স্বপ্ন যখন পাহাড়সম(পর্ব-০২)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১১/০৭/২০১০ - ৩:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্রিগেডিয়ার স্যার জন হান্ট ও এডমন্ড হিলারী কর্ত্‌ক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি'র নিকট প্রদত্ত এভারেস্ট বিজয়ের রিপোর্টঃ(পার্ট-০২)

আমাদের এখন কাঠমুন্ডুর রাস্তা ধরে সোজা পূর্বদিকে টানা ১৫০ মাইল 'মার্চ' করে যেতে হবে। রাস্তার দু'পাশে ধানী ক্ষেত,উঁচু-নিচু টিলা আর উপত্যকার ফাঁক গলে এগিয়ে যাবে আমাদের অভিযাত্রী দল। প্লাস লোকমুখে শোনা যাত্রাপথের ভয়ঙ্কর সুন্দর প্রাক্‌তিক বৈচিত্র্য আমাদের দেহ-মনে তখন থেকেই একটা আলাদা রকমের 'এক্সাইটমেন্ট' ছড়িয়ে দিচ্ছিল। মূল অভিযান শুরুর আগে এরকম একটা মার্চের সত্যিই খুব প্রয়োজন ছিল।

হিমালয় কন্যা নেপালের পথ ধরে আমাদের এই যাত্রাটি ছিল সত্যিই অসাধারণ। শুরুর দিকের পাহাড়গুলো ছিলো মোটামুটি ভদ্রগোছের। যথেষ্ট চওড়া আর চাষবাসের উপযুক্ত। একদম আমরা যেমনটা চেয়েছিলাম। আবহাওয়াও ছিল প্রত্যাশার চেয়ে ভাল। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা একটা ভাব চারিদিকে। কিছু মৌসুমী ফুলও ফোটা শুরু করেছে এদিকে। রডোডেন্ড্রন,ম্যাগনোলিয়া,প্রিমুলাস-আরো নাম না জানা কিছু ফুল।

অভিযাত্রীদল এখন খানিকটা উত্তরে মোড় নিয়েছে। পথের বাঁদিকে চোখ ফেরালেই আপনি দেখতে পাবেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পর্বতশ্রেণীর খুব চমৎকার কিছু ভিউ। ডানদিকে ফেনিয়ে ওঠা জলস্রোতের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছি আমরা। কখনো সখনো তাদের সাথে সামনাসামনি মোলাকাতও হয়ে যাচ্ছে বৈকি। কাঠের তৈরি ঝুলন্ত সেতুগুলো এই যাত্রায় আমাদের পার করে দিচ্ছে। এদিকে,দলের কুলিরা পড়েছে বিরাট বিপদে। এক এক জনের কাঁধে তখন এক গাদা মালামাল। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের যাত্রা প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতিতে হচ্ছিল। এই দেরী অবশ্য এক দিক দিয়ে শাপে বর হয়েছিল আমাদের জন্য। আমাদের 'কুক' থন্ডাপ মশাই এই ফাঁকে আমাদের জন্য ডিনার রেডি করে ফেলতো আর আমরাও একটা ঝাড়া গোসল সেরে নিতাম।

দিন যতই যাচ্ছিল, হিমালয় ততই আমাদের কাছে এসে ধরা দিচ্ছিল। রাস্তাও আরো খাড়া আর পাথুরে হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝেই দূরের সেই বরফময় পাহাড়গুলো চোখে ঝিলিক দিয়ে ওঠে। আমরা শেরপাদের পরামর্শমত 'দুধ কশি' নামক একটা সংকীর্ণ উপত্যকার মধ্য দিয়ে একটা শর্টকাট মারলাম। আর এভাবেই আমরা আমাদের স্বপ্নের এভারেস্টের প্রথম 'বেস ক্যাম্প'এ এসে পৌঁছুলাম।

জায়গাটার নাম 'থিংবোচের মঠ'। আর তারিখটা মার্চের ২৬। সমুদ্রপ্‌ষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা মোটামুটি ১২,০০০ ফুটের মত। বলতে দ্বিধা নেই,প্‌থিবীর সুন্দরতম স্থানগুলির এটি একটি। ঘাসের কার্পেটে মোড়া চারিদিক। মাথা উঁচু করলেই ঐ দেখা যাচ্ছে এভারেস্টের চূঁড়ো। 'অশরীরী সুন্দর' বলে সাহিত্যে একটা উপমা প্রচলিত আছে। এ জায়গাটিতে এসে উপমাটার সার্থকতা উপলব্ধি করলাম।

বেস ক্যাম্পে মোটামুটি তিন সপ্তাহ থাকার মত মেন্টাল প্রিপারেশন ছিল আমাদের। তিন সপ্তাহ খুব বেশি সময় নয়। এরই মধ্যে অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। তো,প্রথমেই কুলিদের যার যার পাওনা ঠিকমত বুঝিয়ে দেয়া হল। এরপরই আমরা সবচেয়ে জরুরী কাজ'অ্যাক্লিমাটাইজেশন' এ মনোনিবেশ করলাম। তিন দিন ধরে আমরা আমাদের প্ল্যানগুলো নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা করলাম। দরকারী কিছু যন্ত্রপাতির ব্যবহারও শিখে ফেললাম এর মাঝে। সময়ের সাথে সাথে এই অজানা দেশটির সাথে এক ধরণের বন্ধনে জড়িয়ে যাচ্ছি আমরা। নিজেদের সাথেও ভালো রকমের আলাপচারিতা গড়ে উঠল এই সময়ে।

এপ্রিলের মাঝামাঝি। আমরা এখন আরো ৬টি চূঁড়া অতিক্রম করে সমুদ্রপ্‌ষ্ঠ থেকে প্রায় ২০,০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থান করছি। দু-একদিনের মধ্যেই আমরা 'খুম্বু' উপত্যকা পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের পাদদেশে পৌঁছাবো। আর ওখানেই, মানে 'খুম্বু' হিমবাহের উপরেই হবে আমাদের দ্বিতীয় 'বেস ক্যাম্প'। বলে রাখা ভাল, এই 'খুম্বু' হিমবাহের জন্ম কিন্তু এই এভারেস্টেই। আর আমাদের ক্যাম্পটি এর কেন্দ্রের প্রায় ১৮,০০০ ফুট নিচে অবস্থিত। ক্যাম্পের চারপাশ ঘিরে রয়েছে অদ্ভূত সুন্দর কিছু বরফের চূঁড়ো---লিংট্রেন,পামোরি,নুপশে। তাড়িরে তাড়িয়ে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলাম আমরা।

এপ্রিলের থার্ড উইকের মধ্যেই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সবাই এই বেস ক্যাম্পে এসে পৌঁছুলো।(চলবে)

---আশফাক আহমেদ


মন্তব্য

ওডিন এর ছবি

চলুক হাসি

আগ্রহ নিয়েই পড়ছি। একদিন থিয়াংবোচে পর্যন্ত যাবার ইচ্ছে আছে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

মুস্তাফিজ এর ছবি

কবে?

...........................
Every Picture Tells a Story

অতিথি লেখক এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সত্যি বলতে কি, অনুবাদ করতে গিয়ে কিছু শব্দের, বিশেষ করে জায়গার নাম নিয়ে আমার ভালোই সমস্যা হচ্ছে। উচ্চারণটা 'থিংবোচ' হবে না 'থিয়াংবোচ' হবে, 'নুপশে' হবে 'নাপোচে' হবে---ধন্দে পড়ে যাই।এ ব্যাপারে কেউ হেল্প করলে লেখাটা মনে হয় আরেকটু বেটার হত

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

উচ্চারণ নিয়ে মনে হয় গুগল করলে লাভবান হবেন। আর পড়তে ভাল লাগছে। চলুক। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।