নজরুল ও রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৬/০৩/২০১০ - ১১:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই বইটা মেলার শেষ দিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে কেনা। কোন পূণ্যে সেদিন ভীড়ভাট্টার মধ্যে ওই স্টলটাই খুঁজে বেরাচ্ছিলাম জানি না। এমনিতেই মেজাজ খিচড়ে ছিল- আমার আঙিনায় বইমেলা হয়ে যায়, আর আমি আসি মেলার শেষদিন।কেন? কারণ পরীক্ষা শুরু হয়েছে, পড়তে হবে ভাল রেসাল্ট করতে হবে, ট্যাকা কামাতে হবে, নিদেনপক্ষে সম্মান। মুখ তেতো করে সহপাঠীদের নিয়ে মেলায় আসা।

স্টলটা পেতে না পেতেই বইটার উপরে চোখ পড়ল- 'রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম', নিচে লেখকের নামটা সাদা হরফে জ্বলজ্বল করছে, কাজী নজরুল ইসলাম। তারপর আর কি, বইটা কিনে বগলদাবা করে কিছুক্ষণ বাকুম বাকুম করা। দ্রষ্টব্য যে বইটা আমি তিন বছর যাবত মেলায় নিষ্ফল খুঁজেছি।

বই খুলে বিস্ময়ের উপর বিস্ময়- এ কোন নজরুল! ভূমিকাটা পড়ে আমি তাজ্জব অভিভূত। যে নজরুলকে এতদিন তত্ত্বে চিনলাম, তাকে যেন বাস্তবে জানলাম। নতুনভাবে দেখলাম, নতুনভাবে পেলাম।সেই সাথে ওমরকেও।

সেই ভূমিকারই কথা বলছি। মনে হল এটা সাহিত্যপ্রেমীদের না পড়লেই নয়। অনেকেই হয়ত এটা পড়েছেন, আবার অনেকেই পড়েননি। সবার জন্যই ভূমিকাটা এখানে দিলাম। আশা করি ভাল লাগবে পড়ে।

ভূমিকা

ওমরের কাব্য পড়ে যারা তাকে Epicurean অভিহিত করেন, তারা পূর্ণ সত্য বলেন না। ওমরের কাব্য সাধারণত ছয় ভাগে বিভক্তঃ-
১। শিকায়াত-ই-রোজগার, অর্থাৎ গ্রহের ফের বা অদৃষ্টের প্রতি অনুযোগ।
২। হজও, অর্থাৎ ভন্ডদের, বকধার্মিকদের প্রতি শ্লেষ-বিদ্রুপ ও তথাকথিত আলেম বা জ্ঞানীদের দাম্ভিকতা ও মূর্খদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ।
৩। ‘ফিরাফিয়া’ ও ‘ওসালিয়া’ বা প্রিয়ার বিরহে ও মিলনে লিখিত কবিতা।
৪। বাহরিয়া- বসন্ত, ফুল, বাগান, ফল, পাখি ইত্যাদির প্রশংসায় লিখিত কবিতা।
৫। কুফরিয়া- ধর্মশাস্ত্র-বিরুদ্ধ কবিতা সমূহ। এইগুলি ওমরের শ্রেষ্ঠ কবিতা রূ্পে কবি সমাজে আদৃত স্বর্গ-নরকের অলীক কল্পনা, বাহ্যিক উপা্সনার অসারতা, পাপ-পূণ্যের মিথ্যা ভয় ও লাভ ইত্যাদি নিয়ে লিখিত কবিতাগুলি এর অন্তর্গত।
৬। মুনাজাত বা খোদার কাছে প্রার্থনা। এ প্রার্থনা অবশ্য সাধারণের মত প্রার্থনা নয়, সূফির প্রার্থনার মত এ হাস্য-জড়িত।
ওমরকে Epicurean কতকটা বলা যায় শুধুমাত্র তাঁর কুফরিয়া শ্রেণীর কবিতার জন্য। এছাড়া, ওমর যা, তা ওমর ছাড়া আর কারুর সাথেই তুলনা হয় না।
ওমরের কাব্যে শারাব-সাকির ছড়াছড়ি থাকলেও তিনি জীবনে ছিলেন আশ্চর্য রকমের সংযমী। তাঁর কবিতায় যেমন ভাবের প্রগাঢ়তা, অথচ সংযমের আঁটসাঁট বাঁধুনী, তাঁর জীবনও ছিল তেমনি।

ফিটজেরাল্ডের মুখে ঝাল খেয়ে অনেকেই বলে থাকেন, ওমর যে শারাবের কথা বলেছে তা দ্রাক্ষাসব, তাঁর সাকিও রক্ত-মাংসের। ফিটজেরাল্ড তার মতের পরিপোষকতার কোন প্রমাণ দেননি। তার মতে মত দিয়েছেন যারা, তারাও কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। ওমর তার রুবাইয়াতে অবশ্য শারাব বলতে আঙ্গুলের ক্বাথ-এর উল্লেখ করেছেন; কিন্তু ওটা পারস্যের সব কবিরই অন্তত “বলার জন্য বলা”র বিলাস।শারাব, সাকি, গোলাপ, বুলবুলকে বাদ দিয়ে যে কবিতা লেখা যায়, তা ইরানের কবিরা যেন ভাবতেই পারেন না।
ওমর হয়ত শারাব পান করতেন কিংবা করতেনও না। এর কোনটাই প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত সত্য বলে মেনে নেয়া যায় না। ওমরের রুবাইয়াতের মতবাদের জন্য তাঁর দেশের ততকালীন ধর্মগোড়াদের অত্যন্ত আক্রোশ ছিল, তবু তাকে দেশের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বলে সম্রাট থেকে জনসাধারণ পর্যন্ত ভক্তির চোখে দেখত। সে যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষীরা ওমরের ছাত্র ছিলেন; কাজেই মনে হয়, তিনি মদ্যপ-লম্পটের জীবন (ইচ্ছা থাকলেও) যাপন করতে পারেননি। তা ছাড়া, গোঁড়ার দল তা লিখে রাখতেও ভুলে যেতেন না। অথচ তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুও তা লিখে যাননি। সাধারণের শ্রদ্ধাভাজন হওয়ার শাস্তি তাকে পেতে হয়েছিল হয়ত এভাবেই যে, তিনি নিজের স্বাধীন ইচ্ছামত জীবন যাপন করতে পারেননি। শারাব-সাকির স্বপ্নই দেখেছেন- তাদের ভোগ করে যেতে পারেননি। ভোগ-তৃপ্ত মনে এমন আগুন জ্বলে না। এ যে মরুভূমি-নিম্নে হয়ত বহু নিম্নে কান্নার ফল্গুধারা, উর্ধ্বে রৌদ্র-দদ্ধ বালুকার জ্বালা, তীব্র দাহন। ওমর যেন মরুভূমির বুকে খর্জুর-তরু, মরুভূমির খেজুরগাছকে দেখলে যেমন অবাক হতে হয়- ওমরকে দেখেও তেমনি বিস্মিত হই। সারা দেহে কন্টকের জ্বালা, উর্ধ্বে রৌদ্র-তপ্ত আকাশ, নিম্নে আতপ-তপ্ত বালুকা- তারি মাঝে এত রস পায় সে কেমন করে?
খেজুর গাছের মতই ওমর এ-রস দান করেছেন নিজের বিদারণ করে। এ রস মিষ্ট হলেও এ ত অশ্রুজলের লবণ মেশা। খেজুর-গাছের রস যেমন তার মাথা চেঁছে বের করতে হয়, ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতও বেরিয়েছে তার মস্তিষ্ক থেকে, প্রায় হাজার বছর আগে এত বড় জ্ঞানমার্গী কবি কি করে জন্মাল, বিশেষ করে ইরানের মত অনুভূতিপ্রবণ দেশে- তা ভেবে অবাক হতে হয়। ওমরকে দেখে মনে হয়, কোন বিংশ শতাব্দীর কবিও বুঝি এত মডার্ণ হতে পারেন না। ওমরকে লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়েছিল তা বুঝি তার ওই হাজার বছর আগে জন্মাবার জন্যেই। আজকাল পৃথিবীর কোন মডার্ণ কবিই তার মত মডার্ণ নন, তরুণও নন। বিংশ শতাব্দীর জ্ঞান-প্রবুদ্ধ লোকও তার সব মতও বুঝি হজম করতে পারেন না। ওমর আজ জগতের অপরিমাণ শ্রদ্ধা পাচ্ছেন- তবু মনে হয়, আরো চার পাঁচ শতাব্দী পরে তিনি আরো বেশি শ্রদ্ধা পাবেন- যা পেয়েছেন তার বহু সহস্র গুণ।

ওমর তার অসময়ে আসা সম্বন্ধে যে অত বেশি সচেতন ছিলেন, তা তার লেখার দুঃসাহসিকতা, পৌরুষ ও গভীর আত্মবিশ্বাস দেখেই বুঝা যায়। তিনি যেন তার কাছে, আর-সব মানুষকে অতি ক্ষুদ্র Pigmy করে দেখতেন।
তিনি নিজেকে এই সব ক্ষুদ্র-জ্ঞান মানুষের, এমনকি সে-যুগের তথাকথিত শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীগণেরও বহু বহু উর্ধ্বে মনে করতেন। তিনি যেন জানতেন- তার জীবনে তার লেখা বুঝবার মত লোক কেউ জন্মায়নি, তিনি যা লিখেছেন তা অনাগত দিনের নূতন পৃথিবীর জন্য।

ওমর সূফী ছিলেন কিনা জানিনে, কিন্তু ঐ পথের পথিক যারা তার ওমরকে সূফী এবং খুব উঁচু দরের তাপস মনে করেন। তাঁরা বলেন, সূফী জনপ্রিয়তার বা লোকের শ্রদ্ধার জুলুম এড়াবার জন্যই ঘোরতর পাপ পরিহার করেন। তারা নিজেদের মদ্যপ লম্পট বলে স্বেচ্ছানির্বাসন বরণ করে নিজেরা গুপ্ত সাধনায় মগ্ন থাকেন। তাছাড়া, ইরানে কবির শারাবকে সকলে সত্যিকার মদ বলে ধরে নেন না। তাঁরা শারাব বলতে আনন্দ-ভূমানন্দকে বোঝেন- যে আনন্দ-রূপিনী সুরার নেশায় তাপস-ঋষি সংসারের সব ভুলে গিয়ে আপনাতে আপনি বিভোর হয়ে থাকেন। সাকি বলতে বোঝান মুর্শিদকে, গুরুকে, যিনি সেই আনন্দ-শারাব পরিবেশন করেন। যাক, ও-সব তত্ত্বকথা দিয়ে আমাদের প্রয়োজন নেই, কেননা আমরা তত্ত্বজিজ্ঞাসু নই, আমরা রসপিপাসু। ওমর কবিতা লিখেছেন, এবং তা চমতকার কবিতা হয়েছে, আমাদের পক্ষে এই যথেষ্ট। আমরা তা পড়ে অত্যন্ত আনন্দ পাই, আমাদের এতেই আনন্দ।

আমাদের কাছে, বিংশ শতাব্দীর জ্ঞান-বিজ্ঞান-পুষ্ট কারণ-জিজ্ঞাসু মনের কাছে, ওমরের কবিতা যেন আমাদেরই প্রশ্ন, আমাদেরই প্রাণের কথা। আমরা জিজ্ঞাসা করি-করি করেও যেন সাহস ও প্রকাশ-ক্ষমতার দৈন্যবশত তা জিজ্ঞাসা করতে পারছিলাম না। বিগত মহাযুদ্ধের মতই আমাদের আজকের জীবন- মহাযুদ্ধ-ক্লান্ত অবিশ্বাসী-মন জিজ্ঞাসা করে ওঠে- কেন এই জীবন, মৃত্যুই বা কেন? স্বর্গ, নরক, ভগবান বলে সত্যই কিছু আছে? আমরা মরে কোথায় যাই? কেন এই হানাহানি? এই অভাব, দুঃখ, শোক?- এমনতর অগুনতি প্রশ্ন, যার উত্তর কেউ দিতে পারেনি। যে উত্তর দিয়েছে সে তার উত্তরের প্রমাণে কিছুই দেখাতে পারেনি; শুধু বলেছে- বিশ্বাস কর! তবু আমাদের মন বিশ্বাস করতে চায় না, সে তর্ক করতে শিখেছে। এই চিরন্তন প্রশ্ন ওমরের জ্ঞান-প্রশান্ত মনে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ঝড়ের মতই দোল দিয়েছিল। সেই তরঙ্গ-সংঘাতের সঙ্গীত, বিলাপ, গর্জন শুনতে পাই তার রুবাইয়াতে। ওমরকে বিংশ শতাব্দীর মানুষের ভালো-লাগার কারণ এই।

ওমর বলতে চান, এই প্রশ্নের হাত এড়াবার জন্য কত অবতার পয়গাম্বর এলেন, তবু যে প্রশ্ন সেই প্রশ্নই রয়ে গেল! মানুষের দুঃখ এক তিলও কমল না। ওমর তাই বললেন, এ-সব মিথ্যা, পৃথিবী মিথ্যা, স্বর্গ মিথ্যা, পাপ-পুণ্য মিথ্যা, তুমি মিথ্যা, আমি মিথ্যা, সত্য মিথ্যা, মিথ্যা মিথ্যা। একমাত্র সত্য- যে মুহূর্ত তোমার হাতের মুঠোয় এল তাকে চুটিয়ে ভোগ করে নাও। স্রষ্টা যদি কেউ থাকেনও, তিনি আমাদের দুঃখ-সুখে নির্বিকার- আমরা তার হাতের খেলা-পুতুল। সৃষ্টি করছেন ভাঙছেন তার খেয়াল মত, তুমি কাঁদলেও যা হবে, না কাঁদলেও তাই হবে, যা হবার তা হবেই। যে মরে গেল, সে একেবারেই মরে গেল; সে আর আসবেও না বাঁচবেও না। তাঁর পাপ-পূণ্য স্রষ্টারই আদেশ- তার খেলা জমাবার জন্য। মোট কথা, স্রষ্টা একটা বিরাট খেয়ালী শিশু বা ঐন্দ্রজালিক।

আমি ওমরের রুবাইয়াত বলে পরিচিত প্রায় এক হাজার রুবাই থেকেই কিঞ্চিদধিক দু’শ রুবাই বেছে নিয়েছি; এবং তা ফার্সী ভাষার রুবাইয়াত থেকে। কারণ্ আমাদের বিবেচনায় এইগুলি ছাড়া বাকি রুবাই ওমরের প্রকাশভঙ্গি বা স্টাইলের সঙ্গে একেবারে মিশ খায় না। রবীন্দ্রনাথের কবিতার পাশে আমার মত কবির কবিতার মত তা একেবারে বাজে। বাকিগুলিতে ওমর খৈয়ামের ভাব নেঈ, ভাষা নেই, গতি ঋজুতা- এক কথায় স্টাইলের কোন কিছুই নেই। খুব সম্ভব সেগুলো অন্য-কোন পদ্য-লিখিয়ের লেখা। আর তা যদি ওমরেরই হয়, তবে তা অনুবাদ করে পন্ডশ্রম করার দরকার নেই। বাগানের গোলাপ তুলব; তাই বলে বাগানের আগাছাও তুলে আনতে হবে এর কোন মানে নেই।

আমি আমার ওস্তাদি দেখাবার জন্য ওমর খৈয়ামের ভাব ভাষা বা স্টাইলকে বিকৃত করিনি- অবশ্য আমার সাধ্যমত। এর জন্য আমার অজস্র পরিশ্রম করতে হয়েছে, বেগ পেতে হয়েছে। কাগজ-পেন্সিলের যাকে বলে আদ্যশ্রাদ্ধ, তাই করে ছেড়েছি। ওমরের রুবাইয়াতের সবচেয়ে বড় জিনিস ওর প্রকাশের ভঙ্গি বা ঢং। ওমর আগাগোড়া মাতালের ‘পোজ’ নিয়ে তাঁর রুবাইয়াত লিখে গেছেন- মাতালের মতই ভাষা, ভাব, ভঙ্গি, শ্লেষ, রসিকতা, হাসি, কান্না- সব। কত বতসর ধরে কত বিভিন্ন সময়ে তিনি এই কবিতাগুলি লিখেছেন, অথচ এর স্টাইল সম্বন্ধে কখনো এতটুকু চেতনা হারাননি। মনে হয় একদিনে বসে লেখা। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি- ওমরের সেই ঢংটির মর্যাদা রাখতে, তাঁর প্রকাশভঙ্গির যতটা পারি কায়দায় আনতে। কতদূর সফল হয়েছি তা ফার্সি-নবিশেরাই বলবেন।

ওমর খৈয়ামের ভাবে অনুপ্রাণিত ফিটজেরাল্ডের কবিতার যারা অনুবাদ করেছেন, -শোনাবে না হয়ত আমার এ অনুবাদ। যদি না শোনায়, সে আমার শক্তির অভাব সাধনার অভাব, কেননা কাব্য-লোকের গুলিস্তান থেকে সঙ্গীতলোকের রাগিনী-দ্বীপে আমার দ্বীপান্তর হয়ে গেছে। সঙ্গীত-লক্ষ্মী কাব্য-লক্ষ্মী দুই বোন বলেই বুঝি ওদের মধ্যেই এত রেশারেশি। একজনকে পেয়ে গেলে আরেকজন বাপের বাড়ি চলে যান। দুইজনকে খুশি রাখার মত শক্তি রবীন্দ্রনাথের মত লোকেরই আছে। আমার সে সম্বলও নেই, শক্তিও নেই। কাজেই, আমার অক্ষমতার দরুণ কেউ যেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ওমরের উপর চটে না যান।

ওমরের রুবাইয়াত বা চতুষ্পদী কবিতা চতুষ্পদী হলেও তার চারটি পদই ছুটেছে আরবী ঘোড়ার মত দৃপ্ত তেজে সম-তালে- ভন্ডামী, মিথ্যা বিশ্বাস, সংস্কার, বিধি-নিষেধের পথে ধূলি উড়িয়ে তাদের বুক চূর্ণ করে। সেই উচ্চৈঃশ্রবা আমার হাতে পড়ে হয়ত বা বজদ্দি মোড়লের ঘোড়াই হয়ে উঠেছে- আমাদের গ্রামের কাছে এক জমিদার ছিলেন, তার নাম বজদ্দি মোড়ল। তার এক বাগ-না-মানা ঘোড়া ছিল, সে জাতে অশ্ব হলেও গুনে অশ্বতর ছিল। তিনি যদি মনে করতেন পশ্চিম দিকে যাবেন, ঘোড়া যেত পূর্ব দিকে। ঘোড়াকে কিছুতেই বাগ মানাতে না পেরে শেষে বলতেন- “আচ্ছা চল, এদিকেও আমার জমিদারি আছে।”

ওমরের বোররাক বা উচ্চৈঃশ্রবাকে আমার মত আনাড়ি সয়ার সে বাগ মানাতে পারবে, সে ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে উক্ত বজদ্দি মোড়লের মতো সে ঘোড়াকে তার ইচ্ছামতো পথেও যেতে দিইনি। লাগাম কষে প্রাণপণ বাধা দিয়েছি, যাতে সে অন্য পথে না যায়। অবশ্য মাঝে মাঝে পড়ব-পড়ব অবস্থাও যে হয়েছে, তা আমার হাতে পড়ে চতুষ্পদী ভেড়াও হয়ে যায়নি- প্রাণহীন চার-পায়াও হয়নি। আমি ন্যাজ মলে মলে ওর অন্তত তেজটু্কু নষ্ট করিনি। ওর মত ‘ছাতক’(সার্থক) না হতে না পারলেও অন্তত ‘কদমে’ চালাবার কিছু চেষ্টা করেছি।

যাক, অনেক বকা গেল; এর জন্য যারা আমাকে দোষ দেবেন- তারা যেন আমার দোষ দেবার আগে খৈয়ামের শারাবকে দোষ দেন। এর নামেই এত নেশা, পান করলে না জানি কি হয়, হয়ত বা ওমর খৈয়ামই হয়। অবশ্য আমরা খেলে এই রকম বখামি করি, ওমর খেলে রুবাইয়াত লেখেন।

এইবার কৃতজ্ঞতা নিবেদনের পালা। খাওয়ানোর শেষে বিনয় প্রকাশের মত। না করলেও হয়, তবু দেশের রেওয়াজ মেনে চলতেই হবে।

আমার বহুকালের পুরানো বন্ধু মৌলভী মঈনউদ্দীন হোসেন সাহেব এর সমস্ত কিছু সরবরাহ না করলে হয়ত আমি কোনদিনই এ শেষ করতে পারতাম না। তার কাছে আমি এজন্য চির-ঋণী। শ্রীমান আবদুল মজিদ সাহিত্য-রত্নও যথেষ্ট সাহায্য করেছেন আমার প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য। এদের দু’জনারই নাম আছে সাহিত্যে, কাজেই কেবল আমার বই এ নাম থাকার জন্য এরা পরিচিত হবেন না। আমার সাহায্য করার মতি এদের অটল থাক, এই-ই প্রার্থনা।
কাজী নজরুল ইসলাম

[i]ফারাবী


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভূমিকাটা পড়তে ভালই লাগল। তবে যদি এর সঙ্গে আপনার নিজস্ব কিছু আলোচনাও থাকত ওমর বা নজরুলের অনুবাদ নিয়ে, যদি এক-আধটা আপনার প্রিয় রুবাইয়াৎ সঙ্গে ফাউ দিতেন, তাহলে ভাল লাগত আরো।
আপনি কষ্ট করে এতটা টাইপ করেছেন আমাদের পড়াতে, সেজন্য ধন্যবাদ। কিন্তু কিছু মৌলিক আলোচনা থাকলে আরো ভাল হত। পরের বার পাব আশা করি।

কৌস্তুভ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার সাজেশনটা মনে ধরল কৌস্তুভ। আমার মত নালায়েক নজরুলের অনুবাদের কতটা কি আলোচনা করতে পারবে জানি না, তবে কিছু পছন্দের রুবাইয়াত দেয়া যায় বৈকি। আপাতত এ ক'টা দিলাম, এগুলোর অনুবাদ আর ভাব দু'টৈ সরেস মনে হয়েছে আমার কাছে।

২৫

তুমি আমি জন্মিনি কো- যখন শুধু বিরামহীন
নিশীথিনীর গলা ধরে ফিরতো হেথায় উজল দিন,-
বন্ধু, ধীরে চরণ ফেলো! কাজল-আঁখি সুন্দরীর
আঁখির তারা আছে হেথায় হয়ত ধূলির অঙ্কলীন!

৪১

অজ্ঞানেরই তিমির তলের মানুষ ওরে বে-খবর!
শূণ্য তোরা, বুনিয়াদ তোর গাঁথা শূণ্য হাওয়ার 'পর।
ঘুরিস অতল অগাধ খাদে, শূণ্য মায়ার শূণ্যতায়,
পশ্চাতে তোর অতল শূণ্য, অগ্রে শূণ্য অসীম চর।

৫০

এক হাতে মোর তসবি খোদার, আর হাতে মোর লাল গেলাস,
অর্ধেক মোর পুণ্য-স্নাত, অর্ধেক পাপে করল গ্রাস।
পুরোপুরি কাফের নহি, নহি খাঁটি মুসলিমও-
করুণ চোখে হেরে আমায় তাই ফিরোজা নীল আকাশ।

৩৮

মুসাফিরের এক রাত্রির পান্থ-বাস এ পৃথ্বীতল-
রাত্রি-দিবার চিত্রলেখা চন্দ্রাতপ আঁধার-উজল।
বসল হাজার জামশেদ ঐ উতসবেরই আঙ্গিনায়
লাখ বাহরাম এই আসনে বসে হল বেদখল।

৫৮

বিধর্মীদের ধর্মপথে আসতে লাগে এক নিমেষ,
সন্দেহেরই বিপথ-ফেরত বিবেক জাগে এক নিমেষ।
দুর্লভ এই নিমেষটুকু ভোগ করে নাও প্রাণ ভরে,
এই ক্ষণিকের আয়েশ দিয়ে জীবন ভাসে এক নিমেষ।

৭১

আমার ক্ষণিক জীবন হেথায় যায় চলে ঐ ত্রস্ত পায়
খরস্রোতা স্রোতস্বতী কিংবা মরু-ঝঞ্ঝা প্রায়।
তারই মাঝে এই দু'দিনের খোঁজ রাখি না- ভাবনা নাই,
যে গত-কাল গত, আর যে আগামী-কাল আসতে চায়।

৬৬

চৈতী-রাতে খুঁজে নিলাম তৃণাস্তৃত ঝর্ণা-তীর,
সুন্দরী এক হুরী নিলাম, পেয়ালা নিলাম লাল পানির
আমার নামে বইল হাজার কুতসা গ্লানির ঝড় তুফান,
ভুলেও মনে হল না মোর স্বর্গ নরকের নজির।

সব অনুবাদ এত স্বতঃস্ফূর্ত হয়নি অবশ্যই, তা সম্ভবও নয়। কবিতা অনুবাদ এম্নিতেই একটা অতিব দুরুহ ব্যাপার, আমার কাছে কবিতার যথার্থ অনুবাদ ত অসম্ভবই মনে হয়। তবুও নজরুল ঘাম ছুটিয়ে যতটুকু সম্পন্ন করেছেন তা আমাদের মত কাব্যপ্রেমীদের জন্য যথেষ্ট। সব জায়গায় আড়ষ্টতা কাটাতে পারেননি, প্রকৃত ভাব নষ্ট হবার ভয়েই বোধ করি, এবং নিজেকে যথাসাধ্য দূরে সরিয়ে সততারও পরিচয় দিয়েছেন- এরপরও মনে হয় যেগুলোতে কবি ঘোড়া সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেগুলোই বেশি টগবগিয়ে ছুটেছে।

ওমরের কবিতা যে কতভাবে কতজন অনুবাদ করেছে তা সৈয়দ মুজতবা আলিই লেখাতেই প্রতিষ্ঠিত। তার এক রচনায় ওমরের একই রুবাইয়াতের তিন রকম অনুবাদ পড়ে হতভম্ব হতে হয়, এবং আরেকবার মানতে হয় কবিতা কতটা আপেক্ষিক জনে জনে। একই কাব্য বিভিন্ন মনে বিভিন্ন তাতপর্য পায়, আর তাছাড়া অনুবাদক কোন ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন- ভাব, কবির নিজস্বতা ইত্যাদি- সেটার প্রভাব তো আছেই।

ফারাবী

অতিথি লেখক এর ছবি

রুবাইয়াৎ গুলি পড়তে দেবার জয় অনেক ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন, এ বিষয়ে আলীসাহেবের প্রবন্ধটি বড়ই সুপাঠ্য। আমার মতে ওনার ছন্দ নিয়ে আলোচনাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নজরুলের অনুবাদে ছন্দ অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত ধারাগুলির থেকে আলাদা। কান্তি ঘোষ বরং ভাষা বা ছন্দ বাবদ অনেক বেশি প্রচলিত রীতির অনুসারী।

কৌস্তুভ

অতিথি লেখক এর ছবি

কান্তি ঘোষের অনুবাদ তেমন পড়িনি, আপনার সংগ্রহে থাকলে দু'একটা এখানে যোগ করতে পারলে ভাল হয়। তবে পার্থক্য ধরা যেত। আর প্রথা-বিরোধিতার প্রসঙ্গে- নজরুলের স্বভাবই তাই। আর তা দোষের থেকে গুণ বলেই বিবেচিত হয় জানি।

প্রথার কথা জানি না, তবে অনুবাদ মাত্রই কিছুটা কমতি থাকতে বাধ্য। কোথায় যেন পড়েছিলাম, অনুবাদ করার মানে হল এক পাত্রের জল অন্য পাত্রে ঢালার মত, কিছু না কিছু উপছে পড়বেই।

রুবাই গুলো পড়লে আরো উপলব্ধি করা যায়, নজরুলের জীবনে এদের প্রভাব অনেকখানি। তার দৃষ্টিভঙ্গি, চেতনা- অনেককিছুর প্রতিফলন এগুলোতে পাওয়া যায়।

ফারাবী

হুমায়রা এর ছবি

ফারাবী
আমার ই-ম্যাগাজিনের এবারের সংখ্যা রুবাইয়্যাতের ওপর, যেখানে কাজী নজরুলের লেখা খুঁজছিলাম । আপনার ব্লগে তা পেয়েও গেলাম। আপনার অনুমতি হলে নজরুলের লেখাগুলো কি আমি নিতে পারি? নজরুল ছাড়া এ প্রকাশনা অসম্পূর্ণ। প্রকাশের ক্ষেত্রে আপনার নামটি উল্লেখিত থাকবে সংগ্রহকারক হিসেবে অবশ্যই।
ধন্যবাদ।
হুমায়রা
ম্যাগাজিন লিংক http://www.nauba-aloke-bangla.com/

পলাশ দত্ত এর ছবি

ভালো।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

কোনটা ভাল সেটা একটু বুঝিয়ে বললে বোধ করি আরো ভাল হত। ঃ)

ফারাবী

পলাশ দত্ত এর ছবি

নজরুলের রুবাইয়াত্ অনুবাদের বইটা খুজে পাওয়াটা।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

ওহ, সে আর বলবেন না, জন্ম সার্থক করা ব্যাপার! হাসি

ফারাবী

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কোরান-হাদিস সবাই বলে পবিত্র সে বেহেশ্‌ত নাকি,
মিলবে যেথায় আসল শরাব, তন্বী-হুরী ডাগর আঁখি।
শরাব এবং প্রিয়ায় নিয়ে দিন কাটে মোর দোষ তাতে কী?
বেহেশ্‌তে যা হারাম নহে, মর্ত্যে হবে হারাম তাকি!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

বহত খুব, বহত খুব! আরেকটা চলুক তবে-

শীত ঋতু ঐ হল গত, বইছে বায় বসন্তেরি,
জীবন-পুঁথির পাতাগুলি পড়বে ঝরে, নাই দেরি।
ঠিক বলেছেন দরবেশ এক, "দুষিত বিষ এই জীবন,
দ্রাক্ষার রস বিনা ইহার প্রতিষেধক নাই, হেরি।"

ফারাবী

পুতুল এর ছবি

বাহ বাহ বাহ
বহুত খুব
রুবাইয়াৎআরো কয়েক পেগ চাই।

সচলায়তনে স্বাগতম।

বেহেশ্‌তে যা হারাম নহে, মর্ত্যে হবে হারাম তাকি!

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

এই গেল তিন পেগ, চুটিয়ে গিলুন সবাই-

৫২

বিষাদের ঐ সওদা নিয়ে বেড়িয়ো না ভাই শিরোপরি,
আঙ্গুর-কন্যা সুরার সাথে প্রেম করে যাও প্রাণ ভরি'।
নিষিদ্ধা ঐ কন্যা, তবু হোক সে যতই অ- সতী,
তাহার সতী মায়ের চেয়ে ঢের বেশি সে সুন্দরী।

৭২

আর কতদিন সাগর-বেলায় খামকা বসে তুলব ইট!
গড় করি পায়, ধিক লেগেছে গ'ড়ে গ'ড়ে মূর্তি পীঠ।
ভেবো নাকো- খৈয়াম ঐ জাহান্নামের বাসিন্দা,
ভিতরে সে স্বর্গচারী, বাহিরে সে নরক-কীট।

৭৮

আরাম করে ছিলাম শুয়ে নদীর তীরে কাল রাতে,
পার্শ্বে ছিল কুমারী এক, শারাব ছিল পিয়ালাতে;
স্বচ্ছ তাহার দীপ্তি হেরি' শুক্তি-বুকে মুক্তা-প্রায়
উঠল হেঁকে প্রাসাদ-রক্ষী, "ভোর হল কি আধ-রাতে?"

ফারাবী
--------------------------------

হে মহামানব, এখানে শুকনো পাতায় আগুন জ্বালো!

পুতুল এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ ফারাবী।
কিন্তু সমস্যা কী জানেন?
না আপনাকে তা বলতে হবে না।
পেয়ালা চলুক।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

সমস্যা বলে ফেল্লেই সমাধানের সুযোগ হয়। বলে ফেলুন, কি আছে জীবনে! হাসি

পুতুল এর ছবি

কি আছে জীবনে?
ইচ্ছে করে পুরো বইটা পড়ি। সেটা কোন সমস্যা না হলে পুরোটা দিন। কি আছে জীবনে?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহাহা... ও, এই কথা। সত্যি বলতে, আমি প্রায় প্রতিদিন-ই আমার প্রবাসী বন্ধুকে কিছু করে রুবাই পাঠাচ্ছি। চাই কি, আপ্নাকেও দিতে পারি। কিংবা আরও সমর্থন পাই ত এই ব্লগেও ক'টা করে দেয়া যায়, বোদ্ধারা পড়ে নিক। সমঝদারদের সাথে এসব শেয়ার করতেও ত আনন্দ, কি বলেন?

ফারাবী

----------------------------
হে মহামানব, এখানে শুকনো পাতায় আগুন জ্বালো!

অতিথি লেখক এর ছবি

নিশ্চয়ই, আপনার পেয়ালা-ই-রুবাইয়াৎ যেন কখনো খালি না হয়...

কৌস্তুভ

অতিথি লেখক এর ছবি

উপ্স, দুবার চলে গেছিল বোধয়! খাইছে

ফারাবী

পলাশ দত্ত এর ছবি

্আপনার এই কর্মে ইচ্ছা করতেছে জালালউদ্দিন রুমির কয়টা (রুবাই বলা যায়?) লেখা বাংলা করে এখানে দেয়া শুরু করি।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

বলেন কি ভাইয়া! আপনার মনে এত বড় ইচ্ছা জাগাতে সক্ষম হয়েছে আমার কীর্তিকর্ম!! শিগগিরি শুরু করেন, দেরি কিসের! দেঁতো হাসি

ফারাবী

অতিথি লেখক এর ছবি

দু'একজন যখন সমর্থন দিচ্ছেন তখন, হেহে, আরো কিছু দেই। এবার প্রথম থেকে-


রাতের আঁচল দীর্ণ করে আসলো শুভ ঐ প্রভাত,
জাগো সাকি! সকাল বেলার খোঁয়ারি ভাঙো আমরা সাথ।
ভোলো ভোলো বিষাদ-স্মৃতি! এমনি প্রভাত আসবে ঢের,
খুঁজতে মোদের এইখানে ফের, করবে করুণ নয়নপাত।


আঁধার অন্তরীক্ষে বুনে যখন রূপার পাড় প্রভাত,
পাখির বিলাপ-ধ্বনি কেন শুনি তখন অকস্মাত!
তারা যেন দেখতে বলে উজল প্রাতের আরশিতে-
ছন্নছাড়া তোর জীবনের কাটল কেমন একটি রাত।


ঘুমিয়ে কেন জীবন কাটাস? কইল ঋষি স্বপ্নে মোর,
আনন্দ-গুল প্রস্ফুটিত করতে পারে ঘুম কি তোর?
ঘুম মৃত্যুর যমজ ভ্রাতা, তার সাথে ভাব করিসনে,
ঘুম দিতে ঢের পাবি সময় কবরে তোর জনম ভোর।


আমার আজের রাতের খোরাক তোর টুকটুক শিরিন ঠোঁট,
গজল শোনাও, শিরাজী দাও, তন্বী সাকি জেগে ওঠ!
লাজ-রাঙা তোর গালের মত দে গোলাপি রং শারাব,
মনে ব্যথার বিনুনি মোর খোঁপায় যেমন তোর চুনট।


প্রভাত হল। শারাব দিয়ে করব সতেজ হৃদয়-পুর,
যশোখ্যাতির ঠুনকো এ কাঁচ করব ভেঙে চাখনাচুর।
অনেক দিনের সাধ ও আশা এক নিমিষে করব ত্যাগ,
পরব প্রিয়ার বেণী বাঁধন, ধরব বেণুর বিধুর সুর।


ওঠো, নাচো! আমরা প্রচুর করব তারিফ মদ-অলস
ঐ নার্গিস-আখিঁর তোমার , ঢালবে তুমি আঙ্গুর-রস!
এমন কী আর- যদিই তাহা পান করি দশ বিশ গেলাস,
ছয় দশে ষাট পাত্র পড়লে খানিকটা হয় দিল সরস!


তোমার রাঙা ঠোঁটে আছে অমৃত-কূপ প্রাণ-সুধার,
ঐ পিয়ালার ঠোঁট যেন গো ছোঁয় না, প্রিয়া, ঠোঁট তোমার।
ঐ পিয়ালার রক্ত যদি পান না করি, শাপ দিও;
তোমার অধর স্পর্শ করে এত বড় স্পর্ধা তার!


আজকে তোমার গোলাপ-বাগে ফুটল যখন রঙিন গুল
রেখো না পান-পাত্র বেকার, উপচে পড়ুক সুখ ফজুল।
পান করে নে, সময় ভীষণ অবিশ্বাসী, শত্রু ঘোর,
হয়ত এমন ফুল মাখানো দিন পাবি না আজের তুল!


শারাব আনো! বক্ষে আমার খুশির তুফান দেয় যে দোল।
স্বপ্ন চপল ভাগ্যলক্ষ্মী জাগল, জাগো ঘুম-বিভোল!
মোদের শুভ দিন চলে যায় পারদ সম ব্যস্ত পায়
যৌবনের এই বহ্নি নিভে খোঁজে নদীর শীতল কোল!

১০
আমরা পথিক ধূলির পথের, ভ্রমি শুধু একটি দিন,
লাভের অঙ্ক হিসাব করে পাই শুধু দুখ, মুখ মলিন।
খুঁজতে গিয়ে এই জীবনের রহস্যেরই কূল বৃথাই
অপূর্ণ সাধ আশা লয়ে হবি মৃত্যুর অঙ্কলীন।

দিয়ে ত যাচ্ছি, ইয়ে মানে, কপিরাইটের কোন ঝামেলায় পড়ব না ত?

ফারাবী

কামরুল হাসান [অতিথি] এর ছবি

রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম অনুবাদ কাজী নজরুল ইসলাম । একটা চমৎকার সুন্দর বই, যেটাতে চিত্র শিলপি খালিদ হোসেনের অপূর্ব সব চিত্র সাজে সজ্জিত ছিল,আমার ছিল কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি। ভীষণ আফসোস হয়। কোলকাতা থেকে কিনেছিলাম। যদি বইটার একটা কপি আজ পেতাম তবে সত্যিই ধন্য হতাম

kamrul hashan এর ছবি

কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী

স্পর্শ এর ছবি

শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ফারাবী! বেশ দেরীটে চোখে পড়লো যদিও।

নেক্সট বই বমেলার ক্রয়তালিকায় যোগ করে ফেললাম বইটা।
চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

ফিটজেরাল্ডের অনুবাদ নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। এর মধ্যে কতটুকু খৈয়াম আর কতটুকু ফিটজেরাল্ড সেই নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন করেন। কিন্তু তারপরও আমার কাছে ওটাই সেরা। ফিটজেরাল্ডের অনুবাদে যে 'আমেজ' বা 'মেজাজ' এবং স্টাইল আছে তার তুলনীয় মনে হয় না আর কেউ করতে পেরেছেন। একেবারেই অতুলনীয়, অনন্যসাধারন! ফিটজেরাল্ডের অনুবাদ অনেকটাই ভাবানুবাদ সন্দেহ নেই, কিন্তু কবিতার কোন অনুবাদটা শেষ পর্যন্ত 'ভাবানুবাদ' নয়? আমরা তো শ্রেফ 'মানে'র জন্য কবিতা পড়ি না ... কেননা তাই যদি হয়, তাহলে প্রবন্ধ পড়াই ভালো।

তবে বাংলায় মনে হয় নজরুলেরটাই ভালো। অবশ্য আমার মত হচ্ছে বাংলায় খৈয়ামের অনুবাদ আদৌ সম্ভব না - অন্তত পুরনো ধাঁচের বাংলায় তো বটেই। আর কান্তি ঘোষের রবীন্দ্র-ঘেষা বাংলায় খৈয়াম পড়তে তো আমার অসহ্য লেগেছে!

নিজাম কুতুবী [অতিথি] এর ছবি

শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ

অনিন্দ১৯৮১ এর ছবি

আমার নিজের করা কছু অনুবাদ দিলাম
এই অনুবাদ গুলো ইংরেজি
The quartains of Omar Khayyam -
by E.H.Whinefield থেকে করা ।

ওমর খৈয়াম এর রুবাই

ভালোবাসাকেই চাইছো যখন খোঁজ সবার অন্তরে,
খুঁজে পেলে তাকে সযত্নে রেখো হৃদয় অভ্যন্তরে ;
শত ক্বাবাতেও সমান হবে না এক হৃদয়ের প্রাপ্তি,
ক্বাবা নয় ,খুঁজো ভালোবাসাকেই আপণ হৃদয় মন্দিরে ।


আল্লাহ্ যদি ইছ্ছা করেন মন্দ পথে চলা ,
কেমন করে ভাসাই আমি সত্য পথে ভেলা ?
প্রতিটা কাজই তখন আমার করতে হবেই ভূল ,
যেহেতু তিনিই নির্ধারক, বরাত দেনেওয়ালা ।


তিনিই আমাকে এনেছেন হেথা, আমি নিজে আসি নাই;
সন্দেহের অন্ধকার জীবনে নিয়েছে ঠাঁই;
যেতে তো হবেই,আসা কেন তবে? বেঁচে থাকা ? কেন যাওয়া?
প্রশ্ন এসব করি শুধু আমি, উত্তর নাহি পাই ।


কোথায় আছে সেই রুবি ,রত্নরাজির বাদাক্ষ্যান,
সেই সাহসের সৌরভ আর সুগন্ধিময় অরিগ্যান;
তারা বলে মুসলমানের পান করা নয় সিদ্ধ,
কিন্ত আমায় বল দেখি ভাই –পাই কোথা সে মুসলমান?


প্রতি রাতেই করি প্রতিজ্ঞা আজকে থেকেই অনুতাপ,
পানশালাতে আর যাব না করবো না আর কোন পাপ;
কিন্ত এল বসন্ত যে , আলগা হল প্রতিজ্ঞা,
গোলাপ যখন প্রস্ফুটিত, কেমনে করি অনুতাপ ?

বিপথগামী আমি একজন আমায় গ্রহন কর,
আত্মা আমার অন্ধকারে ,তুমি আলো দান কর;
স্বর্গ যদি হয় কেবলই কাজের পুরস্কার,
তবে কোথায় তোমার বদান্যতা অথবা পরোপকার?


ধর্ম মতের সংখ্যা যদি বাহাত্তরও হয় ,
তোমার ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছুই নয়;
কি আসে যায় ধর্মাধর্মে, মান্যতা বা পাপে?
ভালোবাসা ছাড়া আর সব কিছু অসার বইতো নয় ।

এক হাতে মোর কোরাণ, মদের গেলাস অন্য হাতে,
আধেক আমি ঝুঁকেছি ভুলে,আধেক সঠিক পথে;
নীলাকাশের গম্বুজ যেন আমায় রেখেছে ধরে,
অনুতাপিত মুসলিম- তবু কাফেরও নই সেই সাথে ।


চলতে পথে হঠাৎ দেখি এক কুমোর কর্মরত,
করছে মাটি দলাইমলাই ,শক্তি ছিল যত;
হঠাৎ মাটি উঠলো কেঁদে –‘আস্তে দলো ভাই,
গতকালই ছিলাম মানুষ ঠিক তোমারই মতো।‘

বল খৈয়াম, আলেমরা সব কেন এমন হয়,
ভুল ব্যখ্যা করে আমার নিয়ম সমুদয়;
কোথায় আমি বলেছি মদ নিষিদ্ধ সবার জন্য ?
এটি জ্ঞানীর জন্য সিদ্ধ, বোকার জন্য নয় ।

১০
বিপথে কখনও যান নাই কেউ আছে কি এমন ভূবনে?
নশ্বর কেউ আছে কি এমন পাপ করেনি‘ক জীবনে
আমি যদি শুধু করি ভুল আর তুমি পাও যত পুরস্কার ,
তোমার আমার আচরণে তবে তফাৎ কিসে.-নিবেদনে?

১১

আল্লাতায়ালা স্বর্গদেশে মদ করেছেন সিদ্ধ,
এই দুনিয়ায় কেন সে’টি করে দিলেন নিষিদ্ধ?
এক আরব করলো শিরাছ্ছেদ হামজার উট’টিকে
সেই কারনে এই বিধানকে নবীজি করেন নিবদ্ধ ।

১২

করুণা সে ত করুণাই এবং আল্লাহ সুদশর্ণ,
তবে বেহেশ্ত হ’তে আদমে কেন দিলেন নিবার্সন?
পাপীর প্রতি করুণা ,সে তো করুণাই জানি বটে ;
করুণা সে নয় কর্মের দ্বারা যারে করি অজর্ণ ।

১৩

মদ নিষিদ্ধ জানি,তবু সেটা নির্ভর ক’রে
স্হান,পরিমান আর সেই মানুষের প’রে
যদি তিনটিই হয় বিবেচিত, তবে সানুনয়ে বলি
পান করতে কি পারে গুণীজন-যদি না ,তবে কে পারে?

১৪

মুসলমানি হিসেব মতে আজ শুক্রবার ,
তাই পান কর আজ গড়গড়িয়ে, ইছ্ছে যতবার;
অন্যদিনে তুমি যদি শুধু পান কর একবার ,
সব দিবসের শাহজাদা আজ- পান কর দুইবার।

মুস্তাফা গোলাম এর ছবি

আমার নিজের লেখা কিছু রুবাইয়াত দিলাম। ভালো লাগলে জানাবেন।

(¸.•´ (¸.•´ (¸.•লীনা-প্রেমের সায়রী¸.•´ (¸.•´ (¸.•)
ধূমকেতুরা জ্বলছে শুনে- পাগল পরা হয় যে হিয়া।
জ্বলার ভাগে সবার আগে, উদ্বাহু মন, নেইকো প্রিয়া!
নেই যে শ্বাঁস, মিথ্যে ভুবন! মিথ্যে স্বপন আমার লীনা।
সাঁঝের বাতি নিভবে জানি, বাজাবে শশী সুরের বীণা।
বীণার সুরে আসবে পাখি, গাইবে ডালে-নাঁচবে শাঁখে
হাসবে পাখে রইবো সুখে! সত্য কথন- তোমার কাঁখে
আমার প্রাণ, তুমিই আমার প্রথম জান-প্রথম প্রেমে
প্রথম গান! নেই যে আমি তোমার মনে! স্মৃতির ফ্রেমে
ঘুণে খাওয়া! মদন শর ভরলো তূণে! হারানো দিন
হারানো স্মৃতি হাতড়ে আমি- ক্লান্ত পথিক। তোমার ঋণ
স্বীকার করে – তোমার সাজে সাজাবো আমি বিশ্বভুবন-
দিনের শেষে প্রেমের তাপে কাঁদবে তুমি নীরব কাঁদন!
(¸.•´¸.•*´¨) ¸.•´¸.•*´¨) ¸.•*¨)¸.•´¸.•*´¨) ¸.•*´)
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০১¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
তোমার ‘পরে চাপিয়ে দিলাম একি আমি প্রেমের পাথর!
ছয়টি মাস কঠোর ব্রতে নীরব-নিরাশ-নিঠুর প্রহর!
সূর্য যদি তাহার পরেও উদয় হয় হে ঐ গগণে-
তোমায় আমি পড়াবো জেনো – আমার প্রেমের কঠিন নিগড়!
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০2¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
আমার চেয়ে প্রিয়ো তোমার, আছে কি আর বন্ধু আরেক?
আমার প্রেমে তোমার হিয়া দোলেনি কাল স্বপ্নে বারেক?
মিথ্যে তোমার অমল হাসি-নিথর প্রেমের নিরব প্রকাশ!
তোমার আমার বাসর ঘরের স্বাক্ষী থাকুক- তোমার রব এক!
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০৩¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
হতেম যদি অমল বায়ু তোমার শ্বাসের আশে-পাশে!
জীবন আমার ধন্য হতো, তোমার প্রাণের সাথে মিশে।
না হয় হতাম নির্বাক জড় আকারহীনা তনু লয়ে;
বরফ শীতল মরণ মিলন হতো সেদিন তোমার নাশে!
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০৪¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
কত্ত টুকুন ভালোবাসো আজকে তুমি ভোর যে হলো!
গতকাল কি বাসতে তুমি আজের চেয়ে আমায় ভালো?
পরশু দিনেও এমনি করে নিশ্চুপ কি রবে তুমি-
ছয়মাস পরেও দেখতে চাও হে ভাল্‌বাসা মোর ক’গুন হলো!
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০৫¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
দাঁতের ব্যথায় কাতর তুমি নির্ঘুম রাত এপাশ ওপাশ!
কেমন করে ঘুমাও তুমি পড়্‌য়ে মোরে প্রেমের এ ফাঁস?
তোমায় আমি ভালোবাসি সাঁঝ-ঊষা আর দিন-দুপুরে।
তোমার প্রেমে জীয়ন যাপন ছয়টি যে নয় অগণন মাস!
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০৬¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
ছয়ের প্রেমে নয় ছয় হলো মোর জীবনের সোনার সময়!
তোমার লাগি পরান কাঁদে তোমার প্রেমে কাতর রয়!
বন্ধু তুমি নিঃস্বার্থ এ প্রেমের নামে মোর হাপিত্যেশ,
প্রেমের এ ঠাঁই হৃদয় মাঝে পচনশীল মোর এ দেহ নয়!
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০৭¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
স্রষ্টা যদি হতেম আমি নিতেম কেড়ে ও চোখ দু’খান
ঐ নয়নে মরুর হাওয়া-শীতল বায়ু – করব-শ্মশান!
চোখটি মুদে কল্পনাতেই তোমার আমার মিলন মেলা
দেহের বিনাশ যেদিন হবে থাকবে শুধু শ্রান্ত পরান!
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০৮¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
তোমায় শুধুই ভালোবাসি চাইনে তোমার ভালোবাসা
পরান তোমার প্রেমের বেদী নয় যে তোর ঐ দেহের আশা।
মোর সাধনা তোমার হৃদে ক্ষণিক তরে প্রেমের ভাবন,
ছেলে খেলা এ নয় যে প্রিয়ো, এ যে কঠিন দানের পাশা।
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -০৯¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
স্বার্থপর মোর ভালোবাসা চাঁদের গায়ে কাল্‌ কলংক!
হিয়ার বাসর লাগে না ভাল্‌ চায় সদা এ আকার পঙ্ক।
অসীম হৃদয় প্রেমের আদি নিবাস সাকিন কালের ‘পরে;
দেহের মাজার কামের বিলাশ-হৃদয় ভারের বেনাম শুল্ক।
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -১০¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
চাইনে তুমি ভালোবাসো দিন প্রতি রাত যদ্দিন বাঁচো-
চাইনে তুমি কল্পনাতে আমার প্রেমের প্রাসাদ রচো।
মনের ভুলে ক্ষণের তরে আমায় তুমি তুমি ভেবো-
স্বার্থক মোর এ সাধ্‌না সেদিন- ‘যাভ্‌ তুম্‌ভি দার্‌দমে’ পচো।
(¸.•´ (¸.•´ (¸.•` *(সায়েরী -১১¸.•´ . *(¸.•´ (¸.•)
আমার কাছে কি চাও তুমি কেবল রবে বন্ধু আমার?
দোষ কি আমার মন যদি চায় পরশ পুলক তোমার হিয়ার!
তিলে তিলে হৃদয় তুমি পূর্ণ ক্যানো করলে হে গ্রাস?
বলছো এবার ‘বন্ধু শুধুই’ চাও নে আমার মুকুট প্রিয়ার!

--মুস্তাফা গোলাম

Uttam এর ছবি

নজরুলের এই অনুবাদটা কোন প্রকাশনীর, কোথায় বা কিভাবে পাওয়ান যাবে তা জানালে বাধিত হব। বইটা যদি নাও পাই তাহলে পিডিএফ কপি পাওয়া যাবে কি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।