প্রিয় সামিউলের বাবাঃ কে এম আজম।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৩/০৭/২০১০ - ১০:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জনাব কে এম আজম, আপনাকে নিয়ে আমি ভীষন চিন্তা করছি আজ অনেক দিন ধরে। অনেক গুলো নিউজ পেপার পড়ছি আজ ক'দিন ধরে। কি যে কষ্টে আমার দিন যাচ্ছে তা আপনাকে বুঝাতে পারবো না। চোখ বন্ধ হলেই আমার মনে হয়, সামিউল যেন আমাকে বলছে! আমার বাবা ভাল আছে তো?

ঠিক সামিউলের মতই আমার একটা ছেলে আছে। আজমাইন, ক্লাস ওয়ানে পড়ে। এমনি গোলগাল মখূবরন, টুকটুকে, সোনাচাঁদ মুখ! জানেন দিনের শেষে চাকুরী ছেড়ে যখন বাসায় যাই, ছেলেটা টুলে দাঁড়িয়ে দরজার ছিটকানী খুলে। বলে, বাবা কেমন আছে? আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, বাবা আজ তোমার বস বকেনিতো? আরো বলে, বাবা গোসল করে এস, আমার অনেক কথা আছে?

ভাই কে এম আজম। আপনার সামিউলও নিশ্চয় আপনার সাথে এমন করতো। আপনি ও আমার মত, সামিউলকে কোলে নিয়ে আদর করতেন বলতেন, আমার গায়ে ঘামের গন্দ - দূরে সরো সামি। আমি ফ্রেস হয়ে আসি, আজ তোমাকে অনেক আদর করবো। আপনিও হয়ত আমার মত সামিকে সারা মুখে আদর করে, শেষ আদরটা করতেন ঠোঁটে! আর এতে সামি যেত রেগে। হাত পা ছুড়ে বলতঃ বাবা, তুমি ঠোঁটে আদর করবে না। আর এতে হয়ত আপনার আদরের মাত্রা আরো বেড়ে যেত। সামি দুই হাত দিয়ে তার ঠোঁট লুকিয়ে রাখতো! বাবা, তুমি আমার ঠোঁটে আদর করতে পারবে না! চ্যালেঞ্জ!

চ্যালেঞ্জ! বিরাট কিছু যেন! দাঁড়ারে সামি, আজ তোর এক দিন কি আমার একদিন! আজ তোকে সরি বলাবোই। এরপর সামি চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। সামির মুখ লুকানো! আর আপনার চেষ্টা, যে করে হউক, সামিকে 'সরি' বলাতে হবে। শুরু হল বাবা ছেলের কুস্তাকুস্তি! নানা কসরত করে, সামিকে উল্টা করলেন অনেক কষ্টে। সামি দু, চারটা লাথিও মেরে ফেলল। অনেকটা আমেরিকার রেস্লারদের মত। এক পযায়ে সামি ধরাশয়ি! আপনি দুহাত চেপে সামির ঠোঁটে আপনার ঠোঁট লাগাবার চেষ্টা করছেন, এমন সময় সামি বাঁচার জন্য - কেঁদে দিল। তবুও সরি বলবে না!

আমার মত হয়ত তখন বুকে টনে, কোপালে মুখ রেখে বলতেন, ওকে বাবা, থাম আর কাদিস না - আর করবো না। আই এম সরি! চুপ কর।

কয়েকদিন আগে আমার ছেলের মত এক সকালে আপনার সামিও হয়ত পড়ছিলো - কাঁঠাল নিয়ে ৫টি বাক্য রচনা! কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। আপনি শুধু কাঁঠাল কাঁঠাল শুনছিলেন। আমার মত আপনিও হয়ত বিকালে বাসায় ফিরার পথে এক বিরাট কাঁঠাল নিয়ে ফিরছিলেন। সামিকে আমাদের জাতীয় ফল দেখাতে হবে। আজকালকের ছেলেমেয়েরা কাঁঠাল খায় না, আমাদের জাতীয় ফল ধরে দেখে না! কি দুঃখের কথা!

বাসায় ফিরে সামিকে নিয়ে বসছেন, আয় বাবা কাঁঠাল খা! সামির কি অভিমান, কাঁঠাল আবার খাবার ফল হলো! আপনি হাসছেন আমার মত - দু'একটা কোষ খেয়ে দেখ সামি। আমার মত মুড়ীতে মেখে দেখ, ভাল লাগবে। জানিস সামি, আমরা ছোট বেলায় কাঁঠাল দিয়ে সকালের নাস্তা করতাম। কে কত বেশী খেতে পারে, এমন প্রতিযোগিতা হত। সামি হাসে, কোন ফাঁকে, সামি কাঁঠালের কোষ মুখে দিয়েছে! আপনি দেখছিলেন, বলছেন না কিছু। আগে খেয়ে নিক! ৫টি কোষ খেল সামি, এবার আপনার পালা। কি রে সামি, কাঁঠাল কেমন লাগলো? দুস্ট আদরের সামি হাসে, প্রান জুড়ায়। আজ ওকে জাতীয় ফল সারা জীবনের জন্য চিনিয়ে দেয়া হল।

ভাই কে এম আজম, এমন অনেক কথা, অনেক স্মৃতি আপনার হৃদয়ে, মাথায় জমে আছে। সামিউলের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়ত আপনি সব মেনে নিয়েছেন। সামিউল বাবার শুন্যতা যেন না দেখে সে জন্য আপনি হয়ত আপনার অনেক দুঃখ, কস্ট ভূলে মেনে নিয়েছেন, যাক না সময়। যদি সে ফেরে!

সামিউলের মুখের দিকে তাকিয়ে আপনি হয়ত ভাবছিলেন, সবদিন তো মানুষের সামান যায় না। মানুষকে বুড়ো হতে হয়, এক সময় মরতেও হয়। আপনি হয়ত সামির মুখের দিকে তাকিয়ে এমনই ভাবছিলেন, একদিন তো এ রুপ-যৌবন শেষ হবে, একদিন তো এ ভুল বুঝার দিন শেষ হবে। তবুও যদি সে সামির জন্য থাকে!

না, আপনি তাকে ফেরাতে পারেননি! আপনার সব চিন্তা মিছে হল, আপনার সব আশা গুড়োবালি হলো। আপনার সবচেস্টা ব্যর্থ হল। সামিকে আপনি যেভাবে মানুষ করতে ছেয়েছিলেন তা হল না।

তবে আপনার আদরের সামি আপনার জন্য অনেক কিছু করে গেল! সামি জান দিয়ে আপনাকে সারা জীবনের জন্য মুক্ত করে গেল। সামি প্রান দিয়ে আপনাকে একটা বিবেকহীন, হৃদয়হীন এক নিমর্ম পশুর হাত থেকে চিরদিনের জন্য উদ্বার করে গেল। আপনাকে আর সইতে হবে না মানষিক যন্ত্রনা, দেখতে হবে না ফর্ষার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কালো ভয়াল মুখ!

সামিউল, বাবা আমার। তুমি যেখানেই থাক, ভাল থেকো। আকাশের তারা হয়ে আমাদের মাঝে মাঝে দেখে যেও! তোমার বাবা আজম সাহেবের মত আমরা বহু বাবা আছি এ নরাধমে। তোমার মত ফুটফুটে শিশুদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা কাটিয়ে দিচ্ছি আমাদের দিনরাত, আমাদের জীবন-যৌবন। জেনেও আছি চুপ, বুঝেও থাকি নিরব। যদি সে ফেরে! যদি আজমাইন, ইয়াসির, ইফতি, জুয়েল সহ নাম না জানা হাজারো শিশুদের আমরা বড় করে দিতে পারি, মরেও আমাদের জীবন সার্থক হবে।

ভাল থাকুন ভাই কে এম আজম। আপনিই একজন গর্বিত পিতা, সামিউলকে ফেলে আপনি চলে যাননি।

সাহাদাত উদরাজী
০৩/০৭/২০১০ইং,


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

প্রথমে পড়ে বুঝতে পারছিলাম না কী নিয়ে লেখা।

বেশ কিছু বানানে সমস্যা আছে। একটু সতর্ক হলে সেগুলো কমিয়ে ফেলা যাবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই প্রকৃতিপ্রেমিক,
আমি টাইপিং এ নুতন। মাস দুয়েক হলো! অভ্র না থাকলে হয়ত এটুকুও হতো না। পুরা শুভেচ্ছা যায় মেহদী হাসান সাহেবের কাছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মাত্র দুই মাস! অন্য একটি ব্লগে আপনার একাউন্ট দেখলাম ২৩ সপ্তাহ ধরে চালু। আপনার কাঁঠাল বিষয়ক ব্লগও দেখলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই প্রকৃতিপ্রেমিক,

হা মাত্র দু মাসের মত। আমি ব্লগ গুলো পড়ছি অনেকদিন। দু একটার সদস্য হয়েছিলাম অনেক আগে। কিন্তু লিখতে পারি নাই, মাঝে মাঝে ইংরেজী বাংলায় দু একটা কমেন্ট লিখেছি মাত্র। সামুতে ২ বছর আগে হয়েছিলাম, কিন্তু আজো বাংলায় কোন পোষ্ট দিতে পারি নাই।

কাঁঠাল বিষয়ক কথামালা আমার ৮/৯ নাম্বার ব্লগ হবে।

অনেক শিখতে চাই। ভাল থাকুন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নিয়মিত লিখতে থাকুন। ভালো থাকুন।

কেমন সুর [অতিথি] এর ছবি

একজন বাবা হিসেবে আপনার লেখনি আমার হৃদয় ছুয়ে গেল. দুনিয়ার সকল বাবা তার সন্তানদের নিয়ে ভালো থাকুক.

এরকম একটা লেখায় "বানানে সমস্যা" খুঁজতে যাওয়া কিসের পরিচায়ক শব্দটা খুঁজে পাচ্ছি না.

-- কেমন সুর

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই কেমন সুর,
আপনাকে হাজার সালাম। আমার আসল কথাটা আশা করি আপনাকে বুঝাতে পেরেছি।

থাক না, সবাই আমরা সবকিছু কি বুঝি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই কেমন সুর, এক এক বাবাদের অনুভুতি এক এক রকম! মেয়ে বাবাদের অনুভুতি ভিন্ন হবে। ছেলেরা মায়েদের সাথে থাকে তবে বাবাকেই অনুসরন করে বলে আমার মনে হয়।

ছেলে মেয়ে বড় করে তোলা, এ এক সুন্দর অনুভুতি। তবে আমরা কজন তা খেয়াল করি। দেখার আগেই সময় চলে যায়!

প্রথম শ্রেনীতে পড়া ছেলেদের আচরন এমনই হয়। বাবার সাথে মারামারি/ কুস্তাকুস্তি করে এরা মজা পায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার বুকের ভেতর জমে থাকা কথার পাহাড়টা মনে হয় নেমে গেছে। সুন্দর লিখেছেন, বাবা হিসেবে আপনার প্রতিটি কথা ধ্রুব। প্রতিটি বাবা এমনটাই করে। আমি দেখি আমার বড় ভাইকে, অফিস থেকে ফিরে তার তিন বছরের ছেলেকে আদর না করে থাকতে পারে না।

আর কোনো বাবা যেন এমনটা নিঃস্ব না হয়। এমন কষ্ট যেন আর কাউকে ভোগ করতে না হয়। আপনার অনুভূতি ছুঁয়ে যাক সবার হৃদয়ে।

ধন্যবাদ,

কামরুজ্জামান স্বাধীন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই কামরুজ্জামান স্বাধীন, আপনার জন্য শুভেচ্ছা।
সচলায়তনের বাঘা বাঘা লেখকদের মনে হয় আমি/আমার লেখা বুঝাতে পারি নাই।
কেহ মনে হয় আমাদের আদরের সামিউলকে চেনেন না।
সবাই ভাল থাকুন।

মূর্তালা রামাত এর ছবি

ভালো লাগলো।

মূর্তালা রামাত

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই মূর্তালা রামাত,
আপনার লেখা গুলো আমার ভাল লাগে।
নিয়মিত সদস্য নয় বলে কমেন্ট করতে পারি না।
শরমিন্দা হচ্ছি।

উপায় খুজে পাছি না - কি করে রেগুলার মেম্বের বনি!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।