুক্তির করাঘাত। এদিক ওদিক ছুটা ছুটি। একদন্ড স্থির নেই। আদিবা ভাবে এই একুরিয়ামের মাছ গুলির থেকে তার জীবন পৃথক্ নয়। সেই এই চার দেয়ালের বিশাল প্রাসাদ নামক একুরিয়ামের হয়তো কোন একটা মাছ। তাকে সময় মত খাবার দেয়া হয়, তার পরিচর্যার জন্য সব ধরনের প্রসাধনী দেয়া হয়, তার আনন্দের জন্য আছে টেলিভিশন, মিউজিক প্লেয়ার, আছে ডিভিডি প্লেয়ার, যেমনটা আছে একুরিয়ামে মাছের সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ক্ষুদ্র মোটরের ফোয়ারা, পাথর আর প্লাস্টিকের গাছাকৃতি। মাছ গুলো যেমন চাইলেও ফিরে যেতে পারে না তার নিজস্ব আবাস্থল পুকুর, খাল, নদী কিম্বা সমুদ্রে। তেমনি আদিবা পারে না ফিরে যেতে তার সেই সব মধুমাখা স্মৃতিময় সোনালী ফেলা আসা দিন গুলতে। শুধু ফিরে যাওয়া নয় আদিবা পারে না স্বাধীন ভাবে ইচ্ছে মত এই প্রাসাদ একুরিয়ামের বাইরে যেতে। তাকে সারা দিন ঐ মাছ গুলির মত বাসার এই কক্ষ, ঐ কক্ষ, উপর- নিচে ঘুরে বেড়াতে হয়। তার নিজস্ব স্বাধীনতা বলতে এইটুকুই।

শিল্পপতির একমাত্র ছেলে অংকনের সাথে বিয়ে হবার পর থেকে আদিবার এই একুরিয়াম জীবনের শুরু। দেখতে এবং লেখা পড়ায় অতুলনীয় হওয়ায় আদিবাকে দেখতেই অংকন বিয়ে করতে রাজী হয়ে গিয়েছিল। আদিবারও কোন নিজস্ব পছন্দ না থাকায় বাবা মার ইচ্ছের বিরুদ্ধে দ্বিমত পোষণ করেনি। তাছাড়া আভিজাত্য তাঁকে কিছুটা আকৃষ্ট করেছিল। অংকনের সাথে আদিবার বিয়ে হয়েছে আজ দুই বছর তিন মাসের কাছাকাছি। এর মধ্যে বিয়ের পর হানিমুনের জন্য অংকনের সাথে পনের দিনের জন্য সিঙ্গাপুর হয়ে ব্যাংকক গিয়েছিল। আর একটা ঈদের ছুটিতে ওরা কক্সবাজার ছিল চারদিন। এই ছিল অংকনের সাথে আদিবার বাইরে বেড়ানোর ইতিহাস।

সকাল নয়টায় অংকন অফিসের জন্য বের হয় ফেরে রাত নয় টায়। মাঝে মাঝে মন চাইলে দুপুরে এসে একসাথে লাঞ্চ করে আবার চলে যায়। না আসলে একটা ফোন করে আদিবা কে জানিয়ে দেয়।এতটুকু সৌজন্যতা অংকন শুরু থেকেই করে আসছে। অংকনের যে মন চায়না বউকে নিয়ে বেড়ানো তা কিন্ত নয়। আসলে অংকন সময় করে উঠতে পারে না। বাবার বিশাল ব্যবসা এখন তাকে সামলাতে হয়। বাবা আনিসুর রহনাম সাহেবের ব্রেইন স্টোক হওয়ার পর থেকে অংকন সব সাম্লাচ্ছে সুনিপুণ ভাবে এবং দক্ষতার সাথে। এর জন্য তাকে প্রচুর খাটতে হচ্ছে। ক্লাইন্টদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়তে হচ্ছে, নূতন নূতন ক্লাইন্ট তৈরি করতে হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা। তাছাড়া আছে পণ্যের ব্রান্ডিং নিয়ে কিছু নূতন নূতন চিন্তা ধারা। সব কিছু নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হয় অংকনকে যে নিজের বউয়ের প্রতি সময় ইচ্ছে থাকলেও দিতে পারে না। এর জন্য অংকনেরও অনুশোচনা কম হয় না, কিন্তঅংকন সেটা আদিবাকে বুঝতে দেয় না। মাঝে মাঝে ভাবে কিছুদিনের জন্য আদিবাকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাবে, ঐ ভাবনা পর্যন্তই তা আর বাস্তবতার মুখ দেখে না।

আদিবা তার শিক্ষা জীবন সাফল্যের সাথে শেষ করেছে। সে স্কুল জীবনে কোন দিন দ্বিতীয় হয়নি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসেও সে ছিল লেখা পড়ায় আকন্ঠ নিমগ্ন। স্বপ্ন ছিল বিবিএ শেষ করার পর কোন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ হয়ে কাজ করবে কিম্বা কোন ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দিবে। সেটা আর হয় নি। বিয়ে নামক আইনের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বপ্ন গুলোক অনিচ্ছা সত্ত্বেও চাপা দিতে হয়েছে।

একুরিয়ামকে স্বচ্ছ, চক্চকে রাখার জন্য যেমন নিদিষ্ট সময় অন্তর পানি পরিবর্তন করতে হয় তেমনি আদিবার জীবনের এগুয়েমিতা কাটানোর জন্যও আদিবাকে সঙ সেজে স্বামীর সাথে ঢং করে বিভিন্ন পার্টিতে যোগ দিতে হয় , পানি পরিবর্তনের মত ক্ষণিক সময়। সপ্তাহের ছুটির দিন গুলোও আদিবা অংকনকে একান্তে নিজের করে পায় না। ব্যস্ত ব্যবসায়িক স্বামীর সাথে যোগ দিতে হয় ক্লাইন্ট, কলিগ কিম্বা কোন পরিচালকের ছেলে-মেয়ের বিয়ে বা জন্মদিনের উৎসবে। বসের বা মালিকের স্ত্রী হিসাবে সেখানেও আদিবাকে একুরিয়াম ধাচের সময় কাটাতে হয়। হাসি মুখে সালাম নিতে হয়, মাথা নিচু করে সালাম দিতে হয়, সবি যেন মেকী। সম্পর্ক ধরে রাখার অভিনয়, ব্যবসায়িক বাজার ও সুনাম বৃদ্ধির ইন্তিজাম। অংকন যেন তাকে নিয়ে যায় শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য। সে যেন অংকনের সাথে একটা ভাসমান একুরিয়াম, সে না থাকলে যেন অংকনের সৌন্দর্যের শ্রী বৃদ্ধি পায় না ।

মোবাইলের রিং এর শব্দে আদিবা চৈতন্য ফিরে পেল। দৌড়ে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল অংকন ফোন করেছে। রিসিভ করে আস্তে করে কানে দিয়ে সোফায় বসল।
অংকনঃ আদিবা আমি সরি, আজ দুপুরে আসতে পারছি না, দুপুরে ক্লাইন্টের সাথে বাহিরে লাঞ্চ করতে হবে। তুমি মা কে নিয়ে খেয়ে নিও।
আদিবাঃ এটাতো নূতন কোন ঘটন না, তাই সরি বলার কিছু নেই। তুমি ফোন করে না বললেও আমি বুঝতে পারতাম। রাখি।
অংকনঃ ওয়েট, তোমার কি আমার উপর রাগ হয় না?
আদিবাঃ কেন? তুমি তো আর আমাকে রেখে অন্য কোন রমণীর সাথে লাঞ্চ করছো না? ব্যবসায়ের জন্য করছো। শহরের নাম করা শিল্পপতি অংকনের স্ত্রী হিসাবে আমাকে তো এইটুকু ছাড় দিতেই হবে!
অংকনঃ আদিবা আসলে দেখো বাবা হঠাত্ত করে অসুস্থ হয়ে পড়ল, সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ল আমার উপর। আমি কি ইচ্ছে করে......... শেষ করতে পারল না।
আদিবাঃ আমি কি তোমার কাছে কোন কৈফিয়ত চাঁচছি?
অংকনঃ দেখো আমি তোমার কষ্টটা বুঝি, কিন্ত আমি ......... শেষ করতে পারল না।
আদিবাঃ রাখি তোমার সময় নষ্ট হচ্ছে। বলেই আদিবা ফোনটা রেখে দিল।

অংকন মোবাইলটা ডেস্কের উপর রেখে রিভলবিং চেয়ারে হেলান দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সে কখনো ভাবেনি এত তাড়াতাড়ি তাকে ব্যবসার জোয়াল কাঁধে তুলতে হবে। সবে মাত্র বিয়ে করেছে, ভেবেছে বউ নিয়ে একটু ঘুরে বেড়াবে। রঙিন পৃথিবীতে সদ্য বিবাহিত দুই প্রজাপতি ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে মধুমাখা আনন্দ সুবাসের নির্যাস প্রাণ করবে, সেই সময় আর পেল না। জন্মদাতা পিতা জাঁদরেল ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান সাহেব প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করে বসলেন। প্রকৃতি তার নিষ্ঠুরতার প্রয়োগ ঘটিয়ে আনিসুর রহমানকে জীবিত অথচ মৃত প্রায় জীবন উপহার দিলেন। যে আনিসুর রহমান সাহেব ১২ মাসের ৪মাস বিদেশ থেকেছেন ব্যবসার জন্য, ঠিক মত বাসায় খাবারটি পর্যন্ত খেতে পারতেন না, সেই রহমান সাহেব আজ নিস্তেজ চার দেয়ালে নীরব জীবন যাপন করছেন। মাঝে মাঝে অংকন বাবার অবস্থা চিন্তা করে সব কিছু থেকে বিদায় নিতে চায়। কিন্ত আভিজাত্য, সম্মানে সম্মোহনী আর অর্থের ঘ্রাণ ফিরে আসার পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়। আর এই তিনটি জিনিস অংকনকে ধীরে ধীরে আদিবার কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে তার অজান্তে বা বোধ শক্তির আড়ালে অতি সূক্ষ্ম ভাবে।অংকন হয়তো বুঝে আবার হয়তো বুঝে না। কিন্তু করার কিছুই খোঁজে পায়না।

আদিবা জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে দূরের আকাশের দিকে। কতক্ষণ তাকিয়ে আছে সে নিজেও জানে না। তার মনের চৌহদ্দি জুড়ে হেঁটে যাচ্ছে অতীতে ফেলা আসা দিন গুলো। মনে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিন গুলো। দেখতে সুন্দর ছিল বলে কত প্রেমের আবেদন পেয়েছে। কত রোমিও পথ আট্কে দাঁড়িয়েছে মনের আকুতি লেখা চিরকুট প্রেয়শীর হাতে তুলে দেয়ার জন্য।স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতেই দু’ঠোটে স্মিত হাসির রেখা খেলে গেল।সহপাঠী থেকে শুরু করে সিনিয়রদের কত প্রেমের অফার আদিবা ফিরিয়ে দিয়েছে পরীক্ষার ফলাফলের কথা ভেবে, ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের কথা ভেবে। আজ মনে পড়লে আদিবার খুব হাসি পায়। ভাবে ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট, কাল্পনিক ক্যারিয়ার সে আজ প্রাসাদ একুরিয়ামে বন্দী।

আদিবার মনের জানালায় উঁকি দেয় অয়ন। আদিবার সহপাঠী। খুব ভাল ছেলে। যেমন দেখতে ছিল, তেমনি ছিল মার্জিত ও ভদ্র।আদিবার জন্য আদ্যোপ্রান্ত পাগল ছিল। আদিবাকে ভালবাসত নিজের জীবনের চেয়ে বেশি। আদিবার পক্ষ থেকে কোন প্রকার সারা না পেয়ে শেষে ছেলেটা নিজেকে আদিবার থেকে আড়াল করার জন্য লেখা পড়ার মাঝ পথে দেশ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া । অস্ট্রেলিয়া গিয়েও অয়ন অনেকবার ইমেইল করেছে, ফোন করেছে। কিন্ত আদিবা ছিল এতোটাই প্রেম বিদ্বেষী ও পড়া লেখায় মগ্ন যে অয়নের মনের আকুতি পড়ার সময় বা মন বা চোখ আদিবার ছিল না। আজ আদিবার অয়নের কথা খুব মনে পড়ছে।

সে দিন ছিল ১৩ই সেপ্টেম্বর, আদিবার জন্ম দিন। সারা দেশে ৪৮ ঘন্টাব্যাপি হরতালের দ্বিতীয় দিন। থমথম ঢাকা শহর। বোমার প্রকম্পিত আওয়াজ। ক্ষণে ক্ষণে বোমার চোরা গুপ্তা আক্রমণ। দোকানপাট সব বন্ধ। চলাচলের এক মাত্র বাহন রিকশা। তাও আবার খুব কম। এমনি এক প্রতিকূল পরিবেশে রাত নয়টার সময় এক গাদা উপহার নিয়ে অয়ন আদিবার বাসায় হাজির হয়েছিল। আদিবা দেখে যানপরান অবাক্ হয়েছিল। উপহারের তালিকায় ছিল ১৩টা সিডি, ১৩তা গোলাপ, তেরটা বই, তেরটা কার্ড, ১৩টা মমি করা প্রজাপতি দিয়ে কাঠের ফ্রেমের ওয়ালমেট, হল মার্স থেকে একটা হাসের সদ্যফোটা বাচ্চার ডামি, আদিবার পছন্দের আরো অনেক কিছু। আদিবা শুধু অয়নকে বলেছিল-“তুমি কি পাগল? চারদিকে বোমা ফাটছে, পুলিস যুবকদের গ্রেফতার করছে, আর তুমি এসেছ আমাকে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানাতে? মোবাইলে উইশ করেছ তাতেই আমি অনেক খুশি ছিলাম, এখন যেটা করলা, সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে বাড়াবাড়ি। আমি এখন বাসায় কি বলব বলতে পারো?” সেই দিন আদিবা অয়নের ভাল বাসার মূল্য দেননি, আজ এই একুরিয়াম জীবনে বারবার অয়নকে মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে অয়নের ভাল বাসায় ছিল স্বাধীন জীবনের আহ্বান। যে স্বপ্ন নিয়ে সারা জীবন লেখা পড়া করেছে, সেটা হয়তো অয়ন বুঝতো। হয়তো অয়নের মাঝেই ছিল তার ঘুরে বেড়ানোর মুক্ত নীল আকাশ।

“বউ মা” ডাক শোনে আদিবা ভাবনার গাড়িতে ব্রেক চাপল। তার কিছু করতে ইচ্ছে করে না। তারপর শ্বাশুড়ির ডাকে সারা দিয়ে জরা জীর্ণ মন নিয়ে হাজির হল। চেহারা যে মনের আয়না, সেটা আদিবা না জানলেও তার বয়োবৃদ্ধ শ্বাশুড়ি জানে। তাই আদিবা কে দেখে বলল-“বউ মা তোমার কি শরীর খারাপ? চেহারা এমন লাগছে কেন? চুল এলোমেলো, কোন সমস্যা মা?” আদিবা মনের ভেতরের কষ্টটা কোন রকমে লুকানোর চেষ্টা করে অনিচ্ছাকৃত ঠোটে হাসি এনে বলল-“না মা, আমি ঠিক আছি, ঐ একটু শুয়ে ছিলাম তো তাই অমন লাগছে।” শ্বাশুড়ি রাহেলা খাতুনের বয়স হয়েছে, সে মানুষের চেহারা দেখলেই বুঝতে পারে, তাছড়া নিজেও যে এই বাসায় এই রকম একাকীত্ব জীবন পার করেছে বহুদিন। তাঁকে ফাঁকি দেয়া কী অত সহজ। তাই পুত্রবধুর মর্ম বেদনা বুঝতে সময় লাগল না। যার জন্য আদিবা কে ডাক দিয়েছিল সেটা আর বলল না। বলল-“ঠিক আছে মা তুমি যাও বিশ্রাম নাও। অংকন এলে আজ আমি কথা বলব।” আদিবা স্বামী ভক্ত স্ত্রীর মত ঝটপট বলল-“না মা, ওকে কিছু বলতে হবে না, আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।” রাহেলা খাতুন একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল-“তোমার মত জীবনতো আমি পার করে এসেছি, কি পেয়েছি? দেখ আজ কি অবস্থা?কি লাভ হয়েছে এই টাকা টাকা করে? টাকা কি পারছে এখন তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে?” রাহেলা বেগম শাড়ির আচঁলে চোখের জল মুছে নিলেন, আদিবার দিকে তাকালেন, আদিবার চোখে জল স্বচ্ছ দীঘির মত টলটল করছে। আদিবার কান্না পাচ্ছিল কিন্ত শ্বাশুড়িকে শান্ত করার জন্য নিজে অনেক কষ্ট করে চোখের জল সংবরণ করল। স্বাশুড়িকে শান্তনা দিয়ে বলল-“ মা, ওতো মাত্র ব্যবসাটা বুঝতেছে, তাই একটু সময় লাগছে, সব বুঝে গেলে তাড়াতাড়ি বাসায় আসবে, আমাকে বলেছে। আপনি এই নিয়ে একটু ভাববেন না। আমি ভাল আছি মা। আপনি কেন ডেকেছেন সেটা বলুন।” শ্বাশুড়ি চোখ-নাকের পানি মুছতে মুছতে বলল-“তোমার বাবাকে একটু দেখো আমি একটু ছবির বাসায় যাব। মেয়েটা ফোন করেছিল, ওর বাবুটার নাকি জ্বর আমি দেখেই চলে আসব।” আদিবা শ্বাশুড়িকে অভয় দিয়ে বলল-“আপনি যান, আমি এদিকটা খেয়াল রাখব। আর গিয়ে আপুকে একটা ফোন দিতে বলেন। আর আপনার ছেলে কে কি বলেছেন?” রাহেলা খাতুন বলল-“না ওকে বলা হয়নি, সারা দিন কাজের মধ্যে থাকে, দুশ্চিন্তা করবে তাই বলি নি। । আমি গিয়ে দেখি, তারপর দেখা যাব নে।”

শ্বাশুড়ি রাহেলা খাতুন গাড়ি নিয়ে নাতিন কে দেখতো চলে গেল। আদিবা ভাবছে এই বিশাল প্রাসাদ নামক একুরিয়াম থেকে একটা প্রাণী কিছুক্ষণ জন্য মুক্তির বাতাস নিতে গেল। বাকী দুটি প্রাণীর মধ্যে একজন ভাগ্য বিড়ম্বনায় জীবিত থেকেও মৃত আর একজন প্রান কোষে জড় পদার্থ। কাজের ছেলেটাকে ডেকে শ্বশুড়ের রুমে বসিয়ে রাখল। কাজের বুয়াকে ডেকে এক কাপ কফি দিতে বলল। কফিটা আদিবার অনেক প্রিয়। এই একটা জিনিস আদিবা নিজের থেকে চেয়ে নেয়। বাকী খাবার গুলো শুধু মাত্র বাচার জন্য খায়। সেটাও শ্বাশুড়ির ভয়ে।

বিছানায় যাবার আগে মনে হয় বাংলাদেশের সব মেয়েরাই চিরুনি নিয়ে ড্রেসিং টেবিল সামনে কিছু সময় ব্যয় করে। এটা কি চুলের পরিচর্যা না ঘুমকে আমন্ত্রণ জানানোর কৌশল আমার জানা নেই। তবে এইটুকু জানি মেয়েরা এই কর্মটি খুব মন দিয়ে এবং নিয়মিত করে। আর ছেলেরা বিছানায় যাবার আগে হাতের মুঠোয় থাকা রিমোট দিয়ে সারা পৃথিবীটা ঘুরে দেখে। তেমনি আদিবা চিরুনি নিয়ে ড্রেসিং টেবিল সামনে দাঁড়িয়ে চুল পরিপাটি করছিল। অংকন রিমোট দিয়ে প্রতি মিনিটে একটা করে চ্যানেল ঘুরে দেখছিল। যতটা সময় নিয়ে প্রতি দিন আদিবা এই কর্মটি করে, আজ তার চেয়ে অনেক কম সময় নিয়ে চুলের পরিপাটি করে সোফায় এসে অংকনের পাশে বসল। অংকন খেয়াল করে না, রিমোট দিয়ে চ্যানেল পরিবর্তনে ব্যাস্ত।
আদিবাঃ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
অংকনঃ বলো (টিভির দিকে চেয়ে রিমোট হাতে রেখে)
আদিবাঃ কথা শোনার জন্য মনোযোগ দিতে হয়। (একটু রেগে গিয়ে বলে)
অংকনঃ আমিতো কানে কম শুনি না, বলো শুনছি। (এবারও টিভির দিকে তাকিয়ে বলল।)
আদিবাঃ তোমার শোনতে হবে না। (মেজাজ খারাপ করে বিছানায় গিয়ে শোয়ে পড়ল।)
এইবার অংকন খেয়াল করল, আদিবা অভিমান করেছে, কোন কথা না বলে নীরবে শোয়ে পড়েছে। সে রিমোট দিয়ে টিভি টা অফ করে আদিবার পাশে বসল।
অংকনঃ সরি ডার্লিং। প্লিজ বলো কি বলবা। (আদিবা কোন কথা না বলে পাথর মূর্তি হয়ে বিছানায় পড়ে রইল। অংকন আদিবার হাত ধরে টান দিয়ে) সরি আদিবা, আমি বুঝতে পারিনি, প্লিজ আর কখন এমন করব না। (দুই হাত দিয়ে কান ধরে) এই চেয়ে দেখ আমি দুই হাত দিয়ে কান ধরে বলছি আর এমন হবে না। প্লিজ উঠ। (দুহাত টেনে আদিবা কে উঠাল।)

আদিবা ভীষণ গোম্রা মুখে উঠে বসল। অংকনের দিকে চেয়ে দেখে কান ধরে বসে আছে। আদিবা হেসে দিল। দু’হাত দিয়ে অংকনের হাত কান থেকে সরিয়ে দিল। অংকন আদিবাকে জরিয়ে ধরে একটা চুমু খেল। আদিবা নিজেকে একটু সরিয়ে নিয়ে ইজি হয়ে বলল-“ফাজলামো পড়ে কর, তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
অংকনঃ জী মহারানী আপনার যা আজ্ঞা।
আদিবাঃ অংকন, তুমি যে ভাবে ব্যবসার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছো ব্যবসার উন্নতির জন্য, ঠিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য বা সম্পর্ক মধুর করার জন্যও প্রয়োজন মনোযোগের। সম্পর্কের বিনা সূতায় যদি একবার টান পরে তাহলে কিন্ত সেটা ভয়াবহ হয়ে যায়। তখন এক ছাদের নিচে বসবাস করা ছাড়া আর কিছু থাকে না। হয়তো কখন কখন এক ছাদের নিচে ও থাকা সম্ভব হয় না। (আদিবা মুখস্তের মত কথা গুলো একবারে বলে গেল।)
অংকনঃ আদিবা আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি। কিন্ত আমার দিকটা একটু চিন্তা কর। আমি কি এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম? আমি কি এতটা পরিপক্ব ছিলাম এত বড় ব্যবসাটা পরিচালনার জন্য? আমাকে সব বুঝতে হচ্ছে, বাবা স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, আমি তার দিক থেকে কোন সাহায্য পাচ্ছি না, সবাই লুটেপুটে খাবার জন্য হা করে আছে, এই গুলো ট্র্যাকেল দিয়ে আমাকে নূতন করে সব সাজাতে হচ্ছে। আমাকে আর কয়টা দিন সময় দাও। আমি তোমাকে অনেক সময় দিব।
আদিবাঃ তোমার আব্বু ঠিক এই ভাবে তোমার মা কে বলেছে, কিন্ত সারা জীবনও সময় দিতে পারেনি। আজ যখন সময় দিচ্ছে তখন মার কাছে সময়টা মনে হচ্ছে পাহারের মত ভার।
অংকনঃ আমি জানি মা তোমাকে সব বলেছে, কিন্ত আমি যদি এই গুলো না দেখি, তাহলে যে সব ধ্বংস হয়ে যাবে।বাবার এত কষ্টে গড়া জিনিস আমি যদি রাখতে না পারি, তাহলে মানুষ আমাকে ধিক্কার দিবে। বলবে কুলাঙ্গার ছেলে বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসাটা পর্যন্ত রাখতে পারল না। তুমি কি চাও মানুষ সেটা বলুক।
আদিবাঃ আমি একটা স্বাভাবিক জীবন চাই, আমি তোমার সাথে খোলা আকাশের নিচে হাঁটতে চাই, পূর্ণিমায় জোছনা দেখতে চাই, সপ্তাহে একদিন , অন্তত একটা বিকাল আমি তোমাকে আপন করে চায়, এর বেশী কিছু চাই না।
অংকনঃ আদিবা, তোমাকে বুঝতে হবে তুমি এক জন শিল্পপতির স্ত্রী। আমাকে অনেক কিছু ম্যানেজ করে চলতে হয়। আমি চাইলেও সব কিছু করতে পারি না।
আদিবাঃ তাই, আমি শিল্পপতির স্ত্রী? আমার মন নেই, শখ নেই, আবেগ নেই, অনুভূতি নেই, আমার কোন ইচ্ছে থাকতে নেই? আমি ঐ একুরিয়ামের মাছের মত? তোমাদের বাসার শ্রী বৃদ্ধি করার জন্য আমাকে প্রসাধনী দিয়ে, শাড়ি গহনা দিয়ে সাজিয়ে রাখ।

অংকনঃ দেখ আমি অনেক ক্লান্ত, ঘুম পাচ্ছে,আর মনে হচ্ছে তুমিও বিক্ষিপ্ত, তোমার সাথে এই নিয়ে পরে কথা বলব। প্লিজ লক্ষীটি ঘুমিয়ে পরো।

আদিবা চুপ করে বসে থাকে। বুঝে এর সমাধান সে কখনো পাবে না। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছিল, কিন্তকোন কিছু না বলে খাটের উপর বসে রইল। অংকন হাত দিয়ে ব্যান্ড সুইচটা টিপে লাইট অফ করে দিল। ডিম লাইটের হালকা বাদামী আলোয় রুম যেন বাদামী হয়ে আছে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেশিনের ক্ষীণ আলোটা নীল হয়ে বাদামীর মাঝে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই অংকন ঘুমিয়ে গেল। আদিবার চোখে ঘুম নেই। ডিম লাইটের দিকে চেয়ে আছে। চেয়ে আছে ক্ষীণ আলোটার দিকে। সময় টিকটিক বয়ে চলছে, আদিবার চোখে ঘুম নেই। আদিবা ভাবনার ভীরে বসে অনেক কিছু ভাবে যে ভাবনার কোন সমাধান নেই। পাশেই অংকন কত সুখে আরামে নিদ্রা যাচ্ছে, আর আদিবা যন্ত্রণা ভরা চোখে চেয়ে আছে। আদিবা ভাবে কেন মানুষ অর্থের পিছে ছুটে? একজন মানুষের সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের জন্য কত টাকা লাগে? ভাবতে আজানের সুর ভেসে আসে, মাথা বালিশে হেলিয়ে দেয়, তবু ঘুম নামের সোনার হরিণ আদিবার চোখের পাতায় হাজির হয় না।


মন্তব্য

রেশনুভা এর ছবি

পড়লাম দলছুট ভাই।
ভালো। আরও ভালো হতে পারত যদি ছোট ছোট বানান ভুল/টাইপো গুলো না থাকত।
শেষে এসে আর কী একটু মসলা দেয়া যেত না? চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। টাইপিং জনিত কিছু সমস্যা হচ্ছে এটা বুঝতেছি। আমি ওয়ার্ডে অভ্রতে টাইপ করে এখানে পোষ্ট দেই, অনেক শব্দ দেখতেছি যেটা দেখে আমি নিজেই অবাক হচ্ছি। বুঝেতেছি না কেনো এমন হচ্ছে। এরপর আরো কেয়ারফুল হব।

শেষে আর একটু মাল মশলা দিতে গেলে দেখলাম কলেবর বৃদ্ধি পায়, তাই এখানেই শেষ করলাম। রবি ঠাঁকুর ছোট গল্প সম্পর্কে একটা কথা বলেছিলেন-"অন্তরে অতৃপ্ত রবে সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হয়েও হইল না শেষ। "

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কটু মন্তব্যের জন্য দুঃখিত।

বাংলা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য মনে হলো। যে-গল্প আপনি বললেন, তাতে নতুন কিছু তো পেলামই না, বরং অতি-পরিচিত কিছু সেন্টিমেন্টাল ড্রামার কথা মনে পরে গেলো। চম্পা-ববিতা-শাবানারা চোখে ভাসছিলো। অল্প হলেও চমকের আশায় এত বড় লেখাটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। শেষে হতাশ হতে হলো।

বানান ভুল আগের চেয়ে কম হলেও অনেক রয়ে গেছে এখনও। লেখার আকার আরেকটু ছোট হলে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। গল্পের সারবস্তু বিবেচনায় এটি হয়তো এর এক দশমাংশ আকারের হতে পারতো। আদিবা খুব পরিচিত চরিত্র। তার পরিবর্তে অ্যাকুরিয়ামের দিকে মূল ফোকাস থাকতে পারতো, শেষ বেলায় মিল দেখাতে পারতেন দুইয়ে। গল্পটা তাতে আরেকটু সুখপাঠ্য হতো বলে আমার ধারণা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

একটা লেখা সবার ভাল লাগে না এটাই স্বাভাবিক। আপনি যে সেন্ট্রিমেন্টালের কথা তুলে আমাকে সমালোচনা করলেন, সেটা আমাদের সমাজেরই অংশ। আপনি কী সমাজ থেকে আলাদা হতে পারবেন। দেখুন না টানা কয়েক মাস স্ত্রীকে সময় না দিয়ে,কি হয়? আপনার বাসায়ও তখন এই বাংলা ছবির প্রিমিয়াম শো হবে।

আপনাদের মন্তব্য আমার কাছে প্রেরণা হিসাবে, ভালো করার গাইড লাইন হিসাব কাজ করে। পরবর্তী লেখায় ভুল গুলো শুধরানোর জন্য চেষ্টা করি, সে গুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ কাজে লাগাই।

বানান জনিত সমস্যা আমি নিজেও দেখলাম, আমি আমার ওয়ার্ড ফাইলে দেখছি একরকম আর এখানে দেখছি আরেক রকম। এই বিষয়টা পরবর্তীতে আর মনযোগ দিয়ে খেয়াল করব।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর এবং গঠনমূলক মতামতের জন্য। আপনাদের সমালোচনা আমরা জন্য আশীর্বাদ। প্লিজ আরও বেশি করে ভুল ধরিয়ে দিন, বেশি করে সমালোচনা করুন। আপনাদের পরামর্শ কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।

দলছুট।

==============
বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

গৌতম এর ছবি

গল্পের কাহিনীতে নতুনত্ব কিছু নেই। এক্ষেত্রে ইশতিয়াক রউফের সাথে বরং আমি একমত। অ্যাকুরিয়ামের দিকে ফোকাস থাকলে হয়তো গল্পটা নতুন মাত্রা পেতো!

তবে অ্যাকুরিয়াম নিয়ে প্রথম প্যারাটা ভালো লেগেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অ্যাকুরিয়াম, খাঁচা ইত্যাদি সহ্য করতে পারি না, ভেতরের প্রাণীগুলোকে দেখলে কষ্ট হয়। অথচ চিড়িয়াখানার জীবজন্তু দেখলে তেমন কোনো অনুভূতি হয় না। এই দ্বৈততা নিজেকেই অবাক করে।

আপনার লেখাটা পড়ে মনে হলো- আমরা মানুষরাও দিন দিন নিজেদের তৈরি অ্যাকুরিয়ামে বন্দী হয়ে যাচ্ছি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি চেষ্টা করেছি আদিবার মত অনেক বন্দী মেয়ের জীবনের সাথে একুরিয়ামের মাছের জীবনের সাদৃশ্য দেখাতে, নূতনত্ব না করতে পারাটা আমার দৈন্যতা।

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

দলছুট।

===========
বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বানান নিয়া আপনারে আর কী বলবো , একটু আধটু শুরুতে হতেই পারে।
গল্পের কথা বললে- শুরুটা যত আকর্ষণীয় ছিলো- শেষে এসে তার সামান্যটুকুও অবশিষ্ট থাকলো না।
আরো লিখুন, ভালো ভালো গল্প বের হোক কীবোর্ড থেকে, এই কামনা।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য। শুরু টা ভাল করে শেষে ধরে রাখতে না পারাটা হয়তো অনভিজ্ঞতার কারণ। আস্তে আস্তে পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

আপনাদের মন্তব্য, পরামর্শ, সমালোচনা আমার জন্য আশীর্বাদ। প্লিজ বেশি বেশি সমালোচনা করুন।

দলছুট।
===========

বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পড়লাম দীর্ঘ গল্পটা।
বানান আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত। এখন পড়া যায়। আপনি ওয়ার্ডে লিখছেন কেন? এখানেই লিখুন, তাহলে হয়তো কিছু উপকার পাবেন।

গল্পর কাহিনীটা পুরনো অনেক। একুরিয়মের ব্যাপারটাও। এটা সমাজের অংশ ঠিক আছে। কিন্তু যে জিনিস আমি ঘরে বাইরে সর্বত্র দেখছি সেটা আবার কষ্ট করে আপনার লেখায় পড়তে যাবো কেন? যা ঘটছে তাই তুলে দিলে লেখকের কৃতিত্ব কোথায়? এটা একেবারেই আমার পছন্দ অপছন্দর ব্যাপার বললাম। বাস্তব ঘটনাগুলো তুলে দেওয়াটাকে আমার ঠিক পছন্দ না। চাই বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে ভিন্ন কোনো ভাবনা। যা আমাকে নতুন করে ভাবাবে।

আরো একটা ব্যাপার, তা হলো সুন্দর বর্ণনা বা বাক্য গঠন। লেখনীটা সুন্দর হলে সাদামাটা কোনো কিছু পড়তেও আরাম লাগে। আপনার লেখনী খারাপ তা কিন্তু বলছি না, আমি পুরোটা পড়েই এসেছি।

কিন্তু আমার মনে হয়েছে এটা আরো কয়েকবার পড়ে সম্পাদনা করে দিলে আরো ভালো হতো। মেদগুলো থাকতো না।

তবে আগের গল্পের চেয়ে এটা ভালো লেগেছে বেশি।

আপনি সমালোচনা সুন্দরভাবে গ্রহণ করেন, তাই এতোকথা বলা... নয়তো একটা কথাও বলতাম না।

লিখুন আরো বেশি করে... লিখতে লিখতেই লেখার ঝামেলাগুলো কেটে যাবে।
ও আচ্ছা, একটা কথা বলতে চাই... আপনার বেশ কিছু শব্দ অনেক আরোপিত মনে হলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

নজরুল ভাই অনেক ধন্যবাদ। আমি আপনার মন্তব্য সকাল থেকে আশা করছিলাম, আপনার অনেক গুলো সাজেশন আমার কাজে লেগেছে। আগে লিখতে গেলে বেশি চিন্তা করতাম না, এখন অনেক ভাবি। আমি জানি আরো ভাবা উচিত। সময়ের অভাবে অনেক সময় তারাতারি করি। যেটা মোটেও উচিত না।

একটা কথা আছেনা "গাইতে গাইতে গায়েন, আর লিখতে লিখতে লেখক।" আমি চেষ্টা করছি আরো ভাল করার।

আপনার পরামর্শ মনে রাখব। পরবর্তী কোন লাখায় আরো বেশি যত্নশীল হব। নজরুল ভাই আপনার ফোন নম্বর কি পাওয়া যাবে? আপনাকে আমার অনেক ভাল লেগেছে। আপনি সমালোচনা করেন নির্দেশনাসহ, যেটা একজন নূতন লেখকের জন্য অনেক প্রয়োজন। ধন্যবাদ ভাল থাকবেন। লেখা পড়বেন এবং মন্তব্য দিবেন আরো বকা দিয়ে।

তিথীডোর এর ছবি

রঙিন পৃথিবীতে সদ্য বিবাহিত দুই প্রজাপতি ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে মধুমাখা আনন্দ সুবাসের নির্যাস প্রাণ করবে।

''প্রকম্পিত আওয়াজ আর ক্ষণে ক্ষণে মর্ম বেদনা বোমার চোরা গুপ্তা আক্রমণ... এমনি এক প্রতিকূল পরিবেশে একজন প্রান কোষে জড় পদার্থ হয়েও ইহা পড়িলাম এবং অনেক কষ্ট করে চোখের জল সংবরণ করিলাম।'' দেঁতো হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

কল্যাণ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি হাততালি

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।