মক্কা নোটসঃ মহারাজা, তোমায় সেলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৮/১১/২০১০ - ২:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

রাজতন্ত্রের দেশে এই প্রথম না, কিন্তু ভোটাভুটির গণতন্ত্র বিহীন রাজতন্ত্রের দেশে এই প্রথম বলা চলে। দেশে থাকতেও কোনদিন ভোট দেবার দরকার হয়নি, আর দরকার পড়লেও এক ছ্যাচড়া আর এক চোর-ডাকাতের মধ্যে একজনকে বেছে নেবার জন্য কষ্ট করে বাড়ি থেকে বের হয়ে ভোটকেন্দ্রে কোনদিন যাব বলে মনে হয়না অদূর ভবিষ্যতে। এই দেশে সীমিত পরিসরে রাজাগজার তেমন প্রতাপ চোখে পড়েনা। তবে সর্বদর্শী জাগ্রত সরকার যে আছেন সেটি অনলাইনে টেরটি পাওয়া যায়। বেশীরভাগ আকামের খাজুরা ওয়েবসাইট, সেইসাথে ‘বড়দের’ ওয়েবসাইট গেটওয়ে থেকে আটকে দেয়া হয়। চৌকষ, কৌতুহলী কিশোরের হয়তো এই বেড়া হেসেখেলেই পেরিয়ে যায়, কিন্তু গড়পড়তা বাড়ীর গিন্নী বা নান্নামুন্নাদের জন্য সেফটি নেট মনে হয় মোটামুটি কাজ করে। আরো কি যে ব্লক করে কেজানে। তাই মহারাজা তোমায় সেলাম! এইটা দেখে হটনট কি দেখতে গেছিলাম

দি ব্লু কোরান
auto
হারাম শরীফ আর তার আশেপাশের বিভিন্ন যায়গায় তাকের মধ্যে অসংখ্য কপি কোরান শরীফ রেখে দেয়া আছে পড়ার জন্য। যাদের কমবেশী পড়ার অভ্যাস আছে, তারা জানেন যে, আমাদের বাংলাদেশে সাধারণভাবে দুরকম ছাপা পাওয়া যায়। একটা সম্ভবত লাক্ষ্ণৌ ছাপা যেটি কিছুটা পেঁচানো অক্ষরে লেখা, হাফেজদের মুখস্ত করার জন্য এই ছাপার কোরান জনপ্রিয় আর দ্বিতীয়টি হল সম্ভবত কোলকাতার ছাপা, যেটি আমরা নূরানী বলে চিনি, যার ছাপা অনেকটা ছাপা ইংরেজীর মত অনেকটা সরলরৈখিক। আমরা আজমী আজনবী, আরবী বুঝিও না, পড়তেও ঠোক্কর খাই তাই আমাদের সবগুলো ছাপাতেই স্বরচিহ্ন বা হরকত সহ হয়।

আরবরা নিজেদের পড়ার জন্য যেই ছাপা ব্যাবহার করে তাতে হয় স্বরচিহ্ন থাকেই না, অথবা স্বরচিহ্নের মধ্যে আরো কিছু অতিরিক্ত যতিচিহ্ন যোগ করা থাকে। তাই আমাদের জন্য সেগুলো পড়া বেশ কনফিউজিং। এইখানে আরব বান্ধব কোরানের কপিগুলোর মলাট সাধারণত গাড় সবুজ রঙের হয়।

আমাদের পরিচিত হাফেজী কোরানের আদলে কিছু কপি পাওয়া যায় যেগুলো নীল মলাটে ছাপা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তব হল, বিপুল পরিমাণে ভারতীয় উপমহাদেশের দর্শনার্থীদের প্রয়োজনের তুলনায় নীলমলাটের সংখ্যা খুবই কম। প্রায়ই দেখা যায় আলমারীতে ৬০-৭০ টা সবুজ থাকলে সাথে দু-তিনটা নীল, তাই প্রায়ই খোঁজাখুজি পড়ে যায়। আর বেশী ব্যাবহারের ফলে অনেক সময়েই সেগুলোর অবস্থাও ত্যানাঝাড়া। তাই নিয়েই চলা লাগে, কি আর করা।

auto

কিছু আলমারীতে অনেক ভাষায় অনুদিত ও ব্যাখ্যাসহ কপি পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত বাংলা আর হিন্দী, এই দুই ভাষার পাইনি। চীনে, তামিল থেকে শুরু করে রাশান পর্যন্ত আছে। কি অদ্ভূত!

এই শহরে মশা নাই, আরেকজন খেয়াল করল যে কাকও নাই। গরমে টিকতে পারেনা মনে হয়। চারদিকে হাজারো লাখো কবুতর আর হারাম শরীফের আকাশে চক্কর দেয় আবাবীল।

লাশের মিছিল
আসা থেকে এখন পর্যন্ত শতিনেক সাথীদের মনে হয় শেষ বিদায় জানালাম। প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্তের পরেই ঘোষনা থাকে জানাজার। কখনো দুজন পুরুষের জানাজা, কখনো একজন পুরুষ তিনজন মহিলার জানাজা, কখনো একজন পুরুষ একজন শিশুর জানাজা। দেশে থাকতে সারা জীবনে যতবার জানাজা পড়া লেগেছে এরি মধ্যে তার চেয়ে বেশী বার মনে হয় পড়া হয়ে গেছে। আমাদের একদিন পরেই ঢাকার এক গ্রুপ এসেছিল প্রায় একশো বিশ জনের। তাদের একজনকে খুব উদভ্রান্ত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থা। শুনলাম যে, উনাদের ১২০ জনের দলের মুয়াল্লেম (সংগঠক) গিয়েছিলেন সৌদি অফিসে উনাদের পরিচয়পত্রের কার্ড আনার জন্য। ফেরার পথে রাস্তায় দুর্ঘটনায় সেখানেই ইন্তেকাল। এখন বিদেশ বিভুঁইয়ে সম্পুর্ণ অপরিচিত যায়গায় শিডিউল প্রোগ্রাম ছাড়া কি করবেন কেউই বুঝতে পারছে না। মুয়াল্লেমের এসিস্টেন্ট হিসেবে তার ভাগ্নে আছে যে এই প্রথম সৌদি এসেছে। তাই তার অবস্থা আরো বেগতিক। এই ঘটনার আরো তিন চারদিন পরে সেই ভদ্রলোকের সাথে আবার দেখস হল, জানালেন যে, সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় কোনো এক মসজিদের বাংলাদেশী ইমামকে এই পুরো সময় উনাদের দেখাশোনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আপাততঃ সমস্যা কেটেছে। অপরিচিত মানুষের বিদায় জানাতে জানাতে দূর পরিচিতরাও কখনো চলে যায়। কয়েক নিযুত মূলত বয়স্ক মানুষের সমাগমের তুলনায় মৃতের হার হয়তো অস্বাভাবিক না পরিসংখ্যা হিসেবে কিন্তু তারপরেও মানসিকতার ওপরে একটা প্রভাব পড়েই। আল্লাপুর এক্সপ্রেসের রেলগাড়িটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে খালি হুইসেল দিয়েই যাচ্ছে। সবুজ পতাকা উড়লেই অনন্তযাত্রা।

ফরিদ

বইমেলা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে! একই পাতায় 'সেলাম' দিয়ে লেখা দুটো লেখা? আগে দেখলে অন্য শিরোনাম চিন্তা করতাম মন খারাপ

ফরিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে! একই পাতায় 'সেলাম' দিয়ে লেখা দুটো লেখা? আগে দেখলে অন্য শিরোনাম চিন্তা করতাম মন খারাপ

ফরিদ

সাইফ তাহসিন এর ছবি

এবারের পর্ব এত ছোট কেন? আর আপনার নামের নিচে 'বইমেলা' এর রহস্যটা কি?

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী [অতিথি] এর ছবি

এখানে দেখুন... হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পর্বটা আসলেই একটূ ছোট হয়ে গেলো।
বাই দ্যা ওয়ে, পড়ে মজা পাচ্ছি।

---আশফাক আহমেদ

ফ্রুলিক্স [অতিথি] এর ছবি

ইনশাআল্লাহ আগামী ১০ তারিখ (মাত্র ২ দিন বাকী) আসতেছি।
নিজের সাথে ছোট কোরআন নিয়ে আসতে হবে।

ফানুস এর ছবি

ভোটাভুটির গণতন্ত্র বিহীন রাজতন্ত্রের দেশ মধ্যপ্রাচে আরো আছে। শুধু ইউইতে সাত প্রদেশের সাত রাজা ( ওরা বলে শেখ ) আর ঐ সাত শেখ পারিবারীক ভাবে অন্তত কাল ধরে রাজ করে চলছেন । আর আবুধাবী রাজধানী বলে ঐ শেখ হলো রাষ্টপতি ।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

ডাবলিনে আমি রীতিমত বাংলায় পড়তে পারি। সেটা সৌদি সরকারের থেকে বিনামূল্যে বিতরণের জন্যে দেয়া।

লেখাটা ভালো লাগলো। চলুক

হোম - টুইটার - ফেইসবুক - উইকিপিডিয়া - এ্যাকাডেমিয়া

ফরিদ এর ছবি

বাংলায় কোন ভার্সন বিতরণ হচ্ছে সেটি জানতে আমি আগ্রহী। যদি সম্ভব হয় তাহলে স্ক্রীনশট বা একট দুটো ছবি পেলে খুশি হব।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মুফতী মুহম্মদ শফী প্রণীত তফসীরে মা'রেফুল কোরআনের মাওলানা মহিউদ্দীনের করা সংক্ষিপ্ত বঙ্গানুবাদ একখন্ডে ছাপিয়েছিল সৌদি সরকার। এবারে সারা দেশ ঘুরেও সেটির নমুনা পেলাম না। সম্ভবত পরে টেরটি পেয়েছিল যে পুরনো এসলাহ, তাযকিয়ার সাথে মৌদুদী, ওহাবী মতধারার খটমটি লেগে যায়।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

ফরিদ ভাই, আমি জুম্মার নামাযে গেলে অনুবাদকের নাম এবং প্রকাশনীর বিস্তারিত লিখে নিয়ে আসবো। পরবর্তীতে মেইলে আপনাকে জানাবো।

হোম - টুইটার - ফেইসবুক - উইকিপিডিয়া - এ্যাকাডেমিয়া

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দেশে এখন ‌'সৌদি ছাপা' বলে বোধহয় আরেক প্রকার কোরআন শরীফ পাওয়া যাচ্ছে। এর আবার কর্মশালা হয় বিভিন্ন জায়গায়।

মক্কা নোটস চমৎকার হচ্ছে। হজ্বের সময় তো চলে এলো, আপনার জন্য শুভকামনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

সৌদি ছাপা, কর্মশালা মানে? একটু ঝাইড়া কাশেন। মেলা পয়সা খর্চা করেন রাজামশাই আব্দুল ওহাব সাহেবরে খাড়া করতে সারা দুনিয়াত।

ফরিদ

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

দুই পর্ব এক সাথে পড়লাম আজ। ভালো লাগছে ফরিদ ভাই। আপনার জন্যে শুভকামনা রইলো হাসি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি
তাসনীম এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। আশাকরি রাজা সাহেব গেটওয়েতে সচলায়তন ব্লক করবেন না হাসি

শুভকামনা রইল।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি ছোটবেলায় তিনবার কোরআন শরীফ পড়ছি আরবীতে... পুরাটা... সেটা শুধুই পড়া ছিলো, কিছু বুঝি নাই।
বাংলা অনুবাদ পড়ছি অনেক কয়টা... সেখানে একটা চাতুরি আছে। কোরআনের বঙ্গানুবাদ অনেকটাই আরবী ফার্সী উর্দুর প্রভাবিদুষ্ট। সঠিক উপলব্ধির জন্য তাফসীর পড়তে হবে। এখানেই ঝামেলা। তাফসীর হচ্ছে মোল্লাদের নিজস্ব ব্যখ্যা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

দুই দশক আগেও মাদ্রাসাগুলোর বাংলা শিক্ষা ছিল এইরকম

হাযা ক্বালামুন
ইয়ে এক কলম হ্যায়
এইটা একটা কলম

ভাল মাদ্রাসাগুলোতে গত বছরদশেকে বেশ বদলেছে বাংলার ব্যাবহার। কিন্তু আগের বইগুলো অনেকগুলোই ইয়ে কলম হ্যায় জেনারেশনের লেখা। সমস্যা হল, বাংলা সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে ২০১২ সাল থেকে আমাদের পড়াশোনার বিদেশী ভাষ হবে চীনা, তাহলে বহুদিন পর্যন্ত চীনা-ইংরেজী-বাংলা, আর বাংলা-ইংরেজী-চীনা এই রীতিতে জ্ঞানচর্চা হবে। গত ত্রিশ বছরে ফার্সীর প্রভাব মোটামুটি কমানো গেছে, এখন উর্দুর ধীরে ধীরে নির্ভরতা কমছে।

তফসীরে একটু মোল্লা দেখে না পড়লে সমস্যা। কোরান, হাদীসের মোল্লা ব্যাখ্যার গন্ডী না মাড়িয়ে নিজস্ব ব্যাখ্যার দিকে গেলে মৌদুদী বা সায়ীদ কুতুব ব্যাখ্যা হবার সুযোগই বেশী।

এখন পড়ছি তফসীরে মাযহারী। বেশ চমৎকার সমন্ময় করে লেখা।

বাউলিয়ানা এর ছবি

আপনার নোটসগুলো আকারে বড় না বলে পড়ে খুব আরাম পাচ্ছি। অনেক কিছু জানছি।

সিরিজ চলুক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।