আত্মহত্যা?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১০/১১/২০১০ - ২:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আত্মহত্যা?

পুশ সিং আর ক্রিস ম্যাককিনস্ট্রি, দুজনেই কাছাকাছি ধরনের লোক। দুজনেই কাজ করেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে, অনেকদূর। দুজনেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য দুটো আলাদা জগৎ বানিয়ে বসেছেন।

দুজনের মৃত্যুই প্রায় একই সাথে, প্রায় একই ভাবে।

মন্ট্রিয়লে জন্মগ্রহনকারী পুষ্পিন্দর সিং-এর বাবা মাহেন্দার সিং সন্তানকে বড় করেছিলেন সবকিছু ঢেলে দিয়ে। হাই স্কুলে থাকতেই পুষ্পিন্দর আমূলভাবে প্রভাবিত হয় মারভিন মিনস্কি-র 'সোসাইটি অফ মাইন্ড' বইটি দ্বারা।

মিনস্কির মূল বক্তব্য ছিল: একেকটা আলাদা মানসিক এজেন্ট হয়তো তেমন জটিল কিছু করে না। কিন্তু সবগুলিকে জোড়া লাগিয়ে দিলে সৃষ্টি হয় বুদ্ধিমত্তার একটি জগৎ। বুদ্ধিমত্তার এই জগৎই 'ট্রু ইনটেলিজেন্স'।

ক্রিস ম্যাককিনস্ট্রির জন্ম টরন্টোতে, পুষ্পিন্দর-এর থেকে তিনশো মাইল দূরে।

পুশ-এর মত আরামদায়ক শিশুকাল ভাগ্যে ছিল না ক্রিসের। একা মা তাকে বড় করেছেন।

কিন্তু প্রতিভা দাবিয়ে রাখা কঠিন। বারো বছর বয়সে নিজে কোডিং শেখা ম্যাককিনস্ট্রি রেডিওশ্যাক টিআরএস মডেল-১ কম্পিউটারের জন্য একটি দাবা খেলা বানিয়ে বসে। সে ১৯৮১ সালের কথা।

'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' নিয়ে আমাদের 'ভাঙ্গা-ভাঙ্গা' প্রচেষ্টার কারণে আমরা সফল হইনি, এটি ছিল মিনস্কি-প্রভাবিত পুশ এবং ক্রিস-এর ধারণা।

১৯৯৬ সালে তরুন এমআইটি ছাত্র পুশ সিং ইন্টারনেট-বিখ্যাত একটি পেপার লেখেন: "কেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা" ব্যর্থ হল"।

তরুন বিল গেটস জুন ৯, ১৯৯৬-এ এই পেপারের একটি গঠনমূলক উত্তরও দেন।

ধারণা করা হয়, গেটস পুশ-এর পেপার দ্বারা বেশ প্রভাবিত হয়েছিলেন।

এদিকে এসময় ম্যাককিনস্ট্রি নানা ধরণের ইন্টারনেট নিউজগ্রুপ/ফোরামে অংশগ্রহনে ব্যস্ত।

কাকতালীয়ভাবে, ১৯৯৬ এর জুলাইতেই ম্যাককিনস্ট্রির ম্যানিফেস্টো: "ইন্টারনেট ওয়াইড এফোর্ট টু ক্রিয়েট এন আর্টিফিশিয়াল কনশাসনেস', চরম সমর্থন এবং প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়।

ম্যাককিনস্ট্রির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি প্রচেষ্টা ছিল মিনস্কির বৃহদায়তনিক তত্ত্বমতে। এই একই প্রচেষ্টার ব্যবহারকারি পুশ সিং-ও ছিলেন বটে।

দুই জিনিয়াস একই প্রচেষ্টায় বিশ্বাসী হলেও, দু'জনের ব্যবস্থা ছিল ভিন্ন।

ম্যাককিনস্ট্রির ব্যবস্থার নাম 'মাইন্ডপিক্সেল'। পুশের 'ওপেন মাইন্ড কমন সেন্স'।

মাইন্ডপিক্সেল ব্যবহারকারী-মডারেটেড। 'ওপেন মাইন্ড কমন সেন্স'-এর কোন মডারেটর নেই।

একটা পর্যায়ে সম্ভাবনা ছিল, ক্ষীণ বললেও, দুটো ব্যবস্থার একীভূত হওয়ার। কিন্তু এই দুই প্রতিভার দ্বন্দ্বের কাহিনীও বড়ই আগ্রহজনক হলেও, সে আরেকদিনের গল্প।

ম্যাককিনস্ট্রি ফোরামে পোস্ট করে, বলেকয়ে আত্মহত্যা করে।

ফোরামের নাম 'জোয়েল অন সফটওয়্যার'। টেকিদের আড্ডার, ঝগড়ার জায়গা।

ফোরামে বলে-কয়ে, ঝগড়া করে ম্যাককিনস্ট্রি নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ফেরৎ এসে স্টোভ থেকে গ্যাসের লাইন খুলে নিজের মাথার চারপাশে সিল করা ব্যাগের সাথে জোড়া লাগিয়ে দেয়।

মৃত্যুর আগে নিজের ব্লগে ম্যাককিনস্ট্রির পোস্টের একটা লাইন ছিল: "এই লুই ভুইতঁ, প্রাদা আর মঁ ব্লাঁ এর বাণিজ্যিক দুনিয়া আমার জন্য নয়"।

সফল পুশ সিং পিএইচডি সমাপনের পর এমআইটি মিডিয়া ল্যাবে মিনস্কির সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিল। IEEE Intelligent Systems Advisory Board এর মতে পুশ ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করা সেরা দশ গবেষকের একজন।

ম্যাককিনস্ট্রির মৃত্যুর ঠিক একমাস পরে ৩৩ বছর বয়সী পুশ সিং মাথায় সিলড ব্যাগের সাথে হিলিয়াম ট্যাংকের হোসপাইপ জোড়া লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

পুশ এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাওয়াত-এর মতে, এই দুই আত্মহত্যার সাথে টার্মিনেটর-২ এর মিল আছে।

"আমাকে খুব বেশি গুরুত্বের সাথে নিতে বলছি না, কিন্তু টি২ এর মাইলস ডাইসন-এর সাথে এই দু'জনের মিল আছে। ডাইসন এমন একটা নিউরাল নেটওয়ার্ক বানাচ্ছিল, যেটা কিনা শেষমেশ সেনটিয়েন্স অর্জন করে মানবজাতিকে ধ্বংস করে। সুতরাং ভবিষ্যত থেকে টারমিনেটের সাইবর্গ পাঠানো হয় মাইলসকে হত্যা করতে। যাহোক, তাদের কিছু করার আগে মাইলস নিজেই জেনেশুনে নিজের জীবন উৎসর্গ করে যাতে তার সৃষ্টি মানুষের ক্ষতি করতে না পারে।"

"কি জানি। পুশ আর ক্রিসকে কেউ কি এসে কিছু বলেছিল কিনা।"

রিতা
rita.roktim@gmail.com


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

প্রথমে পড়তে শুরু করে ভাবছিলাম-- বাহ, বেশ ইন্টারেস্টিং সাই-ফাই তো! কিন্তু শেষের দিকে এসে মনে হতে লাগল---না তো, ঠিক মিলছে না জিনিস গুলো। লেখাটা পড়েই কিছু খোঁজাখুজি করে আরো বিশদ জানতে পারলাম এই দুই প্রতিভাধরদের সম্পর্কে। এমন বৈচিত্র্যময় জীবন খুব কম দেখা যায়।

দুইজনের মাঝেই অনেক মিল ছিল--দুইজনেই নানান সময়ে মানসিক রোগে ভুগেছেন। ১৯৯০ এর জুন মাসে ম্যাকিন্সট্রি এক বন্দুকের দোকানে ঢুকে বন্দুক ছিনতাই করেন এবং আত্মহত্যার প্রস্তুতি নেন। পুলিশ এসে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চেষ্টা করে। একজন মনোচিকিৎসাবিদকে আনা হয়, ডেকে আনা হয় তার বান্ধবীকেও যার সাথে কিছু আগেই তার ঝগড়া হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে সে বার তারা ম্যাকিন্সট্রির আত্মহত্যা ঠেকাতে পেরেছিল।

মৃত্যুর কিছু আগে পর্যন্ত পুষ্পিন্দার প্রচন্ড পিঠের ব্যথায় ভুগছিলেন। এইটা পরে তার মাঝে 'ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন' সৃষ্টি করে থাকতে পারে ---তার কিছু বন্ধুদের মত।

বোধকরি দুইজনেরই সবচাইতে বেশি মিল ছিল একটি জায়গায় --- উৎকেন্দ্রিকতায় (eccentricity)। দু'জনই দু'জনের কাজ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল ছিলেন। মাঝে মাঝে চিঠি চালাচালি হয়েছে তাদের মাঝে।

কিন্তু সবচাইতে বড় মিল হল--খুব সম্ভবত তাঁদের মৃত্যুতে।
এমন একটা মিল হয়ত কেউই দেখতে চাইবেন না।
Wired ম্যাগাজিনের এই লিঙ্কে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

রিতা আপু, আপনার লেখা পড়ে বুঝতে গেলে তো আরো অনেক জিনিস খুঁজে বের করতে হয়, আমার হিসাবে তাই পোস্টটা অসম্পুর্ন, একটু কষ্ট করে হয় নিচে ঘটনার মাঝের ঘটনা যদি বলে দেন তো আমার ভুদাইচরিত মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

কৌস্তুভ এর ছবি

আমি লেখকের নাম দেখে পোস্ট পড়ি না, প্রথম পাতার প্রিভিউ দেখেই পোস্ট পড়ি। আপনার ক্ষেত্রে প্রিভিউ-এর প্রথম লাইনটা দেখেই ভেবেছিলাম সিরাতদার লেখা। তা প্রিভিউটা পড়ে যখন পোস্টে ক্লিক করতে গেলাম, তখন দেখি লেখা রয়েছে অতিথি লেখক। চমকে গিয়েছিলাম। তা সত্যি বলতে কি, আপনার লেখাটা অনেকটা সিরাতদার মতই হয়েছে। আরো ঠিকভাবে বলতে গেলে, সিরাতদার শুরুর দিকের লেখাগুলোর মত। সেইরকমই ছোট ছোট এক-দু বাক্যের প্যারাগ্রাফ, কয়েকটা ছোট ছোট প্যারা নিয়ে একটা পরিচ্ছেদ, কিছু টুকরো টুকরো তথ্য লিখে দেওয়া, পুরোটা পড়ে একটা অসম্পূর্ণতার ভাব। বাক্যের ধাঁচে তফাত আছে অবশ্য। তা বেশ, লিখতে থাকুন, হয়ত একদিন আপনিও সিরাতদার মত মেগাব্লগার হয়ে যাবেন।

নৈষাদ এর ছবি

স্টাইল এবং কন্টেন্ট দু'টোই ভাল লাগল। তবে কিছু কিছু যায়গায় তথ্য বেশ সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল।

তুলিরেখা এর ছবি

ভালো লাগলো।
আরেকটু বিস্তারিত হলে আরো ভালো লাগতো।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাবিহ ওমর এর ছবি

লেখা ভাল লেগেছে। বিস্তারিত টীকা-টিপ্পনির দরকার দেখি না (এটা তো জার্নাল পেপার না)। যার জানার ইচ্ছা হবে সে নিজে খুঁজে নিলেই হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

খুব ভালো লেখা। যট্টুক বলার দরকার তট্টুকই বলসেন। ম্যাককিনস্ট্রি-র সুইসাইডাল নোট (বা অন্তিম পোস্ট) এর বিষয়ে আলাদাভাবে আগ্রহ হইল। আর্থরাজনীতিক বাস্তবতার বাইরা গিয়া বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে সংযোগ করতে পারিনা। আপনার লেখাটায় ঐ দিকটা খেয়াল রাখসিলেন। তাই ভালো লাগল বেশি। ধন্যবাদ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।