আমাদের মা - আমাদের প্রথম ও প্রধান শিক্ষক - ৪

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি
লিখেছেন জোহরা ফেরদৌসী (তারিখ: সোম, ০৯/১১/২০০৯ - ১:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের মা - আমাদের প্রথম ও প্রধান শিক্ষক - ৪
জোহরা ফেরদৌসী

পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩


অসামান্য শ্রুতিধর
অতূলনীয় স্মরনশক্তির অধিকারী মা ছন্দোবদ্ধ যে কোন জিনিষ একবার শুনলে আর ভূলতেন না। ছেলেবেলায় লন্ঠনের আলোয় দেখা যাত্রা পালার বিবেকের গান থেকে শুরু করে শিশুতোষ ছড়া, কবিতা হয়ে গভীর আধ্যাত্মিক গান পর্যন্ত সবই তাঁর হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিতো। একদম বাচ্চা বয়সে কাকার কাঁধে চড়ে নিমাই সন্ন্যাসের পালা দেখেছিলেন, তাঁর বর্ননা এখনো আমার কানে লেগে আছে। একমাত্র সন্তান নিমাই মাকে লুকিয়ে রাতের আঁধারে গৃহত্যাগ করার সময় কোকিলের স্বর নকল করে মাকে শেষ বিদায় জানিয়েছিল। নিদ্রাতুর মা তা বুঝতে না পেরে বলেছিল, “ব্রজের কোকিল ব্রজে যা রে...।” নিশি ভোর হলে তাই মা হাহাকার করে উঠে। স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াকে ফাঁকি দেয়ার জন্য নিমাই পায়ের নূপূর খুলে রেখেছিলো। তাই, বিষ্ণুপ্রিয়া কেঁদে উঠে, “তুই না নূপূর পায়ে ছিলি...?”

মার ছোটবেলার একটি কবিতার আবৃত্তি তাঁর কন্ঠে শুনেছিলাম। কবিতার রচয়িতা কিংবা পঙতি কিছূই আমার মনে নেই। কিন্তু কবিতাটির মূল দর্শন মনে আছে। সনাতন নামে এক সাধূ নদীতীরে সাধনা করেন। এক ধর্নাঢ্য ব্যক্তি তার কাছে জানতে চায় সাধনা করে সে কি পেয়েছে। সনাতন তাকে বলেন, “তুমি বুঝবে না।” বারম্বার জিজ্ঞাসার পরে সাধূ নদীতীরের প্রস্তর খন্ডের দিকে অঙ্গূলীনির্দেশ করেন। ঐ ব্যক্তি তাকিয়ে দেখেন প্রস্তর খন্ডটি আসলে সোনার খন্ড। তখন সেই ধর্নাঢ্য ব্যক্তি সনাতন সাধূকে বলে, “যে ধনে হয়ে ধনী/ মনিরে মানো না মনি” সেই ধনের সন্ধান আমাকে দাও। সেই থেকে জীবনের পার্থিব সব ধন ত্যাগ করে সেও সাধূর কাছে তখন দীক্ষা নেয়।

নিজের শৈশবের কত ছড়া, কবিতা ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনীকে শুনিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। ছোট্ট খোকা হাত নেড়ে নেড়ে মাকে বলছে “খূকী তোমার কিচ্ছূ বুঝে না মা/ খূকী তোমার বড্ড ছেলে মানুষ...” সেই ছড়াটি মা অভিনয় করে দেখাতেন। “তেলের শিশি ভাঙ্গলো বলে খূকূর ’পরে রাগ করো/ তোমরা যে সব বূড়ো খোকা ভারত ভেঙ্গে ভাগ করো ?” এর মত অসংখ্য ছড়া, কবিতা আমি মার মুখেই প্রথম শুনেছি। শরৎচন্দ্রের “রাম”, “শ্রীকান্ত” থেকে আরম্ভ করে কাজী নজরুল ইসলামের “লিচু চোর”, সূকুমার রায়ের “পাগলা দাশু” হয়ে রনবীর কার্টুন চরিত্র “টোকাই” পর্যন্ত সকল শিশু কিশোর চরিত্রই তাঁর সঙ্গী ছিল। রবীন্দ্রনাথের শিশুতোষ কবিতার মধ্যে “বীর পূরুষ”এর আবৃত্তি মার কাছে শুনে শুনেই আমার মনে বসে গিয়েছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের এই কবিতা পড়ে আমি কষ্টও পেয়েছিলাম। কেন তিনি একটি খোকাকে দিয়েই মাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন ? আমি মেয়ে হয়ে কি মাকে কম ভালবাসি, এই প্রশ্ন আমি মাকেও করেছিলাম। মা হেসে বলেছিলেন, “কবিতাটি একটি শিশুর কল্পনায় মাকে উদ্ধারের গল্প। কত সুন্দর করে এই গল্পটি বলা হয়েছে সেটা দেখো।” শিশু কিশোরদের সঙ্গে মা খুব সহজে মিশে যেতে পারতেন। শুধু যে নিজের পরিবারের তাই নয়, সকল শিশুদের সঙ্গেই গল্প করার অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল। শিশুদের নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতা তার খুব প্রিয় ছিল, “পার হয়ে কত নদী কত যে সাগর/ এই পারে এলি তুই শিশু যাদূকর...।”

যূগান্তরের অভিযাত্রী

মা তাঁর জীবদ্দশায় ইংরেজ উপনিবেশের অধীন অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশ, পাকিস্তান আমল ও স্বাধীন বাংলাদেশ দেখেছেন। ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে মূক্তির জন্য স্বরাজের আন্দোলন দেখেছেন। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, ফরায়েজী আন্দোলন, সূর্য্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেকারের মত “স্বদেশী”দের আত্মত্যাগের কথা ইতিহাসের বই পড়ার আগেই মার কাছে জেনেছি। স্বদেশী আন্দোলনের উদ্দীপক গান “স্বদেশ স্বদেশ করিস কেন, এদেশ তোদের নয়/ এই যমূনা, গঙ্গা নদী তোদের ইহা হইতো যদি/ পরের পন্যে গোরা সৈন্য জাহাজ কেন বয়...?” মা গেয়ে শুনিয়েছেন। সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিমদের জন্য স্বাধীন রাস্ট্র “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান...” এর স্বপ্ন যে অচিরেই ভেঙ্গে গিয়েছিল তাও দেখেছেন। ভাষা আন্দোলন হয়ে উনসত্তরের গন আন্দোলনের উত্তাল ঢাকা নগরীতে মা তখন নিদ্রাহীন রাত কাটিয়েছেন অন্য সব মায়েদের মত। শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন হাজারো বাঙ্গালীর মত রোজা রেখেছেন। তখনকার গান ছিল, “জেলের তালা ভাঙ্গবো, শেখ মুজিবকে আনবো..।” সেই সময়ে নাখালপাড়ায় আনোয়ারা বেগম নামে এক মা ঘরের ভেতরে শিশু সন্তানকে বুকের দূধ খাওয়ানোর সময় পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। মা তার কথা অনেকবার বলেছিলেন।

একাত্তরের কালরাত্রির অল্প কিছূদিন আগে মা নয় ছেলেমেয়েকে নিয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। সেই সময়ের সরকার নিয়ন্ত্রিত গনমাধ্যমগুলোর থমথমে নীরবতায় সকল বাঙ্গালীর মত মাও আতন্কিত ছিলেন। প্রকৃত পক্ষে তখন সরকারী গনমাধ্যমের খবর কেউ বিশ্বাসও করতো না। সেই অসহনীয় দিনগুলোতে সবাই শুধু রেডিওর নব ঘুরাতো, কোথাও কোন খবরের আশায়। মার্চ মাসের এমনি এক দূঃসহ দিনে মেজর জিয়াউর রহমানের কন্ঠ শুনেছিলেন মা। জাতির সেই দূর্দশার দিনে মার নিজের জীবনেও ছিল ভয়াবহ এক দূঃস্বপ্নের ভয়। আমাদের বাবা তখন সিলেটে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এক মাস গত হয়ে গেলে সবাই ধরে নিয়েছিল বাবা আর ফিরে আসবে না। মার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, বাবা বেঁচে আছেন। সত্যিই বাবা এক মাস পরে ফিরে এসেছিলেন। সিলেট রেলস্টেশনের রানিংরুমে পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমন থেকে খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। তারপরে লুকিয়ে, পায়ে হেঁটে, ক্লান্ত বাবা বাড়ী ফিরেছিলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের নয় মাস সকল বাঙ্গালীর মত দূশ্চিন্তা, দূর্ভাবনার মধ্যে মারও সময় কেটেছে। সেই সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবর, গান, কবিতা, নাটিকা ইত্যাদি বাঁচিয়ে রেখেছিল সমস্ত বাংলাদেশকে। বিশেষতঃ এম আর আখতার মুকুলের “চরমপত্র” ছিল মার সবচেয়ে প্রিয়। মূক্তিযোদ্ধাদের মনোবল যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অবদানকে তিনি অনেক বড় করে দেখতেন। তখনকার “জয় বাংলা, বাংলার জয়..”, “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি..”, “সালাম সালাম হাজার সালাম..”, “শোন একটি মজিবরের কণ্ঠ থেকে..” ইত্যাদি তাঁকে ভীষনভাবে আলোড়িত করেছিল। মাকে একবার বই কিনতে বেইলী রোডের সাগর পাবলিশার্সে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে এম আর আখতার মুকুলের সঙ্গে দেখা হলে তিনি চরমপত্রের স্মৃতিচারন করেছিলেন।

মা জীবন শুরু করেছিলেন ঘোড়ায় টানা জূড়ি গাড়ী আর লন্ঠনের আলোয় যাত্রা, পালা গানের আসর শুনে। তখনকার মেয়েরা চিকন পাড়ের সূতির শাড়ী পরতেন। সুগন্ধি ফুল ডুবানো তেল চুলে লাগাতেন। সেই চুলে কাঁটা দিয়ে খোঁপা বাঁধতেন। মুখে বড়জোর সাদা পাউডার আর দূ’চোখে কাজল ছাড়া কোন প্রসাধন ছিল না। সেই সময়ের অন্তঃপুরিকা হয়ে মা যূগান্তরের অনেক পালাবদল দেখেছেন। একসময়ে উঠানজূড়ে লোক সমাগমে গ্রামোফোনে (“কলের গান” নাম যা বেশী পরিচিত ছিল) গান শুনেছেন। গ্রামোফোনের শোনা একটি গানের গল্প আমার মনে আছে। গানটি আসলে একটি দরিদ্র মায়ের ছেলের গল্প। ছেলেটি পাঠশালার পন্ডিতমশাইকে কখনোই কোন উপঢৌকন দিতে পারে না। সেকারনে তার প্রতি পন্ডিত মশাই বেশ রুষ্ট। একবার একটি উৎসব উপলক্ষে পন্ডিতমশাই ছেলেটিকে সবার জন্য দই আনার দায়িত্ব দিলেন। চিন্তিত ছেলেটির মনে পড়ল মা বলেছিল, মন দিয়ে ডাকলে মধূসুদন সব দেয়। তখন নির্জনে ছেলেটি কায়মনোবাক্যে মধূসুদনকে ডাকতে থাকে, “জয় মধূসুদন এতো যে ডাকি তোমায়....” তখন এক জ্যোতির্ময় দেবদূত এসে ছেলেটিকে একটি দইয়ের হাড়ি দিয়ে যায়। সেই হাড়ি নিয়ে পন্ডিতমশাইয়ের কাছে গেলে দেখা গেল দই আর শেষ হয় না। যতই খাওয়া হয়, হাড়ি ভরাই থাকে।

জূড়ি গাড়ীর পরে হারিকেনের আলোতে টুং টাং ঘন্টার শব্দে রিক্সা চড়েছেন। সে সময়ের গাছ গাছালীতে ছাওয়া ঢাকায় প্রচুর বানরের উপদ্রব ছিল। রোদে শুকাতে দেয়া আচার, ঘিয়ের বৈয়াম নিয়ে তারা পালাতো। পালা বদলের দোলায় চেপে মা টিউব লাইটের যূগ পার হয়ে সোডিয়াম বাতির আলোয় ঢাকা নগরীর বিবর্তন দেখেছেন। নির্বাক যুগের পরে সবাক চলচ্চিত্রও দেখেছেন। কাননবালার কন্ঠে “আমি বনফুল গো...” গান শুনে মুগ্ধ হয়েছেন। উত্তম- সূচিত্রার “হারানো সুর”, “পথে হলো দেরী” ইত্যাদি পার হয়ে রাজ্জাক-কবরীর অনেক রোমান্টিক ছবি দেখেছেন। কলের গানের যুগে আব্বাস উদ্দীন ও আব্দুল আলীমের কালজয়ী গান শুনেছেন। আব্দুল আলীমের কন্ঠে “সর্বনাশা পদ্মানদী তোর কাছে শুধাই..”র উত্তাল ঢেউ মাকে মুগ্ধ করতো।তাছাড়াও, “প্রেমের মরা জলে ডুবে না...”, “বহুদিনের পীরিত গো বন্ধু...”, “আমার দেশের মতন এমন দেশ কি কোথাও আছে ?...“, “কেহ করে বেচা কেনা কেহ কান্দে রাস্তায় পরে...”, “ও যার আপন খবর আপনার হয় না...”, “দূয়ারে আইসাছে পালকী, নাইওরি গাও তোল/ মুখে আল্লাহ রসূল সবে বলো..”, “আর কতকাল ভাসবো আমি দূঃখের সারি গাইয়া...”, “হলুদিয়া পাখি সোনারই বরন, পাখীটি ছাড়িল কে ?...”। আব্বাস উদ্দীনের অসংখ্য গান মার প্রিয় ছিল। যেমন, “আমার হাড় কালা করলাম রে ওরে আমার দেহ কালার লাইগা..”, “আম ধরে থোকা থোকা তেতূল ধরে ব্যাকা/ আমায় আসবে বলে শ্যাম কালাচান নাহি দিলো দেখা...”, “আমায় এতো রাতে কেনে ডাক দিলি প্রান কোকিলা...”, “আমি ভাবি যারে পাইনাগো তারে..”, “নাও ছাড়িয়া দে,পাল উড়াইয়া দে/ছলছলাইয়া চলুকরে নাও মাঝ দইরা দিয়া...”, “ও নদীর কূল নাই কিনার নাইরে/ আমি কোন কূল হতে কোন কূলে যাব কাহারে শুধাইরে...”। বাংলা হামদ ও নাত শুনতে ভালবাসতেন। তার মধ্যে “আল্লাহু আল্লাহু তুমি জ্বাললে জ্বালা লুহু/ শেষ করা তো যায় না গেয়ে তোমার তোমার গুনগান...”, “নবী মোর পরশমনি, নবী মোর দোজাহানের খনি...”, “কে যায় মদীনায়? আমার সালাম পৌছে দিও নবীর রওজায়...” । কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামী গান ছিল তাঁর বিশেষ পছন্দ। “হে খোদা দয়াময় রহমানির রাহিম/ হে বিরাট হে অনন্ত হে অসীম...”, “এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠানদীর পানি/ খোদা তোমার মেহেরবানী...”, “ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়...”, “আল্লাহকে যে পাইতে চায় হজরতকে ভালবেসে...”, “নবী মোর পরশমনি, নবী মোর সোনার খনি...”র মত গান তাঁর অন্তরে গাঁথা ছিল।

ক্রমশ


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই সিরিজে যেই মহিয়সীর কথা বলা হয়েছে, তিনি আমার সম্পর্কে আমার নানী হন (আমার নানার বড় বোন)। সকলকে বিনীর অনুরোধ রাখছি লেখাটি পড়বার জন্য।

আমার এই নানী যুগের তুলনায় অনেক, অনেক অগ্রসর ছিলেন। ভাবলে অবাক লাগে যে এমন মানুষও হওয়া সম্ভব।

রানা [অতিথি] এর ছবি

অসম্ভব ভাল লাগছে আপনার এই সিরিজ । কার্পণ্য করবেন না যেন । বিশদে চলতে থাকুক ।

আপনার মা আমার নানুর সমসাময়িক । অনেক মিল পেলাম । দুঃখজনক হলেও সত্যি এখন এরকম দৃঢ়চেতা মানুষ পাওয়া দুষ্কর । ইশতির "আমার এই নানী যুগের তুলনায় অনেক, অনেক অগ্রসর ছিলেন" মন্তব্যের সাথে তাই সামান্য দ্বিমত করছি । আমার মানে হয় তিনি আজকের যুগের তুলনায়ও অনেক অগ্রসর । আসলে যা সুন্দর আর সুষম তা সব যুগের বিচারেই এগিয়ে থাকবে।

জোহরা ফেরদৌসী  এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে । আমার মাকে নিয়ে এই লেখাটির আসল প্রনোদনাটি হচ্ছে এই অসাধারন মানুষটির সঙ্গে সঙ্গে সকল মাকে আমার শ্রদ্ধা জানানো । বেঁচে থাকলে মা আমাকে এই লেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে দিতেন না । তিনি সকল সময় অন্তরালে থেকে আমাদেরকে “মানুষ” করার কাজটি করেছেন । কতটুকু মানুষ হয়েছি তার প্রমান বাকী জীবন দিয়ে যেতে হবে ।
আমার মাকে নিয়ে আমার সবচেয়ে বড় যে বিস্ময় তা হলো, বেঁচে থাকতে কোনদিন মনে হয়নি মার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দৌড় মাত্র অষ্টম শ্রেনী । সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে এতো সহজে মিশেছেন যে সত্যিই মনে হয়েছে মা আমার পরশ পাথরের সন্ধানে খ্যাপার জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন ।

মৃত্তিকা এর ছবি

সবগুলো পর্ব পড়লাম। খুব ভালো লাগলো আপনার মা'কে নিয়ে স্মৃতিচারণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পথটি সম্পূর্ণ করতে না পারলেও তিনি একজন সত্যিকারের আলোকিত মানুষ হতে পেরেছিলেন, আর আপনারা সত্যিই ভাগ্যবান এরকম একজন আদর্শ মা পেয়ে। এরকম মানুষ যুগ যুগ ধরে অনন্য, অনেক যুগ পরেও আধুনিক।

পড়তে গিয়ে অনেক কথাই পেলাম যা কোট করেছেন, অর্থাৎ যা তিনি নিজে বলেছিলেন নানান সময়ে, সেসব বাক্য খুবই সুন্দর, খুবই অর্থপূর্ণ, জীবনচারণের দর্শনস্বরূপ। ভালো লেগেছে সেসব। এবং ভালো লেগেছে আপনার লেখা কবিতাটিও।

শ্রদ্ধা থাকলো তাঁর আত্নার প্রতি।

জোহরা ফেরদৌসী  এর ছবি

ধন্যবাদ মৃত্তিকা । আসলেই আমরা ভাইবোনরা অনেক ভাগ্যবান এমন মা পেয়ে । শোকের এই সময়ে যখন দূ’চোখ দৃষ্টি আঁধার করে আসে, তখনো আমি আমার মায়ের শিক্ষাকে আলোক শিখা হয়ে জ্বলতে দেখি আমার সামনে । সত্যিই স্বার্থক জনম মাগো তোমার চোখে প্রথম বিশ্ব দেখে ।

ভুতুম এর ছবি

চমৎকার লাগছে। চালিয়ে যান।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

জোহরা ফেরদৌসী  এর ছবি

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে পড়ার জন্য ।

সাফি এর ছবি

ভাল লাগল। সকল মাদের শ্রদ্ধা।

জোহরা ফেরদৌসী  এর ছবি

ধন্যবাদ । সকল মায়ের প্রতি আমারও অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ।

জোহরা ফেরদৌসী  এর ছবি

ধন্যবাদ । সকল মায়ের প্রতি আমারও অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ।

জোহরা ফেরদৌসী  এর ছবি

ধন্যবাদ । সকল মায়ের প্রতি আমারও শ্রদ্ধা রইল । আমার মা বলতেন, “বিশিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করো না । বরংচ, সাধারনের একজন হও । মানুষের ভালবাসায় বেঁচে থাকবে ।” বিস্মিত হই এই ভেবে যে কোথাও শিখলো মা আমার মানুষের ভালবাসায় বেঁচে থাকার এই মন্ত্র ?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।