কোরবানি নিয়ে হাইকোর্টের রিট, কিছু ভাবনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০২/০৮/২০১০ - ৮:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোরবানি নিয়ে মিথ্যা তথ্য পড়ানো হয় দাবি করে হাইকোর্টে একটা রিট হয়েছে। যারা খবরটা পড়েননি তারা পড়ে নিতে পারেন কালের কন্ঠে http://dailykalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Antivirus&pub_no=242&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=77257। হাইকোর্টে এই রিটের উপর আংশিক শুনানি হয়েছে এবং বৃহষ্পতিবার পরবর্তী শুনানি হবে। আমার কাছে মনে হয়ে এই রিট শুনানির কনসিকোয়েন্স বা রিটের টাইমিং বেশ গুরুতৃপূর্ণ।

দেখা যাক, এই রিট শুনানি হাইকোর্টের ডোমেইনে পড়ে কি না? আরজিতে বলা হয়েছে -

আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় ছেলে ইসমাইলকে নয়, ইসহাককে জবাই করার উদ্দেশ্যে শুইয়েছিলেন এবং তাঁর জায়গায় একটি দুম্বা নয়, একটি হৃষ্টপুষ্ট জন্তু দেওয়া হয়েছিল বলে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। সুরা সাফফাত (আস্ সাফফাত)-এর ৯৯ থেকে ১১৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়লেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে

তার মানে দাড়াচ্ছে, এই রিটের উদ্দেশ্য হলো, কোরআনের সুরা সাফফাতের ৯৯-১১৩ নম্বর আয়াতের সত্যিকার তাফসীর (ব্যক্ষা) খুজে বের করা। কোরআনের তাফসীর দেয়ার দায়িতৃও কি হাইকোর্ট নিতে চান? হাইকোর্টে তো তাহলে মুফাসসির নিয়োগ দিতে হবে।

কোরবানি কাকে দেয়া হয়েছিল এটা একান্তই ধর্মীয় বিশৃাসের ব্যপার। ধর্মীয় বিশৃাসের ব্যপারেও আদালত বা সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে যদি তার একটা রাজনৈতিক বা সামাজিক দিক থাকে যা সরকার বা সমাজের শান্তি বিঘ্ন করে অথবা রাষ্ট্রসৃীকৃত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। যেমন, সহমরণ বা বর্ণপ্রথার বিপক্ষে আদালত বলতে পারে। কোরবানি নিয়েও রিট হতে পারে, যে গরু কোরবানি হিন্দুদের অনুভুতিতে আঘাত করে তাই নিষিদ্ধ করা উচিত কিনা অথবা কোরবানির সময় পরিবেশ দূষণ ঘটে তাই কোন ব্যক্তি তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে মনে করে আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু কাকে কোরবানি দেয়া হয়েছিল সেটা একান্তই কারো বিশৃাসের ব্যপার, তার কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক চরিত্র নাই।

আরেকটা ব্যপার আরো বেশি গুরুতৃপূর্ণ - তা হলো এই রিটের টাইমিং। এখন ৫ম সংশোধনী সংক্রান্ত রায়ের পর ধর্মনিরপেক্ষতার মুলনীতি পূণঃপ্রতিষ্ঠা নিয়ে বেশ আলাপ চলছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চিন্তাভাবনা বেশ জোরালো ভাবেই হচ্ছে - মিউজিক্যাল চেয়ারের মত সরকার আর ইসি লোফালুফি খেলছেন কাজটা কে করবে তাই নিয়ে। এই মূহুর্তে এই ধরনের রিট আমলে নেয়া, জনগনকে ভুল মেসেজ দিতে পারে। এই রিট আমলে নেয়ার মানে হচ্ছে ধর্মীয় স্রেফ বিশৃাসের জায়গাগুলোতেও হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে। রাষ্ট্র এবং ধর্ম আলাদা করার কথা বলা হলেও রাষ্ট্রও ধর্মকে তার জায়গায় প্যাসিভলি থাকতে দেবে না। হতে পারে এটা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় করে তুলবে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোও দাবি করতে পারবে ধর্মের উপর এইসব হস্তক্ষেপ ঠেকাতেই তাদের মাঠে থাকা প্রয়োজন। এটা কি ভুল সময়ে ভুল করে দেয়া ভুল মেসেজ?


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কুরবানী ইস্যু নিয়ে তেলেসমাতি একটা আজাইরা ইস্যু। অন্তত আমার কাছে।

আর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের মিউজিক্যাল চেয়ার খেলার কী দরকার সেইটাই বুঝলাম না এখনো। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হবে সংবিধান মতে। এই সংবিধান তো কোনো সরকার বা কোনো ইলেকশন কমিশনের না। এইটা বাংলাদেশের।

এই নিষিদ্ধকরণের ঘোষণা পাঠে আসতে পারেন নির্বাচন কমিশন, সংসদ, প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট। এঁরা কেবল সংবিধানের আদেশ বা ঘোষণাটুকু দেশের নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। এর বেশি এঁরা কী করতে পারেন! এটা নিয়ে এতো হাদুমপাদুমের কী আছে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আতিক [অতিথি] এর ছবি

দেখুন পলিটিক্স ঠিক আদর্শিক ব্যপার নয়। এটা হচ্ছে একটা স্ট্র্যাটেজি গেম। সরকার কি করতে পারে সেটা তার আদর্শিক বেসিস থেকেই আসে, কিন্তু সেটা করবে কিনা তা অনেক হিসেব-নিকেশের ব্যপার। পুরো ধর্মনিরপেক্ষ চেহারা নেয়া বা আধাআধি করা সবই ভোটের অঙ্কে সম্ভাব্য লাভজনক সিনারিও চিন্তা করেই নেয়া হবে। এজন্যই এই মিউজিক্যাল চেয়ার, ক্রেডিট যদি হয় নেবো, কিন্তু উল্টো কিছু হলে যেন দায় চাপানোর কেউ থাকে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কোরবানী হলো আব্রাহামিক ট্রাডিশন। যাকে কোরবানীর কথা বলা হচ্ছে তিনি ইসমাইলও হতে পারেন ইসহাকও হতে পারেন-- এটা নিয়ে তর্ক বা রীটের কী আছে বুঝলাম না। যে কেউ হলেই হলো, কোরবানী করতে তো সেই উপলক্ষটাই যথেষ্ট। মনে হচ্ছে রিভার্স গেইম।

নাশতারান এর ছবি

তা-ই হবে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ইসলাম অরক্ষিত সেটা প্রমাণের জন্য চালবাজি।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কথা হলো এটা খতিয়ে দেখা দরকার, যিনি রিট করলেন তার আর কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা। তার চেয়েও বড় কথা এই রিট বিচারক আমলে নিলেন কি করে?

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

হজরত ইব্রাহিম (আঃ) যাকেই কুরবানী করার জন্য নিয়ে যান না কেনো, সেটা আল্লাহর নির্দেশেই নিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই এই 'কুরবানী'র মতো একটা উপলক্ষ মুসলমানরা পালন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। সুরা সাফফাত-এ নাকি স্পষ্ট করে কারো নাম নেই, তাতে কি এই উপলক্ষ পালন করার ক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু যায়-আসে????

ধর্ম ব্যাবসায়ীদের আপকর্ম হালাল করার জন্য (হোক সে যে কোন ধর্মের) কেউ কি তলে তলে গেম খেলছে??? আর হাইকোর্টের এই বিষয়টা আমলে নেয়ার মানেটা কি????

===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লেখকের পরিচয়?

রায়হান আবীর এর ছবি

তারচেয়ে স্বপ্নে ঈশারা পেয়ে পুত্রকে জবাই করতে চাওয়া বাপকে পাগল এবং মানসিক বিকারগ্রস্থ উপাধি দেওয়া (এতোদিন পরে হলেও) নিয়ে একটা রিট করা হোক।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই তর্ক বহু পুরাতন। এখন এটা নিয়ে মাতামাতি কেন!
এ বিষয়ে অধিক পড়ার জন্য বেনজীন খান সম্পাদিত 'পশু কোরবানি: একটি বিকল্প প্রস্তাব' বইটা কাজে লাগতে পারে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অবাঞ্ছিত এর ছবি

১) লিঙক কাজ করছে না।

২) স্কুল কলেজে ধর্ম পড়ানোই সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করা উচিত...

৩) হাইকোর্টের বরং নিজামীর পাছায় পেরেক ঢুকানো নিয়ে সময় ব্যায় করা উচিত।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।