মানুষের এহেন মানসিকতার পরিবর্তন কবে হবে???

সাবরিনা সুলতানা এর ছবি
লিখেছেন সাবরিনা সুলতানা (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০৭/২০১০ - ১১:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাবরিনা সুলতানা

আমার পায়ের কাছেই বিরাট জানালা । সকালে সূর্যের কিরণ এসে চোখে মুখে মাখামাখি । সে এক অবস্থা আর কি! সেই সময়ে আলসেমিটা কাটানো মুশকিল হয়ে পরে । ঘুমের রাজ্য থেকেই বেরিয়ে আসতে আসতে আমি আকাশের নীল আর গাছেদের সবুজের মাঝে কিছুটা সময় ডুবে থাকার চেষ্টা করি । দেখতে থাকি মেঘের সাথে পাখিদের লুকুচুরি খেলা । ঠিক এমনি সময়ে মোবাইলে বেজে উঠে আইয়ুব বাচ্চুর গলা । ফোনটা রিসিভ করার পর ওপ্রান্তের কথা শুনতে শুনতে মেজাজটা খারাপ হতে থাকে । সেই তখন থেকেই মন মেজাজ দু'টোই খারাপ হয়ে আছে । কোনো কাজে মন বসাতে পারছি না ।
প্রতিদিন আমার ছোট বোনটিকে স্কুলে ক্লাস রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতে হয় আম্মুকে । গতকাল নীলা যখন তার আঁকা বাঁকা পায়ে ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, পাশ থেকে এক মহিলা আচমকা আম্মুকে বলে উঠলো, "আপনার এই অসুস্থ মেয়েকে স্কুলে আনার কি দরকার । তাকে ঘরেই তো পড়াতে পারেন ।" এ নতুন কিছু না । হর হামেশা এসব মন্তব্য ভেসে আসে আম্মু আর নীলার দিকে । কিন্তু যারা এসব বলেন তারা কি একটিবারো এমন করে ভাবেন, তাদের ঘরেও এমন একজন থাকতে পারত । এবং এমন সব মন্তব্যে ভুক্তভুগীর মনের ওপর কি প্রচন্ড মানসিক চাপ পড়তে পারে তা বোধ করি তাদের ধারণাতেও নেই । এ কেমন মানসিকতা মানুষের আমি বুঝি না । নীলা শারীরিক ভাবে অসুস্থ বলে কি তার স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার নেই?? সে কেনো পারবে না আর দশজনের সাথে স্কুলে পড়তে ?? শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কি তাহলে তার অপরাধ হয়ে দাড়ালো !?

আমি এই বিষয়ে অনেকদিন ধরে লেখা লেখি করছি । পুরো বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি । সমানে গলা ফাটিয়ে চি৥কার করে যাচ্ছি, "আপনার অপ্রতিবন্ধী শিশুটির সাথে প্রতিবন্ধী শিশুটিকেও স্কুলে পাঠান । তারও অধিকার আছে পড়ালেখা করে শিক্ষিতি হয়ে নিজের দক্ষতা প্রমান করার । তাকে একটি স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিন । " অন্তত আমার মতন কাউকে যেন ভুগতে না হয় । আমি যে পরিবেশ পাইনি আমি চাই অন্যরা সেটি পাক । আর এদিকে আমারি মাকে শুনতে হচ্ছে, "আপনার এই অসুস্থ মেয়েকে ঘর থেকে বের করার দরকার কি " !!! হায়রে দুনিয়া ......মানুষের এহেন মানসিকতার পরিবর্তন কবে হবে???


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপু,
আমি অনেক আগে সচলে একটা লেখা লিখেছিলাম, 'একজন মানুষের গল্প' শিরোনামে। আমার নিজের একটা স্বপ্ন ওই লেখাটায় ব্যক্ত করেছিলাম। ফেসবুকের লিংক্টা এখানে। সময় পেলে পড়বেন।

আমি H.S.C এর পর থেকে এই সচেতনতা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার অতি কাছের কিছু মানুষের কাছ থেকে এমন মন্তব্য শুণে একই সাথে ব্যথিত এবং হতাশ হয়েছি। আর নিজের ব্যর্থতায় নিজেই মুষড়ে পড়েছি বারবার।

নীল ভুত।

বোহেমিয়ান এর ছবি

@নীল ভূত আপনি কোথায় কাজ করছেন জানাবেন?
অন্যদেরও কি কাজ করার সুযোগ আছে?
তাহলে আমি যদি সময় সুযোগ পাই তো করব ।

আপনার ফেইসবুক নোট এর লিঙ্ক কাজ করছে না মন খারাপ .

চাইলে মেইল করতে পারেন

@সাবরিনা আপু , লেখা চালিয়ে যেতে থাকুন । একটা সময় নিশ্চয়ই মানুষ অনেক সচেতন হবে । কিছু মানুষ ও যদি সচেতন হয় সেটাও কিন্তু অনেক বড় পাওয়া ।
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

অতিথি লেখক এর ছবি

@ বোহেমিয়ান, আপনি কি সত্যি-ই কিছু করতে চান? তাহলে আপনার ব্যাস্ত সময় থেকে কিছুটা সময় যদি পারেন আমাদের দিন । আমরা খুব সিরিয়াসলী অ্যাওয়্যারনেস ক্যাম্পেইন করতে চাই । কিন্তু লোকবলের অভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় খুঁজে পাচ্ছি না ।

ধন্যবাদ
সাবরিনা সুলতানা

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ফেইসবুক নোট এর লিঙ্ক কাজ করছে না মন খারাপ দয়া করে আবার দেবেন?

আপনি যদি অনেক আগে থেকেই সচেতনতা মূলক কাজ করছেন, তাহলে আমাদের সাথে যোগ দিন এই গ্রুপে । এটি যদিও ফেসবুক গ্রুপ আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাশ্রম ধর্মী এই গ্রুপটি থেকে মানুষকে সচেতন করার জন্যে কিছু করতে । কিন্তু আমাদের সাথে কাজ করবে এমন মানুষের খুব অভাব । সবাই শুধু বলে পাশে আছি । কাজের সময়ে কেউ কিছু করতে চায় না । অন্তত প্রত্যেকে যদি যার যার অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে দৃষ্টির ভঙ্গির পরিবর্তনে খুব বেশি সময় লাগবে না । বেশ কিছুদিন আগে সচলে আমি লিখেছিলাম এ ব্যপারে ফেসবুক, আমি এবং আমাদের স্বপ্ন শিরোনামে। লেখাটি পড়লে পরিষ্কার ধারণা পাবেন।

তাছাড়া আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই ঠিকানায় :
ধন্যবাদ
সাবরিনা সুলতানা

অতিথি লেখক এর ছবি

আপু আপনার যদি হাতে সময় থাকে, এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে আমাদের একটা প্রজেক্টে কাজ করার জন্য আপনাকে আমন্ত্রন জানাবো। দয়া করে আমাকে এই মেইল এড্রেসে আপনার উত্তরটা জানিয়ে দেবেন।

নীল ভুত।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আপনাকে একটি মেইল করেছি । প্লিজ চেক করে দেখুন।

ধন্যবাদ ।
সাবরিনা সুলতানা

তাসনীম এর ছবি

গতকাল নীলা যখন তার আঁকা বাঁকা পায়ে ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, পাশ থেকে এক মহিলা আচমকা আম্মুকে বলে উঠলো, "আপনার এই অসুস্থ মেয়েকে স্কুলে আনার কি দরকার ।

দুঃখজনক মানসিকতা। শিক্ষার ও সচেতনাতার অভাব থেকেই এগুলো হয়। তাছাড়া জাতিগতভাবে আমাদের বেশ কিছু মানসিক ব্যাধি আছে বলেই আমার ধারনা।

আমি নিজে খুব বেশি পরিমাণে ক্লাব ফুটেড ছিলাম জন্মের সময়েই, দু-পায়েই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব কমই অসুবিধা হয়েছে আমার। যদিও মাঝে মাঝে কিছু সহপাঠি, দুই একবার কয়েকজন শিক্ষকও টিটকারি করেছেন। অল্প হলেও সমস্যা আমি নিজেও ফেস করেছি এবং বুঝতে পারি খুব ভালো মত। অনেকগুলো অপরেশন ও ফিজিক্যাল থেরাপির বলে আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছি।

আমি জানি না আপনার বোনের পায়ের সমস্যাটা ঠিক কী। যদি কোন ট্রিটমেন্ট থাকে তবে সেটা করাতে কোন রকম দ্বিধা করবেন না। আমার অপরেশনগুলো হয়েছিল ৭০ এর দশকে, এর মধ্যে দুটো সার্জারি হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মাঝে। তখনকার তুলনায় এখন অনেক বেশি সুবিধা আছে। মানুষের কথা ইগনোর করুন, দরকার হলে সামনা সামনি গালাগাল করুন, যারা এসব মন্তব্য করে তাদের সাইকোলজি আমি ভালোই জানি, কষে ধমক দিলেই ওরা কুঁকড়ে যাবে।

চিকিৎসাশাস্ত্রের পুরো সুবিধা নিন। পায়ের সমস্যা যদি শৈশবে চিকিৎসা করা হয়, তবে সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দুবোনের সমস্যাটির কোনো সমাধান যার নেই নাম মাস্কুলার ডিস্ট্রফি । আপাতত নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাওয়া ছাড়া আলাদা কোনো ট্রিটমেন্ট নেই । আমার সময়ে বাবা মা যা পারেনি এখন চেষ্টা করে যায় সে ভুলের প্রায়শচিত্ত করতে । তাই এখন অনেক বেশি ইগনোর করা হয় মানুষের এসব মন্তব্যকে । কিন্তু আমার ছোট বোনটির ওপর প্রচন্ড মানসিক চাপ পড়ে । যার ফলে ও বাইরের জগতের সাথে স্বাভাবিক হতে পারে না । ও তো এখনো অনেক ছোট । এইটুকুন বয়সে ওকে মানুষের নোংরা মানসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে দেখে মনটা খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মাঝে মাঝে ।

সাবরিনা সুলতানা

বাউলিয়ানা এর ছবি

আমাদের দুবোনের সমস্যাটির কোনো সমাধান যার নেই নাম মাস্কুলার ডিস্ট্রফি । আপাতত নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাওয়া ছাড়া আলাদা কোনো ট্রিটমেন্ট নেই

হুম আপনার দেয়া উইকি লিঙ্কও একই কথা বলছে।

মানষিক ভাবে শক্ত থাকুন। আশেপাশের মানুষের কথায় কান দেবার কোন মানে নেই। সব কিছুর মাঝে নিজের কাজটা ঠিক মত করতে পারাটা অনেক বড় ব্যপার।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন।
নিজে সচেতন হোন।
অন্যকেও সচেতন করে তুলুন ।

সাবরিনা সুলতানা

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনার বক্তব্যটাকে সমর্থন করলাম পুরোপুরি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ।
ভালো থাকুন ।
পাল্টে দিন সমাজের দৃষ্টি ভঙ্গি ।

সাবরিনা সুলতানা

অতিথি লেখক এর ছবি

নিজের না হলে,অন্যের কষ্টটা বুঝতে পারে না আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ। শারীরিক কষ্টকে ছাড়িয়ে যায় মানসিক কষ্ট।
তবু এইসব বাধা উপেক্ষা করেই এগোতে হবে। জানি বলা যত সহজ,ততটা সহজ নয় বাস্তব।

সুমিমা ইয়াসমিন

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিকই বলেছেন নিজের যতক্ষণ নাহয় কেউ কারুরটা বোঝার চেষ্টা করে না। কিন্তু করা উচিত।

সাবরিনা সুলতানা

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কিছু মানুষের এই ঘৃণ্য মানসিকতা রোজ কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তবে মনে রাখবেন এই মানসিকতার মানুষের সংখ্যা অনেক কম। তাদেরকে সরাসরি ইগনোর করার ছাড়া উপায় নেই। আপনার মানসিক শক্তিকে সবসময় স্যালুট!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া হাসি
ভালো থাকুন।
নিজে সচেতন হোন।
অন্যকেও সচেতন করে তুলুন ।

সাবরিনা সুলতানা

অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষের এই মানসিকতার পরিবর্তন কবে হবে?
লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল।ভালো থাকুন।

অ্যামেচার

শাফি [অতিথি] এর ছবি

মানুষের এমন দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো সহজ নয়। আপনার লেখা পড়ে ঐ মহিলার উপরে দারুণ রাগ হচ্ছে, যদিও এসব যুদ্ধে (দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টানো তো যুদ্ধই কী বলেন?) রাগ বস্তুটা অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কী করব বলুন, কিছু ক্ষেত্রে আবেগ-কে নিয়ন্ত্রন সহজ কথা নয়। তবে সুখকর খবর হলো, এই যুদ্ধে আপনিই প্রথম নন, একা নন। এটি নিছক সান্তনার মত শোনালেও, সত্য। আমি জানি, আপনি ও আপনার ছোট্ট আপ্পু অবশ্যই ইনশা-আল্লাহ ভাল থাকবেন, স্বুস্থ্য জীবন যাপন করবেন।

শাফি।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপু, অনেক ছোট থেকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের জন্যে বিভিন্ন ভলান্টিয়ারিং কাজে জড়িত থাকায় তথাকথিত সুস্থ-স্বাভাবিক অনেক মানুষেরই এহেন আচরণ দেখে আসছি। কিন্তু উল্টোরাও আছেন। আমাকে তো বাড়ি থেকেই শেখান হয়েছে সবাই সমান, সবার সম অধিকার। দরকার বিপুল গণসচেতনতা।

আর আমার নিজের মত হল, মানুষ যা নিজে জানে না, বোঝে না, সেটা ভয় পায়, সেটা থেকে নিজেকে তাই অনেক দূরে রাখতে চায়, যেন সামনে না দেখতে পেলে সমস্যাটা আর ঐটা সমাজে থাকবেই না! তাই আমাদের নিজেদেরকে হার মানলে চলবে না, হতাশায় পিছিয়ে না গিয়ে শক্তভাবে নেগেটিভিটি মোকাবেলা করতে থাকলে, ধৈর্য্য ধরে ব্যাখ্যা করলে, ২০ জনে ১ জন শুনলেও লাভ। ভরসা হারিয়েন না। আর আপাতত মন ভাল করার জন্যে এই সিনেমাটা দেখতে পারেন। দেখুন আশির দশকের শেষের দিকেও আমেরিকায় এসব নিয়ে সেইভাবে তেমন কোন আইন বা সচেতনতা ছিল না!
ভাল থাকুন আপু। মনোবল দৃঢ় রাখুন। আমাদের দেশেও সবাই সচেতন হবে। আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়েই সেই সচেতনতা আনব। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।