একটি জানালার আত্মকথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৮/০৪/২০১০ - ১০:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাগল মন

শুরুর কিছু কথাঃ ছোটবেলায় স্কুলের পরীক্ষার জন্য বাংলা রচনা মুখস্থ করতাম, ক্লাস নাইন পর্যন্ত এভাবেই চলে। তখন হরলাল রায়ের বিশাল মোটা একটা বই পড়তাম, যেখানে অনেক বাংলা রচনার মাঝে একধরণের রচনা ছিল, বিভিন্ন কিছুর আত্নকথাঃ একটি রাস্তার আত্মকথা, একটি পেন্সিলের আত্মকথা আরও কত কি। আমি মাঝে মাঝেই সেগুলো পড়তাম। সচলের আগের ব্যানারের জানালা দেখে মনে একটা জানালারও তো অনেক কিছু বলার থাকতে পারে। আজকের গল্প একটি জানালা নিয়েই।

আমি একটি জানালা, না কারও মনের জানালা না, খুবই সাধারণ একটি বাড়ির সাধারণ একটি ঘরের জানালা। এখন আমি বয়সের ভারে ন্যুব্জ, আমার মত বাড়িটিও তার জীবনের শেষ প্রান্তে পৌছে গিয়েছে। আজ আমি আপনাদের আমার জীবনের গল্প শোনাবো।

আমার জন্ম হয়েছিল, সাধারণ একটি কাঠের আসবাবপত্র তৈরীর দোকানে দু’জন নিপুণ কারিগরের হাতের ছোয়ায়। দেখতে আমি খারাপ ছিলাম না, তাইতো প্রথম আমাকে যে দেখে সে-ই কিনে ফেলে। লোকটা ছিল মধ্যবয়স্ক, লম্বাচওড়া, প্রাণবন্ত একজন মানুষ। নাম ছিল আহাদ উদ্দীন। আমার গল্পে তাকে আমি আহাদ হিসেবেই বলবো। আহাদ আমাকেসহ যখন আরো কয়েকটি জানালা নিয়ে ভ্যানে চড়িয়ে তার নির্মাণাধীন বাড়িতে নিয়ে আসলো, তখনি আমি বুঝতে পারলাম এ বাড়িই হবে আমার ঠিকানা। আমাকে সে একটি স্টোররুমে রাখলো যেখানে বাড়ির আরো অনেক জিনিসই ছিল। প্রতিদিন আহাদ সকালে আসতো আর স্টোররুমের দরজার সামনে একটি চেয়ার নিয়ে বসে থাকতো আর মাঝে মাঝে উঠে হয়তো মিস্ত্রীদের কাজ দেখতে যেত। আমি তার চোখেমুখে যে আনন্দ, উৎসাহ আর আশার আলো দেখতে পেতাম সেটা আজও আমার মনে আছে। আমার তখনি এই মানুষটাকে ভালো লেগে গিয়েছিল।

কিছুদিন পরে দেখি আহাদের সাথে ১০-১২ বছরের দুইটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে এসেছে, ওটাই ছিল কোন ছোট ছেলেমেয়ে দেখা আমার জন্মের পরে। ওরা আহাদকে আব্বু আব্বু ডাকছে দেখে বুঝতে পারলাম ওরা আহাদের ছেলেমেয়ে। আহাদ ওদেরকে বিভিন্ন জিনিস ঘুরে দেখালো আর ওরাও খুব আনন্দ নিয়ে দেখছিল। একটুপরে ওরা স্টোররুমে এসে একধরণের খেলা শুরু করলো, একজন লুকিয়ে থাকে আরেকজন তাকে খুঁজে বের করে। বেশ মজার খেলা, আমি ওদের ছেলেমানুষী খেলা দেখে বেশ মজা পেলাম। বাড়ি তৈরীকালীন সময়ে ওরা মাঝে মাঝেই আসতো আর এসেই এ খেলাটা খেলতো। আমি সব সময়ই ওদের আসার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম।

দেখতে দেখতে বাড়িটা দাঁড়িয়ে যেতে লাগলো, আমি স্টোররুমের খোলা দরজা দিয়ে দেখতে পেতাম প্রায় সবই। একদিন আমাকে কয়েকজন মিলে ধরে বের করলো, আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আমার গন্তব্যে যাচ্ছি। আমাকে বসানো হল দো’তলার রাস্তার ধারের একটি ঘরে। তখনো ঘরের রঙ করা হয়নি, মেঝেটাও অসমাপ্ত ছিল তখন। তবে সব শেষ হতে বেশিদিন লাগেনি। বাড়ি শেষ হবার পরে ওরা একটি গৃহপদার্পণ অনুষ্ঠান করে পাকাপাকিভাবে নতুন বাড়িতে উঠলো, এর মাঝে আসবাবপত্রও চলে এসেছে। ওইদিন অনেক লোকে বাড়িটা পুরো সরগরম ছিল। বাড়ির গৃহকত্রী, আহাদের স্ত্রী সবাইকেই বেশ আদর-আপ্যায়ন করলো। আহাদের স্ত্রীর নাম হাস্নাহেনা। আহাদ তাকে ডাকতো হাস্না বলে। আমিও তাকে সেই নামেই বলবো। হাস্না বেশ গোছানো ধরণের মেয়ে। সে কয়েকদিনের মধ্যেই পুরো বাড়ি গুছিয়ে ফেললো। আমার ঠাঁই হয়েছিল ওদের শোবার ঘরে। শোবার ঘরটা সে খুবই সুন্দর করে, যত্ন নিয়ে অনেকদিন ধরে সাজালো। আমার উল্টোদিকের দেয়ালে সে একটি ছবি টানালো,সূর্যাস্তের সময় সরিষাক্ষেতের মাঝ দিয়ে এক কিশোরী বালিকা হেঁটে যাচ্ছে, এত সুন্দর একটি ছবি! আমার মন খারাপ হলেই আমি সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকি, আমার মন ভালো হয়ে যায়। আহাদ তার বাড়ির সামনের ছোট উঠানটাতে ফুলের বাগান করে, প্রতি সপ্তাহান্তে সে সেই ফুলবাগানের যত্ন করতো আর প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে নিজে হাতে ফুলগাছগুলোকে পানি দিত।আহাদ আর হাস্নার কারণে আমি আমার সারাটি জীবনই সুন্দর জিনিস দেখেই কাটিয়ে দিতে পেরেছি।

গৃহপদার্পণের দিন, সবাই রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে যখন চলে গেল, অনেক রাতে আহাদ আর হাস্না আমার সামনে এসে দাড়ালো। তখন চাঁদের আলো আমার খোলা কপাট দিয়ে ঘরের মধ্যে এসে পরছে, ওরা দু’জন সেই আলোতে এসে দাড়ালো, মনে হলো যেন চাঁদের আলোতে স্নান করছে। আহাদ হাস্নাকে বললো, দেখেছো হাস্না আমি তোমাকে বলেছিলাম না একদিন আমাদের নিজেদের একটা বাড়ি হবেই। বলেছিলাম না, সৎ থেকেও বাড়ি করা যায়। যদিও এটা শহর থেকে কিছুটা দূরে, আর মাত্র দো’তলা। হাস্না বললো, আমার তোমার উপরে তখনো বিশ্বাস ছিল, এখনও আছে, সবসময়ই থাকবে আর আমার দো’তলা বাড়িই ভালো। তুমি যদি আমাকে কুড়েঁঘরেও রাখতে আমার তাতেও কোন আপত্তি ছিলনা, তোমাকেতো সেটা আমি আগেই বলেছি। আহাদ বললো, হাস্না তুমি এত ভালো কেন? হাস্না তখন বলেছিল, আসলে তুমি ভালোতো তাই সবাইকেই ভালো মনে কর। এটা শুনে আহাদ হেসে উঠেছিল সেদিন। সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এরা দু’জনেই আসলে খুবই ভালো।

নতুন বাড়িতে ওদের দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল, আমারও। ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পরলে, ওরা দু’জন আমার সামনে এসে বসতো, আর কত গল্পই না করতো। আমি আনমনা হয়ে সেসব শুনতাম, আর ভাবতাম মানুষের জীবন কতই না মজার। অনেকদিনই ওরা আমার সামনে বসেই গল্প করতে করতে সারারাত কাটিয়ে দিত। আমি সবচেয়ে মজা পেতাম, ওরা যখন ঝগড়া করতো তার পরের ঘটনাগুলোতে। সবসময়েই আহাদ রাগ করে থাকতো আর হাস্না ওর রাগ ভাঙ্গাতো। সে রাগ ভাঙ্গানোর উপায়ও একেকবার একেক রকম। কোনদিন হয়তো কোন হাসির কথা বলে হাসিয়ে দিতো, কোনদিন আহাদকে জড়িয়ে ধরে আদর করতো আবার কোনদিন ছোট্ট একটা চুমুই আহাদের সব রাগ ভাসিয়ে নিয়ে যেত। আহাদও সবসময়ই ঝগড়ার পরদিন কিছু না কিছু নিয়ে এসে হাস্নাকে সারপ্রাইজ দিত, একদিন নিয়ে আসলো একটি গোলাপকলি, এসেই হাস্নার খোঁপায় পরিয়ে দিল। হাস্না ফুলটা না শুকানো পর্যন্ত সেটা পরে ছিল। আহা! কি সুখের দিনই না ছিল ওদের সেসময়।

এভাবেই কতগুলো বছর কেটে গেল। হঠাৎ একদিন দেখি আহাদকে কয়েকজন একটি গাড়ি থেকে ধরাধরি করে নামালো, আমার বুকটা অজানা আশংকায় কেঁপে উঠলো। আহাদকে সবাই মিলে ঘরে এনে শুইয়ে দেয়, আর শুনলাম সাথের লোকগুলো বারবার হাস্নাকে বলছে, ভাবী ভয়ের কিছু নেই, ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। পরে আমি শুনেছি আসলে সেটা ছিল প্রথম হার্ট অ্যাটাক।এর পরেই আহাদ কিছুটা দুর্বল হয়ে পরে, কিছুটা বিষন্নও। হাস্না সারাক্ষনই চেষ্টা করতো আহাদের মন ভালো করার। একদিন শুনলাম বলছে, তুমি কি এত ভাবো? মানুষের আর হার্ট অ্যাটাক করে ন্‌ তারা কি সবাই তোমার মত এমন হয়ে যায়? আহাদ বলে, সাধে কি আর ভাবি? ছেলেমেয়েগুলো বড় হচ্ছে, পড়ালেখা এখনো শেষ হয়নি। এখন আমার কিছু হয়ে গেলে ওদের কি হবে আর তোমারই বা কি হবে? হাস্না ধমক দিয়ে বলে, আর যদি তুমি এরকম অলুক্ষেনে কথা বল, তাহলে কিন্তু ভালো হবে বলে দিচ্ছি। আল্লাহ যেন তোমার আগে আমাকে উঠিয়ে নেয়, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আহাদ তখন বলে উঠে, আচ্ছা আর বলবো না কিন্তু তুমিও আর এধরনের কথা বলবা না।আমার ওদের এসব মন খারাপকরা কথাবার্তা ভালো লাগে না।

এরপরে দিন যায়, ওদের ছেলেমেয়েগুলো এখন আর ছোট নেই, মেয়েটার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। বাড়িতে তখন একটা খুশির আমেজ। কিছুদিনের মধ্যেই বাড়িটা বিয়ের সাজে সেজে উঠলো, কত মানুষ। আমার সেদিন খুবই ভালো লেগেছিল, কিন্তু যখন ওরা মেয়েকে বরের গাড়িতে উঠিয়ে দিল তখন ওদের কান্না দেখে আমার নিজেরই কান্না পেয়ে গিয়েছিল। সেদিন সারারাত হাস্না কেঁদেছিল।আহাদ অনেক স্বান্তনা দিয়েও ওর কান্না থামাতে পারেনি। এর মাত্র দুই বছরের মাথাতেই আবার বাড়িটা বিয়ের সাজে সাজলো, এবার ওদের ছেলের বিয়ে। এবার আর হাস্না কাঁদেনি। কিন্তু ও কেঁদেছিল যেদিন ছেলে তার বউকে নিয়ে অন্য বাসায় চলে গেল, অফিস থেকে কাছে হবে এই অজুহাতে। সেদিন শক্তমনের আহাদও চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। জমজমাট বাড়িটা হঠাৎ করেই যেন বড় বেশি নীরব হয়ে গেল, আহাদ-হাস্নাও আর আগের মত হাসে না, সারাক্ষনই মন খারাপ করে থাকে। আমার তখন ওদের ছেলেটার প্রতি খুব রাগ হয়েছিল তখন। কিছুদিনের মধ্যেই আহাদের রিটায়ারমেন্ট হয়ে গেল। এখন সে সারাদিনই প্রায় বাড়িতে থাকে, কিন্তু বড় আনমনা, চুপচাপ। হাস্নাও আর আগের মত নেই। এরকম একদিন হঠাৎ করেই আহাদের দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাক আর তারপরেই সব শেষ। সেদিনও বাড়িতে অনেক লোক এসেছিল।

দিনকয়েক পরে হাস্নাকে ওদের ছেলে নিয়ে গেল, এই বাড়িতে একা একা থাকবে এ কথা চিন্তা করে। আমি খুব একা হয়ে গেলাম। সারাদিন বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি কেউ আসে এ অপেক্ষায়। ততদিনে এ বাড়ির আশেপাশে অনেক বাড়ি হয়েছে, এ এলাকা নাকি আর আগের মত নেই। এখন এখানেও অনেক মানুষ। হঠাৎ একদিন দেখলাম আহাদের ছেলেটা আরেকজন লোককে নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকছে, সে লোকটাকে পুরো বাড়িটা, আশেপাশে ঘুরে দেখালো, লোকটাকে বেশ সন্তুষ্ট মনে হলো। সেদিনের মত তারা চলে গেল। কয়েকদিন পরেই আবার ছেলেটি, সেই লোক আরও কয়েকজন এসে কিসব মাপজোখ করলো। ওদের কথাবার্তায় বুঝতে পারলাম, ওরা হচ্ছে ডেভেলপার। এই বাড়িটা ভেঙ্গে বহুতল বাসা বানানো হবে, এজন্যেই এত মাপজোখ।

আজ আমার এ বাড়িতে হয়তো শেষ দিন, কালকেই ওই ডেভেলপারের লোকজন আসবে এই বাড়ি ভেঙ্গে ফেলতে। আমার মত পুরোনো জানালাতো আর নতুন বাড়িতে ব্যবহার করবে না, আমার ঠিকানা হয়তো হবে ডাস্টবিন, সেখান থেকে হয়তো কারো শীতের উষ্ণতা হবো লাকড়ি হিসেবে অথবা হয়তো মিউনিসিপালিটির ময়লা ফেলার জায়গাতেই আমার পচে মাটির সাথে মিশে যাবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বাকিটা জীবন।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

পাগল মন,

অসাধারণ লেগেছে সাবলীল বর্ণনা, সাথে আইডিয়াটা-ও ! চালিয়ে যাও হাসি

বি.দ্র. এটা মনে হয় টাইপোঃ

হাস্না ধমক দিয়ে বলে, আর যদি তুমি এরকম অলুক্ষেনে কথা বল, তাহলে কিন্তু ভালো হবে বলে দিচ্ছি।

তাহলে কিন্তু ভালো হবে 'না' বলে দিচ্ছি - হবে সম্ভবতঃ হাসি

- মুক্ত বিহঙ্গ

অতিথি লেখক এর ছবি

ইস, ভুল হয়ে গেছে... ধন্যবাদ ভালো লেগেছে বলে...

পাগল মন

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার একসময় গল্পের বই পড়ার নেশা ছিল। হাতের কাছে অন্য কোন বই না পেলে হরলাল রায়ের বই খুলে এই রচনাগুলি পরতাম। তার মধ্যে একটা আমার বেশী ভাল লাগত - 'একটি আংটির আত্মকথা'।

জানালার আত্মকথা ভাল লাগল।

-লাবণ্য-

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

পাগল মন

পল্লব এর ছবি

বাংলা ব্যাকরণ বই পেলেই আগে উল্টেপাল্টে আত্মকথা বা এরকম গল্প টাইপ রচনাগুলা পড়ে ফেলতাম হাসি অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, এতদিন পরে সেরকম সুন্দর একটা আত্মকাহিনী পড়তে পারলাম। আরো লিখুন।

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

পাগল মন

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

পাগল মন

মূলত পাঠক এর ছবি

লেখা ভালো লাগলো। অল্প একটু জ্ঞান দিই? জানলা নিয়ে লেখার সময় আরেকটু বিশদ থাকলে বিশেষভাবে জানলার দৃষ্টিকোণ থেকে, লেখা আরো সমৃদ্ধ হতো। যেমন ঐ দম্পতির নিজেদের বাড়ি বানানোর সময় জানলা নিয়ে নানা স্বপ্ন, ধরুন মানিপ্লান্টের লতা ঝুলিয়ে দিলো জানলায়, বা বিশেষ পর্দা কেনা সাধ্যাতীত দাম হলেও, ইত্যাদি। বা জানলার টেকনিক্যাল বিশদ, মানে চারুলতার খড়খড়ি দেওয়া জানলা নাকি রঙিন কাঁচ লাগানো, বক্স জানলা যাতে তাদের কন্যা হয়তো বসে বসে পুতুল খেলতো, বা ফ্যাশনেবল ফ্রেঞ্চ উইন্ডো, এই জাতীয়। ঘটনার মধ্যেও জানলার কথা বুনে দেওয়া যেতো, যেমন অসুস্থ স্বামীকে গাড়ি করে আনা হলে বৌটি হয়তো ছুটে গিয়ে জানলায় দাঁড়ালো দেখতে যে কে এলো, তার হাতের চুড়ি গরাদে লেগে ঝংকার করে উঠলো কিম্বা ভেঙে গেলো, সাহিত্যের 'সাজেশন' আর কি। এর পরে আবার যদি কোনো আত্মকথা লেখেন, কথকের ব্যাপারে একটু ধরুন উইকি থেকে পড়ে নিলেন (যেমন এ ক্ষেত্রে জানলা কতো রকমের হয়, মানুষের ইতিহাসে জানলা এলো কীভাবে বিবর্তিত হয়ে, ইত্যাদি), তাতে করে কিছু আইডিয়া আসবে যা গল্পকে সমৃদ্ধ করবে।

আশা করি জ্ঞান দিলাম বলে কিছু মনে করবেন না।

অতিথি লেখক এর ছবি

মূলত পাঠক ভাই,
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার সাজেশনে জন্য, আর মনে করার তো প্রশ্নই আসে না।
ভবিষ্যতে চেষ্টা করবো ভাল করার। তবে আমি আসলে খুবই নতুন, তাই জানি না কবে ভালো কিছু লিখতে পারবো। আর আমি মূলত পড়তেই পছন্দ করি।

পাগল মন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

চমৎকার গল্প

বহুদিন পরে স্কুলের রচনার কথা মনে পড়লো
এইটা পড়ে মনে হচ্ছে রচনা বইয়ের এইসব আত্মকাহিনী ফর্মেটটাকেও কিন্তু অবলীলায় সাহিত্যে ব্যবহার করা যায়

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- 'আত্মকথা' কথাটা শুনলেই আমার ইশকুলের কথা মনে হয়।

সেবার আমাদের স্কুলে উপস্থিত বক্তৃতা চলছে। তো আমাদেরও ইচ্ছে হলো উপস্থিত বক্তৃতা করবো। দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যারকে গিয়ে জানালাম মনের খায়েশের কথা। স্যার দিলেন ধমকে তাড়িয়ে, আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করি নাই বলে। আমরা তখন নাইনে পড়ি। ইশকুলের অলিখিত মাতব্বরি আমাদেরই হাতে। সরাসরি হেডস্যারের রুমে গিয়ে বললাম আমাদেরকে উপস্থিত বক্তৃতা করতে দেয়া হচ্ছে না। হেডস্যারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে অবশেষে আমাদের মধ্য থেকে একজনকে সুযোগ দেয়ার কথা ঘোষণা করা হলো। আমরা তাতেই খুশি। কিন্তু আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেলো যখন নামটা দেয়া হলো আমার। আমি কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে একটা কাগজ তুলতেই দেখি তাতে লেখা "একটি চোরের আত্মকাহিনী"!

এটা বলতেই দেখি চারদিক ভেঙে পড়লো অট্টহাসিতে। আমাদের একটা বিরুদ্ধগ্রুপ ছিলো, বালিকাগ্রুপ। ঐগুলা দেখি দর্শক সারিতে বসে সব দাঁত বের করে হাসে আর নিজের কল্লা পাতালি হাত দিয়ে দেখায় "আব তেরা ক্যায়া হোগারে কালিয়া!" ঐটা দেখে আবার আশেপাশের কতোগুলা বেদ্দপ খিলখিল করে হাসে। এগুলা দেখে স্যারেরাও মিটিমিটি হাসে। কই যাই! পুরাই ইজ্জতের ফালুদা অবস্থা।

ঐ ঘটনাটা আমার জীবনে পুরাই একটা নাইটমেয়ার। আত্মকাহিনী শব্দটাই তাই এড়ায়ে চলি। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

পল্লব এর ছবি

ভাই, কি বলসিলেন ওই বক্তৃতায়, একটু বললেন না? দেঁতো হাসি

==========================
আবার তোরা মানুষ হ!

কাকুল কায়েশ এর ছবি

ধূগো ভাইজান, সেরকম একটা চাপা ঝাইড়া গেলেন মনে হয়!! শয়তানী হাসি
তয় চাপা হইলেও খুব মজা পাইসি, এখনো হাসতেইসি! দেঁতো হাসি
========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

ধুসর গোধূলি এর ছবি
কাকুল কায়েশ এর ছবি

বক্তিমার আলাদা পোস্ট চাই কইলাম! দেঁতো হাসি
======================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধুগো দা, আমার লেখার সুবাধে অন্তত আপনার ইসকুলের একটা কাহিনী জানা গেল। কাহিনীটা পুরোটাই শুনতে চাই।
আমি এজন্য ভয়ে স্কুলে কখনো বক্তৃতা দেইনি...

পাগল মন

নাশতারান এর ছবি

লেখার বিষয়বস্তু ইন্টারেস্টিং। লেখাও ভালো হয়েছে। তবে আরো বিস্তৃত হতে পারত। কারণ জানালা জিনিসটাই অনেক বিস্তৃত। বদ্ধ ঘরের সাথে উন্মুক্ততার যোগাযোগের পথ। সে ঘরের-বাইরের সবকিছু দেখতে পায়। জানালার চোখ দিয়ে আপনি অনেক কিছুই দেখাতে পারেন যা আমরা প্রায়শই এড়িয়ে যাই বা দেখার সুযোগ পাই না।
তবে একটা ব্যাপার দেখে মুগ্ধ হলাম। লেখায় বানানের বিশেষ কোন ভুল নেই। বানানের ছোটখাটো কৌশলগুলোর প্রতিও যত্নশীল মনে হয়েছে আপনাকে (যেমনঃ সে-ই, গিয়েছিল)। কিছু টাইপো আছে। পোস্ট করার আগে প্রিভিউ দেখে নিলে সেগুলো চোখে পড়ত।

লিখতে থাকুন নিয়মিত। হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটি অসাধারণ হয়েছে। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।
আপনার নামটা জানা হলো না... মন খারাপ

পাগল মন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।