সিনেমা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১২/০৯/২০১০ - ৮:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

- অনন্ত আত্মা

জীবনে প্রথম হলে গিয়ে সিনেমা দেখাটা অবশ্যই উত্তেজনাকর একটা মুহূর্ত, যদিও উত্তেজনারকর মুহূর্তটা ঠিক-ঠাক মনে পড়ছে না। সম্ভবত হলে গিয়ে দেখা প্রথম সিনেমার নাম ‘কসাই’। আমি তখন তিন বা চার; মা, ফুপু, বাবা, ভাইয়ার সাথে হলে গিয়েছি। আমাকে অবশ্য নিতে চাচ্ছিল না; জোরা-জুরি করে, ২০০/২৫০ মি.লি. চোখের জল বিসর্জন দিয়ে হলে গিয়ে ঢোকা। অন্ধকারে আর কতক্ষণ জেগে থাকা যায়; ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুম। আর একটা সিনেমার কথা মনে পড়ে, সিনেমাতে নায়কের মাথায় গরম পানি ঢেলে এক জাদুকর কুমির বানিয়ে ফেলে। এরপর থেকে মাথায় গরম পানি দিতে খুব ভয় পেতাম। এই সবগুলো ঘটনাই নারায়নগঞ্জ আর ময়মনসিংহের। চাকুরীসূত্রে বাবা যখন জামালপুরে সেই সময় হলে গিয়ে দেখা প্রথম সিনেমা হচ্ছে ‘অশিক্ষিত’। নায়ক রাজ-রাজ্জাকের সেই ছবি দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। হলের নাম ছিল ‘নিরালা’। সেই সময় হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মজা ছিল অন্যরকম।

ঢাকায় আসার পর প্রায় দুই বছর ছিলাম রামপুরাতে, এই সময়ে হলে গিয়ে কোন সিনেমাই দেখা হয়নি। মিরপুরে আসার পর মাঝে মাঝেই সিনেমা দেখতে হলে যেতাম। সবই দেখতাম নায়ক রুবেলের সিনেমা – লড়াকু, বীরপুরুষ, মারকশা, অমানুষ। রুবেলের যেই সিনেমাই মুক্তি পেত, প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহেই সেটা দেখতে যেতাম। এই সময়কার সিনেমা দেখার সঙ্গী ছিল ভাইয়া। বাসায় মা’র অনুমতি আর পয়সা-পাতি নিয়েই যেতাম। যদিও মা সবসময় বলত, ‘সিনেমা হল সিনের মা’ কিন্তু আমাদের কখনও যেতে নিষেধ করতেন না।

যখন ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ি, সেই সময় রম রম করে চলছে এক-টিকেটে-দুইটি ছবি'র ব্যবসা। একটা সিনেমা থাকত সুপার এ্যাকশন অন্যটা থাকত সুপার রিয়্যাকশন। কিছু নির্দিষ্ট হলেই শুধুমাত্র এই সিনেমাগুলো চলত যেমন- গ্যারিসন, পর্বত, বিডিআর ইত্যাদি।
আমার স্কুলের দুই বন্ধু –মিলন আর উত্তম। দুইজনে একদিন
'এক-টিকেটে-দুইটি ছবি' দেখার জন্য আমাদের নিকটস্ত পর্বত হলে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছে। সাবধানতার জন্য হল থেকে কিছুটা দূরে রিকসা রেখে হেঁটে হলের দিকে যাচ্ছে। দুইজনেরই ব্যাপক উৎসাহ। উত্তম জোরে জোরে হাঁটছে আর বলছে –
- ওই ব্যাডা, তাড়াতাড়ি হাঁট, স্নামা শুরু হয়া গ্যাছে।
তাড়াহুড়া করে দুইজনে হলের গেটে ঢুকতে গিয়ে দেখে- উত্তমের বড় ভাই উজ্জ্বল আর কাজিন রুমান ভাই হলে ঢুকছে। দুইজনে এবার হাঁটা রেখে দৌড় এবার অবশ্য হলের দিকে না, একদম উল্টা দিকে।
এ ধরনের ঘটনা মানে 'এক-টিকেটে-দুইটি ছবি' দেখে ধরা খাবার ঘটনা অবশ্য আমারও আছে, তবে ধরা খেয়েছিলাম বাসায় মা’র হাতে। এজন্য অবশ্য আমার উদাসীনতা দায়ী; সিনেমা দেখে টিকিটটা সার্টের পকেটেই রেখে দিয়েছিলাম। যথারীতি ‘পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে, থুক্কু মায়ের হাতে।’

ভার্সিটিতে যখন পড়ি তখন বন্ধু রিপন খবর দিল ওদের এলাকা শনির আখরা থেকে কিছুটা দূরে চিটাগাং রোডে একটা ভাল(!) হল আছে। হলের নাম ‘গোধূলী’- কাব্যিক, শৈল্পিক ঘরানার নাম হলেও হলের মালিক শিল্পের ধার ধারত না। চালু, ‘আদিম রসে সিক্ত’ ধরনের সিনেমা ছাড়া অন্য কোন ধরনের সিনেমা এ হলে থাকত না। রিপনের নেতৃত্বে একদিন ভার্সিটি থেকে ১২-৩ টা’র শো ধরার জন্য আমরা ৬-৭ জন রওনা হয়ে গেলাম। দূভাগ্যক্রমে অতটা গরম মশলা সিনেমাতে ছিল না। রিপন বুঝ দিল সামনের সপ্তাহে আরো গরমা-গরম কিছু আসবে। অবশ্য গরম-মশলা কম থাকলেও আমাদের আরেক বন্ধু আহাদের তাতে কোন সমস্যা হয় নাই; সে হলের আলো-আঁধারীতেই কম মশলায় রান্না-বান্না শেষ করে ফেলেছে। ওর প্যান্টের ডি-বক্সের নমুনা দেখেই আমরা ওকে ঐ দিনের মত ত্যাজ্য বন্ধু করে চলে আসলাম।

বন্ধু মহলে আহাদের নাম ছিল ‘বাটলার’; কি কারনে ওর এই নাম ছিল তা আজ আর মনে নাই। তবে ঐ দিনের পরে ওর আরেকটা নাম হয়ে যায়, তা হচ্ছে ‘সেক্সী বয়’। আহাদের সিনেমা দেখার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। ভার্সিটি থেকে বের হবার পরে একটা ব্যাংকে চাকুরী নিয়ে আহাদ শেরপুরে চলে যায়। শেরপুরে থাকাকালীন সময়ে ওর সাথে একদিন ফোনে কথা হয়-
- দোস্ত কি খবর তোর?
আহাদ বলল-
- ভাল।
দুই-একটা কথার পরই ও বলল-
- দোস্ত এখানে দুইটা সিনামা হল; ব্যাংকের অফিসারদের জন্য একদম ফ্রি।

onnajagat@yahoo.com


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

হাহাহা
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

অদ্রোহ এর ছবি

হলে দেখা প্রথম সিনেমার নায়ক ছিল ওমর সানি।
মনটা উদাস হইয়া গেল!

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওমর সানি'র হিট ডায়ালগ হচ্ছে -
'এ..এ..এই, এই ইন্সপেক্টর'
জট্টিল একটা নায়ক।

অনন্ত আত্মা

কৌস্তুভ এর ছবি

লেখা খুব মজার হয়েছে।

ছোটবেলায় একবার আমিও বাড়ির লোকের সাথে সিনেমা দেখতে যাবার বায়না ধরেছিলাম। সিনেমাটা ছিল 'শ্বেত পাথরের থালা', ইমোশনে টইটম্বুর সামাজিক সিনেমা। একটু পর থেকেই 'বাবা বাড়ি চল, ভাল্লাগছে না' বলে ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছিলাম। আমি আবার হলে ঘুমোতে পারি না...

সে হলের আলো-আঁধারীতেই কম মশলায় রান্না-বান্না শেষ করে ফেলেছে।

দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
লেখাটা আরো হয়ত মজার করা যেত, কিন্তু ভয় ছিল অশ্লীলতার অভিযোগে না আবার ঘ্যাচাং হয়ে যায়। তাই রেখে ঢেকে লিখতে হল।

অনন্ত আত্মা

কৌস্তুভ এর ছবি

আরে অত চিন্তা করেন না। তবে ভাষার আলো-আঁধারিতেই তো মজা বেশি!

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিকাছে।

অনন্ত আত্মা

জীবন্ত শুভ্র [অতিথি] এর ছবি

এখন এই অভিজ্ঞতা হয় নি......।।

অতিথি লেখক এর ছবি

একবার টেরাই করে দেখতে পারেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

অনন্ত আত্মা

প্রাকৃত জন [অতিথি] এর ছবি

আমি যখন ক্লাস সেভেনে ছিলাম তখন একা একা একটা বেশ গরম জিনিস দেখে আসছিলাম। নায়ক মেহেদীর।
"রাজা নাম্বার ওয়ান"
কি কি হইছিল পুরাপুরি মনে নাই, তবে পয়সা পুরাই উসুল হইছিল মনে আছে!

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম, মেহেদী ঐ সময় বেশ কিছু রগরগে ছবি করছিল যার মধ্যে 'রাজা নাম্বার ওয়ান' অন্যতম। মেহেদী, ময়ুরী - এদের ছবি দেখা মানেই পয়সা উসূল।

অনন্ত আত্মা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।